Wednesday 15 January 2020

মানবরচিত বিধান দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে ইমাম ইবনু বায, শাইখ ইবনু জিবরীন, সালমান আল-‘আওদাহ, ‘আইদ্ব আল-ক্বারনী প্রমুখের মধ্যকার আলোচনা ·


পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
অধুনা দ্বীনী পরিমণ্ডলে একটি ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয় হলো—ওই ব্যক্তির ব্যাপারে শারী‘আহর হুকুম, যে আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করে না। আর এই বিতর্কিত বিষয়ে রয়েছে দুটি পক্ষ—সালাফী বা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত বিভিন্ন গাইরে-সালাফী দল এবং তাদের নেতৃবর্গ ও অনুসারীবৃন্দ। এই বিষয়ে সালাফীদের অবস্থান যথারীতি সালাফদের মানহাজেই রয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
তাদের অবস্থান হলো—যে আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করবে না সে কাফির, যদি তা হয় আল্লাহর আইনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে, অথবা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করতে নিজেকে বাধ্য মনে না করার কারণে, অথবা আল্লাহর আইনকে যুগের জন্য অনুপযোগী মনে করার কারণে, বা আল্লাহর আইনকে অপছন্দ করার কারণে, অথবা মানবরচিত কোনো আইনকে আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম বা সমপর্যায়ের মনে করার কারণে, বা আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোনো আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা হালাল মনে করার মাধ্যমে। আর এসব কারণ ছাড়াই যদি কেউ আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকে, তাহলে সালাফীরা তাকে কাফির ঘোষণা করে না, বরং সালাফীদের মতে তারা জালেম, অথবা ফাসিক্ব।
তবে এই বিষয়ের বিতর্কে সালাফীদের বিরোধী পক্ষ তথা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত বিভিন্ন গাইরে-সালাফী দল, তাদের নেতৃবর্গ এবং অনুসারীবৃন্দ—আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করে না এমন ব্যক্তিকে সরাসরি কাফির ঘোষণা করে থাকে। আবার অনেক সময় তারা বলে থাকে, আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করলে শুধু তখনই কাফির হবে না, যখন এটি করা হবে দুএকটা বা সামান্য কিছু বিষয়ে।
এই ধরনের মত পোষণকারীদের দা‘ঈ পর্যায়ের লোকেরা তাদের লেকচার, কিতাব, আর্টিকেল, দারস প্রভৃতির মাধ্যমে এই বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করে আসছে। আর সালাফীদের দা‘ঈ পর্যায়ের লোকেরাও একই কাজ করে আসছেন। এসব বিষয়ে দুই পক্ষের প্রধান ব্যক্তিবর্গের সামনাসামনি আলোচনা হয়নি বললেই চলে। তবে ব্যতিক্রম একটি ঘটনা ঘটে নব্বই দশকের প্রায় মাঝামাঝি সময়ের এক দিনে।
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একদল শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আহলুস সুন্নাহর ইমাম, শাইখুল ইসলাম ‘আব্দুল আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)। শাইখ তাঁর বক্তব্যে তাঁর শিক্ষক এবং তাঁর পূর্বে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী পদে আসীন আহলুস সুন্নাহর এক যুগশ্রেষ্ঠ ‘আলিম ও ফাক্বীহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখের (রাহিমাহুল্লাহ) স্মৃতিচারণ করেন এবং তা করতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ করে কাঁদতে শুরু করেন। একারণে বক্তব্য রেকর্ডকারী এই বক্তব্যের অডিয়ো ক্লিপটির নামকরণ করেন—

“ইবনু বাযের অশ্রু (ُاَلدَّمْعَةُ الْبَازِيَة)” নামে।
শাইখের বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনাকারী শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) সূরাহ মা’ইদাহর ৪৪ নম্বর আয়াত– “আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির”– প্রসঙ্গে সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র তাফসীরের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের উত্তরে শাইখ এই বিষয়ে সালাফী তথা আহলুস সুন্নাহর অবস্থান তুলে ধরেন। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল এই বিষয়ে সালাফীদের সাথে ভিন্নমত পোষণকারী পক্ষের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি, যাদের অন্যতম হলো সালমান আল-‘আওদাহ।
শাইখের উত্তর শুনে তারা এই বিষয়ে তাদের সন্দেহগুলো (শুবহাত) পেশ করতে থাকে এবং শাইখ আল্লাহর সাহায্যে একে একে সবগুলো সন্দেহ (শুবহাত) ধ্বংস করে দেন। এই কথোপকথনের মধ্যে আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করা বা না করার ব্যাপারটি ছাড়াও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়েও সালাফীদের অবস্থান—তাদের ইমাম শাইখ ইবনু বাযের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন: সংবিধান প্রণয়নকারীর ব্যাপারে হুকুম কী, অন্য আইন দিয়ে ইসলামী আইনকে প্রতিস্থাপনকারীর হুকুম কী, কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে ‘আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার’ বর্জন করা আর মানবরচিত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘আল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা’ বাদ দেওয়ার হুকুম একই কিনা ইত্যাদি।
এসব বিষয়ে শাইখ ইবনু বাযের দেওয়া উত্তরগুলো ওইসব নিফাক্বে আক্রান্ত জালেমদের মুখে চপেটাঘাত—যারা শাইখ ইবনু বায এবং তাঁর অনুরূপ মত পোষণকারী ‘আলিমদের অনুসরণের দাবি করে, কিন্তু অনুসরণ করে সালমান আল-‘আওদাহ ও তার অনুরূপ মত পোষণকারীদের এবং ‘যারা প্রকৃতপক্ষেই শাইখ ইবনু বায এবং তাঁর অনুরূপ মত পোষণকারীদের অনুসরণ করে’—তাদেরকে “মাদখালী” উপাধি দেয়। এসব নিফাক্বে আক্রান্ত জালেমদের জন্য আল্লাহর কাছে হিদায়াতের দু‘আ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের নাতিদীর্ঘ ভূমিকা সমাপ্ত করছি এবং পাঠকদের জন্য ইমাম ইবনু বায এবং শাইখ ইবনু জিবরীন, সালমান আল-‘আওদাহ ও ‘আইদ্ব আল-ক্বারনী প্রমুখের মধ্যকার কথোপকথনটি পেশ করছি।
·
কথোপকথনটির সরল বঙ্গানুবাদ:
শাইখ ইবনু জিবরীন: মহান আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির।” [সূরাহ মাইদাহ: ৪৪] এই আয়াতের তাফসীরে ইবনু ‘আব্বাসের ব্যাখ্যা কি এই যে, এটি হলো ‘কুফর দূনা কুফর’ (এমন কুফর যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না)?
