Tuesday 25 April 2017

হে আমার মেয়ে চতুর্থ পর্ব


হে আমার মেয়ে!তোমার পথহারা বোনদেরকে এ সব কথা বলে উপদেশ দাওতাদেরকে মর্মান্তিক করুণ পরিণতিরকথা শুনাও। ইউরোপ-আমেরিকার যুবতীদের পথ ধরা থেকে তোমার ঈমানদার বোনদেরকে সতর্ক করএবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই তাদের মধ্যে প্রতিষেধক রোপন কর।
হে আমারমেয়ে!আমি এ কথা বলছি না যেতোমার প্রচেষ্টায় মুসলিম রমনীগণ এক লাফে প্রথমযামানার মুসলিম নারীদের মত হয়ে যাবে। এটি অসম্ভব। কারণ বর্তমানে মুসলিম নারীগণ যেঅবস্থায় এসে পৌঁছেছেতা এক লাফে এসে পৌঁছে নি। তারা প্রথমে মাথার চুলের একাংশখুলেছেতারপর পুরোটাই। অতঃপর কাপড় ছোট করতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে দীর্ঘ দিনেরব্যবধানে তারা জাতির পুরুষদের গাফিলতির সুযোগে বর্তমানের দুঃখজনক পরিস্থিতির শিকারহয়েছে। তারা হয়ত কল্পনাও করতে পারে নি যে,বিষয়টি এ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে।
তুমিযদি ছোট একটি ঘড়ির কাটার দিকে তাকাও তাহলে দেখবে,সেটি নড়ছে নাবরং আপন স্থানেইঅবস্থান করছে। তুমি যদি দুই ঘন্টা পর পুনরায় ঘড়ির কাছে ফেরত আসতাহলে দেখবে কাটাএখন আগের স্থানে নেই। দেখবে সেটি অনেক অগ্রসর হয়েছে। এমনিভাবে শিশু জন্মগ্রহণ করেএকদিনেই যুবক হয়ে যায় না এবং যুবক হয়ে এক লাফে বৃদ্ধে পরিণত হয় নাবরং দিনের পররাতরাতের পর দিনমাসের পর মাসবছরের পর বছর অতিক্রম করার মাধ্যমে সে বিভিন্নঅবস্থা অতিক্রম করে। এমনিভাবেই জাতির অবস্থা পরিবর্তন হয় এবং ভাল থেকে মন্দ ও মন্দথেকে ভালর দিকে ধাবিত হয়।

অশ্লীল পত্রিকানিকৃষ্ট ম্যাগাজিনউলঙ্গ ছিনেমাবিভিন্ন টিভি চ্যানেলইন্টারন্টেফাসেক ও পাপীষ্টদের প্ররোচনা সর্বোপরি মুসলিমরমনীদেরকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইসলামের শত্রুদের অবিরাম প্রচেষ্টার ফলেবর্তমান মুসলিম নারীদের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেযা ইসলাম ঘৃণার সাথেপ্রত্যাখ্যান করে। টিভি চ্যানেলে দেখা যায় একজন পুরুষ একজন যুবতী মেয়েকে হাত ধরেনাচাচ্ছেপরস্পর জড়িয়ে ধরছেগালে গাল ও বুকে বুক লাগাচ্ছে। টিভির পর্দার সামনে কিসেই মহিলার পিতা-মাতা ও যুবক-যবতী ভাই-বোন থাকে নাএ ধরণের পিতা-মাতা কি তাদের এইনায়িকা মেয়েটিকে চিনতে পারে নাতারা কি মুসলিম নয়কোন মুসলিম কি তার মেয়েকে এইঅবস্থায় দেখতে পছন্দ করতে পারেএই দৃশ্য কি চোখ খুলে দেখতে পারেতার মেয়েকে নিয়েঅন্য একজন পুরুষ এভাবে খেলা করবে আর সে তা উপভোগ করবে- এটি কোন মুসলিম সমর্থন করতেপারে কি?ইসলাম তো দূরের কথাএমনকি খ্রষ্টান ও অগ্নিপূজকদের ধর্মও তা সমর্থন করেনা। তাদের ইতিহাস পাঠ করলেই এ কথার প্রমাণ মিলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ও বেশ কিছুমুসলিম দেশে মুসলিম নারী-পুরুষের চারিত্রিক অবস্থা এই পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যেমানুষ তো দূরের কথাপশুরাও তা গ্রহণ করতে পারে না।
দুটি মোরগ যখন একটি মুরগীরনিকটবর্তী হয়তখন মুরগীটিকে নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেওয়ার জন্য মোরগ দুটি পরস্পরঝগড়া করে এবং একটি অন্যটিকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তুমি দেখবে যে,মিশরলেবানন ওবাংলাদেশের কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতসমূহে এবং ঢাকার পার্কসমূহে মুসলিম নারীদেরঅবস্থা খুবই শোচনীয়। তাদের মুখমাথাপেটপিঠ এমন কি সবই উন্মক্ত। শুধু তাই নয়;অবস্থা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে যেদুজন পুরুষ মিলে একজন মহিলাকে ভাগাভাগি করে উপভোগকরছে। এই অবস্থা কি কোন পশু সমর্থন করেএকটি মোরগ কি চায় যেতার আয়ত্তের মুরগীটিরউপর আরেকটি মোরগ এসে আরোহন করুক?
