Wednesday 15 January 2020

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের গালিদাতাকে হত্যা করতে হবে, কিন্তু যদি সে তাওবাহ করে?


.
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل تقبل توبة من سب الله عز وجل أو سب الرسول صلى الله عليه وسلم؟
الإجابة: اختلف في ذلك على قولين:
القول الأول: أنها لا تقبل توبة من سب الله، أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، وهو المشهور عند الحنابلة، بل يقتل كافراً، ولا يصلى عليه، ولا يدعى له بالرحمة، ويدفن في محل بعيد عن قبور المسلمين.
القول الثاني: أنها تقبل توبة من سب الله أو سب رسوله صلى الله عليه وسلم، إذا علمنا صدق توبته إلى الله، وأقر على نفسه بالخطأ، ووصف الله تعالى بما يستحق من صفات التعظيم، وذلك لعموم الأدلة الدالة على قبول التوبة كقوله تعالى: {قل يا عبادي الذين أسرفوا على أنفسهم لا تقنطوا من رحمة الله إن الله يغفر الذنوب جميعاً}، ومن الكفار من يسب الله ومع ذلك تقبل توبتهم، وهذا هو الصحيح إلا أن ساب الرسول، عليه الصلاة والسلام تقبل توبته ويجب قتله، بخلاف من سب الله فإنها تقبل توبته ولا يقتل؛ لأن الله أخبرنا بعفوه عن حقه إذا تاب العبد، بأنه يغفر الذنوب جميعاً.
أما ساب الرسول صلى الله عليه وسلم، فإنه يتعلق به أمران:
أحدهما: أمر شرعي، لكونه رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهذا يقبل إذا تاب.
الثاني: أمر شخصي، وهذا لا تقبل التوبة فيه لكونه حق آدمي لم يعلم عفوه عنه، وعلى هذا فيقتل ولكن إذا قتل، غسلناه، وكفناه، وصلينا عليه، ودفناه مع المسلمين.
وهذا اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية وقد ألف كتاباً في ذلك اسمه: «الصارم المسلول في تحتم قتل ساب الرسول»، وذلك لأنه استهان بحق الرسول صلى الله عليه وسلم، وكذا لو قذفه صلى الله عليه وسلم فإنه يقتل ولا يجلد.
فإن قيل: أليس قد ثبت أن من الناس من سب الرسول صلى الله عليه وسلم، في حياته وقبل النبي صلى الله عليه وسلم، توبته؟
أجيب بأن هذا صحيح، لكن هذا في حياته صلى الله عليه وسلم، والحق الذي له قد أسقطه، وأما بعد موته فإنه لا يملك أحد إسقاط حقه صلى الله عليه وسلم، فيجب علينا تنفيذ ما يقتضيه سبه صلى الله عليه وسلم، من قتل سابه، وقبول توبة الساب فيما بينه وبين الله تعالى.
فإن قيل: إذا كان يحتمل أن يعفو عنه لو كان في حياته، أفلا يوجب ذلك أن نتوقف في حكمه؟
أجيب: بأن ذلك لا يوجب التوقف لأن المفسدة حصلت بالسب، وارتفاع أثر هذا السب غير معلوم والأصل بقاؤه.
فإن قيل: أليس الغالب أن الرسول صلى الله عليه وسلم، يعفو عمن سبه؟
أجيب: بلى، وربما كان العفو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم، متضمناً المصلحة وهي التأليف، كما كان صلى الله عليه وسلم يعلم أعيان المنافقين ولم يقتلهم، «لئلا يتحدث الناس أن محمداً يقتل أصحابه»، لكن الآن لو علمنا أحداً بعينه من المنافقين لقتلناه، قال ابن القيم رحمه الله: «إن عدم قتل المنافق المعلوم إنما هو في حياة الرسول صلى الله عليه وسلم فقط».
প্রশ্ন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ (عَزَّ وَجَلَّ) কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কি কবুল করা হবে?”
উত্তর: “এ ব্যাপারে ‘আলিমগণ দুটি মতে মতদ্বৈধতা করেছেন। যথা:
১ম মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে না। এটি হাম্বালীদের প্রসিদ্ধ অভিমত। বরং গালিদাতাকে (মুসলিম শাসক কর্তৃক) কাফির হিসেবে হত্যা করতে হবে। তার জানাযাহ’র নামাজ পড়া হবে না, তার জন্য রহমতের দু‘আ করা হবে না এবং মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরের কোনো স্থানে তাকে কবর দিতে হবে।
২য় মত: যে ব্যক্তি আল্লাহ কিংবা রাসূল ﷺ কে গালি দিয়েছে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে, যখন আমরা জানব যে, সে সত্যিকারার্থেই আল্লাহ’র কাছে তাওবাহ করেছে, ভুল করেছে বলে স্বীকার করেছে এবং মহান আল্লাহকে তাঁর প্রকৃত সিফাতে তা‘যীম (সম্মানসূচক বিশেষণ) দ্বারা বিশেষিত করেছে। যেহেতু ব্যাপকার্থবোধক দলিলসমূহ প্রমাণ করছে যে, তার তাওবাহ কবুল করা হবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহ’র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’।” (সূরাহ যুমার: ৫৩)

