Monday 6 March 2017

জীবন থেকে নেওয়া

“জীবন থেকে নেওয়া” এই শিরোনামে আমার লেখা আটটি পর্ব, আজ সবগুলো পর্ব একসাথে প্রকাশ করা হলো। এর বিষয়বস্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুধাবন, জীবনবোধ কিংবা ক্বুরআন, সুন্নাহ ও আমাদের সম্মানিত আলেমদের শিক্ষা থেকে সংগৃহীত। আশা করি, মুসলিম ভাই ও বোনদের উপকারে আসবে।
____________________________________

জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-১)
(১) আল্লাহ সম্পর্কে, তার দ্বীন সম্পর্কে, পরকালের জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান একজন মানুষের অন্তরে যেই সুখ এনে দিতে পারে, সারা দুনিয়া দিয়েও সেটা ক্রয় করা যায় না। সুবহা'নাল্লাহ!
(২) দুনিয়া হচ্ছে বিগত যৌবনা সেই নারীর মতো, যে আকর্ষণীয় সাজ-সজ্জা দ্বারা পুরুষদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। দূর থেকে শুধুমাত্র রূপ দেখেই বোকা পুরুষেরা তার দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু কাছে গিয়ে প্রতারিত হয়েছে বলে উপলব্ধি করতে পারে। অনুরূপভাবে, নিজের আত্মাকে বিসর্জন দিয়ে যারা দুনিয়ার মোহে জীবনটা অতিবাহিত করে, সেই দুনিয়া হাতে আসার পর তারা বুঝতে পারে, দুনিয়া কাউকে তৃপ্ত করতে পারেনা।
(৩) একজন আলেম বলেছেনঃ যেই জ্ঞান তুমি এখনো অর্জন করতে পারোনি, তার জন্যে আফসোস করোনা বরং, অর্জিত যেই জ্ঞান আমল করতে পারছোনা, তার জন্য অনুশোচনা করো।
(৪) কাফেরদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কেয়ামতের দিন তাদের কোন উপকারে আসবেনা, তবে মুমিনদের দুনিয়াতে রেখে যাওয়া ধন-সম্পদ ও নেক সন্তান কেয়ামতের দিন তাদের উপকারে আসবে। সুরা শুয়া'রা।
(৫) মুমিনদের শ্রেষ্ঠ কয়েকটি গুণ হচ্ছে স্থির বুদ্ধি, ধৈর্য, উত্তম চরিত্র, নম্রতা ও মিষ্টি ভাষা।
(৬) তাক্বদীরে যা লিখা ছিলো, তাই হয়েছে এবং তাই হবে। সুতরাং অতীতে যা ঘটে গেছে তার জন্যে আফসোস করোনা, আর ভবিষ্যতে কি ঘটবে তার জন্যে ভয় করোনা। বরং, বর্তমানে সঠিক ও নেক আমল করার জন্যে মনোযোগী হও।
(৭) দুঃখ-কষ্ট ও মুসিবতের সময় মানুষ নিজের ভুল-ত্রুটি স্বরণ করে, আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয় এবং এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। এইভাবে ঈমানদারদের জীবনে দুঃখ-কষ্টগুলোও তার জন্যে কল্যাণে পরিণত হয়। আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা আল্লাহকে ভালোবাসি, আল্লাহ আমাদেরকে ভালোবাসেন (ইন শা আল্লাহ)।
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-২)
(১) রাগ, অভিমান, জিদ মানুষের প্রতিভাকে নষ্ট করে।
(২) দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা পরকালকে নষ্ট করে।
(৩) জনপ্রিয়তা, সুনাম, নেতৃত্বের প্রতি মোহ ইখলাসকে নষ্ট করে।
(৪) Ego বা আত্ম-অহংবোধ প্রিয়জনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে, সুন্দর সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে।
(৫) অযত্ন, অবহেলা শরীর ও স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে।
(৬) পরনারীর প্রতি আকর্ষণ আত্মতৃপ্তি ও মানসিক শান্তিকে নষ্ট করে।
(৭) প্রবৃত্তির অনুসরণ বিবেককে নষ্ট করে।
