Wednesday 5 November 2014

বিদ‘আতের প্রকারভেদ ও তার বিধান প্রসঙ্গে



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ». (أخرجه مسلم) .
“অতঃপর, সর্বাধিক সত্য কথা হল আল্লাহর কিতাব; আর সব জীবনাদর্শের চেয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শই সর্বোৎকৃষ্ট; আর দীনের মাঝে বিদ‘আত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা সর্বাপেক্ষা মন্দকাজ; আর প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।”[28] 
এই হাদিসটি ‘মাসাবীহ’ ( المصابيح ) গ্রন্থের বিশুদ্ধ হাদিসসমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন।
ইরবাদ্ব ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত অপর এক হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور فان كل محدثة بدعة وان كل بدعة ضلالة » . (أخرجه أحمد و الترمذي) .
“আমার মৃত্যুর পরে তোমাদের মধ্য থেকে যে বেঁচে থাকবে, অচিরেই সে বহু মতবিরোধ দেখতে পাবে; সুতরাং তোমাদের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল, তোমরা আমার পরে আমার সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে মজবুতভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে ও দাঁত দ্বারা কামড়ে থাকবে; আর দীনের মাঝে বিদ‘আত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা থেকে বেঁচে থাকবে; কারণ, দীনের মাঝে নতুন কিছু উদ্ভাবন করাই হল বিদ‘আত; আর প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।”[29]

বিদ‘আতের প্রকারভেদ

এই হাদিস দু’টিতে উল্লেখিত বিদ‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য হল ‘মন্দ বিদ‘আত’ (البدعة السيئة), যার পক্ষে কুরআন ও সুন্নাহ’র মধ্যে কোন দলিল-প্রমাণ এবং স্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোন সনদ, বক্তব্য অথবা উদ্ভাবিত কিছু নেই। এর দ্বারা ‘মন্দ বিদ‘আত’ (البدعة السيئة) ছাড়া অন্যান্য নতুন করে চালু হওয়া বিষয় রয়েছে এবং যেগুলোর পক্ষে দলিল-প্রমাণ ও স্পষ্ট বা অস্পষ্ট সনদ রয়েছে সে সব বিষয় উদ্দেশ্য নয়; সুতরাং তা ভ্রষ্টতা বা বিভ্রান্তিকর নয়, বরং তা কখনও কখনও তা বৈধ, যেমন আটার জন্য চালুনি ব্যবহার করা, সর্বদা উন্নতমানের আটা বা ময়দা ভক্ষণ করা। আবার কখনও কখনও তা মুস্তাহাব, যেমন মসজিদের মিনার বানানো ও বইপত্র রচনা করা। আবার কখনও কখনও তা ওয়াজিব, যেমন নাস্তিক ও বিভ্রান্ত দলসমূহ কর্তৃক সৃষ্ট সন্দেহ-সংশয়ের যথাযথ জওয়াব দেওয়ার জন্য দলিল-প্রমাণ গ্রন্থনা করা।
কারণ, ‘বিদ‘আত’ শব্দটির দু‘টি অর্থ রয়েছে;
একটি হল: সাধারণ ভাষাগত বা আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আর তখন তা সব ধরণের নতুন প্রবর্তিত বিয়ককেই অন্তর্ভুক্ত করে, চাই তা স্বভাবগত হউক, অথবা ইবাদতের ক্ষেত্রে হউক।
আর অপর অর্থটি হল: বিশেষভাবে শরী‘য়তের দৃষ্টিকোণ থেকে, আর তা হল সাহাবীগণের পরবর্তী সময়ে শরী‘য়ত প্রবর্তক (আল্লাহ) এর পক্ষ থেকে কথা, কাজ, স্পষ্ট ঘোষণা কিংবা ইশারা-ইঙ্গিত- ইত্যাদি যে কোনোভাবে কোনো প্রকার অনুমোদন ব্যতীত দীনের মধ্যে কম বা বেশি করা।
এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, উপরোক্ত হাদিস দু’টির মধ্যে আলোচিত বিদ‘আত যদিও ব্যাপকভাবে সকল প্রকার নতুন প্রবর্তিত বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু তার এই ব্যাপকতা আভিধানিক অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং তার এ ব্যাপকতা হল বিশেষভাবে শরী‘য়তের পারিভাষিক অর্থের দৃষ্টিকোণ থেকে; সুতরাং তা মৌলিকভাবে মানুষের স্বভাবগত ও অভ্যাসগত বিষয়গুলোকে মোটেই অন্তর্ভুক্ত করবে না; বরং তার ব্যাপকতা আকিদা-বিশ্বাস ও ইবাদতের ধরন ও প্রকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়াবী বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়নি, বরং তাঁকে শুধু দীনের বিষয়গুলো শিক্ষাদানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে; আর এ কথার প্রমাণ বহন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«أَنْتُمْ أَعْلَمُ بِأَمْرِ دُنْيَاكُمْ, إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَىْءٍ مِنْ دِينِكُمْ فَخُذُوا بِهِ  » . (أخرجه مسلم) .
“তোমাদের দুনিয়ার বিষয়ে তোমরাই ভাল জান; তাই যখন আমি তোমাদেরকে তোমাদের দীনের কোনো বিষয়ে নির্দেশ দেব, তখন তোমরা তা অবশ্যই গ্রহণ করবে।”[30]
অতঃপর আকিদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিদ‘আত কুফরী, আবার কিছু কিছু কুফরী নয়, কিন্তু তা প্রত্যেকটি কবীরা গুনাহের চেয়েও মারাত্মক ধরনের গুনাহ, এমনকি হত্যা ও যিনা-ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক; আর এই ধরনের বিদ‘আতের উপরে কুফরী ছাড়া অন্য কোনো গুনাহ নেই। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে বিদ‘আত যদিও কুফরীর চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের, কিন্তু তা কাজে পরিণত করাটা শরী‘য়তের অবাধ্যতা ও ভ্রষ্টতা, বিশেষ করে তা যখন সুন্নাতে মুয়াক্কাদাকে আঘাত করবে। আর অভ্যাস-প্রথাজনিত বিষয়ের ক্ষেত্রে যেসব বিদ‘আত, তা (শরী‘য়তের) অবাধ্যতা ও ভ্রষ্টতার পর্যায়ে পড়ে না, তবে তা পরিত্যাগ করাটা উত্তম[31]!
যখন এটা প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন বুঝা গেল যে, মিনারায় আযান দেওয়া সালাতের সময় জানিয়ে দেওয়ার জন্য সহায়তা করে, বইপত্র রচনা করা শিক্ষাদান ও প্রচার কাজের সহায়ক, নাস্তিক ও বিভ্রান্ত দলসমূহ কর্তৃক সৃষ্ট সন্দেহ-সংশয়ের যথাযথ জওয়াব দেওয়া, অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করা ও দীনকে রক্ষা করার জন্য দলিল-প্রমাণসহ গ্রন্থ রচনা করা ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ই অনুমোদিত, বরং তা নির্দেশিত; কারণ, মন্দ বিদ‘আত ( البدعة السيئة ) ভিন্ন যেসব (আভিধানিক) বিদ‘আত রয়েছে, (ইসলামের) প্রথম প্রজন্মের লোকজনের যদিও তার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের লোকজনের জন্য তার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং তারা কোনো প্রকার বিরোধ ছাড়াই ইজমা তথা ঐক্যমতের ভিত্তিতে তাকে উত্তম বলে বিবেচনা করেছন।

ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো বিদ‘আতই অনুমোদিত নয়

তবে ব্যাপক অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, মন্দ ও নিন্দিত বিদ‘আতের অস্তিত্ব তো দূরের কথা, যে সব বিদ‘আতকে আভিধানিকভাবে বিদ‘আত বলা হয় সে জাতীয় বিদ‘আতের অস্তিত্বও নির্ভেজাল শারীরিক ইবাদত যেমন- সাওম, সালাত, কুরআন তিলাওয়াত এবং এ ধরনের কোনো ইবাদত ও তার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পাওয়া যায় না, বরং এগুলোর মধ্যে যদি কোনো বিদ‘আত হয় তবে তা মন্দ ও নিন্দিত বিদ‘আতই হয়। কেননা, ইসলামের প্রথম যুগে এ কাজ সংঘটিত না হওয়ার কয়েকটি সম্ভাবনা ধরে নেওয়া যায়;
-  তার প্রয়োজন না থাকা
-  অথবা তার ব্যাপারে বাধা বিদ্যমান থাকা,
-  অথবা তার দিকে মনোযোগ না দেওয়া
-  অথবা তার ব্যাপারে অলসতা করা,
-  অথবা অপছন্দনীয় ও শরী‘য়ত সম্মত না হওয়া।
তন্মধ্যে নির্ভেজাল শারীরিক ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি কারণ যথাযথ নয়; কারণ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল করার প্রয়োজনীয়তা কখনও শেষ হয়ে যায় না; আর ইসলাম বিজয় ও তার অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর কোনো নিষেধকারী তা থেকে নিষেধ করতে সাহস করতে পারে না। অনুরূপভাবে তার প্রতি মনোযোগ না দেওয়া অথবা সে ব্যাপারে অলসতা করার কথাটিও যথাযথভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সকল সাহাবীর ব্যাপারে এই ধরনের ধারণা পোষণ করা বৈধ নয়; সুতরাং প্রমাণ হয়ে গেল যে, উপরোক্ত সম্ভাবনাসমূহের মধ্যে কেবল সর্বশেষ সম্ভাবনা অর্থাৎ ঐ সময়ে এ ধরনের কাজের অস্তিত্ব বিদ্যমান এই জন্যই ছিল না যে, তা হল বিদ‘আত, যা অপছন্দনীয় ও শরী‘য়ত নিষিদ্ধ।

বিদ‘আতের ব্যাপারে সাহাবীগণের অবস্থান

আর বিদ‘আতের এই অর্থকেই আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রা. বুঝাতে চেয়েছেন, যখন তাঁকে এমন এক দলের ব্যাপারে সংবাদ দেওয়া হলো, যারা মাগরিবের সালাতের পর বসে তাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি বলতে থাকে: তোমরা এতবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়, তোমরা এতবার ‘সুবহানাল্লাহ’ পড় এবং তোমরা এতবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়। অতঃপর শ্রোতারা তা করতে থাকে। একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন: “আমি আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ, ঐ আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, অবশ্যই তোমরা অন্ধকারপূর্ণ বিদ‘আত নিয়ে এসেছ অথবা তোমরা জ্ঞানের দিক থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদেরকে ছাড়িয়ে গেছ।” অর্থাৎ তোমরা যা নিয়ে এসেছ, হয় তা অন্ধকারাচ্ছন্ন বিদ‘আত, নতুবা তোমরা সাহাবীগণের কর্মকাণ্ডের সাথে সেটা যুক্ত করছ যা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে; তাদের মনোযোগের অভাবে অথবা তাঁদের অলসতার কারণে, ফলে ইবাদতের নিত্য-নতুন পদ্ধতি জানার মাধ্যমে তোমরা সাহাবীগণকে পরাজিত করছ; আর এ ক্ষেত্রে যেহেতু দ্বিতীয়টি অগ্রহণযোগ্য, যথাযথ নয়, সেহেতু প্রথমটিই সাব্যস্ত হলো, অর্থাৎ তোমাদের এ কর্মকাণ্ড অন্ধকারপূর্ণ বিদ‘আত হওয়া।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এর উপর ভিত্তি করে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তা বলা যাবে, যে নির্ভেজাল শারীরিক ইবাদতের মধ্যে এমন ধরন বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসবে, যা সাহাবীদের যুগে ছিল না। কারণ, সে যদি বিদ‘আতী কাজকে ইবাদত হিসেবে বর্ণনা করে তাকে ‘উত্তম বিদ‘আত’ (বিদআতে হাসানাহ)[32] বলে গ্রহণ করে, তাহলে সে ইবাদতসমূহের মধ্যে অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয় বিদ‘আত বলতে কিছু পাবে না; অথচ ইবাদতের মধ্যে অপছন্দনীয় বিদ‘আতের অস্তিত্ব অবশ্যই রয়েছে, যেমনটি আলেমগণ স্পষ্টভাবে তাদের গ্রন্থসমূহের মধ্যে বর্ণনা করেছেন।

বিদ‘আতপূর্ণ ইবাদতসমূহ থেকে কিছুর উদাহরণ
        
যেমন- রাগায়েব[33] নামক নফল সালাত প্রবর্তন ও তাতে জামায়াতের ব্যবস্থা করা। খুৎবার আযানের আগে রাসূলের উপর দরুদ ও সাহাবাদের উপর রাদিয়াল্লাহু আনহু পাঠ করা, জুম‘আর খুৎবা দেওয়ার সময় আমীন বলা, বিবিধ সুর দিয়ে খুৎবা দেওয়া। অনুরূপভাবে আযান ও কুরআন তিলাওয়াতে নব উদ্ভাবিত বিবিধ সুর, জানাযার সামনে প্রকাশ্যে যিকির করা; বর-কনের সামনে রাস্তায় বড় করে যিকির করা এবং এগুলো ছাড়া আরও অন্যান্য অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয় বিদ‘আত যা ইবাদতের মধ্যে মানুষ করে থাকে।

ইবাদতের মধ্যে কেনো কোনো উত্তম বিদ‘আত নেই?