ইমাম ইবনু বায: যতক্ষণ না সে নিজের জন্য তা (আল্লাহ’র আইন দিয়ে বিচার না করা) হালাল করে নেয়। অর্থাৎ, সে ঘুষ নিয়ে ফায়সালা দেয়, অথবা তার শত্রুর বিরুদ্ধে ফায়সালা দেয় অথবা তার বন্ধুর পক্ষে ফায়সালা দেয়, তাহলে এটি কুফর দূনা কুফর। তবে সে যদি নাজিলকৃত বিধান ছাড়া বিচার করা হালাল করে নেয় এবং শারী‘আহ বর্জন করা হালাল করে নেয়, তাহলে সে (ইসলাম থেকে খারিজকারী কুফর করার কারণে) কাফির হয়ে যাবে। যখন সে তা (আল্লাহ’র আইন দিয়ে বিচার না করা) হালাল করে নিবে, তখন কাফির হয়ে যাবে। কিন্তু সে যদি ঘুষ নিয়ে বিচার ফায়সালা করে, তবে সে বড়ো কুফর সংঘটনকারী কাফির হবে না, বরং ‘কুফর দূনা কুফর’ সংঘটনকারী কাফির হবে। যেমনটি ইবনু ‘আব্বাস, মুজাহিদ এবং অন্যান্যরা বলেছেন।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: এখানে একটি বড়ো সমস্যা রয়েছে–আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন–তা হলো— সংবিধান দিয়ে শারী‘আহর বিধিবিধান পরিবর্তন করার ব্যাপারটি।
ইমাম ইবনু বায: এটি একটি গবেষণার বিষয়, সে যদি কাজটি করে তা হালাল করার মাধ্যমে...
(উপস্থিত লোকটি শাইখের কথার মাঝখান দিয়ে কথা শুরু করে)
ওই উপস্থিত ব্যক্তি: সে কি দাবি করতে পারে যে, সে কাজটি হালাল করছে না?
ইমাম ইবনু বায: সে যদি তা হালাল মনে করে সম্পন্ন করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কিন্তু যখন সে এটা তার লোকদের খুশি করার জন্য করে, অথবা অন্য কোনো কারণে, তাহলে এটা হলো কুফর দূনা কুফর (যেটি তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না)। কিন্তু এটি মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব যে, তারা তার সাথে যুদ্ধ করবে, যদি তাদের তা করার সক্ষমতা থাকে, যতক্ষণ না সে শারী‘আহর বিধান ‘ইলতিযাম’ করে তথা নিজের ওপর আবশ্যকীয় বলে মনে করে। সুতরাং যে কেউ দ্বীন পরিবর্তন করে, হোক তা যাকাত বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে, যতক্ষণ না সে (আল্লাহর বিধান) ‘ইলতিযাম’ করে তথা নিজের ওপর আবশ্যকীয় বলে মনে করে।
[‘ইলতিযাম’ একটি সংক্ষিপ্ত শব্দ, যা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। অনেকেই শব্দটির প্রকৃত মর্মার্থ না জানার কারণে ভুলে পতিত হন। ইলতিযামের বিপরীত ইমতিনা‘। ইলতিযাম মানে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, সে শারী‘আহ কর্তৃক সম্বোধিত (অর্থাৎ, আল্লাহ তার ওপর শারী‘আহর বিধান অপরিহার্য করেছেন এই বিশ্বাস পোষণ করা)। আর ইমতিনা‘ মানে এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, সে শারী‘আহ কর্তৃক সম্বোধিত নয়। যেমন: যাকাত অস্বীকারকারীদের কর্ম। তারা বলেছিল, “যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব, তোমরা যাকাত প্রদান করো। কিন্তু আমরা শারী‘আহর এই সম্বোধনের অন্তর্ভুক্ত নই।”
শব্দটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন—
https://m.facebook.com/story.php…. – অনুবাদক]
·
ওই উপস্থিত ব্যক্তি: সে নির্ধারিত শাস্তি পরিবর্তন করেছে। সে নির্ধারিত শাস্তি পরিবর্তন করেছে যিনা এবং অন্যসব ব্যাপারে।
ইমাম ইবনু বায: অর্থাৎ সে নির্ধারিত শাস্তি (হুদূদ) প্রতিষ্ঠিত করে না। সে হত্যার পরিবর্তে নিজের ইচ্ছামত শাস্তি প্রয়োগ করে।
শাইখ ইবনু জিবরীন: অথবা কারারুদ্ধ করে।
ইমাম ইবনু বায: অথবা কারারুদ্ধ করে (যদ্দৃষ্ট – অনুবাদক)।
প্রশ্নকারী: সে (শাসক) সংবিধান রচনা করে, আল্লাহ‌ আপনাকে ক্ষমা করুন।
ইমাম ইবনু বায: আসল (أصل) হলো তার কাজটিকে (বড়ো) কুফর ঘোষণা না করা, যতক্ষণ না সে এটিকে হালাল করে। সে একজন গুনাহগার, সে কাবীরাহ গুনাহ করেছে এবং সে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত। এটি হলো কুফর দূনা কুফর, যতক্ষণ না সে এটিকে হালাল করে।
প্রশ্নকারী: যতক্ষণ না সে হালাল করে?!! কিন্তু সে কোনো কিছুকে হালাল করেছে কিনা তা তার অন্তরে রয়েছে, আমরা তা জানি না?!
ইমাম ইবনু বায: সঠিক। সে যদি তা দাবি করে। সে যদি দাবি করে যে, সে তা হালাল করেছে।
শাইখ ইবনু জিবরীন: যদি সে যিনা করার অনুমতি দেয় (হালাল করে), যতক্ষণ পর্যন্ত উভয় পক্ষই রাজি থাকে...
ইমাম ইবনে বায: হ্যাঁ, এটা (বড়ো) কুফর।
শাইখ ইবনু জিবরীন তাঁর কথা সম্পূর্ণ করে বলেন: একজন নারী তার নিজের ব্যাপারে স্বাধীন, সে কি নিজেকে বিক্রি করতে পারবে?
ইমাম ইবনু বায: তারা যদি এর প্রতি সন্তুষ্ট থেকে তা হালাল করে, তাহলে এটি (বড়ো) কুফর।
সালমান আল-‘আওদাহ: আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। যদিও সে কোনো রহিত আইন দিয়ে বিচার করে, যেমন ইহুদিদের আইন? আর সে লোকদের ওপর এই আইন মানা বাধ্যতামূলক করে, এবং এটিকে সে আইনবিধি বানায়, আর (এই আইন) প্রত্যাখ্যানকারী প্রত্যেককে জেল, নির্বাসন এবং মৃত্যুদণ্ড ও অনুরূপ কর্মের দ্বারা শাস্তি প্রদান করে?
