Tuesday 17 September 2019

যে ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি বা মূর্তি আছে সে ঘরে সালাত আদায় করার বিধান


———🎀🎀———
প্রশ্ন: আমাদের ঘরে খাতা-পত্র, প্যাকেট ইত্যাদিতে ছবির মতো কার্টুন থাকে। কিছু ঘরে মানুষ, পশু-পাখি ইত্যাদির ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয় অথবা শোকেস-আলমরিতে পশু-পাখির ছোট ছাট মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়। ঘরের আসবাব-পত্রেও বাঘ-সিংহ, ময়ূর, পাখি ইত্যাদির ছবি অংকিত থাকে। এ সব ঘরে নামায পড়লে কি তা সহিহ হবে?
এতে করে কি ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করবে না?
উত্তর:
ঘরে প্রাণীর ছবি, কার্টুন, প্রতিকৃতি, মূর্তি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হারাম। যে ঘরে এসব থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এ মর্মে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ، وَلَا صُورَةٌ
“ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। (সুনানে আন-নাসায়ী হা/৫৩৪৭-সহিহ)
ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী মাইমূনাহ রা. আমার নিকট বর্ণনা করেন:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: জিবরাঈল আলাহিস সালাম আমার সাথে রাতে সাক্ষাত করার ওয়াদা করেছিলেন কিন্তু সাক্ষাত করেননি।
অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের খাটের নীচে একটি কুকুর ছানা আছে। তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেলেন।
এরপর জিবরাঈল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন: “যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না।”
সকালবেলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর মারতে আদেশ দিলেন। এমনকি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া।

(সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ, অনুচ্ছেদ-৪৭ ছবি সম্পর্কে, হা/৪১৫৭-সহিহ)
 তিনি আরও বলেছেন:
أَنْ لاَ تَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ ‏
“কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বে না, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না।” (সহিহ মুসলিম, হা/৯৬৯ ও তিরমিজী হাদিস নম্বর: ১০৪৯ [আল মাদানি প্রকাশনী]) সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় রয়েছে:
وَلاَ صُورَةً إِلاَّ طَمَسْتَهَا
”আর কোনো ছবি পেলে তা মুছে দিবে।”
এ মর্মে বহু হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।
➤ উল্লেখ্য যে, মুহাদ্দিসগণ বলেন: মুহাদ্দিসগণ বলেন: উল্লেখিত হাদিসগুলোতে যে সকল ফেরেশতা প্রবেশ করবে না বলা হয়েছে সেগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রহমত ও বরকতের ফেরেশতাগণ। অর্থাৎ কোনো ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি, প্রতিকৃতি ও কুকুর থাকলে ঐ সকল প্রবেশরতাগণ তাতে প্রবেশ করে না যারা রহমত ও বরকত নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে আগমন করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ তাদের দায়িত্ব পালনার্থে অবশ্যই প্রবেশ করে- ঘরে যতই ছবি, মূর্তি ও কুকুর থাকুক না কেন। যেমন: প্রাণ সংহারের দায়িত্বে নিয়োজিত মালাকুল মওত বা মৃত্যু দূত, তাঁর সঙ্গে আগত ফেরেশত মণ্ডলী, মানুষের কার্যবিবরণী লেখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কিরামান কাতিবীন বা সম্মানিত লেখক ফেরেশতাবৃন্দ ইত্যাদি।
মোটকথা, এ সকল ছবিকে ঘর থেকে সরানো জরুরি অথবা আসবাব-পত্রে যে সকল প্রাণীর ছবি বা প্রাণীর কার্টুনের ছবি আছে কমপক্ষে সেগুলোর মুখমণ্ডল কালি দিয়ে বা যে কোনভাবে মুছে দেয়া জরুরি। মুখ মণ্ডল তথা চোখ, মুখ, নাক, কান ইত্যাদি মুখাবয়বের চিহ্ন অবশিষ্ট না থাকলে তার উপর ছবির বিধান প্রযোজ্য হবে না।
সম্ভব হলে ছবি-কার্টুন ও প্রতিকৃতি মুক্ত ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। কিন্তু এ সব প্রাণীর ছবি, কার্টুন ইত্যাদি থাকা স্বত্বেও যদি সালাতের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে সালাত আদায় করা হয় তাহলে তা সহিহ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে যথাসম্ভব এমনটি করা উচিৎ নয়। আল্লাহু আলম।
-------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...