হাফেজ মাওলানা হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল

ইভ টিজিং শব্দটির অর্থ নারীকে উত্ত্যক্ত করা, অসম্মান করা। সংবাদপত্রের পাতা উল্টালেই ইভ টিজিং নামক কুৎসিত চরিত্রের খবর আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ডিজিটাল যুগের হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশের কিশোর-তরুণদের মাঝে, সেই হাওয়ার দাপটে তারা হারিয়ে ফেলছে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য সভ্যতা সংস্কৃতি। আর এজন্য তারা মানব জাতির আদি মাতা হাওয়া (আ:)-এর নাম ভুলে পশ্চিমাদের ইভকে চিনতে শুরু করেছে। কিন্তু দু:খজনক হলো তাদের চেনা ইভ সম্মানিত মাতা নন, শুধুই একজন নারী। আর বস্তুবাদী সভ্যতার ধারক এ ডিজুস তরুণদের কাছে নারী মানে উপাদেয় আর দশটা ভোগ্যবস্তু বৈ অন্য কিছু নয়। ইভ টিজিংয়ের মূল কারণ নিহিত এখানেই। ইভ টিজিং শব্দটি যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা পরিহার করা উচিত। কারণ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে অপরাধীদের ঘৃণার মাত্রা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যাই হোক ইভ টিজিং বা নারীকে অসম্মান করা হয় এমন কাজ কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ। কুরআনে এসেছে,
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩২)।
যারা এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত তাদেরকে কঠিন শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা
সময়ের দাবী। যথাযথ শাস্তি না দেয়ার ফলে এ জঘন্য অপরাধ বেড়েই চলছে। এর
প্রতিকারে বক্তৃতা আর বিবৃতি আর কিছু প্রদর্শন করার মত কাজ করেই দায়িত্ব
শেষ নয়। কেন এই ব্যাধি সমাজে ব্যাপৃত হচ্ছে এবং এর জন্য আমাদের কী করণীয়
আছে তা বের করা দরকার। সেই সাথে কার্যকর এবং বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি হাতে
নেয়া খুবই প্রয়োজন।ইভ টিজিং সমাজে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করার কারণগুলো হলো :
(১) আল্লাহর আদেশের অমান্য করা : আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ সৃষ্টি করার সাথে সাথে তারা কীভাবে জীবন-যাপন করবে তার স্পষ্ট নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা আজ তার সেই নির্দেশনা না মানার কারণেই এই মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আহযাব : ৫৯)।
(২) অশ্লীলতা, বেহায়াপনার সয়লাব : টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, গান, নাটক, সিনেমাসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অশ্লীলতা, বেহায়াপনার সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। যার কারণে ইভ টিজিংয়ের মত কাজ অহরহ হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা অশ্লীলতা, বেহায়াপনার কাছে যেতেও নিষেধ করেছেন। সূরা আনআমের ১৫১ নং আয়াতে এসেছে,
‘আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না-তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে।’
(৩) নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়া : আমরা অনেকেই নৈতিক শিক্ষার কথা বলছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নৈতিক কোনটি? আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে আমাদের প্রিয়নবী যে সমাজে আগমন করেছিলেন সে সমাজের মানুষরা কন্যা সন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দিত। তাদেরকে বর্বর বলা হতো। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে যে শিক্ষাব্যবস্খার মাধ্যমে সেই বর্বর জাতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত করলেন, সেটিই হলো নৈতিক শিক্ষা। আজকে আমরা সেই শিক্ষার কথা না বলে অন্য পথে হাঁটছি।
(৪) দুষ্টের দমন না করা : প্রতিদিনের খবর খুললেই আমারা দেখি দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের দাপটে বিভিন্ন জায়গায় অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হওয়ার পরও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন একশন নেয়া হয় না। এর ফলে অন্যরাও অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করার বিষয়ে ভয় পায় না।
(৫) যে কোন বিষয় দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা : এটা আমাদের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অপরাধী নিজের দলের হলে তার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর প্রবণতা। যারা নারীদেরকে উত্ত্যক্ত করছে তারা এ ধরনের সুযোগ নিচ্ছে।
নারীদেরকে উত্ত্যক্ত করার মত জঘন্য কাজ থেকে মুক্তি পাবার জন্য করণীয়গুলো হলো :