ইমাম ইবনু বায: সে কি তা শারী‘আহর সাথে সম্পর্কিত করে (অর্থাৎ, সে যা করছে তা কি সে ইসলাম কর্তৃক অনুমোদিত বলে দাবি করে), না কি করে না?
সালমান আল-‘আওদাহ: সে এই ব্যাপারে মন্তব্য করা ছাড়াই এর দ্বারা বিচার করে। সে এটিকে প্রতিস্থাপিত বিষয় বানিয়েছে!
ইমাম ইবনু বায: সে যদি এই আইনকে শারী‘আহর সাথে সম্পর্কিত করে, তাহলে এটা কুফর।
সালমান আল-‘আওদাহ: এটা বড়ো কুফর না ছোটো কুফর?
ইমাম ইবনু বায: এটা বড়ো কুফর, যদি সে তা শারী‘আহর সাথে সম্পর্কিত করে। পক্ষান্তরে সে যদি তা শারী‘আহর সাথে সম্পর্কিত না করে এবং এটি (শুধু) তার নিজের বানানো আইন, তাহলে এটা বড়ো কুফর না। যেমন সেই লোকের ব্যাপারটি, যে কোনো শার‘ঈ আইন ছাড়া লোকদেরকে চাবুকাঘাত করে। সে নিজের প্রবৃত্তির কারণে লোকদের চাবুকাঘাত করে অথবা হত্যা করে। সে প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে লোকদেরকে হত্যাও করতে পারে।
·
সালমান আল-‘আওদাহ: আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। সুতরাং কোনো নির্দিষ্ট ঘটনাসংবলিত বিশেষ পরিস্থিতি (যখন শাসক আল্লাহ‌র আইন দিয়ে বিচার করে না), আর এমন পরিস্থিতি যখন শাসক সকল লোকের জন্য একটি আইনবিধি বা সংবিধান প্রণয়ন করে, এই দুই পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই?
ইমাম ইবনু বায: সেটা (আইন বা সংবিধান) যদি সে শারী‘আহর সাথে সম্পৃক্ত করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কিন্তু সে যদি সেটা শারী‘আহর সাথে সম্পৃক্ত না করে এবং এটিকে এমন একটি আইন হিসেবে দেখে যা লোকদের জন্য উপযোগী, একইসাথে বিশ্বাস করে যে এটা শারী‘আহ না, এটা আল্লাহ’র পক্ষ থেকে না, তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকেও না, তাহলে এটি গুনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে, কিন্তু এটা বড়ো কুফর নয়। আমি এমনটাই মনে করি।
সালমান আল-‘আওদাহ: সম্মানিত শাইখ, ইবনু কাসীর “আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ” গ্রন্থে এমন ব্যক্তির কুফরের ব্যাপারে ইজমা‘র (মতৈক্য) কথা উল্লেখ করেছেন যে, তা বড়ো কুফর।
ইমাম ইবনে বায: হয়তো তিনি উদ্দেশ্য করেছিলেন, যখন সে তা শারী‘আহর সাথে সম্পৃক্ত করে (তখন এটি বড়ো কুফর হবে)।
সালমান আল-‘আওদাহ: না! তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ’র আইন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিচার করে, যদি তা এমন আইনও হয় যা আল্লাহ নাজিল করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়েছে, তাহলে সে কাফির।” তাহলে তাঁর ব্যাপারটা কেমন হবে, যে বিচার করে তা ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা, মানুষের মতামত দ্বারা? নিঃসন্দেহে সে একজন মুরতাদ!
ইমাম ইবনে বায: তিনি যদি এমনটা বলেও থাকেন, তবে মনে রাখা দরকার যে, ইবনু কাসীর মা‘সূম নন। এ ব্যাপারে চিন্তা এবং অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ভুল করতে পারেন। তিনি এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ (ভুল করতে পারেন)। বেশিরভাগ বিষয়ই—যা ইজমা‘ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, তা ইজমা‘ না।
[অনুবাদকের টীকা: সালমান আল-‘আওদাহ যে দলিল পেশ করেছে, তার ব্যবচ্ছেদ—
এটা সরাসরি শাইখ বুনদার বিন নায়িফ আল-‘উতাইবী (হাফিযাহুল্লাহ)’র “আল-হুকমু বি গাইরি মা আনযালাল্লাহ”– গ্রন্থটি থেকে অনুবাদ করে পেশ করছি—
ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাতারদের কিতাব আল-ইয়াসাক্বের মধ্যে যে বিধান আছে তার ব্যাপারে টীকা লিখতে গিয়ে বলেছেন, وفي ذلك كله مخالفة لشرائع الله المنزلة على عباده الأنبياء عليهم الصلاة والسلام ، فمن ترك الشرعَ المحكم المنزّل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر . فكيف بمن تحاكم إلى الياسا وقدمها عليه؟ من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين “এর মধ্যকার যাবতীয় বিধান আল্লাহ কর্তৃক তাঁর (নির্বাচিত) বান্দা নাবীগণের (‘আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম) ওপর নাজিলকৃত শারী‘আহর বিরোধী। সুতরাং যে ব্যক্তি সর্বশেষ নাবী মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল্লাহর প্রতি নাজিলকৃত সুস্পষ্ট শারী‘আহ পরিত্যাগ করবে এবং অন্যান্য মানসূখ (রহিত) শারী‘আহর কাছে বিচারপ্রার্থী হবে, সে কাফির হয়ে যাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি ইয়াসাক্ব কিতাবের কাছে বিচারপ্রার্থী হয় এবং তাকে ইসলামী শারী‘আহর ওপর প্রাধান্য দেয় তার অবস্থা কেমন হবে? যে ব্যক্তি এই কাজ করবে সে মুসলিমদের ঐক্যমতে কাফির হয়ে যাবে।”
দ্র.: আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ১২৮; ৬২৪ হিজরীর ঘটনাবলি।
যদি বলা হয়: এর মধ্যে এ ব্যাপারে ইজমা‘র প্রমাণ রয়েছে যে, শারী‘আহ পরিত্যাগ করে যে ব্যক্তি অন্য কিছুর কাছে ফায়সালা চায়, সে কাফির হয়ে যাবে।
তবে তার জবাব: এই ইজমা‘ দুইজনের কোনো একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে—
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান বহির্ভূত আইন দিয়ে বিচার করাকে বৈধ মনে করে।
(২) যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের ওপর গাইরুল্লাহর বিধানকে উত্তম মনে করে।
আমি বলছি, এই কাজকে বৈধ জ্ঞানকারী এবং উত্তম জ্ঞানকারী যে কাফির—এতে কোনো বিতর্ক নেই।
এর দলিল: ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাতারদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে এবং তাদের ন্যায় কর্ম সম্পাদনকারী ব্যক্তিদের কাফির হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন। আর তারা যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, কোনোরূপ মতানৈক্য ছাড়াই তা ব্যক্তিকে কাফিরকারী (অর্থাৎ, ইসলাম বিনাশী কর্ম) বলে বিবেচিত। এর বর্ণনা দুই দিক থেকে উল্লিখিত হলো—
প্রথম দিক: তারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান বহির্ভূত বিধান দিয়ে বিচার করাকে বৈধ মনে করেছিল।