কেউ হয়ত বলতে পারে যে, “এগুলো অপছন্দনীয় মন্দ বিদ‘আত বা বিদ‘আতে সাইয়্যেয়ার শ্রেণীভুক্ত নয়, বরং তা শরী‘য়তসম্মত ‘উত্তম বিদ‘আত’ বা বিদ‘আতে হাসানার শ্রেণীভুক্ত; সে তার কথার সপক্ষে যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে, সাহাবীদের পরে নবপ্রবর্তিত কিছু কিছু বিষয় উত্তম বলে বিবেচিত হয়েছে; যেমন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অতিথিশালা, সরাইখানা, পান্থশালা ইত্যাদি কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যা সাহাবীদের যুগে তৈরি করা হয়নি। সুতরাং তা বিদ‘আতে হাসানাহ হিসেবে বিবেচিত হবে”
এর উত্তর তাকে বলা হবে যে, এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই; কারণ শরী‘য়তের বিশুদ্ধ দলিল দ্বারা যা উত্তম বলে প্রমাণিত হবে, তাতে দু’টি সম্ভাবনা হতে পারে।
এক. এগুলোকে বিদ‘আত হিসেবে ধরা হবে না, ফলে উপরোক্ত দু’টি হাদীসে বর্ণিত (‘প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’) এই عام তথা সাধারণ বা ব্যাপক নির্দেশনা তার মূল অবস্থাতেই থাকবে, তাতে কোনে হের-ফের হবে না।
দুই. সেগুলোকে হাদীসে বর্ণিত (‘প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’) এই عام তথা সাধারণ বা ব্যাপক নির্দেশনা থেকে খাস বা নির্দিষ্ট করে ব্যতিক্রম হুকুম দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। (এখন দেখা যাক এ দু’টি সম্ভাবনার মধ্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।) যে ব্যক্তি নতুন প্রবর্তিত ইবাদতকে উত্তম বলে সাব্যস্ত করার জন্য এ দাবী করবে যে, হাদীসে বর্ণিত (‘প্রত্যেক বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা’) এই عام তথা সাধারণ বা ব্যাপক নির্দেশনা থেকে এগুলো খাস বা নির্দিষ্ট করে আলাদা বিধান দিয়ে বিশেষায়িত করা হয়েছে, তাকে বলা হবে যে, এ (تخصيص) বা বিশেষায়িত করার জন্য এমন দলীল প্রয়োজন যা বিশেষায়িত করার উপযুক্ত হবে। শুধুমাত্র দেশের অধিকাংশ মানুষের আচার-আচরণ কিংবা অনেক পীর-ফকীর বা সাধারণ ইবাদতকারীদের কথাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর ব্যাপক নির্দেশের বিপক্ষে বিশেষায়িতকারী হিসেবে দাঁড় করানো যায় না। বিশেষায়িত করার দলিল তো কেবল কুরআন, সুন্নাহ ও ইজতেহাদের ক্ষমতাসম্পন্ন লোকদের ইজমা। পীর-ফকীর ও ইবাদতকারীদের মধ্য থেকে যারা ইজতিহাদ করার যোগ্য নয়, তারা তো সাধারণ জনগণের কাতারে, তাদের কথা বিবেচনাযোগ্য হবে না, যদি না তা ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এটি এমন একটি নিয়ম, যার পক্ষে উম্মতের ইজমা বা ঐক্যবদ্ধ রায় নির্দেশনা প্রদান করে, তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের মধ্যেও এমন বক্তব্য রয়েছে, যা এই নিয়মের দিকে ইঙ্গিত করছে; যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ ﴾ [الشورى: ٢١]
“নাকি তাদের এমন কতগুলো শরীক রয়েছে, যারা এদের জন্য দ্বীন থেকে শরী‘আত প্রবর্তন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?”[34] 
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা শরী‘য়ত হিসেবে প্রবর্তন করেননি এমন কোনো কথা বা কাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নতুনভাবে প্রবর্তন করে, সে তো দীনের মধ্যে এমন বিধানের প্রবর্তন করল, যার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা’র অনুমতি নেই; ফলে যে ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি তাকে শরীক ও মা‘বুদ হিসেবে গ্রহণ করল; যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবদের প্রসঙ্গে বলেছেন:
﴿ ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ﴾ [التوبة: ٣١]
“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগিদেরকে তাদের রবরূপে গ্রহণ করেছে ...।”[35] 
আয়াত শোনার পর ‘আদী ইবন হাতেম রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তারা তো তাদের ইবাদত বা উপাসনা করে নি, জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«أطاعوهم» (তারা তাদের আনুগত্য করেছে)[36]; যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি বা অনুমোদনের বাইরে দীনের ব্যাপারে কাউকে অনুসরণ করে, সে ব্যক্তি তার উপাসনা করে এবং তাকে রব হিসেবে গ্রহণ করে। সুতরাং এ থেকে জানা গেল যে, নির্ভেজাল শারীরিক ইবাদতের মধ্যে প্রবর্তিত প্রত্যেকটি বিদ‘আত (নবপ্রবর্তিত বিধান) মন্দ বিদ‘আত ( البدعة السيئة ) বলে গণ্য হবে।
প্রায়শ অধিকাংশ মানুষ উত্তম (حسنة) ও মন্দ (سيئة) এ দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য করতে সক্ষম হয় না; তারা ধারণা করে যে, এমন প্রত্যেক জিনিস, যাকে তাদের মন ভাল মনে করে এবং যার দিকে তাদের স্বভাব ঝুঁকে পড়ে, তা-ই উত্তম বলে বিবেচিত হবে; এভাবে তারা মন্দকেও উত্তম মনে করে বসে। এভাবে প্রকৃতপক্ষে তারা অন্ধের ন্যায় আন্দাজে পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, তারা ধ্বংসাত্মক গর্তের পথ এবং মুক্তির মহাসড়কের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারে না।

বিদ‘আত চেনার ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি

আর এ ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধ নিয়ম হল এ কথা বলা যে, মানুষ নতুন করে কোনো কিছু তখনই উদ্ভাবন করে, যখন তারা সেটাকে যথাযথ ও কল্যাণকর মনে করে, কেননা তারা যদি বিশ্বাস করত যে, তাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কিছু আছে, তাহলে তারা তা উদ্ভাবন করত না; সুতরাং যখন মানুষ কোনো কিছুকে যথাযথ ও কল্যাণকর মনে করবে, তখনি সেটার কারণের প্রতিও নজর দিতে হবে; অতঃপর যদি কারণটি এমন বিষয় হয়, যার উদ্ভব হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে, তাহলে প্রয়োজনের দাবি অনুযায়ী নতুন বিষয় উদ্ভাবন করা বৈধ হবে, যেমন- দলিল-প্রমাণ গ্রন্থবদ্ধ করা; কেননা, এর প্রয়োজনীয় কারণ হল ভ্রান্ত দল ও গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ; সুতরাং তারা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আত্মপ্রকাশ করেনি, তখন তার প্রয়োজন হয়নি। আর যদি এই ধরনের কাজের চাহিদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিদ্যমান থাকে, কিন্তু এমন অস্থায়ী কারণে তা পরিত্যাগ করা হয়, যা তাঁর মৃত্যুর কারণে দূর হয়ে গেছে, তাহলে অনুরূপভাবে তা উদ্ভাবন করা বৈধ হবে, যেমন- কুরআন সংকলন করা; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় এই কাজের প্রতিবন্ধকতা ছিল ওহী অবতীর্ণ অব্যাহত থাকা, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তা পরিবর্তন করতেন; অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর মাধ্যমে এই প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটে।

