Tuesday 17 September 2019

বাবা-মা’দের প্রতি জরুরি সতর্ক বার্তা এবং একটি জিজ্ঞাসা


“বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা গান-বাজনা করলে তাদের কবরের আজাব বৃদ্ধি পায়” এ কথা কি সঠিক?
▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা জানি, ইসলামে গান-বাজনা হারাম। এখন প্রশ্ন হল, ”বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যদি গান-বাজনায় লিপ্ত হয় তাহলে কবরে বাবা-মার উপর শাস্তি বৃদ্ধি যায়” এ কথাটি কি সত্য?
উত্তর:
ইসলামে গান-বাজনা করা বা শোনা হারাম। এ দ্বারা অন্তর কলুষিত হয়, মনের সুপ্ত বাসনা (কু প্রবৃত্তি) জাগ্রত হয়, অন্তর রোগাক্রান্ত হয় ফলে ধীরে ধীরে অন্তরে , কুরআন ও হাদিসের বক্তব্য ও উপদেশপূর্ণ ভালো কথার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় এবং কুরআন তিলাওয়াত শুনার আগ্রহ হারিয়ে যায় ইত্যাদি। সুতরাং গানবাজনা থেকে দূরে থাকা জরুরি।
তবে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা যদি গান-বাজনা করে তাহলে তাদের কবরে শাস্তি বৃদ্ধি পায়-এ কথা ঠিক নয়।
অবশ্য যদি বাবা-মা দুনিয়াতে বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তানকে গানবাজনা শিক্ষার ব্যবস্থা করে যায় বা তাদেরকে এতে বাধা না দেয় বা তাদেরকে দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা না দিয়ে থাকে তাহলে বাবা-মার কবরে থেকেও সন্তানের সকল পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের ভাগীদার হবে। কারণ তারাই সন্তানের বিপথে যাওয়ার পেছনে মূল দায়ী।
তাদের দায়িত্ব ছিলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে গড়ে তোলা, বাল্যকাল থেকে হারাম, অশ্লীল, গান-বাজনা ইত্যাদি আল্লাহর নাফরমানি মূলক কার্যক্রম থেকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে নি। আল্লাহ তাআলা বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
”হে ইমানদারগণ, তোমারা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গ (স্ত্রী-সন্তানদেরকে) জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” (সূরা তারহীম: ৬)
অতএব তারা সন্তানদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ না নিলে সন্তানদের পাপাচারিতা ও অন্যায়-অপকর্মের দায়ভার তাদেরকেও বহন করতে হবে। এমন কি তারা মারা যাওয়ার পরও সন্তানের গুনাহের একটা অংশ তাদের আমলনামায় জমা হতে থাকবে। (আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ سَنَّ سُنَّةَ خَيْرٍ فَاتُّبِعَ عَلَيْهَا فَلَهُ أَجْرُهُ وَمِثْلُ أُجُورِ مَنِ اتَّبَعَهُ غَيْرَ مَنْقُوصٍ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ سَنَّ سُنَّةَ شَرٍّ فَاتُّبِعَ عَلَيْهَا كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهُ وَمِثْلُ أَوْزَارِ مَنِ اتَّبَعَهُ غَيْرَ مَنْقُوصٍ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئًا ‏"
"কেউ ভালো কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে সে তার নিজের সাওয়াবও পাবে এবং তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, তবে তাদের সাওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। আবার কেউ মন্দ কাজের প্রচলন করলে এবং তার অনুসরণ করা হলে তার উপর নিজের গুনাহ বর্তাবে উপরন্তু তার অনুসারীদের সম-পরিমাণ গুনাহর অংশীদারও হবে, কিন্তু তাতে অনুসরণকারীদের গুনাহর পরিমাণ একটুও কমানো হবে না।" (সহীহঃ ইবনে মাজাহ (২০৩), মুসলিম)
এ মর্মে বহু হাদিস রয়েছে।
অবশ্য বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষায় শিক্ষিত করার পর বা গানবাজনা, অশ্লীলতা ও সব ধরণের আল্লাহর নাফরমানী মূলক কার্যক্রম থেকে সতর্ক করার পরও তারা যদি বাবা-মার কথা ও নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে নিজেরা এ সব গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় তাহলে পিতামাতার উপর কোনও দায়-দায়িত্ব বর্তাবে না এবং এ জন্য তারা অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে না।
আল্লাহু আলাম
-------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: abdullaahilHadi
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...