(৮) পাপী লোকদের সাহচর্য নেক আমলের প্রতি ভালোবাসাকে নষ্ট করে।
(৯) উদাসীনতা সৌভাগ্যের সুযোগ গুলোকে নষ্ট করে।
(১০) অযোগ্য ও মূর্খ লোকদের কথা শোনা হেদায়েতকে নষ্ট করে।
(১১) মিথ্যা ও গীবত অন্তরের নূরকে নষ্ট করে।
(১২) অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা দ্বীন ও বুদ্ধিকে নষ্ট করে।
(১৩) কাফের দেশে বসবাস করা, কাফেরদের সাথে উঠা-বসা করা ‘আল-ওয়ালা ওয়াল বারা’ (আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করার ঈমানী চেতনাকে) নষ্ট করে।
(১৪) অশ্লীলতা লজ্জাশীলতার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।
(১৫) হারাম রিযিক দুয়াকে নষ্ট করে।
(১৬) মানুষের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করা আত্মসম্মানকে নষ্ট করে।
(১৭) মৃত্যুর কথা ভুলে থাকা সময় অপচয় করার মাধ্যমে হায়াতকে ছোট করে।
(১৮) হিজাব-পর্দার আইন ভংগ করা নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করে।
(১৯) পরনারীর সাথে নির্জনতা বা সাহচর্য অবলম্বন করা পুরুষের চরিত্র নষ্ট করে।
(২০) বেশি কথা বলা ব্যক্তিত্বকে নষ্ট করে।
(২১) অধিক হাসি অন্তরের সজীবতাকে নষ্ট করে।
(২২) জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা ভবিষ্যত জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে।
(২৩) নামায ত্যাগ করা ঈমানকে নষ্ট করে।
(২৪) গান-বাজনা কুরআনের প্রতি মুহব্বতকে নষ্ট করে।
(২৫) খিয়ানত, দুর্ব্যবহার, ওয়াদা ভংগ করা বন্ধুত্বকে নষ্ট করে।
(২৬) পরনারী বা পরপুরুষের প্রতি অবৈধ দৃষ্টিপাত সংযমকে নষ্ট কতে।
(২৭) শিরক নিরাপত্তাকে নষ্ট করে।
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-৩)
(১) কোন কাজে তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে, আর আস্তে-ধীরে কাজ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং তাড়াহুড়া করবেন না, ধীরতা ও প্রশান্তির সাথে, মনোযোগের সাথে চিন্তা-ভাবনা করা ও কাজ করার চেষ্টা করুন।
(২) উত্তেজিত অবস্থায় কথা বলার সময় সাবধান থাকুন এবং নিজের কথার ব্যপারে খেয়াল রাখুন। ধারালো জিহবা ও কঠোর মনোভাব সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করে, আপনার অতীতের ভালো কাজ ও অবদানগুলোকে ভুলিয়ে দেয়।
(৩) মোবাইল ফোন বা অন্য কোন যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলা পরিহার করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে সময় নিয়ে সামনা-সামনি কথা বলুন, এতে ব্যক্তির মনের আসল কথা বুঝা যায়, পরস্পরে বুঝা-পরা ভালো হয়, অপ্রয়োজনীয় ভুল বুঝাবুঝি এড়ানো সম্ভব হয়। সর্বোপরি, পরিস্থিতি দুইপক্ষের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা থেকে বাঁচা যায়।
(৪) মায়ের উপরে জিদ করবেন না, এতে আপনি নিজেই কষ্ট পাবেন। মায়ের সাথে খোলা মনে কথা বলুন, মায়ের প্রতি সবচাইতে কোমল আচরণ করার চেষ্টা করুন।
(৫) স্ত্রীদের স্বভাবজাত বক্রতা ও ত্রুটিগুলো ক্ষমা করুন, চলার পথে ছোট-খাট প্রতিটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ না করে, উপদেশ হিসেবে গঠনমূলক আলোচনা করুন। অতিরিক্ত সমালোচনা ব্যক্তির মনোবল ভেংগে দেয়, হীনমন্যতা সৃষ্টি করে হতাশ করে দেয়। বরং, মানুষকে ভালো কাজের দিকে উৎসাহ দিতে হবে, সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে হবে।
