Thursday 6 November 2014

কাউকে শহীদ বলার হুকুম কি?



কয়েকদিন ধরে মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ইসলামকে না বুঝার কারনে শহীদ শব্দটা আমাদের দেশে মৃত মানুষগুলুর পাশে এমনি এমনি স্থান করে নিচ্ছে।লজ্জার বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে অনেক নাস্তিক কেও শহীদ উপাধি দিয়ে দিচ্ছেন কিছু গণ্ডমূর্খ ।আমার কিছু জামাত ইসলামের (রাজনইতিক দল)ভাই রা তো ওনাদের নেতাদের মিত্রুর পর শহীদ নাম না দিয়ে ক্ষান্ত হয়না আবার অনেকে জান্নাতিও বলে দেয় তাদের নেতাদের।আচ্ছা এবার দেখি ইসলাম কি বলে কাউকে শহীদ বলার খেত্রে।আর যেহেতু আমিও ইসলাম সম্পর্কে অনেকটা অজ্ঞ তাই আমার প্রিয় একজন শাইখ এর ফতওয়া টা তুলে ধরছি।
 কাউকে শহীদ বলার হুকুম কি?

উত্তরঃ কাউকে শহীদ বলা দু’ভাবে হতে পারে।

(১) নির্দিষ্ট কোন কাজকে উল্লেখ করে শহীদ বলা। এভাবে বলা, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হল সে শহীদ, নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেলে শহীদ, প্লেগ রোগে মারা গেলে শহীদ। এভাবে বলা জায়েয আছে। কেননা এখানে আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীছ অনুযায়ী সাক্ষ্য প্রদান করছেন।


২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দিষ্ট করে যাকে শহীদ বলেছেন এবং সমস্ত মুসলমান যাকে শহীদ বলে ঘোষণা দিয়েছে, তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে নির্দিষ্ট করে শহীদ বলা জায়েয নেই। ইমাম বুখারী এভাবে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন যে, “একথা বলা যাবে না যে অমুক ব্যক্তি শহীদ”।

ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন, অর্থাৎ ওহীর মাধ্যমে অবগত হওয়া ব্যতীত অকাট্যভাবে কারও জন্য শাহাদাতের ফায়সালা দেয়া যাবে না। তিনি সম্ভবত উমার (রাঃ) এর একটি ভাষণের দিকে ইংগিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে বলে থাক অমুক ব্যক্তি শহীদ, অমুক শহীদ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। খবরদার এভাবে বলো না। কারণ তার অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। তোমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বল যে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যু বরণ করল অথবা জীবন দিল সে শহীদ”।

কোন বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে হলে সে বিষয়ে ইলম থাকতে হবে। শহীদ হওয়ার শর্ত হলো আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার জন্য জিহাদ করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করা। আর এটি অন্তরের গোপন অবস্থা। তা জানার কোন উপায় নেই। এজন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ“আল্লাহর পথে জিহাদকারীর দৃষ্টান্ত হলো, আর আল্লাহই ভাল জানেন কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।”

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ
“ঐ সত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে শরীরে জখম হবে, আর আল্লাহই ভাল জানেন কে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে আহত হয়, সে কিয়ামতের দিন এমতাবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার ক্ষত স্থান হতে রক্ত ঝরতে থাকবে, রং হবে রক্তের, কিন্তু তার গন্ধ হবে মিসকের সুঘ্রাণের ন্যায়।”

যারা জিহাদ করে নিহত হয়, তাদের বাহ্যিক অবস্থা ভাল। তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করি। কিন্তু তাদেরকে জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রদান করি না। তাদের প্রতি খারাপ ধারণাও করি না। তবে দুনিয়াতে তাদের উপর শহীদের হুকুম প্রযোজ্য হবে। জিহাদের ময়দানে নিহত ব্যক্তিকে তার পরিহিত কাপড়েই রক্ত সহকারে দাফন করা হবে এবং তার জানাযা পড়া হবেনা। আর যদি অন্যভাবে শহীদ হয়ে থাকে, তবে তাকে গোসল দেয়া হবে, কাফন পরানো হবে এবং জানাযার নামায পড়া হবে।

কাউকে ‘শহীদ’ হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ তাকে জান্নাতের সাক্ষ্য দেয়া। এটি আহলে সুন্নাহর মাযহাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলে সু্‌ন্নাতের লোকেরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে শহীদ বলেছেন, তাকে ব্যতীত অন্য কাউকে শহীদ বলেন না। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমেযাকে শহীদ বলা হয়েছে, তাকে শহীদ বলা যাবে।
(ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)

মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...