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, يجعلون دين الإسلام كدين اليهود والنصارى، وأن هذه كلها طرق إلى الله بمنزلة المذاهب الأربعة عند المسلمين، ثم منهم من يُرجّح دين اليهودأو دين النصارى، ومنهم من يرجّح دين المسلمين “তারা দ্বীনে ইসলামকে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দ্বীনের মতো বানিয়ে নিয়েছিল। তারা এরূপও বিশ্বাস করেছিল যে, এ জাতীয় সকল পদ্ধতি মুসলিমদের চার মাযহাবের মতোই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মাধ্যম। তারপর তাদের কেউ কেউ ইহুদিদের দ্বীনকে বা খ্রিষ্টানদের দ্বীনকে প্রাধান্য দেয়, আর কেউ কেউ মুসলিমদের দ্বীনকে প্রাধান্য দেয়।”
দ্র.: মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ৫২৩।
·
দ্বিতীয় দিক: তারা আল্লাহর বিধানের ওপর গাইরুল্লাহর বিধানকে উত্তম মনে করেছিল।
ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাদের কিতাবটির ব্যাপারে বলেছেন, যে কিতাব ছিল বিভিন্ন বিধিবিধান সংবলিত এবং যা প্রণয়ন করেছিল চেঙ্গিস খান, وهو عبارة عن كتاب مجموع من أحكام قد اقتبسها من شرائع شتى من اليهودية والنصرانية والملة الإسلامية ، وفيها كثير من الأحكام أخذها من مجرد نظره وهواه ، فصارت في بنيه شرعاً متبعاً ، يقدمونها على الحكم بكتاب الله وسنة رسوله صلى الله عليه وسلم ، فمن فعل ذلك منهم فهو كافر يجب قتاله حتى يرجع إلى حكم الله ورسوله فلا يُحكِّم سواه في قليل ولا كثير “এটা ছিল বিভিন্ন বিধান সংবলিত একটি সংগৃহীত গ্রন্থ, যা চেঙ্গিস খান বিভিন্ন শারী‘আহ থেকে তথা ইহুদিদের শারী‘আহ, খ্রিষ্টানদের শারী‘আহ এবং ইসলামী শারী‘আহ থেকে সংগ্রহ করেছিল। এছাড়াও চেঙ্গিস খান এই গ্রন্থের অসংখ্য বিধান স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও ইচ্ছা অনুযায়ী গ্রহণ করেছে। আর এভাবে এই বিধিবিধান চেঙ্গিসের উত্তরসূরিদের মধ্যে একটি অনুসৃত শারী‘আহয় পরিণত হয়। তারা এই শারী‘আহকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল ﷺ এর সুন্নাহর ওপর প্রাধান্য দিয়েছিল। যে ব্যক্তি এরকম করে সে কাফির এবং তার বিরুদ্ধে ততক্ষণ যুদ্ধ করতে হবে, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধানের দিকে ফিরে আসে। ফলে সে ছোটোবড়ো কোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান ছাড়া অন্য কিছুকে বিচারক গণ্য করবে না।”
দ্র.: তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮৮; সূরাহ মাইদাহর ৫০ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।
আমি বলছি, যে ব্যক্তি এটা গভীরভাবে চিন্তা করবে এবং এই কথা বলবে, তার নিকটে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বৈধ জ্ঞানকারী এবং উত্তম জ্ঞানকারীর ক্ষেত্রে সুন্নাহর ইমামগণ কর্তৃক বর্ণিত সুস্পষ্ট ও সুসাব্যস্ত ইজমা‘র ব্যাপারে ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ)’র কথা ইমামগণের কথার সাথে মিলে গেছে।
আর বৈধ বা উত্তম জ্ঞান না করে শারী‘আহ পরিত্যাগ করা এবং শারী‘আহ ছাড়া অন্য কিছুর কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ হয়ে থাকলে (যেমনটি কতিপয় বলে থাকে,) আপনি দেখতেন যে, ‘আলিমগণ তা বর্ণনা করছেন এবং সাব্যস্ত করছেন, চাই তাঁরা ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ)’র সমসাময়িক হন বা পূর্ববর্তী হন, অথবা তাঁর পরবর্তী হন। আর এটা কীভাবেই বা হতে পারে, যেখানে স্বয়ং তাঁরাই এর বিপরীতে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন! আর তা হলো অত্যাচারী শাসকের কাফির না হওয়ার ইজমা‘।
টীকা সংগৃহীত: শাইখ বুনদার আল-‘উতাইবী (হাফিযাহুল্লাহ), আল-হুকমু বি গাইরি মা আনযালাল্লাহ, পৃষ্ঠা: ৬৭-৬৮; বাদশাহ ফাহাদ লাইব্রেরি, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৭ হিজরী (২য় প্রকাশ)। – অনুবাদক]
·
শাইখ ইবনু জিবরীন: তারা এসব আইন শারী‘আহর বদলি হিসেবে নিয়ে আসে। তারা বলে, “এই আইন শারী‘আহর বিধানের চেয়ে উত্তম, লোকদের জন্য অধিক উপকারী এবং অধিক উপযোগী।”
ইমাম ইবনু বায: এটি স্বতন্ত্র কুফর। যদি সে বলে: “এই বিষয়টি শারী‘আহ থেকে উত্তম, অথবা এর সমান পর্যায়ের”, অথবা সে যদি বলে যে, “আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা বিচার করা বৈধ”, তাহলে এটা বড়ো কুফর।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: যারা সংবিধানকে কুফর বলে ঘোষণা করে এবং বলে: “লোকদেরকে (যারা এই সংবিধান দ্বারা বিচার করছে) কাফির ঘোষণা করা হবে না।” অর্থাৎ, তারা এই মাসআলাহয় পার্থক্য করে থাকে। তারা বলে, “সংবিধান কাফির (যদ্দৃষ্ট – অনুবাদক), কিন্তু আমরা লোকদেরকে কাফির বলব না।”
ইমাম ইবনু বায: ‘আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিচার ফায়সালা করা’—যদি সে হালাল করে, তাহলে এটা কুফর। যদিও তা (হুকুম) কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির দিকে ফিরে যায়। অর্থাৎ, সে নিজেই কুফর করেছে। বলা হয় যে, অমুক কাফির; যদি সে আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার করা হালাল করে, অথবা সে যিনা হালাল করে এবং এর অনুরূপ বিষয়গুলো যা কুফর বলে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ যাদেরকে সাহাবীগণ কাফির বলে ঘোষণা করেছেন, বিশেষত যারা ইসলাম ত্যাগ করে। মুসাইলামাহকে নির্দিষ্ট করে কাফির ঘোষণা করা হয়েছিল। তুলাইহাহকে তাওবাহ করার পূর্বে কাফির ঘোষণা করা হয়েছিল। অনুরূপভাবে যারা দ্বীনকে নিয়ে উপহাস করে, তাদেরকে নির্দিষ্ট করে কাফির ঘোষণা করা হবে। যার দ্বারাই ইসলাম বিনষ্টকারী কর্ম সংঘটিত হবে, তাকে নির্দিষ্ট করে কাফির ঘোষণা করা হবে। আর হত্যার ব্যাপারটি হলো, এটি একটি ভিন্ন বিষয়, অর্থাৎ হত্যার জন্য তাওবাহ চাওয়ার (আল-ইস্তিতাবাহ) প্রয়োজন হয় (আর হত্যা করার কারণে কেউ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না)।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: তবে যদি সে তা (মানরচিত আইন) শারী‘আহর সাথে সম্পৃক্ত করে, তাহলে কি তাকে মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে না?
