Sunday 21 September 2014

নারী এবং পুরুষের নামাযের নিয়ম এক




"নারী এবং পুরুষের নামাযের মধ্যে পার্থক্য",আমি ইন্টারনেটে এই আর্টিকেলটি পড়ে বিস্মিত হলাম যে, এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে দুর্বল এবংজাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে লেখা। হয়তোবাআর্টিকেলটির লেখক হাদীস শাস্ত্রের উসুল সম্পর্কেতার জ্ঞানের অভাবের কারণে যাচাই-বাছাই ছাড়াই লেখাটি লিখেছেন বা কপি-পেস্ট করেছেন অথবাতিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা আরোপ করেছেন। তাই,ইন শা’ আল্লাহ আমি ই লেখায় আর্টিকেলটির মধ্যে উম্মাহর জন্য, বিশেষকরে বোনদের জন্য ক্ষতিকর এমন বিষয়গুলো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করবো।

১ নাম্বার প্রমানঃ
عن عبد الله بن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذاجلست المرأة في الصلوة وضعت فخذها على فخذها الاخرى وإذاسجدت الصقت بطنها في فخذيها كالستر ما يكون لها وان اللهتعالى ينظر إليها ويقول يا ملائكتى اشهدكم انى قد غفرت لها
অনুবাদ: ইবনে উমর (রাঃবর্ণনা করেন, নবী (সাঃ) বলেন, যখন একটি মহিলা নামায পড়ে, সে যেনো তার এক উরুর উপর তার অন্যউরুকে রাখে এবং তার উরুর সাথে তার পেটমিশিয়ে রাখে যাতে তার জন্য অধিকতরগোপনীয়তা রক্ষা হয়। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তারদিকে তাকান এবং ফেরেশতাদেরকে বলেন! "হে ফেরেশতাগণ, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম”। [সুনান আল বায়হাকী আলকুবরা (৩/৭৪)]

আমাদের উত্তর:
এই হাদিসের একজন রাবী আবু মাতি আল হাকিম বিন আব্দুল্লাহ আল বালখী" সম্পর্কে ‘সুনান আলবায়হাকী আল কুবরা’ বইয়ের একই পৃষ্ঠায় লেখা আছে - 
(ইমাম) আহমদ বলেন: "আবু 
মাতীর বর্ণিত হাদীসে দুর্বলতা স্পষ্ট এবং তার রেওয়ায়েতগুলোমুতাবিয়াত হিসেবে ব্যবহ্নত হয়না এবং আমাদের শিক্ষক বলেছেন, সে (বালখী) ইয়াহিয়া বিনমাঈন এবং অন্যান্যদের মত অনুযায়ী রাবী হিসেবে যয়ীফ”।
লেখকের কেন একটি ছলচাতুরি? একটি পৃষ্ঠাসম্পূর্ণ আরবি উদ্ধৃত করুন অথবা একটি পৃষ্ঠারসম্পূর্ণ স্ক্যান আপলোড করুন। যারা তাদের সাইটে এই প্রতারণাপূর্ণ আর্টিকেলটি আপলোড করেছেনতাদেরকে বলছি, অধিকাংশ মুহাদ্দীসিনদের মতা জানার জন্য দেখুন ‘লিসান আল মিযান’(২/৩৩৪-৩৩৬)। 
এই হা
দীসের দ্বিতীয় রাবী মুহাম্মদ বিন আল কাসিম আল বালখী হল একজন প্রতারক, দেখুন‘লিসান আল মীযান’ (৫/৩৪৭) এবং ‘মীযানআল আইতিদাল’।
এই হা
দীসের তৃতীয় রাবী উবায়েদ বিন মোহাম্মদ আল সারখীর ইতিহাস অজানা। 

উপসংহার: এমনকি ইমাম বায়হাকী (রহঃ) স্বয়ং নিজে হাদীসটিকে জাল বলেছেন এবং এই বিষয়েহাদীসটির পরে উল্লেখ করেছেন "হাদীসান যয়ীফানলা ইয়া হাতায বা মাসা লাহা" –
এই রেওয়ায়েতটি  কানজ-উল উম্মাল এ (৭/৫৪৯ হাদীস নাম্বার ২০২০৩উল্লেখিত হয়েছেএবং বায়হাকী  এবং ইবনে আদি (আল কামিল২/৫০১) সম্পর্কে বলা হয়েছে - 
"
رواه ابن عدى والبيهقي وضعفة عن ابن عمر"
ইবনে ওমর থেকে ইবনে আদী এবং আল বায়হাকীর বর্ণিত এই রেওয়ায়েতটি যয়ীফ।