বিদ‘আত মানে আল্লাহর দীনকে পরিবর্তন করা

আর যে কাজের চাহিদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিদ্যমান ছিল কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার অস্তিত্ব ছাড়াই, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কাজটি করেননি, তবে এমন কাজের উদ্ভাবন করা আল্লাহর দীনকে পরিবর্তন করে দেয়, কেননা তাতে যদি কোন কল্যাণ থাকত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতেন এবং তার ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন, আর যখন তিনি তা করেননি এবং সে ব্যাপারে উৎসাহিত করেননি, তখন বুঝা যায় যে, তাতে কোনো কল্যাণ নেই, বরং তা নিকৃষ্ট ও মন্দ বিদ‘আত।
তার দৃষ্টান্ত হল দুই ঈদের সালাতের পূর্বে আযান দেওয়া, কেননা, যখন কোনো কোনো সম্রাট তার উদ্ভাবন করে, তখন আলেমগণ তার প্রতিবাদ করেছিলেন এবং তারা তাকে মাকরূহ তথা হারাম বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যদি তার বিদ‘আত হওয়াটাই মাকরূহ তথা হারাম হওয়ার দলিল না হত, তাহলে বলা যেতো যে, এটা আল্লাহ তা‘আলার যিকির এবং মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের দিকে আহ্বান করা; সুতরাং তাকে জুম‘আর আযানের উপর কিয়াস করা যাবে কিংবা এটাও বলা যেতো যে এটাকে (দুই ঈদের সালাতের পূর্বে আযান দেওয়ার বিষয়টিকে) ব্যাপক নির্দেশসমূহের অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا﴾ [الجمعة: ١٠]
“আর তোমরা বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ কর।”[37] 
অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার অপর ব্যাপক বাণী,
﴿ وَمَنۡ أَحۡسَنُ قَوۡلٗا مِّمَّن دَعَآ إِلَى ٱللَّهِ ﴾ [فصلت: ٣٣] 
“আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় ...।”[38] 
কিন্তু আলেমগণ এটা বলেননি, বরং তারা বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেছেন তা যেমন সুন্নাত তেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কাজের চাহিদা থাকা ও প্রতিবন্ধক না থাকা সত্বেও যদি তা পরিত্যাগ করেন তবে সে কাজ পরিত্যাগ করাটাও সুন্নাত। কারণ, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আ’র সালাতের ক্ষেত্রে আযানের নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি দুই ঈদের সালাতের জন্য নির্দেশ দেননি, তখন দুই ঈদের সালাতের জন্য আযান পরিত্যাগ করাটাই সুন্নাত।
আর কারও অধিকার নেই যে, সে তা বৃদ্ধি করবে এবং বলবে- এটা সৎ আমলের বৃদ্ধি, তার বৃদ্ধিতে কোন ক্ষতি হবে না; কারণ তাকে বলা হবে, এভাবে রাসূলদের দীনসমূহ বিকৃত হয়েছে এবং তাঁদের শরী‘আতসমূহ পরিবর্তন হয়ে গেছে; সুতরাং দীনের মধ্যে যদি বৃদ্ধি করাটা বৈধ হয়, তাহলে ফজরের সালাত চার রাকাত এবং যোহরের সালাত ছয় রাকাত আদায় করা বৈধ হবে, আর বলা হবে- এটা সৎ আমলের বৃদ্ধি, তার বৃদ্ধিতে কোনো ক্ষতি হবে না; কিন্তু কারও জন্য এ কথা বলার অধিকার নেই; কেননা, বিদ‘আত প্রবর্তনকারী যে কল্যাণ ও ফযিলতের কথা ব্যক্ত করে, যদি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে সাব্যস্ত হত এবং তা সত্ত্বেও তিনি তা না করতেন, তাহলে এই ধরনের কাজ পরিত্যাগ করা সুন্নাত, যা প্রত্যেক ব্যাপক নির্দেশ ও কিয়াসের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রতি আমল করবে এ বিশ্বাস করে যে, তা দীনের মধ্যে অনুমোদিত নয়, সে ফাসিক অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে, বিদ‘আতকারী হিসেবে বিবেচিত হবে না; পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার প্রতি আমল করবে এই বিশ্বাস করে যে, তা দীনের মধ্যে অনুমোদিত বিষয়, সে ফাসিক ও বিদ‘আতকারী হিসেবে ধর্তব্য হবে। কারণ, ফিসক বা অবাধ্যতা বিদ‘আতের চেয়েও ব্যাপক; কেননা প্রত্যেক বিদ‘আতই ফিস্‌ক বা অবাধ্যতা, কিন্তু প্রত্যেক ফিস্‌ক বা অবাধ্যতাই বিদ‘আত নয়।
অনুরূপভাবে এটাও বলা হয় যে, বিদ‘আত ফিস্‌ক তথা অবাধ্যতার চেয়ে নিকৃষ্ট; কারণ, যে ব্যক্তি বিদ‘আতপূর্ণ কাজ করে, সে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, যদি তার ধারণায় বিদ‘আতের মাধ্যমে সে তাঁকে সম্মান করছে, কারণ সে মনে করে যে, তার প্রবর্তিত এ বিদ‘আত সুন্নাতের চেয়ে উত্তম ও সঠিক হওয়ার অধিক যুক্তিযুক্ত। এভাবে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধী বলে গণ্য হবে; কারণ শরী‘আত যা অপছন্দ করেছে এবং যা থেকে নিষেধ করেছে, সে তাকে উত্তম মনে করেছে; আর তা হল দীনের মধ্যে নতুন কিছুর প্রবর্তন করা; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য এমন ইবাদত বিধিবদ্ধ করেছেন, যা তাদের জন্য যথেষ্ট, তাদের দীন হিসেবে পরিপূর্ণ এবং তাদের প্রতি তাঁর প্রদত্ত নিয়ামত হিসেবে সম্পূর্ণ, যেমনটি তিনি তাঁর মর্যাদাপূর্ণ কিতাবের মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন:
﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي ﴾ [المائ‍دة: ٣] 
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম ...।”[39] 
সুতরাং পরিপূর্ণতার উপর বৃদ্ধি করা এক ধরনের ত্রুটি এবং অতিরিক্ত আঙুলের মতই বেমানান। আর সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় হকপন্থীদের মতে, ইবাদতের ভাল ও মন্দ জানা যাবে কেবল শরী‘য়তের মাধ্যমে, আকল বা যুক্তির মাধ্যমে নয়[40]; সুতরাং এমন প্রত্যেকটি কাজ, যা করার ব্যাপারে শরী‘য়তে নির্দেশনা রয়েছে, তা উত্তম কাজ; আর এমন প্রত্যেকটি কাজ, যা করার ব্যাপারে শরী‘য়তে নিষেধ করা রয়েছে, তা মন্দ কাজ।
ইমাম গাযালী র. তাঁর ‘আল-আরবা‘ঈন ফী উসূলিদ্দীন’ (الأربعين في أصول الدين) নামক গ্রন্থে বলেন: “তুমি অবশ্যই বেঁচে থাক তোমার বুদ্ধি বা যুক্তির দ্বারা সবকিছু বিচার করা থেকে, আরও বেঁচে থাক ‘প্রত্যেক কল্যাণকর ও উপকারী বস্তুই উত্তম, আর যা কিছু অধিক পরিমাণে হবে, তাই অধিক উপকারী হবে’ এমন কথা বলা থেকে। কারণ, তোমার বুদ্ধি স্রষ্টার নির্দেশাবলীর রহস্য উদঘাটনে সক্ষম নয়; বরং তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শক্তিই অনুধাবন করতে পারে; সুতরাং তোমার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল অনুসরণ করা; কারণ, বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ তুমি কিয়াসের মাধ্যমে বুঝতে পারবে না; তুমি কি দেখনি, কিভাবে তোমাকে সালাতের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানানো হয়েছে অথচ গোটা দিনব্যাপী তা আদায় করা থেকে তোমাকে নিষেধ করা হয়েছে। তোমাকে তা পরিত্যাগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুবহে সাদিক ও আসরের পরে এবং সূর্য উদয়, অস্ত ও পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার সময়; আর এটার পরিমাণ হচ্ছে দিনের একতৃতীয়াংশের মত সময়।” 

