Friday 22 August 2014

জুমুআর খুৎবা: সত্যবাদিতা অবলম্বন ও মিথ্যা পরিত্যাগ (ভিডিও সহ)


জুমুআর খুৎবা
সত্যবাদিতা অবলম্বন ও মিথ্যা পরিত্যাগ
বক্তব্য: শাইখ কামালুদ্দীন জাফরী (হাফিযাহুল্লাহ)
পাঠ সংক্ষেপ
খুতবার উদ্দেশ্য : ১-মুসলিম উম্মার আচার-আচরণে সততা ও সত্যবাদিতার প্রতিষ্ঠা২-মিথ্যা থেকে হুঁশিয়ার করা৩-মানুষের মাঝে আস্থা বীজবপন করা
الْحَمْدُ لِلَّهِ نَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا، مِنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، أَرْسَلَهُبِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ، مَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ رَشَدَ، وَمَنْ يَعْصِهِمَا فَإِنَّهُ لَا يَضُرُّ إِلَّا نَفْسَهُ وَلَا يَضُرُّ اللهَ شَيْئًا، اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِوَأَصْحَابِهِ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيِنِ، أَمَّا بَعْدُ :
মুহতারাম মুসল্লীবৃন্দ! সত্য কথা বলা ও সৎভাবে জীবনযাপন করা মহৎ মানুষের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা কথা বলা ও অসৎ জীবন যাপন করা অসৎমানুষের লক্ষণ। সত্যবাদিতা হলো ঈমানের পূর্ণতাদানকারী একটি মহৎ গুণ। ইসলামের দাবি হলো সততানির্ভর জীবন, যে জীবনে থাকে না কোনোঅসত্যের চিহ্ন। সত্যবাদিতা নির্ভেজাল ও নির্মল ঈমানের জন্ম দেয় এবং সত্যবাদী ব্যক্তিরাই প্রকৃত অর্থে দুনিয়া-আখিরাতে সফলকাম হয়ে থাকে।সত্যবাদী-সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তিরাই আল্লাহর ওপর যথোপযুক্ত তাওয়াক্কুল ও ভরসা রাখে; দুর্যোগ ও দুর্ভোগের সময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়; স্বচ্ছলতার সময়ঐকান্তিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সত্যবাদীরাই কল্যাণকর কাজে পরস্পরে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এবং অকল্যাণকর কাজে তারা হয়প্রতিবাদী-বিদ্রোহী। এ সব কারণেই আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাকওয়া ও আল্লাহ-ভীতি ও সত্যবাদী লোকদের সংস্রব অবলম্বন করার জোর নির্দেশদিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (সূরাআত-তাওবা  : ১১৯)।

সাদেকীন অর্থ যারা বোধ ও বিশ্বাসে সত্যবাদী, কাজে-কর্মে সত্যবাদী এবং লেনদেন, বেচাকেনাসহ সকল ক্ষেত্রে সত্যাশ্রয়ী। মুসলিম উম্মাহর সকলসদস্যের জন্য এটা আবশ্যক যে তারা জীবন চর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যকে ফুটিয়ে তুলবে। সত্যের চর্চা ও অনুশীলকে সার্বক্ষণিক বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে।সত্যবাদিতা ধরে রাখতে গিয়ে যদি আর্থিক ক্ষতিও সহ্য করতে হয় তবু তারা সত্যকে ধরে রাখবে। আর এভাবেই তরা সক্ষম হবে আল্লাহর পক্ষ হতেঅফুরান  বরকত লাভের। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا، فَإِنْ صَدَقَاوَبَيَّنَا، بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا، مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا ‘ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই (ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া নাকচ করার) ইখতিয়ার রাখে যতক্ষণ না তারাপরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা যদি সত্য বলে এবং ক্রটি-বিচ্যুতি বলে দেয়, তাহলে উভয়ের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেয়া হয়। আর যদি তারা মিথ্যাবলে এবং পণ্যের দোষ লুকিয়ে রাখে তাহলে তাদের বেচাকেনার বরকত ধ্বংস করে দেয়া হয়’ (মুসলিম)।
সততা ও সত্যবাদিতা সম্পর্কে কুরআন মাজীদে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। সত্যবাদী ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। ইরশাদহয়েছে : هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا‘ আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকার করবে।তাদের জন্য জান্নাতে রয়েছে; যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নদী। তারা তাতেই থাকবে চিরকাল’ (সূরা আল মায়েদা : ১১৯)।