(৬) কথা ও কাজে কখনোই কঠোরতা অবলম্বন করবেন না, এতে পরবর্তীতে নিজেকেই আফসোস করতে হবে। ইসলাম মধ্যমপন্থার ধর্ম, ইসলামের রং-এ নিজেকে সাজানোর চেষ্টা করুন।
(৭) স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আল্লাহ খুব সুন্দর, পবিত্র ও মধুর করেছেন। কিন্তু আপনি নিশ্চিত জেনে রাখুন, দাম্পত্য জীবন সব সময় একই রকম যাবে, এমনটা হওয়ার নয়। এমনকি এই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সর্বোত্তম স্ত্রী (আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন), তাদের মাঝেও মনোমালিন্য হয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কখনো ভালোবাসা, কখনো মান-অভিমান, কখনো ঝগড়া হবে. . .তবে মনে রাখবেন, দিন শেষে আপনারা একজন আরেকজনের জন্যে পোশাক হিসেবেই থাকবেন। সুতরাং, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে রাগ, জিদ, ক্রোধ, প্রতিশোধ, Ego বা অহংকার রাখবেন না, এইগুলোর শিকার হয়ে আপনার প্রিয় মানুষটিকে কষ্ট দিবেন না। বরং, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ভালোবাসা ও উত্তম আচরণ দ্বারা খারাপ সময়গুলো দুইজনে একসাথে জয়ী হওয়ার জন্যে মানসিকতা গড়ে তুলুন। আল্লাহ প্রতিটা মুসলিম পরিবারে বরকত দান করুন, প্রতিটা বিয়েকে সফলতা দান করুন, প্রতিটা মুসলিমকে উত্তম নেয়ামত দান করুন। আমিন।
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-৪)
(১) ধৈর্যহীন মানুষের এই পৃথিবীতে টিকে থাকা খুব কঠিন।
(২) সবাই ভুল করে, কেউ কেউ একটু বেশিই করে।
(৩) দুনিয়ার সবচাইতে অসুখী মানুষ হচ্ছে যে নিজের মায়ের উপরে অভিমান করে। মায়ের একটা কথাকে ছোট মনে করে উপেক্ষা করলে, হতে পারে তার কারণে সারা জীবন আফসোস করতে হতে পারে।
(৪) সম্মান অর্জন করা থেকে সম্মান রক্ষা করা কঠিন।
(৫) আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব।
(৬) সবাই চায় আল্লাহর বন্ধু হতে, কিন্তু তার জন্য আমলকারী লোক খুব অল্প।
(৭) মানুষ চায় দুনিয়া, আল্লাহ পছন্দ করেন পরকালের জন্য নেক আমল।
(৮) মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তাক্বওয়া।
(৯) সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচাইতে উত্তম।
(১০) কুরআন হচ্ছে ‘রুহ’ বা আত্মা। যে ব্যক্তি কুরআনের যত কাছে, সে ততবেশি জীবন্ত ও প্রাণবান। যে ব্যক্তি কুরআন থেকে যত দূরে, তার অন্তর ততটুকুই মৃত।
(১১) হক্ক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব কেয়ামত পর্যন্ত চলবে।
(১২) পাপ মানুষকে লাঞ্চিত করে, দুদিন আগে বা পরে, দুনিয়া কিংবা আখিরাতে।
(১৩) সত্যিকারের ঈমানদার হওয়া খুবই কঠিন, তবে আল্লাহ তাআ’লা যার জন্য সহজ করেন তার জন্য সহজ।
(১৪) তাক্বদীর সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও দৃঢ় বিশ্বাস জীবনে সুখী হওয়ার জন্য খুবই জরুরী।
(১৫) “আমি সবচাইতে বড় জ্ঞানী ও আল্লাহওয়ালা” - এটা বোকা এবং অহংকারী লোকের ভ্রান্ত ধারণা।
সকলের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি।
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-৫)
