Sunday 2 November 2014

ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া ,হাসান, হুসাইন

প্রশ্ন (৩৯/৩৯) : হাসান (রাঃ) কি মু‘আবিয়া (রাঃ) কর্তৃক বিষ প্রয়োগ করায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন? এ ব্যাপারে সঠিক ইতিহাস জানতে চাই।
-এম. এ, ত্বালহা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।
উত্তর : হাসান (রাঃ) কিভাবে মারা গেছেন এর সঠিক তথ্য কোন ছহীহ সূত্রে পাওয়া যায় না। তবে হাফেয ইবনু হাজার বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, তিনি বিষপানে মারা গেছেন। উমায়ের ইবনু ইসহাক বলেন, আমি এক সাথীকে নিয়ে হাসান (রাঃ)-এর নিকটে গেলাম। তখন তিনি বললেন, আমি একাধিকবার বিষপান করেছি। কিন্তু এত বিষাক্ত বস্তু ইতিপূর্বে কখনও পান করিনি। এরই মধ্যে তার ভাই হুসাইন সেখানে এসে জিজ্ঞেস করলেন। কে আপনাকে বিষ পান করিয়েছে? তিনি সেটা বলতে অস্বীকার করলেন (আল ইছাবাহ ২/৭৩ বর্ণনাটি ছহীহ, তাহযীবুত তাহযীব ৪/১২৭)। ক্বাতাদা থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৩/২৭৪)।

বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, মু‘আবিয়া (রাঃ) বা তার ছেলে ইয়াযীদের নির্দেশনায় হাসান (রাঃ)-এর স্ত্রী তাঁকে বিষ পান করিয়েছিলেন। ইবনু কাছীর বলেন, এগুলি অশুদ্ধ ও ভিত্তিহীন (আল-বিদায়াহ ১১/২০৮)। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ বলেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) হাসানকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করেছেন মর্মে কিছু লোক যা বলে থাকে, তা কোন দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। অতএব এ ব্যাপারে কিছু না জেনে বলার ন্যায় হবে (মিনহাজুস সুন্নাহ ৪/৪৬৯)। যাহাবী বলেন, আমি বলব, আমার গবেষণায় এটা বিশুদ্ধ নয় (তারীখুল ইসলাম পৃঃ ৪০)। ইবনু খালদূন বলেন, এটা শী‘আদের প্রচারণা। (তারীখে ইবনু খালদুন ২/৬৪৯)। সুতরাং বিষপানে তাঁর মৃত্যু হলেও কে পান করিয়েছে, তা অজ্ঞাত।
(আত-তাহরীক/অক্টোবর’১৪) প্রশ্ন (৮/৮) : ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া কিভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন? তার মৃত্যুর ব্যাপারে যেসব কাহিনী প্রচলিত আছে, তার কোন ভিত্তি আছে কি?
-আব্দুল ওয়ারেছ, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।
উত্তর : ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া ৬৪ হিজরীর ১৪ই রবীঊল আউয়াল ৩৫ বা ৩৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৮/২৪৭)। মৃত্যুকালে ইয়াযীদের শেষ কথা ছিল, ‘হে আল্লাহ! আমাকে পাকড়াও করো না ঐ বিষয়ে যা আমি চাইনি এবং আমি প্রতিরোধও করিনি এবং আপনি আমার ও ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের মধ্যে ফায়ছালা করুন’ (আল-বিদায়াহ ৮/২৩৯ পৃঃ)।
তার মৃত্যু সম্পর্কে যে বলা হয়ে থাকে যে, তিনি শিকারে বের হলে হিংস্র পশুর হামলায় তাকে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়। এসব কথা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। বরং এগুলি শী‘আদের অতিরঞ্জন মাত্র। ইবনু আসাকির স্বীয় ‘তারীখে’ ইয়াযীদকে মদখোর, ছালাত ত্যাগকারী, ফাসেক ইত্যাদি মন্দ স্বভাবের বর্ণনায় যে সব উদ্ধৃতি পেশ করেছেন, সে সম্পর্কে ইবনু কাছীর বলেন,وَقَدْ أَوْرَدَ ابْنُ عَسَاكِرَ أَحَادِيثَ فِي ذَمِّ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ كُلُّهَا مَوْضُوعَةٌ لاَ يَصِحُّ شَيْءٌ مِنْهَا ‘ইয়াযীদের মন্দ স্বভাব সম্পর্কে ইবনু আসাকির বর্ণিত উক্তি সমূহের সবগুলিই জাল। যার একটিও বিশুদ্ধ নয় (আল-বিদায়াহ ৮/২৩৪ পৃঃ)।

ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়াহ-র চরিত্র সম্পর্কে হুসায়েন (রাঃ)-এর অন্যতম বৈমাত্রেয় ছোট ভাই ও শী‘আদের খ্যাতনামা ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিইয়াহ (রাঃ) বলেন, ‘আমি তাঁর মধ্যে ঐ সব বিষয় দেখিনি, যেসবের কথা তোমরা বলছ। অথচ আমি তাঁর নিকটে হাযির থেকেছি ও অবস্থান করেছি এবং তাঁকে নিয়মিতভাবে ছালাতে অভ্যস্ত ও কল্যাণের আকাংখী দেখেছি। তিনি ‘ফিক্বহ’ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং তিনি সুন্নাতের পাবন্দ ছিলেন’ (আল-বিদায়াহ ৮/২৩৬)।
এছাড়া সমুদ্র অভিযান এবং রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ে অংশগ্রহণকারীদেরকে রাসূল (ছাঃ) ক্ষমাপ্রাপ্ত ও তাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব বলে ঘোষণা করেছেন (বুখারী হা/২৯২৪, ‘জিহাদ’ অধ্যায় ‘রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ)। মুহাল্লাব বলেন, এই হাদীছের মধ্যে হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) ও তাঁর পুত্র ইয়াযীদ-এর মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা হযরত ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (২৩-৩৫ হিঃ) সিরিয়ার গভর্ণর থাকাকালীন সময়ে মু‘আবিয়া (রাঃ) ২৭ হিজরী সনে রোমকদের বিরুদ্ধে ১ম সমুদ্র অভিযান করেন। অতঃপর মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (৪১-৬০হিঃ) ৫১ হিজরী মতান্তরে ৪৯ হিজরী সনে ইয়াযীদের নেতৃত্বে রোমকদের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের উদ্দেশ্যে যুদ্ধাভিযান প্রেরিত হয় (ইবনু হাজার, ফৎহুল বারী ৬/১২০-২১)।
ইবনু কাছীর বলেন, ইয়াযীদের সেনাপতিত্বে পরিচালিত উক্ত অভিযানে স্বয়ং হুসায়েন (রাঃ) অংশ গ্রহণ করেন (আল-বিদায়াহ ৮/১৫৩ পৃঃ)। এতদ্ব্যতীত যোগদান করেছিলেন আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের, আবু আইয়ূব আনছারী প্রমুখ খ্যাতনামা ছাহাবীগণ (ইবনুল আছীর, ‘আল-কামেল ফিত-তারীখ’ ৩/৫৭; দ্রষ্টব্যঃ আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়’ বই)।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...