·
সৌদি ফতোয়া বোর্ড ও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য এবং কিং সউদ ইউনিভার্সিটির অনুষদ সদস্য, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, আল-উসূলী, ড. সা‘দ বিন নাসির আশ-শিসরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৮৭ হি.] বলেছেন—
❝এখন আমার কাছে এই লেখকের প্রসঙ্গ এসেছে। যার কিছু গ্রন্থের নাম—সিলসিলাতু ইয়া সাহিবাইস সিযন (‘হে কারাগারের সঙ্গীদ্বয়’ সিরিজ), আল-‘ইবাদাহ মা‘নাহা সিফাতুহা (ইবাদতের বৈশিষ্ট্যই তার মর্মার্থ), তাম্বীহুল গাফিলাত (গাফিল নারীদের সতর্কীকরণ) প্রভৃতি। এটি একজন ‘আম্মীর কথা। মাক্বদিসী একজন ‘আম্মী (লেইম্যান, সোজা বাংলায় সাধারণ আম পাবলিক)। সে দলিলগ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। সে কুরআনের আয়াতকে তার উদ্দিষ্ট অর্থ থেকে সরিয়ে দিয়ে অপাত্রে প্রয়োগ করে। আবূ মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসী নামের এই লোক উসূলুল ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) পড়েনি। এছাড়া তার বুঝের মধ্যেও গোলমাল আছে।
যখন তুমি একটি ব্যাপকার্থবোধক (আম) দলিল নিয়ে এসে তা দিয়ে ফায়সালা দিবে, আর ওই দলিলকে খাসকারী দলিলসমূহের দিকে লক্ষ করবে না, তখন তুমি বড়ো ধরনের ভুলের মধ্যে পতিত হবে। আমি তোমাদের কাছে একটি ফিক্বহী উপমা উপস্থাপন করব, এতে করে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ “তালাকপ্রাপ্ত নারীরা তিন হায়েজ (মাস) পর্যন্ত ইদ্দত [১] পালন করবে।” [২] আয়াত সুস্পষ্ট।
এই, তোমার নাম কী? [ছাত্র নিজের নাম বলছেন] হ্যাঁ? সালিহ! আচ্ছা, সালিহ কোনো মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দিল এবং বিয়ের জন্য নির্ধারিত দেনমোহর পরিশোধ করল। পরবর্তীতে তার সাথে ফোনে কথা বলার সময় দেখল, ওই মেয়ের কিছু সমস্যা আছে। ফলে সে তাকে তালাক দিয়ে দিল। এখন এই মেয়ের ইদ্দত কতদিন? তিন হায়েজ, তাইনা?
আসলে তোমরা তো দলিল বোঝো না। তোমাদের কাছে সম্পূর্ণ দলিল নেই। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا “হে ইমানদারগণ, যদি তোমরা মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বেই (অর্থাৎ সহবাস করার পূর্বেই) তালাক দিয়ে দাও, তাহলে তোমাদের জন্য তাদের কোনো ইদ্দত নেই, যা তোমরা গণনা করে থাক।” [৩]
তাহলে তোমরা কীভাবে বলছ যে, সালিহ যে মেয়েকে তালাক দিয়েছে, তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে?! কারণ তোমরা এক চোখ নষ্ট হওয়া কানার মতো। তোমরা একটি ব্যাপকার্থবোধক দলিল নিয়ে এসে আমভাবে বিধান দিয়ে দিচ্ছ, যদিও ওই আম দলিলকে খাসকারী দলিলসমূহ তোমাদের বোধগম্য হয়নি। এর দৃষ্টান্ত হলো—এই নিবন্ধ, যা এমন ব্যক্তির নিকট থেকে এসেছে, যার দলিল বোঝার মতো সক্ষমতা নেই, এবং যে তাখরীজুল মানাত্ব, তানক্বীহুল মানাত্ব ও তাহক্বীকুল মানাত্বের মধ্যে পার্থক্য করে না, ফলে বড়ো ধরনের ভুলে পতিত হয়। [৪]
