শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে,যিনি পরম করুনাময় অসীম দয়ালু।

লেখকঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ | অনুবাদঃ শায়খ সানাউল্লাহ নজির আহমদ | সম্পাদনা : শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
প্রশ্ন: জনৈক অমুসলিম কিশোরীর প্রশ্ন: মুসলিমদের মাবুদ কে?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ।
উত্তর দেওয়ার পূর্বে আমাদের অবাকের
কথাজানাচ্ছি যে, অল্প বয়স সত্যেও ইসলামের প্রতি তোমার গুরুত্বারোপের ফলে
হয়তোআল্লাহ তা‘আলা তোমার সামনে কল্যাণের মহান দ্বার উন্মুক্ত করে দিবেন,
তোমাকেহিদায়েতের তৌফিক দিবেন, যা তোমার কল্পনাতেও ছিল না, এ প্রশ্নের
সাহসিকতাতারই প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ذَٰلِكَ هُدَى ٱللَّهِ يَهۡدِي بِهِۦ مَن يَشَآءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۚ ٨٨ ﴾ [الانعام: ٨٨]
“এ হচ্ছে আল্লাহর হিদায়েত, এ দ্বারা তিনি নিজ বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করেন”।[1]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ فَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يَهۡدِيَهُۥ يَشۡرَحۡ صَدۡرَهُۥ لِلۡإِسۡلَٰمِۖ ١٢٥ ﴾ [الانعام: ١٢٥]
“সুতরাং যাকে আল্লাহ হিদায়েত করতে চান, ইসলামের জন্য তার বুক উন্মুক্ত করে দেন”।[2]
“মুসলিমরা কার ইবাদত করে” তোমার এপ্রশ্নের
উত্তরে কুরআনুল কারিমের আয়াত পেশ করছি যা ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ,
অনুরূপভাবে তার উত্তর ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহিওয়াসাল্লামের বাণী থেকে প্রদান করছি, যার শব্দ ও অর্থ তার রবের পক্ষ
থেকেতার নিকট অহি করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ
ٱلرَّحِيمِ ١ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ
ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ
نَسۡتَعِينُ ٥ ﴾ [الفاتحة: ١، ٥]
“পরমকরুণাময়
অতি দয়ালু আল্লাহর নামে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনিসৃষ্টিকুলের রব।
দয়াময়, পরম দয়ালু, বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদতকরি এবং আপনারই
নিকট আমরা সাহায্য চাই”।[3]
অপর আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ
ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ
لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١ ﴾ [البقرة: ٢١]
“হে মানুষ,
তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং
তোমাদেরপূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর”।[4]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡۖ
لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖ فَٱعۡبُدُوهُۚ وَهُوَ
عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ ١٠٢ ﴾ [الانعام: ١٠٢]
“তিনিইআল্লাহ,
তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি
জিনিসেরস্রষ্টা, সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের
উপরতত্ত্বাবধায়ক”।[5]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا
تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا
يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل
لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ ﴾
[الاسراء: ٢٣]
“আর
তোমাররব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না
এবংপিতা-মাতার সাথে সদাচারণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়ে যদি তোমার
নিকটবার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না।
আরতাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল”।[6]
অতএব মুসলিমরা তাঁরই ইবাদত করে, যার ইবাদত করেছে সকল নবী ও রাসূলগণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ
حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ
بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِۧمَ
وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ
١٣٣ ﴾ [البقرة: ١٣٣]
“নাকি
তোমরাসাক্ষী ছিলে, যখন ইয়াকুবের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল? যখন সে
তাদেরসন্তানদেরকে বলল, ‘আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে’? তারা বলল, ‘আমরা
ইবাদতকরব আপনার ইলাহের, আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহের,
যিনিএক ইলাহ। আর আমরা তারই অনুগত”।[7]
মুসলিমরা আল্লাহর ইবাদত করে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরকে কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করার প্রতি আহ্বান করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُلۡ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ
تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا
نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡٔٗا وَلَا يَتَّخِذَ
بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ
فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٦٤ ﴾ [ال عمران: ٦٤]
“বল,
‘হেকিতাবিগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে
সমানযে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি। আর তার সাথে কোনো
কিছুকেশরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ না
করি’।তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয়
আমরামুসলিম”।[8]
আল্লাহ এক, তার কোনো শরীক নেই। নূহ আলাইহিস সালাম স্বীয় কওমকে তাঁর ইবাদতের দিকেই আহ্বান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا
إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ
إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ٥٩ ﴾
[الاعراف: ٥٨]
“আমি
তোনূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছি। অতঃপর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম,
তোমরাআল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয়
আমিতোমাদের মহাদিনের আযাবের ভয় করছি”।[9]
ঈসা আলাহিস সালামও এক আল্লাহর ইবাদতের দিকেই আহ্বান করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ لَقَدۡ
كَفَرَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡمَسِيحُ ٱبۡنُ
مَرۡيَمَۖ وَقَالَ ٱلۡمَسِيحُ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ
رَبِّي وَرَبَّكُمۡۖ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ
ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ
مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائدة: ٧٢]
“অবশ্যইতারা
কুফরি করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মসীহ’।আর
মসীহ বলেছে, ‘হে বনী ইসরাইল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদতকর’।
নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাতহারাম করে
দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারীনেই”।[10]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَإِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى
ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ءَأَنتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ
إِلَٰهَيۡنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ مَا يَكُونُ لِيٓ أَنۡ
أَقُولَ مَا لَيۡسَ لِي بِحَقٍّۚ إِن كُنتُ قُلۡتُهُۥ فَقَدۡ عَلِمۡتَهُۥۚ
تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ
عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ ١١٦ مَا قُلۡتُ لَهُمۡ إِلَّا مَآ أَمَرۡتَنِي
بِهِۦٓ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۚ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ
شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ
ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ ١١٧ ﴾
[المائدة: ١١٦، ١١٧]
“আর
আল্লাহযখন বলবেন, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে,
‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর?’ সে বলবে,
‘আপনি পবিত্র মহান, যার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য সম্ভব নয়। যদিআমি
তা বলতাম তাহলে অবশ্যই আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা আছে তা আপনিজানেন,
আর আপনার অন্তরে যা আছে তা আমি জানি না; নিশ্চয় আপনি গায়েবীবিষয়সমূহে
সর্বজ্ঞাত’। ‘আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশকরেছেন যে,
তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর। আর যতদিন আমিতাদের মধ্যে
ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকেউঠিয়ে নিলেন
তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপরসাক্ষী”।[11]
মুসা আলাহিস সালামের সাথে কথার সময় আল্লাহ তাকে বলেন:
﴿ إِنَّنِيٓ أَنَا ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدۡنِي وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤ ﴾ [طه: ١٤]
“নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর”।[12]
আল্লাহ্ তা‘আলা তার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ প্রদান করেন:
﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِن
كُنتُمۡ فِي شَكّٖ مِّن دِينِي فَلَآ أَعۡبُدُ ٱلَّذِينَ تَعۡبُدُونَ مِن
دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِنۡ أَعۡبُدُ ٱللَّهَ ٱلَّذِي يَتَوَفَّىٰكُمۡۖ
وَأُمِرۡتُ أَنۡ أَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٠٤﴾ [يونس : ١٠٤]
“বল,
‘হেমানুষ, তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহে থাক, তবে আল্লাহ ছাড়া
তোমরাযার ইবাদত কর আমি তার ইবাদত করি না, বরং আমি ইবাদত করি আল্লাহর,
যিনিতোমাদের মৃত্যু দেন। আর আমি আদিষ্ট হয়েছি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার”।[13]
আসমানের মালায়েকাও তার ইবাদত করে, তার সাথে কাউকে তারা শরীক করে না, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ وَلَهُۥ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضِۚ وَمَنۡ عِندَهُۥ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَلَا
يَسۡتَحۡسِرُونَ ١٩ ﴾ [الانبياء: ١٩]
“আরআসমান-জমিনে
যারা আছে তারা সবাই তাঁর; আর তাঁর কাছে যারা আছে তারাঅহঙ্কারবশতঃ তাঁর
