=> আরাফাহ দিন কি এবং কবে?
জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখকে (ঈদুল আযহার আগের দিন) ‘ইওয়ামুল আরাফাহ’ বা ‘আরাফার দিন’ বলা হয়, কারণ এই দিনে হাজীরা আরাফাহ নামক একটা মাঠে জমায়েত হন। হজ্জের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ আহকাম হলো যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ‘আরাফার ময়দানে’ অবস্থান করা। এই দিনের গুরুত্ত্ব সম্পর্ক রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আরাফার ময়দানে অবস্থান করাই হলো হাজ্জ।”
অর্থাৎ, আরাফাতে অবস্থান করা হজ্জের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা হজ্জের প্রধান রুকন, যা ছুটে গেলে পুরো হজ্জই বাতিল হয়ে যাবে। তাকে পরের বছর আবার হজ্জ করতে হবে (যদি তার উপর হজ্জ ফরয হয়ে থাকে)।
=> আরাফার দিনে ফযরের পর থেকেই হাজীরা জড়ো হয়ে যিকির-আযকার করেন আর বিশেষ করে তোওবা ও ইস্তেগফার করেন। এইদিনে জড়ো হওয়া মানুষদের দোয়া আল্লাহ সবচাইতে বেশী ভালোবাসেন ও কবুল করেন। যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই হাজীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ খুতবা দেওয়া হয়। খুতবার পরে যোহর ও আসর জমা ও কসর করে একসাথে পড়া হয়। এর পরে হাজীরা ফ্রী হয়ে শুধুই প্রাণভরে দুয়া ও আন্তরিক তোওবা ও ইস্তেগফার করে বাকি সময়টা পার করেন।
=> দীর্ঘদিন ধরে ‘মাসজিদে নামিরা’ থেকে আরাফার মাঠে হাজীদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়ে আসছেন বর্তমান সৌদি প্রধান মুফতি ও সর্বোচ্চ ফতোয়া প্রদান বোর্ডের প্রেসিডেন্ট, আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ (হাফিজাহুল্লাহ)।
=> শায়খের সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ শায়খ ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। জন্ম থেকেই তার দৃষ্টিশক্তি ছিলো অত্যন্ত কম। আর ১৭ বছর বয়সে তিনি একেবারেই অন্ধ হয়ে যান। ১৯৯৯ সালে তিনি সৌদি আরবের প্রধান মুফতি হিসেবে নির্বাচিত হন। গত বছর আমাদের পেজের এক ভাই, Razu Ahmed তার সম্পর্কে লিখেছিলেনঃ
তিনি দৃষ্টি শক্তিহীন, ওনার চোখে নেই আলো
অথচ ওনার হৃদয়টা দ্বীনের আলোয় আলোকিত...
আর আমাদের চোখে আলো থাকতেও হৃদয়ে দ্বীনের আলো নেই...
=> যারা হজ্জে যাবেন না, তাদের আরাফার দিনে রোযা রাখার ফযীলতঃ
আবু কাতাদাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুল (সাঃ) কে আরাফার দিনের রোজার ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আরাফার দিনের রোজা বিগত ও সামনের এক বছরের গুনাহ সমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ।”
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২।
=> হাদিসের মধ্যে আরাফার রোজার কথা এসেছে, জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখের কথা আসেনি। তাই বিজ্ঞ আলেমগণ সোউদী আরবে হাজীরা আরাফায় অবস্থানের দিনেই এ রোজা রাখা উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন। কারন আরাফাহ ছাড়া অন্য কোন রোজা জায়গার সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা শায়খ বিন বাজ ও আল-লাজনা আদ-দাইয়িমার ফতোয়া। যারা হজ্জ করবেন, তারা আরাফার দিন রোযা রাখবেন না কারণ, ঐদিন আরাফাতে বেশি বেশি দুয়া ও যিকির-আযকার করবেন, এটাই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশ। কারণ, আরাফার ময়দানের দুয়া আল্লাহ সবচাইতে বেশি কবুল করেন। সেইজন্য যারা হজ্জ করবেন তারা রোযা না রেখে বেশি বেশি দুয়া করবেন, আর যারা বাড়িতে থাকবেন তারা ঐদিন রোযা রাখার চেষ্টা করবেন।
তবে এর বিপরীতেও মত রয়েছে। কিছু আলেমের মতে, রমযান ও ঈদের মতো আরাফার রোযাও স্থানীয় চাঁদের উপর নির্ভর করে রাখতে হবে, এটা শায়খ ইবনে উসাইমিনের ফতোয়া। তাই বেশি বিতর্ক বা সন্দেহের মাঝে না গিয়ে, সর্বোত্তম হচ্ছে সউদী আরব ও বাংলাদেশের ২ দিনের হিসাবেই ২টি রোযা রেখে ফেলা। এতে কোন ক্ষতি নেই, বরং যিল হজ্জের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত সবগুলো দিনেই রোজা রাখতে পারেন, সেটাও সুন্নাত। এই দিনের যেকোন ইবাদত আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও বেশি মর্যাদার। মনে রাখবেন, যেই ব্যাপারে valid ইখতিলাফ বা মতপার্থক্য রয়েছে, সেই ব্যাপারে কেউ কাউকে যে কোনো একটা মত ফলো করার জন্য বাধ্য করতে পারেন না।
<<< একটি মাত্র রোজা রাখলে যদি দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায় তাহলে এই সুযোগ মিস করা কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ হবে? >>>
=> রোযা এবং নারীদের হায়েজ সংক্রান্ত মাসয়ালাঃ
প্রশ্নঃ ঋতু চলাকালীন সময়ে যেই সমস্ত বোনেরা আশুরার রোজার রাখতে পারছেন না তারা কি কাজা রাখতে পারবেন?
উত্তরঃ আরাফাহ, আশুরা, ইত্যাদি যেই সমস্ত নফল/সুন্নত রোযা আছে কেউ যদি সেইগুলো মিস করে এইগুলোর কোনো কাযা নেই। অর্থাত নির্ধারিত দিনে রাখতে না পারলে রমযানের রোযার মতো অন্য কোনো দিনে কাযা রাখার সুযোগ নাই।
প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন শায়খ আব্দুল হামীদ মাদানী।
তবে যারা ইচ্ছুক ছিলেন তারা ইচ্ছা করলে অন্য নফল রোযা রাখতে পারেন।
১, ২ অথবা ৩ টা।
যাদের দুইটা রোযা রাখার ইচ্ছা ছিলো তারা পরবর্তীতে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে যে রোযা রাখা সুন্নত সেটা পালন করতে পারেন। হয় মাসের যে কোনো সোমবারে অথবা বৃহস্পতিবারে ১টা অথবা দুইটা রোযা রাখবেন। এছাড়া মাসে যে কোনো ৩ দিন রোযা রাখার সুন্নতী একটা পদ্ধতি আছে সেটা করতে পারেন। এইটা যেকোনো ৩দিন করা যায়, তবে চাঁদের মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তে করলে সবচাইতে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। তবে সুন্নতী পদ্ধতিতে যেকোনো ১দিন/২দিন/৩দিন যাই করেন না করেন, একটা নফল রোযার অনেক সওয়াব। তাই আমাদের উচিত আস্তে আস্তে এইভাবে নফল রোযা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
No comments:
Post a Comment