ইমাম ইবনু বায: সে মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্নকারী: কিন্তু দূনা কুফর (ছোটো কুফর)।
ইমাম ইবনু বায: হ্যাঁ। পক্ষান্তরে সে যদি বলে, না! আমি বলছি, এটা শারী‘আহর মতোই, অথবা শারী‘আহর চেয়ে উত্তম, তাহলে তা (বড়ো) কুফর। পক্ষান্তরে সে যদি এটাকে বিদ‘আত মনে করে, তবে বিদ‘আতীদের হুকুম তো প্রসিদ্ধ।
‘আইদ্ব আল-ক্বারনী: ঠিক আছে, শাইখ। তাদের কেউ কেউ বলে: “উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) দুর্ভিক্ষের সময় নির্ধারিত শাস্তির বিধান বর্জন করেছিলেন?”
ইমাম ইবনে বায: তাঁর এই ইজতিহাদের একটি গ্রহণযোগ্য কারণ রয়েছে। কারণ একজন ব্যক্তি জরুরি প্রয়োজনের কারণে কিছু চুরি করতে বাধ্য হতে পারে।
সালমান আল-‘আওদাহ: আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। কুরআনে যেই কুফরের কথা বলা হয়েছে (অর্থাৎ), “তারা কাফির”, এটি হলো ছোট কুফর, এর দলীল (কী?)। অত্র আয়াতে (উদ্দিষ্ট কুফরটিকে বড়ো কুফর হওয়া থেকে) কে বিরত করে? অথচ এই আয়াতটি সীমাবদ্ধতার শব্দরূপ (সীগাতুল হাসর) বর্ণনা করেছে?
ইমাম ইবনু বায: এখানে এই অর্থ নেওয়া হবে যে, (কেউ কাফির হবে) যদি সে আল্লাহ’র আইন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিচার করা হালাল করে, এটি হলো সবচেয়ে বিশুদ্ধ কথা। যদি এখানে হালাল করা ছাড়া অন্য কোনো অর্থে (আয়াতটি) বোঝা হয়, তাহলে এটি তাই যেমনটি ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, “এটি হলো ছোট কুফর” (অর্থাৎ ইবনে ‘আব্বাসের ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য আইন দিয়ে বিচার করা ছোটো কুফর, যদি না সেটা হালাল মনে করে করা হয়)। অন্যথায় মৌলিক হুকুম হবে যে, তারা কাফির।
বিতার্কিকদের একজন: ইবনু ‘আব্বাসের কথার পক্ষে কোনো দলিল নেই। তাঁর কথার মধ্যে নেই যে, কেউ (আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে) বিচার করাকে হালাল করে...
(অস্পষ্ট কথা এবং মাঝখান দিয়ে সালমান আল-‘আওদাহ’র কথা)
সালমান আল-‘আওদাহ: হ্যাঁ, কীসের কারণে আমরা আয়াতের বাহ্যিক অর্থ পরিবর্তন করব?
ইমাম ইবনে বায: কারণ সে তার নিজের জন্য বিচার করা হালাল করে নিয়েছে। অনুরূপভাবে, কাফিররা যেমন আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য বিধান দিয়ে বিচার করে। যারা মৃত পশু খাওয়া হালাল বলে হুকুম প্রদান করে এবং এমন অন্য ব্যাপারগুলো। তবে যাইদ অথবা ‘আমর (নামের কোনো মুসলিম) যদি ঘুষ নিয়ে কোনো হুকুম প্রদান করে, আমরা কি বলব যে, এটা কুফর?! তারা এর কারণে কাফির হবে না। অথবা সে উপযুক্ত কারণ ছাড়াই প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে হুকুম প্রদান করে যে, যাইদকে হত্যা করতে হবে (তাহলে কি সে কাফির হবে)? না, সে তার এই বিচারকার্যের কারণে কাফির হবে না।
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর ইমাম ইবনু বায বললেন: সুতরাং মূলনীতি অনুযায়ী কোনো কিছু হারাম বা হালাল করার বড়ো ধরনের উল্লেখযোগ্যতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ– যিনাকারী, সে কি কাফির?
সালমান আল-‘আওদাহ: না, সে কাফির নয়।
ইমাম ইবনে বায: কিন্তু যদি সে বলে, “এটা হালাল”?
সালমান আল-‘আওদাহ: তাহলে সে কাফির হবে।
ইমাম ইবনে বায: এটাই সেটা (অর্থাৎ, ওই বড়ো কুফর)।
সালমান আল-‘আওদাহ এবং তার সাথে আরেকজন একইসাথে বলে উঠল: হ্যাঁ, (যিনা হালাল করার মাধ্যমে) সে বড়ো কুফর করেছে, যদিও সে নিজে যিনা না করে থাকে।
ইমাম ইবনু বায: (হ্যাঁ) এমনকি যদি সে যিনা নাও করে থাকে (তবুও যিনা হালাল মনে করার কারণে সে কাফির)।
·
সালমান আল-‘আওদাহ: আমাদের সম্মানিত পিতা, আমরা নসের (আয়াতের) দিকে ফিরে আসি, “আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা বিচার-ফায়সালা করে না...” তো হুকুমটি (আল্লাহর আইন দিয়ে) বিচার করা বর্জন করার সাথে সম্পর্কিত।
ইমাম ইবনে বায: “আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিচার করা”, এর অর্থ হলো—এই কর্মকে হালাল মনে করা। এটাকে এই বুঝের আলোকে ব্যাখ্যা করা হবে।
সালমান আল-‘আওদাহ: এই সীমাবদ্ধ বুঝ কোত্থেকে আসল?