প্রবৃত্তির অনুসরণ ও আল্লাহর দীনের ক্ষেত্রে বুদ্ধিকে বিচারক হিসেবে মানা থেকে সতর্ক করা

আর তিনি (গাযালী) ‘এহইয়াউ ‘উলুমিদ্দীন’ (إحياء علوم الدين) গ্রন্থে বলেন: যেমনিভাবে ঔষধের উপকারিতা উপলব্ধি করতে বিবেক স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, যদিও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দ্বারাই সেটা নির্ধারিত হয়, তেমনিভাবে বিবেক আখিরাতে যা উপকার করবে তা জানতে অপারগ, কারণ সেটা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করার সুযোগ নেই। এটা শুধু সম্ভব হবে যদি আমাদের নিকট কিছু সংখ্যক মৃতব্যক্তি ফিরে আসে এবং তারা আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী করে এমন আমল ও তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এমন আমল সম্পর্কে জানিয়ে দেয়; আর এটা আশা করার কোনো সুযোগ নেই।
‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থকার তার ব্যাখ্যাগ্রন্থে বলেন, একলোক ঈদের দিন ময়দানে ঈদের সালাতের আগে কিছু সালাত আদায় করতে চাইলে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে নিষেধ করেন। তখন লোকটি বলল, হে আমীরুল মুমিনীন, আমি অবশ্যই জানি যে আল্লাহ আমাকে সালাত আদায় করার কারণে আযাব দিবেন না, তখন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আর আমিও জানি যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা যে কোনো কাজেরই সাওয়াব দেন না, যতক্ষণ না তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করবেন বা তিনি তা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করবেন। সুতরাং তোমার সালাত বেহুদা কাজ হয়ে যাবে, আর বেহুদা কাজ করা হারাম। তাছাড়া এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর বিরোধিতার কারণে তোমাকে শাস্তি দিবেন।”।
‘হেদায়া’ গ্রন্থকার বলেন: “সুবহে সাদিকের পরে ফযরের দুই রাকাতের চেয়ে অতিরিক্ত নফল সালাত আদায় করা মকরূহ; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের প্রতি আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি দুই রাকাতের বেশি আদায় করেননি।”
সুতরাং লক্ষ্য করুন, কিভাবে ইবাদত অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কোনো কাজ না করাকে মাকরূহের উপর দলিল হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন।

দীনের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা

ইবনুল হাম্মাম বলেন: যখন কোনো ইবাদতে ওয়াজিব ও বিদ‘আতের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিবে, তখন সতর্কতার খাতিয়ে তা করা হবে; কিন্তু যদি বিদ‘আত ও সুন্নাতের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিবে, তখন তা পরিত্যাগ করবে; কারণ, বিদ‘আত ত্যাগ করা আবশ্যক, আর সুন্নাত আদায় করা আবশ্যক নয়।
অবশ্য ‘আল-খোলাসা’ গ্রন্থকারের একটি মাস‘আলা প্রমাণ করে যে, ওয়াজিব তরক (ত্যাগ) করার চেয়ে বিদ‘আত অনেক বেশি ক্ষতিকর, যেমন তিনি বলেন: যখন কেউ তার সালাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, সে কি তা সালাত আদায় করেছে, নাকি আদায় করেনি? এমতাবস্থায় সে যদি ওয়াক্তের মধ্যে থাকে, তাহলে পুনরায় তা আদায় করে নেবে; আর যদি সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, অতঃপর সে সন্দেহ করে, তাহলে কিছুই করতে হবে না। তবে যদি আসরের সালাত (পড়েছে কি পড়েনি) এর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে, তাহলে সে (যখন দ্বিতীয়বার তা আদায় করবে তখন) প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে পাঠ করবে, দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাকাতে পাঠ করবে না; কারণ, ফরয সালাতের ক্ষেত্রে কিরাআতের জন্য প্রথম দুই রাকআতকে নির্দিষ্ট করা ওয়াজিব; পক্ষান্তরে নফল সালাতে প্রতি দু’রাকাতেই কিরাআত মেলাতে হয়, তাই যদি পরপর দু’ রাকাআতে কিরাআত পড়া হয়, তখন কোনো কারণে পূর্বে সে যদি ফরয সালাত আসলেই পড়ে থাকে তবে তো সেটা নফল হিসেবে ধর্তব্য হয়ে যাবে, অথচ আসরের পরে কোনো নফল সালাত আদায় করা মাকরূহ, তাই তাকে পরপর প্রতি রাকআতে সূরা মিলিয়ে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে করে দ্বিতীয়বার পড়া সালাতটি কোনো ক্রমেই ফরয না হয়ে নফল সালাত হিসেবে ধর্তব্য না হয়। কারণ যদি আসরের পরে নফল সালাত আদায় করা হয় সেটি হবে বিদ‘আত, যা অপছন্দনীয়।
আর সুফিয়ান সাওরী র. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলতেন: “ইবলিসের নিকট সকল পাপের চেয়ে বিদ‘আতই সবচেয়ে বেশি প্রিয়; কারণ, পাপ থেকে তাওবা করা হয়, আর বিদ‘আত থেকে তাওবা করা হয় না।”[41]