(১) আমরা সবাই এই পৃথিবীতে সামান্য কয়দিনের জন্যে অতিথি মাত্র। আমাদের মাঝে হয়তোবা কারো আপনজন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরকালের জীবনে পাড়ি জমিয়েছে। যতই মনে পড়ুক, আর কোন দিন তাদের সাথে কথা হবেনা. . .কোনদিন জিজ্ঞেস করা হবেনা, কেমন আছো? মৃত্যুর পর সবাই গুরুতর বিপদ (জাহান্নাম) থেকে নিজের মুক্তির জন্যেই দিশেহারা হয়ে থাকবে, তাদের সাথে দেখা করার কথা চিন্তা করার মতো অবসরটুকু হয়তোবা তখন মিলবেনা। আবার কিছু মানুষ আপনজন ছিলো, বেচেও হয়তোবা আছে, নানা কারণে তবুও তাদের সাথে আর কোনদিন কথা হবেনা। আমরা নিজেরাই হয়তোবা সেটা কখনো আশা করিনা।
(২) অতীতে মনে হতো, কবে বড় হবো? বড় হলেই বুঝির ছোটবেলার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আর বড় হওয়ার পর মনে হয়, ছোটবেলায়ই তো কতো ভালো ছিলো! আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, জীবন মানে দ্রুত গতিতে মৃত্যুর দিকে ছুটে চলা। এরপর আল্লাহ প্রত্যেকের হিসাব নেবেন, আমরা কে কি করেছি।
(৩) ছোট্ট এই জীবনটা কেটে যাবে, কোন না কোন একভাবে। সেটার জন্যে খারাপ লাগেনা। আফসোস হয় এটা ভেবে, কিছু মানুষের জীবন থাকে সাজানো-গোছানো, কোথাও কোন দাগ নেই। ইলম ও তাক্বওয়া দ্বারা পরিচালিত, নেক আমলে পূর্ণ জীবন, এক নূরান্বিত জীবন। আর কিছু মানুষের জীবন হচ্ছে নিয়ামতের সমুদ্রে ডুবে থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর অবাধ্যতায় পূর্ণ, ভুলে ভরা জীবন। এমনই অভিশপ্ত এক জীবন যে, তাদের শুভাকাংখীদের উপদেশ তার কোন কাজে আসেনা। একমাত্র আল্লাহর রহমত ছাড়া তাদের ধ্বংস হওয়া থেকে বাচার কোন পথ নেই। এই অভিশাপটা তখন আরো বেশি বিষাক্ত মনে হয়, যখন সে তা বুঝতে পারে, কিন্তু সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনা।
(৪) ওপারেতে সব সুখ আমার বিশ্বাস। মুসলিমদের জন্যে পরকালের জীবন হচ্ছে আসল জীবন, দুনিয়ার জীবন! এতো এক পরীক্ষার নাম। আল্লাহ যেনো আমাদের ভুল-ত্রুটিকে গোপন করেন ও ক্ষমা করেন। আর আমাদেরকে সেই মহা পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার তোওফিক দান করেন। (আমিন)।
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-৬)
(১) জনপ্রিয় হওয়া সহজ। মানুষের আবেগ বোঝার চেষ্টা করুন, মানুষ যা শুনতে চায় শুধুমাত্র তা-ই বলুন, আর যা শুনতে চায়না, সেইগুলো পরিহার করুন। দেখবেন আপনার ভক্ত-শ্রোতা বাড়তে থাকবে। কিন্তু আল্লাহপ্রিয় হওয়া কঠিন। একটু চেষ্টা করে দেখুন, নিজেই বুঝতে পারবেন।
(২) বোকা বন্ধু অপেক্ষা বুদ্ধিমান শত্রু ভালো। বোকা বন্ধু আপনার মাঝে খারাপ কিছুদেখে চুপ থাকবে, আপনাকে খুশি করার জন্য আপনার অন্যায় কাজেও সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন করবে। বুদ্ধিমান শত্রুর কাছে আপনার দোষ ধরা পড়বে, নিজেকে সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন।
(৩) যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে অবিশ্বাস করে, সে কোনদিন মুমিনের বন্ধু হতে পারে না। আপনি যদি অবিশ্বাসীদের প্রতি ভালো লাগা অনুভব করেন, তাদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনার ঈমানে সমস্যা রয়েছে, একথা নিশ্চিত। আপনার অবস্থা এমন হলে ক্বুরআন দ্বারা দ্রুত অন্তরের চিকিতসা করুন।
ক্বুরআন দ্বারা অন্তরের চিকিতসা কিভাবে করবো?
