Monday 13 April 2020

মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ : ত্রুটিবিচ্যুতি ও পর্যালোচনা [২য় পর্ব]


▌১ম অধ্যায়: তাশবীহ তথা সাদৃশ্যদানের ভয়াবহ কুফরি বক্তব্য
·
উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব তাঁর একাধিক বক্তব্যে আল্লাহর সিফাতের সাথে মাখলুকের সিফাতের সাদৃশ্য দিয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকটি বক্তব্য নিম্নরূপ:
১. উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব বলেছেন, “যেই দিন কোনো মানুষ কোনো মানুষের কোনো উপকার করতে পারবে না, তার নাম বিচারের দিন। একচ্ছত্র মালিকানা আল্লাহর হাতে থাকবে। রাজাধিরাজ হিসেবে সেইদিন তিনি মাঠে নেমে আসবেন। এক হাতে থাকবে সাতটি জমিন, এক হাতে থাকবে সাতটি আকাশ। [এই কথা বলতে গিয়ে উস্তায আব্দুর রাযযাক সাহেব নিজের দুই হাত দিয়ে ধরে থাকার ধরন বর্ণনা করেছেন – সংকলক] এইভাবে হাতে ঝাঁকি মেরে বলবেন, আইনাল জাব্বার, আইনাল মুতাকাব্বির? স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী, অহংকারী, বদমেজাজিরা কোথায়?” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [দ্র.: https://youtu(ডট)be/eaXHsjyQOgE (৮ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ৮ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত)]
২. খ্রিষ্টাব্দ ২০১২ সালের একটি বক্তব্যে উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব বলেছেন, “এরপর তিনি বলছেন, সালাসা হাসায়াতিন মিন হাসায়াতি রাব্বী, এতগুলো জান্নাতে দেওয়ার পরে আমার প্রতিপালক জাহান্নামে এইভাবে হাত ঢুকিয়ে তিন অঞ্জলি মানুষ জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দিয়ে দিবেন। তিন অঞ্জলি মানুষ জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দিয়ে দিবেন। তিন অঞ্জলি মানুষ জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দিয়ে দিবেন।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [দ্র.: https://youtu(ডট)be/edBIfbhbETE (১ ঘণ্টা ৩১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত)]
৩. উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব অন্যত্র বলেছেন, “এই সারা পৃথিবী, আকাশ, জমিনকে একসাথে ধরে আল্লাহ ওপরে তুলে আছাড় মেরে সেইদিন ভেঙে চৌচির খানখান করে দিবেন। সেইদিন মানুষের অবস্থা কী হবে? কী দিয়ে বুঝাই আপনাকে আমি, কিয়ামত কী জিনিস? সাতটা জমিন ধরে, সাতটা আকাশ ধরে, যেইদিন আল্লাহ এইভাবে আছাড় দিয়ে ভেঙে চৌচির করে দিবেন, খানখান করে দিবেন, সেইদিন কী হতে পারে অবস্থা!... এই সাতটা আকাশ, সাতটা জমিনকে এইভাবে ধরে এক আছাড় দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দিবেন, টুকরা টুকরা করে দিবেন।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [দ্র.: https://m(ডট)youtube(ডট)com/watch?fbclid&v=Ipa-1_-G4qY (৭ মিনিট ২৫ সেকেন্ড থেকে ৮ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত)]

৪. উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব আরও বলেছেন, “বিচারের মাঠের বাস্তব অবস্থা আপনার কাছে নকল করছি। শুনুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাস্তব পড়ার কথা বলার পরে আপনাকে এখানে একটু কথা স্পষ্ট করে রাখি। কাউকে যদি আল্লাহ জান্নাতে দিতে চান, সে খুব পাপী, তার সামনে তার খাতাটা এভাবে তুলে ধরবেন। এদিকে দেখেন। হাল তা‘রিফু যানবা হাযা? আল্লাহ নিজের বাহু দিয়ে তাকে ঢেকে নিবেন, কাউকে দেখতে দিবেন না। আর খাতাটা তার সামনে ধরে বলবেন, হাল তা‘রিফু যানবা হাযা, দেখ তো, তুমি এই পাপকে চিনতে পার? এটা কি তোমারই পাপ? তখন ও বলবে, না‘আম ইয়া রব্বী, জি হ্যাঁ, আমার প্রতিপালক, আমি এটা চিনতে পারছি, এটা আমারই পাপ।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [দ্র.: https://m(ডট)youtube(ডট)com/watch?v=Yj8_uh4RWb0&fbclid (১০ মিনিট ৪০ সেকেন্ড থেকে ১১ মিনিট ২৭ সেকেন্ড পর্যন্ত)]
·
❏ বক্তব্যের পর্যালোচনা:
পর্যালোচনার শুরুতে একটি ওজর পেশ করছি। উস্তায বিন ইউসুফ সাহেব বিখ্যাত রুটির বক্তব্যে বলেছেন, “সারা পৃথিবীকে আল্লাহ নিজে হাতে একটা রুটি বানাবেন। এইভাবে; রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জের মহিলারা যেভাবে বানায়।” [দ্র.: https://youtu(ডট)be/jcK5L6GLHtA.] এই বক্তব্যে আল্লাহর সিফাতের সাথে মাখলুকের সিফাতের সাদৃশ্য দেওয়া হয়েছে মর্মে প্রচুর সমালোচনা হয়। হঠাৎ উস্তাযের এই বক্তব্যকে ডিফেন্ড করা হয়। এ বিষয়ে সিনিয়র তালিবদের সাথে যোগাযোগ করেও বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। আমি বলেছিলাম, এ ব্যাপারে ‘উলামাদের থেকে ফতোয়া আনব, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, আমি কিবার ‘উলামাদের সাথে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, বিধায় ফতোয়া আনতে পারিনি।
সে যাইহোক, আমরা উস্তায বিন ইউসুফের অন্য বক্তব্য দিয়ে তাঁর কুফরি কথার প্রমাণ দিয়ে তা অপনোদন করব, ইনশাআল্লাহ। আর রুটির বক্তব্যে সংশয় সৃষ্টি করা হয়েছিল, নাবীজী ﷺ আল্লাহর রুটি বানানোর উপমা দিয়েছিলেন এ কথা বলে যে, “আল্লাহ রুটিকে স্বীয় হাত দিয়ে উল্টাপাল্টা করবেন, যেমন তোমাদের কেউ সফরে নিজ রুটি উল্টাপাল্টা করে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬৫২০; সাহীহ মুসলিম, হা/২৭৯২] কিন্তু উল্লিখিত চারটি বক্তব্যের কোনোটির পক্ষেই এরকম উপমা হাদীসে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ বাকি বক্তব্যগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ভ্রমাত্মক সংশয় উত্থাপন করার কোনো সুযোগ নেই।
এবারে আসল কথায় চলে আসি। মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন সকল আসমান ও জমিনকে নিজের হাতে নিবেন। এটি সর্বৈব সত্য কথা। কুরআন ও হাদীসে এ কথা এসেছে (সূরাহ যুমার: ৬৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২৭৮৮)। মুশকিল হলো, উস্তায আব্দুর রাযযাক সাহেব এই হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহর সিফাতকে তাঁর সৃষ্টির সিফাতের সাথে তাশবীহ বা সাদৃশ্য দিয়েছেন। সেই সাথে নিজের দুই হাত দিয়ে আল্লাহর সিফাতের ধরন বর্ণনা করেছেন। তিনি বক্তব্যে বলেছেন, “এক হাতে থাকবে সাতটি জমিন, এক হাতে থাকবে সাতটি আকাশ। এইভাবে হাতে ঝাঁকি মেরে বলবেন, আইনাল জাব্বার, আইনাল মুতাকাব্বির।” এখানে তিনি নিজেকে দিয়ে আল্লাহর সিফাতের উপমা দিয়েছেন, যা সুস্পষ্ট ও নিঃসন্দেহ তাশবীহ।
মহান আল্লাহ তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দিবেন। এ কথা হাদীসে এসেছে (সুনানে তিরমিযী, হা/২৪৩৭; সুনানে ইবনু মাজাহ, হা/৪২৮৬; সনদ: সাহীহ; তাহক্বীক্ব: আলবানী)। কিন্তু আল্লাহ কীভাবে তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দিবেন, তার কোনো বর্ণনা হাদীসে পাওয়া যায় না। অথচ উস্তায আব্দুর রাযযাক সাহেব অবলীলায় বলে দিলেন, “আমার প্রতিপালক জাহান্নামে এইভাবে হাত ঢুকিয়ে তিন অঞ্জলি মানুষ জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দিয়ে দিবেন।” এখানে তিনি নিজেকে দিয়ে আল্লাহর সিফাতের উপমা দিয়েছেন, যা সুস্পষ্ট তাশবীহ। আবার এই তাশবীহকে তিনি নাবীজীর ﷺ দিকে সম্পৃক্ত করেছেন, যা নাবীজীর ওপর মিথ্যারোপের পর্যায়ভুক্ত।
তদনুরূপ মহান আল্লাহ পাপী মু’মিনকে স্বীয় আবরণে ঢেকে পাপের স্বীকারোক্তি নিবেন এবং তাকে তার নেককাজের আমলনামা দিবেন। এই মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে (সাহীহ বুখারী, হা/২৪৪১)। কিন্তু তিনি কীভাবে তা করবেন, তা আমাদের অজানা। অথচ উস্তায বিন ইউসুফ নির্দ্বিধায় বলে দিয়েছেন, “কাউকে যদি আল্লাহ জান্নাতে দিতে চান, সে খুব পাপী, তার সামনে তার খাতাটা এভাবে তুলে ধরবেন।” তিনি এখানেও নিজেকে দিয়ে আল্লাহর সিফাতের উপমা দিয়েছেন, যা সুস্পষ্ট তাশবীহ।
