Monday 25 August 2014

তাকদীর নিয়ে আলোচনাঃ আমার ভাগ্য খুব খারাপ......


আতা বিন আবি রাবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, “আমি কি তোমাকে জান্নাতের একজন নারীকে দেখাবো? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, “এই কালো মহিলাটি একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে বললো, আমার মৃগী রোগ আছে এবং অজ্ঞান অবস্থায় আমার গায়ে কোনো কাপড় থাকেনা। দয়া করে আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করুন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেন, তুমি যদি চাও এই রোগের ব্যাপারে ধৈর্য ধরতে তাহলে এটা তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, আর তুমি যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করবো। মহিলাটি বললো, তাহলে আমি এই রোগের ব্যাপারে ধৈর্য ধরবো। কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায় আমার গায়ে কোনো কাপড় থাকেনা। আমার জন্য দুয়া করুন, যাতে এইরকম না হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সেই দুয়া করলেন (যাতে করে তার গা থেকে কাপড় সড়ে না যায়)।
সহীহ আল-বুখারী ৭:৫৫৫।
#ব্যাখ্যাঃ এই মহিলা খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে অপশন দিয়েছিলেন, হয় এইভাবে রোগে কষ্ট ভোগ করে ধৈর্য ধারণ করবে আর এর প্রতিদান হিসেবে জান্নাতে যাবে। অথবা, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন। তখন সে ভালো ঠিকই হবে কিন্তু তার জান্নাতে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। মহিলাটি বুদ্ধিমান এইজন্য যে তিনি যদিও অপছন্দনীয় ও কষ্টদায়ক একটা রোগ বেছে নিলেন – কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগটাকে বেছে নিলেন। আর এইজন্য সাহাবীদের মধ্যে সবচাইতে জ্ঞানী একজন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) তার ছাত্রকে “জান্নাতী নারী” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
আমাদের জন্য #শিক্ষাঃ আমাদের জীবনে অনেক সময় দুঃখ কষ্ট আসে। আমরা যা চাই অনেক সময় হয় ঠিক তার উলটা। আর তখন আমরা বলা শুরু করু, আমার কপাল ভালোনা, ভাগ্যটাই খারাপ...না, এই কথা মোটেই ঠিক না।
কারো ভাগ্য ভালো তখন হবে যখন আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, আর কারো ভাগ্য খারাপ তখন হবে যখন সে জাহান্নামে যাবে। আর দুনিয়ার জীবনে ভালো মন্দ সবকিছুই হচ্ছে পরীক্ষা। এইগুলো হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্ন – এর বিপরীত আপনি কি আমল করছেন তার অনুপাতে কেয়ামতের দিন রেজাল্ট দেয়া হবে – আর তখন কে ভাগ্যবান আর কে হতভাগ্য নির্ধারিত হবে। এমনও হতে পারে, দুনিয়ার জীবনে আপনি একটা জিনিস পছন্দ করছেন না, অথচ এটাই আপনার জন্য কল্যানকর কিন্তু এখন আপনি সেটা বুঝতে পারছেন না। যেমন উপরের হাদীসে বর্ণিত মহিলার ঘটনাটি। কেয়ামতের দিন হয়তো বুঝতে পারবেন সেটা আপনার জন্য কতো কল্যান নিয়ে এসেছে। আবার, এমনও হতে পারে আপনি যেটাকে ভালো মনে করছেন সেটা আপনার জন্য আরো বিপদজনক।
এই জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, “কামনা বাসনা দ্বারা জাহান্নামকে ঢেকে রাখা হয়েছে, আর কষ্ট ও বিপদ-আপদ দিয়ে জান্নাতকে ঢেকে রাখা হয়েছে”।
সহীহ আল-বুখারীঃ ৬৪৮৭।
হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে কেয়ামতের দিন মহাসাফল্য দান করো, আমিন।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...