(ক) ক্বুরআনুল কারীমের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিখা এবং নিয়মিত পাঠ করা।
(ক) ক্বুরআনুল কারীমের সঠিক অর্থ ও তাফসীরা জানা ও বুঝা, ক্বুরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা।
(গ) ক্বুরআনুল কারীমের আদেশে-নিষেধ মেনে চলা।
(ঘ) ক্বুরআনুল কারীম অন্যকে শিক্ষা দেওয়া এবং তার দিকে মানুষকে আহবান করা।
(৪) মানুষের সবচাইতে বড় বিপদ হচ্ছে আল্লাহকে ভয় না করা এবং, প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা।
(৫) কিছু মানুষ বয়স ও জ্ঞানের দিক থেকে ছোট, কিন্তু তাদের অন্তর আকাশের মতো বড়। এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন, ভাগ্যবান, আল্লাহ তাদের প্রতি রহম করুন। আর কিছু মানুষ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের দিক থেকে পাহাড়ের মতো বিশাল, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে চড়ুই পাখির মতো ক্ষুদ্র। এরা হতভাগা, অন্তঃসার শূন্য, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুন।
(৬) কখনো মানুষের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা, উত্তম আচরণ আশা করবেন না। আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “মানুষ তার রব্বের প্রতি অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ।” সুরা আ’দিয়াত। যে নিজের রব্বের নাফরমানি করে, সে রব্বের সামান্য কোন সৃষ্টি কোন মানুষের সাথে নাফরমানি করবেনা, এমনটা ভাবার কোন কারণ আছে? তবে খুব অল্প সংখ্যক লোক, যারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞশীল, তাদের কথা ভিন্ন। আল্লাহ আমাদেরকে কৃতজ্ঞশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
(৭) রমনীর প্রতি লোভ এবং সম্পদের প্রাচুর্যের হাতছানি পুরুষদের নীতি-গতিকে আকাশ থেকে পাতাল, পাতাল থেকে আকাশ করে দিতে পারে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের অনিয়ন্ত্রিত অন্ধ আবেগ, পুরুষের সাথে পর্দাহীন মিলামিশা তাদের সম্মানহানি ও অধঃপতনের জন্য দায়ী।
(৮) আপনি যখন বিপদ বা সংকীর্ণ অবস্থার সম্মুখীন হবেন, আপনার আশেপাশের অনেক সাথী বা বন্ধুর আসল চেহারা চিনতে পারবেন।
(৯) দাত থাকতে মানুষ দাতের মর্যাদা বুঝতে পারেনা। মানুষ কবরে না যাওয়া পর্যন্ত জীবনের মূল্য বুঝতে পারবেনা। বার্ধক্য না আসা পর্যন্ত যৌবনের মর্যাদা বুঝতে পারবেনা। অসুস্থতার কবলে না পড়া পর্যন্ত সুস্থতার মর্ম উপলব্ধি করতে পারবেনা। মাকে না হারানো পর্যন্ত মায়ের মর্যাদা বুঝতে পারবেনা।
(১০) দুনিয়ামুখী, পাপী মানুষ কয়লার চুলার মতো, পাশ দিয়ে গেলে আগুনের তাপ লাগবে। আর পরকালমুখী, পবিত্র অন্তরের মানুষ সুগন্ধি বিক্রেতার মতো সুগন্ধ বিতরণকারী।
(১১) মিথ্যা ও প্রতারণা চেহারার নূর ও অন্তরের আলোকে নষ্ট করে, সম্পর্ককে নষ্ট করে। একবার মিথ্যা ধরা পড়লে, বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা কঠিন।
(১২) জীবনে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আর কিছু মানুষের আগমন আপনার জীবনে একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে।