অর্থাৎ পার্থিব জগতে তাদের সততা পারলৌকিক জীবনে উপকারী হবে। বিচার দিবসে আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি থেকে সত্যবাদিতাই তাদেরকে বাঁচিয়ে দেবে।ইরশাদ হয়েছে :وَبَشِّرِ الَّذِينَ آَمَنُوا أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ‘এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা’ (ইউনুস : ২)।
যারা সত্যকে ধারণ করে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নেয় তাদেরকে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকী বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: وَالَّذِي جَاءَبِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ‘আর যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হলো মুত্তাকী’ (যুমার : ৩৩)।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, শুধু নিজে নিজে সত্যবাদী হলেই চলবে না বরং যারা সত্যবাদী তাদেরকে সত্যবাদী বলে সত্যায়ন করাও জরুরী। কারণঅনেকেই অহংকারবশত বা হিংসার বশবর্তী হয়ে সত্যবাদীকে সত্যায়ন করতে অস্বীকার করে।
সত্যবাদিতা এমন মহৎ গুণ যে আল্লাহ তাআলা নিজেই এ গুণে গুণান্বিত বলে উলে¬খ করেছেন। সত্যবাদিতা হলো আল্লাহর গুণ। ইরশাদ হয়েছে :قُلْصَدَقَ اللَّهُ ‘বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন’(আল ইমরান: ৯৫)।
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন :  وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا ‘আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে’? (নিসা : ৮৭)।
আমাদের একটি ভুল ধারণা এই যে সত্যবাদিতা শুধু কথার জগতে সীমিত। পক্ষান্তরে সত্যবাদিতার ক্ষেত্র সুদূরবিস্তৃত। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায়, সত্যবাদিতা মৌলিকভাবে তিন প্রকার-
এক. কথার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা। অথাৎ মানুষের জিহ্বা সত্যবাদিতা শেকড়ে সুদৃঢ়ভাবে স্থির থাকবে যেভাবে স্থির থাকে ধানের শীষ ধান গাছে।
দুই. কর্মের ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা : অর্থাৎ ব্যক্তির আমল ও কর্ম স্থির থাকবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এঁকে দেয়া সীমানার ভেতর যেমন স্থির থাকে মাথাশরীরের ওপরের অংশে।
তিন. সার্বিক অবস্থার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা। অর্থাৎ অন্তরের আমল ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল ইখলাসের ভিত্তিমূলে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া। এই তিনপ্রকারের সত্যবাদিতায় নিজকে দাঁড় করাতে পারলেই বলা সঙ্গত হবে যে কোনো ব্যক্তি সিদ্ক বা সততা-সত্যবাদিতা নিয়ে এসেছে বা সত্যবাদিতার গুণেযথার্থভাবে গুণান্বিত হয়েছে। আর এই তিন প্রকারের সত্যবাদিতায় ব্যক্তি যতই অগ্রসর হবে তার সিদ্দীকিয়াতের মাত্রাও ততো বেড়ে যাবে। আবু বকরসিদ্দীক রাযি. এর সিদ্দীকিয়াতের সর্বোচ্চ শেখরে অধিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে এই তিন প্রকারের সত্যবাদিতায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের উৎকর্ষ সাধনই কারণ ছিল।এ তিন প্রকারের সত্যবাদিতার সারমর্ম হলো নিম্নরূপ-
কথার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতার অর্থ- সকল প্রকার মিথ্যা থেকে নিজের যবানকে হিফাযত করা। সদাসর্বাদ সত্য বলা এবং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতাঅবলম্বন করা; কেননা মানুষ জিহ্বাকে ব্যবহার করে কি কি কথা বলেছে তা কিয়ামতের দিন আল¬াহ তাআলা স্বয়ং জিহ্বাকেই জিজ্ঞাসা করবেন।ইরশাদ হয়েছে : يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘যেদিন তাদের জিহ্বাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত,সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে (সূরা আন-নূর : ২৪)।
কর্মে সত্যবাদিতা হলো ব্যক্তির অন্তর ও বহির একরকম হওয়া। ভেতরে একরকম বাইরে অন্যরকম এরূপ না হওয়া। আবদুল ওয়াহেদ ইবনে যায়েদ আলবসরী, হাসান আল বসরী রহ. সম্পর্কে বলেন, হাসান আল বসরী যখন কোনো কাজের নির্দেশ দিতেন তিনি অন্যদের তুলনায় সে কাজে অধিক আমলকারীথাকতেন। আর যদি তিনি কোনো বিষয় থেকে কাউকে বারণ করতেন তবে তিনি অন্যদের তুলনায় সে বিষয়ে অধিক দূরত্বে অবস্থান করতেন। অন্তর ওবহির সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে হাসান আল বসরীর মতো অন্য কোনো মানুষকে আমি দেখিনি’।