পক্ষান্তরে আল্লাহ কেয়ামতের দিন আসমান-জমিনকে নিজের কবজায় নিয়ে ভেঙে চুরমার করবেন, এ কথা আমি কুরআন-হাদীসে খোঁজাখুঁজি করে পাইনি। হ্যাঁ, এ কথা আছে যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ আসমান-জমিনকে নিজের হাতে নিবেন। এ মর্মে কুরআনের আয়াত ও হাদীস বর্ণিত হয়েছে (সূরাহ যুমার: ৬৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২৭৮৮)। ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব বিরচিত কিতাবুত তাওহীদের শেষ অধ্যায়েও এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস পেয়ে যাবেন, কিন্তু কোনো হাদীসেই ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করার কথা পাবেন না। কেউ এরকম বর্ণনা পেলে আমাকে জানিয়েন।
তবে অবস্থা যাই হোক না কেন, এই বক্তব্যে (উল্লিখিত ৩ নং বক্তব্যে) উস্তায বিন ইউসুফ দুইবার ‘এইভাবে’ বলে আল্লাহর সিফাতের ধরন বর্ণনা করেছেন এবং নিজেকে দিয়ে সিফাতের উপমা দিয়েছে। ফলে তিনি উল্লিখিত চারটি বক্তব্যেই তাশবীহের মতো ভয়াবহ কুফরি কথা ব্যক্ত করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কেয়ামত সম্পর্কিত গোটা সাতেক লেকচার শুনে দুইটি বক্তব্য পেয়েছি। আর বাকি দুটো আরেক ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছি। উস্তায বিন ইউসুফ পুরো বঙ্গদেশে আরও কত বক্তব্য দিয়েছেন, যেগুলো তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, না জানি আরও কত বক্তব্যে তিনি তাশবীহের মতো কুফরি ‘আক্বীদাহ ছড়িয়েছেন। আল্লাহর কাছে এ থেকে নিরাপত্তা কামনা করছি।
প্রিয় পাঠক, উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ যে তাশবীহের মতো জঘন্য কুফরি বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রমাণ আমি কিতাব, সুন্নাহ ও আহলুস সুন্নাহর ইমামদের বক্তব্য থেকে দিব, ইনশাআল্লাহ। তার আগে কিছু জরুরি কথা বলে নিই। এমন জনসাধারণের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, যাঁরা সিফাত কাকে বলে সেটাও জানেন না। তাই সিফাতের ব্যাপারটা খোলাসা করি। সহজ ভাষায় বলা যায়, যে কথার মাধ্যমে কোনো কিছুর অবস্থা বা গুণ বর্ণনা করা হয়, সেটাকেই সিফাত বলে। যেমন বলা হয়, সুন্দর চেহারা, মনোরম পরিবেশ, শাহেদ নদীর তিরে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইত্যাদি। বাক্যগুলোতে চেহারার সিফাত হলো সুন্দর, পরিবেশের সিফাত হলো মনোরম, আর শাহেদের সিফাত হলো নদীর তিরে ঘুরে বেড়ানো। সিফাতের বাংলা প্রতিশব্দ হলো গুণ, বহুবচনে গুণাবলি।
মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূল ﷺ আল্লাহকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন, সেগুলোকে আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলি বলা হয়। তাহলে তাশবীহ কী জিনিস? কোনো বস্তুকে অপর কোনো বস্তুর সাথে উপমা বা সাদৃশ্য দেওয়াকে তাশবীহ বলে। যেমন বলা হয়, জাফরের গায়ে সিংহের মতো শক্তি, অবন্তির চুল ভ্রমরের মতো কালো, তার গ্রীবা আমার গ্রীবার মতো, তার বাহু আমার বাহুর মতো। আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে তাশবীহ হলো—এরকম বলা যে, আল্লাহর হাত আমাদের হাতের মতো, আল্লাহর ক্রোধ আমাদের ক্রোধের মতো, আল্লাহর হাসি আমাদের হাসির মতো, আল্লাহর দ্রুত হাঁটা আমাদের দ্রুত হাঁটার মতো। তাশবীহ বলতে আসলে কী বোঝায়, সে ব্যাপারে ইমামদের বক্তব্য সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহর যেসব সুন্দর নাম ও সিফাতের কথা কুরআন-সুন্নাহয় এসেছে, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কিছু মূলনীতি আছে। বলা বাহুল্য যে, এগুলো আহলুস সুন্নাহর মূলনীতি হিসেবেই বিবেচিত হয়। সেসব মূলনীতির মধ্যে একটি অন্যতম মূলনীতি হলো—আল্লাহর সিফাতকে তাঁর সৃষ্টির কোনো সিফাতের সাথে তাশবীহ বা সাদৃশ্য দেওয়া যাবে না। এটা আসমা ও সিফাতের (আল্লাহর নাম ও গুণাবলির) প্রাথমিক মূলনীতি, যা বেসিক ‘আক্বীদাহর গ্রন্থগুলোতেই বিবৃত হয়েছে। আমি পুনরায় বলছি, বেসিক ‘আক্বীদাহর গ্রন্থে, জটিল-কঠিন ও বড়ো বড়ো গ্রন্থে নয়।
·
❏ ‘আক্বীদাহর বেসিক কিতাবাদির মানদণ্ডে উস্তায বিন ইউসুফের বক্তব্য:
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে আল্লাহর ইচ্ছায় আমি এটা প্রমাণ করব যে, উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব আহলুস সুন্নাহর বেসিক ‘আক্বীদাহ সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল ও সচেতন নন। যেকারণে তাঁর মুখ থেকে একাধিকবার তাশবীহের মতো ভয়াবহ বিদ‘আতী ও কুফরি বক্তব্য বের হয়েছে। প্রাথমিক ‘আক্বীদাহ শিক্ষার কিছু গ্রন্থ থেকে উস্তায আব্দুর রাযযাক সাহেবের ‘আক্বীদাহগত বিচ্যুতি তুলে ধরা হলো।
·
১. শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] তাঁর সুবিখ্যাত প্রাথমিক ‘আক্বীদাহর গ্রন্থ (যে বইটি বাংলাদেশের বহু আহলেহাদীস মাদরাসায় পড়ানো হয়) “আক্বীদাহ ওয়াসিত্বিয়্যাহ”-র মধ্যে বলেছেন,
ومن الإيمان بالله الإيمان بما وصف به نفسه في كتابه ووصفه به رسوله محمد ﷺ من غير تحريف ولا تعطيل، ومن غير تكييف ولا تمثيل. بل يؤمنون بأن الله سبحانه ليس كمثله شيء وهو السميع البصير. فلا ينفون عنه ما وصف به نفسه، ولا بحرفون الكلام عن مواضيعه. ولا يلحدون في أسماء الله وآياته ولا يكيفون ولا يمثلون صفاته بصفات خلقه.
[আল-‘আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বিয়্যাহ (শাইখ সালিহ আল-ফাওযানের ভাষ্য-সহ), পৃষ্ঠা: ৮-১০; মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সনতারিখ-বিহীন সফট কপি]
উদ্ধৃত বক্তব্যের অনুবাদ আমি নিজে না করে আহলেহাদীস কমিউনিটির একজন গ্রহণযোগ্য অনুবাদক উস্তায আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী (হাফিযাহুল্লাহ)’র অনুবাদ পেশ করছি। উস্তায শাহেদ মাদানী অনুবাদ করেছেন, “আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কিতাবে নিজেকে যেই সুউচ্চ গুণাবলী দ্বারা বিশেষিত করেছেন এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর পবিত্র সুন্নাতে আল্লাহর যেই মহান গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, কোন প্রকার تحريف (পরিবর্তন), تعطيل (অস্বীকার ও বাতিল), تكييف (পদ্ধতি ও ধরণ বর্ণনা) এবং কোন প্রকার تمثيل (উদাহরণ, উপমা ও দৃষ্টান্ত পেশ) করা ব্যতীতই সেগুলোর প্রতি ঈমান আনয়ন করা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের মধ্যে শামিল। বরং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা বিশ্বাস করেন যে, সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুই আল্লাহর মত নয়, অথচ তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
অতএব আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে যেই সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাকে তারা তাঁর থেকে নাকোচ করে না এবং আল্লাহর কালামকে আসল স্থান থেকে সরিয়ে ফেলে না। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা আল্লাহর নাম ও আয়াতসমূহকে বিকৃত করেন না, তারা আল্লাহর সিফাত সমূহের ধরণ ও কায়া বর্ণনা করেন না এবং তাঁর সিফাতসমূহকে মাখলুকের সিফাতের সাথে তুলনাও করেন না।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [উস্তায আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী অনূদিত ‘শারহুল আক্বীদাহ্ আল-ওয়াসিত্বীয়া’, পৃষ্ঠা: ৩৩-৩৯; ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী (রাণীবাজার, রাজশাহী) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: আগষ্ট, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ (১ম প্রকাশ)]
·
২. ইমাম আবূ জা‘ফার আত্ব-ত্বাহাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩২১ হি.] তাঁর বিশ্বনন্দিত বেসিক ‘আক্বীদাহর গ্রন্থ “আল-‘আক্বীদাতুত তাহাউয়িয়্যাহ”-র মধ্যে আল্লাহ প্রসঙ্গে বলেছেন,
ولا يشبه الأنام.