(১৩) আল্লাহর যিকির যার জন্য কঠিন, ফালতু কাজে সময় নষ্ট করা তার জন্য সহজ।
(১৪) সাধারণত পরিবারের পুরুষ অভিভাবক যদি নষ্ট হয়, তাহলে বউ ছেলে-মেয়েরাও বিপথগামী হয়।
(১৫) দুনিয়া পরীক্ষার জায়গা। দুনিয়াকে জান্নাত মনে করে ভুল করবেন না যে, যা চাইবেন তা-ই পেয়ে যাবেন। দুনিয়াতে পাওয়া থাকবে, চাওয়ার অপূর্ণতাও থাকবে। আনন্দ থাকবে, তিক্ততার মাঝেও সময় কাটাতে হবে।
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়া (পর্ব-৭)
(১) যার বাহিরের দুনিয়াটা বড় হয়ে যায়, তার নিজের ঘরটা ছোট হয়ে যায়।
(২) ইসলামের জন্য জীবন দেওয়ার চাইতে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে জীবন পরিচালনা করা কঠিন।
(৩) বিপদ-আপদ কিংবা পরীক্ষা সময় ধৈর্য্য ধারণের স্বাদ তিক্ত, কিন্তু তার ফল অত্যন্ত মিষ্টি।
(৪) ঈমানের পর বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সবচাইতে বড় নেয়ামত হচ্ছে অনুগতা, মিষ্ট ভাষী, কোমল হৃদয়ের মুমিনাহ স্ত্রী। আর শিরকের পরে বান্দার জন্য সবচাইতে বড় বিপদ হচ্ছে ধারালো জিহবার, বদ চরিত্রের অবাধ্য স্ত্রী।
(৪) চাওয়ার মতো চাইতে হয়, তাহলেই রব্ব সেই ডাকে সাড়া দেন। চাওয়ার মাঝে খুত থাকলে সেই চাওয়া মরীচিকার মতো চোখের সামনে থেকে খুব কাছে এসেও শূণ্যে মিলিয়ে যায়।
(৫) অহংকারী ঘরে-বাহিরে, সর্বত্র ঘৃণিত এবং নিন্দিত। কিন্তু অহংকারী ব্যক্তি নিজে কোনদিন তার দোষ দেখতে পারে না।
(৬) পুরনো স্মৃতির ছোবল অনেক পাপ কাজের পুনরাবৃত্তির জন্য দায়ী।
(৭) দুনিয়াতে মানুষ আছে. . .অসংখ্য, অগণিত। কিন্তু মনের মতো মানুষ আছে কয়জন? কজনেই বা খুঁজে পায় সেই মানুষটিকে?
(৮) মা বাবা এমন, নিজের গায়ের চামড়া দিয়ে তাদের পায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও যথার্থ সম্মান হবে কিনা। চিন্তা করে দেখুন, সেই তুলনায় আমরা মা-বাবার হক্ক আদায়ের ব্যপারে কতটা গাফেল!
(৯) কিছু মানুষ আপনাকে এতো চমতকৃত করবে, তাদের সাথে কাটানো পাচ মিনিট সময়ের স্মৃতি, আপনার পরবর্তী ৫০ বছরের জীবনে মূল্যবান স্মৃতি হয়ে থাকবে। আর কিছু মানুষের অন্তরটা এতো বিষাক্ত, তাদের একটা নিঃশ্বাস উত্তপ্ত গরম কয়লার মত অসহ্য।
(১০) জান্নাতে যাওয়া কি সহজ? জান্নাতে যে চিরস্থায়ী সুখের ব্যবস্থা আল্লাহ রেখেছেন, তারপরেও কয়জন মানুষই বা নামায পড়ছে? জান্নাত সহজ নয়, সেইজন্য আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে যাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব না।
(১১) অধিক অভিযোগ পেশ করা অন্তরের সংকীর্ণতা ও ঈমান দুর্বল হওয়ার লক্ষণ।
(১২) ক্বিয়ামত কায়েম না হওয়া পর্যন্ত এবং সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই আল্লাহকে দেখতে পারবো না। দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা না গেলেও তার সম্মানিত কালাম (আল্লাহর কথা বা ক্বুরআনুল কারীম) আমাদের মাঝে রয়েছে, যা আমরা তেলাওয়াত করি। চিন্তা করে দেখুন, পাপী লোকেরা তাদের প্রেমিকের চিঠি কত আগ্রহ নিয়ে পড়ে। কিন্তু, সেই তুলনায় আমরা কি আমাদের রব্বের কথাগুলো মন দিয়ে পড়ছি বা কান লাগিয়ে শুনছি?