ব্যভিচার শুধু মানব জাতির কাছেই ঘৃণীত নয়কিছু কিছু বন্য পশুও এই অপরাধকে ঘৃণা করে।
সহীহ বুখারীতে এই মর্মে আমর বিনমায়মুন থেকে বর্ণিত হয়েছে যেতিনি বলেনঃ ইয়ামানে থাকাবস্থায় আমি একদা একটি উঁচুস্থানে ছাগল চরাচ্ছিলাম। দেখলাম একটি পুরুষ বানর একটি নারী বানরের হাতের উপর মাথারেখে শুয়ে আছে। পুরুষ বানরটির চেয়ে কম বয়সের আরেকটি বানর এসে স্ত্রী বানরটিকেখোঁচা মারল। এতে স্ত্রী বানরটি পুরুষ বানরের মাথার নীচ থেকে চুপচাপ হাত বের করেআগত বানরটির পিছে চলতে থাকল। কিছু দূর গিয়ে বানরটি স্ত্রী বানরের সাথে কুকর্মেলিপ্ত হল। তারপর স্ত্রী বানরটি ফিরে এসে ধীরে ধীরে তার যুগলের (স্বামীর) গালের নীচেহাত রাখার চেষ্টা করতেই সে পেরেশান হয়ে জেগে উঠল। স্ত্রী বানরটির শরীরের গন্ধ পেয়েইচিৎকার করতে শুরু করল। এতে একদল বানর একত্রিত হল। পুরুষ বানরটি চিৎকার করে হাতেস্ত্রী বানরটির দিকে ইঙ্গিত করে ব্যভিচারের কথাটি অপরাপর বানরকে বুঝাতে লাগল।বানরগুলো ডানে বামে খুঁজা-খুজি করে অপরাধী বানরটি ধরে নিয়ে আসল। আমর বিন মায়মুনবলেনঃ আমি সেই বানরটিকে চিনে রেখেছিলাম। তারা উভয়ের জন্য গর্ত খনন করলো এবং তারাউভয়কেই রজম করলো। আমর বিন মায়মুন বলেনঃ আমি বনী আদম ছাড়াও অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যেওরজম দেখেছি।
অন্য বর্ণনায় আমর বিন মায়মুন বলেনঃ বানরগুলোর পাথর মারার দৃশ্যদেখে আমি ধৈর্যধারণ করতে না পেরে আমিও তাদের সাথে পাথর মারলাম।
মুসলিম দেশেরস্কুলকলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুসলিম যুবকরা মুসলিম মুসলিম যুবতী মেয়েদেরপাশেই মাথামুখ ও বুক খুলে বসছে। মুসলিম পিতা-মাতাগণ স্বেচ্ছায় তাদের কন্যাদেরজন্য এটিকেই বেছে নিচ্ছে।
হে আমার মেয়ে!মুসলিম মেয়েদের এই অবস্থাএকদিনে পরিবর্তন হবে না। এক লাফে তারা পূর্বেই সেই আসল অবস্থায় ফিরে যাবে নাবরংআমরা সেভাবেই তাদেরকে ধীরে ধীরে পূর্বের অবস্থায় ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবযেভাবে পর্যায়ক্রমে তারা বর্তমানের করুণ ও দুঃখজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
আমাদের সামনে পথ অনেক দীর্ঘ। পথ যদি অনেক দীর্ঘ হয়আর তার বিকল্প সংক্ষিপ্তঅন্য কোন পথ না থাকলে যে ব্যক্তি পথ দীর্ঘের অভিযোগ করে যাত্রা শুরু করবে নাসেকখনও তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে পারবে না।
হে আমার মেয়ে!তুমি প্রথমেমুসলিম নারীদেরকে পুরুষদের সাথে খোলামেলা উঠা-বসাচলাফেরা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেবেপর্দা হয়ে সহ শিক্ষায় প্রবেশ করতে নিষধ কর। সেই সাথে সহ শিক্ষার খারাপ দিকগুলোতুলে ধর। তুমি তাদেরকে মুখ ঢেকে রাখতে বল। যদিও ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে আমি মুখঢাকাকে ওয়াজিব মনে করি না। মুখ খুলে রাস্তায় চলার চেয়ে নির্জনে মুখ ঢেকে পুরুষেরসাক্ষাৎ করা অধিক বিপদজনকস্বামীর অনুপস্থিতে স্বামীর ঘরে স্বামীর বন্ধুর সামনেবসে গল্প করাআপ্যায়ন করা আর পাপের দরজা খুলে দেয়া একই কথা। ভার্সিটিতে সহপাঠীরসাথে করমর্দন করা অন্যায়তার সাথে অবিরাম কথা ও টেলিফোন চালিয়ে যাওয়া ক্ষতিকরএকসাথে বিদ্যালয়ে যাওয়া অনুচিত,বান্ধবীর সাথে গৃহ শিক্ষকের রুমে একত্রিত হওয়া অপরাধ।