সার্বিক অবস্থার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের সত্যবাদিতা। যেমন ইখলাস ও ভয়, তাওবা ও আশা, যুহদ, আল্লাহ ও তার রাসূলের মহব্বত,আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ইত্যাদির ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা। এ কারণে ‘আ‘মালুল কুলূব’ বা অন্তরাশ্রিত সকল আমলের মূল হলো সত্যবাদিতা। মুমিন যখনএসব অবস্থায় সত্যবাদী হয় তখন সে উঁচু পর্যায়ে চলে যায়। আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বেড়ে যায়। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّواوُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِيالرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي  الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ  ‘ ভালো কাজ এটা নয়যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ  হলো যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ওনবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতেএবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদীএবং তারাই মুত্তাকী’ (সূরা আল বাকারা:১৭৭)।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ, أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ
দ্বিতীয় খুৎবা
الْحْمْدُ لِلَّهِ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ السَّلَامِ، رَفَعَ مَنَارَ الْإِسْلَامِ، وَعَمَّ خَلْقَهُ بِالنِّعَمِ الْعِظَامِ، أَحْمَدُ رَبِّيْ وَأَشْكُرُهُ، وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ وَأَسْتَغْفِرُهُ، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ ذُوْ الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، وَأَشْهَدُ أَنَّ نَبِيَّنَا وَسَيِّدَنَا مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِأَجْمَعِيْنَ ، أَمَّا بَعْدُ: فَاتَّقُوا اللهَ تَعَالَى وَأَطِيْعُوْهُ، وَتَقَرَّبُوْا إِلَيْهِ بِمَا يُرْضِيْهِ.
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! ইসলাম সত্যবাদিতা ও সত্যবাদীদের সম্মান করে, মর্যাদা দেয়। আর যারা মিথ্যাবাদী তাদেরকে ঘৃণা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিনঅবস্থান নেয়। মিথ্যা ভয়ঙ্কর খিয়ানতের আলামত; নিফাক ও কপটতার আলামত। হাদীসে এসেছে : آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ، إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ  أَخْلَفَ،وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- সে কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, তার কাছে কিছু আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে’ (বুখারী)। বরং মিথ্যা ইসলামের সাথে কখনো মিলে না, মিলতে পারে না। মুসলমানের প্রকৃতিতে কখনো মিথ্যাচারিতা থাকতে পারে না। খেয়ানত করারপ্রবণতা থাকতে পারে না। ঈমান ও পৌরুষত্ব যতক্ষণ জীবিত থাকে, যতক্ষণ একজন ব্যক্তি দীনের ব্যাপারে, নিজের ইজ্জত-সম্মানের ব্যাপারে সজাগথাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মিথ্যার কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে যেতে পারে না।
মুহতারাম মুসল্লীবৃন্দ! দুঃখের বিষয় হলো আমরা যদি আজ মুসলমানদের অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখি, তা হলে এ ব্যাপারে চরম উদাসিনতা লক্ষ্য করতেপাই। এর কারণ অধিকাংশ মুসলমানের ঈমানী দুর্বলতা যা উত্তর-আধুনিকতার বর্তমান সময়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। আজ মুসলমানদের মধ্যেপাপ-গুনাহ ছড়িয়ে পড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। মানুষের জীবনে দুনিয়া-প্রীতি বেড়ে গিয়েছে মারাত্মক আকারে। যার কারণে মানুষের কথার জগৎ থেকেসত্যবাদিতা বিদায় হয়েছে। কাজের জগৎ থেকে সত্যবাদিতা বিদায় হয়েছে। যার কারণে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে যার প্রতি শতভাগ আস্থারাখা সম্ভব। কেননা সত্যবাদিতাই হলো আস্থার কারণ। হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ، وَإِنَّالْكَذِبَ رِيبَةٌ ‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা হলো আস্থার কারণ, আর মিথ্যাবাদিতা হলো সংশয় সন্দেহের কারণ’ (তিরমিযী)।