২ নাম্বার প্রমানঃ
عن يزيدَ بن أبي حبيب أنَّ رسولَ الله مَرَّ عَلَى امرأتينِ تصليانِ،فقال «إذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بعضَ اللحمِ إلى الأرضِ، فإنَّ المرأةَلَيْسَتْ في ذلِكَ كالرجلِ
অনুবাদঃ ইয়াজীদ ইবনে আবি হাবীব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নামাযরত অবস্থায়দুটি মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এবং বলেন,যখন তোমরা সিজদা করো, তোমরা তোমাদেরশরীর মাটিতে মিশিয়ে রাখবে কারণ, এইক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের মত না" [সুনান আল বায়হাকীআল কুবরা (৩/৭৪)]
ই’লাল আল সুন্নাহ (৩/২৬বইতে বলা হয়েছে যে, এই হাদিসের রাবীরা নির্ভরযোগ্য ও বাতিলনন।

আমাদের উত্তর:
ইমাম 
বায়হাকী (হিজরী ৮৭) নিজে আবু দাউদএর কিতাব আল মারাসিল থেকে কপি করার আগে বলেন -
এই হাদিস হল "
মুনকাতা(বিচ্ছিন্ন)
ইয়াজীদ বিন আবি হাবীব  ৫৩ হজরীতে জন্মগ্রহন করেন এবং ১২৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন
তাহদীব আত তাহদীব ভলিউম ১১, পৃষ্ঠা ২৭৯ অতএব, এই রেওয়ায়েতে ইয়াজীদ থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত অন্তত ২টি চেইন মিসিং আছে
"মুনকাতাহাদীস সম্পর্কে উসুল-আল হাদিস জাদীদ বইয়ে লেখা আছে:

"উলেমাদের ঐক্যমত্য আছে যে, মুনকাতা রেওয়ায়েত  যয়ীফ বা দূর্বলকারণ এর মাহযুফরাবী হল মাজহুল"
(
তাফসীর মাস্তালহা আল হাদীস ৮৭,১ আলমুনকাতা)
আবু 
দাউদের কিতাব আল মারাসিল এর মধ্যে এ কথাও ল্লেখিত আছে যে, তাউস (রাহঃবর্ণনা করেন,
"নবী (
সাঃনামাযে বুকে উপর তার হাতবাঁধতেন" (পাতা ৪০)
আহলে তাকলীদ যারা নিজেরা মুরসাল হাদীসেরউপর আমল করেনা, তখন তারা কেন আমাদেরকাছে সেগুলো উপস্থাপন করেন? আল্লাহ ভাল জানেন। 
এই রেওয়ায়েতের মধ্যে দ্বিতীয় আপত্তি হল যে,রাবী সেলিম বিন গাইলান হল মাতরুক(পরিত্যক্ত)
আল্লামা তুরকুমানি আল-হানাফী নিজে এইরেওয়ায়ের উদ্ধৃতি দেওয়ার পরে বলেন,
ظاهر كلامه أنه ليس في هذا الحديث إلا الانقطاع ، وسالممتروك ، حكاه صاحب الميزان عن الدارقطني
আপাতদৃষ্টিতে, বিহাকী ( হঃ) এর ভাষ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, যে এতে শুধুমাত্র ইনকিতা(বিচ্ছিন্নতা) রয়েছে।  "আল মীযান" (যাহাবী)গ্রন্থের লেখক দারা কুতনী থেকে বর্ণনা করেন, “(আসলে) সালেম একজন পরিত্যক্ত রাবী”। আলজোহার আল নাকী ফি রাদ্দ আল বিহাকী ২/৩১৫।
সাওয়ালাত আল বুরকানীতে (৩৫/২০৫) উল্লেখকরা হয়েছে -
وسألته عن (سالم بن غيلان); يروي عنه ابن وهب? فقال:بصري متروك
“বাসরী মাতরুক”।
শায়খ আলবানীর মত অনুযায়ী এই হাদীস যয়ীফ,সিলসিলা আহাদীস আল যয়ীফ হাদীস নং ২৬৫২।

