Thursday 4 June 2015

ছিয়াম সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ন ফতোওয়া (১ম-পর্ব)




সংক্ষিপ্ত বর্ননাঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর তাআলার জন্য যিনি আ্মাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকূলের সেরা জীব মানুষ হিসেবে এবং এই সুন্দর পৃথীবিতে পাঠিয়েছেন মুসলিম করে। সেই সাথে শান্তি বর্ষিত হউক নবী (ছাঃ) এর উপর যিনি দ্বীনকে এত সুন্দর করে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। একজন মানুষের জন্য ইসলামের জ্ঞান অর্জন ফরয ততটুকু যতটুকু দ্বীন পালন করতে প্রয়োজন হয়।আর এই দ্বীন অর্জন করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে । বই ফতোওয়া আরকানুল থেকে সংগৃহীত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ন উত্তর জেনে নেই।
প্রশ্নঃ (৩৯২) ছিয়াম ফরয হওয়ার হিকমত কি?
উত্তরঃপবিত্র কুরআনের নিম্ন লিখিত আয়াত পাঠ করলেই আমরা জানতে পারি ছিয়াম ফরযহওয়ার হিকমত কি? আর তা হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহ্‌ ভীতি অর্জন করা ওআল্লাহ্‌র ইবাদত করা। আল্লাহ্‌ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হেঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিলতোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।(সূরাবাক্বারাঃ ১৮৩) তাক্বওয়া হচ্ছে হারাম কাজ পরিত্যাগ করা। ব্যাপক অর্থেতাক্বওয়া হচ্ছে, আল্লাহ্‌র নির্দেশিত বিষয় বাস্তবায়ন করা, তাঁর নিষেধথেকে দূরে থাকা। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ والْجَهْلَ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
যেব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা, মিথ্যার কারবার ও মূর্খতা পরিত্যাগ করলনা, তার খানা-পিনা পরিহার করার মাঝে আল্লাহর কোন দরকার নেই।[1]
অতএবএ কথা নিশ্চিত হয়ে গেল যে, রোযাদার যাবতীয় ওয়াজিব বিষয় বাস্তবায়নকরবে এবং সবধরণের হারাম থেকে দূরে থাকবে। মানুষের গীবত করবে না, মিথ্যাবলবে না, চুগলখোরী করবে না, হারাম বেচা-কেনা করবে না, ধোঁকাবাজী করবে না।মোটকথা চরিত্র ধ্বংসকারী অন্যায় ও অশ্লীলতা বলতে যা বুঝায় সকল প্রকারহারাম থেকে বিরত থাকবে। আর একমাস এভাবে চলতে পারলে বছরের অবশিষ্ট সময় সঠিকপথে পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ্‌। কিন্তুআফসোসের বিষয় অধিকাংশ রোযাদার রামাযানের সাথে অন্য মাসের কোন পার্থক্যকরে না। অভ্যাস অনুযায়ী ফরয কাজে উদাসীনতা প্রদর্শন করে, হালাল-হারামে কোনপার্থক্য নেই। তাকে দেখলে বুঝা যাবে না তার মধ্যে ছিয়ামের মর্যাদার কোনমূল্য আছে। অবশ্য এ সমস্ত বিষয় ছিয়ামকে ভঙ্গ করে দিবে না। কিন্তুনিঃসন্দেহে তার ছওয়াব বিনষ্ট করে দিবে।

সারাবিশ্বে একসাথে রামাযানের রোযা শুরু করা।
প্রশ্নঃ (৩৯৩) মুসলিম জাতির একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কারসাথে সংশ্লিষ্ট করতে চায়। তারা বলে মক্কায় যখন রামাযান মাস শুরু হবে তখনবিশ্বের সবাই রোযা রাখবে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
উত্তরঃবিষয়টি মহাকাশ গবেষণার দিক থেকে অসম্ভব। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, চন্দ্র উদয়ের স্থান বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বানগণঐকমত্য। আর এই বিভিন্নতার দাবী হচ্ছে প্রত্যেক এলাকায় ভিন্ন রকম বিধানহবে। একথার পক্ষে দলীল কুরআন হাদীছ ও সাধারণ যুক্তি।
আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ“অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালনকরে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) যদি পৃথিবীর শেষ সীমান্তের লোকেরা এ মাসে উপস্থিতনা হয় অর্থাৎ চাঁদ না দেখে আর মক্কার লোকেরা চাঁদ দেখে, তবে কিভাবে এইআয়াত তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে যারা কিনা চাঁদই দেখেনি। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর।[2] মক্কার অধিবাসীগণযদি চাঁদ দেখে তবে পাকিস্তান এবং তার পূর্ববর্তী এলাকার অধিবাসীদের কিভাবেআমরা বাধ্য করতে পারি যে তারাও ছিয়াম পালন করবে? অথচ আমরা জানি যে, তাদেরআকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ছিয়ামের বিষয়টি চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন।