বিদ‘আতের ভয়াবহতা
   
এর কারণ হল, অপরাধী ব্যক্তি জানে যে, সে অপরাধের সাথে জড়িত, ফলে তার পক্ষ থেকে আশা করা যায় যে সে তা থেকে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। কিন্তু বিদ‘আতের অনুসারী বিশ্বাস করে যে, সে আনুগত্য ও ইবাদতের মধ্যেই আছে, ফলে সে তাওবা করে না এবং ক্ষমাও প্রার্থনা করে না। আর এটাই ইবলিস থেকে বর্ণনা করা হয় যে, সে বলে: “আমি আদম সন্তানদের পিঠ ভেঙ্গে দেই অপরাধ ও পাপরাশি দ্বারা, আরা তারা আমার পিঠ ভেঙ্গে দেয় তাওবা ও ইস্তিগফারের (ক্ষমা প্রার্থনা করার) দ্বারা; তাই আমি তাদের জন্য এমন কতগুলো অপরাধের প্রবর্তন করি, যার থেকে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে না এবং তার থেকে তারা তাওবাও করে না; আর সেগুলো হল ইবাদতের আকৃতিতে বিদ‘আত।”
[একটি সন্দেহ অপনোদন]
যদি বলা হয় যে, অনেক মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে যে, তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি হাদিসের দ্বারা তারা তাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়া বিদ‘আতকে মাকরূহ না হওয়ার ব্যাপারে দলিল পেশ করে থাকে, সে হাদিসটি হল:
«مَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ، وَمَا رَآهُ الْمُسْلِمُونَ قَبِيحًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ قَبِيحٌ»
“মুমিনগণ যা উত্তম বলে মনে করেন, তা আল্লাহর নিকট উত্তম; আর মুসলিমগণ যা মন্দ বলে মনে করেন, তা আল্লাহর নিকট মন্দ”! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের পক্ষ থেকে এর দ্বারা যুক্তি প্রদর্শন শুদ্ধ হবে, নাকি অশুদ্ধ হবে?
[উত্তর] কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ যা আলোচনা করেছেন, তার উপর ভিত্তি করে এর জবাব হল: এই যুক্তি প্রদর্শন বিশুদ্ধ নয়, আর হাদিসটি তাদের বিপক্ষে দলিল, তাদের পক্ষে নয়; কারণ, তা ইবনু মাস‘উদ রা. থেকে বর্ণিত মাওকুফ[42] হাদিসের অংশবিশেষ, যা আহমদ, বায্‌যার. তাবারানী, তায়ালাসী ও আবূ নু‘আইম বর্ণনা করেছেন; হাদিসটি এই রকম: 
« إن الله نظر في قلوب العباد فوجد قلب محمد صلى الله عليه و سلم خير قلوب العباد فاصطفاه لنفسه فابتعثه برسالته ثم نظر في قلوب العباد بعد قلب محمد فوجد قلوب أصحابه خير قلوب العباد فجعلهم وزراء نبيه يقاتلون على دينه فما رأى المسلمون حسنا فهو عند الله حسن وما رأوا سيئا فهو عند الله سيِّئ » . (أخرجه أحمد) .
“নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দাদের অন্তরসমূহের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন, অতঃপর তিনি বান্দাদের অন্তরসমূহের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরকে সর্বোত্তম পেয়েছেন, অতঃপর তাঁকে তিনি তাঁর নিজের জন্য নির্বাচন করেছেন, অতঃপর তাঁকে তিনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন; অতঃপর তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরের পর (বাকি) বান্দাদের অন্তরসমূহের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন, তারপর তিনি বান্দাদের অন্তরসমূহের মধ্যে তাঁর সাহাবীদের অন্তরসমূহকে সর্বোত্তম পেয়েছেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে তাঁর নবীর উজির বা সাহায্যকারী বানালেন, যারা তাঁর দীনের জন্য লড়াই করবে; সুতরাং মুসলিমগণ যা উত্তম বলে মনে করবে, তা আল্লাহর নিকট উত্তম; আর মুসলিমগণ যা মন্দ বলে মনে করবে, তা আল্লাহর নিকট মন্দ।”[43]
কোনো সন্দেহ নেই যে,  " المسلمون "শব্দের মধ্যে " ال "টি সাধারণভাবে গোটা (মুসলিম) জাতিকে বুঝানোর জন্য নয়; কারণ, হাদিসটি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর বিরোধী হয়ে যাবে, তিনি বলেছেন:
« سَتَفْتَرِقُ أمتي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ فرقة ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِى النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِى الْجَنَّةِ وَهِىَ الْجَمَاعَةُ » . (أخرجه أبو داود) .
“অচিরেই আমার উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হয়ে যাবে, তাদের বাহাত্তর দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে, আর সে দলটি হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত।”[44] 
কেননা, উম্মতের প্রতিটি ফিরকা বা দলই মুসলিম, সে তার মাযহাবকে উত্তম মনে করে, সুতরাং যদি সবার ভালো মনে করা ও সবার কথাই গ্রহণযোগ্য হয় তবে তো কোনো দলই জাহান্নামী না হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। যা হাদীসের ভাষ্যের পরিপন্থী। অনুরূপভাবে মুসলিমদের কেউ কেউ কোনো জিনিসকে উত্তম মনে করে, আবার তাদের কেউ কেউ সেই জিনিসটিকেই মন্দ মনে করে, এমতাবস্থায় (যদি সবার কথাই গ্রহণযোগ্য হয়, তবে) তো উত্তম থেকে মন্দ আলাদা না করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। যা হাদীসের ভাষ্যের পরিপন্থী। তাই বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে,
      হাদীসে বর্ণিত, " المسلمون "শব্দের মধ্যকার " ال "টি "عهد" বা পূর্বে বর্ণিত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে। এখানে পূর্ববর্ণিত বিষয় হচ্ছে, “তারপর তিনি বান্দাদের অন্তরসমূহের মধ্যে তাঁর সাহাবীদের অন্তরসমূহকে সর্বোত্তম পেয়েছেন, অতঃপর তিনি তাদেরকে তাঁর নবীর উজির বা সাহায্যকারী বানালেন”। অর্থাৎ হাদীসে মুসলিমগণ বলে সাহাবীগণকেই উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে।
      অথবা " المسلمون "শব্দের মধ্যকার " ال "টি দ্বারা "خصائص الجنس" বা মুসলিম শব্দের মুসলিম জাতির অন্তর্নিহিত কোনো বৈশিষ্ট্যকে উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে। তখন মুসলিম বলে বুঝানো হবে ইসলামের গুণে পরিপূর্ণ ব্যক্তিগণ, অর্থাৎ তাদের মধ্যে যারা ইজতেহাদ করত সক্ষম। এর মাধ্যমে সাধারণগুণ বিশিষ্টকে পূর্ণাঙ্গ গুণবিশিষ্টদের সম্পৃক্ত করা হবে। কারণ, ইঙ্গিত না পাওয়াকালীন সময়ে মুতলাক (مطلق) তথা সার্বজনীন বিষয়টি একটি পরিপূর্ণ শ্রেণীর দিকে স্থানান্তরিত হবে, আর সে শ্রেণি হলো মুজতাহিদ তথা গবেষক শ্রেণী; সুতরাং হাদীসের সঠিক অর্থ হবে: সাহাবীগণ অথবা মুসলিমদের মুজতাহিদগণ যা উত্তম মনে করবে, তা আল্লাহর নিকট উত্তম; আর সাহাবীগণ অথবা মুসলিমদের মুজতাহিদগণ যা মন্দ বলে মনে করবে, তা আল্লাহর নিকট মন্দ।
      তাছাড়া " المسلمون "শব্দের মধ্যকার " ال "টিকে তার প্রকৃত "استغراق" বা এক জাতীয় সকল ব্যক্তি বা বস্তুর অর্থে ব্যবহার করাও বৈধ হবে, তখন তার অর্থ হবে: “যা সকল মুসলিম উত্তম মনে করবে, তা আল্লাহর নিকট উত্তম; আর যা সকল মুসলিম মন্দ মনে করবে, তা আল্লাহর নিকট মন্দ। আর যে ব্যাপারে মতবিরোধ হবে, সেক্ষেত্রে বিবেচনাযোগ্য বিষয় হবে সেসব যুগের ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর মধ্যে যাদের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, ঐসব যুগের ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য নয়, যাদের ব্যাপারে মিথ্যবাদিতা ও অনির্ভরযোগ্যতার সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তিনি বলেছেন:
«خَيْرُ القرون قَرْنِى الذي بعثتُ فيه ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يفشو الكذب ».
“আমার যুগ সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ, যাতে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে, অতঃপর তাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত হবে, অতঃপর তাদের সাথে যারা সম্পৃক্ত হবে, অতঃপর মিথ্যা ছড়িয়ে পড়বে।”[45] 
সুতরাং (যাদের মধ্যে মিথ্যা ছড়িয়ে পড়বে) তোমরা তাদের কথা ও কর্মকাণ্ডসমূহের উপর আস্থা স্থাপন বা নির্ভর করো না। আর কোন সন্দেহ নেই যে, সাহাবী, তাবে‘য়ী ও মুজতাহিদ ইমামগণ একান্ত অত্যাবশ্যকতার সীমা অতিক্রমকারী বিদ‘আতকে মন্দ ও ঘৃণিতই মনে করতেন, সুতরাং সে-সব বিদ‘আত আল্লাহ ত‘আলার নিকটও মন্দ।
বস্তত আমাদের উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপর বাণীর মত, যেখানে তিনি বলেছেন:
« لا تجتمع أمتي على الضلالة » .
“আমার উম্মত ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ হবে না।”[46] 
এই হাদিসেও ‘উম্মত’ বলতে কেবল ‘আহলুল ইজমা’ (যাদের ইজমা বা ঐকমত্য গ্রহণযোগ্য এমন লোকগণ) উদ্দেশ্য, যিনি হবেন এমন মুজতাহিদ (দ্বীনী গবেষক), যার মধ্যে আসলেই কোনো প্রকার ফাসেকী (পাপাচারিতা) ও বিদ‘আত নেই; কারণ, ফিসক তথা পাপাচার যে তা করে সে ব্যক্তিকে অপবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করে এবং তা ন্যায়পরায়ণতাকে বিদূরিত করে, আর বিদ‘আতপন্থী ব্যক্তি মানুষকে বিদ‘আতের দিকে আহ্বান করে এবং সে সাধারণভাবে উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হবে না; কেননা, সাধারণ উম্মত দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতকে বুঝানো হয়, আর তারা হলেন এমন উম্মত, যাদের পথ হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের পথ, বিদ‘আতপন্থী ও পথভ্রষ্টদের পথ নয়, যেমনটি বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম:  
« أمتي من استن بسنتي »
“আমার উম্মত হল সেই ব্যক্তি, যে আমার সুন্নাতকে অনুসরণ করে।”[47]
তবে (“আমার উম্মত ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ হবে না” হাদীসে) ‘আমার উম্মত’ (أمتي) দ্বারা সকল উম্মতকে উদ্দেশ্য করাও শুদ্ধ বলা যায়, কারণ কখনও কখনও " إضافة " বা সম্বন্ধ পদ "ال" এর মত "استغراق" তথা সমস্ত ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে; সুতরাং অর্থ হবে: “আমার সকল উম্মত মহাকালের কোনো এক কাল বা সময়ে ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ হবে না, যেমনভিাবে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ তাদের নবীদের পরে ভ্রষ্টতার উপর ঐক্যবদ্ধ হয়েছে”; তখন এই হাদিসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, যাতে তিনি বলেছেন:
« لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى قَائِمَةً بِأَمْرِ اللَّهِ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ أَوْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُونَ عَلَى النَّاسِ » . (أخرجه البخاري و مسلم) .
“আমার উম্মতের একটি দল আল্লাহর বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে; যারা তাদের সঙ্গ ত্যাগ করবে বা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনো প্রকার অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত এভাবে আল্লাহর আদেশ তথা কিয়ামত এসে পড়বে, আর তারা তখনও লোকের উপর সুস্পষ্টরূপে প্রকাশমান থাকবে।”[48]

