Monday 23 February 2015

রিযকের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর ইচ্ছাধীন



রিযকের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর ইচ্ছাধীন
আল্লাহ তাআলা বলেন :

 বল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না সূরা সাবা : (৩৬)

আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের পরীক্ষা ও পরখ করার জন্য রিযক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন। রিযক বৃদ্ধি যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়অনুরূপ রিযকের সংকীর্ণতা তার অসন্তুষ্টির কারণ নয়। অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়টি জানে না। দুনিয়ার সচ্ছলতা কারো শুভলক্ষণের দলিল নয়কারণ আখেরাতের সাফল্য নির্ভর করে নেক আমলের উপরযা চিরস্থায়ী ও চিরকাল। দুনিয়াতে কখনো আল্লাহ অবাধ্যকে দেন সচ্ছলতাআনুগত্যকে দেন সংকীর্ণতা। আবার কখনো এর বিপরীত করেন। কখনো উভয়কে সচ্ছলতা দেনকখনো দেন সংকীর্ণতা। কখনো অবাধ্য বা আনুগত্য একই ব্যক্তিকে এক সময় দেন সচ্ছলতা,অপর সময় দেন অস্বচ্ছলতা। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আল্লাহ তাআলা নিজ প্রজ্ঞা ও হিকমতের ভিত্তিতেযদি সচ্ছলতা সম্মান ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ হতোতাহলে এর অধিকারী একমাত্র অনুগতরাই হতোঅবাধ্যরা কখনো এর স্বাদ পেত না। আর যদি সংকীর্ণতা অপমান ও আল্লাহর গোস্বার কারণ হতোতাহলে অবাধ্যরা সদা সংকীর্ণতা ভোগ করতঅথচ বাস্তব এমন নয়। সারকথা সচ্ছলতা বা সংকীর্ণতা অবাধ্য বা অনুগত উভয়ের জন্যই সমান

কতক কাফের সচ্ছলতাকে সামনে রেখে তাদের পক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ পেশ করেছেযদি আমাদের উপর আল্লাহর অনুকম্পা না হততাহলে তিনি আমাদেরকে সচ্ছলতা দিয়ে সম্মানিত করতেন না। হে রাসূলের অনুসারীগণআল্লাহর নিকট তোমরা তুচ্ছ বলেই বঞ্চিত। বস্তুত সচ্ছলতা বা অস্বচ্ছলতা শুভ লক্ষণ বা অশুভ কোন লক্ষণ নয়হতভাগা বা সৌভাগ্যবান হওয়ারও কোন আলামত নয়। এ পার্থিব জগতে অনেক সচ্ছল ব্যক্তি বিদ্যমান যারা হতভাগাআবার অনেক অসচ্ছল ব্যক্তি রয়েছে যারা সৌভাগ্যবান। অধিকাংশ লোকই তা জানে না। অভাবঅস্বচ্ছলতাপ্রবৃদ্ধিসচ্ছলতা ইত্যাদি আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীলনেককার বা বদকার বলে কোন বিষয় নেই। সম্মান ও মর্যাদার কারণে যেমন কাউকে সচ্ছলতা প্রদান করা হয় নাআবার হীন ও তুচ্ছতার কারণে কাউকে অভাব দেয়া হয় না। সচ্ছলতা কখনো অবকাশ ও সুযোগ হিসেবে প্রদান করা হয়অস্বচ্ছলতা কখনো মর্যাদা বৃদ্ধি ও পরীক্ষামূলক দেয়া হয়