যুক্তিগতদলীল হচ্ছে, বিশুদ্ধ ক্বিয়াস যার বিরোধীতা করার অবকাশ নেই। আমরা ভাল ভাবেঅবগত যে, পশ্চিম এলাকার অধিবাসীদের আগেই পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের নিকট ফজরউদিত হয়। এখন পূর্ব এলাকায় ফজর উদিত হলে কি আমরা পশ্চিম এলাকার লোকদেরবাধ্য করব একই সাথে খানা-পিনা থেকে বিরত হতে? অথচ তাদের ওখানে এখনও রাতেরঅনেক অংশ বাকী আছে? উত্তরঃ কখনই না। সূর্য যখন পূর্ব এলাকার অধিবাসীদেরআকাশে অস্তমিত হয়, তখন পশ্চিম এলাকার দিগন্তে তো সূর্য দেখাই যাচ্ছেতাদেরকে কি আমরা ইফতার করতে বাধ্য করব? উত্তরঃ অবশ্যই না। অতএব চন্দ্রওসম্পূর্ণরূপে সূর্যের মতই। চন্দ্রের হিসাব মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। আরসূর্যের হিসাব দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ্‌ বলেছেন,
أُحِلَّلَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌلَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْتَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالآنَبَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُواحَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِالْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِوَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَحُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِلِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
ছিয়ামেররাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে; তারা তোমাদেরজন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ। তোমরা যে নিজেদের খিয়ানত করছিলে, আল্লাহ্‌ তা পরিজ্ঞাত আছেন। এ জন্যে তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবংতোমাদের (ভার) লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাত্রেও) তাদেরসাথে সহবাসে লিপ্ত হতে পার এবং আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেনতা অনুসন্ধান কর। এবং প্রত্যুষে (রাতের) কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখাপ্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ততোমরা রোযা পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ইতেকাফ করার সময় (স্ত্রীদের) সাথেসহবাস করবে না; এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না। এভাবেআল্লাহ্‌ মানব মন্ডলীর জন্যে তাঁর নিদর্শন সমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযতহয়।(সূরা বাক্বারা- ১৮৭) সেই আল্লাহ্‌ই বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُঅতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালনকরে।অতএব যুক্তি ও দলীলের নিরীখে ছিয়াম ও ইফতারের ক্ষেত্রে প্রত্যেকস্থানের জন্যআলাদা বিধান হবে। যার সম্পর্ক হবে বাহ্যিক আলামত বা চিহ্নদ্বারা যা আল্লাহ্‌ তা’আলা কুরআনে এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সুন্নাতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে চাঁদ প্রত্যক্ষকরা এবং সূর্য বা ফজর প্রত্যক্ষ করা।
মানুষ যে এলাকায় থাকবে সে এলাকায় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে রোযা ভঙ্গ করবে।

প্রশ্নঃ (৩৯৪) রোযাদার যদি এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর হয়, কিন্তু আগেরদেশে ঈদের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেকি এখন রোযা ভঙ্গ করবে? উল্লেখ্য যে, দ্বিতীয় দেশে ঈদের চাঁদ এখনও দেখা যায়নি।