৩ নাম্বার প্রমানঃ
عن عليّ قالإذا سجدت المرأة فلتحتفر ولتضم فخذيها.
অনুবাদ: আমির উল মুমিনীন সায়্যিদিনা আলী (রাঃ) বলেন: “যখন একজন নারী সিজদাতে যায় তার নিতম্বের উপর বসার সময় একপাশে হেলে বসা উচিত এবং তার একটির উরুর কাছাকাছি অন্য উরু রাখা উচিত [মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, (১/৩০২হাদীস ২৭৭৩)] 
এই আসারের রেওয়ায়েতটি অন্যান্য সনদেও বর্ণিত হয়েছে। মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাকে তা ইসরাইলী সনদে  এবং ইবনে আবি শায়বাতে এটি আবুল আহওয়াস থেকে এসেছে।

আমাদের উত্তর:
সর্বপ্রথমে যেহাদিসটি হল মওকুফ (বন্ধ). 
যদিও ভাই এই হাদীসটি যে বায়হাকীতে (২/২২৩) রয়েছে তা উল্লেখ করেননি, 
উভয় বায়হাকী এবং মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাতে এই হাদীস থেকে "আলী (রাঃ) থেকে আল হারিস থেকে আবি ইসহাক” এই সনদে বর্ণিত হয়েছে।  
অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনদের মত অনুযায়ী রাবী "আল হারিসহল কট্টর মাজরুহ রাবী। 
জাইলি হানাফী নিজে বলেন, " তার (আল হারিসের) কাছ থেকে হুজ্জাহ (বা দলীল) নেওয়া যাবে না" (নাসব আর রায়া ২/৪২৬), তিনি  আরো বলেছেন, "শুবা এবং আল মাদিনি তাকে কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী) বলে ঘোষণা করেছেন" ((নাসব আর রায়া ২/৩)
ইমাম মুসলিম (রহঃ) তাঁর সহীহ মুসলিমের মুকাদ্দামায় "আল হারিস বিন আব্দুল্লাহ আলাওয়ার"সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন  যে, ইমাম আল শোবি (রহঃ) বলেছেন "তিনি কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী)" (সহীহ মুসলিম ভলিউম ১)
এই হাদিসের দ্বিতীয় রাবী হলো "আবু ইসহাক"যিনি একজন মুদাস্সিল (তাবাকাত আল মুদাস্সিলিন লা ইবনে ই হাজারআল মারতাবা আল সালাসা ৩/৯১)। 

উপসংহার: এই রেওয়ায়েত বাতিল (মিথ্যা)।
গুরুত্বপূর্ণ টীকা: 
তারাব্বু সম্পর্কিত ৪ এবং ৫ নাম্বার প্রমানের আসন্ন হাদীসগুলো ৬ নাম্বার প্রমানের খণ্ডন দ্বারা ব্যাখ্যা করা হবে কারণ হানাফীরা বিশ্বাস করে যে তাররাবু রহিত করা হয়েছিল। 
১ নাম্বার পয়েন্টতারাব্বুর ক্রমানুসার কোনো মারফু হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়না। 
২ নাম্বার পয়েন্টযদি কোনো মারফু হাদীস থেকে তাররাবুর ক্রমানুসার প্রমানিত না হয়তাহলে কেন আপনি মারফু হাদীসের পরিবর্তে মাকউফ রেওয়ায়েতের উপর ভিত্তি করে আপনার মাযহাবকে গ্রহণ করবেন?
৩ নাম্বার পয়েন্ট: হানাফীদের মতে যেখানে “তাররাবু” মানসুখ হয়েছে সুতরাংকেনো তারা এটা থেকে উদ্ধৃতি করছে? পার্থক্য ছিলো বলতে গেলে তাদের একটি মারফু হাদিস থেকে উদ্ধৃত করা উচিত যে এই আদেশ যেমন পূর্বে রুকু করা হতো হাঁটুর মধ্যে হাত স্থাপন করে কিন্তু পরে এটি মনসুখ করা হয়েছিল। একইভাবেপূর্বে কিবলাহ ছিল বাইতুল মুকাদ্দাস এবং পরে এটা পরিবর্তন করে কাবা করা হয়। তাই সাহাবারা এটি বর্ণনা করেছেন। হানাফীদের এই প্রমান দেওয়া উচিত যে এই আদেশ কখন দেওয়া হয়েছিলমুসনাদে আবু হানিফা থেকে তাদের উদ্ধৃত করা মনসুখ করারহাদিসটি দুর্বল।
সুতরাং, কিভাবে এটি রহিত হয়েছে তার ক্রমানুসার দেওয়া হয় না। 
যদি এটা রহিত করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের আবার কোন সহীহ মারফু হাদীস উদ্ধৃত করতে হবে, নতুন পদ্ধতি কি সেইটা জানার জন্য।