সুতরাং যদি এ ধরনের লেখা আসে, তাহলে মানুষকে তা পড়ার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। কেননা এসব লেখা মানুষের আবেগ-অনুভূতির অনুকূলে থাকে, এবং তা এমন কারও বিরুদ্ধে আলোচনা করে, যাকে মানুষ পছন্দ করে না। ফলে এসব লেখা মানুষ গ্রহণ করে নেয়। এটি প্রকৃত মুসলিমের কাজ নয়। এটা এই শাস্ত্রের গুরুত্ব প্রমাণ করছে, যা আমরা শীঘ্রই পড়া শুরু করব।
এই শাস্ত্রে তথা ফিক্বহের মূলনীতিশাস্ত্রে আমরা এ বিষয়েও পড়াশোনা করব যে, কীভাবে আমরা একজন ‘আলিম ও নন-‘আলিমকে চিনতে সক্ষম হব। একজন ব্যক্তি জিহাদে অংশগ্রহণ করে, এর মানে কি সে একজন ‘আলিম? একজন ব্যক্তি কারাগারে গেছে, এর মানে কি সে একজন ‘আলিম? কেউ কেউ বলে, যেমন এই নিবন্ধের লেখক বলেছে যে, জিহাদের ফতোয়ার ব্যাপারে যারা সবচেয়ে বেশি জানে, তারা হলো জিহাদকারী ব্যক্তিবর্গ! প্রকৃতপক্ষে জিহাদের ফতোয়ার ব্যাপারে যাঁরা সবচেয়ে বেশি জানেন, তাঁরা হলেন শরিয়তের ‘উলামাগণ, জিহাদকারী মুজাহিদরা নয়।
ধরুন, একজন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ সুন্নাত-সহ আদায় করে, আবার রাতের প্রথমাংশ থেকে শেষাংশ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ পড়ে। তাহলে কি ধরে নেওয়া হবে যে, সে ব্যক্তি নামাজের মাসলা-মাসায়েলে একজন যোগ্য মুফতি?! মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করো।” [৫] তিনি বলেননি যে, তোমরা আমলকারী ব্যক্তিবর্গের কাছে জিজ্ঞাসা করো।
তারা বলে, আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি, তাহলে জিহাদকারী মুজাহিদদের কাছেই জিজ্ঞাসা করব। এটি কি সঠিক? এটি কেমন কথা?! এটা তো সরাসরি শরিয়তের সুস্পষ্ট দলিলসমূহের বিরোধিতা। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ “আর যখন তাদের কাছে শান্তি কিংবা ভীতিজনক কোনো বিষয় আসে, তখন তারা তা প্রচার করে। তারা যদি সেটা রাসূলের কাছে এবং তাদের কর্তৃত্বের অধিকারীদের কাছে সমর্পন করত, তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা তথ্যানুসন্ধানী তারা প্রকৃত বিষয় জেনে নিত।” [৬]
আয়াতে কর্তৃত্বের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ হলেন শরিয়তের ‘উলামাগণ। “তারা প্রকৃত বিষয় জেনে নিবে”– এই কথার অর্থ—তারা দলিলসমূহ থেকে বিধিবিধান উদ্ঘাটন করবে। কেননা দলিল বোঝার এবং তা থেকে বিধান উদ্ঘাটন করার মূলনীতি তাঁদের জানা রয়েছে। অন্যথায় (‘উলামাদের দিকে ফিরে না গেলে) যে ব্যক্তিই বীরত্বপূর্ণ কথা বলবে, তার দিকেই আমরা ধাবিত হব। সেজন্য অবশ্যই আমাদের নিকট শরিয়তের মূলনীতি সংবলিত জ্ঞান থাকা চাই, যা আমরা শরিয়ত থেকে অর্জন করব। আমরা এটা জানব যে, কার কথা অনুযায়ী আমল করা আমাদের জন্য বৈধ, আর কার কথা অনুযায়ী আমল করা হারাম।
আমাদের যুগে এমন অনেক লোক রয়েছে, যারা ফতোয়া দেওয়ার স্থান গ্রহণ করেছে, ফতোয়া দিতে উদ্যোগী হয়েছে, অথচ তারা ফতোয়া দেওয়ার উপযুক্ত নয়। এসব লোক উম্মতের জনসাধারণকে অসংখ্য ভ্রষ্টতায় নিপাতিত করেছে। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আবির্ভূত হয়, আর ফতোয়া প্রদান করে। যদিও তারা কিছুই জানে না, (জ্ঞানের ব্যাপারে) একদম মিসকিন! তাদের আছে কেবল সুন্দর পোশাক, আর সাজানোগোছানো সুমিষ্ট বচন!
