Thursday 4 June 2015

রমযানে কিয়ামুল লাইলের বিধান



সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি নিজ দয়ায় সামনে অগ্রসরমান পাগুলোকে সাহায্য করেন, আপন করুণায় ধ্বংসপ্রায় জীবনগুলোকে উদ্ধার করেন এবং যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তাকে সহজতর পথ জান্নাতের রাস্তাকে সহজ করে দেন, ফলে তাকে আখিরাতের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। আমি তাঁর স্তুতি গাই তাবৎ সুস্বাদ ও বিস্বাদ বিষয়ের জন্য।
আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে একমাত্র তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী; প্রতিটি অন্তরই (তাঁর সামনে) লাঞ্ছিত ও দুর্দশাগ্রস্ত। আর আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, তিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে আপন রবের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন। 

আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষিত করুন তাঁর ওপর, তাঁর সাথী আবূ বকরের ওপর যাকে ভ্রান্তগোষ্ঠী তাতিয়ে দিয়েছিল, উমরের ওপর যার আত্মা নিজেই নিয়ন্ত্রণ করত নিজেকে, উসমানের ওপর অঢেল অর্থ খরচকারী, আলীর ওপর যিনি ঘন সেনাবাহিনীর সাথে লড়াইয়েও প্রকৃত বীর কাকে বলে চিনিয়ে দিতেন এবং অবশিষ্ট সব সাহাবীর ওপর আর তাদের সুন্দর অনুসারীদের উপর, সামনে ধাবমান পায়ের পদধ্বনি চলমান থাকা পর্যন্ত।    
       আমার ভাইয়েরা, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইবাদত প্রবর্তন করেছেন, তারা যাতে বিভিন্ন ইবাদত করে সে অনুযায়ী নেকী অর্জন করতে পারে। যাতে করে এক প্রকারের ইবাদতে বিরক্তি বোধ করে অন্য আমল ছেড়ে হতভাগ্য না হয়। এসব ইবাদতের মধ্যে কিছু রয়েছে ফরয যাতে কোনো প্রকার কমতি বা ত্রুটি করা যাবে না আবার কিছু রয়েছে নফল যা ফরযে পরিপূর্ণতা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক।
এসব ইবাদতের মধ্যে অন্যতম হলো সালাত। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যা কার্যত পাঁচ হলেও মীযানের পাল্লায় পঞ্চাশ। আল্লাহ তাআলা নফল সালাতকে ফরয সালাতের ক্ষতিপূরণ এবং তার নৈকট্য লাভের মাধ্যম স্থির করেছেন।
       এসব নফল সালাতের অন্যতম হচ্ছে:
         কিছু সুন্নাত সালাতযা ফরয সালাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমনফজরের ফরয সালতের পূর্বে দুরাকাতযোহরের ফরযের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দুরাকাত। মাগরিবের ফরযের পর দুরাকাত ও এশার ফরযের পর দুরাকাত।
         আর এসব (ফরয ছাড়া অন্যসব) নফল সালাতের অন্যতম হলো সালাতুল লাইল (রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ)
যা আদায়কারীদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿ وَٱلَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدٗا وَقِيَٰمٗا ٦٤ ﴾ [الفرقان: ٦4] 
‘আর যারা তাদের রবের জন্য সিজদারত ও দণ্ডায়মান হয়ে রাত্রি যাপন করে’ {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩}
আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন:
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة: ١٦،  ١٧] 
‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছিতা থেকে তারা ব্যয় করে। অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছেতারা যা করততার বিনিময়স্বরূপ’ {সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬-১৭}
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ»
‘ফরয সালাতের পর অধিক ফযলতপূর্ণ হল রাতের সালাত[1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন:
«يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصِلُوا الْأَرْحَامَ، وَصَلُّوا وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ»
‘হে লোক সকল! সালামের প্রসার ঘটাও, গরীব-দুঃখীদের খাদ্য দান করআত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখরাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকেতখন সালাত আদায় কততাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে[2]