বর্তমানে প্রচলিত মিথ্যার আকার প্রকৃতি
এক. ছোট বাচ্চাদের সাথে মাতা-পিতার মিথ্যাচারিতা। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো বাচ্চাদেরকে সত্যবাদিতার পবিত্র বলয়ে মানুষ করা। সকল প্রকারমিথ্যা থেকে তাদেরকে দূরে রাখা; যাতে বাচ্চারা কথায় ও কাজে সত্যাশ্রিত হয়ে, স্পষ্টবাদী হয়ে, নির্ভীক হয়ে বড় হয়ে ওঠে। আবদুল্লাহ ইবনে আমেররাযি. বর্ণনা করেন, ‘আমার মা আমাকে একদিন ডাকলেন। আমি তখন ছোট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমাদের মাঝে বসা। মাআমাকে বললেন,‘এসো, আমি তোমাকে একটি জিনিস দেব। তখন রাসূলুল্লাহ   সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন,‘তুমি ওকে কি দিতেচেয়েছ’? মা বললেন, ‘আমি ওকে খেজুর দিতে চেয়েছি’। তিনি বললেন,‘তুমি যদি ওকে কিছু না দিতে, তাহলে তোমার আমল-নামায় একটি মিথ্যা লিখাহত’। আবু হুরাইরা রাযি. বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : : مَنْ قَالَ لِصَبِيٍّ: تَعَالَ هَاكَ ثُمَّ لَمْ يُعْطِهِ، فَهِيَ كِذْبَةٌ  ‘যেব্যক্তি তার বাচ্চাকে বলল, এসো, নাও। এরপর সে তাকে কিছু দিল না, তবে তা হবে মিথ্যা’ (আহমদ, হাসান)।
 আমাদের উচিত এই পূত-পবিত্র নববী আদর্শের ওপর বাচ্ছাদেরকে মানুষ করা। ইসলামী ভাবধারা ও সংস্কৃতি অনুযায়ী বাচ্চাদেরকে গড়ে তোলা।
দুই. কথায় ও কাজে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। এরূপ করা নিঃসন্দেহে কবীরা গুনাহ, বড় অন্যায়। শুধু তাই নয় বরং এরূপ ব্যক্তি আল্লাহর অভিসম্পাদেরউপযোগী। ইরশাদ হয়েছে :فَنَجْعَلْ لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ ‘মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা’নত করি’ (সূরা আলে ইমরান:৬১)।
আনাস রাযি. থেকে এক বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ، إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَأَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে খেলাফ করে, আমানত রাখলে খিয়ানত করে’(বুখারী ওমুসলিম)।
তিন : ওয়াদা-খলাপি প্রসার পাওয়া। উপরোল্লিখিত হাদীসে ওয়াদা-খেলাপির কথা বলা হয়েছে। আর এ ওয়াদা-খেলাপি বর্তমানে প্রকাশ্য একটি ঘটনায়পরিণত হয়েছে। এমনকি এমন অনেকেই রয়েছেন যারা ওয়াদা-খেলাপিতে খুবই প্রসিদ্ধ। তাদের নাম আসলেই বলে দেয়া যায় যে তারা ওয়াদাখেলাপকরে অভ্যস্ত। ওয়াদা-খেলাপের কিছু আকার প্রকৃতি নিম্নরূপ-
ওজর ছাড়াই ওয়াদাকৃত কোনো স্থানে বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়া। ওয়াদাকৃত সময়ে না এসে দেরি করে আসা। উদাহরণত কোনো ব্যক্তি আপনাকেওয়াদা দিল যে তিনি আটটার সময় আসবেন, পরে দেখা গেল তিনি আসলেন নয়টার সময়। আর এসে এই ওজর পেশ করলেন যে আসার পথে আমিএকটি দোকানে ঢুকে কিছু কেনাকাটি করেছি। আর এটা খুবই দুঃখজনক যে যাদের বাহ্যিক বেশভূষা থেকে তাকওয়া পরহেযগার বলে বিশ্বাস হয়, তারওওয়াদা ভঙ্গে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। এটা সত্যিই আফসোস ও পরিতাপের বিষয়।
চার. আমানতের খিয়ানত। বর্তমানে এমন অনেককেই দেখা যায় যারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথার্থরূপে পালন করে না। যেমন অফিসের কাজকর্মেফাঁকি দেয়া। দেরি করে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হওয়া। কর্মে ক্ষেত্রে উপস্থিত হওয়ার পর আলাপচারিত, ফোন করা ইত্যাদিতে সময় কাটিয়ে দেয়া। অসুস্থ নাহয়েও অসুস্থতার ছুটি কাটানো। অথচ এমন ব্যক্তিরা মাস শেষে বেতন-ভাতা ঠিকই হাসিল করে নেয়। কর্মক্ষেত্রে এভাবে মিথ্যাচারিতার আশ্রয়ে পরিশেষেনিজের পাওনা কড়ায়-গণ্ডায় হিসেব করে বুঝে নেয়ার কোনো অধিকার ইসলামী শরীয়ত কাউকে দেয়নি।