উত্তরঃকোন মানুষ যদি এক ইসলামী রাষ্ট্র থেকে অপর ইসলামী রাষ্ট্রে গমণ করে আরউক্ত রাষ্ট্রে ছিয়াম ভঙ্গের সময় না হয়ে থাকে, তবে সে তাদের সাথে ছিয়ামচালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না তারা ছিয়াম ভঙ্গ করে। কেননা মানুষ যখন রোযারাখে তখন রোযা রাখতে হবে, মানুষ যখন রোযা ভঙ্গ করে তখন রোযা ভঙ্গ করতে হবে।মানুষ যেদিন কুরবানীর ঈদ করে সেদিন কুরবানীর ঈদ করবে। যদিও তার একদিন বাদু’দিন বেশী হয়ে যায় তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমন কোন লোক রোযারেখে পশ্চিম দিকের কোন দেশে ভ্রমণে শুরু করল। সেখানে সূর্য অস্ত যেতে দেরীহচ্ছে। তখন সে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশ্যই দেরী করবে। যদিও সময় সাধারণ দিনেরচেয়ে দু’ঘন্টা বা তিন ঘন্টা বা তার চাইতে বেশী হয়।
দ্বিতীয়শহরে সে যখন পৌঁছেছে তখন সেখানে ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি। অতএব সে অপেক্ষাকরবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে চাঁদ না দেখেরোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِতোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর।[3]
এরবিপরীত কেউ যদি এমন দেশে সফর করে যেখানে নিজের দেশের পূর্বে চাঁদ দেখাগেছে (যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে সঊদী আরব সফর করে) তবে সে ঐ দেশের হিসাবঅনুযায়ী রোযা ভঙ্গ করবে এবং ঈদের নামায পড়ে নিবে। আর যে কটা ছিয়াম বাকীথাকবে তা রামাযান শেষে কাযা আদায় করে নিবে। চাই একদিন হোক বা দুদিন। কেননাআরবী মাস ২৯ দিনের কম হবে না বা ৩০ দিনের বেশী হবে না। ২৯ দিন পূর্ণ নাহলেও রোযা ভঙ্গ করবে এজন্য যে, চাঁদ দেখা গেছে। আর চাঁদ দেখা গেলে তো রোযাভঙ্গ করা আবশ্যক। কিন্তু যেহেতু একটি রোযা কম হল তাই রামাযান শেষে তা কাযাকরতে হবে। কেননা মাস ২৮ দিনে হয় না।
কিন্তুপূর্বেরমাসআলাটি এর বিপরীত। নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করাজায়েয নয়। কেননা নতুন চাঁদ না উঠা পর্যন্ত রামাযান মাস বহাল। যদিওদুএকদিন বেশী হয়ে যায় তাতে কোন অসুবিধা নেই। সেটা এক দিনে কয়েক ঘন্টাবৃদ্ধি হওয়ার মত। (অতিরিক্ত রোযা নফল হিসেবে গণ্য হবে।)
কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়।

প্রশ্নঃ (৩৯৫) যে ব্যক্তি কষ্টকর কঠিন কাজ করার কারণে রোযা রাখতে অসুবিধা অনুভব করে তার কি রোযা ভঙ্গ করা জায়েয?
উত্তরঃআমি যেটা মনে করি, কাজ করার কারণে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়, হারাম। রোযারেখে কাজ করা যদি সম্ভব না হয়, তবে রামাযান মাসে ছুটি নিবে, অথবা কাজকমিয়ে দিবে, যাতে করে রামাযানের ছিয়াম পালন করা সম্ভব হয়। কেননারামাযানের ছিয়াম ইসলামের অন্যতম একটি রুকন। যার মধ্যে শিথীলতা করা জায়েযনয়।
ঋতুর দিনগুলোতে ছেড়ে দেয়া রোযা কাযা আদায় করা আবশ্যক।
প্রশ্নঃ (৩৯৬) জনৈক বালিকা ছোট বয়সে ঋতুবতী হয়ে গেছে। সে অজ্ঞতা বশতঃ ঋতুর দিনগুলোতে রোযা পালন করেছে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তরঃতার উপর আবশ্যক হচ্ছে, ঋতু অবস্থায় যে কয়দিনের ছিয়াম আদায় করেছেসেগুলোর কাযা আদায় করা। কেননা ঋতু অবস্থায় ছিয়াম পালন করলে বিশুদ্ধ হবেনা এবং গ্রহণীয় হবে না। যদিও তা অজ্ঞতা বশতঃ হয়ে থাকে। তাছাড়া পরবর্তীতেযে কোন সময় তা কাযা করা সম্ভব। কাযা আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়নেই।
এরবিপরীত আরেকটি মাসআলা হচ্ছে, অল্প বয়সে জনৈক বালিকা ঋতুবতী হয়ে গেছে।কিন্তু লজ্জার কারণে বিষয়টি কারো সামনে প্রকাশ করেনি এবং তার ছিয়ামও পালনকরেনি। এর উপর ওয়াজিব হচ্ছে, উক্ত মাসের ছিয়াম কাযা আদায় করা। কেননানারী ঋতুবতী হয়ে গেলেই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় এবং শরীয়তের যাবতীয়বিধি-বিধান পালন করা তার উপর ফরয হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ (৩৯৭) জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ছিয়াম ভঙ্গ করার বিধান কি?