[ইমাম ত্বাহাউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ), আল-‘আক্বীদাতুত তাহাউয়িয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৯; দারু ইবনি হাযম, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
আমাদের সালাফীদের মধ্যে সর্বজনগৃহীত অনুবাদক ফাদ্বীলাতুল উস্তায ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া স্যার (হাফিযাহুল্লাহু তা‘আলা) উক্ত বাক্যের অনুবাদ করেছেন, “আর তিনি সৃষ্ট বস্তুর সদৃশ নন।” [ড. আ ব ম জাকারিয়া ও মো. আব্দুল মতিন, ইমাম ত্বহাবী লিখিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদা; পৃষ্ঠা: ৯; ইসলামহাউজ ডট কম থেকে সংগৃহীত সফট কপি]
·
৩. ইমাম ত্বাহাউয়ী বিরচিত ‘আক্বীদাহ-বিষয়ক গ্রন্থটির ভাষ্য লিখেছেন ইমাম ইবনু আবিল ‘ইয আল-হানাফী। অসংখ্য ‘উলামা কর্তৃক রেকমেন্ডেড এবং অতি প্রসিদ্ধ গ্রন্থটির নাম “শারহুল ‘আক্বীদাতিত ত্বাহাউয়িয়্যাহ”। এই গ্রন্থ বিভিন্ন দেশের ইসলামী বিদ্যাপীঠে গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হয়। এমনকি আমাদের দেশে জমঈয়তে আহলে হাদীস বাংলাদেশ কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশ আহলেহাদীস মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সিলেবাসে উক্ত গ্রন্থকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিধায় বোর্ডের আওতাধীন সকল আহলেহাদীস মাদরাসায় দাওরা শ্রেণিতে (কুল্লিয়াহ উলা ও সানিয়াহতে) উক্ত গ্রন্থ পড়ানো হয়।
উক্ত গ্রন্থে ইমাম ইবনু আবিল ‘ইয আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯২ খ্রি.] ইমাম ত্বাহাউয়ীর কথার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন,
هذا رد لقول المشبهة، الذين يشبهون الخالق بالمخلوق، سبحانه وتعالى، قال عز وجل: (لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ). وليس المراد نفي الصفات كما يقول أهل البدع فمن كلام أبي حنيفة رحمه الله في الفقه الأكبر: لا يشبه شيئا من خلقه ولا يشبهه شيء من خلقه. ثم قال بعد ذلك: وصفاته كلها خلاف صفات المخلوقين، يعلم لا كعلمنا، ويقدر لا كقدرتنا، ويرى لا كرؤيتنا. انتهى. وقال نعيم بن حماد: من شبه الله بشيء من خلقه فقد كفر، ومن أنكر ما وصف الله به نفسه فقد كفر، وليس فيما وصف الله به نفسه ولا رسوله تشبيه. وقال اسحاق بن راهويه: من وصف الله فشبه صفاته بصفات أحد من خلق الله فهو كافر بالله العظيم.
[ইমাম ইবনু আবিল ‘ইয আল-হানাফী (রাহিমাহুল্লাহ), শারহুল ‘আক্বীদাতিত্ব ত্বাহাউয়িয়্যাহ (তাহক্বীক্ব: আহমাদ শাকির); পৃষ্ঠা: ৭৩-৭৪; বাদশাহ ফাহাদ লাইব্রেরি, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৮ হিজরী।]
উস্তায আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী (হাফিযাহুল্লাহ) উদ্ধৃত উক্তির অনুবাদ করেছেন, “এখানে ঐসব মুশাব্বেহা সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ করা হয়েছে, যারা মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা শূরা: ১১১)। উপরোক্ত কথার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সুউচ্চ সিফাতসমূহকে নাকচ করা উদ্দেশ্য নয়। যেমন ধারণা করে থাকে বিদ‘আতীরা। ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব ফিক্বহুল আকবারে বলেন, তিনি সৃষ্টির কোনো কিছুর সাথেই সাদৃশ্য রাখেন না এবং সৃষ্টির কিছুই তার সাথে সাদৃশ্য রাখে না।
অতঃপর তিনি বলেন, তার সমস্ত গুণই সৃষ্টির গুণ থেকে ভিন্ন রকম। তার ইলম রয়েছে, কিন্তু তার ইলম আমাদের ইলমের মত নয়। তিনি ক্ষমতাবান, কিন্তু তার ক্ষমতা আমাদের ক্ষমতার মত নয়। তিনি দেখেন, কিন্তু তার দেখা আমাদের দেখার মত নয়। ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহর কথা এখানেই শেষ। ইমাম নু‘আইম বিন হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে তার সৃষ্টির কোনো কিছুর সাথে তুলনা করবে, সে কাফেরে পরিণত হবে। আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তাকে যেসব গুণাবলীতে বিশেষিত করেছেন এবং তার সম্মানিত রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রভুর যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, তাতে কোন সাদৃশ্য নেই।
ইসহাক বিন রাহওয়াই বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সিফাত বর্ণনা করতে গিয়ে তার সিফাতগুলোকে মাখলুকের সিফাতের সমতুল্য মনে করবে, সে মহান আল্লাহর সাথে কুফুরী করবে।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [উস্তায আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী অনূদিত শারহুল আক্বীদা আত-ত্বাহাবীয়া; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪১; মাকতাবাতুস সুন্নাহ (কাটাখালি, রাজশাহী) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: জানুয়ারি, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ (২য় প্রকাশ)]
·
৪. বাংলাদেশ আহলেহাদীস মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সিলেবাসভুক্ত আরেকটি বেসিক ‘আক্বীদাহর গ্রন্থ হলো—‘আল্লামাহ আহমাদ বিন হাজার আলে বূত্বামী আল-বান‘আলী প্রণীত ‘তাত্বহীরুল জিনানি ওয়াল আরকান মিন দারানিশ শির্কি ওয়াল কুফরান’। ‘আল্লামাহ আহমাদ আলে বূত্বামী (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ‘আলিম। তিনি প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম (রাহিমাহুল্লাহ)’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে রিয়াদস্থ মা‘হাদু ইমামিদ দা‘ওয়াহতে শিক্ষকতা করেছেন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘদিন কাতারের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অন্যতম ছাত্র হলেন বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)।
‘আল্লামাহ আহমাদ আলে বূত্বামী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি.] বলেছেন,
وعلى اعتقاد ما وصف الله به نفسه، أو وصفه رسوله، بما أتى في القرآن والأحاديث الصحيحة من غير تمثيل ولا تكييف ولا تعطيل، مضى عصر الرسول والصحابة والتابعين وتابعيهم من الأئمة المعتبرين.
[তাত্বহীরুল জিনানি ওয়াল আরকান মিন দারানিশ শির্কি ওয়াল কুফরান (শাইখ মুহাম্মাদ রাসলানের ভাষ্য-সহ); পৃষ্ঠা: ১৫২-১৫৩; মূল বই দারুল মি‘রাজ কর্তৃক প্রকাশিত এবং নদিয়াতুল কুরআন লাইব্রেরি (বাংলাবাজার, ঢাকা) কর্তৃক দেশীয় সংস্করণে প্রকাশিত; সন: ১৪৩২ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
আমাদের সালাফীদের নিকটে সর্বজনশ্রদ্ধেয় দা‘ঈ, মিরপুর দারুস সুন্নাহ মাদরাসার সম্মাননীয় অধ্যক্ষ, উস্তায আব্দুন নূর মাদানী (হাফিযাহুল্লাহ)’র সম্পাদনায় আমিনুল ইসলাম বিন আজহার অনূদিত ‘তাত্বহীরুল জিনান’ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে উদ্ধৃত কথাগুলোর অনুবাদ এভাবে করা হয়েছে, “আর আল্লাহ তা‘আলা তার সত্ত্বার জন্য যে গুণ নির্ধারণ করেছেন, অথবা রাসূলুল্লাহ ﷺ ক্বুরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে যে গুণ বর্ণনা করেছেন, তা কোন রূপ উপমা ও পদ্ধতি বর্ণনা এবং অস্বীকার করা ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের কর্তব্য। যে ‘আক্বীদাহ্-বিশ্বাসের ওপর রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগ, সাহাবী, তাবে‘ঈ এবং গ্রহণযোগ্য ইমামদের মধ্যে হতে তাদের অনুসারীদের তথা তাবা‘-তাবে‘ঈদের [*] যুগ অতিবাহিত হয়েছে।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [শির্‌ক ও কুফরীর পঙ্কিলতা হতে দৈহিক ও আত্মিক শুদ্ধি; পৃষ্ঠা: ২৭০; শুব্বান রিসার্চ সেন্টার (উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: নভেম্বর, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ]
[*] আমি (সংকলক) বলছি, এখানে “তথা তাবা‘-তাবে‘ঈদের” বাক্যাংশটি অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত। এই অংশটি অনুবাদে না আসাই যৌক্তিক ও বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ এই কথা বলার পর ‘আল্লামাহ আহমাদ আলে বূত্বামী সালাফদের অনুসরণ করেন, এমন কয়েকজন গ্রহণযোগ্য ইমামের নাম বলেছেন, যাঁদের মধ্যে ইমাম বুখারী-মুসলিম-সহ আরও অনেকেই আছেন, যাঁরা তাবি‘ তাবি‘ঈ ছিলেন না।
·
৫. এছাড়াও শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু কুদামাহ আল-মাক্বদিসী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] তাঁর সুপ্রসিদ্ধ ‘আক্বীদাহর গ্রন্থ “লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ”– এর মধ্যে বলেছেন,
وكل ما جاء في القرآن أو صح عن المصطفى عليه السلام من صفات الرحمن، وجب الإيمان به وتلقيه بالتسليم والقبول وترك التعرض له بالرد والتأويل والتشبيه والتمثيل.