সালাতুল বিতর

         সালাতুল বিতর; যা সালাতুল লাইল তা রাত্রির সালাতের  একটি অংশ। যার সর্বনিম্ন পরিমাণ এক রাকাত। আর সর্বোচ্চ এগার রাকাত।

     অতএব কেবল এক রাকাত বিতরও পড়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ»
‘যে বিতর সালাত এক রাকাত আদায় করতে যায়সে যেন এক রাকাত আদায় করে[3]

     বিতর সালাত তিন রাকাতও পড়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلَاثٍ فَلْيَفْعَلْ »
‘যে তিন রাকাত বিতর পড়তে চায় সে যেন তিন রাকাত পড়ে[4]

তবে কেউ যদি এক সালামে বিতর সালাত শেষ করতে চায়তাও পারবে। কারণ;
ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন:
أنَّ عُمر بنَ الخطاب رضي الله عنه أوتر بِثَلَاثَ رَكَعَاتٍ , لَمْ يُسَلِّمْ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিন রাকাত বিতর পড়েছেন ও সর্বশেষে সালাম ফিরিয়েছেন[5]

অবশ্য কেউ যদি দুরাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে তৃতীয় রাকাত পড়তে চায়তবে তাও পারবে। কেননা;
বুখারী নাফে‘ থেকে বর্ণনা করেন:
أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُسَلِّمُ بَيْنَ الرَّكْعَةِ وَالرَّكْعَتَيْنِ فِي الْوِتْرِ حَتَّى يَأْمُرَ بِبَعْضِ حَاجَتِهِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে মর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তিন রাকাত বিতর সালাতের দুরাকাত আদায়ের পর সালাম ফিরিয়েছেন। এমনকি তিনি প্রয়োজনে কোনো নির্দেশও দিতেন[6]

     তেমনি পাঁচ রাকাত বিতর সালাত আদায় করা যায়, তবে এসব রাকাত একত্রে আদায় করবেসর্বশেষ বৈঠকেই শুধু বসতে হবে এবং সালাম ফিরানো যাবে।
কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ»
যে বিতর পাঁচ রাকাত আদায় করতে চায়সে যেন পাঁচ রাকাত আদায় করে[7]
অনুরূপভাবে ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُوتِرُ مِنْ ذَلِكَ بِخَمْسٍ، لَا يَجْلِسُ فِي شَيْءٍ إِلَّا فِي آخِرِهَا» .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাকাত সালাত আদায় করতেনতন্মধ্য হতে পাঁচ রাকাত বিতর আদায় করতেনযার শেষেই শুধু তিনি বৈঠক করতেন[8]

     তেমনি পাঁচ রাকাতের ন্যায় একত্রে সাত রাকাত বিতর আদায় করা যাবে
যেমন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِسَبْعٍ وَبِخَمْسٍ لَا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِسَلَامٍ وَلَا بِكَلَامٍ»
‘রাূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও সাত রাকাত আবার কখনও পাঁচ রাকাত বিতর সালাত আদায় কতেন। তাতে সালাম-কালামের মাধ্যমে বিরতি দিতেন না[9]

     তেমনি নয় রাকাত বিতর একত্রে আদায় করা যাবে; তন্মধ্যে অষ্টম রাকাতে বসবে, সেখানে তাশাহহুদ ও দো‘আ পড়বে কিন্তু সালাম না ফিরিয়ে নবম রাকাতের জন্য দাঁড়াবে, তারপর নবম রাকাত পড়ার পর বসে তাশাহহুদ ও দো‘আ করে সালাম ফিরাবে
যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীসে রয়েছে:
«وَكان يُصَلِّي تِسْعَ رَكَعَاتٍ لَا يَجْلِسُ فِيهَا إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ، فَيَذْكُرُ اللهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ، ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي التَّاسِعَةَ، ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ، ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا»  
তিনি নয় রাকাত সালাত আদায় করতেন, অষ্টম রাকাতে বসতেন এবং আল্লাহর যিকির, প্রশংসা ও দোআ করতেন তথা তাশাহহুদ পড়তেনঅতঃপর উঠতেন এবং সালাম না ফিরিয়েই দাঁড়িয়ে যেতেন। এরপর নবম রাকাত আদায় করতেন, এরপর বসতেন এবং আল্লাহর যিকির, প্রশংসা ও দোআ তথা তাশাহহুদ পড়ে আমাদের শুনিয়ে সালাম ফেরাতেন[10]