উত্তরঃযে ব্যক্তি রামাযানের ছিয়াম পরিত্যাগ করে এই যুক্তিতে যে, সে নিজের এবংপরিবারের জীবিকা উপার্জনে ব্যস্ত। সে যদি এই তা’বীল বা ব্যাখ্যা করে যে, অসুস্থ ব্যক্তি যেমন রোযা ভঙ্গ না করলে বেঁচে থাকতে অক্ষম তেমনি আমিও তোদরিদ্র অভাবী, জীবিকা উপার্জন করতে হলে আমাকে রোযা ভঙ্গ করতে হবে, তবে এইযুক্তি খোঁড়া এবং নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি মূর্খ। অতএব অজ্ঞতার কারণে এবংঅপব্যাখ্যার কারণে সে উক্ত সময়ের কাযা আদায় করবে যদি সে জীবিত থাকে।জীবিত না থাকলে তার পরিবার তার পক্ষ থেকে কাযা আদায় করে দিবে। কেউ কাযাআদায় না করলে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্যখাওয়াবে।
কিন্তুযদি কোন ধরণের ব্যাখ্যা না করে ইচ্ছাকৃতভাবে ছিয়াম পরিত্যাগ করে থাকে, তবে বিদ্বানদের মতামত সমূহের মধ্যে থেকে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, সময়ের সাথেসংশ্লিষ্ট ইবাদত সমূহ বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃতভাবে সময় অতিবাহিত করে আদায় করলেতা কবূল হবে না। তাই এ লোকের উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা, নেক আমল ও নফল ইবাদত সমূহ বেশী বেশী সম্পাদন করা ও ইস্তেগফার করা। এর দলীলহচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّযে ব্যক্তি এমন আমল করবে যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই। তবে তাপ্রত্যাখ্যাত।[4] সময়ের সাথে নির্দিষ্ট ইবাদত সমূহ যেমন সময়ের পূর্বেআদায় করলে কবূল হবে না। অনুরূপভাবে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তাগ্রহণীয় হবে না। কিন্তু যদি অজ্ঞতা বা ভুলের কোন ওযর থাকে, তবে ভুলসম্পর্কে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ نَسِيَ صَلَاةً أو نام عنها فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ[
যে ব্যক্তি ছালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকে বা ভুলে যায়, তবে স্মরণ হলেই সে তা আদায় করবে। এটাই তার কাফ্‌ফারা।[5]

প্রশ্নঃ (৩৯৮) রোযা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য কারণ কি কি?
