এটি জানা বিষয় যে, যে পাপের সম্পর্ক আল্লাহর অধিকার নষ্ট করার সাথে রয়েছে, তা থেকে তাওবা করার জন্য তিনটি শর্ত আছে: সেই পাপ সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা, সেই পাপের কারণে লজ্জাবোধ করা এবং ভবিষ্যতে তা আর না করার সংকল্প নেওয়া। কিন্তু পাপের সম্পর্ক যদি মানুষের অধিকারের সাথে থাকে (অর্থাৎ মানুষের অধিকার নষ্ট করে থাকে যেমন চুরি করা, ডাকাতি করা, অন্যায়ভাবে কারো মাল আত্মসাৎ করা, গীবত করা, গালি দেওয়া ইত্যাদি) তাহলে সেই পাপ ক্ষমার জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্তের সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যোগ হবে। আর তা হচ্ছে, সে অধিকার তার মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া আর যদি অধিকার হরণ কারো সম্ভ্রমে আঘাত করার মাধ্যমে হয় তাহলে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। এ কারণে হারাম ভক্ষণকারীর জন্য তাওবার তিনটি শর্ত যথেষ্ট নয় কারণ এর পরেও তার নিকট হারাম মাল রয়ে যায়। তাই তা থেকেও নিষ্কৃতি জরুরি। সে হারাম মাল যদি সুদি মাল হয়, তাহলে তা থেকে মুক্তির পথ মহান আল্লাহ কুরআনে বলে দিয়েছেন।
اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ * فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ [البقرة: 278، 279].
(হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সূদের যা বকেয়া আছে তা বর্জন কর; যদি তোমরা মুমিন হও। আর যদি তোমরা সূদ বর্জন না কর, তাহলে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ সুনিশ্চিত জানো। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। তোমরা কারো উপর অত্যাচার করবে না এবং নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না।) [বাকারাহ/২৭৮-২৭৯]
আর তা যদি প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি কিংবা এই ধরণের উপায়ে গৃহীত অর্থ হয়, তাহলে জরুরি ভিত্তিক তা অর্থের মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি সেই অর্থের মালিক এমন হয় যে, সে মারা গেছে তাহলে সেই অর্থ তার ওয়ারিসদের ফিরিয়ে দিবে। আর চেষ্টার পরেও যদি সেই অর্থের মালিকের সন্ধান না মিলে তাহলে উলামাগণ বলেছেন যে, তা যেন সেই মালিকের পক্ষ হতে দান করে দেওয়া হয়; এমন নয় যে, সে তার জন্য দান করবে। কারণ মহান আল্লাহ পবিত্র তিনি পবিত্রতা ব্যতীত কোনো কিছু কবুল করেন না। বরং সে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় এমন করবে। এ নিয়তে যে, অর্থের মালিক যেন সওয়াব পায় এবং তার নিজের তাওবা যেন কবূল হয়। আর সে অন্যের আর্থিক অধিকারের দায়বদ্ধতা হতে নিষ্কৃতি পায়; ঐ দিন আসার পূর্বে যে দিন দীনার দিরহাম হবে না। সে দিনের অবস্থা তো শুধু এমন হবে যে, পুন্য সমূহ নিয়ে নেওয়া হবে নচেৎ অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপরাশী তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«أتدرون من المفلس؟» قالوا: المفلس فينا من لا درهم له ولا متاع. فقال: « إن المفلس من أمتي من يأتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة ويأتي وقد شتم هذا وقذف هذا وأكل مال هذا وسفك دم هذا وضرب هذا فيعطى هذا من حسناته وهذا من حسناته؛ فإن فنيت حسناته قبل أن يقضي ما عليه أخذ من خطاياهم وطرحت عليه ثم طرح في النار» [رواه مسلم].
“তোমরা জানো কী? দরিদ্র কে? সাহাবাগণ বললেন: আমাদের মধ্যে দরিদ্র সে যার টাকা-কড়ি নেই। নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমার উম্মতে দরিদ্র তারা যারা কিয়ামত দিবসে স্বলাত, সিয়াম ও যাকাত নিয়ে আসবে কিন্তু তার অবস্থা এমন হবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছে, অন্যায় ভাবে কারো মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহ করেছে এবং কাউকে মারধর করেছে। তাই তখন তার নেকীগুলো নিয়ে একে ওকে দিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে দিতে দিতে ফয়সালা শেষ হবার পূর্বে যদি তার নেকী সমূহ শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের পাপ সমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে অত:পর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [মুসলিম]
তাই হে ভাই! যে হারামের সাথে জড়িত সে যেন মৃত্যু আসার পূর্বে এর সমাধান করে নেয়; নচেৎ তা জাহান্নামের পাথেয় হবে। অন্যায় ভাবে যাদের মাল-সম্পদ গ্রাস করেছো কিয়ামতের মাঠে তাদের দাবি করার পূর্বে এর সমাধান করে নাও, নাহলে তোমার নেকী সমূহ তাদের দিয়ে দেওয়া হবে কিংবা তাদের পাপসমূহ তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আল্লাহকে ভয় করো!
Shaykh Abdur Raquib
No comments:
Post a Comment