ইমাম ইবনু বায: অন্যান্য দলিল থেকে, যেগুলো এর পক্ষে প্রমাণ দেয়। যে দলীলগুলো প্রমাণ করে যে, গুনাহগারের ব্যাপারে কুফরের হুকুম প্রদান করা হবে না, যতক্ষণ না সে ওই গুনাহটিকে হালাল করে, (ততক্ষণ পর্যন্ত) সে কাফির হয়ে যায় না।
(অস্পষ্ট প্রশ্ন)...
ইমাম ইবনু বায: একজন ফাসিক্ব, জালেম এবং কাফির। (সে কাফির হবে) শুধু যদি সে সেই গুনাহটিকে হালাল করে। অথবা সে মনে করে যে, (ইসলামী শারী‘আহর) হুকুম অনুপযুক্ত, অথবা সে মনে করে, ইসলামী শারী‘আহ ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা বিচার করা উত্তম। সুতরাং এখানে মূল বিষয়টি এই যে, এটাকে (আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিচার করা) হালালকারী ব্যক্তির প্রয়োগ করা হবে। অথবা এমন লোক (যে আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার না করার কারণে কাফির হবে), যে এটাকে হালাল বলার পর আরও এগিয়ে যায় এবং সে মনে করে এটা (সে যা দ্বারা বিচার করছে তা) আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম।
তবে সে যদি আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে বিচার করে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তাহলে সে একজন গুনাহগার হবে, ওই ব্যক্তির মতোই, যে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে যিনা করে, কিন্তু যিনাকে হালাল বলে বিশ্বাস করে না। অথবা এমন লোক যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণে তার পিতামাতার সাথে অসদাচরণ করে, অথবা এমন লোক যে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে হত্যা করে। তাহলে সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে সে যদি হালাল মনে করে হত্যা করে, বা হালাল মনে করে পিতামাতার সাথে অসদাচরণ করে, অথবা হালাল মনে করে যিনা করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। এর মাধ্যমেই আমরা খারিজীদের থেকে বের হয়ে যাই। আমরা আমাদেরকে তাদের থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র করি। আর আমাদের ও তাদের মধ্যে হয়ে যায় একটি বৃহৎ ব্যবধান, অন্যথায় আমরা সেই বিষয়েই পতিত হতাম, যাতে তারা পতিত হয়েছে। সুতরাং এই ব্যাপারটি খারিজীদের অনুরূপ, এই নিঃশর্তকরণের বিষয়টি।
সালমান আল-‘আওদাহ: এই ব্যাপারটি অনেক ভাইদের জন্যই একটি চিন্তার বিষয়। সুতরাং আমরা যদি কিছু সময় নিই, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই?
ইমাম ইবনু বায: কোনো সমস্যা নেই, এটি গুরুত্বপূর্ণ (বিষয়), ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ।
সালমান আল-‘আওদাহ: আপনি গুনাহগারকে কাফির অ্যাখ্যাদানের ব্যাপারটি বা যে কাবীরাহ গুনাহয় পতিত হয় তাকে কাফির অ্যাখ্যাদানের বিষয়টি উল্লেখ করলেন। মতবিরোধের বিষয় এটি নয়।
ইমাম ইবনু বায: না। এটা খারিজীদের মাসআলাহ নয়, এটা খারিজীদের (খারিজী হওয়ার) কারণ। আর তা হলো এই নিঃশর্তকরণ। তারা শর্তযুক্ত বিষয় বর্জন করেছে, আর শর্তবিহীন বিষয় গ্রহণ করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা লোকদেরকে কাফির ঘোষণা করেছে। নাবী (ﷺ) তাদের ব্যাপারে বলেছেন, “তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, এবং তারা এর মধ্যে আর ফিরে আসবে না।” [সাহীহ বুখারী, হা/৩৬১১; এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ]
সালমান আল-‘আওদাহ: সম্মানিত শাইখ, যিনাকারী এবং চোর...
ইমাম ইবনু বায: খারিজীদের মতে তারা কাফির।
সালমান আল-‘আওদাহ: খারিজীদের মতে কাফির। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ একমত যে, তারা গুনাহগার...
ইমাম ইবনু বায: হ্যাঁ, যতক্ষণ না তারা এসব গুনাহ হালাল করে।
সালমান আল-‘আওদাহ তাঁর কথা সম্পূর্ণ করল: তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না।
ইমাম ইবনু বায: যতক্ষণ না তারা হালাল করে।
সালমান আল-‘আওদাহ: যতক্ষণ না তারা হালাল করে। কিন্তু তারা মনে করে, যে ব্যক্তি পাপকাজ করে—আমরা তাকে ‘ফাসিক্ব মুসলিম’ বা ‘ত্রুটিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী’ই বলি—এবং যে ব্যক্তি পাপকাজকে মানুষের ওপর বিধিবদ্ধ আইন বানায়, তাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য আছে। কেননা তারা বলে, সে শারী‘আহকে অপসারণ ও বিতাড়ন করেছে এবং তদস্থলে একটি বিধিবদ্ধ সংবিধান প্রণয়ন করেছে, এই কর্ম করা সত্ত্বেও এটা কল্পনা করা যায় না যে, সে একজন ফাসিক্ব মুসলিম। যদিও সে বলে যে, সে এটা হালাল মনে করে না। এরকম কল্পনা করা যায় না। হয় সে তা (শারী‘আহকে বিতাড়ন করে তদস্থলে সংবিধান প্রণয়ন করা) হালাল মনে করে, অথবা তা মানুষের জন্য অধিক উত্তম মনে করে, অথবা অনুরূপ কিছু। তারা এই লোকের সাথে ওই ব্যক্তির পার্থক্য করে, যে কোনো একটি নির্দিষ্ট মকদ্দমায় ঘুষ গ্রহণ করে বা স্বজনপ্রীতি করে রায় দেয়।
ইমাম ইবনু বায: কারও ধারণকৃত বা গৃহীত রায়ই প্রকৃত রায় নয় (ٍلَازِمُ الْحُكْمِ لَيْسَ بِحُكْم)। এটি একটি মূলনীতি—কারো ধারণকৃত বা গৃহীত রায়ই প্রকৃত রায় নয়।
[অর্থাৎ, মানুষ যদি কোনো রায় দেয়, যেই রায়ে অবধারিতভাবে বাতিল চলে আসে, তাহলে স্রেফ এই বাতিলের দরুন তার ওপর হুকুম লাগানো যাবে না। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “কারও লাযিমুল মাযহাব তথা গৃহীত মাযহাবই যদি প্রকৃত মাযহাব হতো, তাহলে যারা ইস্তিওয়া-সহ অপরাপর সিফাতকে রূপক (মাজায) বলে, তাদের প্রত্যেককে তাকফীর করা অপরিহার্য হয়ে যেত।” (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, ২০/২১৭) – অনুবাদক]
কখনো কখনো এরকম হয় যে, স্বীয় প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে বা স্বজনপ্রীতিবশত বিচারকারী ব্যক্তি তার এই কাজকে হালাল মনে করে। এটা তার এবং আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। পক্ষান্তরে মানুষের এবং তার মধ্যকার ব্যাপার হলো—যদি সেখানে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র থাকে, যে তার সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম, তাহলে সে তার সাথে এই মর্মে যুদ্ধ করবে যে, কেন সে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করছে না। যেমনভাবে যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছিল, যখন তারা নিজেদের কর্মকে ডিফেন্ড করেছিল এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। তাদের (গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে বিচারকারীদের) সাথে যুদ্ধ করা হবে, মুরতাদদের সাথে যুদ্ধ করার ন্যায় (অর্থাৎ, মুরতাদ গণ্য করে)। কেননা গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করাকে ডিফেন্ড করা যাকাত বের না করাকে ডিফেন্ড করার মতোই, বরং তার চেয়েও বড়ো ও ভয়াবহ অপরাধ; সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে শাইখ তাক্বিউদ্দীন (রাহিমাহুল্লাহ) [অর্থাৎ, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ] স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, “তার সাথে যুদ্ধ করা হবে, মুরতাদদের সাথে যুদ্ধ করার ন্যায় (অর্থাৎ, মুরতাদ গণ্য করে), সাধারণ পাপীদের সাথে যে যুদ্ধ করা হয় সে যুদ্ধ নয়; যখন তারা তাদের বাতিলকে ডিফেন্ড করবে।” তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) এটা উল্লেখ করেছেন, সম্ভবত ‘আস-সিয়াসাহ’ গ্রন্থে। না, ‘আস-সিয়াসাহ’য় না। অন্য কোনো গ্রন্থে। সম্ভবত ফাতহুল মাজীদে আছে এই কথা...