(১) নারীকে উত্ত্যক্ত করা থেকে মুক্তি দিতে হলে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো জনগণের জানমাল এবং সম্ভ্রমের নিরাপত্তা দেয়া। এটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠারও প্রথম শর্ত। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও যানবাহনে ইভ টিজিং মহামারি আকার ধারণ করেছে, এটা সরকারের ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতার ফসল। বিশেষ করে পর্দা ব্যবস্খার প্রতি সরকারের অবস্খান এ কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে। সরকারের ইতিমধ্যে ইভ টিজিংয়ের শিকার অনেক তরুণী লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছে। বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় পিতামাতাকে জীবন দিতে হয়েছে। এজন্য এই মুহূর্তে কঠোর আইন করে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। আইন করতে দেরী হলে ‘ডাক্তার আসার পূর্বে রোগীটি মারা গেল’ অবস্খা হওয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। এ ছাড়াও কয়েকটি কাজ সরকার করতে পারে :- (ক) আইন শৃংখলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আন্তরিক ও জবাবদিহির আওতায় আনা,
- (খ) দেশের লক্ষ লক্ষ ইমাম এবং আলেমদেরকে কাজে লাগানো,
- (গ) শিক্ষকদেরকে সজাগ ও সচেতন করা,
- (ঘ) গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি করা,
- (ঙ) অপরাধী নিজের দলের হলেও শাস্তি দিতে পরোয়া না করা,
- (চ) বিভিন্ন পেশার মানুষ নিয়ে মতবিনিময় সভার ব্যবস্খা করা,
- (ছ) ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।
(৩) নারীর চলাফেরায় শালীন হতে হবে। তা না হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বìধ করা যাবে না। অশ্লীল ও যৌন সুড়সুড়ি দেয় এমন আচরণ অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। নিজেকে স্মার্ট বা আধুনিক হতে গিয়ে নিজের মর্যাদা নিজেই ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তরুণীর নগ্ন কিংবা অর্ধনগ্ন ছবি যতই মোহময়ী হোক না তা কখনোই সমাজ ও সংস্কৃতির ধারক বাহক হতে পারে না এবং তা সুন্দর, সুস্খ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাম্য হতে পারে না। অথচ অধিকাংশ পত্র-পত্রিকার কোন না কোন পৃষ্ঠায় এ রকম অনেক দৃশ্য দেখা যায় এবং বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত করে এগুলোকে উপস্খাপনও করা হয়। উদ্দেশ্য সমাজে তাদের অশ্লীলতাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। উর্বশী এই নারীদেহ দোকানে দোকানেও দেখা যায় অথচ এই জঘন্য অশ্লীলতার বিরুদ্ধে জোরালো তেমন কোন প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের কোন ব্যবস্খা নেই। প্রচলিত সহশিক্ষা ব্যবস্খা যা ছাত্র ছাত্রীদেরকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, পরস্পরের প্রতি আকৃষ্টকরণ ও সর্বোপরি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কাজে ধাবিত করে। বেপর্দা ও অশ্লীল চাল চলন আজ বেড়ে গেছে। আজকাল রাস্তায় হাঁটার সময় প্রায়ই বিভিন্ন দেয়ালে দেখা যায় ইংরেজী সিনেমার বিজ্ঞাপনের বড় বড় অশ্লীল পোস্টার। রঙ্গীন এই পোস্টারগুলোর কোন কোনটাতে প্রায় সম্পূর্ণ নগ্ন বস্ত্রহীন নর-নারীর স্খির চিত্র দেখা যায়। এসব দৃশ্যগুলো স্কুল কলেজে পড়ুয়া কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অবলোকন করে। ফলে সমাজে একশ্রেণীর অসুস্খ চিন্তার মানুষ তৈরী হয়। পরবর্তীতে তারা সমাজ ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নারী যত শালীন হবে তার মর্যাদা তত বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ বলেন,
হে রাসূল! ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, পুত্র, শ্বশুর, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌন কামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন লাজ লজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। (সূরা আন নুর : ৩১)
(৪) পাশ্চাত্যের জোয়ারে গা ভাসিয়ে এক শ্রেণীর নারী দেহ প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা মেতে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতার নামে নারীকে পণ্য হিসেবে বাজারে বিক্রয়ের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে যা নারীর মান-সম্মান, ইজ্জত-আব্রুর প্রতি এক ভয়ানক পদক্ষেপ। এর ফলে নারীকে শুধু ভোগের সামগ্রী বানিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং নারীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতি এক ধরনের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্খান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মত নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সূরা আহযাব : ৩৩)।
হাদিসে এসেছে-আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : জাহান্নামবাসী দু’ধরনের লোক যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি। একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে। আর এক দল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, তাদের মাথার চুলের অবস্খা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগìিধও পাবে না, যদিও তার সুগìিধ বহু দূর থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম)