     অনুরূপভাবে এগার রাকাত সালাত আদায় করা যাবে। এমতাবস্থায় ইচ্ছা করলে প্রতি দুরাকাতে সালাম ফিরানো যাবে আর সবশেষে এক রাকাতের মাধ্যমে বিতর আদায় করা যাবে।
যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন:
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي، مَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاةِ الْعِشَاءِ إِلَى الْفَجْرِ، إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُسَلِّمُ فِي كُلِّ اثْنَتَيْنِ، وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ »
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশা ও ফজরের সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে এগার রাকাত সালাত আদায় করতেন, যার প্রতি দুরাকাতে সালাম ফিরাতেন। তিনি সর্বশেষে এক রাকাতের মাধ্যমে বিতর আদায় কতেন[11]
অথবা ইচ্ছা করলে প্রথমে চার রাকাত, তারপর চার রাকাত আদায় করতেন এবং শেষে তিন রাকাত সালাত আদায় করতেন। কারণ:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان النبي صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا»
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকাত সালাত আদায় করতেনতা কত সুন্দর ও দীর্ঘ করতেনতা কত সুন্দর ও দীর্ঘ ছিলসে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না। তারপর পুনরায় চার রাকাত সালাত আদায় করতেনতা কত সুন্দর ও দীর্ঘ করতেনতা কত সুন্দর ও দীর্ঘ ছিলসে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না। অতঃপর তিনি তিন রাকাত সালাত আদায় করতেন[12]

হাম্বলী ও শাফেয়ী ফকীহগণ বলেন, এক তাশাহহুদে এগার রাকাত বিতর অথব দু তাশাহহুদে বিতর আদায় করা জায়েযযার শেষ তাশাহহুদের পূর্বের রকাতেও একটি তাশাহহুদ হবে।

     তবে রমযানে সালাতুল লাইলের স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
«مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
‘যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সঙ্গে ও ছাওয়াবের আশায় রাত জেগে সালাত আদায় করবেতার পূর্বের সকল (গীরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে[13]
এখানে ‘ঈমানের সঙ্গে’ অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে এবং তার পক্ষ হতে যে সাওয়াব াখা হয়েছে তাতে বিশ্বাস রেখে
আর ‘ছাওয়াবের আশায়’ অর্থাৎ কেবল নেকীর আশায় করা হবে, লোক দেখানোসুনাম অর্জনসম্পদ বা সম্মান লাভের আশায় না হওয়া।