উত্তরঃরোযা ভঙ্গের কারণ সমূহ হচ্ছেঃ
১)অসুস্থতা,
২)সফর। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্‌ বলেন, وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَআর যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে (সে রোযা ভঙ্গ করে) অন্য দিনে তা কাযা আদায় করে নিবে।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
৩)গর্ভবতী নারীর নিজের বা শিশুর জীবনের আশংকা করলে রোযা ভঙ্গ করবে।
৪)সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী নারী যদি রোযা রাখলে নিজের বা সন্তানের জীবনের আশংকা করে তবে রোযা ভঙ্গ করবে।
৫)কোন বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে রোযা ভঙ্গ করা: যেমন পানিতে ডুবন্তব্যক্তিকে উদ্ধার, আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে দরকার হলে রোযা ভঙ্গ করা।
৬)আল্লাহ্‌র পথে জিহাদে থাকার সময় শরীরে শক্তি বজায় রাখার জন্য রোযা ভঙ্গকরা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের সময়ছাহাবীদেরকে বলেছিলেন,إِنَّكُمْ مُصَبِّحُو عَدُوِّكُمْ وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ فَأَفْطِرُوا আগামীকাল তোমরা শত্রুর মোকাবেলা করবে, রোযা ভঙ্গ করলে তোমরা অধিক শক্তিশালী থাকবে, তাই তোমরা রোযা ভঙ্গ কর।[6]
বৈধকোন কারণে রোযা ভঙ্গ করলে দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় থাকা আবশ্যক নয়।কেননা সে তো গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণেই রোযা ভঙ্গ করেছে। এজন্য এ মাসআলায়বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ কোন রুগী যদি অসুস্থতার কারণে দিনে রোযা ভঙ্গ করে আরদিন শেষ হওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে যায়, তবে দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায়থাকার কোন আবশ্যকতা নেই। কোন মুসাফির যদি রোযা ভঙ্গ অবস্থায় দিন থাকতেইসফর থেকে ফিরে আসে তারও দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় থাকার আবশ্যকতা নেই।অনুরূপ বিধান ঋতুবতী নারীর। কেননা এরা সবাই বৈধ কারণে রোযা ভঙ্গ করেছে। তাইঐ দিবস তাদের জন্যই। তাতে তাদের প্রতি ছিয়ামের আবশ্যকতা নেই। কেননাশরীয়ত তাদেরকে রোযা ভঙ্গের অনুমতি প্রদান করে আবার তা আবশ্যক করবে না।
এরবিপরীত মাসআলা হচ্ছে, রামাযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে একথা যদি দিনের বেলায়প্রমাণিত হয়, তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথে রোযার নিয়ত করে নিতে হবে এবংদিনের বাকী সময় রোযা অবস্থায় কাটাতে হবে। উভয় মাসআলায় পার্থক্যসুস্পষ্ট। কেননা যখন কিনা দিনের বেলায় রামাযান মাস শুরু হওয়ার কথাপ্রমাণিত হয়েছে, তখন তাদের উপর সে দিনের ছিয়াম পালন করা ওয়াজিব হয়েগেছে। কিন্তু না জানার কারণে তাদের ওযর গ্রহণযোগ্য এবং তাদের ছিয়ামবিশুদ্ধ। এই কারণে তারা যদি জানতে পারত যে আজ রামাযান শুরু হয়েছে, তবেরোযা রাখা তাদের জন্য আবশ্যক হত।
ফজর হওয়ার পর যদি জানতে পারে যে রামাযান মাস শুরু হয়েছে, তখন কি করবে?
প্রশ্নঃ (৩৯৯) রামাযান মাস শুরু হয়েছে কিনা এসংবাদ না পেয়েই জনৈক ব্যক্তি রাতেঘুমিয়ে পড়ে। রাতে সে ছিয়ামের নিয়ত করেনি ফজর হয়ে গেছে। ফজরের সময় সেজানতে পারল আজ রামাযানের প্রথম দিন। এ অবস্থায় তার করণীয় কি? উক্ত দিনেরছিয়াম কি কাযা আদায় করতে হবে?
উত্তরঃযখন সে জানতে পারবে তখনই রোযার নিয়ত করে ফেলবে এবং ছিয়াম পালন করবে।অধিকাংশ বিদ্বানের মতে এ দিনটির ছিয়াম পরে সে কাযা আদায় করবে। তবে ইমামইবনু তায়মিয়া (রহঃ) এতে বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, জানার সাথে নিয়তেরসম্পর্ক। এ লোক তো জানতেই পারেনি। অতএব তার ওযর গ্রহণযোগ্য। সে জানতে পারলেরাতে কখনই ছিয়ামের নিয়ত করা ছাড়তো না। কিন্তু সে তো ছিল অজ্ঞ। আর অজ্ঞব্যক্তির ওযর গ্রহণযোগ্য। অতএব জানার পর যদি রোযার নিয়ত করে ফেলে তবেছিয়াম বিশুদ্ধ। তাকে কাযা আদায় করতে হবে না।
অধিকাংশবিদ্বান বলেন, তাকে উক্ত দিনের রোযা রাখা আবশ্যক এবং তার কাযা আদায় করাওআবশ্যক। এর কারণ হিসেবে বলেন, এ লোকের দিনের একটি অংশ নিয়ত ছাড়া অতিবাহিতহয়েছে। তাই তাকে কাযা আদায় করতে হবে।
আমি মনে করি, সতর্কতা বশতঃ উক্ত দিনের রোযা কাযা করে নেয়াই উচিত।
রোযা ভঙ্গের ওযর শেষ হয়ে গেলে কি দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় কাটাবে?
