Thursday 7 August 2014

সেকুলারিজম কি?





সেকুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা একটা মতবাদ যেই মতবাদ অনুযায়ী ধর্ম শুধু মসজিদ, মন্দির বা গির্জার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মানুষের জীবনের সবগুলো দিক ধর্ম দিয়ে পরিচালিত হবেনা। যেমন শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি এইগুলো কোনো ধর্ম দিয়ে চলবেনা। এইগুলো চলবে মানুষের মতামতের ভিত্তিতে, কোনো ধর্মের হস্তক্ষেপ এখানে চলবেনা।

সেকুলারিজম কুফুরী/নাস্তিকতা কেনো?
আপনি মসজিদে বসে নামায পড়েন, সেকুলাররা আপনাকে কিছুই বলবেনা, আপনি হজ্জ করেন, রোযা রাখেন কিছুই বলবেনা। কিন্তু আপনি যদি বলেন অর্থনীতি ইসলাম অনুযায়ী চলতে হবে, সুদ ঘুষ চলবেনা, চুরি বাটপারি চলবেনা, যাকাতের হুকুম সর্বস্তরের মানুষের মাঝে চালু করতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে – তারা বলবে এইগুলো ধর্মীয় বিষয় – ধর্মের কোনো আইন অর্থনীতিতে চলবেনা।
তারপর আপনি যদি বলেন, গণতান্ত্রিক কুফুরী ব্যবস্থা, মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার করা কুফুরী, মুসলিমদের খলিফা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন, এটা তারা মানেনা – কারণ তাদের দাবী এটা ধর্মীয় বিষয় – আর ধর্মকে রাজনীতির মাঝে আনা যাবেনা। যদিওবা তাদের কেউ কেউ নিজেকে মুসলিম দাবী করে, নির্বাচন আসলে নাম কামানোর জন্য হজ্জ ওমরা করে, পাঞ্জাবি-টুপি বা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ইসলামিক সাজার অভিনয় করে যাতে করে মানুষের কাছে মুসলমান ধার্মিক হিসেবে তাদের পরিচয় ফুটে উঠে।
যাই হোক, এইরকম যারা কিতাবের কিছু অংশ মানে আর কিছু অংশ মানেনা এরা আসলে নাস্তিক। কারণ সত্যিকার অর্থে তারা কোনো ধর্মকেই মানেনা।
এদের ব্যপারে আলেমদের ফতোয়া হচ্ছেঃ



"সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কারো জবাই করা পশুর গোশত খাওয়া হারাম, সেকুলার কোনো মেয়েকে বিয়ে করা কোনো মুসলিমের জন্য জায়েজ নয় কারণ তারা মুর্তাদ।"
শায়খ মুহাম্মাদ আমান আল-জামি (রাহিমাহুল্লাহ)

"যারা সেকুলার তারা মুলহিদ (নাস্তিক), সেকুলাররা মুনাফেরকদের চাইতেও নিকৃষ্ট।"
শায়খ সালিহ আল-ফাওজান (হা'ফিজাহুল্লাহ)।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহর দুশমন এই সেকুলারদের মতবাদ দিয়ে অনেক ভাই-বোন বিভ্রান্ত হচ্ছেন। রাজনীতি বা অন্য অনেক বিষয়ে ইসলামের কি বক্তব্য এই ব্যপারে তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হলে তারা বলেন,
১. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিকনা (মানে সব ব্যপারে ধর্মের বক্তব্য থাকবে এটা বাড়াবাড়ি)।
২. সবকিছুতে ধর্মকে টেনে আনবেন না
৩. রাজনীতি আলাদা, ধর্ম আলাদা (মানে রাজনীতিতে ধর্ম চলবেনা)
***নাউযুবিল্লাহ, সবগুলো কুফুরী, নাস্তিকদের কথা!

