Tuesday 19 August 2014

‘ইসলামিক গান’ নাম দিয়ে উম্মতকে ধোকা দেওয়া হচ্ছেঃ


কিছুদিন আগে আমাদের পেজের একজনকে দেখলাম দাড়ি চাছা একজন লোকের ছবি প্রোপিক দিয়ে রেখেছে – তার চাইতে বড় কথা হচ্ছে লোকটা ‘ইসলামিক গান’ নাম দিয়ে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করছে। উপদেশ দিলাম ছবি চেঞ্জ করার জন্য। জবাবে তিনি বলেন – সে নাকি আরব দেশের বড় ইসলামিক সিংগার!
ইসলামিক গান ও ইসলামিক সিংগার – এই জিনিসগুলো হচ্ছে ধোকা। ইউকের সামি ইউসুফ, আরব দেশের মাহের জেইন, ইউ এস এর ইউসুফ ইসলাম – এইরকম যত্ত সিংগার আছে ‘ইসলামিক’ নাম দিয়ে এরা গানে উলটা পালটা কথা বলে যা অনৈসলামিক, এইগুলোতে হারাম বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে কিন্তু এই ফেতনাবাজ লোকগুলো দাবী করে এইগুলো নাকি হালাল। এরাই হচ্ছে হাদীসে বর্ণীত সেই লোকগুলো যারা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল করে নিবে।
উর্দু, হিন্দী, গজল, শায়ের, কাওয়ালী এইগুলো আরো নিকৃষ্ট, এইগুলোর মাঝে শীরকি ও কুফুরী কথা দিয়ে ভর্তি। স্মরণ করা যেতে পারে (লোকমুখে শোনা), কিছুদিন আগে ভারতীয় পথভ্রষ্ট গায়ক এ আর রহমান বাংলাদেশে এসে সূফীবাদীদের মাযার পূজার গান গেয়েছে – যেইগুলো শুনতে যায় বেনামাযী, ফাসেক, বেপর্দা, বেহায়া নারী ও পুরুষেরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে।
এইভাবে মোবাইলে গান রাখা, ক্বুরান তেলাওয়াত না শুনে, হাদিস, তাফসীর না শুনে ফাসেক বেদ্বীন লোকদের হারাম গানগুলো শোনা বাসায়, রাস্তায়, গাড়িতে এইগুলো বুদ্ধিমান মুসলমানদের কাজ না। যাইহোক এইগুলো নিয়ে আলেমদের বিস্তারিত ফতোয়া দেখুনঃ-
নাশিদ/ইসলামিক গান/ গজল/কাওয়ালী/সামা’ নিয়ে সউদী আলেমদের ফতোয়াঃ
ফতোয়া ১:
প্রশ্নঃ শায়খ বিভিন্ন জলসা ও সমাবেশে ধফ বা কোনো মিউজিক্যাল এফেক্ট ছাড়া যে “ইসলামিক নাশিদ” গাওয়া হয় এর হুকুম কি?
উত্তরঃ এর কোনো ভিত্তি নেই, এটা একটা নতুন আবিষ্কার (বিদআ’ত)।
এই নাশিদকে ইসলামের অংশ বলা হচ্ছে এবং নাম দেওয়া হয়েছে “ইসলামিক গান”।. এর দ্বারা তারা বুঝাতে চাচ্ছে – ইসলাম এই ধরণের গানের হুকুম দিয়েছে। কিন্তু এর কোনো ভিত্তি নেই।
অপরদিকে এই গানগুলো যদি আল্লাহর আনুগত্য ও নৈকট্য অর্জনের জন্য লেখা হয়ে থাকে, নিশ্চিতভাবে এটা সুফীদের লক্ষণ। সুফীরাই প্রথম মুসলমানদের মাঝে নাশিদ চালু করেছিলো। তারা এটাকে আল্লাহর ইবাদত হিসেবে চালু করেছিলো (একটা বেদাত)।
একজন মুসলিমদের জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে সে এইগুলোর দিকে লক্ষ্য করবেনা। যেই সমস্ত কবিতার মাঝে উপকারী ও ভালো কথা আছে সেইগুলোর মাঝে কোনো দোষ নেই। এইগুলো কেউ একজন আবৃত্তি করলে কোনো দোষ নেই, কিন্তু কোনো জলসা ব সমাবেশে না, বা কয়েকজন একসাথে গাইবে এমন না। কবিতার কিছু উপকারী দিক আছে, মানুষ এইগুলো থেকে উপকৃত হতে পারে। যেমন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময় এমন সাহাবী ছিলো যিনি কবিতা লেখতেন। তারা তাদের কবিতা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে শোনাতেন। এমনিভাবে কেউ কাজ করতে করতে ক্লান্তি দূর করার জন্য কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। এটা নাশিদ না, এর দ্বারা সে কিছুটা কাজের বিরতি নিলো। কিন্তু সমাবেশে সে এইগুলো গাইবেনা, বা কয়েকজন একসাথে কোরাসে গাওয়া – এইসবগুলো মানুষ আবিষ্কার করে নিয়েছে।
