Friday 25 July 2014

নারীদের পক্ষে মাহরাম ছাড়া শুধু মেয়েদের সাথে হজ করার বিধান



প্রশ্ন:- আমি সৌদি আরব বসবাস করি। সেখানেই আমার কর্মস্থল। গত বছর আমি আমার দুই বান্ধবীর সাথে হজ পালন করতে যাই, আমাদের সাথে কোন মাহরাম ছিল না। এ বিষয়ে শরিয়তের বিধান সম্পর্কে জানতে চাই। 

উত্তর:- আলহামদু লিল্লাহ,
শাইখ মুহাম্মদ বিন আল উছাইমিন রহ. বলেন, তোমাদের এ কাজটি হল, মুলত: মাহরাম ছাড়া হজ করা; আর এটি সম্পূর্ণ হারাম ও ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থী। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি মিম্বারের উপর খুতবা দিচ্ছিলেন, কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে। এ কথা শোনে একজন লোক দাড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছে, অথচ আমি অমুক যুদ্ধে আমার নাম লিখিয়েছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যাও, এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর। বুখারি(৩০০৬)মুসলিম(১৩৪১)
মাহরাম ছাড়া মেয়েদের জন্য কোন সফর করা জায়েয নাই। আর মাহরাম বলা হয়, যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া -নসবের কারণে কিংবা অন্য কোন অনুমোদিত উপায়ে যেমন, বিবাহ শাদি ইত্যাদি কারণে- চিরতরে হারাম। মাহরামকে অবশ্যই জ্ঞানী ও প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। সুতরাং, যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সে মাহরাম হতে পারবে না, অনুরুপভাবে পাগলও মাহরাম হতে পারবে না।
মেয়েদের সাথে মাহরাম থাকা জরুরি হওয়ার হিকমত হল, নারীদের হেফাজত ও তাদের নিরাপত্তা। যাতে করে যারা আল্লাহকে ভয় করে যদি না এবং আল্লাহর বান্দাদের প্রতি দয়া করে না, তাদের সাথে কোন ধরণের নষ্টামী করতে না পারে। তার সাথে অন্য মহিলা থাকা ও না থাকার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। বা সে নিরাপদ কি নিরাপদ নয় তাও দেখার বিষয় নয়। সুতরাং কোন মহিলা তার পরিবারস্থ অন্য মহিলার সাথে ঘর থেকে বের হলে সবোর্চ্চ নিরাপত্তায়ই থাকে, তা সত্ত্বেও তার জন্য মাহরাম ছাড়া সফর করা জায়েয নয়।
কারণ, উপরি উক্ত হাদীসে আমরা দেখলাম, রাসূল সা. যখন লোকটিকে তার স্ত্রীর সাথে হজ করার নির্দেশ দেন, তাকে জিজ্ঞাসা করেননি তার সাথে কোন মহিলা আছে কি না কিংবা সে নিরাপদ কি নিরাপদ না সে প্রশ করা হয়নি। যেহেতু জিজ্ঞাসা করেননি এতে প্রমাণিত হয়,  নিরাপত্তা থাকা না থাকার বিষয়ে কোনই পার্থক্য নাই।এটিই বিশুদ্ধ মত।   
বর্তমানে কিছু লোক শিথিলতা পদর্শন করে থাকেন, তারা বলেন যেসব মহিলা মাহরাম ছাড়া বিমানে সফর করবেন, তাদের জন্য এ সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এ মত সুস্পষ্ট অনেকগুলো দলিলের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিমানের সফরেও অন্যান্য সফরের মত নানাবিদ সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, তাকে বিমানে তুলে দেয়ার পর, সে একা তার সাথে কোন মাহরাম নাই। আর বিমান নির্দিষ্ট সময়ে কখনো ছাড়ে আবার কখনো ছাড়ে না, বরং দেরীতে বা একদিন বিলম্বে ছাড়ে, তখন তাকে আবার ফিরে যেতে হয়। আবার কখনো এমন হয়, যেখানে অবতরণ কথা ছিল, সেখানে না নেমে অন্য কোন বিমান বন্দরে অবতরণ করে। অথবা এমনও হতে পারে, যে বিমান বন্দরে অবতরণ করার কথা সেখানে অবতরণ ঠিকই করে, তবে অনেক দেরীতে করে। আবার এও হতে পারে, নির্দিষ্ট সময়ে বিমান অবতরণ করেছে কিন্তু যে তাকে রিসিভ করবে, সে কোন কারণে -যেমন অলসতা, ঘুম, রাস্তায় ভিড় ও পথে গাড়ী নষ্ট ইত্যাদি কারণে- সময় মত বিমাণ বন্দরে উপস্থিত হতে পারেনি। তখনতো সে একা, যে কোন সমস্যায় পড়তে পারে।  তারপরও যদি ধরে নেয়া যায়, সে নির্দিষ্ট সময়ে পৌছেছে এবং তাকে রিসিভও করেছে, কিন্তু বিমানের মধ্যে সে যার পাশে বসবে সে পুরুষ সে তাকে ধোকায় ফেলতে পারে এবং তাদের উভয়ের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠতে, পারে যেমনটি বর্তমানে হয়ে থাকে।
মোট কথা: নারীদের জন্য উচিত হলো, সে আল্লাহকে ভয় করবে এবং তার অন্তরে একমাত্র আল্লাহরই ভয় থাকবে। আর তারা কখনোই চাই হজের সফর হোক অথবা অন্য কোন সফর  মাহরাম ছাড়া কোথাও যেন সফর না করে, প্রাপ্ত বয়স্ক ও জ্ঞানী মাহরাম ছাড়া তার জন্য সফর করা বৈধ নয়।

আল্লাহই ভালো জানেন।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...