বস্তুত ‘কিয়ামে রমযান’ এটি রমযানের রাত্রিতে সালাতে দাঁড়ানোকে বুঝায়; চাই সেটা প্রথম রাতে হোক বা শেষ রাতে। সুতরাং বুঝা গেল যে,
     তারাবীর সালাতও ক্বিয়ামে রমযানের অন্তর্ভুক্ত। তাই উচিত হলোতারাবীর সালাতকে গুরুত্ব দেয়া এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও প্রতিদানের আশা ও আগ্রহ প্রকাশ করা। এ সালাতুত্ তারাবীহ তো হাতেগোনা কয়েকটি রাত্রি মাত্র। সুযোগ চলে যাওয়ার পূর্বেই বুদ্ধিমান ঈমানদার ব্যক্তি এ সুযোগ গ্রহণ করবে।
     তারাবীহ শব্দের অর্থ বিশ্রাম করা। তারাবীহকে এজন্য তারাবীহ বলা হয়; কারণ লোকেরা এ সালাত বহু দীর্ঘায়িত করে আদায় করত। তাই যখনই চার রাকাত সালাত শেষ করত তখনই তারা একটু আরাম বা বিশ্রাম করে নিত
     সর্বপ্রথম আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (নববীতে) তারাবীহর সালাত সুন্নত হিসেবে চালু করেন। তারপর উম্মতের ওপর ফরয হয়ে যাবার আশংকায় তিনি এ সালাত ছেড়ে দেন।
বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে:
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ المُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي المَسْجِدِ، فَصَلَّى بِصَلاَتِهِ نَاسٌ، ثُمَّ صَلَّى مِنَ القَابِلَةِ، فَكَثُرَ النَّاسُ، ثُمَّ اجْتَمَعُوا مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ، فَلَمْ يَخْرُجْ إِلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ: «قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ»
আম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেনলোকজনও তার সঙ্গে সালাত আদায় করল। পরবর্তী রাতেও তিনি সালাত আদায় করলেনতাতে লোকজন আরো বৃদ্ধি পেল। তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রতে অনেক লোকের সমাগম হল। কিন্তু সে রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হলেন না। সকালে তিনি বললেন,তোমরা যা করেছতা আমি দেখেছি। কিন্তু তোমাদের ওপর এ সালাত ফরয হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি উপস্থিত হইনি। বর্ণনাকারী বলেনঘটনাটি রমযান মাসে ঘটেছিল[14]
হাদীসে আর বর্ণিত আছে:
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: صُمْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُصَلِّ بِنَا، حَتَّى بَقِيَ سَبْعٌ مِنَ الشَّهْرِ، فَقَامَ بِنَا حَتَّى ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، ثُمَّ لَمْ يَقُمْ بِنَا فِي السَّادِسَةِ، وَقَامَ بِنَا فِي الخَامِسَةِ، حَتَّى ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ، فَقُلْنَا لَهُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَوْ نَفَّلْتَنَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِنَا هَذِهِ؟ فَقَالَ: «إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ»
‘আবূ যর গিফরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেনআমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সিয়াম পালন করছিলাম। (এর মধ্যে) রমযানের সাতদিন বাকি থাকার পূর্ব পর্যন্ত (প্রথম ২৩ দিন) তিনি আমাদে নিয়ে সালাত আদায় করেন নি। বাকি সাতদিনের প্রথম রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর ষষ্ঠ রাতে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন না। পঞ্চম রাতের অর্ধাংশপর্যন্ত পুনরায় আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। আমরা বললামইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাকি রাতে যদি আমাদের নিয়ে নফল সালাত আদায় করতেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেননিশ্চয়ই যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সালাত আদায় করবেতার আমলনামায় সারারাত সালাত আদায়ের সাওয়াব লেখা হবে[15]


বিতর সালাতসহ তারাবী সংখ্যা

         বিতর সালাতসহ তারাবী সংখ্যা কত হয় তা নিয়ে সালফে সালিহীনের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
কেউ বলেন ৪১ রাকাতকেউ ৩৯ রাকাতকেউ ২৯কেউ ২৩আবার কেউ ১৩এবং কেউ বলেন ১১ রাকাত। এসব মতামতের মধ্যে ১১ অথবা ১৩ রাকাতের মতামত অগ্রগণ্য
কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিততাকে প্রশ্ন করা হলরমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর সালাত কেমন (কত রাকাত) ছিল? তিনি বললেন,
«مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً »
‘রমযান এবং রমযানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি ছিল না[16]
অনুরূপ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 
«كَانَتْ صَلاَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً» يَعْنِي من اللَّيْلِ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর সালাত ১৩ রাকাত ছিল অর্থাৎ রাতে[17]
অনুরূপ মুওয়াত্তায় সায়েব ইবন ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,  
أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবন কাআব ও তামীমুদ্দারী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লোকদের ১১ রাকাত সালাত পড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন[18]