প্রশ্নঃ (৪০০) কারণ বশতঃ কোন ব্যক্তি যদি রোযা ভঙ্গ করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেইউক্ত ওযর দূর হয়ে যায়। সে কি দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায় কাটাবে?
উত্তরঃনা, দিনের বাকী অংশ ছিয়াম অবস্থায় থাকা আবশ্যক নয়। তবে রামাযান শেষেউক্ত দিবসের কাযা তাকে আদায় করতে হবে। কেননা শরীয়ত অনুমদিত কারণেই সেছিয়াম ভঙ্গ করেছে। উদাহরণ স্বরূপ অসুস্থ ব্যক্তির অপারগতার কারণে শরীয়ততাকে ঔষুধ সেবনের অনুমতি দিয়েছে। ঔষুধ সেবন করা মানেই রোযা ভঙ্গ। অতএবপূর্ণ এই দিনটির ছিয়াম তার উপর আবশ্যক নয়। দিনের বাকী অংশ রোযা অবস্থায়থাকার অবশ্যকতায় শরীয়ত সম্মত কোন ফায়েদা নেই। যেখানে কোন উপকার নেই তাআবশ্যক করাও চলে না।
উদাহরণ:জনৈক ব্যক্তি দেখল একজন লোক পানিতে ডুবে যাচ্ছে। সে বলছে আমি যদি পানি পানকরি তবে এই ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে পারব। পানি পান না করলে তাকে বাঁচানোআমার পক্ষে সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় সে পানি পান করবে এবং তাকে পানিতেডুবা থেকে উদ্ধার করবে। অতঃপর দিনের অবশিষ্ট অংশ খানা-পিনা করবে। এ দিনেরসম্মান তার জন্য আর নেই। কেননা শরীয়তের দাবী অনুযায়ীই রোযা ভঙ্গ করা তারজন্য বৈধ হয়েছে। তাই দিনের বাকী অংশ রোযা রাখা আবশ্যক নয়।
যদিকোন লোক অসুস্থ থাকে তাকে কি আমরা বলব, ক্ষুধার্ত না হলে খানা খাবে না? পিপাসিত না হলে পানি পান করবে না? অর্থাৎ- প্রয়োজন না হলে খানা-পিনা করবেনা? না, এরূপ বলব না। কেননা এ লোককে তো রোযা ভঙ্গের অনুমতি দেয়া হয়েছে।অতএব শরঈ দলীলের ভিত্তিতে রামাযানের রোযা ভঙ্গকারী প্রত্যেক ব্যক্তির দিনেরঅবশিষ্ট অংশ রোযা অবস্থায় অতিবাহিত করা আবশ্যক নয়।
এরবিপরীত মাসআলায় বিপরীত সমাধান। অর্থাৎ- বিনা ওযরে যদি রোযা ভঙ্গ করে তবেতাকে দিনের অবশিষ্ট অংশ রোযা অবস্থায় থাকতে হবে। কেননা রোযা ভঙ্গ করা তারজন্য বৈধ ছিল না। শরীয়তের অনুমতি ছাড়াই সে এদিনের সম্মান নষ্ট করেছে।অতএব দিনের বাকী অংশ ছিয়াম পালন করা যেমন আবশ্যক তেমনি কাযা আদায় করাওযরূরী।
কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে রোযা ভঙ্গ করে মিসকীন খাওয়াবে।

প্রশ্নঃ (৪০১) জনৈক মহিলা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ডাক্তারগণ তাকে রোযা রাখতে নিষেধ করেছে। এর বিধান কি?
