▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: বিভিন্ন স্থানে এবং সামাজিক মিডিয়ায় অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন: তাঁর জামা, জুতা, চুল, চাদর, তলোয়ার ইত্যাদি) প্রদর্শন করে চলেছে। সরলমনা মানুষ সেগুলো বিশ্বাস করছে এবং সেগুলোর প্রতি ভক্তি ও বিনয় প্রকাশ করছে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি এগুলো রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যবহৃত আসবাব-সমগ্রী?
উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যেমন তা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হওয়া জরুরি ঠিক তদ্রূপ তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, জুতা, জামা, জুব্বা, চাদর, পাগড়ি, মাথার চুল, লাঠি, ঘটি-বাটি ও অন্যান্য ব্যবহৃত আসবাব-পত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে সব বস্তুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ করা হচ্ছে সেগুলোর পেছনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই যে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ছবির ক্ষেত্রেও একই কথা।
সুতরাং সু সাব্যস্ত দলিল ছাড়া এ সব স্মৃতি চিহ্ন বা সেগুলোর ছবিকে শতভাগ বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নাই। সঠিকও হতে পারে; বেঠিকও পারে।নিশ্চিতভাবে কোনো কিছুই বলা যাবে না। ছবির ব্যাপারটা আরও অনিশ্চিত। কারণ বর্তমানে ইডিটিং এর মাধ্যমে ইন্টারনেট জগতে শত শত ফেইক ছবি ছড়িয়ে পড়েছে- যেগুলোর সত্যতা নিরূপণ খুবই দু:সাধ্য বিষয়।
যাহোক, ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন, যুগের বিবর্তনে বিভিন্ন বড় বড় যুদ্ধ ও ফেতনা-ফ্যাসাদের কবলে পড়ে (যেমন, তাতারদের বাগদাদ আক্রমণ, তৈমুরলং এর ঘটনা ইত্যাদিতে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট বা নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।
✪ শাইখ আলবানী রহ. বলেন:
نحن نعلم أن آثاره صلى الله عليه وسلم، من ثياب، أو شعر، أو فضلات، قد فقدت، وليس بإمكان أحد إثبات وجود شيء منها على وجه القطع واليقين
"আমরা জানি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্ন যেমন, কাপড়, চুল বা ব্যবহৃত বস্তু-সামগ্রী হারিয়ে গেছে। এখন এগুলো থেকে কোনো কিছু অবশিষ্ট রয়েছে তা কারো দ্বারাই সুনিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।” (আত তাওয়াসসুল,পৃষ্ঠা ১৪৬)
نحن نعلم أن آثاره صلى الله عليه وسلم، من ثياب، أو شعر، أو فضلات، قد فقدت، وليس بإمكان أحد إثبات وجود شيء منها على وجه القطع واليقين
"আমরা জানি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্ন যেমন, কাপড়, চুল বা ব্যবহৃত বস্তু-সামগ্রী হারিয়ে গেছে। এখন এগুলো থেকে কোনো কিছু অবশিষ্ট রয়েছে তা কারো দ্বারাই সুনিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।” (আত তাওয়াসসুল,পৃষ্ঠা ১৪৬)
✪ 'আল আসার আন নববিয়া' তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতিচিহ্ন শীর্ষক বইয়ের লেখক উসমানী খেলাফতের রাজধানী কুসতুনতুনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) এর যাদুঘরে সংরক্ষিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ কৃত বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন উল্লেখ করার পর বলেন:
" এ কথা স্পষ্ট যে , কিছু স্মৃতিচিহ্ন সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা এমন কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে দেখি নি যে, এগুলোকে সঠিক বা বেঠিক বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আর এমন কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে যে ব্যাপারে এ কথা গোপনের কোনো সুযোগ নাই যে, এগুলোর ব্যাপারে মনের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের দোলাচল ঘুরপাক খায়।" (গ্রন্থ: আল আসার আন নববিয়া, লেখক: আহমদ তৈমুর বাশা, পৃষ্ঠা নং ৭৩)
" এ কথা স্পষ্ট যে , কিছু স্মৃতিচিহ্ন সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা এমন কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে দেখি নি যে, এগুলোকে সঠিক বা বেঠিক বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আর এমন কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে যে ব্যাপারে এ কথা গোপনের কোনো সুযোগ নাই যে, এগুলোর ব্যাপারে মনের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের দোলাচল ঘুরপাক খায়।" (গ্রন্থ: আল আসার আন নববিয়া, লেখক: আহমদ তৈমুর বাশা, পৃষ্ঠা নং ৭৩)
অতএব, ভারতের কেরালায় কতগুলো লম্বা লম্বা চুলকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ‘চুল মোবারক’ বলে ধুয়ে পানি বিক্রয়ের ব্যবসায় প্রতারিত হওয়া বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লাঠি, পাগড়ি, তলোয়ার, ঘটি-বাটি ইত্যাদির ছবি বিক্রয় করা বা সেগুলো কিনে এনে ঘরে ঝুলিয়ে রেখে বরকতের আশা করা, কথিত 'নালাইন শরীফ' তথা 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেন্ডেল/খড়ম শরিফ' ইত্যাদির ছবি তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলানোর ফযিলতে বিশ্বাস করা নেহায়েত বাড়াবাড়ি, অজ্ঞতা ও শরিয়ত বহির্ভূত কাজ ছাড়া কিছু নয়।
মনে রাখতে হবে, প্রকৃত বরকত ও কল্যাণ রয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা, তার হাদিস ও সুন্নতের প্রতি সম্মান জানানো, তার সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ করা, তাঁর নিষেধ থেকে দুরে থাকা এবং তাঁর আদর্শের আলোকে আমাদের সামগ্রিক জীবন ঢেলে সাজানোর মধ্যে।
সুতরাং আসুন, আমরা এ সব স্মৃতিচিহ্ন ও ছবি (যা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়) এর পেছনে না ছুটে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত সুন্নাহর আলোকে আমাদের ঈমান, আকীদা, চরিত্র, আচার-আচরণ তথা পুরো জীবনকে ঢেলে সাজাই। এতেই রয়েছে অবারিত কল্যাণ ও সফলতা।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন।আমীন।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব
আল্লাহ তৌফিক দান করুন।আমীন।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব
No comments:
Post a Comment