বিদ‘আত থেকে সতর্ক করার আবশ্যকতা

যখন এটা (বিদ‘আত নিন্দনীয় হওয়ার বিষয়টি) সুসাব্যস্ত হলো, তখন বর্তমান কালের প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য হলো, কোনো প্রকার বিদ‘আতের দিকে ঝুঁকে পড়া ও তা দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হওয়া থেকে নিজেকে হেফাযত করা এবং তার দীনকে প্রতিষ্ঠিত অভ্যাস বা প্রথা থেকে রক্ষা করা, যাতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং যার উপর সে বেড়ে উঠেছে। কারণ, তা হচ্ছে প্রাণহারী বিষ; খুব কম লোকই এই ধরনের মহামারী থেকে বাঁচতে পারে এবং খুব কম লোকের কাছেই সেগুলোর সত্য বিষয়টি ফুটে উঠে।
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, কুরাইশগণ তাদের প্রাণের সাথে মিশে যাওয়া স্বভাব-চরিত্র তথা প্রথার কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে হিদায়াত ও দলিল-প্রমাণ নিয়ে এসেছেন, তারা তা অস্বীকার করেছিল, আর এটাই ছিল তাদের কুফরী ও সীমালংঘন করার অন্যতম কারণ। এমনকি তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে যা যা বলেছে তার কারণ তো শুধু এই যে, তারা যেসব প্রথার উপর বেড়ে উঠেছে এবং যেটার উপর তারা বড় হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত হিদায়াত তার বিপরীতে ছিল। আর এজন্যই আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রা. বলতেন:   
«إياكم و ما يحدث من البدع فإن الدين لا يذهب بمرة من القلوب, بل الشيطان يحدث لكم بدعا حتى يذهب الإيمان من قلوبكم » .                                                                                 
“তোমরা নবউদ্ভাবিত বিদ‘আত থেকে বেঁচে থাক; কারণ, নিশ্চয় হৃদয় থেকে দ্বীন একবারে ছিনিয়ে নেওয়া হয় না, বরং শয়তান তোমাদের জন্য বহু ধরনের বিদ‘আতের উদ্ভাবন করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত তোমাদের অন্তর থেকে ঈমান চলে যাবে”।
এর উপর ভিত্তি করে মুমিনের উচিত হবে, কোনো বিষয়ে তার শক্তিশালী সুদৃঢ় সংকল্প ও এর দ্বারা অধিক ইবাদত করা দ্বারা এ ধোঁকা না খাওয়া যে, সে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে। কারণ, সে ব্যাপারে তার দৃঢ়তা এবং তাকে করাত দিয়ে ছিড়ে ফেললেও তার থেকে তার ফিরে না আসা এটা প্রমাণ করে না যে, সে তার দীনের ব্যাপারে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত; কেননা সে ব্যাপারে তার দৃঢ়তা ও শক্ত অবস্থান সেটি সত্য হওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং তা হচ্ছে তার এমন এক জাতির মাঝে বেড়ে উঠার কারণে, যারা এটাকে দীন হিসেবে গ্রহণ করেছে। বস্তুত কোনো বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প ও শক্ত অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে জন্ম ও মেলামেশার একটা বড় প্রভাব রয়েছে, চাই তা সত্য হউক অথবা বাতিল হউক। তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে, এই ধরনের দৃঢ়তা ও একগুয়েমী সকল গণ্ড মূর্খ ব্যক্তির মধ্যেই পাওয়া যায়, যেমন ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও তাদের মত ব্যক্তিদের মধ্যে।
সুতরাং সাবধান হও! সতর্ক হও এই প্রাণহারী বিষের ব্যাপারে; আর ধাবিত হও সত্যের দিকে, অনুপ্রাণিত হও সুন্নাহ’র অনুসরণ ও বিদ‘আত ত্যাগ করার মাধ্যমে তোমার আনন্দ ও সৌন্দর্যকে নির্ভেজাল করার জন্য; কারণ, সুন্নাহ’র অনুসরণ করাটাই সর্বোত্তম আমল, এ যুগে কোনো ব্যক্তির উচিত এ কাজটিই করা, যেহেতু দীর্ঘকাল ধরে সুন্নাহ বিরোধী কার্যকলাপ বিস্তার লাভ করেছে। তোমার জন্য আবশ্যক হল, বিদ‘আত তথা দীনের মধ্যে নবপ্রবর্তিত বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে আপোষহীন হওয়া, যদিও এসব কোনো কোনো বিদ‘আতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে! সাহাবীগণের পরে যা নতুনভাবে প্রবর্তন করা হয়েছে, তার ব্যাপারে তাদের ঐক্যমত যেন তোমাকে কোনোভাবেই প্রতারিত করতে না পারে, বরং তোমার জন্য উচিত হবে তাঁদের (সাহাবীদের) অবস্থা ও কর্মকাণ্ডসমূহ অনুসন্ধানের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া; কারণ, মানুষের মধ্যে সে ব্যক্তিই অধিক জ্ঞানী ও আল্লাহ তা‘আলার অধিক নিকটবর্তী, যে তাঁদের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ এবং তাঁদের জীবনপদ্ধতি সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত; কেননা তাঁদের কাছ থেকে দীন গ্রহণ করা হয়েছে, আর শরী‘য়ত প্রবর্তকের নিকট থেকে শরী‘য়ত পরিবহনের ক্ষেত্রে তাঁরাই হলেন মূল বাহক। হাদিসে এসেছে:
« إذا اختلف الناس فعليكم بالسواد الأعظم » .
“যখন মানুষ মতবিরোধ করবে, তখন তোমাদের কর্তব্য হল সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের মতকে গ্রহণ করা।”[49] 
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সত্য ও তার অনুসরণের আবশ্যকতা, যদিও সত্য অবলম্বনকারীগণ সংখ্যায় কম হউক এবং তার বিরোধীরা সংখ্যায় বেশি হউক! তবে সঠিক বিষয় হল, যার উপর প্রথম জামা‘য়াত বা দল প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, আরা তাঁরা হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ এবং তাঁদের পরবর্তীতে বাতিলের সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য বা বিবেচিত হবে না। তাই তো ফুদাইল ইবন ‘ইয়াদ বলেন, যার অর্থ হচ্ছে: “তুমি হিদায়েতের পথে অবস্থান কর, সুন্নাহ’র অনুসারীদের সংখ্যার স্বল্পতা তোমার ক্ষতি করবে না; আর ভ্রষ্টপথ পরিহার কর, ধ্বংসশীলদের সংখ্যাধিক্য দ্বারা প্রতারিত হবে না।”
পূর্ববর্তী আলেমদের কেউ কেউ বলেন: “যখন তুমি শরী‘য়ত অনুযায়ী চল এবং প্রকৃত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখ, তখন তুমি কোনো পরোয়া করবে না, যদিও গোটা সৃষ্টিজগৎ তোমার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে।”
ইবনু মাস‘উদ রা. বলেন: “তোমরা এমন যামানায় অবস্থান করছ, যাতে তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তি কাজের ক্ষেত্রে দ্রুতগতি সম্পন্ন; আর তোমাদের পরে অচিরেই এমন এক সময় আসবে, যাতে তাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তি অধিক হারে সন্দেহ-সংশয়ের কারণে কাজের ক্ষেত্রে থমকে দাঁড়াবে।”
ইমাম গাযালী র. বলেন: তিনি (ইবন মাসউদ রা.) সত্য বলেছেন; কারণ, এ যামানায় যে ব্যক্তি (হকের ব্যাপারে) দৃঢ়তা অবলম্বন করবে না, বরং অধিকাংশ ব্যক্তির মতের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে এবং তারা যাতে নিমগ্ন থাকবে সেও তাতে মগ্ন থাকবে, তাহলে সে ধ্বংস হবে, যেমনিভাবে তারা ধ্বংস হয়েছে। কারণ, দীনের মূল, খুঁটি ও ভিত্তি অধিক ইবাদত, তিলাওয়াত ও খেয়ে না খেয়ে চেষ্টাসাধানা করার নাম নয়; বরং দীন হল তার উপর আপতিত বিদ‘আত ও নবপ্রবর্তিত শর‘য়ী বিধানের মত যাবতীয় দুর্যোগ ও ব্যাধি থেকে তাকে সংরক্ষণ করা। কারণ, তার (এসব বিদ‘আতের) আধিক্য ও বিস্তৃতির কারণে মনে হচ্ছে যেন তা দীনের নিদর্শনসমূহের অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়েছে অথবা (সে বিদ‘আতগুলো) যেন তা হয়ে গেছে আমাদের উপর ফরয করা বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত।