         সালাফে সালহীন তথা নেককার পূর্বসুরীরা তারাবীহ খুব লম্বা কেরাতে আদায় করতেন।
যেমন সায়েব ইবন ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ، حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ.
‘ক্বারীগণ শত শত আয়াত পড়তেন। এমনকি আমরা দীর্ঘ রাকাতের কারণে লাঠির ওপর ভর দিয়ে সালাত আদায় করতাম[19]  
কিন্তু আজকের দিনের মানুষ এর বিপরীত করে। তারা অনেক দ্রুতগতিতে তারাবীহ সালাত আদায় করে; যার ফলে শান্তি ও ধীর-স্থিরতার সাথে সালাত আদায় করা যায় না। অথচ ধীর-স্থিরতা ও শান্তির সাথে সালাত আদায় করা সালাতের রোকনসমূহের একটি; যা ব্যতীত সালাত বিশুদ্ধ হয় না।
তারা এ গুরুত্বপূর্ণ রোকনটিকে নষ্ট করে এবং তারা তাদের পিছনের দুর্বলঅসুস্থ ও বৃদ্ধ বয়সী মুসল্লিদের কষ্ট দেয়। এতে নিজেদের উপর যুলুম করে এবং অন্যদের উপরও যুলুম করে থাকে।
উলামায়ে কেরাম রাহেমাহুমুল্লাহ বলেনমুকতাদীগণ নামাযের সুন্নত আদায় করতে পারে না এমন দ্রুতগতিতে ইমামের সালাত পড়ানো মাকরূহ। তাহলে ওয়াজিব তরক করতে বাধ্য হয় এমন দ্রুততা অবলম্বন করলে কিরূপ হবে!? আমরা আল্লাহর কাছে  এরূপ কাজ থেকে আশ্রয় চাই।

     পুরুষদের জন্য তারাবীহর সালাতের জামাত উপেক্ষা করা উচিৎ নয়। যতক্ষণ ইমাম তারাবীহ ও বিতর শেষ না করেনততক্ষণ পর্যন্ত প্রস্থান করবে না; যাতে সারারাত দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যায়।

     যদি মহিলাদের দ্বারা বা মহিলাদের জন্য ফেৎনার আশংকা না থাকেতাহলে মসজিদে তারাবীহ জামাতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়া জায়েয।
কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  
«لاَ تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللَّهِ مَسَاجِدَ اللَّهِ»
‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদের (নারীদের) মসজিদে আসতে বাধা দিও না[20]
তাছাড়া এটা সালফে সালিহীনের আমলও বটে। তবে শর্ত হলো: পর্দার সঙ্গে আসতে হবে। খোলামেলাসুগদ্ধি ব্যবহার করেউচ্চ আওয়াজ করেএবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করে আসা বৈধ নয়। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
﴿ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ ﴾ [النور: ٣١] 
‘আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না’ {সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১}
অর্থাৎ বোরকালম্বা চাদর বা এ জাতীয় পোশাক ব্যবহারের পরও য স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায়তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কারণ তা লুকানো বা আবৃত করা সম্ভবও নয়
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের ঈদের সালাতে অনুমতি দিলে উম্মে আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন,
يَا رَسُولَ اللهِ إِحْدَانَا لَا يَكُونُ لَهَا جِلْبَابٌ، قَالَ: «لِتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا»
‘হে আল্লাহর রাসূলআমাদের কারও কারও তো বোরকা নেই। (তাহলে সে কী করবে?) তিনি বললেন‘তার কোনো বোন তাকে নিজ বোরকাসমূহ থেকে একটি বোরকা পরাবে[21]  

     নারীদের জন্য সুন্নত হলো: তারা পুরুষদের পছনে কাতার বাধবে এবং তাদের থেকে দূরত্ব অবলম্বন করবে। সর্বশেষ কাতারগুলোয় দাঁড়াবে। কারণ তাদের বেলায় উত্তম কাতারের বিবেচনা পুরুষদের উল্টো।
কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا آخِرُهَا، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا»
‘পুরুষদের জন্য উত্তম হল প্রথম কাতার এবং মন্দ হল পেছনের কাতার। আর নারীদের জন্য উত্তম হল পেছনের কাতার এবং মন্দ হল প্রথম কাতার[22]