ইবাদত হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না”।[14]
আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য উপকার ও অপকার এবং সৃষ্টি ও রিজিকের মালিক নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُلۡ أَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ
ٱللَّهِ مَا لَا يَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗاۚ وَٱللَّهُ هُوَ
ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٧٦ ﴾ [المائدة: ٧٦]
“বল,
‘তোমরাকি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করবে, যা তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি
ওউপকারের ক্ষমতা রাখে না? আর আল্লাহ, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”।[15]
অপর আয়াতে তিনি বলেন:
﴿ إِنَّمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ
ٱللَّهِ أَوۡثَٰنٗا وَتَخۡلُقُونَ إِفۡكًاۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَعۡبُدُونَ
مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمۡلِكُونَ لَكُمۡ رِزۡقٗا فَٱبۡتَغُواْ عِندَ
ٱللَّهِ ٱلرِّزۡقَ وَٱعۡبُدُوهُ وَٱشۡكُرُواْ لَهُۥٓۖ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ
١٧ ﴾ [العنكبوت: ١٧]
“তোমরা
তোআল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোর পূজা করছ এবং মিথ্যা বানাচ্ছ। নিশ্চয়
তোমরাআল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা কর তারা তোমাদের জন্য রিযক-এর মালিক নয়।
তাইআল্লাহর কাছে রিযক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা
প্রকাশকর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে”।[16]
এবার আরেকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিষয়টি শেষ করছি, আর তা হচ্ছে আমরা কেন এক আল্লাহর ইবাদত করি, যার কোনো শরীক নেই। এর উত্তর:
প্রথমত:আমরাএ
জন্যই তার ইবাদত করি, যেহেতু তিনি ব্যতীত এ জগতে কেউ ইবাদতের হকদার
নয়।কারণ তিনি সৃষ্টিকারী ও রিজিকদাতা, তিনি অস্তিত্বহীন থেকে
আমাদেরকেঅস্তিত্ব দান করেছেন। তিনি বলেন:
﴿فَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ حِينَ
تُمۡسُونَ وَحِينَ تُصۡبِحُونَ ١٧ وَلَهُ ٱلۡحَمۡدُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضِ وَعَشِيّٗا وَحِينَ تُظۡهِرُونَ ١٨ يُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ
ٱلۡمَيِّتِ وَيُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّ وَيُحۡيِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ
مَوۡتِهَاۚ وَكَذَٰلِكَ تُخۡرَجُونَ ١٩ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ
خَلَقَكُم مِّن تُرَابٖ ثُمَّ إِذَآ أَنتُم بَشَرٞ تَنتَشِرُونَ ٢٠ وَمِنۡ
ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا
لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةٗ وَرَحۡمَةًۚ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢١ وَمِنۡ
ءَايَٰتِهِۦ خَلۡقُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفُ أَلۡسِنَتِكُمۡ
وَأَلۡوَٰنِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡعَٰلِمِينَ ٢٢ وَمِنۡ
ءَايَٰتِهِۦ مَنَامُكُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱبۡتِغَآؤُكُم مِّن
فَضۡلِهِۦٓۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَسۡمَعُونَ ٢٣ وَمِنۡ
ءَايَٰتِهِۦ يُرِيكُمُ ٱلۡبَرۡقَ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَيُنَزِّلُ مِنَ
ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَيُحۡيِۦ بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَآۚ إِنَّ فِي
ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ ٢٤ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَن
تَقُومَ ٱلسَّمَآءُ وَٱلۡأَرۡضُ بِأَمۡرِهِۦۚ ثُمَّ إِذَا دَعَاكُمۡ
دَعۡوَةٗ مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ إِذَآ أَنتُمۡ تَخۡرُجُونَ ٢٥ وَلَهُۥ مَن فِي
ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ كُلّٞ لَّهُۥ قَٰنِتُونَ ٢٦ وَهُوَ ٱلَّذِي
يَبۡدَؤُاْ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَهُوَ أَهۡوَنُ عَلَيۡهِۚ وَلَهُ
ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ
ٱلۡحَكِيمُ ٢٧ ﴾ [الروم: ١٧- ٢٧]
“অতএবতোমরা আল্লাহর তাসবীহ কর, যখন
সন্ধ্যায় উপনীত হবে এবং সকালে উঠবে। আরঅপরাহ্ণে ও যোহরের সময়ে; আর আসমান ও
জমিনে সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। তিনিমৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত
থেকে মৃতকে বের করেন। আর তিনি জমিনকেজীবিত করেন তার মৃত্যুর পর। আর এভাবেই
তোমরা উত্থিত হবে। আর তাঁরনিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে
মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমরা মানুষ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছ। আর তাঁর
নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের
সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরাতাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে
ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টিকরেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের
জন্য, যারা চিন্তাকরে। আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের
সৃষ্টি এবং তোমাদেরভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে
নিদর্শনাবলী রয়েছেজ্ঞানীদের জন্য। আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাতে ও
দিনে তোমাদেরনিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে তোমাদের (জীবিকা) অন্বেষণ।
নিশ্চয় এর মধ্যেনিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা শোনে। আর তাঁর
নিদর্শনাবলীর মধ্যেরয়েছে তিনি তোমাদেরকে ভয় ও ভরসাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান, আর
আসমান থেকে পানিবর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর পর
পুনর্জীবিত করেন।নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা
অনুধাবন করে। আরতাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে আসমান ও
জমিন স্থিতিশীলথাকে। তারপর তিনি যখন তোমাদেরকে জমিন থেকে বের হয়ে আসার জন্য
একবার আহবানকরবেন তখনই তোমরা বের হয়ে আসবে। আর আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু
আছে সবতাঁরই। সব কিছুই তাঁর অনুগত। আর তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর
তিনিই এরপুনরাবৃত্তি করবেন। আর এটা তো তাঁর জন্য অধিকতর সহজ। আসমান ও
জমিনেসর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”।[17]
তিনি অপর আয়াতে বলেন:
﴿أَمَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضَ وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَنۢبَتۡنَا بِهِۦ
حَدَآئِقَ ذَاتَ بَهۡجَةٖ مَّا كَانَ لَكُمۡ أَن تُنۢبِتُواْ شَجَرَهَآۗ
أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٞ يَعۡدِلُونَ ٦٠ أَمَّن جَعَلَ
ٱلۡأَرۡضَ قَرَارٗا وَجَعَلَ خِلَٰلَهَآ أَنۡهَٰرٗا وَجَعَلَ لَهَا
رَوَٰسِيَ وَجَعَلَ بَيۡنَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ حَاجِزًاۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ
ٱللَّهِۚ بَلۡ أَكۡثَرُهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٦١ أَمَّن يُجِيبُ
ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجۡعَلُكُمۡ
خُلَفَآءَ ٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قَلِيلٗا مَّا
تَذَكَّرُونَ ٦٢ أَمَّن يَهۡدِيكُمۡ فِي ظُلُمَٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ
وَمَن يُرۡسِلُ ٱلرِّيَٰحَ بُشۡرَۢا بَيۡنَ يَدَيۡ رَحۡمَتِهِۦٓۗ أَءِلَٰهٞ
مَّعَ ٱللَّهِۚ تَعَٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٣ أَمَّن يَبۡدَؤُاْ
ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥ وَمَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ
وَٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قُلۡ هَاتُواْ بُرۡهَٰنَكُمۡ إِن
كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٦٤ قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ
يُبۡعَثُونَ ٦٥﴾ [النمل: 60-65]
“বরং তিনি (শ্রেষ্ঠ), যিনি আসমানসমূহ ও
জমিনকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য তিনিআসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন।
অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি।তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার
ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনইলাহ আছে? বরং তারা এমন এক
কওম যারা শির্ক করে। বরং তিনি, যিনি জমিনকেআবাসযোগ্য করেছেন এবং তার মধ্যে
প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। আর তাতে স্থাপনকরেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং দুই
সমুদ্রের মধ্যখানে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ
আছে? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না। বরংতিনি, যিনি নিরুপায়ের আহবানে সাড়া দেন
এবং বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকেজমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে
কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? তোমরা কমইউপদেশ গ্রহণ করে থাক। বরং তিনি, যিনি
তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারেপথ দেখান এবং যিনি স্বীয় রহমতের
প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন।আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ
আছে? তারা যা কিছু শরীক করে আল্লাহ তাথেকে ঊর্ধ্বে। বরং তিনি, যিনি সৃষ্টির
সূচনা করেন, তারপর তার পুনরাবৃত্তিকরবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আসমান ও জমিন
থেকে রিজিক দান করেন, আল্লাহর সাথেকি কোনো ইলাহ আছে? বল, ‘তোমাদের প্রমাণ
নিয়ে এসো যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ বল, ‘আল্লাহ ছাড়া আসমানসমূহে ও জমিনে
যারা আছে তারা গায়েব জানে না। আর কখনতাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে তা তারা
অনুভব করতে পারে না”।[18]
অতএব আল্লাহ ব্যতীত কেউ কি আছে, যে ইবাদতের হকদার?
