Wednesday 23 July 2014

“সালামের প্রচার-প্রসার ঘটাও“ (সালাম সংক্রান্ত বিধিবিধান)



মূল: আবদুল মালেক আল কাসেম
অনুবাদ: আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশংসা মাত্র এক আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর  উপর যার পর আর কোন নবী নেই।
সালাম একটি প্রাচীন সুন্নাত যা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়ে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়া অবধি বিদ্যমান থাকবে। ইহাই জান্নাত বাসীদের শুভেচ্ছা। আর জান্নাতে তাদের শুভেচ্ছা হবে সালাম-শান্তি। ইহা নবী-আম্বিয়াদের সুন্নাত, মুত্তাকীদের স্বভাবগত গুণ খাঁটি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। অথচ ইদানীং কালে মুসলমানদের মধ্যে প্রকাশ্য নির্লজ্জতা ও সুস্পষ্ট বিভক্তি বিরাজিত। দেখা যাচ্ছে, একজন মুসলিম আরেক মুসলিম ভায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছে অথচ তাকে ইসলামের শুভেচ্ছা তথা সালাম প্রদান করে না। অনেকে তো পরিচিত ব্যক্তিকেই শুধু সালাম প্রদান করে। আবার কেউ অপরিচিত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে সালাম পেলে বিরক্ত হয়।
 এমনকি কোন কোন লোক তো সালাম প্রদান কারীকে মন্দ ভেবে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আমাকে চেন?… এগুলো সবই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের বিরোধিতা। যে কারণে আন্তরিকভাবে পারষ্পরিক দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। দলাদলি ও বিভক্তি বৃদ্ধি লাভ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না মুমিন না হওয়া পর্যন্ত।  আর তোমরা মুমানি হবে না যতক্ষণ না পরস্পরকে না  ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন পদ্ধতির কথা বলে দিব না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসতে পারবে? তা হল, তোমাদের মধ্যে বেশী বেশী করে সালাম প্রচার ও প্রসার করবে।” (মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমের যৌথ বর্ণনায় এসেছে: “এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: ইসলামের কোন বিশিষ্টটি সর্বোত্তম? তদুত্তরে তিনি বলেন: তুমি খাবার খাওয়াবে এবং যাকে চেন অথবা চেন না সবাই (মুসলিম)কে কে সালাম প্রদান করবে।
অত্র হাদীছে মুসলমানদের মধ্যে সালাম প্রসার করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সালাম শুধু তোমার পরিচিত ও সাথী মহলের সাথেই খাস নয় বরং তা সমস্ত মুসলিমের জন্য। সাহাবী ইবনে উমর (রা:) বাজারে যাওয়ার সময় বলতেন: “আমরা বাজারে যাচ্ছি সালাম প্রদানের জন্য। সুতরাং যাদের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হবে তাদেরকে আমরা সালাম দিব।”
মূলত: সালাম মুসলিম ব্যক্তির বিনয়, অপরকে ভালবাসার দলীল স্বরূপ। হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, অহংকার, অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করা ইত্যাদি মন্দ গুণ থেকে তার অন্তর পরিষ্কার থাকার প্রতি এই সালাম ইঙ্গিত করে। ইহা মুসলমানদের একে অপরের প্রতি ন্যায় অধিকার সমূহের অন্যতম অধিকার। এই সালামই পরস্পরিক পরিচিতি, একতা, প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা সৃষ্টি করার মাধ্যম। নেকী অর্জন ও জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ। ইহার প্রসার ও প্রচারে রয়েছে নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত পুনর্জীবিত করণ।
নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: পাঁচটি  জিনিস একজন মুসলিম ব্যক্তির উপর অপর ভাইয়ের জন্য করা ওয়াজিব। যথা:
  • ১) সালামে জবাব দেওয়া,
  • (২) হাঁচির জবাব দেয়া অর্থাৎ হাঁচি দিয়ে হাঁচিদাতা আলহামদুলিল্লাহ বললে তার উত্তরে ইয়ার হামুকাল্লাহ বলা
  • (৩) দাওয়াত কবূল করা