উত্তরঃআল্লাহ্‌ বলেন,
]شَهْرُرَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍمِنْ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَفَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْأَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْالْعُسْرَ[
রামাযানহচ্ছে সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াতএবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝেপার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসেররোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনেগণনা পূরণ করে নিবে। আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্যকঠিন কামনা করেন না।(সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
মানুষযদি এমন রোগে আক্রান্ত হয় যা থেকে সুস্থ হওয়ার কোন আশা নেই। তবেপ্রতিদিনের বিনিময়ে একজন করে মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াবে। খাদ্য দেয়ারপদ্ধতি হচ্ছে, মিসকীনকে পরিমাণমত চাউল প্রদান করা এবং সাথে মাংস ইত্যাদিতরকারী হিসেবে দেয়া উত্তম। অথবা দুপুরে বা রাতে তাকে একবার খেতে দিবে। এটাহচ্ছে ঐ রুগীর ক্ষেত্রে যার সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। আর নারী এধরণের রোগে আক্রান্ত। তাই আবশ্যক হচ্ছে সে প্রতিদিনের জন্য একজন করেমিসকীনকে খাদ্য প্রদান করবে।

প্রশ্নঃ (৪০২) কখন এবং কিভাবে মুসাফির নামায ও রোযা আদায় করবে?
উত্তরঃমুসাফির নিজ শহর থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত দু’দু রাকাত নামায আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
أَوَّلَ مَا فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ وَأُتِمَّتْ صَلَاةُ الْحَضَرِ
সর্বপ্রথমযে নামায ফরয করা হয়েছিল তা হচ্ছে দু’রাকাত। সফরের নামাযকে ঐভাবেই রাখাহয়েছে এবং গৃহে অবস্থানের সময় নামাযকে পূর্ণ (চার রাকাত) করা হয়েছে।অন্যবর্ণনায় বলা হয়েছে, গৃহে অবস্থানের সময় নামায বৃদ্ধি করা হয়েছে।[7] আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এরসাথে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। তিনি মদীনা ফিরে আসাপর্যন্ত দুদু রাকাত করে নামায আদায় করলেন।
কিন্তুমুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের সাথে নামায আদায় করে তবে পূর্ণ চার রাকাতইপড়বে। চাই নামাযের প্রথম থেকে ইমামের সাথে থাকুক বা পরে এসে অংশ গ্রহণকরুক। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাধারণ বাণী একথারদলীল।
إِذَاسَمِعْتُمُ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُمْبِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلَا تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْفَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
যখননামাযের ইকামত প্রদান করা হয় তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থীর এবং প্রশান্তিরসাথে নামাযের দিকে আগমণ করবে। তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর নামাযের যতটুকুঅংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে পূর্ণ করে নিবে।[8]
এহাদীছটি স্থানীয় ইমামের পিছনে নামায আদায়কারী মুসাফিরদেরও শামিল করে।ইবনু আব্বাস (রাঃ)কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এটা কি কথা মুসাফির একাকী নামাযপড়লে দু’রাকাত পড়বে আর স্থানীয় ইমামের পিছনে পড়লে চার রাকাত পড়বে? তিনি বললেন, এটা সুন্নাত।
মুসাফিরের জন্য জামাআতের নামায রহিত নয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেনঃ
]وَإِذَاكُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌمِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوافَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْيُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ[
আরযখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে জামাআতের সাথে নামায পড়ান, তবে তাএইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াবে এবংনিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআতপূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও নামাযপড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে নামায পড়ে নিবে।(সূরা নিসাঃ ১০২)
অতএবমুসাফির যদি নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে অবস্থান করে, তবে আযান শুনলেই মসজিদেজামাআতের নামাযে উপস্থিত হবে। তবে যদি মসজিদ থেকে বেশী দূরে থাকে বা সফরসঙ্গীদের ক্ষতির আশংকা করে তবে মসজিদে না গেলেও চলবে। কেননা সাধারণ দলীলসমূহ একথাই প্রমাণ করে যে, আযান বা এক্বামত শুনলেই জামাআতে উপস্থিত হওয়াওয়াজিব।
নফলবা সুন্নাত নামাযের ক্ষেত্রেঃ মুসাফির যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছাড়াসবধরণের নফল ও সুন্নাত আদায় করবে। রাতের নফল (তাহাজ্জুদ),





(ফতোয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)
মূল:আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমীন (রাহ:)
অনুবাদক:শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...