Tuesday 4 November 2014

১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত আক্রমন করে এবং অন্য আরব দেশগুলো আক্রমন করার হুমকি দেয়, তখন সৌদি বাদশাহ আমেরিকার সাহায্য নেয় সাদ্দামকে প্রতিহত করার জন্য। আমাদের প্রশ্ন ছিলো, মুসলমানদের জন্য যুদ্ধে কোন কাফেরের সাহায্য নেওয়া জায়েজ আছে কিনা?


১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত আক্রমন করে এবং অন্য আরব দেশগুলো আক্রমন করার হুমকি দেয়, তখন সৌদি বাদশাহ আমেরিকার সাহায্য নেয় সাদ্দামকে প্রতিহত করার জন্য। আমাদের প্রশ্ন ছিলো, মুসলমানদের জন্য যুদ্ধে কোন কাফেরের সাহায্য নেওয়া জায়েজ আছে কিনা?
উত্তরঃ সালমান আল-আওদাহ, সফর আল-হাওয়ালি, মুহাম্মাদ আল-সুরুরের মতো বিভ্রান্ত তাকফিরী আলেম ও তাদের অন্ধভক্ত কিছু ইউটিউব বক্তা ইন্টারনেটে ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলোতে ইমাম আব্দুল আজিজ ইবনে বাজ, ইমাম মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন সহ অন্যান্য আলেমদের নামে আজেবাজে কথা প্রচার করে বেড়ায়। এমনকি তাদের ছড়ানো তাকফিরী বিষে আক্রান্ত কিছু বাংলা ও ইংরেজী ভাষাভাষী বক্তা ও লেখক আহলে সুন্নাহর সাম্প্রতিক কালের এই ইমামদেরকে ‘তাগুতের পা চাটা গোলাম’ এর মতো জঘন্য ভাষায় গালি দিতে দ্বিধা করছেনা।
[নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক – আল্লাহ তাদেরকে তাই দিন যা তাদের জন্য উপযুক্ত]

তাদের অভিযোগ সৌদি ওলামারা বাদশাহর রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, তাদেরকে খুশি করার জন্য ফতোয়া চেঞ্জ করেন। অনেকে সরাসরি আলেমদেরকে মুনাফেক, দরবারী আলেম বলে গালি দেওয়াকে তাদের জন্য ফরজ করে নিয়েছেন।
চলুন দেখি আসলে ওলামারা কি দালালি করেন, নাকি ইসলামের কথাই বলেন যা ইখওয়ানি, হিযবুতি, আল-কায়েদাহ, কম্বল মুজাহিদসহ বিভিন্ন বিভ্রান্ত দলগুলোর হাওয়া (প্রবৃত্তির) সাথে মনোঃপুত না হওয়ায় সেইরকম গালি-গালাজ করছে, যেইরকম গালি খারেজীরা দিতো সাহাবীদেরকে।
গালিবাজ লোকদের বড় একটা অভিযোগ, কোন যুদ্ধে কাফেরদের কাছ থেকে থেকে সাহায্য নেওয়া হারাম। কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করলে সে কাফের হয়ে যাবে। সুতরাং সাদ্দামের বিরুদ্ধে সৌদি আরব আমেরিকার সাহায্য নিয়ে সৌদি বাদশাহ ত্বাগুত হয়ে গেছে। আর শায়খ বিন বাজসহ অন্য সৌদি আলেমরা এটাকে সমর্থন করায় ও জায়েজ ফতোয়া দেওয়ায় তারা তাগুতের গোলামী করে সউদী ওলামারাও কাফের হয়ে গেছেন (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
চলুন দেখি ২০-২২ বছরে ফেইসবুক গালিবাজ লোকদের বিপরীতে আমাদের পূর্ববর্তী আলেমরা এই ব্যপারে কি বলেছেনঃ