“দয়াময় আল্লাহর সিফাত প্রসঙ্গে কুরআনে যা এসেছে এবং নাবী ﷺ থেকে যা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে, তার সবকিছুর প্রতিই ইমান আনা, তা সর্বান্তকরণে গ্রহণ করা এবং সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান, অপব্যাখ্যা, সাদৃশ্যদান ও দৃষ্টান্ত প্রদানের মাধ্যমে সেসবের ব্যাপারে বক্রপথ অবলম্বন না করা ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ (ইমাম ফাওযানের ভাষ্য-সহ); পৃষ্ঠা: ৩৫-৩৭]
উপরিউক্ত পাঁচটি প্রাথমিক ‘আক্বীদাহ-বিষয়ক গ্রন্থের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, “প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন” খ্যাত বক্তা উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব বেসিক ‘আক্বীদাহ সম্পর্কেই পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল নন। আল্লাহুল মুস্তা‘আন। সুপ্রিয় পাঠকের কাছে প্রশ্ন, তিনি যদি তাশবীহের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে জানতেন, তাহলে কি তিনি ভরা মজলিসে বক্তব্য দিতে গিয়ে শ্রোতাদের সামনে তাশবীহের মতো জঘন্য বিদ‘আতী ‘আক্বীদাহ পেশ করতেন? যদি আপনার উত্তর না-বাচক হয়, তাহলে ভাবুন, আপনি কাকে ‘আলিম বলছেন? তাঁর বক্তব্য শুনে ‘আক্বীদাহভ্রষ্ট হওয়া থেকে আপনি কি নিরাপদ? আর আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ-বাচক হয়, তাহলে তো তিনি জেনেশুনে ভুল ‘আক্বীদাহ প্রচারকারী মহাভ্রষ্ট বিবেচিত হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এমন ভ্রষ্ট লোকের দা‘ওয়াত কি আপনার সালাফিয়্যাহর জন্য ক্ষতিকারক নয়?
·
এখানে অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, আপনারা কি চাইছেন, আব্দুর রাযযাক সাহেবের দা‘ওয়াত বন্ধ হয়ে যাক? আমরা জবাবে বলব, আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি, তাঁর দা‘ওয়াত রুদ্ধ হয়ে যাক, তা আমরা চাই না। আমরা চাই, তিনি রীতিমতো ‘আক্বীদাহ, মানহাজ ও উসূল নিয়ে পড়াশোনা করে নিজের সালাফিয়্যাহকে নবায়ন করুন এবং একনিষ্ঠতার বলে বলীয়ান হয়ে নবীন তরুণদের উদ্যমতায় বঙ্গদেশে সালাফী দা‘ওয়াতকে বিকশিত করুন। আল্লাহ তাঁকে সেই কাজ করার তৌফিক দিন।
এ পর্যায়ে অনেকে বলতে পারেন, আব্দুর রাযযাক সাহেবের বক্তব্য কি আদৌ তাশবীহ? তিনি তো স্রেফ ‘এইভাবে’ বলে নিজের দুই হাত দিয়ে আসমান-জমিন ধরে রাখার সিফাত বর্ণনা করেছেন, ‘এইভাবে’ বলে তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দেওয়ার সিফাত বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া হাদীসে তো পাওয়া যায়, নাবীজী ﷺ আল্লাহর শ্রবণ সিফাতকে সাব্যস্ত করতে গিয়ে স্বীয় কর্ণে হাত দিয়েছেন (আবূ দাঊদ, হা/৪৭২৮; সনদ: সাহীহ)।
·
কথাগুলোর জবাব হিসেবে বলতে হয়, জি, তাঁর বক্তব্যে সুস্পষ্ট তাশবীহ রয়েছে। ‘এইভাবে’ বলে আসমান-জমিন দুই হাতে ধরে রাখার সিফাত বর্ণনা করাই তাশবীহ। ‘এইভাবে’ বলে তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দেওয়ার সিফাত বর্ণনা করাই তাশবীহ। পক্ষান্তরে সেই হাদীসটির ব্যাপারে কথা হলো, সেখানে তাশবীহের কোনো প্রমাণ নেই। তাছাড়া ওই হাদীসের ব্যাপারে ‘উলামায়ে সুন্নাহর অবস্থান কী, তা সামনের আলোচনায় আসবে, ইনশাআল্লাহ। আর সালাফদের আদর্শ হলো আল্লাহর কোনো সিফাতকে সৃষ্টির সিফাতের সাথে তাশবীহ দেওয়া যাবে না। কারণ মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ “তাঁর সদৃশ কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরাহ শূরা: ১১]
তিনি আরও বলেছেন, رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا “তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে সবারই রব; সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাক; তুমি কি তাঁর সমগুণসম্পন্ন কাউকে জান?” [সূরাহ মারইয়াম: ৬৫] তিনি আরও বলেছেন, وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ “তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” [সূরাহ ইখলাস: ৪] তিনি অন্যত্র বলেছেন, أَفَمَنْ يَخْلُقُ كَمَنْ لَا يَخْلُقُ ۗ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ “তবে কি যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি তারই মতো যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?” [সূরাহ নাহল: ১৭]
·
‘আক্বলী বা বিবেকগত দলিল দিয়েও বোঝা যায়, আল্লাহর সিফাতের তাশবীহ দেওয়া অন্যায় ও ভ্রান্ত কাজ। কারণ আল্লাহ কীভাবে তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দিবেন, তা আমরা জানি না। আবার উস্তায আব্দুর রাযযাক সাহেব যেভাবে ধরন বর্ণনা করছেন, আল্লাহ সেভাবেই আসমান-জমিন ধরে থাকবেন আর ঝাঁকি দিবেন কিনা সেটাও কেউ বলতে পারে না। তদনুরূপ আল্লাহ কীভাবে পাপী মু’মিনের কাছে তার আমলনামা পেশ করবেন, সেটাও আমরা জানি না।
কিন্তু আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব এসব অজানা বিষয় কীভাবে বুঝে ফেলেছেন, তা আমার বোধগম্য হলো না। তাঁর কথার মধ্যে নাকি সুঁই ঢোকার জায়গা থাকে না! যাঁর কথা এমন অবিমিশ্র খাঁটি, তাঁর কথার মধ্যে এরকম ভয়াবহ ভুল জিনিস যে কোন ফাঁকে ঢুকে পড়ল, সেটাই চিন্তার বিষয়। প্রিয় পাঠক, এত ভাবলে কী চলবে? কেউ আবার বলে ফেলতে পারেন, আল্লাহকে তো আর নিজের সাথে তুলনা দেননি, দুয়েকটি সিফাতে তুলনা দিলেই বুঝি তাশবীহ হয়?! তাই আসুন, জেনে নিই, একটি সিফাতে তাশবীহ দিলেই তাশবীহ হয় কিনা।
·
❏ তাশবীহের প্রকৃতত্ব প্রসঙ্গে ইমামগণের বক্তব্য:
১. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের শাইখ ইমাম ইসহাক্ব বিন রাহওয়াইহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৩৮ হি.] বলেছেন,
إنما يكون التشبيه إذا قال يد كيد أو مثل يد أو سمع كسمع أو مثل سمع. فإذا قال سمع كسمع أو مثل سمع فهذا التشبيه وأما إذا قال كما قال الله تعالى يد وسمع وبصر ولا يقول كيف ولا يقول مثل سمع ولا كسمع فهذا لا يكون تشبيها.
“নিশ্চয় তাশবীহ তখন হয়, যখন কেউ বলে, (আল্লাহর) হাত অমুকের হাতের মতো, কিংবা অমুকের হাতের অনুরূপ, তাঁর শ্রবণ অমুকের শ্রবণের মতো, কিংবা অমুকের শ্রবণের অনুরূপ। সুতরাং কেউ যখন বলবে, তাঁর শ্রবণ অমুকের শ্রবণের মতো, কিংবা অমুকের শ্রবণের অনুরূপ, তখন সেটা তাশবীহ হবে। পক্ষান্তরে যখন কেউ সেরকম কথা বলে, যেরকম কথা মহান আল্লাহ বলেছেন, তাঁর হাত, শ্রবণ ও দৃষ্টি রয়েছে, কিন্তু সে ধরন বর্ণনা করে না, আর একথাও বলে না যে, তাঁর শ্রবণ অমুকের শ্রবণের মতো, কিংবা অমুকের শ্রবণের অনুরূপ, তখন তা তাশবীহ হয় না।” [ইমাম ইসহাক্বের ছাত্র ইমাম তিরমিযী উক্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, দ্রষ্টব্য: সুনানে তিরমিযী, হা/৬৬২]
২. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] তাশবীহ-দানকারী মুশাব্বিহাহ সম্প্রদায় প্রসঙ্গে বলেছেন, من قال : بصر كبصري، ويد كيدي، وقدم كقدمي فقد شبه الله. ليس كمثله شيء وهو السميع البصير “যে ব্যক্তি বলে, (আল্লাহর) দৃষ্টি আমার দৃষ্টির মতো, তাঁর হাত আমার হাতের মতো, তাঁর পা আমার পায়ের মতো, সে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে (সৃষ্টির) তাশবীহ দিল। বস্তুত তাঁর সদৃশ কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [ক্বাদ্বী আবূ ইয়া‘লা আল-হাম্বালী, ইবত্বালুত তা’উয়ীলাত; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৫; ইবনুল বান্না আল-হাম্বালী, আল-মুখতার ফী উসূলিস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৮১]
৩. ইমাম ‘উসমান আদ-দারিমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৮০ হি.] বিদ‘আতী বিশর আল-মারীসীকে রদ করতে গিয়ে বলেছেন,
ادعى المعارض أيضا أن المقري حدَّث عن حرملة بن عمران عن أبي موسى يونس عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي –صلى الله عليه وسلم أنه قرأ: {سَمِيعًا بَصِيرًا} [النساء : 58] فوضع إبهامه على أذنه والتي تليها على عينه. وقد عرفنا هذا من رواية المقري وغيره كما روى المعارض، غير أنه ادعى أن بعض كتبة الحديث ثبتوا به بصرًا بعين كعين وسمعًا كسمع جارحًا مركبًا. فيقال لهذا المعارض: أما دعواك عليهم أنهم ثبتوا له سمعا وبصرا، فقد صدقت. وأما دعواك عليهم أنه كعينٍ وكسمعٍ فإنه كذب ادعيت عليهم؛ لأنه ليس كمثله شيء، ولا كصفاته صفة. وأما دعواك أنهم يقولون: "جارح مركب" فهذا كفر لا يقوله أحد من المسلمين، ولكنا نثبت له السمع والبصر والعين بلا تكييف، كما أثبته لنفسه فيما أنزل من كتابه، وأثبته له الرسول –صلى الله عليه وسلم-، وهذا الذي تكرره مرة بعد مرة: جارح وعضو وما أشبهه، حشو وخرافات، وتشنيع لا يقوله أحد من العالمين: وقد روينا روايات السمع والبصر والعين في صدر هذا الكتاب بأسانيدها وألفاظها عن رسول الله -صلى الله عليه وسلم-، فنقول كما قال، ونعني بها كما عنى والتكييف عنا مرفوع، وذكر الجوارح والأعضاء تكلف منك وتشنيع.