তারা সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে এবং কথা বলছে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিদেরও প্রবল ধারণা হবে যে, সে একজন জ্ঞানী, ফলে তারা তার সুমিষ্ট কথা শ্রবণ করবে। কিন্তু তার কথা কুরআন-সুন্নাহ থেকে উদ্ভূত নয়। তার কথা অনুযায়ী আমল করা জায়েজ নয়। আমরা কীভাবে জানব এবং কীভাবে পার্থক্য করব যে, এই ব্যক্তি ফতোয়া দেওয়ার উপযুক্ত, আর এই ব্যক্তি উপযুক্ত নয়? এই শাস্ত্রের মাধ্যমে জানব, তথা ফিক্বহের মূলনীতিশাস্ত্রের মাধ্যমে জানব। এজন্য এই শাস্ত্র অধ্যয়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কোনো ব্যক্তি হয়তো প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধে কথা বলে, শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলে। এই কাজগুলো তাকে ‘আলিম বানিয়ে দেয় না। এগুলো কি একজন ‘আলিমের বৈশিষ্ট্য? একজন ‘আলিমের বৈশিষ্ট্য কী? কার তাক্বলীদ করা জায়েজ, আর কার তাক্বলীদ করা না-জায়েজ? এই বিষয়গুলো আমরা আমাদের এই পাঠে (তথা উসূলে ফিক্বহের পাঠে) আলোচনা করব। এজন্য সকল বজ্রকণ্ঠের অনুসরণ করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। এমন হওয়া যাবে না যে, কোনো এক প্রাঙ্গণে কারও চিল্লাচিল্লি শুনল, অমনি ভেবেচিন্তে না দেখেই তার দিকে ধাবিত হলো।
‘উলামাগণ ব্যতীত কারও কথা গ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু কখন একজন ব্যক্তি ‘আলিম হিসেবে বিবেচিত হয়? ‘আলিমের বৈশিষ্ট্য কী? আর ‘আলিমদেরকে চিনতে পারার পদ্ধতিই বা কী? এই বিষয়গুলোই আমরা উসূলে ফিক্বহের মধ্যে আলোচনা করব। এরপর সত্যিকারের ‘উলামারা যখন কোনো বিষয়ে মতানৈক্য করেন, তখন আমরা কী করব? কীভাবে আমরা তাদের কথার মধ্যে সমন্বয় করব? মতানৈক্যের সময় কী করা হবে? হ্যাঁ, উক্ত বিষয়গুলোই আমরা এই শাস্ত্রে তথা ফিক্বহের মূলনীতিশাস্ত্রে আলোচনা করব।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। এই শাস্ত্রের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে ওই লোকদের থেকে হেফাজত করি, যারা সত্য ও হেদায়েত গ্রহণে বাধা প্রদান করে, সেসব ফতোয়া ও লিখনের মাধ্যমে, যা অযোগ্য লোকদের নিকট থেকে প্রকাশিত হয়। এই যে মাক্বদিসী, একে কে তাযকিয়্যাহ দিয়েছে? তাকে কে ‘ফতোয়া প্রদানের উপযুক্ত’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে? আর কেইবা তাকে এই আসন প্রদান করেছে?