যদি এটা রহিত হয়ে থাকে এবং কোন সহীহ হাদীস বর্তমান না থাকে, তাহলে এটা গ্রহণ করা উচিত যে পূর্বে ও পরে কোনো পার্থক্য নেইঅবশ্যই হানাফীরা তাদের কিবলাহ বাইতুল মুকাদ্দাসকে ধরে নামায পড়েনা।
আরেকটি উদাহরণ হল যে হানাফীরা দাবী করে রুকুর আগে এবং রুকুর পরে "রাফা ইয়াদাইন"রহিত করা হয়েছে, তাই যখন তারা নিজেরা রহিত কোনো আমল করেনা তাহলে তারা কেন আমাদের সামনে এই হাদীসগুলো উপস্থিত করে? 
যখন কোন সহীহ হাদীস এবং মারফু নেই  যে তাররাবুর  আদেশ ক্রমানুসারে করা হয়েছিল,তাহলে কিভাবে সম্ভব যে সাহাবীরা কোনো কিছুর আমল করেছেন যা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিরোধী?

৪ নাম্বার প্রমানঃ
عن خالد بن اللجلاج قالكن النساء يؤمرن أن يتربعنإذا جلسن في الصلاة ولا يجلسن جلوس الرجال علىأوراكهن 
অনুবাদ: খালিদ ইবনে জিল্লাজ (রাঃ) বর্ণনা করেননারীদেরকে আদেশ করা হয়েছে নামাযে বসা অবস্থায় তারাব্বু করতে এবং তারা "তাদের পুরুষদের মত বসা উচিত নয়" [মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বান (১/৩০৩)] 
উল্লেখ্য: তারাব্বু মানে আড়াআড়িভাবে পা রেখে বসা।

আমাদের উত্তর:
র সনদ হলো
 
حدثنا أبو بكر قال: نا إسماعيل بن علية عن محمد بن إسحاق عن زرعة عن إبراهيم عن خالد بن اللجلاج قال: كن النساء يؤمرن أن يتربعن إذا جلسن في الصلاة ولا يجلسن جلوس الرجال على أوراكهن يتقي ذلك على المرأة مخافة أن يكون منها الشيء.
মুহাম্মদ বিন ইসহাক হল মুদাল্লিস 
দ্বিতী্যত, যখন তিনি তালাক সম্পর্কিত হাদীসগুলোতে রাবী হিসেবে আসেন তখন এই পক্ষপাতদুষ্ট মানুষরা (হানাফীরা) তার কঠোরসমালোচনা করে এবং তার হাদীস প্রত্যাখ্যান করে।
হক্ক হলো তিনি সত্যবাদী কিন্তু মুদাল্লিস এবং যদি তিনি যখন কোনো রেওয়ায়েতে আসেন তখন তাপ্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য না। 
উম্মে দারদা (রাঃথেকে বর্ণিত আছে, তিনি নামাযে পুরুষদের মতোই বসতেন ([মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ  ১/২০৭ হাদীস নং ২৭৮৫, এবং উমদাতুল কারী ৬/১০১, সনদ কুয়িআল তারিখ আল সাগীর আল-বুখারী  ১/২২৩তারিখ দামিস্কআল ইবনে আসাকির ৭৪/১১৭এবং তাগলিক আলতালিক ২/৩২৯)
এবং এই হাদিস 
সহীহ হাদিস যা ইমাম বুখারী(রহঃবর্ণনা করেছেন তার বিরুদ্ধে,
"
উম্মে দারদা (রাঃ) নামাযে পুরুষদের মতোই বসতেন এবং তিনি একজন ফকীহ ছিলেন" (বুখারী ৮২৭)বিষয়টা কেমন, উম্মে দারদা (রাঃ) যিনি একজন ফকীহ ছিলেন এবং বিখ্যাত সাহাবী সায়্যিদিনা আবুদারদা (রা) এর স্ত্রী যার থেকে তিনি নামাযেরপদ্ধতি শিখেছেন? এটি আরেক বিখ্যাত তাবেয়ীইমাম ইব্রাহিম আল নাখয়ী (রহঃ) যিনি ইমাম আবু হানিফার শিক্ষক, তার উক্তি থেকে আরোপরিষ্কার হয় "নামাযে নারীদের পুরুষদের মতবসতে হবে" (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ ১/২৭১ হাদীস নং ২৭৮৮, অন্য সনদে হাদীস নং২৮০৮, সহীহ সনদ)

স্ক্যানকৃত পৃষ্ঠা:

৫ নাম্বার প্রমানঃ
حدثنا أبو بكر قال نا أبو خالد عن محمد بن عجلان عن نافع أن صفية كانت تصلي وهي متربعة.

