Tuesday 24 February 2015

তাওহীদ ও ঈমান (১ম পর্ব)



তাওহীদ ও ঈমান (১ম পর্ব)

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿২১﴾ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿২২﴾ (سورة البقرة : ২১-২২)
হে মানব সকল! তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদত কর যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন, এতে তোমরা আল্লাহ ভীরু ও মুত্তাকী হতে পারবে। যিনি তোমাদের জন্যে ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্যে ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব তোমরা জেনে- শুনে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও সমকক্ষ করোনা। (সূরা বাকারা : ২১-২২)

১- তাওহীদ:

তাওহীদ হচ্ছে বান্দাকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যে আল্লাহ তাআলা এক ও অদ্বিতীয়। রুবুবিয়্যাত (প্রভুত্ব), উলুহিয়্যাত (উপাস্যত্ব) এবং আসমা ও সিফাত (নির্ধারিত সত্ত্বাবাচক ও গুনবাচক নাম)-এর ক্ষেত্রে তাঁর কোন শরীক ও সমকক্ষ নেই।
বিশ্লেষণ :
অর্থ্যাৎ বান্দাকে সুনিশ্চিতভাবে জানা ও স্বীকার করা, যে আল্লাহ তাআলা এককভাবে সকল বস্তুর মালিক ও প্রতিপালক। সকল কিছুর তিনিই সৃষ্টিকর্তা, সমগ্র বিশ্বকে তিনিই এককভাবে পরিচালনা করছেন, (তাই) একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত- উপসনার উপযুক্ত, এতে তাঁর কোন শরীক ও অংশীদার নেই। তিনি ভিন্ন সকল উপাস্য বাতিল ও অসত্য। তিনি সর্বোতভাবে যাবতীয় পরিপূর্ণ গুণাবলী ও বৈশিষ্টে বৈশিষ্টমন্ডিত। সকল প্রকার দোষ ও অপূর্ণাঙ্গতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
সকল সুন্দর নাম ও উচ্চ গুণাবলি তাঁর জন্যেই নির্দিষ্ট।

২- তাওহীদের প্রকারভেদ

সকল নবী-রাসূল মানুষদের যে তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দিয়েছেন এবং যে তাওহীদ বিষয়ে সকল ঐশী গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে সেটি দু'ভাগে বিভক্ত।
প্রথম : আল্লাহকে জানা ও মানার ক্ষেত্রে তাঁর একত্ববাদ। এটাকে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ ওয়াস সিফাত বলা যায়। অর্থ্যাৎ প্রভূত্ব, নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্ববাদ।
এ একত্ববাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকে প্রমাণ করা হয় এবং তাঁর নাম, সিফাত এবং কর্মাবলীর ক্ষেত্রে তাঁকে এক ও অদ্বিতীয় বলে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলে এভাবে বলা যায়। বান্দা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে এবং স্বীকৃতি দেবে যে এককভাবে আল্লাহ তা'আলাই এ নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা, মালিক এবং পালনকর্তা। তিনিই একে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি স্বীয় সত্ত্বা, নাম, গুণাবলি ও কর্মের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ। তিনি সর্বজ্ঞ, সবকিছু পরিবেষ্টন ও নিয়ন্ত্রণকারী। রাজত্ব তাঁরই হাতে। সকল কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। তাঁর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম ও সুমহান গুণাবলি। 
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
'কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।'[১]
দ্বিতীয় : কর্ম ও উপাসনা-প্রার্থনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ
একে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ ওয়াল ইবাদাহ বলা হয়। অর্থাৎ যাবতীয় ইবাদত-উপাসনা যেমন: দো'আ, সালাত, ভয়, আশা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলাকে এক বলে বিশ্বাস করা, মেনে নেয়া এবং সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিরংকুশ করা।
একটু বিশ্লেষণে গিয়ে আমরা এভাবে বলতে পারি, বান্দাকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস ও স্বীকার করা যে, একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই এককভাবে সমস্ত সৃষ্টির ইবাদত-উপাসনার অধিকার সংরক্ষণ করেন। সকল মাখলূকের উপাস্য হওয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই। তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত, তিনি ভিন্ন অন্য কেউ এ অধিকার রাখে না বরং কেউ উপযুক্তও নয়। সুতরাং দো'আ, সালাত, সাহায্য প্রার্থনা, তাওয়াক্কুল, ভয়, আশা, যবেহ ও মান্নতসহ যাবতীয় ইবাদতের যে কোন একটি ইবাদতও আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে সম্পাদন ও নিবেদন করা যাবে না। যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি মাত্র ইবাদতও সম্পাদন-নিবেদন করবে শরীয়তের দৃষ্টিতে সে কাফের ও মুশরকি বলে বিবেচিত হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন:
وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ
'আর যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার কোন সনদ নেই। তার হিসাব তার পালনকর্তার নিকট। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।'[২]
এই তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ কে-ই অধিকাংশ মানুষ অস্বীকার করেছে। আর তাই আল্লাহ তা'আলা অসংখ্য নবী-রাসূল মানুষদের নিকট প্রেরণ করেছেন। তাঁরা এসে তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত এবং তিনি ভিন্ন অন্যদের উপাসনা-বন্দনা পরিত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
(১) এরশাদ হচ্ছে:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
'আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই পাঠিয়েছি তাঁকে এ প্রত্যাদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং একমাত্র আমারই ইবাদত কর।'[৩]
(২) আরো এরশাদ হচ্ছে:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
'আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক।'[৪]