সে যে কারাগারে বন্দী ছিল, তা তার উপযুক্ত হওয়ার প্রমাণ নয়। নেশাকারীরাও তো কারাগারে যায়, তাহলে কি তারাও ফতোয়া দিবে?! অনুরূপভাবে সে যে নেতৃবর্গ ও শাসকদের সমালোচনা করে, সেটাও এমন কোনো বৈশিষ্ট্য না, যার মাধ্যমে আমরা জানব যে, এই লোক ফতোয়া প্রদানের উপযুক্ত কিংবা তার নিকট থেকে ‘ইলম নেওয়া সিদ্ধ।
কিন্তু মানুষ নিজেকে পরিচালনার ভার এমন ব্যক্তির ওপর অর্পন করে, যে তাকে ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত করে। দেখো, নাবী ﷺ কী বলছেন। তিনি ﷺ বলেছেন, إن الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه، ولكن يقبض العلم بقبض العلماء، حتى إذا لم يبق عالما اتخذ الناس رءوسا جهالا، فسئلوا فأفتوا بغير علم فضلوا وأضلوا “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে ‘ইলম উঠিয়ে নিবেন না। কিন্তু তিনি ‘আলিমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ‘ইলম উঠিয়ে নিবেন। যখন কোনো ‘আলিম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে। তাদের জিজ্ঞেস করা হলে, তারা না জানলেও ফতোয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।” [৭]
সুতরাং মানুষের মধ্যে ভ্রষ্টতা সয়লাব হওয়ার কারণ—সেসব মূর্খদেরকে নেতা বানিয়ে নেওয়া, যারা বিনা ‘ইলমে ফতোয়া দেয়; ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করে। কারও কথা গ্রহণ করার পূর্বে তোমাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, সে উপযুক্ত, না কি উপযুক্ত না। কেউ উপযুক্ত, না কি অনুপযুক্ত, তা আমরা কীভাবে জানব? উপযুক্ত মুফতির বৈশিষ্ট্য কী এবং উপযুক্ত মুফতি চেনার উপায় কী? উক্ত বিষয়গুলো আমরা এই শাস্ত্রে পাঠ করব, ইনশাআল্লাহ। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মানুষের নিকট যেসব ভ্রষ্টতা আপতিত হয়েছে, তার অধিকাংশই মূর্খ লোকদেরকে নেতা বানানোর কারণে আপতিত হয়েছে। মূর্খরা লোকদেরকে সত্য ও সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলে। তুমি ইসলামের প্রথম যুগ থেকে বিষয়টি লক্ষ করো। প্রথম যুগে বিভিন্ন ভ্রান্ত দলের উদ্ভব হলো। যেমন: খারিজী, মু‘তাযিলাহ, জাহমিয়্যাহ, মুরজিয়া। এই দলগুলো কুরআন-সুন্নাহ’র দলিল দিয়েই দলিল প্রদান করে। কিন্তু তারা হয় দুর্বল বুঝ অনুযায়ী দলিল গ্রহণ করে, অথবা শুধু একটি দলিলের দিকে লক্ষ করে, আর বিপরীত দলিলের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দলিল গ্রহণ করে।
যেমন মহান আল্লাহ’র এই কথা থেকে দলিল গ্রহণ করা হয় যে, إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ “হুকুম চলবে কেবল আল্লাহ’র।” [৮] এটি কুরআনের একটি আয়াত। সর্বপ্রথম কারা এই আয়াত দিয়ে দলিল দিয়েছিল? খারিজীরা এই আয়াত দিয়ে দলিল দিয়েছিল; যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ যুদ্ধ করেছেন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশে। কারণ তিনি ﷺ বলেছেন, لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ “আমি যদি তাদের পেতাম, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে আদ জাতির মতো হত্যা করতাম।” [৯]