অনুবাদ: নাফি বর্ণনা করেন যে সায়্যিদ সাফিয়াহ(রা) "তারাব্বুঅবস্থায় নামায পড়তেন[মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বান (১/৩০৩)]

আমাদের উত্তরঃ
হানাফীরা কেনো মারফু হাদিস থেকে উদ্ধৃতি করতেপারগএই রেওয়ায়েত হলো মওকুফ (বিচ্ছিন্ন)। দলীল হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর হাদিস দেওয়াউচিত
এই আসারে মুহাম্মদ বিন আজলান কজন‘মুদাল্লিস’ (তাবাকাত  মুদাল্লিসীন ৩/৯৮)এবং তিনি অপরিচিত কারো থেকে বর্ণনা করেছেন,তাই তিনি ‘হুজ্জাহ’ হতে পারেন না। অতএব এর জন্যও কোনো প্রমান নেই।

৬ নাম্বার প্রমানঃ
(عن نافع، عن ابن عمر أنه سئل كيف كن النساء يصلين على عهد رسول اللّه صلى اللّه عليه وسلم أي في زمانه صلى اللّه عليه وسلم (قالكن يتربعنأي في حال قعودهن (ثم أمرن أن يحتفزن

অনুবাদ: ইবনে উমরকে (রাঃ) প্রশ্ন করা হয়েছিলো, রাসুলুল্লাহ (সাঃএর সময় মহিলারাকিভাবে বসতেন সে সম্পর্কে। তিনি বলেন: শুরুর দিকে তারা "তারাব্বু" করতেন কিন্তু পরে তারা‘ইহতিফায’ করতে আদিষ্ট হন [মুসনাদ ইমাম আবুহানিফা (১/১২০)]
উল্লেখ্য: "তারাব্বুপরবর্তীতে রহিত হয়ে যায় এবং‘ইহতিফায’ (অর্থাত্ নিতম্বের উপর একপাশে বসা) হয়ে ওঠে পরবর্তী প্র্যাকটিস, এমনকি এই রদ নিজেই পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে প্রার্থনা এর পার্থক্য প্রমাণ করে।
এই হাদিস ছাড়াও অন্যান্য হাদিসগুলো দুর্বল, এবং সম্পর্কিত ব্যখ্যা পূর্ববর্তী দুটি হাদিসের উত্তরদিবে।
এটি দুর্বল কারণ তা সনদে আবু মুহাম্মাদ আলবুখারী, যার আসল নাম হল আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন ইয়াকুব আল হারিসি আল বুখারীরয়েছে তাঁর কুনিয়্যাহ হল আবু মুহাম্মদ ইমাম ইবনে আল জাউযী বলেন, ইমাম আবু সায়ীদ আলরাউস বলেন: "তিনি জাল হাদিস রচনা করারজন্য অভিযুক্ত"। ইমাম আহমদ আল সুলাইমানীবলেছেন: "তিনি বিভিন্ন মতন বিভিন্ন হাদিসেসনদে ব্যবহার করতেনএবং এটা হলো জাল হাদীস তৈরী করার একটা উপায়। ইমাম আবু জুর’আবলেছেন, তিনি দুর্বল (জয়ীফ)"। ইমাম হাকিম বলেছেন "তিনি বিশ্বস্ত রাবীর সঙ্গে অযাচিত রেওয়ায়েত জুড়ে দিয়েছেন। ইমাম খাতিব আলবাগদাদী বলেছেন: "তিনি বিশ্বস্ত ন"। (মীযানআল ই’তেদাল ২/৪৯৬লিসান আল মীযান৩/৩৪৮)। মুহাদ্দিস এবং রিজাল শাস্ত্রের বাকিইমামগণ তাকে দুর্বল (জয়ীফ) বলে অভিহিত করেছেন। এবং এই হাদিস এর কিছু রাবী দুর্বল এবং মাজহুল দেখুন (ফতোয়ায়ে উদ্দিন আল খালিস৪/৮৬)
সুতরাং এই হাদিস দুর্বল এবং একে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না