সালমান আল-‘আওদাহ অনুপ্রবেশ করে বলে উঠল: ফাতাওয়া সংকলনে আছে। তাতারদের ব্যাপারে তাঁর বক্তব্যে।
ইমাম ইবনু বায: সম্ভবত তাতারদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) এই কথা বলেছেন যে, “তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ পাপীদের সাথে করা যুদ্ধের ন্যায় যুদ্ধ করা হবে না, বরং মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ন্যায় যুদ্ধ করা হবে।” কেননা তাদের পাপকাজকে ডিফেন্ড করা, আস-সিদ্দীক্ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র যুগে যাকাত আদায় করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীদের ডিফেন্ডিংয়ের মতোই। একদম সমানে সমান (অর্থাৎ, একই)।
·
সালমান আল-‘আওদাহ: আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন। এখন যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে বলতে হয়, তারা যখন যুদ্ধ করবে, তখন আমরা বলব, তাদের সাথে কুফরের যুদ্ধ করা হবে। কেননা তার ইমতিনা‘ (নিজেকে শারী‘আহ কর্তৃক সম্বোধিত মনে না করা) করা এবং এ কারণে যুদ্ধ করাটাই প্রমাণ করে যে, সে এর আবশ্যকীয়তা অস্বীকার করে?
[ইমতিনা‘র বিপরীত ইলতিযাম। এর ব্যাখ্যা ১ম টীকায় গত হয়ে গেছে। – অনুবাদক]
ইমাম ইবনু বায: হ্যাঁ। নিঃসন্দেহে সে যখন গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করাকে ডিফেন্ড করবে এবং বলবে, ‘আমি (এ থেকে) প্রত্যাবর্তন করব না’, তখন তার এই ডিফেন্ডিং মুস্তাহিল তথা হালাল জ্ঞানকারী ব্যক্তির ডিফেন্ডিং বলে গণ্য করা হবে, আর সে কাফির হয়ে যাবে।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: তাহলে তারা (শাসকরা) তো মরণপণ যুদ্ধ করবে।
ইমাম ইবনু বায: যখন এরকম ঘটনা ঘটবে, তখন তারা কাফির হয়ে যাবে। যখন তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করো, নচেৎ আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব”, তখন যদি তারা অস্বীকার করে, তাহলে তারা কাফির হয়ে যাবে। এটা তাদের ব্যাপারে আমার ধারণা।
প্রশ্নকারী বিস্ময়ে বলে উঠল: এটা তাদের ব্যাপারে ধারণা!
ইমাম ইবনু বায: নিঃসন্দেহে! [শাইখ রাহিমাহুল্লাহ হেসে ফেললেন, আর বললেন,] তাদের ব্যাপারে এটাই আমার ধারণা। মিসর এবং অন্যান্য দেশের শাসকদের ব্যাপারে ধারণা হলো—(আল্লাহ আমাদেরকে এমন দুর্যোগ না দিন) অকল্যাণ এবং কুফর। কিন্তু মানুষ কাফির বলা থেকে সতর্ক থাকবে। যতক্ষণ না সে জানতে পারছে যে, সে এটাকে হালাল মনে করে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ কামনা করছি।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!
ইমাম ইবনু বায উপস্থাপককে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার কাছে আর কোনো প্রশ্ন আছে? না কি সব শেষ?!
উপস্থাপক: আমরা আপনার কাছ থেকে অনুমতির অপেক্ষা করছি।
ইমাম ইবনু বায: কোনো সমস্যা নেই। এই আলোচনা অন্য আলোচনাকে বাধা দেয় না। প্রত্যেকেই এই আলোচনায় ইজতিহাদ করতে পারে। হয়ত সে তার অন্তরকে প্রশান্তি দানকারী বিষয়টি পেয়ে যাবে। এই মাসআলাহগুলো খুবই বিপদজনক, সহজ বিষয় নয়। এই মাসআলাহগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণও বটে!
সালমান আল-‘আওদাহ: আপনি কি এই মাসআলাহকে ইজতিহাদী মনে করেন?
ইমাম ইবনু বায: আল্লাহর কসম, আমি দলিলের কারণেই এমনটি মনে করি। আহলুস সুন্নাহ এবং খারিজী-মু‘তাযিলীদের পার্থক্য করতে গিয়ে ‘আলিমগণ সেই দলিলসমূহ উল্লেখ করেছেন। বিশেষ করে খারিজীদের সাথে আহলুস সুন্নাহর পার্থক্যের ক্ষেত্রে। আর তা (পার্থক্য) হলো—পাপকাজ করা কুফর নয়, যতক্ষণ না পাপী ব্যক্তি তা হালাল মনে করছে অথবা যুদ্ধ করার মাধ্যমে সেই পাপকে ডিফেন্ড করছে!
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: সম্মানিত শাইখ, আমি বলছি, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন, যখন তাদের কাছে চিঠি লেখা হবে এবং শারী‘আহ তলব করা হবে, তারপরেও যদি তারা ফিরে না আসে, তাহলে তখন তাদেরকে কাফির বলে হুকুম দেওয়া হবে?
