মাদ্রাসা লাইনে কয়েক ক্লাস পড়ে কিছু মানুষ মনে করে তারা ‘আলেম’ হয়ে গেছেন। অথচ সত্যিকারের যারা আলেম তারা কোনোদিন নিজেকে আলেম মনে করেন না, আলেম হিসেবে নিজেকে জাহির করে বেড়ান না।
এছাড়াও বর্তমান যুগে কিছু টিভি, ফেইসবুক, ইউটিউব বক্তা ও আলেম আছেন, যাদের মাথায় কিছু ই’লম থাকুক আর না থাকুক, মুখ চালাতে পারেন আর মুরীদতুল্য কিছু শ্রোতা জুটাতে পারেন, তাহলে তারা নিজেদেরকে বড় মুফতি-মুহাদ্দিস বা আলেম ভাবতে শুরু করেন। অথচ তাদের না আছে আলেমদের সাথে কোনো সংস্পর্শ, না আছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড।
অথচ তাদের পাহাড় সমান মূর্খতার ব্যাপারে আলেমরা যখন সতর্ক করে দেন, তখন নিজেদেরকে সংশোধন না করে উল্টা অহংকার প্রদর্শন করেন। আলেমদেরকে বাজে ভাষায় আক্রমন করেন, তার ভক্ত ও মুরীদদের খুশি রাখার জন্য মিথ্যা সার্টিফিকেট প্রচার করে বেড়ান।
ইমাম আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ কে তার এক ছাত্র ‘আল্লামাহ’ বলে ডাকায় তিনি রেগে গিয়ে বলেনঃ কে আল্লামা? আমি তো তালেবে ইলেম (ইলম অধ্যায়নরত ছাত্র)!
[ সুবহান আল্লাহ ]
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহঃ একটা দারসের শুরুতে তার এক ছাত্র উস্তাদ হিসেবে তাঁকে একটু সম্মানসূচক কথাবার্তা বলে। প্রশংসা শুনে ভয় ও বিনয়ে শায়খ আলবানী রহঃ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এই হচ্ছে সত্যিকারের আলেমদের পরিচয়।
https://www.youtube.com/watch?v=cFzTPHR3Ukk
কিছুদিন আগে মিশরীয় একজন আলেম, শায়খ সাঈদ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহর একটা ভিডিওতে দেখলাম - তিনি তার ছাত্রদেরকে আল্লাহর কসম করে বলছেন তোমরা আমার হাতে চুমু খাবেনা। ছাত্ররা দুঃখিত হয়ে বললো, কেনো? আলেমদের হাতে চুমু খাওয়াতো শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ না। জবাবে তিনি বলেন, আমিতো নিজেকে আলেম মনে করিনা!
https://www.youtube.com/watch?v=euxc1rHxtoo
কিন্তু তথাকথিত কিছু টিভি বক্তা, আলেম, নামধারী মুফতিরা ক্বুরান হাদীসের মনগড়া ব্যখ্যা দিয়ে নিজেরা পথভ্রষ্ট হন, তাদের ভক্তদেরকেও পথভ্রষ্ট করেন। এইজন্য রাসুলুল্লাহ সাঃ উম্মতের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে এদেরকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আমার জীবনে তিনটি জিনিসের বড় ভয়। তার প্রথমটা হলো ‘আয়াম্যায়ে দোয়াল্লিন’ বা ভ্রান্ত হুজুর।”
মুসনাদে আহমাদ, হাদীসটি সহীহ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ
“(ফিতনার যুগে) কিছু লোক এমন হবে, যারা জাহান্নামের দরজার দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।
সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬, ৬৬৭৯।
পথভ্রষ্ট বক্তা, আলেমদের ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে শায়খ সালেহ আল-ফাওজান বলেনঃ “বর্তমান যুগে অন্য অনেক ফেতনার সাথে এই উম্মত সবচাইতে বড় যে ফেতনার সম্মুখীন সেটা হচ্ছে - অনেক দ্বায়ী আছে যারা ইলম ছাড়া অজ্ঞতাবশত মানুষকে গোমরাহী ও বাতিলের দিকে দিকে দাওয়াত দিচ্ছে।”
ইসলামী ইতিহাসে অবিস্বরণীয় আলেম, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ
“দুনিয়াকে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে, আধা বক্তা, আধা ফকীহ, আধা ডাক্তার এবং আধা ভাষাবিদ। এদের একজন (আধা বক্তা) দ্বীনকে ধ্বংস করে, অপরজন (আধা ফকীহ) দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে। আধা ডাক্তার মানুষের শরীরকে নিঃশেষ করে। আর আধা ভাষাবিদ ভাষাকে বিনষ্ট করে।”
[মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১১৮]
No comments:
Post a Comment