হ্যাঁ, তারা কুরআনের আয়াত দিয়ে দলিল দিত—“হুকুম চলবে কেবল আল্লাহ’র।” [১০] তারা দলিল দিত—মহান আল্লাহ বলেছেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ “তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের প্রভূ হিসেবে গ্রহণ করেছে।” [১১] এই আয়াত দিয়ে খারিজীরা দলিল দিত, যাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)।
যখন ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাদের সাথে যুদ্ধ করেন, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে খুশি হয়েছিলেন। যখন তিনি তাদেরকে পরাজিত করেন, তখন তিনি (বিজয়োল্লাসে) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিয়েছেন। আর তিনি ‘যুস-সুদাইয়্যাহ’ নামের ব্যক্তিকে অনুসন্ধান করেছেন, যার ব্যাপারে নাবী ﷺ অবহিত করে গেছেন। এমনকি তিনি তাকে পেয়ে যান, যার হাত ছিল নারীর স্তনের আকৃতির। [১২]
কিন্তু সাহাবী মু‘আউয়িয়াহ ও তাঁর সাথীরা যখন তাঁর সাথে যুদ্ধ করলেন, তখন তিনি এই যুদ্ধের জন্য খুব চিন্তিত ছিলেন। তিনি চাইছিলেন না, এই যুদ্ধ সংঘটিত হোক। এরপর যখন তাঁর জয়লাভের ফলে যুদ্ধ সমাপ্ত হলো, তখন তিনি দুঃখবোধ করলেন। এরকম বিষয় সংঘটিত হোক—তা তিনি চাননি।
তো এই সম্প্রদায় (খারিজীরা) কুরআনের আয়াত দিয়ে দলিল দিত। যখন ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) তাদের কাছে গেলেন, তখন তারা দলিল দিল—আল্লাহ বলেছেন, “হুকুম চলবে কেবল আল্লাহ’র।” [১৩] ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) প্রত্যুত্তরে বললেন, তাহলে তোমরা শোনো। মহান আল্লাহ বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْتُلُوا الصَّيْدَ وَأَنْتُمْ حُرُمٌ ۚ وَمَنْ قَتَلَهُ مِنْكُمْ مُتَعَمِّدًا فَجَزَاءٌ مِثْلُ مَا قَتَلَ مِنَ النَّعَمِ يَحْكُمُ بِهِ ذَوَا عَدْلٍ مِنْكُمْ “হে ইমানদারগণ, ইহরামে থাকা অবস্থায় তোমরা শিকারকে হত্যা কোরো না। তোমাদের মধ্যে যে ইচ্ছাকৃতভাবে তা হত্যা করবে তার বিনিময় হলো—যা হত্যা করেছে, তার অনুরূপ গৃহপালিত পশু। আর এ কাজের ফায়সালা করবে তোমাদের মধ্যে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোক।” [১৪]
তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বললেন, যদি শিকার হত্যার বিনিময় দেওয়ার ক্ষেত্রেই দুজন লোকের হুকুম (ফায়সালা) দেওয়া সিদ্ধ হয়, তাহলে সেই বিষয়ে মানুষের হুকুম দেওয়ার ব্যাপারটি কেমন হবে, যেখানে মুসলিমদের রক্তপাত যেন না হয়—সেই ব্যাপারটি জড়িত?! (তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ওটাই যদি সিদ্ধ হয়, তাহলে এটা তো আরও বেশি সিদ্ধ হওয়ার কথা – অনুবাদক)
