Sunday 22 February 2015

স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কি ওযু ভঙ্গ হবে?


স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কি ওযু ভঙ্গ হবে?

প্রশ্নঃ স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কি ওযু ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কখনোই ওযু ভঙ্গ হবে না। একথার দলীল হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত, তিনি স্ত্রীকে চুম্বন করে নামায পড়তে বের হয়েছেন কিন্তু ওযু করেন নি। কেননা আসল হচ্ছে দলীল না থাকলে ওযু ভঙ্গ না হওয়া। কেননা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে তার ওযু প্রমাণিত হয়েছে। আর যা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শরঈ দলীল ছাড়া নষ্ট হবে না।
যদি বলা হয়, আল্লাহ্ তো বলেছেন, 
أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ 
“অথবা যদি তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর।”
উত্তরে বলা হবেঃ আয়াতে স্ত্রীদের স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। যেমনটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আয়াতের মধ্যে তাহারাত বা পবিত্রতাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ প্রকৃতরূপ ও বদলীরূপ এবং পবিত্রতাকেও দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ ছোট পবিত্রতা ও বড় পবিত্রতা। অনুরূপভাবে ছোট পবিত্রতার কারণ ও বড় পবিত্রতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) 
এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত ছোট পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। 
তারপর আল্লাহ্ বলেন, 
وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا 
“তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” 
এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত বড় পবিত্রতা অর্জনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। 
তারপর আল্লাহ্ আবার বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا
“তোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে অথবা তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা তায়াম্মুম কর।” 
এখানে (তায়াম্মুম কর) কথাটি পানি দ্বারা প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন করার বদলীরূপ (পরিবর্তীত পদ্ধতি) আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ‘তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে’ একথা দ্বারা অপবিত্রতার ছোট একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা অপবিত্রতার বড় একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এখন যদি ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা সাধারণভাবে হাত দ্বারা স্পর্শ করার অর্থ করা হয়, তবে তো আল্লাহ্ এই আয়াতে অপবিত্রতার দু’টিই ছোট কারণ উল্লেখ করলেন এবং বড় কারণ উল্লেখ করা ছেড়ে দিলেন। অথচ তিনি এর আগে বলেছেন, “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” এটা কুরআনের বালাগাতের বা উচ্চাঙ্গ সাহিত্যের পরিপন্থী। তাই আয়াতে ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা। তাহলেই তো আয়াতে দু’টি তাহারাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। বড় কারণ এবং ছোট কারণ। ছোট পবিত্রতা হচ্ছে, শরীরের চারটি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। আর বড় পবিত্রতা সমস্ত শরীরের সাথে সম্পর্কিত। আর বদলী পবিত্রতা তায়াম্মুম শুধুমাত্র দু’টি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত চাই তা বড় পবিত্রতার ক্ষেত্রে হোক বা ছোট পবিত্রতার ক্ষেত্রে।

এই ভিত্তিতে আমরা বলব, স্ত্রীকে স্পর্শ করা কখনই ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই স্পর্শ উত্তেজনার সাথে হোক বা উত্তেজনার সাথে না হোক। তবে স্পর্শ করার কারণে যদি কোন কিছু নির্গত হয় তবে তার বিধান ভিন্ন। যদি বীর্য বের হয়, তবে গোসল করা ফরয আর মযী নির্গত হলে অন্ডোকোষসহ লিঙ্গ ধৌত করে ওযু করা আবশ্যক।

তাছাড়া বিষয়টির সমাধান নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্ম থেকে ছহীহ্ হাদীছে পাওয়া যায়ঃ
عن عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُقَبِّلُ بَعْضَ أَزْوَاجِهِ ثُمَّ يُصَلِّي وَلَا يَتَوَضَّأُ  
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো তাঁর কোন স্ত্রীকে চুম্বন করতেন অতঃপর নামায পড়তেন কিন্তু ওযু করতেন না।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ্, আহমাদ)


মুফতী: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদক: শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...