৭ নাম্বার প্রমানঃ
حدّثنا أبو بكر قال نا ابن مبارك عن هشام عن الحسن قال:المرأة تضم في السجود
অনুবাদ: হাসান আল বসরী (রহঃ) বলেন: একজন মহিলা সিজদার সময় নিজেকে জড়োসড়ো করে রাখাউচিত। [মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বান (১/২৭০)]

আমাদের উত্তরঃ
এই রেওয়ায়েতের সনদ - ইবনে আল মুবারকথেকে হাশাম থেকে আল হাসান হাশাম বিন হাসান একজন মুদাল্লিস (তাবাকাতআল মুদাল্লিসীন, আল মারতাবা আল সালাসা ৩/১১০এটা হলো মানান, সেইজন্য দুর্বল

৮ নাম্বার প্রমানঃ
وعن وائلِ بنِ حجرٍ قالَقالَ لي رسولُ الله صلى الله عليه وسلّم: «يا وائلُ بنَ حجرٍ إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ، والمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا».
অনুবাদওয়াইল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সাঃতাঁকে বলেছে, তুমি যখন(পুরুষ) নামায শুরু করো খন তোমার কানপর্যন্ত হাত তুলবেযেখানে একজন মহিলা(কেবলমাত্র) তার কাঁধ পর্যন্ত তাদের হাত তুলবে।[মাজমু আজ-জাওয়েদ (২/১০৩), ই’লা আস-সুন্নান (২/১৫৬)]

আমাদের উত্তরঃ
হাফিজ নূর 
দ্দীন আল হায়সামী (রহঃতার বই‘মাজমু আজ-জাওয়েদে এই সনদ উল্লেখ করেছেনএবং বলছে: "আমি উম্মে ইয়াহিয়াকে চিনিনা, বাকী রাবীদের বিশ্বস্ত হিসেবে জানি"
যখন ইতিমধ্যে হাফিজ 
হায়সামী (রহঃএটিকেজিররাহ করেছেনকেন এই প্রবন্ধের লেখক সেটিগোপন করেছেন?
এক
টি কৌতুকহানাফী তার্কিক আমিন ওকরাভীপ্রমাণ হিসেবে এই হাদীস উপস্থাপন করেছেন(মাজমুয়া রাসায়েল ভল্যুম ১, পাতা ২ থেকে পাতা৯৪)
এবং
, যখন এই রাবী থেকে অন্য হাদিস হানাফীদেরবিরুদ্ধে যায়, সে সম্পর্কে তিনি লিখেছেন"উম্মেইয়াহিয়া হল মাজহুলমাজমুয়া রাসায়েল ভল্যুম ১,পাতা ১ থেকে পাতা ৩৪৬)
ফাতহুল বারীতে উল্লেখিত হয়েছে যে, "যদি একটিহাদিসে একজন রাবী মাজহুল হয়, তাহলে সেটি ছুড়ে ফেলো কারণ এর ফলে হাদিসটি দুর্বল হয়ে যায় এবং মাজহুল রাবী রেওয়ায়েত হুজ্জত হতে পারেনা" (ফাতহুল বারী ১/১৪৬)
নবী (সাঃবলেন, "তোমরা ঠিক সেইভাবে নামায পড় যেইভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো"(বুখারী)
এখনকিছু মানুষকে এরকম বলতে দেখা যায় যে"এটা অযৌক্তিক হবে কারণ, নবী (সাঃ) নামায পড়ার সময় পাগড়ি পড়া ছিলেন, তাই কোনোনারী পাগড়ি ড়া শুরু করা উচিত হবে”?
এই 
যুক্তি অযৌক্তিক কারণ, নবী (সাঃএরকম বলেননি যে, "তোমরা ঠিক সেইভাবে কাপড়ে পড়ো যেইভাবে আমাকে কাপড় পড়তে দেখেছো" নবী(সাঃ)নামাযের পোশাক সম্পর্কে না, নামাযেরপদ্ধতি সম্পর্কে জো দিয়েছেন।
আরেকটি অভিযোগঅনুবাদনবী (সাঃবলেন:জুমু’আর নামায জামাতে পড়া প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব, শুধুমাত্র চার প্রকার মানুষ ছাড়া,(দাস ("মহিলা" (শিশু (4) এবংঅসুস্থ ব্যক্তি  (ইমাম হাকিম তার আলমুসতাদারাক আলা সাহীহাইন  বর্ণনা করেছেনযেখানে ইমাম হাকিম হাদীসেটিকে বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন এবং ইমামযাহাবী তার সাথে "একমত" হয়েছেন (১/৪২৩হাদীস # ১০৬২)] "
যদি এই হাদিস 
থেকে কেউ নামাযের ভিন্ন পদ্ধতিপ্রমান করার চেষ্টা করেন তবে তাকে সংশোধন করে নেয়া উচিত, কারণ এই হাদীস নামাযেরপদ্ধতি সম্পর্কে কথা বলেনাঅন্যথায় হানাফীদেরদাস ও শিশুদের জন্য ভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। 
আরেকটি অভিযোগঅনুবাদএটা আবু 
হুরাইরা(রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (শান্তি তার উপর)বলেনতাসবীহ (ইমামের ভুল হলে লোকমা দেওয়ার জন্য আল্লাহু আকবার বলা) পুরুষদেরজন্য আর মহিলাদের জন্য হলো হাত তালি দেওয়া। [জামি-উস-সাহীহ আল বুঝারী(১/৪০২)]
এছাড়াওনবী (সাঃরোযা সম্পর্কে বলেছে,কিন্তু তিনি রোযা জন্য আলাদা কোনো পদ্ধতিবলেন নি, কিন্তু একটিমাত্র সাধারণ হুকুম যা নারী ও পুরুষের উভয়ের জন্য কার্যকর

