Saturday 26 July 2014

বিলাপ-মাতম ও কবর জিয়ারত


প্রশ্ন :
নারীদের জন্য কবর জিয়ারত করা কি হারাম, মৃত ব্যক্তি যদিও তাদের আপন কেউ হয় ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (لعن الله المرأة النائحة والمستمعة) এ হাদিসে المستمعة শব্দের অর্থ কি? এর দ্বারা কি সে নারী উদ্দেশ্য, যে ইনিয়ে-বিনিয়ে মানুষের কথা নকল করে, অথবা সে নারী উদ্দেশ্য, যে গান--বাজনা শ্রবণ করে, অথবা সে নারী উদ্দেশ্য, যে টেলিভিশন দেখে ও রেডিও শোনে। আশা করি এর ব্যাখ্যা দেবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন।

উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
নারীদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
(زُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمْ الْآخِرَةَ)
তোমরা কবর জিয়ারত কর, কারণ তা তোমাদের আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য পুরুষ। তিনি সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন, যেন তারা জিয়ারতের সময় বলে :
(السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ . نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ)
আয়েশা -রাদিআল্লাহ আনহা- থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে :
(يَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ)
নারীদেরকে কবর জিয়ারত থেকে তিনি নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করব জিয়ারতকারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। অতএব, তাদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ নয়। তবে তাদের জন্য বৈধ রয়েছে, জিয়ারত করা ব্যতীত ঘরে বসে মৃত ব্যক্তিদের মাগফেরাতের দোয়া করা, রহমতের দোয়া করা, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা। অনুরূপ মসজিদে অথবা ঈদগাহে জানাযার সালাত পড়তে তাদের কোন বাধা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাদের যুগে যেরূপভাবে নারীরা জানাযার সালাত পড়েছে।

বাকি রইল, মাতমকারী নারী ও তা শ্রবণকারী নারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতম থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন :
(أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَا يَتْرُكُونَهُنَّ : الْفَخْرُ بِالْأَحْسَابِ ، وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ ، وَالْاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ) . وَقَالَ : (النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ) أخرجه مسلم في صحيحه .
আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলিয়াতের চারটি স্বভাব রয়েছে, যা তারা পরিত্যাগ করবে না : আভিজাত্য নিয়ে গৌরব করা, বংশের ব্যাপারে তিরষ্কার করা, তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি অন্বেষণ করা ও মৃত ব্যক্তিদের উপর বিলাপ করা। বিলাপকারী যদি তাওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে যখন উত্থিত করা হবে, তখন তার উপর থাকবে আলকাতরার তৈরি জামা, খোস-পাঁচড়ার ঢাল। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম।
অত্র হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, মৃত ব্যক্তিদের উপর বিলাপ করা, জাহিলিয়াতের নিন্দনীয় স্বভাব। অতএব, তা পরিত্যাগ করা ওয়াজিব। উম্মে আতিয়া বলেছেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়আতের সময় আমাদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছেন, যেন আমরা বিলাপ না করি।
আবু দাউদ তার সুনানে, আবু সাঈদ - রাদিআল্লাহু আনহু - থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাপকারী ও তা শ্রবণকারী নারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন। এ হাদিসের সনদে দুর্বলতা থাকলেও এর স্বপক্ষে হাদিস তথা শাওয়াহেদ রয়েছে। কারণ, বিলাপ করা হারাম ও নিষিদ্ধ। অতএব, নারীর জন্য বিলাপ করা বৈধ নয়, অনুরূপ পুরুষের জন্যও।
النياحة : উচ্চস্বরে কাঁদা। হায় অমুক... হায় অমুক... হায় অমুক... ইত্যাদি উচ্চস্বরে বলা। উচ্চরে যা বলা হয়, তাই নিয়াহা বা বিলাপ।
المستمعة : বিলাপকারীর ক্রন্দন শ্রবণকারী। বিলাপকারীর কাছে বসে মনোযোগসহ বিলাপ শোনা, তাকে প্রেরণা দেয়া ও প্ররোচিত করা। এটাও নিষেধ, কারণ তার কাছে বসা তাকে প্রেরণা দেয়ারই নামান্তর। তাই তার বিলাপ শোনাও বৈধ নয়। বিলাপকারী যদি চুপ না করে, তবে তাকে ত্যাগ করা, তার সাথে না বসাই শ্রেয়। এটা এক অর্থে তাকে বাধা দেয়া। অনুরূপ তার বিলাপ শুনতে বসা এক প্রকার প্রেরণা দেয়া ও তাকে প্ররোচিত করা।
অতএব, আপনার  জন্য বিলাপকারীর বিলাপ শোনা জায়েজ নয়, বরং তাকে নিষেধ করুন ও তাকে বাধা দিন। যদি সে মেনে নেয় ভাল কথা, অন্যথায় তাকে ত্যাগ করুন, তার কথা শ্রবণ করার জন্য বসবেন না।

শায়খ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...