প্রবৃত্তির অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করা

কিন্তু হায়! আমরা যখন সেসব বিদ‘আতের কাজ করি তখন যদি অনুধাবন করতে পারতাম যে, এটি বিদ‘আত; কেননা, যদি আমাদের মধ্যে এ অনুভূতি আসত, তবে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করাটা আশা করা যেত, কিন্তু আমরা তাকে গ্রহণ করেছি আনুগত্য ও ইবাদতরূপে এবং তাকে আমরা আমাদের দীনে পরিণত করেছি। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের সেসব পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছি ও আদর্শ বানিয়েছি, যারা হয়তো ভুলে গেছে অথবা ভুল করেছে, অথবা অসতর্কতাবশত তাদের থেকে তা সংঘটিত হয়েছে। অতঃপর যখন কোনো ব্যক্তি এসে আমরা যেসব বিদ‘আতপূর্ণ কর্মকাণ্ডসমূহে জড়িয়ে গেছি, সে ব্যাপারে আমাদের উপর প্রতিবাদ করে; তখন সে ব্যক্তির জন্য যদি আমাদের অন্তরে শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তাহলে আমরা তাকে বলি: এটা জায়েয, অমুক ব্যক্তি তার বৈধতার ব্যাপারে মত দিয়েছেন এবং তাকে আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এমন কিছু সংখ্যক ব্যক্তির কথা বলে দেই, যারা (সঠিক বিষয়টি) ভুলে গেছে অথবা ভুল করেছে, অথবা অসতর্ক হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি প্রতিবাদকারীর জন্য আমাদের অন্তরে কোনো শ্রদ্ধাবোধ না থাকে, তাহলে সে আমাদের পক্ষ এমন কথা শুনে, যা সে ধারণা করেনি এবং তার হৃদয়ে কল্পনাও করেনি। আর এ সবকিছুই মূলত আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত জাহিলিয়াত তথা মূর্খতার কারণে সংঘটিত হয। কেননা আমরা নিজেরা যে মূর্খতার উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, তা যদি উপলব্ধি করতে পারতাম, তাহলে যিনি আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন, তার জবাব আমরা গ্রহণ করে নিতাম এবং যে ব্যক্তি (সঠিক বিষয়টি) ভুলে গেছে অথবা ভুল করেছে, অথবা অসতর্কতাবশত করেছে, তাকে আমরা আমাদের দীনের ব্যাপারে দলিল হিসেবে পেশ করতাম না; কারণ, মানুষের জন্য তার দীনের ব্যাপারে নিষ্পাপ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে অনুসরণ করা বৈধ নয়, আর নিষ্পাপ ব্যক্তি হলেন শরী‘য়তপ্রবর্তক (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), অথবা সে অনুসরণ করবে শরী‘য়তপ্রবর্তক যাকে উত্তম বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাকে। আর তাঁরা হলেন তিন যুগের বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ, শরী‘য়তপ্রণেতা তার বিজ্ঞ সিদ্ধান্তে যাঁদের প্রত্যেক যুগকে বিশেষ মর্যাদায় বিশেষিত করেছেন।

সংকলন: শাইখ আহমদ আর-রুমী আল-হানাফী রহ. 
অনুবাদক: মোঃ আমিনুল ইসলাম 
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...