  • (৪) রোগীর দেখা-শুনা করা
  • (৫) জানাজায় উপস্থিত হওয়া। (অর্থাৎ জানাজা নামায পড়া ও দাফনে শরীক হওয়া)। (মুসলিম)
কেউ সালাম দিলে নবীর নির্দেশের অনুসরণে তার জবাব দেওয়া ওয়াজিব। আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা মানুষ চলাচলের রাস্তায় বসা হতে সাবধান। সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের ঐখানে বসে পরস্পরে আলাপ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা যদি একান্ত বসতেই চাও তাহলে পথের হক আদায় করবে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! পথের হক কি? তিনি বললেন: (নিষিদ্ধ বিষয় দেখা থেকে) চক্ষু নত রাখা, (কাউকে) কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, ন্যায়ের আদেশ দেয়া ও অন্যায় থেকে নিষেধ করা। (বুখারী ও মুসলিম)
ইমাম নাওয়াভী (রহ) বলেন: (হে পাঠক) একথা অবগত হবেন যে, সালামের চর্চা করা তথা সালাম দেওয়া সুন্নাত। তবে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি সালাম প্রদানকারী একটি জামায়াত হয় তবে তাদের জন্য সালাম দেওয়া সুন্নতে কেফায়া (অর্থাৎ একজন সালাম দিলেই সকলের পক্ষ হতে এ সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে আর কেউ সালাম না দিলে সকলেই সুন্নাত পরিত্যাগ কারী বলে গণ্য হবে)। সুতরাং একজন সালাম দিলেই সকলের পক্ষ থেকে সালামের সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। যাকে সালাম দেয়া হল সে যদি এক জন ব্যক্তি হয় তবে তাকেই জবাব দেয়া আবশ্যক। আর যদি তারা এক জামায়াত (দল) হয়, তবে জবাব দেয়া তাদের জন্য ফরযে কেফায়া। যদি তাদের মধ্যে থেকে একজন সালামের জবাব দিয়ে দেয় তবে গুনাহ মুক্ত হয়ে যাবে। অবশ্য উত্তম হল প্রত্যেকেই শুরুতেই সালাম দিবে এবং (উপস্থিত) প্রত্যেকেই সালামের জবাব দিবে।
সালামের পদ্ধতি:
ইমাম নাওয়াভী বলেন: সালামের সর্বনিম্ন শব্দ হল: (السلام عليكم) আসসালামু আলাইকুম বলা। যাকে সালাম দেয়া হচ্ছে সে যদি একক ব্যক্তি হয়, তবে তার জন্য সর্ব নিম্ন শব্দ হল: (السلام عليك) আসসালামু আলায়কা বলা। তবে এক্ষেত্রে উত্তম হল (السلام عليكم) বলা যাতে করে এ সালাম তাকে ও তার দুই ফেরেশতাকেও শামিল করে। এর চেয়েও পূর্ণাঙ্গরূপ হল: (ورحمة الله) ওয়া রহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করে বলা, অনুরূপ ভাবে (وبركاته) ওয়া বারাকাতুহু শব্দ বৃদ্ধি করে বলা আরও উত্তম। যদি কেউ  (سلام عليكم) সালামুন আলাইকুম বলে তবুও তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।
সালামের জবাব:
ইমাম নাওয়াভী বলেন: সালামের জওয়াব দেয়ার সর্বোত্তম ও পূর্নাঙ্গ পদ্ধতি হল: ( وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته)ওয়া আলাইকুমাসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহ্‌ বলা। অর্থাৎ আলাইকুম, এর পূর্বে (و) ওয়াও অক্ষরটি উল্লেখ করবে। তা বাদ দিলেও জায়েজ আছে তবে সেটা উত্তম পদ্ধতি হবে না। কেউ যদি সালামের জবাবে শুধু ওয়া আলাই কুমুস্‌ সালাম বলে তবে তা যথেষ্ট হবে। তবে যদি শুধু (عليكم) আলাইকুম বলে তবে সকল বিদ্বানের নিকটেই তা যথেষ্ট হবে না।
সালামের স্তর:
তিনটি স্তরে সালাম বিভক্ত:
  • ১) সর্বোচ্চ, পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম রূপ হল: (السلام عليكم ورحمة الله وبركاته) আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু বলা।
  • ২) এর তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের হল (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্‌) বলা।
  • ৩) সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের হল: আসসালামু আলাইকুম বলা।