কাফিরদের কেউ কেউ আল্লাহকে গালি দেয়, তথাপি তাদের তাওবাহ কবুল করা হয়। এটিই বিশুদ্ধ মত। তবে রাসূল ﷺ কে গালিদাতার কথা ভিন্ন। তার তাওবাহ কবুল করা হবে, কিন্তু তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। পক্ষান্তরে আল্লাহকে গালিদাতার তাওবাহ কবুল করা হবে এবং তাকে হত্যা করা হবে না। কেননা আল্লাহ আমাদেরকে অবহিত করেছেন যে, বান্দা তাওবাহ করলে তিনি তাঁর হকের ক্ষেত্রে (বান্দার কৃত গুনাহ) মাফ করে দেন, আর তিনি সকল গুনাহ ক্ষমা করে থাকেন।
কিন্তু রাসূল ﷺ কে গালিদাতার সাথে দুটি বিষয় জড়িত। যথা:
এক. শার‘ঈ বিষয়; যেহেতু তিনি আল্লাহ’র রাসূল ﷺ। এক্ষেত্রে গালিদাতা তাওবাহ করলে তার তাওবাহ কবুল করা হবে।
দুই. ব্যক্তিগত বিষয়। এক্ষেত্রে গালিদাতার তাওবাহ কবুল করা হবে না। কেননা এটি মানুষের হক। আর এটা জানা যায় না যে, তিনি তাঁর হকের ব্যাপারে (সবাইকে) মাফ করে দিয়েছেন। এর ওপর ভিত্তি করে গালিদাতাকে হত্যা করতে হবে। কিন্তু তাকে হত্যা করা হলে, আমরা তাকে গোসল দিব, কাফন পরিহিত করব, তার জানাযাহ’র নামাজ পড়ব এবং মুসলিমদের সাথেই তাকে কবর দিব।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এই মতটি পছন্দ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটির নাম ‘আস-সারিমুল মাসলূল ফী তাহাত্তুমি ক্বাতলি সাব্বির রাসূল’। কেননা গালিদাতা রাসূল ﷺ এর হক নষ্ট করেছে। অনুরূপভাবে সে যদি রাসূল ﷺ কে মিথ্যা অপবাদ দেয়, তাহলেও তাকে হত্যা করা হবে, কশাঘাত করা হবে না।
যদি বলা হয়, এটি কি প্রমাণিত হয়নি যে, কিছু লোক রাসূল ﷺ এর জীবদ্দশায় তাঁকে গালি দিয়েছিল, তথাপি তিনি তাদের তাওবাহ কবুল করেছিলেন?
তাহলে এর জবাব হিসেবে বলা হবে, এটি সঠিক কথা। কিন্তু এটি তাঁর ﷺ জীবদ্দশায় ঘটেছে, এবং তিনি তাঁর হক বিলোপ করেছেন। পক্ষান্তরে রাসূল ﷺ এর মৃত্যুর পর তাঁর হক বিলোপ করার অধিকার কারও নেই। সুতরাং রাসূল ﷺ কে গালি দেওয়ার ফলে (অবধারিতভাবে) যে কর্তব্য পালনের প্রয়োজন দেখা দেয়, আমাদের জন্য তা বাস্তবায়ন করা ওয়াজিব। সে কর্তব্য হলো গালিদাতাকে হত্যা করা। আর গালিদাতার তাওবাহ কবুল হওয়ার বিষয়টি তার এবং আল্লাহ’র মধ্যকার ব্যাপার।
যদি বলা হয়, যেহেতু এরূপ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, এমন কিছু তাঁর জীবদ্দশায় হলে তিনি গালিদাতাকে ক্ষমা করে দিতেন, তাহলে এই সম্ভাবনা কি এটা আবশ্যক করছে না যে, আমরা তার বিধানের ক্ষেত্রে তাওয়াক্বকুফ (ক্ষান্ত হওয়া) অবলম্বন করব?
তাহলে এর জবাব হিসেবে বলা হবে, এই সম্ভাবনা তাওক্বকুফ অবলম্বন করাকে আবশ্যক করে না। কেননা গালি দেওয়ার কারণে গোলযোগ সৃষ্টি হয়। আর এই গালির প্রভাব যে কোন পর্যায়ে পৌঁছবে, তা (আমাদের) জানা নেই। সুতরাং মূলনীতি অনুযায়ী এর বিধানকে তার মূলের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
যদি বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাসূল ﷺ কি তাঁর গালিদাতাকে মাফ করে দেননি?
তাহলে এর জবাব হিসেবে বলা হবে, হ্যাঁ, অবশ্যই। কখনো কখনো রাসূল ﷺ এর জীবদ্দশায় মাফ করা হয়েছিল, এতে কল্যাণ নিহিত থাকার কারণে। আর সে কল্যাণ হলো হৃদ্যতা। যেমন রাসূল ﷺ নির্দিষ্টভাবে জানতেন যে, কারা মুনাফিক্ব। কিন্তু তিনি তাদেরকে হত্যা করেননি, যাতে মানুষ এই সমালোচনা করতে না পারে যে, মুহাম্মাদ তার সাথীদেরকে হত্যা করছে। কিন্তু বর্তমানে আমরা যদি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে জানতে পারি যে, সে মুনাফিক্ব, তাহলে অবশ্যই আমরা তাকে হত্যা করব। ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘সুবিদিত মুনাফিক্বকে হত্যা না করার বিষয়টি কেবল রাসূল ﷺ এর জীবদ্দশাতেই সীমাবদ্ধ’।”
·
তথ্যসূত্র:
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৫০-১৫২; দারুল ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৩ হিজরী।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...