(৫) সংস্কৃতির নামে চরিত্র বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড বìধ না করলে নারীকে উত্ত্যক্ত করার কাজ কমবে না। আজকে সংস্কৃতির নামে বিদেশ থেকে আমদানী করা অপসংস্কৃতির মূলোৎপাটন করতে হবে। নাচ, যৌন সুড়সুড়ির গানসহ নানান বাদ্যযন্ত্র চলছে অবাধে। হাঁড়ির নিচে ছিদ্র রেখে উপর দিয়ে পানি ঢাললে যেমন ফল পাওয়া যায়না, ঠিক তেমনি অপসংস্কৃতির সয়লাব ঘটিয়ে ইভ টিজিং বìধ করা যাবে না। কারণ হাদিসে এসেছে
-রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে। (সহীহ বোখারি),
(৬) পুরুষের সাথে নারীর অবাধে মেলামেশার উপর কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী, নিকট আত্মীয়দের মাঝে যাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ বìধ করতে হবে। হাদিসে এসেছে-উকবাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম (সা.) বলেন : তোমরা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে। মদিনার আনসারদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তরে বললেন : এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু। (সহীহ মুসলিম),
(৭) নারী-পুরুষ সকলকে পর্দার বিধান মানতে হবে। পর্দার বিধান মানলে নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ কমে যাবে। পর্দার নির্দেশনা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেয়েগণ হল পর্দা। যখন তারা ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তাদের পিছনে অংশ নেয়’ (সুনান তিরমিজী)। এ হাদীসে অত্যন্ত সুন্দর ভাষা প্রয়োগ ও সুস্পষ্টভাবেই মেয়েদের পর্দায় থাকতে বলা হচ্ছে এবং তাদের ঘর থেকে বের হওয়াকে ফেতনার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা শয়তান সব সময় পিছনে প্ররোচনা দিয়েই চলেছে। হালকা বস্ত্র না পরা যা দ্বারা দেহের গোপন অঙ্গগুলি প্রকাশ পায়। হযরত আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, তার বোন আসমা (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্খিত হল এ সময় তার শরীরে পরিধেয় একটি পাতলা কাপড় ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দিক হতে মুখ ফিরাইয়া নিলেন এবং বললেন, হে আসমা যখন মেয়েরা প্রাপ্তবয়স্কা হয় তখন হাত ও মুখ ছাড়া অন্য কোন অঙ্গই যেন প্রকাশ না পায়। হযরত উমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যখনই কোন পুরুষ কোন নারীর নিকট নির্জনে বসে তখনই তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে শয়তান তার নিকট উপস্খিত থাকে। (সুনান তিরমিজি)। হযরত উম্মে সালমা (রা:) হতে বর্ণিত যে, তিনি এবং মায়মুনা (রা:) উভয়েই নবী পত্নী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে উপস্খিত হলেন। এমন সময়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা:) (যিনি অìধ সাহাবী) উপস্খিত হলেন এবং ভিতর কক্ষে প্রবেশ করতে লাগলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, তোমরা উভয়েই পর্দা করে নাও। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) তিনি তো অìধ, আমাদের তো দেখছেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তদুত্তরে বললেন, তোমরাও কি অìধ হয়ে গেলে যে তোমরাও দেখবে না। (মুসনাদ আহমাদ)। লক্ষণীয় যে, যেখানে অপবিত্রতার বিন্দুমাত্র আশংকাও নেই। তাছাড়া একদিকে উম্মত মাতা নবী পত্নীগণ অন্যদিগকে একজন আদর্শবান অìধ সাহাবী। এতদসত্ত্বেও রাসূলে করীম (সা.) পর্দার প্রতি অধিক সতর্কতা দিতে গিয়ে নিজ পত্নীগণকে পর্দার আদেশ দিলেন।
(৮) চরিত্র গঠন করার জন্য ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্খাকেও এগিয়ে আসতে হবে।
নারী মাতা, নারী ভগ্নি, নারী বধূ তারা ভোগ্য পণ্য নয়, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা পাওয়া মতো আল্লাহ তায়ালার এক অমূল্য নিয়ামত। আমাদের সমাজে যত দিন এ বিশ্বাসের লালন ছিল তত দিন ইভ টিজিং সমস্যা ছিল না। আমাদের সমাজের চিরায়ত মূল্যবোধগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আর তা থেকে সৃষ্ট অবক্ষয়ের ফল ইভ টিজিং নামের এ যন্ত্রণা। এ কয়েক দশক আগেও-রাস্তাঘাটে কোন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার কথা ভাবতেও ভদ্র ঘরের সন্তানরা লজ্জা পেত। এমন অপরাধের খবর অভিভাবকদের কাছে পৌঁছিলে আদরের সন্তানকে নিজেরাই শাস্তি দিতেন। সামাজিকভাবেও বিষয়টিকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। এখন বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে রাস্তাঘাট নয় স্কুল কলেজ এমন কি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মেয়েরা নিরাপদ নয়। এ ভয়ংকার অবস্খা থেকে জাতি এখনই মুক্তি পেতে চায়, নারীরা তাদের সম্মানের আসনে থাকবে-এটাই জনগণের প্রত্যাশা। আসুন আমরা আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরণ করি, সমাজ থেকে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা ও বখাটে মাস্তানদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
No comments:
Post a Comment