ইমাম ইবনু বায: যদি তারা যুদ্ধ করে, তাহলে হুকুম দেওয়া হবে। কিন্তু যদি যুদ্ধ না করে, তাহলে দেওয়া হবে না।
প্রশ্নকারী: যখন তাদের কাছে শারী‘আহ তলব করা হবে...
ইমাম ইবনু বায: যদি সে যুদ্ধ করে তাহলে কাফির হয়ে যাবে।
প্রশ্নকারী: কিন্তু যে তলব করবে সে তো দুর্বল, অথচ সে (শাসকের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ করবে?
ইমাম ইবনু বায: কিন্তু এটা (যুদ্ধ করা) ছাড়া শাসক কাফির হবে না।
প্রশ্নকারী: না; যদি তার কাছে ‘আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার’ তলব করা হয়, তথাপি সে (আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করতে) অস্বীকার করে?!
ইমাম ইবনু বায: হ্যাঁ; যদি সে অস্বীকার করে, তাহলে তার সাথে যুদ্ধ করা হবে। সে যদি যুদ্ধ করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। আর যদি যুদ্ধ না করে, তাহলে কাফির হবে না; তখন তার হুকুম হবে সাধারণ গুনাহগারদের হুকুমের ন্যায়।
ইবনু জিবরীন: কে তার সাথে যুদ্ধ করবে?
ইমাম ইবনু বায: মুসলিম রাষ্ট্র।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: সেখানে যদি যুদ্ধ করার মতো কোনো মুসলিম রাষ্ট্র না থাকে?
ইমাম ইবনু বায: তাহলে সে ওই অবস্থাতেই থাকবে। তার ব্যাপারটি আল্লাহ এবং তার মধ্যে সম্পন্ন হবে।
ইবনু জিবরীন: কিছু রাষ্ট্র তো খুবই সহনশীল।
ইমাম ইবনু বায: আল্লাহুল মুস্তা‘আন (আল্লাহ সহায় হোন)।
সালমান আল-‘আওদাহ: সম্মানিত শাইখ, আশ-শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পুস্তিকায় বলেছেন, “যেসব রাষ্ট্র নিজেদের বানানো সংবিধান দিয়ে বিচার করে, সেগুলো কাফির রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্র থেকে হিজরত করা ওয়াজিব।”
ইমাম ইবনু বায: অনিষ্ট বিজয় লাভ করার কারণে, কুফর এবং পাপাচারিতা বিজয় লাভ করার কারণে।
সালমান আল-‘আওদাহ: যারা নিজেদের বানানো সংবিধান দিয়ে বিচার করে...
ইমাম ইবনু বায: তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পুস্তিকায় বলেছেন যে, “তিনি মনে করেন– এর বাহ্যিক অবস্থাই কুফর। কেননা তাদের দ্বারা সংবিধান প্রণীত হওয়াটাই প্রমাণ করে যে, তারা এতে সন্তুষ্ট এবং এই কাজকে হালাল জ্ঞানকারী।” আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন, তাঁর ওপর রহম করুন। কিন্তু আমি এক্ষেত্রে তাওয়াক্বকুফ (ক্ষান্ত থাকা, বিরত থাকা) অবলম্বন করি। এটা (সংবিধান প্রণয়ন করাই) যথেষ্ট নয়। এটা যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না জানা যায় যে, সে এটাকে হালাল করেছে। পক্ষান্তরে স্রেফ গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করা বা সেই আইন দিয়ে শাসন করার কারণে সে কাফির হবে না। যেমন কেউ অমুককে (অন্যায়ভাবে) হত্যার আদেশ দিল। সে এই কাজের কারণে কাফির হবে না, যতক্ষণ না সে তা হালাল মনে করছে। এই কাজ করার কারণে শাসক কাফির হবে না, যদিও সে অনেক মানুষ হত্যা করে, যতক্ষণ না সে তা হালাল মনে করছে। কেননা এতে সংশয় আছে। ইতঃপূর্বে ‘আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান এবং মু‘আউয়িয়াহ প্রমুখ ইস্তিহলাল তথা হালাল গণ্য না করার কারণেই কাফির হয়নি (যদ্দৃষ্ট – অনুবাদক)। মানুষকে হত্যা করা যিনার চেয়েও বড়ো অপরাধ এবং ঘুষ গ্রহণ করে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করার চেয়েও বড়ো অপরাধ।
জনৈক উপস্থিত ব্যক্তি: হিজরত বিভিন্ন প্রকারের হয়। কাফির রাষ্ট্রে স্রেফ কুফর থাকার কারণেই হিজরত আবশ্যক হয় না, যতক্ষণ না...
ইমাম ইবনু বায: হিজরতের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আছে। যে ব্যক্তি তার দ্বীনকে প্রকাশ করতে পারে, তার ওপর হিজরত আবশ্যক নয়। হিজরত কেবল দুর্বলদের ওপরই আবশ্যক।
ইবনু জিবরীন: ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা রয়েছে যে, যারা কুরআনকে মাখলূক্ব বলে, তিনি তাদেরকে কাফির ফতোয়া দিয়েছেন।
ইমাম ইবনু বায: এটা প্রসিদ্ধ। যারা কুরআনকে মাখলূক্ব বলে, আহলুস সুন্নাহ তাদেরকে কাফির ফতোয়া দেয়।
গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে বিচার সম্পর্কে আলোচনা এখানে সমাপ্ত হয়েছে।
·
তথ্যসূত্র:
(১) “মুনাক্বাশাহ বাইনাল ইমাম ইবনি বায রাহিমাহুল্লাহ ওয়া ইবনি জিবরীন ওয়া সালমান আল-‘আওদাহ ওয়া ‘আইদ্ব আল-ক্বারনী”– শীর্ষক নিবন্ধ। গৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম।
(২) “আদ-দাম‘আতুল বাযিয়াহ সূরাতুম মিনাত তাজার্রুদি লিল হাক্বক্বি ওয়াস সাবাতি ‘আলাইহি”– শীর্ষক নিবন্ধ। লিংক: www.sahab.net/forums/index.php… (দীর্ঘ আর্টিকেলের শেষে দ্রষ্টব্য)।
আর সরাসরি এই নিবন্ধ আরেকটি সালাফী ওয়েবসাইটেও আছে। দ্রষ্টব্য: www.tasfiatarbia.org/vb/showthread.php?t=16644
(৩) “দ্য টিয়ারস অফ ইবনে বায”– শীর্ষক নিবন্ধ। লিংক: www.abukhadeejah.com/the-tears-of-ibn-baaz-when-ibn-jibreen…
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা ও রিফাত রাহমান সিয়াম।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...