“প্রতিপক্ষ এটাও দাবি করেছে যে, মুক্বরী হাদীস বর্ণনা করেছেন হারমালাহ বিন ‘ইমরান থেকে, তিনি আবূ মূসা ইউনুস থেকে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে, নাবী ﷺ যখন পড়েছেন, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সূরাহ নিসা: ৫৮), তখন তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলকে স্বীয় কর্ণের ওপরে এবং তর্জনী আঙুলকে তাঁর চোখের ওপরে রেখেছেন। আমরা এটা মুক্বরী ও অন্যদের বর্ণনা থেকে জেনেছি, যেমনটি প্রতিপক্ষ বর্ণনা করেছে। তবে সে দাবি করেছে, কতিপয় হাদীস লিপিবদ্ধকারী মুহাদ্দিস এর মাধ্যমে অন্যের দৃষ্টির মতো দৃষ্টি, অন্যের চোখের মতো চোখ এবং অন্যের শ্রবণের মতো শ্রবণসম্পন্ন সুগঠিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গবিশিষ্ট সত্তা সাব্যস্ত করেছেন। এই প্রতিপক্ষকে বলতে হয়, তুমি যে দাবি করেছ, তাঁরা শ্রবণ ও দৃষ্টি সাব্যস্ত করেছেন, এক্ষেত্রে তুমি সত্যই বলেছে। পক্ষান্তরে তুমি যে দাবি করেছ, তাঁরা অন্যের দৃষ্টির মতো দৃষ্টি ও শ্রবণের মতো শ্রবণ সাব্যস্ত করেছেন, এক্ষেত্রে তুমি মিথ্যা বলেছ। কেননা তাঁর সদৃশ কিছুই নেই এবং তাঁর সিফাতসমূহের মতো কোনো সিফাতও নেই।
আর তুমি দাবি করেছ, তাঁরা বলেছেন, তিনি সুগঠিত অঙ্গপ্রত্যঙ্গবিশিষ্ট সত্তা, এটা হলো কুফর, যা কোনো মুসলিম বলতে পারে না। কিন্তু আমরা কোনো ধরন (কাইফিয়্যাহ) বর্ণনা না করে তাঁর শ্রবণ, দৃষ্টি ও চোখ সাব্যস্ত করি। যেমনভাবে তিনি তাঁর নাজিলকৃত কিতাবে নিজের জন্য তা সাব্যস্ত করেছেন এবং রাসূল ﷺ-ও আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করেছেন। আর তুমি যেই কথা একের পর এক বলেই চলেছ, অঙ্গবিশিষ্ট, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রভৃতি, এগুলো হলো বাজে কথা, কল্পকাহিনী এবং কুৎসা, এমন কথা বিশ্বজগতের কেউ বলে না। আমরা শ্রবণ, দর্শন ও চোখের ব্যাপারে এই কিতাবের প্রারম্ভে রাসূল ﷺ থেকে সনদ ও মতন-সহ বেশ কিছু রিওয়াইয়াত বর্ণনা করেছি। তিনি যেভাবে বলেছেন, আমরাও সেভাবেই বলি। তিনি যা উদ্দেশ্য নিয়েছেন, আমরাও সে উদ্দেশ্য নিই। আমাদের নিকটে ধরন বর্ণনার কোনো ব্যাপার নেই। আর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উল্লেখ হলো তোমার বাড়াবাড়ি ও কুৎসা।” [নাক্বদুদ দারিমী, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৬৮৮-৬৮৯]
৪. ইমাম আবূ ইসহাক্ব ইবরাহীম বিন শাক্বিলা আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩৬৯ হি.] বলেছেন, المُشبِّه الذي يقول: وجهٌ كوجهِي، ويَدٌ كَيَدِي “মুশাব্বিহ (তাশবীহ-দানকারী) সেই ব্যক্তি, যে বলে, আমার চেহারার মতো তাঁর চেহারা, আমার হাতের মতো তাঁর হাত।” [ইমাম ইবনু আবী ইয়া‘লা আল-হাম্বালী, ত্বাবাক্বাতুল হানাবিলাহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৩৯]
৫. ইমাম আবূ ‘উসমান আস-সাবূনী আশ-শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৪৯] বলেছেন,
ولا يعتقدون تشبيها لصفاته بصفات خلقه، فيقولون: إنه خلق آدم بيديه، كما نص سبحانه عليه في قوله –عز من قائل-{قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ } [ص : 75]. ولا يحرفون الكلام عن مواضعه، بحمل اليدين على النعمتين، أو القوتين؛ تحريف المعتزلة والجهمية – أهلكهم الله-، ولا يكيفونهما بكيف، أو يشبهونهما بأيدي المخلوقين، تشبيه المشبهة –خذلهم الله-.
“তারা (আহলুস সুন্নাহ) আল্লাহর সিফাতকে সৃষ্টির সিফাতের সাথে সাদৃশ্যদানের (তাশবীহের) ‘আক্বীদাহ পোষণ করে না। তারা বলে, তিনি স্বীয় দুই হাতে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। যেমনটি স্বয়ং আল্লাহ তদীয় বাণীতে উল্লেখ করেছেন, ‘তিনি বললেন, হে ইবলীস, আমি যাকে নিজ দুই হাতে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোকে কীসে বাধা দিল?’ (সূরাহ সাদ: ৭৫) তারা জাহমিয়্যাহ ও মু‘তাযিলাহ সম্প্রদায়ের মতো আল্লাহর কালামকে তার যথাস্থান থেকে (সরিয়ে) বিকৃত করে না, একথা বলে যে, দুই হাত মানে দুটি অনুগ্রহ, অথবা দুটি শক্তি। আল্লাহ তাদেরকে (জাহমিয়্যাহ ও মু‘তাযিলাহ) ধ্বংস করুন। আবার তারা উক্ত দুই হাতের ধরন বর্ণনা করে না, কিংবা মুশাব্বিহাহ সম্প্রদায়ের মতো আল্লাহর দুই হাতকে সৃষ্টিকুলের হাতের সাথে সাদৃশ্য দেয় না। আল্লাহ তাদেরকে (মুশাব্বিহাহ) লাঞ্ছিত করুন।” [‘আক্বীদাতুস সালাফ ওয়া আসহাবিল হাদীস, পৃষ্ঠা: ৩৭ (তাহক্বীক্ব: আবুল ইয়ামীন আল-মানসূরী); পৃষ্ঠা: ১৬১-১৬২ (তাহক্বীক্ব: নাসির আল-জুদাই‘)]
৬. ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন,
مع أن مقالة المشبهة الذين يقولون : يد كيدي وقدم كقدمي وبصر كبصري مقالة معروفة، وقد ذكرها الأئمة كيزيد بن هارون، وأحمد بن حنبل، وإسحاق بن راهويه، وغيرهم، وأنكروها وذمّوها، ونسبوها إلى مثل داود الجواربي البصري وأمثاله.
