Tuesday 10 September 2019

সাহাবাদিগকে গালমন্দকারীদের খণ্ডনে সালাফদের মূল্যবান উক্তি


ইসলামের সূত্র ন্যায়পরায়ণ সাহাবিদের সম্বন্ধে যারা কটূক্তি করে ও অপবাদ দেয়, তাদের ব্যাপারে আমাদের বিচক্ষণ সালাফগণ বহু মূল্যবান কথা বলেছেন। কারণ তারা এর ভয়াবহ পরিণাম বুঝতেন এবং এসব অপবাদ যে দ্বীনের মৌলিক বিধানের বিপরীত তাও তারা জানতেন। আমরা এ পর্বে তাদের সেই মূল্যবান উক্তি সমূহের কিছুটা উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ তা’আলা।
১- ইমাম মালিক রাহ. বলেন:
{ إنما هؤلاء اقوام أرادوا القدح في النبي صلى الله عليه وسلم، فلم يمكنهم ذلك، فقدحوا في اصحابه، حتى يقال رجل سوء ولو كان رجلا صالحا لكان أصحابه صالحون }. ( الصارم المسلول ص580 )
‘এরা এমন গোষ্ঠী যারা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুর্নাম করার ইচ্ছা রাখে কিন্তু তা সম্ভবপর না হওয়ায় তারা তাঁর সাহাবীদের দুর্নাম করে ও তাদের অপবাদ দেয় যেন বলা হয় যে, সে মন্দ ছিল। যদি তিনি সৎ ব্যক্তি হতেন, তাহলে তাঁর সাথীরাও সৎ হত’। [আস্ স্বরিম আল মাসলূল, ইবনু তায়মিয়া/৫৮০]
২- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহ. বলেন:
‘যদি কোনও ব্যক্তিকে দেখ সে কোনও সাহাবীর দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করছে, তাহলে তার ইসলামে সন্দেহ আছে’। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনু কাছীর ৮/১৪২]
৩-আবু যুরআহ আর রাযী রহ. বলেন:
‘যদি কোনও ব্যক্তিকে দেখ সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীদের মধ্যে কারো দোষ বর্ণনা করছে, তাহলে জেনে নিও সে ইসলাম শত্রু নাস্তিক। কারণ আমাদের নিকট রাসূল সত্য এবং আল কুরআন সত্য। আর এই কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর সাহাবাগণ। ( অর্থাৎ তারা ইসলামের সূত্র ও সাক্ষী) ইসলাম শত্রুরা আমাদের সাক্ষীদের অভিযুক্ত করতে চায় যেন কিতাব ও সুন্নাহ বানচাল হয়ে যায়। প্রকৃতার্থে তারাই অভিযুক্ত। তারা হচ্ছে নাস্তিক’। [আল কিফায়া, খতীব বাগদাদী, পৃ: ৯৭]
৪- আবু আব্দুর রাহমান নাসাঈ রাহ. কে আল্লাহর রাসূলের সাহাবী মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
‘ইসলামের উপমা একটি দরজাযুক্ত ঘরের ন্যায়। আর ইসলামের দরজা হচ্ছে সাহাবাগণ। তাই যে সাহাবীকে কষ্ট দেয়, তার উদ্দেশ্য ইসলাম। ঐ ব্যক্তির মত যে দরজা ঠকঠকায় কারণ তার উদ্দেশ্য ঘরে প্রবেশ করা। তিনি বলেন: তাই যে মুয়াবিয়াকে উদ্দেশ্য করে আসলে তার উদ্দেশ্য সাহাবাগণ’। [তাহযিবুল কামাল,১/৩৩৯/ বুগইয়াতুর রাগিব পৃ: ১২৯]

৫- উমার বিন আব্দুল আযীয রহ. কে সে সব যুদ্ধের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যা সাহাবিদের মাঝে সংঘটিত হয়। তিনি বলেন: সে রক্ত থেকে আল্লাহ আমার হাত পবিত্র রেখেছেন, তাই আমার জিহ্বাকে তা থেকে পবিত্র রাখা উচিৎ হবে না কি? আল্লাহর রাসূলের সাথীদের উপমা চোখের মত। আর চোখের ঔষধ হচ্ছে, তা স্পর্শ না করা’। [আল জামি লি আহকামিল কুরআন, কুরতুবী ১৬/১২২]৬- ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন:
“وحبهم ـ أي الصحابة ـ دين وإيمان، وبغضهم كفر ونفاق وطغيان”
‘তাদেরকে ভালবাসা (অর্থাৎ সাহাবিদের ভালবাসা) দ্বীন ও ঈমানের অংশ এবং তাদের ঘৃণা করা কুফর, মুনাফেকি ও সীমালঙ্ঘন’। [শারহুত্ ত্বাহাবিয়া/৫২৮]
৭- শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া রহ. সাহাবিদের মাঝে সংঘটিত বিবাদ সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি এই ভাবে বর্ণনা দেন:
‘তারা সাহাবিদের মাঝে সংঘটিত বিবাদ সম্পর্কে নীরবতা পালন করে এবং বলে: তাদের দোষ-ত্রুটি সংক্রান্ত বর্ণিত বর্ণনাগুলির মধ্যে কিছু এমন বর্ণনা রয়েছে যা, মিথ্যা ও জাল আর কিছু এমন রয়েছে যা বিকৃত ও পরিবর্তিত। এ বিষয়ে সঠিক মত হচ্ছে, তারা সে সব বিষয়ে মা’যুর। হয় এমন ইজতিহাদকারী যাদের সিদ্ধান্ত সঠিক কিংবা এমন ইজতিহাদকারী যাদের সিদ্ধান্ত ভুল’। [শারহুল আক্বীদা আল ওয়াসেত্বিয়া, মুহাম্মদ খলীল হার্রাস, পৃ: ১৭৩]
৮- আবু আব্দুল্লাহ ইবনু বাত্তাহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদা বর্ণনা করার সময় বলেন:
‘এরপর আল্লাহর রাসূলের সাহাবিদের মাঝে যে সব বিবাদ হয়, আমরা সে সব বিষয়ে নিরব থাকি। তারা এমন সম্প্রদায় যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সকল অভিযানে উপস্থিত থেকেছেন এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন; কারণ আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাদের তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বলেছেন ও তাদের ভালবাসার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে বলেছেন। আর এটা তাঁর নবীর মুখে ফরজ করেছেন; অথচ তিনি জানেন যে তারা আপসে লড়াই করবে। তাদের মর্যাদা এ কারণে সকলের ঊর্ধ্বে যে, তাদের ইচ্ছাকৃত ভুল ও তাদের আপসের মধ্যে সংঘটিত কলহ-বিবাদ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে’। [কিতাবুশ্ শার‌হ ওয়াল ইবানাহ আলা উসূলিস সুন্নাহ ওয়াদ্দিয়ানাহ,ইবনু বাত্তাহ পৃ: ২৬৮]

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...