কেউ যদি এইগুলোকে ইসলামের দিকে আরোপ না করে করে তাহলে সেটা “লাহু” - নিতান্তই বাজে কথা।
আর কেউ যদি এইগুলোকে ইসলামের দিকে আরোপ করে (অর্থাত ইসলামিক গান বলে) তাহলে সেটা বিদআ’ত হবে।
প্রশ্নকর্তাঃ শায়খ, আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। কিছু মানুষ এইগান শোনা অভ্যাসে পরিণত করেছে। তারা বাড়িতে, গাড়িতে এইগানগুলো শুনছে, একা বা ছেলেমেয়েদের সাথে – এরজন্য অনেক সময় নষ্ট করছে।
শায়খঃ যেহেতু এর কোনো ভিত্তি নেই সুতরাং এটা একটা ফিতনাহ। তাদের উচিত হচ্ছে কুরআনুল কারীমের তেলাওয়াত শোনা। অনুরূপভাবে ইসলামি শিক্ষামূলক ওয়াজ, লেকচার শোনা। নাশিদের জন্য সময় অপচয় করা ঠিকনা। এতে কোনো কল্যান নেই, বিনোদন ছাড়া।
ফতোয়া দিয়েছেন সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ শায়খ সালিহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান। ফতোয়ার লিংক –
ফতোয়া ২:
প্রশ্নঃ শায়খ কিছু নাশিদ আছে যা কয়েকজন একসাথে ধফের সাথে গাওয়া হয়। এই গানগুলোর ভালো অর্থ আছে এবং মানুষকে উতসাহ উদ্দীপনা দেয়। এইগুলোর ব্যপারে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃ ইসলামিক নাশিদের ব্যপারে অনেক কথা বলা হচ্ছে। অনেকদিন আগে আমি নিজে এইগুলো শুনেছিলাম। প্রথমদিকে যখন এইগুলো আসে তখন এটা ঠিক ছিলো। তখন এইগুলোর সাথে ধফ ছিলোনা। আর এইগুলো গানের মতো করে সুন্দর মিষ্টি সুরে গাওয়া হতোনা। তাই এইগুলো তখন কোনো ফিতনাহ সৃষ্টি করেনি। এই জিনিসগুলো (সুর/গান/বাদ্যযন্ত্রসহ গাওয়া) পরবর্তীতে মানুষ আবিষ্কার করে নিয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষ এইগুলো সাথে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে, ধফ বা অন্যান্য। এবং হারাম গানের মতো করে সুন্দর করে গাওয়ার প্রতিযোগিতা চালু হয়। তাই, আমি এই নাশিদগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট না। এর সবগুলো হারাম বলা যাবেনা, আবার সবগুলোকে হালালও বলা যাবেনা। বরং আমি যেই জিনিসগুলোর কথা বলেছি এইগুলো মুক্ত হলে নাশিদ জায়েজ হবে। তবে যাই হোক, নাশিদগুলো যদি ধফ, গানের মতো সুন্দর করে সুর দিয়ে গাওয়া হয় তখন এইগুলো শোনা না-জায়েজ।
ফতোয়া দিয়েছেন সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসায়মিন। ফতোয়ার লিংক -
ফতোয়া ৩:
প্রশ্নঃ সম্মানিত শায়খ, মার্কেটে কিছু টেপ বিক্রি করা হয় যেইগুলোতে বাদ্যযন্ত্র যেমন ধফ বা তবলা সহকারে নাশিদ আছে। এইগুলো শোনার হুকুম কি?
উত্তরঃ এইগুলো শোনা জায়েজ নয় – যদি এই বাদ্যযন্ত্র থাকে, ধফ বা অন্য যেকোনো কিছু। কিন্তু যদি কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র না থাকে তাহলে এর কথার দিকে দেখতে হবে। এইগুলো কি ভালো না খারাপ?
আমার উপদেশ তরুণদের প্রতি, তোমরা উপকারী জিনিসগুলো শোনো। উপকারী জিনিস হচ্ছে - কুরআনের তাফসীর, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীসের ব্যখ্যা, ইসলামী জ্ঞানের উপরে কোনো আলোচনা, যার দ্বারা সে নিজে ও অন্যেরাও উপকৃত হতে পারে।
কিন্তু এই নাশিদগুলো যেগুলোতে ধফ ছাড়া অন্যকোন বাদ্যযন্ত্র নেই, কথাগুলো ভালো হয় তাহলে বিয়ের উপলক্ষ্যে শুধু নারীরা ক্রয় করে, তাহলে তাদের জন্য এটা জায়েজ রয়েছে।
ফতোয়া দিয়েছেন সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসায়মিন (রহঃ)।
মূল ফতোয়ার লিংক -

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...