“অথচ মুশাব্বিহাহ সম্প্রদায়, যারা বলে, আমার হাতের মতো হাত, আমার পায়ের মতো পা, আমার দৃষ্টির মতো দৃষ্টি, তাদের বক্তব্য খুবই প্রসিদ্ধ। ইমামগণ এই বক্তব্য উল্লেখ করেছেন, যেমন ইয়াযীদ বিন হারূন, আহমাদ বিন হাম্বাল, ইসহাক্ব বিন রাহওয়াইহ প্রমুখ। আর তাঁরা এই কথার প্রতিবাদ করেছেন, নিন্দা করেছেন এবং দাউদ আল-জাওয়ারিবী আল-বাসরী ও তার মতো ব্যক্তিদের দিকে এই কথাকে সম্পৃক্ত করেছেন।” [দার’উ তা‘আরুদ্বিল ‘আক্বলি ওয়ান নাক্বল, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৪৫]
৭. হাফিয যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৪৮ হি.] বলেছেন, فإن التشبيه إنما يقال: يدٌ كيدنا “নিশ্চয় তাশবীহ হয় স্রেফ একথা বললেই যে, আমাদের হাতের মতো (আল্লাহর) হাত।” [আল-আরবা‘ঈন ফী সিফাতি রব্বিল ‘আলামীন, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১০৪]
সুপ্রিয় পাঠক, ইমামগণের উপরিউক্ত বক্তব্যগুলো থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহ এভাবে তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দিবেন—এ ধরনের কথা বলা সুস্পষ্ট তাশবীহ। তদনুরূপ আল্লাহ এইভাবে আসমান-জমিন ধরে রাখবেন বলে ধরন বর্ণনা করাও সুউদ্ভাসিত তাশবীহ। আর আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব এই কাজটিই করেছেন। এখন আমাদের জানা দরকার, তাশবীহ দেওয়ার বিধান কী এবং ইমামগণ এর ভয়াবহতা প্রসঙ্গে কী বলেছেন।
·
❏ তাশবীহের বিধান ও ইমামগণের বক্তব্য:
আল্লাহর সিফাতের তাশবীহ দেওয়া কুফর। যেহেতু এর ফলে সরাসরি কুরআনের একাধিক আয়াতকে প্রত্যাখান করা হয়। আমরা ইতঃপূর্বে কিছু আয়াত উল্লেখ করেছি। এখন এ ব্যাপারে কয়েকজন ইমামের বক্তব্য তুলে ধরছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
১. শাওয়ায বিন ইয়াহইয়া আল-ওয়াসিত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, كنت قاعدًا عند يزيد بن هارون، فجاء رجل فقال: يا أبا خالد، ما تقول في الجهمية؟ قال: يُستتابون، إن الجهمية غلت ففرغت في غلوها إلى أن نَفَت، وإنّ المشبهة غلت ففرغت في غلوها حتى مثلت. فالجهمية يستتابون، والمشبهة: كذا. رماهم بأمر عظيم “আমি একদা ইয়াযীদ বিন হারূনের (মৃত: ২০৬ হি.) নিকট বসে ছিলাম। তখন এক লোক এসে বলল, হে খালিদের পিতা, জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, ‘তাদেরকে তওবা করাতে হবে (যেহেতু তারা কাফির হয়ে গেছে)। জাহমীরা বাড়াবাড়ি করেছে, এমনকি বাড়াবাড়ি করতে করতে (আল্লাহর সিফাতকে) অস্বীকার করেছে। আর মুশাব্বিহাহ সম্প্রদায় বাড়াবাড়ি করেছে, এমনকি বাড়াবাড়ি করতে করতে (আল্লাহর সিফাতের) সাদৃশ্য বা উপমা দিয়েছে। জাহমীদেরকে তওবা করাতে হবে। অনুরূপভাবে মুশাব্বিহাহদেরকেও তওবা করাতে হবে।’ তিনি তাদের ব্যাপারে বড়োই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।” [ইমাম লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৯৩৪; অধ্যায়: মুশাব্বিহাহ সম্প্রদায়কে কাফির বলা প্রসঙ্গে যা বর্ণিত হয়েছে]
২. ইমাম নু‘আইম বিন হাম্মাদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২২৮ হি.] বলেছেন, من شبه الله بشيء من خلقه فقد كفر، ومن أنكر ما وصف الله به نفسه فقد كفر، فليس ما وصف الله به نفسه ورسوله تشبيه “যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির কোনো কিছুর সাথে সাদৃশ্য দিল, সে কাফির হয়ে গেল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের সত্তাকে যেসব গুণ দ্বারা বিশেষিত করেছেন এবং তাঁর রাসূল ﷺ আল্লাহর যেসব গুণ বর্ণনা করেছেন, তাতে কোনো সাদৃশ্য নেই।” [প্রাগুক্ত; আসার নং: ৯৩৬]
৩. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের শাইখ ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াইহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৩৮ হি.] বলেছেন, من وصف الله فشبه صفاته بصفت أحد من خلق الله فهو كافر بالله العظيم “যে ব্যক্তি আল্লাহর সিফাত বর্ণনা করতে গিয়ে তার সিফাতগুলোকে কোনো সৃষ্টির সিফাতের সাথে তাশবীহ (সাদৃশ্য) দিবে, সে মহান আল্লাহর সাথে কুফরিকারী কাফির।” [প্রাগুক্ত; আসার নং: ৯৩৭]
৪. ইমাম ইবনুল বান্না আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৪৭১ হি.] বলেছেন, وأما المشبهة والمجسمة فهم الذين يجعلون صفات الله -عز وجل- مثل صفات المخلوقين، وهم كفار “মুশাব্বিহাহ ও মুজাসসিমাহ সম্প্রদায় তারা, যারা আল্লাহর সিফাতগুলোকে সৃষ্টিকুলের সিফাতের সাথে তুলনা দেয়। তারা হলো কাফির সম্প্রদায়।” [ইবনুল বান্না (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুখতার ফী উসূলিস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ৮১]
৫. ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, فمن قال : إن علم الله كعلمي أو قدرته كقدرتي أو كلامه مثل كلامي أو إرادته ومحبته ورضاه وغضبه مثل إرادتي ومحبتي ورضائي وغضبي أو استواءه على العرش كاستوائي أو نزوله كنزولي أو إتيانه كإتياني ونحو ذلك فهذا قد شبه الله ومثله بخلقه تعالى الله عما يقولون وهو ضال خبيث مبطل بل كافر “যে ব্যক্তি বলে, নিশ্চয় আল্লাহর ‘ইলম আমার ‘ইলমের মতো, অথবা তাঁর ক্ষমতা আমার ক্ষমতার মতো, অথবা তাঁর কথা আমার কথার মতো, অথবা তাঁর ইচ্ছা, ভালোবাসা, সন্তুষ্টি ও ক্রোধ আমার ইচ্ছা, ভালোবাসা, সন্তুষ্টি ও ক্রোধের মতো, কিংবা আরশের ওপর তাঁর আরোহণ (ঊর্ধ্বে গমন) আমার আরোহণের মতো, অথবা তাঁর অবতরণ আমার অবতরণের মতো, কিংবা তাঁর আসা আমার আসার মতো ইত্যাদি, সে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য ও উপমা দিল। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে রয়েছেন। আর যে ব্যক্তি এমন কথা বলে, সে ভ্রষ্ট, খবিস ও বাতিলপন্থি, বরং সে কাফির।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৪৮২-৪৮৩]
৬. মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস অনুষদের প্রাক্তন ডিন এবং ‘আক্বীদাহ বিভাগের প্রধান, বিগত শতাব্দীর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ আমান বিন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৬ হি.] বলেছেন, لكن نزوله كنزولنا ومجيئه كمجيئنا واستواءه كاستوائنا : هذا يسمى تشبيها، والمشبه كافر بإجماع السلف “কিন্তু এরকম বলা যে, তাঁর (আল্লাহর) অবতরণ আমাদের অবতরণের মতো, তাঁর আগমন আমাদের আগমনের মতো, তাঁর আরোহণ আমাদের আরোহণের মতো, এটাকে তাশবীহ বলা হয়। আর তাশবীহ-দানকারী মুশাব্বিহ সালাফদের ইজমা‘ তথা মতৈক্যের ভিত্তিতে কাফির।” [দ্র.: https://youtu(ডট)be/KKr2SXKyf90.]
৭. মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আক্বীদাহ বিভাগের সাবেক শিক্ষক, মাসজিদে নাবাউয়ীর সম্মানিত মুদার্রিস, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ‘আব্দুল মুহসিন আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৮২ হি.] বলেছেন, والممثل هو الذي يقول: يد الله كأيدينا وسمعه كسمعنا وبصره كبصرنا وصفاته كصفاتنا، تعالى الله عن ذلك، وتمثيل صفات الله بصفات المخلوقين كفر بالله ناقل من ملة الإسلام. لا يكون مؤمنا بالله من يمثل الله بصفات المخلوقين. بل قال السلف –رحمهم الله– : الممثل يعبد صنما “(আল্লাহর সিফাতে সাদৃশ্য-দানকারী) মুমাসসিল সে, যে বলে, আল্লাহর হাত আমাদের হাতের মতো, তাঁর শ্রবণ আমাদের শ্রবণের মতো, তাঁর দৃষ্টি আমাদের দৃষ্টির মতো, তাঁর সিফাত আমাদের সিফাতের মতো। আল্লাহ এ থেকে বহু ঊর্ধ্বে রয়েছেন। আল্লাহর সিফাতকে সৃষ্টিকুলের সিফাতের সাথে সাদৃশ্য দেওয়া হলো আল্লাহর সাথে কুফরি, যেই কুফরি ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সৃষ্টিকুলের সিফাতের সাদৃশ্য দেয়, সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মু’মিন নয়। বরং সালাফগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেছেন, সাদৃশ্য-দানকারী মূর্তির পূজা করে।” [দ্র.: https://youtu(ডট)be/DtSA5bkCsP4.]