মুসলিম ব্যক্তি হয় পূর্ণাঙ্গ নেকী নিবে অথবা তার চেয়ে কম নেকী নিবে অর্থাৎ সালাম অনুযায়ী সে কম বেশী সওয়াব পাবে। এজন্যই হাদীছে এসেছে যে, একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল অতঃপর আসসালামু আলাইকুম বলল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে ছিলেন, সাহাবায়ে কেরাম তার সাথেই ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: (ওয়া আলাইকুমুস সালাম) তুমি ১০টি নেকি পেয়েছ। এরপর অপর এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করত: ”আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্‌” বলল। নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ্‌। তুমি ২০টি নেকি পেয়েছো। অতঃপর আরও একজন ব্যক্তি প্রবেশ করত: ”বলল আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহ্‌ – তুমি পেয়েছো ৩০টি নেকি। হাদীছটি আবু দাঊদ, তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। অত্র হাদীছে ১০, ২০, ৩০টি বলতে ঐ পরিমাণ নেকী বুঝানো হয়েছে।
সালামের কতিপয় আদব:
১) পথে দুজনের সাক্ষাত হলে সুন্নত হল আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে চলমান ব্যক্তিকে, কম সংখ্যক মানুষ বেশী সংখ্যক মানুষকে সালাম দিবে। ছোট বড়কে সালাম দিবে। নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:  আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে চলা ব্যক্তিকে, চলমান ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে, কম সংখ্যক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম দিবে। (মুসলিম)
২) সালাম দানকারী ব্যক্তির উচিত, মুসলিমদের উদ্দেশ্যে তার শুভেচ্ছা বাণী যেন শুধুমাত্র সালামের মাধ্যমেই হয়। সাবাহাল খায়ের, শুভ সকাল, গুড মর্নি, মারহাবা, অথবা হ্যালো ইত্যাদি যেন না হয়। সালাম দিয়েই শুরু করে অতঃপর সমাজে প্রচলিত উপরোক্ত শব্দাবলী বা অন্য যে কোন বৈধ শব্দাবলী দ্বারা স্বাগত জানাতে কোন অসুবিধা নাই।
৩) মুসলিম ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব হল: সে যখন নিজ বাড়িতে প্রবেশ করবে সালাম দিবে। কারণ সালামের মাধ্যমে বরকত নাযিল হয়। যদি ঘরে কেউ না থাকে তবে বলবে: আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালেহীন আমাদের উপর এবং আল্লাহ্‌র সৎ বান্দাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। (মুসলিম)
৪) শ্রোতাকে বিরক্ত করে না, ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে তোলে না- এই ধরণের স্বরে সালাম প্রদান করা উচিত। হযরত মেক্বদাদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:  আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য তার অংশ দুধ উঠিয়ে রাখতাম। তিনি রাত্রে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম প্রদান করতেন যে তা ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করত না অথচ জাগ্রত ব্যক্তির কর্ণ গোচর হত। (মুসলিম)
৫) পুনরায় সালাম দেয়া এবং তার পুনরাবৃত্তি করা ঐ ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব যে তার ভাই থেকে সামান্য সময়ের জন্য হলেও পৃথক হয়েছিল। আবু হোরায়রা হতে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ স্বীয় (মুসলিম) ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। যদি উভয়ের মধ্যে গাছ, দেওয়াল বা পাথর অন্তরায় হয় অতঃপর আবার সে তার সাথে সাক্ষাৎ করে তবুও সে যেন তার ভাইকে সালাম করে। (অবূ দাঊদ)
৬) পুরুষ মহিলাকে সালাম দেয়া, অনুরূপ ভাবে মহিলা পুরুষকে সালাম প্রদান করা জায়েজ। সুতরাং মহিলা তার মাহারাম (বিবাহ যাদের সাথে বৈধ নয় এমন) ব্যক্তিদেরকে সালাম দিবে এবং তাদের সালাম এর উত্তর দেয়াও তার উপর ওয়াজিব। অনুরূপ ভাবে পুরুষ ব্যক্তি তার মাহরাম নারীদেরকে সালাম দিবে এবং তার উপর তাদের সালামের জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব। যদি কোন মহিলা বেগানা হয় তবে তাকেও সালাম দেওয়া যাবে। আর যদি সে মহিলা সালাম করে, তার সালামেরও জওয়াব দিতে হবে। অবশ্য এ বিধান ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকাবস্থায় প্রযোজ্য। তাদের সাথে সালাম বিনিময় কোন প্রকার মুসাফাহা, নরম ভাষায় কথোপকথন বর্জন করতে হবে। কিন্তু সালাম লেন-দেন হলে যদি ফেতনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা থাকে তবে তা থেকে নারী-পুরুষ উভয় পক্ষের জন্য বিরত থাকা আবশ্যক।