____________________________________
জীবন থেকে নেওয়াঃ (পর্ব-৮)
(১) জীবন অনেক কঠিন, তবে ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তা সহজ করে দেন। একারণে দুনিয়াতে প্রকৃত সুখ শুধুমাত্র ঈমানদারদের জন্যই। ঈমানহীন, ব্যধিগ্রস্থ অন্তর ভোগ-বিলাসে থাকে, কিন্তু তৃপ্ত বা সন্তুষ্ট হয় না।
(২) অন্ধ আবেগ দিয়ে জীবন চলে না, প্রতিকূল অবস্থায় পড়লে আবগের রংগিন স্বপ্ন শুকিয়ে যায়।
(৩) যেই ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য, শুধুমাত্র সেই ভালোবাসা টিকে থাকে, এমনকি মৃত্যুর পর তা জান্নাতেও বাকী থাকবে। অন্য সব ভালোবাসা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, মেয়াদ শেষ তো ভালোবাসার আকর্ষণ শেষ। এরপর সম্পর্কটা শুধুমাত্র লোক দেখানো কিংবা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
(৪) আপনার কাছে যিনি মহা বিদ্বান, জ্ঞানী লোক, আমি যদি তার সমালোচনা করি কিংবা তার ভুল ধরি, তাহলে আমাকে আপনার মূর্খ কিংবা হিংসুক বলে মনে হবে। এই অপরাধে আপনি আমাকে যা ইচ্ছে তা শুনিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু আমাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আপনি আমাকে কটু কথা বলেছেন, তার জবাবে খারাপ কিছু বলা আমার শোভা পায় না। আমাকে মনে রাখতে হবে, মানুষ তার ভালোবাসার ব্যক্তির সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।
(৫) যারা ইসলামের কথা বলবে, তারা জোকার কিংবা এন্টারটেইনার না যে তাদের কথা শুনে সবাই খুশি হবে। বরং, অধিকাংশ মানুষ সত্যি কথা শুনে রাগ করে, ভুল বুঝে। দাওয়াত হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কে খুশি হলো বা কে বেজার হলো সেকার‍ণে সত্যকে গোপন করা কিংবা পরিবর্তন করা যাবে না।
(৬) নারী-পুরুষ অবাধ যোগাযোগ ও মেলা-মিশা অন্তরকে দুর্বল করে, চরিত্র ও দ্বীনকে নষ্ট করে।
(৭) আলেম ও সৎ ব্যক্তিদের সাহচর্য অন্তরকে আলোকিত ও সতেজ করে। তর্কবাজ, জাহেল ও পাপী লোকদের সাহচর্য অন্তরকে রোগাক্রান্ত ও মলিন করে দেয়।
(৮) বর্তমান যুগ অজ্ঞতা ও অহংকার প্রদর্শনের যুগ। আর তাইতো জাহেলরা আলেমদের ভুল ধরে, তাদেরকে উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা দেয়।
(৯) একজন ফাসেক্ব মহিলা একজন ঈমানদার মহিলার পায়ের ধূলার যোগ্য না। একজন ফাসেক্ব মহিলা তার স্বামীর অবাধ্য হয়, স্বামীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, স্বামীর জন্য দুঃখ ও আফসোসের কারণ হয়। ফাসেক্ব মহিলার স্বামী ঘরে স্ত্রীকে রেখে বাহিরে গেলে নিরাপদ বোধ করে না। না জানি কার সাথে মোবাইলে/ফেইসবুকে গল্প জুড়ে দেয়, কোন পুরুষকে তার বিছানায় আসতে দেয়, তার সম্পদ নষ্ট করে। আর একজন ঈমানদার নারী তার স্বামীর প্রতি সবসময় অনুগত থাকে। তার স্বামী স্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সে বাহিরে গেলে স্ত্রীর ব্যপারে নিরাপদ বোধ করে, আর ঘরে ফিরে আসলে তার স্ত্রী তার জন্য আনন্দের কারণ হয়।
(১০) কিছু কিছু পুরুষ আসলে পশুর মতো, বরং তার চাইতেও নিকৃষ্ট। এরা পাবলিক বাসে উঠে নারীদের পাশের সীটে ইচ্ছাকৃতভাবে চাপ দিয়ে বসে নারী দেহের কোমলতা উপভোগ করতে চায়। বাস থেকে নামার সময় ভীড়ের আড়ালে নারীদের সংবেদনশীল অংগ সমূহে হাত দিয়ে অসুস্থ যৌনতার স্বাদ আস্বাদন করতে চায়। এই সমস্ত দুই পেয়ে জানোয়ারদেরকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে পারলে অনেক নির্যাতিত নারীদের আত্মা একটু শান্তি পেত। আফসোস! আমাদের মতো অন্যায়-অবিচারের দেশে যেখানে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, খুনের আসামীকে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়, পুলিশ/র‍্যাব ধরে নিয়ে নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলে, সেখানে এই সমস্ত নোংরা প্রাণীগুলোর অপরাধকে মানুষ ছোট অপরাধ হিসেবেই গণ্য করে। আমাদের সান্ত্বনা, আল্লাহ পরকাল এই জন্যই রেখেছেন, যাতে করে প্রত্যেকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান পায়।

সংগ্রহঃ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...