আলেমদের বক্তব্য:

ইমাম 
বুখারী (রহঃসহীহ সনদের সঙ্গে উম্মে দারদা (রাঃথেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নামাযে পুরুষদের মতই বসতেন [আল তারিখ আলসাগীর আল বুখারী ৯০]
ইব্রাহিম আল 
নাখাই (রহঃ) বলেন "নারীরানামাযে পুরুষদের মত বসবে" [ইবনে আবি শায়বাহ ১/১৭০]
ইবনে 
হাজম (রহঃ) বলেন "পুরুষ এবং মহিলাদেরনামাযের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই" [আল মাহাল্লা৩/৩৭]
ইবনে 
হাজার (রহঃ) বলেন "পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য তাকবীরের সময় হাত তোলামধ্যে কোনো পার্থক্য নেই" [ফাতহুল বারী ২/২২২]
ইবনে 
কুদামাহ (রহঃ) বলেন "প্রকৃতপক্ষে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য নামাযের পদ্ধতি এক বলেইপ্রমাণিত হয়েছে শুধুমাত্র এটা ছাড়া যে তারজন্যরুকু এবং সিজদার সময় নিজেকে আবৃত রাখা মুস্তাহাব" [আল মুগনি ২/২৫৮]
ইমাম 
নববী (রহঃ) বলেন "নারীদের (নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায়)পুরুষদের মতই বুকের উপর হাতবাঁধা উচিত" [শরাহ মুসলিম ১/১৯৫]
ইমাম 
বায়হাকী (রহঃ) সুনান আল কুবরাতে্বতন্ত্র একটি অধ্যায়ে বলেছেন যে "সুন্নাহ হলোনামাযে বুকের উপর হাত বাঁধা"
শায়খ নাসির উদ্দীন আল-আলবানী (রহঃ) বলেন,
উপরন্তু, 
ইমাম বুখারী তারিখ আস-সাগীরে (পৃষ্টা৯৫উম্মে দারদা থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, নামাযের মধ্যে যেমন একজন পুরুষবসতো তিনিও ঠিক সেভাবেই বসতেন, এবং তিনিছিলেন একজন ফকীহা (দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানী)।
একজন নারী সিজদার সময় পুরুষের মতো বসবে না – এ সম্পর্কিত হাদীসটি মুরসাল এবং সহীহ নয়। আবু দাউদ আল মারাসিল থেকে ইয়াজিদইবনে আবি হাবীব কর্তৃ এই রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ থেকে তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহর মাসায়েলে ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে নামাযের মধ্যে আড়াআড়ি বসতে শিখাতেন, তার সনদ সহীহ নয়কারণ তার মধ্যেআব্দুল্লাহ ইবনে উমর আল আমরি রয়েছেন, যিনিএকজন দুর্বল রাবী। (সিফাত সালাহ আল নাবী)

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...