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন, “কাফেরদের সাহায্য নেওয়া প্রথমে নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে এই হুকুম রহিত হয়ে যায়।” [নায়লুল আওতারঃ ৮/৪৪]
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) আরো বলেছেন, “কাফেরদের কাছ থেকে যুদ্ধের জন্য সাহায্য নেওয়া জায়েজ যারা মুসলমানদের কাছে বিশ্বস্ত এবং যখন সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে। এই শর্তগুলো পূরণ না হলে কাফেরদের সাহায্য নেওয়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়)।” [শরাহ সহীহ মুসলিম, ইমাম নববী]
এই বিষয়ে ৪ মাজহাবের ফুকাহাদের অবস্থান প্রায় কাছাকাছি যা ইমাম শাফেয়ী ব্যক্ত করেছেন। রেফারেন্স দেখুন –
১. হানাফি মাযহাবের মত দেখুন শারাহা কিতাব আস শির ফাকারা ২০১।
২. মালেকি মত দেখুন: আল মাদুনা ২/৪০, আল কুর্তুবি ৮/১০০।
৩. শাফেয়ী মাজহাবে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, “হারবি কাফেরদেরও সাহায্য নেয়া জায়েজ।”
দেখুন: নিহায়াত আল মাহতাজ ৮/৫৮, তাক্মিলা আল মাজমুয়া ১৯/২৮।
৪. হাম্বলি মাযহাবের মত দেখুন, ইমাম ইবনে কুদামাহর প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব আল-মুগনিঃ ৮/৪১৪।
এতো গেলো পূর্ববর্তী আলেমদের মতামত। চলুন এবার আমরা রাসুল সাঃ এর সহীহ হাদিসে দেখি, কাফেরদের সাথে সন্ধি চুক্তি করে মুসলমানদের অন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা জায়েজ তা সরাসরি হাদীস দিয়েই প্রমানিতঃ
যু-মিখবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “অদূর ভবিষ্যতে তোমরা রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সাথে শান্তি চুক্তি করবে। পরে তোমরা ও তারা (খ্রিস্টানরা) মিলে তোমাদের পিছন দিককার (শত্রুদের/কাফেরদের) সাথে যুদ্ধ করবে। সেই যুদ্ধে তোমরা জয়ী হবে, অনেক গনিমত অর্জন করবে এবং নিরাপত্তা লাভ করবে। তখন এক খৃষ্টান ব্যক্তি ক্রুশ উঁচু করে ধরে বলবে, ক্রুশ (ক্রস অর্থাৎ খ্রীস্টান ধর্ম) জয়ী হয়ে গেছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে ক্রুশটিকে ভেঙ্গে ফেলবে। এই ঘটনার সুত্র ধরে রোমানরা (খ্রিস্টানরা) বিশ্বাসঘাতকতা (সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ) করবে”।
মিশকাত শরীফ, মহাযুদ্ধ অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, আবু দাউদ, ১৫৮৮, হাদীসটি ‘সহীহ’ – শায়খ আলবানী।
সুতরাং সহীহ হাদীস দিয়ে স্পষ্ট প্রমানিত হলো, যুদ্ধে এক কাফেরের বিরুদ্ধে অন্য কাফেরের সাহায্য নেওয়া জায়েজ।
এবার আসি সাদ্দাম হোসেন প্রসংগে...