দ্বিতীয়ত:আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শুধু তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন:
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]
“আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা কেবল আমার ইবাদত করবে”।[19]
তৃতীয়ত:কিয়ামতের
দিন একমাত্র তারাই নাজাত পাবে, যারা যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদতসম্পাদন
করেছে। বান্দাদের হিসাব-নিকাশ ও আমলের প্রতিদান প্রদানের নিমিত্তেমৃত্যুর
পর আল্লাহ পুনরায় তাদেরকে উঠাবেন, সেদিন একমাত্র তারাই মুক্তিপাবে, যারা
শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করেছে, আর অবশিষ্টদের জাহান্নামে নিয়েযাওয়া হবে, যা
খুব নিকৃষ্ট স্থান। ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়াসাল্লামকে যখন তার
সাথীগণ জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘কিয়ামতের দিন আমরা কিআমাদের রবকে দেখব? তিনি
বলেছেন:
«هَلْ تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ
الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ إِذَا كَانَتْ صَحْوًا قُلْنَا لا قَالَ فَإِنَّكُمْ
لا تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ يَوْمَئِذٍ إِلا كَمَا تُضَارُونَ
فِي رُؤْيَتِهِمَا ثُمَّ قَالَ يُنَادِي مُنَادٍ لِيَذْهَبْ كُلُّ قَوْمٍ
إِلَى مَا كَانُوا يَعْبُدُونَ فَيَذْهَبُ أَصْحَابُ الصَّلِيبِ مَعَ
صَلِيبِهِمْ وَأَصْحَابُ الأَوْثَانِ مَعَ أَوْثَانِهِمْ وَأَصْحَابُ كُلِّ
آلِهَةٍ مَعَ آلِهَتِهِمْ حَتَّى يَبْقَى مَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ
مِنْ بَرٍّ أَوْ فَاجِرٍ وَغُبَّرَاتٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ ثُمَّ
يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ تُعْرَضُ كَأَنَّهَا سَرَابٌ فَيُقَالُ لِلْيَهُودِ
مَا كُنْتُمْ تَعْبُدُونَ قَالُوا كُنَّا نَعْبُدُ عُزَيْرَ ابْنَ اللَّهِ
فَيُقَالُ كَذَبْتُمْ لَمْ يَكُنْ لِلَّهِ صَاحِبَةٌ وَلا وَلَدٌ فَمَا
تُرِيدُونَ قَالُوا نُرِيدُ أَنْ تَسْقِيَنَا فَيُقَالُ اشْرَبُوا
فَيَتَسَاقَطُونَ فِي جَهَنَّمَ ثُمَّ يُقَالُ لِلنَّصَارَى مَا كُنْتُمْ
تَعْبُدُونَ فَيَقُولُونَ كُنَّا نَعْبُدُ الْمَسِيحَ ابْنَ اللَّهِ
فَيُقَالُ كَذَبْتُمْ لَمْ يَكُنْ لِلَّهِ صَاحِبَةٌ وَلا وَلَدٌ فَمَا
تُرِيدُونَ فَيَقُولُونَ نُرِيدُ أَنْ تَسْقِيَنَا فَيُقَالُ اشْرَبُوا
فَيَتَسَاقَطُونَ فِي جَهَنَّمَ حَتَّى يَبْقَى مَنْ كَانَ يَعْبُدُ
اللَّهَ مِنْ بَرٍّ أَوْ فَاجِرٍ فَيُقَالُ لَهُمْ مَا يَحْبِسُكُمْ وَقَدْ
ذَهَبَ النَّاسُ فَيَقُولُونَ فَارَقْنَاهُمْ وَنَحْنُ أَحْوَجُ مِنَّا
إِلَيْهِ الْيَوْمَ وَإِنَّا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِيَلْحَقْ
كُلُّ قَوْمٍ بِمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ وَإِنَّمَا نَنْتَظِرُ رَبَّنَا
قَالَ فَيَأْتِيهِمْ الْجَبَّارُ .. فَيَقُولُ أَنَا رَبُّكُمْ
فَيَقُولُونَ أَنْتَ رَبُّنَا فَلا يُكَلِّمُهُ إِلا الأَنْبِيَاءُ ..
فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ»
“তোমরা কিসূর্য ও চাঁদ দেখতে কষ্ট অনুভব
কর যখন পরিষ্কার থাকে? আমরা বললাম: না, তিনিবললেন: সে দিন তোমাদের রবকে
দেখতে কোনো কষ্ট অনুভব হবে না, যেমন কষ্টঅনুভব কর এ দু’টোকে দেখতে। অতঃপর
এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, প্রত্যেক কওমযেন তাদের উপাস্যদের নিকট চলে যায়,
ফলে ক্রুশ পূজারিরা তাদের ক্রুশের সাথেচলে যাবে, মূর্তি পূজারিরা তাদের
মূর্তির সাথে চলে যাবে এবং প্রত্যেকউপাস্যদের ইবাদতকারিরা তাদের উপাস্যদের
সাথে চলে যাবে, অবশেষে শুধুআল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা বদকার লোকেরা
বাকি থাকবে এবং অবশিষ্ট কতকআহলে কিতাব। অতঃপর জাহান্নামকে এনে পেশ করা হবে,
যেন তা মরীচিকা।ইহুদিদেরকে বলা হবে: তোমরা কার ইবাদত করতে, তারা বলবে আমরা
আল্লাহর ছেলেউযায়ের এর ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা মিথ্যা বলেছ,
আল্লাহর কোনোসন্তান ও স্ত্রী ছিল না। তোমরা কি চাও? তারা বলবে: আমাদেরকে
পানি পান করান।বলা হবে: তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
অতঃপরখ্রিস্টানদের বলা হবে: তোমরা কার ইবাদত করতে, তারা বলবে: আমরা আল্লাহর
ছেলেমাসীহের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর
কোনোসন্তান ও স্ত্রী ছিল না, তোমরা কি চাও? তারা বলবে: আমাদেরকে পানি পান
করান।বলা হবে: তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, অবশেষে
শুধুআল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার কিংবা বদকার অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর তাদেরকে
বলাহবে: তোমাদেরকে কিসে আটকে রেখেছে, অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবে:
আমরাতাদের থেকে পৃথক হয়ে গেছি। আজ আমরা তার (রবের) খুব মুখাপেক্ষী। আমরা
একঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছি, প্রত্যেক কওম তাদের উপাস্যদের সাথে
গিয়েমিলুক, ফলে আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি। তিনি বলেন, তাই তাদের
নিকটআল্লাহ আসবেন… তিনি বলবেন: আমি তোমাদের রব, তারা বলবে: আপনি আমাদের রব,
নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না…, অতঃপর প্রত্যেক মুমিন তাকে
সেজদাকরবে”।[20]
তারা সবাই মুমিন, তারাই
একমাত্রজান্নাতবাসী, তাদের উপর কোনো ভয় নেই, তারা কখনো চিন্তিত হবে না,
তারাসেখানে সর্বদা থাকবে। আশা করছি বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অতঃপর শুধু
আল্লাহরবাণী দ্বারাই শেষ করছি, তিনি বলেন:
﴿مَّنِ ٱهۡتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهۡتَدِي لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيۡهَاۚ ١٥ ﴾ [الاسراء: ١٥]
“যে হিদায়েত গ্রহণ করে, সে তো নিজের জন্যই হিদায়েত গ্রহণ করে এবং যে পথভ্রষ্ট হয় সে নিজের (স্বার্থের) বিরুদ্ধেই পথভ্রষ্ট হয়”।[21]
হিদায়েত অনুসারীর উপর সালাম।[1] সূরা আন‘আম: (৮৮)
[2] সূরা আন‘আম: (১২৫)
[3] সূরা ফাতেহা: (১-৫)
[4] সূরা বাকারা: (২১)
[5] সূরা আন‘আম: (১০২)
[6] সূরা আল-ইসরা: (২৩)
[7] সূরা বাকারা: (১৩৩)
[8] সূরা আলে-ইমরান: (৬৪)
[9] সূরা আরাফ: (৫৮)
[10] সূরা আল-মায়েদাহ্: (৭২)
[11] সূরা মায়েদা: (১১৬-১১৭)
[12] সূরা ত্বহা: (১৪)
[13] সূরা ইউনুস: (১০৪)
[14] সূরা আম্বিয়া: (১৯)
[15] সূরা মায়েদাহ্: (৭৬)
[16] সূরা ‘আনকাবুত: (১৭)
[17] সূরা রূম: (১৭-২৭)
[18] সূরা নামল: (৬০-৬৫)
[19] সূরা যারিয়াত: (৩৩)
[20] বুখারি: (৬৮৮৬), (৭৪৪০)
[21] সূরা ইসরা: (১৫)
No comments:
Post a Comment