এক পর্যায়ে তিনি তাদের কুরআন দিয়ে দেওয়া দলিলগুলো ব্যাখ্যা করলেন। এমন সব দলিল, যা বিশুদ্ধ মানহাজের ভিত্তিতে গৃহীত হয়নি—তা ব্যাখ্যা করলেন। ফলে তাদের অনেকেই হকের দিকে প্রত্যাবর্তন করল। তাদের কাছে একজন ‘আলিম এসেছিলেন, যিনি হলেন ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)। যাঁর জন্য স্বয়ং নাবী ﷺ দু‘আ করেছিলেন, যেন আল্লাহ তাঁকে কুরআনের তাফসীর করার জ্ঞান দান করেন। [১৫]
তাহলে এ ধরনের লেখাগুলোর কী হবে? বলা হচ্ছে, “মুজাহিদদের জন্য ফাক্বীহবৃন্দের কোনো প্রয়োজন নেই।” এটা কী ধরনের কথা?! সুবহানাল্লাহ! এটা কি জায়েজ? এটা তো হারাম! এটা শরিয়তের স্পষ্ট দলিলসমূহের বিরোধী। সে বলছে, “মুজাহিদরাই মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো ফাক্বীহ।” এটা কী ধরনের কথা?! সুবহানাল্লাহ! এটা পথভ্রষ্ট মানহাজসমূহ ও শরিয়তবিরোধী বিদ‘আতী মানহাজসমূহের নমুনা। ব্যাপারটি এমন যে, একদল লোক এসে দলিল দিচ্ছে, আর কুরআন-সুন্নাহ পাঠ করছে; অথচ দলিল বোঝার সঠিক মূলনীতি তাদের কাছে নেই।❞
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. শরিয়ত নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীর অবশ্যপালনীয় বিবাহবিহীন অবসরযাপনকে ইদ্দত বলা হয়।
[২]. সূরাহ বাক্বারাহ: ২২৮।
[৩]. সূরাহ আহযাব: ৪৯।
[৪]. তাখরীজুল মানাত্ব, তানক্বীহুল মানাত্ব ও তাহক্বীকুল মানাত্ব—উসূলে ফিক্বহের তিনটি পরিভাষা, যেগুলোর মাধ্যমে শার‘ঈ দলিল থেকে বিধান উদ্ঘাটনের কাজ বিশুদ্ধভাবে হলো কিনা তা নির্ণয় করা হয়।
[৫]. সূরাহ নাহল: ৪৩, সূরাহ আম্বিয়া: ৭।
[৬]. সূরাহ নিসা: ৮৩।
[৭]. সাহীহ বুখারী, হা/১০০; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৩।
[৮]. সূরাহ আন‘আম: ৫৭, সূরাহ ইউসুফ: ৪০ ও ৬৭।
[৯]. সাহীহ বুখারী, হা/৩৩৪৪; সাহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪। অন্য হাদীসে এসেছে, “... সামূদ জাতির মতো হত্যা করতাম।” (সাহীহ বুখারী, হা/৪৩৫১)
[১০]. সূরাহ আন‘আম: ৫৭, সূরাহ ইউসুফ: ৪০ ও ৬৭।
[১১]. সূরাহ তাওবাহ: ৩১।
[১২]. রাসূল ﷺ খারিজীদের নিদর্শন বর্ণনা করতে গিয়ে ‘যুস-সুদাইয়াহ’ নামক ব্যক্তির বিবরণ দিয়ে বলেছিলেন, “এদের মধ্যে এমন এক কালো মানুষ থাকবে, যার একটি বাহু নারীর স্তনের মতো নড়াচড়া করবে।” ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) খারিজীদের সাথে নাহরাওয়ানের যুদ্ধের সময় এই লোককে অনুসন্ধান করেছিলেন এবং তাকে পাওয়ার পর হত্যা করেছিলেন। (সাহীহ বুখারী, হা/৩৬১০; সাহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪)
[১৩]. সূরাহ আন‘আম: ৫৭, সূরাহ ইউসুফ: ৪০ ও ৬৭।
[১৪]. সূরাহ মাইদাহ: ৯৫।
[১৫]. ইবনু মাজাহ, হা/১৬৬; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)।
·
তথ্যসূত্র:
তথ্যসূত্র:
https://youtu.be/q2wmBBqXXcw (অডিয়ো ক্লিপ)।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
No comments:
Post a Comment