হে আমার মেয়ে!তুমি এ বিষয়টি ভুলে যেয়ো না যেআল্লাহ্ তোমাকে নারীহিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার সহপাঠীকে বানিয়েছেন পুরুষ। তোমাদের প্রত্যেকেরমধ্যেই এমন উপাদান যুক্ত করা হয়েছেযার কারণে তোমাদের একে অপরের দিকে ঝুকে পড়ে।সুতরাং তোমাদের কেউই এমন কি পৃথিবীর সকল মানুষ মিলে চেষ্টা করলেও আল্লাহর সৃষ্টিতেকোন পরিবর্তন আনয়ন করতে সক্ষম নয়। তারা কখনই নারী-পুরুষের ব্যবধান উঠিয়ে দিয়ে উভয়কেসমান করতে পারবে না এবং নারী-পুরুষের পরস্পরের দিকে আকর্ষণকে ঠেকাতে পারবে না।
যারা সভ্যতার নামে নারী-পুরুষের মধ্যকার ব্যবধান উঠিয়ে দিতে চায় এবং উভয়শ্রেণীর জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী জানিয়ে কর্মক্ষেত্রে মিশ্রিত হয়ে যাওয়ারআহবান জানায় তারা মিথ্যুক। কারণ এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের চাহিদা মেটাতে চায়এবং অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে পাশে বসিয়ে নারীদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চায়। সেই সাথেআরও কিছু করার সুযোগ পেলে তাও করতে চায়। কিন্তু এ কথাটি এখনও তারা খোলাসা করে বলারসাহস পাচ্ছে না। সুতরাং তারা নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠাসভ্যতা ও উন্নয়নের যেসুর তুলছে তা নিছক সস্তা বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। এ সমস্ত কথার পিছনেতাহাজ্জুব-তামাদ্দুনসভ্যতাউন্নতি অর্জন আদৌ তাদের উদ্দেশ্য নয়।
তারা যেমিথ্যুক তার আরেকটি কারণ হলযেই ইউরোপ-আমেরিকাকে তারা নিজেদের আদর্শ মনে করে এবংযাদেরকে তারা সভ্যতাসংস্কৃতি ও উন্নতির পথ প্রদর্শক মনে করে মূলত তারা প্রকৃতসত্যকে উপলব্ধি করতে পারে নি। তারা যেটিকে সভ্যতা ও সংস্কৃতি মনে করছেতা মূলতঃসত্য ও সভ্যতা নয়বরং সেটি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানীকৃত সত্য ও সভ্যতা।তাদের ধারণায় নাচগানবেহায়াপনাউলঙ্গ অর্ধউলঙ্গ হওয়াস্কুল,কলেজ ওবিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষায় অংশ নেওয়ানারীদের খেলার মাঠে নামা এবং সমুদ্র সৈকতেগিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে গোসল করাই সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানদন্ড। আর প্রাচ্যের দেশ তথামুসলিমদের মসজিদমাদরাসামদীনাদামেস্ক এবং আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালসহ সকল ইসলামীপ্রতিষ্ঠানে যে উন্নত চরিত্রসুশিক্ষা,নারী-পুরুষের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীনপবিত্রতার প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাদের ধারণায় তা মুসলিমদের পশ্চাদমুখী হওয়ার এবংসভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ।
ইউরোপ-আমেরিকা থেকেঘুরে আসা বা সেখানে বসবাসকারী অসংখ্য পরিবার নারী-পুরুষের খোলামেলা চলাফেরাতেসন্তুষ্ট নয় এবং এটি তাদেরকে শান্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আজ তারা বিকল্পেরসন্ধান করছে।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...