Tuesday 10 September 2019

আপনি কি মনে করেন, 'ধর্ম যার-যার, উৎসব সবার?



আপনিও কি বিজাতীয় পরব বা শির্কী ও বিদআতী উৎসবে শরীক হওয়ার নিয়ত করেছেন?
তাহলে পড়ুন,
বহু মুসলমানই বিজাতির শির্কী ঈদ-পরবে (মেলা-উরসে) স্ত্রী-পরিজন বা ছেলে-মেয়ে সহ উপস্থিত হয়ে থাকে এবং সেখানকার নানা মনোরঞ্জনমূলক অনুষ্ঠান দর্শন করে মনের তৃপ্তি অর্জন করে থাকে, সেখানে বিক্রিত জিনিসপত্র খরিদ করে থাকে, মিষ্টান্ন খেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য উপহার এনে থাকে।
অনেক ব্যবসায়ী দোকান দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করে থাকে। অনেকে সেখানে হারাম ও শির্কী অনুষ্ঠান দেখতে হাযির হয়। অনেকে সেই মেলার মালিক, সেখানকার জায়গার মালিক, মেলার সভাপতি, সম্পাদক, সদস্য অথবা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে থাকে।
অনেকে বিজাতির উৎসবের সময় নতুন পোশাক পরে এবং আরো অন্যান্য সাজ-সজ্জা করে থাকে। উত্তম খানাপিনার ব্যবস্থা করে থাকে।
অনেকে সেই উপলক্ষ্যে বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে এবং ঐ দিনকে ছুটি মেনে থাকে।
অনেক মুসলমান বাড়ির আশেপাশের মেলাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য মেয়ে-জামাইকে খাস দাওয়াত দিয়ে থাকে এবং জামায়ের হাতে মেলা-খরচ দিয়ে মেলা দেখতে ও সেই সাথে শির্কী ও হারাম কাজে সহযোগিতা করে থাকে। মেলাতে না ডাকলে অনেক অভিমানী জামাই আবার গোসসাও করে থাকে।
এইভাবে জেনে না জেনে তওহীদবাদীর ছেলেরা বাতিল ও শির্কের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
পক্ষান্তরে উপর্যুক্ত অভ্যাস রহমানের বান্দাদের নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
ৎوَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًاঃ (৭২) سورة الفرقان
অর্থাৎ, যারা কোন বাতিলে অংশগ্রহণ করে না এবং কোন অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে ভদ্রের মত পার হয়ে যায়। (সূরা ফুরকান ৭২ আয়াত)
উক্ত আয়াতে 'বাতিল'-এর তফসীরে অনেক মুফাসসিরীনে কিরাম বলেছেন, তা হল বিজাতির পরব বা মেলা।
আবুল আলিয়াহ, ত্বাঊস, মুহাম্মাদ বিন সীরীন, য্বাহহাক, রাবী' বিন আনাস প্রমুখ বলেছেন, 'বাতিল' হল মুশরিকদের ঈদ (পরব)সমূহ। (তফসীর ইবনে কাষীর)
বলাই বাহুল্য যে, প্রকৃতপক্ষে তওহীদবাদী ও শির্কবিরোধী আল্লাহভীরু মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদের কোন শির্কে শরীক হতে পারে না। যেহেতু শির্কী কোন অনুষ্ঠান বা মেলাতে অংশগ্রহণ করা ইসলামী শরীয়ত-বিরোধী। আর এ জন্যই উম্মাহর সলফগণ নিজে ঐ শ্রেণীর কোন অনুষ্ঠান বা মেলাতে শরীক হতেন না এবং অপরকে শরীক হতে মানাও করতেন।
উমার ফারুক (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, '(অপ্রয়োজনে) অনারবের ভাষা শিখো না এবং মুশরিকদের পরবের দিনে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। যেহেতু তাদের উপর আল্লাহর গযব অবতীর্ণ হয়।' (বাইহাকী ১৮৬৪০, আব্দুর রাযযাক ১৬০৯নং)
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রায্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, 'যে ব্যক্তি মুশরিকদের দেশে ঘর বানায় অতঃপর তাদের নওরোজ ও উৎসব পালন করে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, পরিশেষে এই অবস্থায় তার মৃত্যু হয়, সে ব্যক্তির কিয়ামতে তাদের সাথে হাশর হবে।' (ইক্বতিযা-উস স্বিরাত্বিল মুস্তাক্বীম ৫১৩পৃঃ)
ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'ওরা ওদের ঈদ পালনের জন্য যে নৌযানে চড়ে, সে নৌযানে চড়া মকরূহ। যেহেতু ওদের উপর (আল্লাহর) গযব ও অভিশাপ অবতীর্ণ হয়।' (আল-লাম' ফিল হাওয়াদিষি অল-বিদ' ১/২৯৪)
আমর বিন মুর্রাহ বলেন, 'রহমানের বান্দারা শির্কী ব্যাপারে মুশরিকদের সহযোগিতা করে না এবং (তাদের ঐ শির্কী অনুষ্ঠানে) তাদের সাথে নিজেকেও মিশিয়ে দেয় না।' (ইক্বতিযা ১/৪২৭)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, 'মহান আল্লাহ তাদের ঈদ-অনুষ্ঠানকে 'বাতিল' বলে আখ্যায়ন করেছেন এবং রহমানের বান্দাদেরকে সেখানে উপস্থিত হতে ও তা দর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং যদি সেখানে উপস্থিত হওয়া ও তা দর্শন করা বৈধ না হয়, তাহলে তাতে অংশগ্রহণ করা এবং তাতে সহমত পোষণ করা কি হতে পারে?' (ঐ ১/৪২৬)
ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, 'আল্লাহ তাদের ঈদ-অনুষ্ঠানকে 'বাতিল' বলে অভিহিত করেছেন। আর বাতিলকে সাহায্য (সাফল্যমন্ডিত) করা বৈধ নয়।' (আহকামু আহলিয যিম্মাহ ৩/১২৪৪)
(১২ মাসে ১৩ পরব)



-আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী হাফিযাহুল্লাহ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...