·
❏ সিফাত বর্ণনা করার সময় হাত দিয়ে ইশারা করার বিধান:
রুটির বক্তব্যে উস্তায আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব ‘আল্লাহ রুটি বানাবেন’ বলে নিজের দুই হাত দিয়ে রুটি বানানোর ধরন বর্ণনা করেছেন। অন্য বক্তব্যে ‘এইভাবে হাতে ঝাঁকি মেরে বলবেন’ বলে দুই হাতে আসমান-জমিন ধরে ঝাঁকি মারার ধরন বর্ণনা করেছেন। আবার অন্য বক্তব্যে ‘এইভাবে তিন অঞ্জলি মানুষ জান্নাতে দিবেন’ বলে অঞ্জলি দিয়ে কিছু দেওয়ার ধরন বর্ণনা করেছেন। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ। অথচ আল্লাহর সিফাত বর্ণনা করার সময় হাত বা যে কোনো অঙ্গ দিয়ে ধরন বর্ণনা করা না-জায়েজ। কেননা এ ধরনের কর্ম থেকেই তাশবীহ দেওয়ার গুপ্তদ্বার উন্মোচিত হয়।
আব্দুর রাযযাক সাহেব যে স্রেফ এই বক্তব্যেই নিজের অঙ্গ নাড়িয়ে আল্লাহর সিফাতের ধরন বর্ণনা করেছেন, ব্যাপারটা তা নয়। তিনি আরও অনেক বক্তব্যে এরকম করেছেন। যেমন আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব জাহান্নামের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, “(জাহান্নাম) যেমন বলবে, ‘আর কি কিছু আছে?’ তখন রাব্বুল ‘ইযযাত তাঁর পাকে ঢুকিয়ে দিবেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পাকে জাহান্নামে ঢুকিয়ে দিবেন।” এই কথা বলতে গিয়ে আব্দুর রাযযাক সাহেব দুইবার তার পা বক্তব্যের স্টেজ থেকে উত্তোলন করে ঢুকিয়ে দেওয়ার অঙ্গভঙ্গি করেছেন! [দ্র.: https://youtu(ডট)be/LBuIbyc3H0I (২৯ মিনিট ১ সেকেন্ড থেকে ২৯ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত)]
কিছুদূর এগিয়ে তিনি বলেছেন, “আমার প্রতিপালক বিচারের মাঠে জাহান্নাম থেকে তিন অঞ্জলি মানুষ বের করে জান্নাতে দিবেন।” এই কথা তিনবার বলতে গিয়ে আব্দুর রাযযাক সাহেব তিনবারই নিজের দুই হাত দিয়ে অঞ্জলি তৈরি করেছেন এবং একদিক থেকে অঞ্জলি ভরে আরেকদিকে দেওয়ার অঙ্গভঙ্গি করেছেন! [দ্র.: প্রাগুক্ত; (৩১ মিনিট ১০ সেকেন্ড থেকে ৩১ মিনিট ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত)] এভাবে নিজের অঙ্গ দিয়ে ইশারা করে উস্তায বিন ইউসুফ সাহেব যে কত জায়গায় আল্লাহর সিফাত বয়ান করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। আমি নিজেই প্রায় দশ জায়গায় তাঁকে এরকম কাজ করতে দেখেছি।
সম্মাননীয় পাঠক, আসুন, এটা যে কত ভয়াবহ কাজ, তা আমরা ইমামু দারিল হিজরাহ ও ইমামু আহলিস সুন্নাহর বক্তব্য থেকে জেনে নিই।
১. ইমামু দারিল হিজরাহ মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন, من وصف شيئا من ذات الله مثل قوله {وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ} وأشار بيده إلى عنقه ومثل قوله {وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ} فأشار إلى عينيه وأذنيه أو شيئا من بدنه قطع ذلك منه لأنه شبه الله بنفسه ثم قال مالك أما سمعت قول البراء حين حدث أن النبي صلى الله عليه وسلم قال "لا يضحى بأربع من الضحايا" وأشار البراء بيده كما أشار النبي صلى الله عليه وسلم بيده قال البراء ويدي أقصر من يد رسول الله صلىالله عليه وسلم فكره البراء أن يصف رسول الله صلى الله عليه وسلم إجلالا له وهو مخلوق فكيف الخالق الذي ليس كمثله شيء “যে ব্যক্তি আল্লাহর সত্তার কোনো সিফাত বর্ণনা করে, যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘ইহুদিরা বলেছে, আল্লাহর হাত আবদ্ধ (ব্যয়কুণ্ঠ)।’ (সূরাহ মা’ইদাহ: ৬৪) আর সে তদীয় হাত নিজের ঘাড়ের দিকে নিয়ে ইশারা করে, তদনুরূপ বলে, আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরাহ শূরা: ১১) আর স্বীয় চক্ষুদ্বয় ও কর্ণদ্বয় বা শরীরের কোনো অংশের দিকে ইশারা করে, তার সেই অঙ্গ কর্তিত হবে। কেননা সে নিজেকে দিয়ে আল্লাহর সাদৃশ্য দিয়েছে। এরপর মালিক বলেছেন, তুমি কি বারা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কথা শোননি? তিনি যখন হাদীস বর্ণনা করেছেন, নাবী ﷺ বলেছেন, ‘চারটি প্রাণী দিয়ে কুরবানি করা যাবে না’, আর বারা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করেন, যেভাবে নাবী ﷺ ইশারা করেছেন। তখন তিনি বলে ওঠেন, আমার হাত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাত থেকে ছোটো। ফলে তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি সম্মানার্থে তাঁর সিফাত বর্ণনা করতে অপছন্দ করেন। অথচ তিনি ﷺ সৃষ্টি। তাহলে স্রষ্টার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কেমন হবে, যাঁর সদৃশ কিছুই নেই?!” [ইবনু ‘আব্দিল বার্র আল-মালিকী, আত-তামহীদ, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৪৫-১৪৬]
২. আহমাদ বিন ইয়া‘কূব বিন যাযান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, بلغني أن أحمد بن حنبل قرأ عليه رجل : وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ. قال ثم أومأ بيده، فقال له أحمد: قطعها الله قطعها الله، ثم حرد وقام “আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, (ইমামু আহলিস সুন্নাহ) আহমাদ বিন হাম্বালের (মৃত: ২৪১ হি.) নিকটে এক ব্যক্তি এই আয়াত পড়ল, ‘তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করেনি; কেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমণ্ডলী ভাঁজ করা থাকবে তাঁর ডান হাতে (সূরাহ যুমার: ৬৭)।’ এরপর সে তার হাত দিয়ে ইশারা করল। এ দেখে আহমাদ বলে ওঠলেন, ‘আল্লাহ ওই হাতকে কেটে নিন, আল্লাহ ওই হাতকে কেটে নিন।’ এরপর তিনি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে (মজলিস থেকে) উঠে পড়লেন।” [ইমাম লালাকাঈ (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৭৩৯; অধ্যায়: কিতাব ও সুন্নাহ থেকে আল্লাহর চেহারা, দুই চোখ ও দুই হাত প্রভৃতি সিফাতের প্রমাণ]
·
প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে রাসূল ﷺ যে কিছু সিফাত বর্ণনা করার সময় হাত দিয়ে ইশারা করেছেন? এক্ষেত্রে বলতে হবে, রাসূল ﷺ যেসব সিফাতের ক্ষেত্রে ইশারা করেছেন, সেগুলোর কথা স্বতন্ত্র। তথাপি যদি আশঙ্কা হয়, জনসাধারণ এর ফলে তাশবীহের মধ্যে পতিত হতে পারে, তাহলে এরকম না করাই বাঞ্ছনীয়।
৩. সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,
لا نحدِّثُ العامة بشيء لا تبلغه عقولُهم ؛ لئلا تحصُلَ الفتنة ويتضرَّرَ في عقيدته وفي عَمَلِهِ . ومِن ذلك : ما يكثُر السُّؤال عنه من بعض الطَّلبة ، وهو : أنه ثَبَتَ عن النبيِّ عليه الصَّلاةُ والسَّلامُ أنه لما قرأ قوله تعالى : ( إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا ) أنَّه وَضَعَ إبهامَه وسبَّابته على أُذُنِهِ وعلى عينِهِ . فقال : هل يجوز أن أفعل مثل هذا؟ فجوابنا على هذا أنْ نقول : لا تفعلْه أمامَ العامَّة ؛ لأن العامَّة ربَّما ينتقلون بسرعة إلى اعتقادِ المشابهة والمماثلة ؛ بخلاف طالب العلم ، ثم هذا فِعْلٌ مِن الرسول عليه الصَّلاةُ والسَّلامُ وليس أمراً ، لم يقل : ضعوا أصابعكم على أعينكم وآذانكم ، حتى نقول : لا بُدَّ مِن تنفيذِ أمْرِ الرَّسول ، بل قَصَدَ بهذا تحقيق السَّمع والبصر ، لا التعبُّد في ذلك فيما يظهر لنا ، فلماذا نلزم أنفسنا ونكرِّر السؤال عن هذا من أجل أن نقوله أمام العامَّة ؟ فالحاصلُ : أنه ينبغي لطالب العِلم أن يكون معلِّماً مربيًّا ، والشيءُ الذي يُخشى منه الفتنة ؛ وليس أمراً لازماً لا بُدَّ منه ، ينبغي له أن يتجنَّبه . وأشدُّ مِن ذلك ما يفعله بعضُ النَّاسِ ، حين يسوق حديث : ( إن قلوبَ بني آدم بين أصبعين مِن أصابعِ الرَّحمن ) فيذهب يُمثِّل ذلك بضمِّ بعض أصابعه إلى بعض ، مُمَثِّلاً بذلك كون القلب بين أصبعين من أصابع الله ، وهذه جرأة عظيمة ، وافتراءٌ على رسول الله صلّى الله عليه وسلّم ، فإنه لم يمثِّل بذلك . وما الذي أدرى هذا المسكين المُمثِّلُ أن كون القلوب بين أصبعين من أصابع الله على هذا الوصف ؟ فليتَّقِ الله ربَّه ولا يتجاوز ما جاء به القرآنُ والحديثُ.
“আমরা সাধারণ জনগণের সামনে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব না, যা তাদের মোটেই বোধগম্য হয় না। যাতে করে ফিতনা সৃষ্টি না হয় এবং সাধারণ মানুষ তার ‘আক্বীদাহ ও আমলে ক্ষতির মধ্যে নিপাতিত হয়। কতিপয় ছাত্র একটি বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন করছে, যা এর অন্তর্ভুক্ত। ব্যাপারটি এই যে, নাবী ﷺ থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি যখন এই আয়াত পড়েন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন, গচ্ছিত বিষয় (আমানাত) তার অধিকারীকে অর্পণ করো, এবং যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর তখন ন্যায় বিচার করো; অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দান করছেন; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (সূরাহ নিসা: ৫৮)।’ তখন তিনি ﷺ তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী স্বীয় কান ও চোখের ওপর রাখেন। প্রশ্ন করা হচ্ছে, এমন কাজ কি আমার জন্য করা জায়েজ হবে?