সাদ্দাম হোসেন ছিলো ইসলাম বিরোধী বাথিস্ট। সে ক্ষমতায় আসার পরে তার দলের লোকেরা আল্লাহর কুশপুত্তলিকা বানিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং আল্লাহ আজ থেকে মৃত বলে ঘোষণা করে, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এছাড়া আরো অনেক শিরকি কুফুরী কাজের জন্য শায়খ বিন বাজসহ অন্য আলেমরা সাদ্দামকে ‪#‎মুর্তাদ‬ ফতোয়া দিয়েছিলেন। অবশ্য তার ফাসির আগে সে তোওবা করেছে বলে দাবী করে, দাড়ি রাখে, কোর্টে কুরান নিয়ে আসে এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে বলতেই সে ফাঁসিতে ঝুলে। তাই হতে পারে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাই আমরা এখন আর তাকে কাফের বলবোনা – তার ব্যপারে চুপ থাকবো।
১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন (কাফের থাকা অবস্থায়) আকস্মিকভাবে কুয়েত দখল করে মধ্যপ্রচ্যের অন্য দেশগুলোকে হুমকির মুখে ফেলে। উল্লেখ্য সে এবং তার ইরাকী সরকার তখন কুফুরীর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো যা ওলামারা অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন। এইরকম অত্যাচারী কাফেরকে প্রতিহত করার জন্য সৌদি আরব তখন শায়খ বিন বাজ, শায়খ মুহাম্মাদ আমান আল-জামি সহ বড় ওলামাদের পরামর্শক্রমে জাতিসংঘের মাধ্যমে আমেরিকান কুফফারদের সাহায্য নেওয়া সিদ্ধান্ত নেন এবং এর মাধ্যমে তারা সাদ্দামের আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করেন। শায়খ বিন বাজ রহঃ এর নেতৃত্বে সউদী ওলামাদের এই ফতোয়া ও বাদশাহর সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিলো তা উপরের আলোচনাতেই স্পষ্ট।
শায়খ আলবানী ফতোয়া প্রসংগেঃ
উল্লেখ্য, আল্লামাহ শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) সউদী ওলামাদের এই ফতোয়াকে ভুল বলেন এবং তিনি এর বিরোধীতা করেন। কিছু প্রতারক লোক যারা আসলে মনপূজারী তারা শায়খ আলবানীর এই ফতোয়াটা খুব প্রচার করে, যদিও তারা জিহাদ, তাকফীর, রাজনীতিসহ অন্য বিষয়গুলোতে শায়খ আলবানীর কোন বক্তব্যকে গ্রহণ করেনা। কিন্তু শায়খ আলবানীর এই ফতোয়া তাদের প্রবৃত্তির সাথে স্যুট করে সেইজন্য শায়খ আলবানির এই ফতোয়াটা তারা খুব প্রচার করে।
এ প্রসঙ্গে আমরা ইমাম মালেক রহঃ এর কথাই বলবো, “সবার কথা নিতে হবে, ছাড়তেও হবে – শুধুমাত্র রাসুল সাঃ এর কথা ছাড়া।”
আমরা আলেমদের (ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ...থেকে নিয়ে সর্বশেষ ইমাম ইবনে বাজ, ইমাম ইবনে উসায়মিন, ইমাম আলবানী) সবার কথাই যেটা সঠিক সেটা গ্রহণ করি, যেটা ভুল সেটা বর্জন করি। এটা বলিনা যে, এতোবড় আলেম তার ভুল হতেই পারেনা, কিংবা কারো কথা ১০০% ঠিক, তার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে এটাও বলিনা। অনেক ব্যপারে ওলামারা মত পার্থক্য করেন, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ তাদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছে, আমরা কোন ব্যপারে সেটাই মানি যা ক্বুরান ও সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত। তেমনি কোন যুদ্ধে মুসলমানদের যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন কাফেরদের সাহায্য নেওয়া যাবে কিনা – এটা একটা ইজতেহাদী বিষয় যেই ব্যপারে শায়খ বিন বাজ ও শায়খ আলবানীর মাঝে মত পার্থক্য হয়েছে। কিন্তু আমরা এই ব্যপারে ইমাম শাফেয়ী, ইমাম নববীর, শায়খ বিন বাজ, শায়খ মুহাম্মাদ আমান আল-জামির ফতোয়ার পক্ষেই শক্তিশালী দলিল দেখতে পাচ্ছি যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই জন্য এই ব্যপারে তাঁদের ফতোয়াকেই গ্রহণ করি।
শায়খ বিন বাজের মূল ফতোয়ার অনুবাদঃ
http://www.alifta.net/Fatawa/FatawaChapters.aspx?languagename=en&View=Page&PageID=693&PageNo=1&BookID=14

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...