৭) মানুষের মধ্যে হাত দিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে সালাম দেওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। (সুতরাং এবিষয়ে কথা হল) যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি দূরে থেকে সালাম দেয় এবং সাথে ইশারাও করে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু সে (অর্থাৎ সালাম প্রদান কৃত ব্যক্তি) শুনতে পায় না। এমতাবস্থায় ইশারা করা সালাম দেয়ার প্রমাণ স্বরূপ। সালামের বিকল্প নয়। এভাবে প্রতি উত্তরেও বলা যায়। লক্ষণীয় বিষয় হল, হাত দ্বারা ইশারা করার সময় মুখেও সালাম উচ্চারণ করতে হবে। তাহলেই সালাম দেয়ার সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুরূপভাবে সালামের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষণীয়।
৮) কোন বৈঠক শেষে উঠার সময়ও সালাম দিয়ে বিদায় নেয়াও মুস্তাহাব। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যখন তোমাদের কেউ কোন মজলিসে পৌঁছে তখন সে যেন সালাম দেয়। মজলিস থেকে উঠার ইচ্ছা করলেও যেন সালাম দেয়। কারণ প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালাম অপেক্ষা বেশী হকদার নয়।
৯) সালাম দিয়ে মুসাফাহ করা (হাত মিলানো) বা তোমার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেওয়া মুস্তাহাব। নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: দু জন মুসলিম ব্যক্তি সাক্ষাৎ কালীন পরস্পরে মুসাফাহা করলে পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
হযরত আনাস বিন মালিক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে কোন ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে তার সাথে মুসাফাহা করলে, তিনি স্বীয় হাত মোবারক ছোটাতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি নিজেই তার হাত টেনে না নিত। (তিরমিযী)
১০) সালামের সময় প্রফুল্ল ও হাস্যোজ্জল চেহারা ও মৃদু হাসার প্রতি আগ্রহী হোন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাঁসিটাও সদকা। তিনি আরও বলেন: ভালো কাজের কোন কিছুকেই খাটো করে দেখ না যদিও তা তোমার ভায়ের সাথে হাস্য মুখে সাক্ষাৎকার হয়। (মুসলিম)
১১) ছোট ছেলেদের সালাম দেয়া- যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন – মুস্তাহাব। এতে করে তাদের সামনে প্রফুল্লতা দেখানো হয়, তাদের অন্তরে বিশ্বস্ততার বীজ বপন করা হয়। তাদের অন্তরে ইসলামের শিক্ষা প্রথিত করা হয়।
১২) কাফেরদের প্রথমে সালাম দেয়া যাবে না। কারন নবী সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমরা ইয়াহুদ ও নাসারাদেরকে প্রথমে সালাম প্রদান করো না। আর যদি তোমরা পথিমধ্যে তাদের কারো সাক্ষাৎ পাও তবে তাকে সংকীর্নতম পথে চলার প্রতি বাধ্য কর। (মুসলিম)
তিনি আরও বলেন: যখন তোমাদেরকে কিতাব ধারী গন (তথা ইয়াহুদী-খৃষ্টানগণ) সালাম দিবে তখন তোমরা বলবে ”ওয়ালাইকুম”। (বুখারী ও মুসলিম)
হে আল্লাহর বান্দাগণ! অন্তর সমূহকে পরস্পরের নিকটবর্তী করতে, আল্লাহর নিকট প্রতিদান ও নেকী হাসিলের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের মাঝে এই সুন্নাতটি পুনর্জীবিত করুন। আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মাদ ন ও তার পরিবার পরিজন ও সাহাবীদের উপর রহমতের বারী ধারা অবতীর্ণ করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...