এক্ষেত্রে আমাদের জবাব হলো, তুমি সাধারণ জনগণের সামনে এই কাজ কোরো না। কেননা সাধারণ জনগণ হয়তো দ্রুততার সাথে তাশবীহ ও তামসীলের (সাদৃশ্যদানের) ‘আক্বীদাহয় স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। তবে তালিবুল ‘ইলমের কথা স্বতন্ত্র। তাছাড়া এটা রাসূল ﷺ এর কর্ম, আদেশ নয়। তিনি একথা বলেননি যে, তোমরা তোমাদের আঙুলগুলোকে তোমাদের চক্ষু ও কানের ওপর রাখ, যার ফলে আমাদেরকে বলতে হচ্ছে, অবশ্যই রাসূলের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। বরং তিনি এই কাজের মাধ্যমে আল্লাহর শ্রবণ ও দৃষ্টিকে (গুরুত্ব দিয়ে) সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্য করেছেন। আমাদের জানামতে তিনি এর মাধ্যমে ইবাদতের উদ্দেশ্য করেননি।
সুতরাং কেন আমরা (এটাকে) নিজেদের ওপর জরুরি করে নিব, আর বারবার এ সম্পর্কে প্রশ্ন করব, যাতে আমরা জনসাধারণের সামনে বিষয়টি বলতে বাধ্য হই? মোটকথা, তালিবুল ‘ইলমের জন্য একজন প্রতিপালনে অভিজ্ঞ শিক্ষক হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে বিষয় থেকে ফিতনার আশঙ্কা হয়, আর তা আবশ্যক বিষয়ও নয়, তা পরিত্যাগ করাই তার জন্য বাঞ্ছনীয় হবে। এরচেয়ে ভয়াবহ বিষয় সেটা, যা কতিপয় লোক করে, যখন তারা এই হাদীস বর্ণনা করে।
নাবী ﷺ বলেছেন, ‘নিশ্চয় বনু আদমের অন্তরগুলো দয়াময় আল্লাহর আঙুলসমূহের মধ্য থেকে দুটি আঙুলের মাঝে রয়েছে।’ এই হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে তারা নিজেদের আঙুলগুলোর কতিপয়কে অপর কতিপয়ের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে এই সিফাতের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে। তারা এর মাধ্যমে আল্লাহর আঙুলগুলোর মধ্য থেকে দুটি আঙুলের মাঝে অন্তর থাকার ব্যাপারটি উদাহরণ দিয়ে বর্ণনা করে। এটি চরম ধৃষ্টতা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ওপর মিথ্যারোপ। কেননা তিনি ﷺ এভাবে উপমা (উদাহরণ/দৃষ্টান্ত) দেননি। এভাবে উপমাদানকারী মিসকীন কীভাবে জানল যে, আল্লাহর আঙুলসমূহের মধ্য থেকে দুটি আঙুলের মাঝে অন্তরসমূহ এভাবে রয়েছে?! সে যেন (কথা ও কাজে) স্বীয় প্রভুকে ভয় করে এবং কুরআন-হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি না করে!” [ইমাম ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আশ-শারহুল মুমতি‘, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৮৩-৮৪]
·
৪. সৌদি আরবের ফতোয়া প্রদানকারী স্থায়ী কমিটি এবং সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
السؤال : هل تجوز الإشارة باليد عند ذكر أحاديث الصفات مثل حديث : القلوب بين أصبعين من أصابع الرحمن؟
الجواب : لا ، الذي لم يرد لا يقال . الصفات توقيفية ، ولا يجوز أن تُحدِث شيئا من عندك وتقول هذا توضيح ، لا . توردها كما جاءت ، ولكن الحديث الذي أشار الرسول صلى الله عليه وسلم ( سميع بصير ) فأشار فيه إلى سمعه وبصره ، فهذا خاص بهذا الحديث فتأتي به كما ورد ، أما أنك تزيد شيئا من عندك : لا.
প্রশ্ন: “সিফাতের হাদীসসমূহ আলোচনা করার সময় যেমন ‘অন্তরগুলো দয়াময় আল্লাহর আঙুলসমূহের মধ্যে দুটি আঙুলের মাঝে রয়েছে’—প্রভৃতি হাদীস বলার সময় হাত দিয়ে ইশারা করা কি জায়েজ?”
উত্তর: “না। যা বর্ণিত হয়নি, তা বলা যাবে না। আল্লাহর সিফাতসমূহ তাওক্বীফিয়্যাহ (সম্পূর্ণরূপে কুরআন-হাদীসের দলিলনির্ভর)। তুমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু উদ্ভাবন করবে, আর বলবে, এটা ব্যাখ্যা—এরকম করা জায়েজ হবে না। না (এমন কোরো না)। তুমি স্রেফ ততটুকুই বল, যতটুকু বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রাসূল ﷺ যে হাদীসে ইশারা করেছেন, যেমন ‘আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ বলে তিনি নিজের শ্রবণ ও দর্শনের দিকে ইশারা করেছেন, এটা এই হাদীসের সাথে খাস। তুমি সেই হাদীস সেভাবেই বলবে, যেভাবে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে তুমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বৃদ্ধি করবে, তা হবে না।” [দ্র.: www(ডট)alfawzan(ডট)af(ডট)org(ডট)sa/sites/default/files/1318.mp3.]
·
সম্মাননীয় পাঠক, ইমামগণের বক্তব্য থেকে এ ব্যাপারটি উদ্ভাসিত হয়ে গেল যে, আল্লাহর সিফাতের তাশবীহ দেওয়া ভয়াবহ কুফরি ও গুনাহের কাজ। অথচ আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ সাহেব অবলীলায় জনসাধারণের মাঝে এরকম কুফরি কাজের চর্চা করেছেন। এটা এমন ভুল, যা থেকে তওবা করে জাতির সামনে ভুল স্বীকার করতে হবে এবং এ বিষয়ে সঠিক ‘আক্বীদাহ কী—তা জনগণকে জানিয়ে দিতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে এ নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়।
আমাদের জানামতে, সর্বপ্রথম ‘মাইনুদ্দীন’ ভাই—যাঁর সাথে আমাদের মানহাজগত বিরোধ আছে, কিন্তু তিনি আসমা ও সিফাতের ‘আক্বীদাহয় আসারী—এই ভুল তুলে ধরেন। আশ্চর্য হলেও সত্য, আমরা কতিপয় আহলেহাদীস ভাইয়ের কর্মকাণ্ড দেখে যারপরনাই বিস্মিত হই। এই ভাইয়েরা না জেনে না বুঝে এরকম জঘন্য কুফরি ‘আক্বীদাহকে ডিফেন্ড করছিলেন! সুবহানাল্লাহ! গগনপটে রোদ ঝলঝলে সূর্যের মতো স্পষ্ট তা‘আসসুব, যাকে আমরা বাংলায় গোঁড়ামি বলে থাকি। আশ্চর্য! আমাদের কাছে সালাফদের ‘আক্বীদাহ মূখ্য নয়, আমাদের কাছে মূখ্য বিষয় আমাদের অনুসৃত দা‘ঈ বা শাইখের মতের পৃষ্ঠপোষকতা। সেই মত ভুল হোক কিংবা সঠিক হোক, তা দেখার বিষয় নয়। ইয়া সুবহানাল্লাহ! এ তো সুউদ্ভাসিত ভ্রষ্টতা! আল্লাহ আমাদেরকে এমন জ্বলজ্যান্ত তা‘আসসুব থেকে রক্ষা করুন।
·
মাইনুদ্দীন ভাইয়ের পোস্ট ও কমেন্টবক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি উস্তায আব্দুর রাযযাক সাহেবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ ভাইয়াকে জানানো হয়। কিন্তু তাঁর এক্সপ্রেশনটাও অবাক করার মতো। তিনি যা বলেন, তার সারমর্ম হচ্ছে—এই ভুল জনগণের সামনে না প্রকাশ করে তাঁকে গোপনে বলা উচিত ছিল, তাঁর পিতা এর মাধ্যমে মোটেও তাশবীহ করেননি, বরং তাঁর পিতা শীঘ্রই এ ব্যাপারে আসারী ‘আক্বীদাহ কী হবে, তা জানিয়ে বক্তব্য দিবেন। ঘটনা প্রায় বছর দেড়েক আগের। কিন্তু ভুল স্বীকারোক্তিমূলক কোনো ভিডিয়ো তো আমাদের চোখেই পড়েনি, উল্টো এরকম শুনেছি যে, আব্দুল্লাহ ভাইয়া কোনো এক চ্যাটগ্রুপে এই কাজকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন! আল্লাহর পানাহ, মা‘আযাল্লাহ।
পরন্তু আব্দুর রাযযাক সাহেব বিভিন্ন বক্তব্যে অসংখ্যবার বলেছেন, “আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, আমি আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ নব্বই সাল থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রয়োজনীয় বাক্য বলিনি।... নব্বই সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমি কোনো মাযহাবের বিরুদ্ধে কথা বলিনি, আমার বলা কথা এ যাবৎ কোনোদিন ফেরত নেওয়া লাগেনি।” [দ্র.: https://youtu(ডট)be/pkQJvgjO7UQ.] চিন্তা করুন, যে মানুষ এত্তবড়ো দাবি করেন যে, তিনি কোনোদিন বক্তব্য দিতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় বাক্য বলেননি, সেই তিনিই আল্লাহর সিফাতের ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক বাক্য প্রয়োগ করেছেন। এ ধরনের বড়ো বড়ো দাবি দা‘ওয়াতী ময়দানে করা এবং দাবি অনুযায়ী আমল না করা মূলত দাম্ভিকতা ও আত্মগর্বের শামিল। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেন, এরকম ভ্রান্তির নিরসন কখনোই গোপনে হওয়া উচিত নয়। এগুলো জনগণের দ্বীন-ধর্ম-‘আক্বীদাহর বিষয়। হয় বক্তা জনগণের সামনে ভুল স্বীকার করে সঠিকটা জানিয়ে দিবেন, অন্যথায় তাকে খণ্ডন করে সঠিক ‘আক্বীদাহ মানুষকে জানানো ফরজে কিফায়াহ (যে ফরজ কতিপয় আদায় করলে বাকিদের ওপর থেকে আদায় না করার পাপ নিস্ক্রীয় হয়ে যায়)। যা আমরা ইতঃপূর্বে ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্যে জেনেছি।
·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...