তাদের সংশয়ের জবাব দেওয়া হয়েছিলো এই পোস্টেঃ

সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটা পোস্টঃ
অনেকে আমাদেরকে বলে, ভাই কোরান হাদীস দিয়ে বেশি পোস্ট দিবেন, রাজনীতির উপরে কোনো পোস্ট দিবেন না।
দুঃখিত ভাই, আপনার সাথে আমরা একমত হতে পারলাম না।
ছোটোবেলায় আমাদের ইসলাম শিক্ষা বইয়ে একটা শূন্যস্থান পূরণ করতে হতো, “ইসলাম একটি পূর্ণাংগ দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা”।
ইসলাম আমাদেরকে কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, কিভাবে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন্ পরিচালনা করতে হবে অর্থাৎ কিভাবে মানব জীবনের প্রত্যেকটা দিক পরিচালনা করতে হবে তা শেখায়।
সাথে সাথে, কিভাবে দেশ চালাতে হয় সেই শিক্ষাও ইসলাম আমাদেরকে শেখায়, আর সেটাই হলো রাজনীতি (দেশের রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধান যে নীতি বা আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন)।
এখন, আপনি যদি ইসলামের রাজনৈতিক দিককে অস্বীকার করে বলেন, রাজনীতি আলাদা আর ধর্ম আলাদা তাহলে আপনার জন্য কোরানের এই আয়াতঃ

“তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? যারা এমন করবে দুনিয়ার জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোন পথই নেই। আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে।”
সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৮৫।

যাই হোক এবার আসি মূল বক্তব্যে,
ইদানিং একটা কথা খুব বেশি শোনা যাচ্ছে, বিশেষ করে নামধারী মুসলিম রাজনীতিক অথবা ছুপা মুনাফিকের মুখে, “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার”।
প্রথম কথা, এইরকম কথা প্রথম কে চালু করেছিলো? (নাস্তিক সেকুলার ও কমিউনিস্টরা)।

কোরান-হাদীসে এর পক্ষে বা বিপক্ষে কি বলা আছে?
সুবাহা’নাল্লাহ!!!
মানুষ কোরান বুঝে না পড়ার কারণে কতো অজ্ঞের মতো কথা বলতে পারে, এই উদাহরণটাই তার বাস্তব প্রমান।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে, সালাতে, বাড়ি থেকে বের হয়ে বা পড়ে ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের গায়ে ফুঁ দিচ্ছে, তারপরেও যা পড়ছে একটু পরেই তার বিরুদ্ধে বড় বড় লেকচার দেওয়া শুরু করছে।
“লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়ামা-ফিল আরদ”।
আয়াতুল কুরসী। *(সুরা বাকারাহ, আয়াত ২৫৫)*
অর্থঃ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর (আল্লাহর)।

এখন দেশ কি আসমান ও যমীনের বাইরে নাকি যে তা আল্লাহর না হয়ে মানুষের হবে?
জ্বীনা, সবকিছুই আল্লাহর। সুতরাং, দেশের মালিকও আল্লাহ অতএব, দেশও চলবে আল্লাহর আইন দিয়ে।

বিঃদ্রঃ রাজনীতি বলতে আমাদের দেশে প্রচলতি আওয়ামীলীগ, বিনএনপি, বা জামায়েত ইসলামীর গণতান্ত্রিক রাজনীতির নির্বাচন, হরতাল, মিছিল, অবরোধ, ভাংচুর বা বিশৃংখলাকে উদ্দেশ্য না। গণতান্ত্রিক “কুফুরী” রাজনীতিকে ইসলাম পাঁচ পয়সাও মূল্য দেয়না। রাজনীতি হলো, কিভাবে দেশের রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত হবেন (আলেম ও মুসলিম নেতাদের শূরা বা শলা-পরামর্শের ভিত্তিতে), কিভাবে রাষ্ট্রের অর্থনীতি চলবে (যাকাত ও দান-সাদাক ভিত্তিক, সুদমুক্ত), চোরের শাস্তি কি হবে (হাত কাটা), খুনের শাস্তি কি হবে (কিসাস বা খুনের বদলে খুন) ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...