Sunday 8 September 2019

আশুরার রোজার বিধান


সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন—
❝কেউ চাইলে পুরো মহরম মাস, অথবা মহরম মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রাখতে পারে। [১] তবে এই মাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো দশ তারিখের রোজা। আশুরার (মহরম মাসের দশ তারিখের) রোজা রাখলে বিগত এক বছরের (ছোটো) গুনাহ মোচন করা হয়। [২] তবে ইহুদিদের বিরোধিতা করার জন্য দশ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন রোজা রাখা সুন্নাত। কেননা ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে।
নাবী ﷺ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমরা এই দিনে রোজা রাখ কেন?” তারা বলেছিল, “কারণ এই দিন মহান আল্লাহ মূসা ﷺ ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছিলেন, আর ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। তাই মূসা (‘আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) আল্লাহ’র জন্য শুকরিয়াস্বরূপ ওই দিন রোজা রেখেছিলেন। সেজন্য আমরাও এই দিনে রোজা রাখি।” এ কথা শুনে নাবী ﷺ বললেন, “মূসার (আদর্শের) ব্যাপারে আমরাই তোমাদের চেয়ে বড়ো হকদার।” এই বলে তিনি ﷺ সেদিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে এই রোজা করার নির্দেশ দিলেন। [৩]
কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّه ُفَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ “এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন। অতএব তুমি তাদের হেদায়েত (আদর্শ) অনুসরণ করো।” [৪] আয়াতে যাদেরকে হেদায়েত দেওয়ার কথা বিবৃত হয়েছে, তাঁরা হলেন (পূর্ববর্তী) রাসূলগণ।
তাই রাসূল ﷺ এই দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে এই রোজা করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু এই রোজা ওয়াজিব নয়, বরং তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এরপর নাবী ﷺ বলেছেন, لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لأَصُومَنَّ التَّاسِعَ “আমি যদি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে অবশ্যই (দশ তারিখের সাথে) নয় তারিখেও রোজা রাখব।” [৫]
ইহুদিদের বিসদৃশ করার জন্য তিনি এই কথা বলেছেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তোমরা দশ তারিখের একদিন আগে অথবা একদিন পরে একটি রোজা রাখ।” [৬] কিন্তু একদিন আগে রোজা রাখার বর্ণনাটি একদিন পরে রোজা রাখার বর্ণনার চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ। না‘আম।❞
উপস্থাপক: “তাহলে আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে?”
শাইখ: ❝হ্যাঁ। আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে। অর্থাৎ বিগত বছরে যেসব সগিরা (ছোটো) গুনাহ করেছে, তা মোচন করে। পক্ষান্তরে কবিরা (বড়ো) গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করা হয় না। কিন্তু বিভিন্ন সৎকর্মের মাধ্যমে সগিরা গুনাহ বিমোচিত হয়। সেসবের মধ্যে আশুরার রোজা অন্যতম। না‘আম।❞
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. সুন্নাত রোজাসমূহের মধ্যে মহরম মাসের (সব বা অধিকাংশ দিনের) রোজা অন্যতম। রমজানের পরেই রয়েছে এই রোজার মর্যাদা। রাসূল ﷺ বলেছেন, “রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহ’র মাস মহরমের রোজা।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৩; ‘রোজা’ অধ্যায়; পরিচ্ছেদ: ৩৮)
[২]. সাহীহ মুসলিম, হা/১১৬৩; ‘রোজা’ অধ্যায় (১৪); পরিচ্ছেদ: ৩৬।
[৩]. সাহীহ বুখারী, হা/২০০৪; সাহীহ মুসলিম, হা/১১৩০।
[৪]. সূরাহ আন‘আম: ৯০।
[৫]. সাহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪; ‘রোজা’ অধ্যায় (১৪); পরিচ্ছেদ: ২০।
[৬]. ইবনু খুযাইমাহ, হা/২০৯৫; সনদ: দ্ব‘ঈফ (তাহক্বীক্ব: আলবানী), হাসান (তাহক্বীক্ব: আহমাদ শাকির)।
·
উৎস:
ফতোয়ার ভিডিয়ো ক্লিপটি ইউটিউব (الشيخ صالح الفوزان) থেকে নেওয়া হয়েছে।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...