তাবারি বলেছেন : দাম্ভিক কাফেররা আল্লাহর নবী ও রাসূলদের বলেছে : তোমাদের তুলনায় আমাদের সম্পদ ও সন্তান অধিকআমাদেরকে আখেরাতে আযাব দেয়া হবে নাকারণ আল্লাহ যদি আমাদের বর্তমান ধর্ম ও আমলের উপর সন্তুষ্ট না হতেনতাহলে আমাদেরকে তিনি অধিক সম্পদ ও সন্তান দান করতেন নারিযকের ব্যাপারে স্বচ্ছলতা দিতেন নাতাই আল্লাহ আমাদেরকে যা দিয়েছেনতা এ জন্যই দিয়েছেন যেতিনি আমাদের আমলের উপর সন্তুষ্টআমরা তার প্রিয় পাত্র। আল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেন : হে মুহাম্মদ তাদেরকে বল : নিশ্চয় আমার রব তার বান্দাদের থেকে যার জন্য ইচ্ছা রিযক বৃদ্ধি করেনআর যার উপর ইচ্ছা তিনি সংকীর্ণ করেন। মহব্বতকল্যাণ কিংবা নৈকট্যের কারণে কাউকে তিনি ধন দৌলত প্রদান করেন নাআবার অসন্তুষ্টি ও গোস্বার কারণে তিনি কারো উপর সংকীর্ণতা করেন না। শুধু পরীক্ষার জন্য কাউকে প্রদান করেনকরো থেকে ছিনিয়ে নেন। অধিকাংশ লোক তা জানে না। এটা আল্লাহর একটা পরীক্ষা মাত্রকিন্তু তাদের ধারণাপ্রিয়পাত্র হলে তিনি সচ্ছলতা দেনআবার গোস্বার পাত্র হলে তিনি অভাবে পতিত করেন

আল্লামা শাওকানি বলেছেন : আল্লাহ যাকে অভাব দিতে চানতার উপর তিনি অভাব সৃষ্টি করেন। কখনো আল্লাহ কাফের ও অবাধ্যকে রিযক প্রদান করে অবকাশ দেনআবার কখনো তিনি মুমিন ও আনুগত্যকারীকে অভাবের মাধ্যমে পরীক্ষা করেনযেন তার সাওয়াব বৃদ্ধি পায়। কাউকে স্বচ্ছলতা দেয়ার অর্থ এই নয় যেআল্লাহ তার উপর ও তার আমলের প্রতি সন্তুষ্ট। আবার কাউকে অভাবে রাখার অর্থ এই নয় যেআল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্টকিংবা তার আমল পরিত্যাজ্য। পার্থিব এসব বিষয় দ্বারা আখেরাতকে বুঝা ভুল ও স্পষ্ট বিভ্রান্তি

সহিহ মুসলিমে রয়েছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
" إنَّ اللّهَ لاَ يَنْظُرُ إلى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ ، ولكن يَنْظُرُ إلى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ " انتهى .
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান নাকিন্তু তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে তাকান

অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত যে,  প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সম্পদ দ্বারা খুব কম লোকই সুখী হয়েছেতবে আল্লাহ যাকে হিফাজত সুরক্ষা দিয়েছেন তার কথা ভিন্ন। 

আল্লাহ তাআলা বলেন :

 আর আল্লাহ যদি তার বান্দাদের জন্য রিয্ক প্রশস্ত করে দিতেনতাহলে তারা জমিনে অবশ্যই বিদ্রোহ করত সূরা শুরা : (২৭) 

সহিহ বুখারী ও অন্যান্য কিতাবে আবুযর রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অধিক সম্পদের মালিকরা কিয়ামতের দিন অল্প সম্বলের মালিক হবেতবে যে তার সম্পদ দ্বারা ... করে হাদিস বর্ণনাকারী ইবনে শিহাব সামনেবামে ও ডানে হাত নেড়ে এর অর্থ বর্ণনা করেন। অর্থাৎ অধিক সদকাকারী। কিন্তু এদের সংখ্যা খুব কম। ইবনে মুবারক তার রাকায়েককিতাবে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শয়তান বলেছে : ধনীরা আমার তিনটি প্রতারণার একটিতে অবশ্যই পড়বে : আমি তার সামনে সম্পদ সুসজ্জিত করে রাখবফলে সে তার হক আদায় করবে না। অথবা আমি তার জন্য অপচয় ও অযথা খরচ করার রাস্তা উন্মুক্ত করে দেব। অথবা আমি তার কাছে সম্পদ প্রিয় করে দেবফলে সে তা অবৈধ পথেও উপার্জন করবে

সমাপ্ত

জিয়াদ আবু রাজায়ী
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মো. যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...