Tuesday 26 August 2014

তায়াম্মুমের পদ্ধতি – ভিডিও সহ


শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।
বক্তাঃ শেইখ সাইফুদ্দিন বেল্লাল মাদানী
তায়াম্মুমের পদ্ধতি

তায়াম্মুমের বিবরণ (صفة التيمم )

সংজ্ঞা : তায়াম্মুম (التيمم) অর্থ ‘সংকল্প করা’। পারিভাষিক অর্থে : ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। [1] আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لآمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ، (المائدة 6)-
‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ কর ও তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’…।[2]
পদ্ধতি : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটির উপর দু’হাত মেরে তাতে ফুঁক দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার বুলাবে।[3] দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার হাদীছ যঈফ। [4]
তায়াম্মুমের কারণ সমূহ :
(১) যদি পাক পানি না পাওয়া যায় (২) পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার ভয় থাকে (৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে (৪) যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি। উপরোক্ত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ওযূ বা ফরয গোসলের পরিবর্তে প্রয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ একটানা ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে।[5]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ
‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’। [6]
পবিত্র মাটি :
আরবী পরিভাষায় ‘মাটি’ বলতে ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়।[7] আরব দেশের মাটি অধিকাংশ পাথুরে ও বালুকাময়। বিভিন্ন সফরে আল্লাহর নবী (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ বালুকাময় মরুভূমির মধ্য দিয়ে বহু দূরের রাস্তা অতিক্রম করতেন। বিশেষ করে মদীনা হ’তে প্রায় ৭৫০ কি: মি: দূরে ৯ম হিজরীর রজব মোতাবেক ৬৩০ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবূক যুদ্ধের সফরে তাঁরা মরুভূমির মধ্যে দারুণ পানির কষ্টে পড়েছিলেন। কিন্তু ‘তায়াম্মুমের’ জন্য দূর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায় না। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইল্স, চুন ইত্যাদি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ জায়েয নয়।[8]
জ্ঞাতব্য :
(১) ‘তায়াম্মুম’ করে ছালাত আদায়ের পরে ওয়াক্তের মধ্যে পানি পাওয়া গেলে পুনরায় ঐ ছালাত আদায় করতে হবে না।[9]
(২) ওযূর মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায়, তায়াম্মুমের দ্বারা সেসব কাজ করা যায়। অমনিভাবে যেসব কারণে ওযূ ভঙ্গ হয়, সেসব কারণে ‘তায়াম্মুম’ ভঙ্গ হয়।
(৩) যদি মাটি বা পানি কিছুই না পাওয়া যায়, তাহ’লে বিনা ওযূতেই ছালাত আদায় করবে।[10]
[1] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৯। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য আবুবকর-পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেননা সম্ভবত: ৫ম হিজরী সনে বনুল মুছত্বালিক্ব যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মদীনার উপকণ্ঠে ‘বায়দা’ (البَيْدَاء) নামক স্থানে পৌঁছে আয়েশা (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটি খোঁজার জন্য কাফেলা থামিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে কোন পানি ছিল না। ফলে এভাবেই পানি ছাড়া সকাল হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন (মায়েদাহ ৬)। ছাহাবী উসায়েদ বিন হুযায়ের (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম অবদান নয় (مَا هِىَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِى بَكْرٍ)’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উট উঠিয়ে দিলাম, যার উপরে আমরা ছিলাম এবং তার নীচে হারটি পেয়ে গেলাম’ (বুখারী, ফৎহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৮ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮)।
[2] . মায়েদাহ ৫/৬, নিসা ৪/৪৩।
[3] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৮ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।
[4] . আবুদাঊদ হা/৩৩০, অনুচ্ছেদ-১২৪; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬।
[5] . মায়েদাহ ৫/৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৭ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০ ; বুখারী হা/৩৪৪, ১/৪৯ পৃঃ; আহমাদ, তিরমিযী ইত্যাদি মিশকাত হা/৫৩০।
[6] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৩০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।
[7] . যেমন বলা হয়েছে, الصعيد وجه الأرض ترابا كان أو غيره। ‘মাটি হ’ল ভূ-পৃষ্ঠ। চাই তা নিরেট মাটি হৌক বা অন্য কিছু হৌক’ (আল-মিছবাহুল মুনীর)।
]8] . আলোচনা দ্রষ্টব্য : ছাদেক শিয়ালকোটি, ছালাতুর রসূল; টীকা, পৃঃ ১৪৮-৪৯।
[9] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৫৩৩; আবুদাঊদ হা/৩৩৮।
[10] . বুখারী হা/৩৩৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ ও অন্যান্য; নায়লুল আওত্বার ১/৪০০, ‘পানি ও মাটি ব্যতীত ছালাত’ অনুচ্ছেদ

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...