পাঁচ. বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া। যেমন বিক্রেতা তার পণ্যের কোনো দোষ গোপন করে পণ্যটি বিক্রি করে দিল আর এই বলে ওজর পেশকরল যে এটা বিক্রেতার ওপর অর্পিত দায়িত্ব। অথচ বিক্রেতার উদ্দেশ্য হলো তার পণ্যটি ভালো মূল্যে বিক্রি করা। বিক্রেতা এটা ভুলে যায় যে পণ্যেরদোষত্র“টি গোপন করার অর্থ হলো বেচাকেনার বরকত চলে যাওয়া। হাকীম ইবনে হিযাম রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন: الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا، فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا، بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا، مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا ‘ক্রেতা-বিক্রেতার লেনদেন নাকচ করার অধিকার রয়েছে যতক্ষণ না তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদি তারা সত্য বলে এবং কোনো কিছু গোপননা রাখে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেয়া হয়। আর যদি তারা গোপন করে এবং মিথ্যা বলে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত ধ্বংস করে দেয়াহয়’(বুখারী ও মুসলিম)।
ছয়. সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও দারিদ্র্য ও প্রয়োজনগ্রস্ততার দাবি করা। আবু হুরায়রা রযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا، فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا. ‘ যে ব্যক্তি সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সাওয়াল করল সে যেন একটি তপ্ত অঙ্গারসাওয়াল করল’(মুসলিম)।
সাত. বিবাহের পূর্বে বর ও কনে উভয়েই নিজ নিজ দোষ গোপন করা। এ দোষ চাই দৈহিক হোক অথবা চারিত্রিক। বরং এর বিপরীতের কেবল ভালোদিকগুলো প্রকাশ করা। আর তা অতিরঞ্জিত আকারে বাড়িয়ে বলা। এ বিষয়টি বিবাহের বরকতকে নস্যাৎ করে দেয়।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের যুগের ব্যবসায়ীরা অধিক পরিমাণে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। তারা ক্রেতাদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য নানা ধরনের মিথ্যার আশ্রয়নেয়। পণ্যের ক্ষেত্রে, দামের ক্ষেত্রে তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর চেয়েও মারাত্মক হলো, অনেক ব্যবসায়ী মিথ্যা কসম খেতেও বিন্দুমাত্র ভায় পায়না। অথচ নবী কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যা কসমকে কবীরা গুনাহর মধ্যে শামিল করেছেন। হাদীসে এসেছে, ‘কবীরা গুনাহহলো- আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয়া। মানুষ হত্যা করা। কোনো জিনিসকে কেন্দ্র করে মিথ্যা কসম খাওয়া’ (বুখারী)। ইবনে বাত্তালরা. বলেন: ‘ইয়ামিনে গামুস এমন কসম যা কোনো বস্তুকে কেন্দ্র করে করা হয়, যদিও সে জানে যে সে মিথ্যা বলছে। আর এ ধরনের কসম খাওয়ারউদ্দেশ্য হলো কাউকে রাজি করানো অথব কানো সম্পদ হাতিয়ে নেয়া। এটা এমন কসম যার কোনো কাফফারা হয় না। উপরšু— যারা পণ্য চালিয়েদেয়ার জন্য মিথ্যা কসম খায় তাদের ব্যবসায় বরকত হয় না। কেননা বরকত তো ঠিক তখনই হয় যখন ক্রেতা-বিক্রেতা সত্যবাদিতার পরিচয় দেয়, পণ্যেদোষত্র“টি গোপন না করে সব কিছু উন্মুক্ত করে দিয়ে তবেই বিক্রি করে।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের মধ্যে যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তাদের উচিত হবে যাদের সাথে তারা ওঠা-বসা করে, লেনদেন করে, তাদের সবারসাথে সত্যবাদিতা বজায় রাখা, সততা বজায় রাখা। তারা যদি এরূপ করতে পারে তবে তাদের রিযক বেড়ে যাবে। ইরশাদ হয়েছে : وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىآَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‘ আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবংতাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারাযা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (সূরা আল আরাফ:৯৬)।
     আর আল্লাহ তাআলার তাকওয়া অবলম্বন আল্লাহর পক্ষ হতে রিযক লাভের একটি নিশ্চিত মাধ্যম। ইরশাদ হয়েছে: وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا.وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেনযা সে কল্পনাও করতে পারবে না’ (সূরা আত-তালাক:২-৩)।
সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা একটি মারাত্মক অপরাধ। মিথ্যা সাক্ষ্য একটি ঘৃণ্য বিষয়। আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় কাজ ঘৃণা করেন। ইরশাদ হয়েছে:فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ ‘সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যা কথা পরিহার কর’ (সূরা আল হাজ্জ:৩০)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ وَمَنْ يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آَثِمٌ قَلْبُهُ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ ‘আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না এবং যে কেউ তা গোপনকরে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী। আর তোমরা যা আমল কর, অল্লাহ সে ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত’ (সূরা আল বাকারা: ২৮৩)।
সত্যবাদিতার ফায়দা
১-জান্নাতে লাভে ধন্য হওয়া: ‘জান্নাতের আমল কী’? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনিবলেন,‘সত্যবাদিতা’(আহমদ)। আল কুরআন অনুযায়ী কিয়ামতের দিন সত্যবাদিতাই মানুষের উপকারে আসবে, মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে নেবে।আল্লাহ তাআলা বলেন : هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُالْعَظِيمُ ‘ এটা সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানেতারা হবে চিরস্থায়ী। অল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য। (সূরা আল মায়েদা:১১৯)।
২-কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তাওফীক আসা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কা‘ব ইবনে মালেক রাযি.- তাবুকযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা তিনজনের একজন- কে উদ্দেশ্য করে বলেন: أَمَّا هَذَا فَقَدْ صَدَقَ ‘তবে এ ব্যক্তি, সে নিশ্চয় সত্য বলেছে’ (বুখারী ও মুসলিম)।
৩-ধ্বংস থেকে বেঁচে যাওয়া ও সমস্যা-সঙ্কট দূরীভূত হওয়া। যে তিন ব্যক্তির গুহার মুখ পাথর দ্বারা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাদের বিষয়ে বর্ণিত হাদীসেএসেছে: لَا يُنْجِيكُمْ إِلَّا الصِّدْقُ فَليَدْعُ كُلُّ رَجُلٍ مِنْكُمْ بِمَا يَعْلَمُ أَنَّهُ قَدْ صَدَقَ فِيهِ ‘ তোমাদেরকে মুক্তি দেবে না তবে তোমাদের সততা। তাই তোমাদেরমধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি সে যে বিষয়ে সত্যবাদি ছিল বলে জানে তা উল্লে¬খ করে যেন দুআ করে’ (বুখারী)।
৪-অন্তরে শুদ্ধতা আসা। কেননা যে ব্যক্তি বাইরের কাজে সত্যবাদী সে অন্তরবিষয়ক আমলেও সত্যবাদী।
৫-সত্যবাদিতা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কারণ। ইরশাদ হয়েছে : هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ ‘এটা সেই দিন যেদনি সত্যবাদীগণকে তাদেরসততা উপকার করবে’(সূলা আল-মায়েদা:১১৯)।
৬-সত্যবাদিতা আস্থা ও প্রশান্তির কারণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: فَإِنَّ  الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ، وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ ‘ নিশ্চয় সত্যবাদিতাহলো আস্থার কারণ, আর মিথ্যাবাদিতা হলো সংশয় সন্দেহের কারণ’ (তিরমিযী)।
৭- ফেতনা সত্যবাদীর কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
৮-সত্যবাদিতা সকল কল্যাণের মূল। আর মিথ্যাচার সকল গোমরাহীর মূল।
৯-মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হতে সত্যবাদীর নিষ্কৃতি। কেননা মিথ্যা বলা, হাদীস অনুযায়ী, মুনাফিকের একটি আলামত।
১০ সত্যবাদিতা সঠিক দূরদৃষ্টি অর্জনে সাহায্য করে।
তাই ভাইয়েরা আমার! আসুন আমরা সকল ক্ষেত্রে সত্যবাদী হই। সততার পরিচয় দেই। সত্যবাদীদরে সঙ্গ অবলম্বন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকেতাওফীক দান করুন।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
 হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সাদিকীনদের দলভুক্ত করুন। কথায়-কাজে-আচরণে আমাদের সবাইকে সততার পরিচয় দেয়ার তাওফীক দান করুন।জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে সত্যাশ্রয়ী হয়ে জীবনযাপনের তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে মিথ্যা থেকে হিফাযত করুন।কপটতা ও মুনাফিকী থেকে হিফাযত করুন। আমীন ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...