     নারীগ ইমামের সালাম ফিরানোর পরপর ঘরে ফিরে যাবে। ওযর ছাড়া বিলম্ব করবে না।
কারণ, উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ قَامَ النِّسَاءُ حِينَ يَقْضِي تَسْلِيمَهُ، وَيَمْكُثُ هُوَ فِي مَقَامِهِ يَسِيرًا قَبْلَ أَنْ يَقُومَ» ، قَالَ: نَرَى - وَاللَّهُ أَعْلَمُ - أَنَّ ذَلِكَ كَانَ لِكَيْ يَنْصَرِفَ النِّسَاءُ، قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الرِّجَالِ
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেনতখন সালাম শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে নারীগণ দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি দাঁড়ানোর পূর্বেসামান্য কিছুক্ষণ বসে থাকতেন। বর্ণনাকারী ইবন শিহাব যুহরী বলেনআমার মনে হয় (আল্লাহই ভালো জানেন) সেটা এজন্য করতেনযাতে নারীরা পুরুষদের বের হওয়ার পূর্বে ফিরে যেতে পারে[23]
হে আল্লাহ! ঐ সকল (পূর্ববর্তী) লোকদের যেভাবে আমল করার তাওফীক দিয়েছেন তেমনিভাবে আমাদের আমল করার তাওফীক দিন। হে দয়াময় প্রভু! আমাদের পিতা-মাতা এবং সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধর ও সকলসাহাবীর ওপর।  




[1] মুসলিম: ১১৬৫।
[2] আহমাদ ৫/৪১৫; তিরমিযী ২৪৫৮; হাকিম: ৩/১৩, ৪/১৬০; এবং সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন।
[3] আবূ দাউদ: ১৪২২নাসায়ী: ১৭১২
[4] আবূ দাউদ: ১৪২২নাসায়ী: ১৭১২
[5] ত্বহাবী: ১৭৪২
[6] বুখারী: ৯৯১
[7] আবূ দাউদ: ১৪২২নাসায়ী: ১৭১২
[8] মুসলিম: ৭৩৭
[9] আহমদ: ৬/৩২১, নং ২৬৪৮৬নাসায়ী: ১৭১৫ইবনে মাজাহ্‌ ১১৯২
[10] মুসলিম: ৭৪৬আহমদ: ৬/৯১, ১৬৩।
[11] মুসলিম: ৭৩৬; আবু দাউদ: ১৩৩৬; নাসাঈ ২/৩০; আহমদ: ৬/২১৫, ২৪৮।
[12] বুখারী: ৩৫৬৯মুসলিম: ৭৩৮
[13] বুখারী: ৩৭মুসলিম: ৭৫৯
[14] বুখারী: ১১২৯মুসলিম: ৭৬১
[15] তিরমিযী: ৮০৬ইবন মাজাহ্‌: ১৩৭৫চার সুনান কিতাবেই সহীহ সনদে সংকলিত হয়েছে।
[16] বুখারী: ১১৪৭; মুসলিম: ৭৩৮।
[17] বুখারী: ১১৩৮
[18] মুয়াত্তা মালেক: ১/১৩৬, ১৩৭।
[19] পূর্ববর্তী হাদীসের অংশ।
[20] বুখারী: ৯০০মুসলিম: ৪৪২। ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীসে বর্ণিত।
[21] বুখারী: ৩৫১; মুসলিম: ৮৯০।
[22] মুসলিম: ৪৪০।
[23] বুখারী: ৮৭০


সংকলন: শায়খ মুহাম্মদ বন সালেহ ইবন উসাইমীন র. 
অনুবাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
আলী হাসান তৈয়ব
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...