তাওহীদের সার-নির্যাস:

পৃথিবীতে সঙ্ঘটিত ও সঙ্ঘটিতব্য সকল ঘটনা-অনুঘটনা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকেই এবং তাঁর ইশারাতেই হয়ে থাকে। এখানে অন্য কোন মাধ্যম ও কার্যকারণের ন্যূনতম ভূমিকা নেই। প্রত্যেক মানুষ সকল বিষয়কে উপরোক্ত বিশ্বাসের আলোকে বিচার করবে। এটিই হচ্ছে মূলত তাওহীদের সার কথা। সুতরাং ভাল-মন্দ, উপকার-ক্ষতি সবকিছু এক আল্লাহর পক্ষ থেকেই। এখানে অন্য কিছুর কোন দখল নেই। আর তাই একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, যে ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর একত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করবে। তাঁর সাথে অন্য কারো ইবাদত-উপাসনা করবে না।


তাওহীদের ফলাফল

সর্বক্ষেত্রে এক আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা, মাখলূকের বিরুদ্ধে অভিযোগ-অনুযোগ, তাদেরকে তিরস্কার-ভর্ৎসনা পরিহার করা। আল্লাহ তা'আলাকে ভালবাসা, তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত ও নির্দেশাবলী প্রসন্নচিত্তে মেনে নেয়া।
 মানুষ তার সহজাত প্রকৃতি এবং এ নিখিল বিশ্বের প্রতি চিন্তা-গবেষণা, এর সাভাবিক কর্মকান্ড সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হওয়া ইত্যাদির প্রতি সজাগ দৃষ্টিপাত ও পর্যবেক্ষনের কারণে অতি সহজেই তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ কে স্বীকার করে নেয়। তবে শুধু মাত্র এটুকুন স্বীকারোক্তিই ঈমান বিল্লাহ তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং আযাব থেকে মুক্তির জন্যে যথেষ্ট নয়। এ স্বীকারোক্তিতো ইবলিসও দিয়েছিল। তাবত মুশরিকরাও আল্লাহকে রব বলে স্বীকার করে। তাসত্ত্বেও এ স্বীকৃতি তাদের কোন উপকারে আসেনি। কারণ তারা তাওহীদুল ইবাদাহ বা আল্লাহকে একমাত্র মা'বূদ বলে স্বীকার করেনি। সুতরাং যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর স্বীকৃতি দেবে সে মুসলিম ও একত্ববাদী বলে স্বীকৃতি পাবে না এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ বলে স্বীকার করা পর্যন্ত তার জীবন ও সম্পদ নিরাপদ বলে বিবেচিত হবে না। তাকে অবশ্যই সাক্ষ্য দিতে হবে যে আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক-সমকক্ষ নেই, তিনিই সকল ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত। সাথে সাথে সকল এবাদতে নিজেকে যুক্ত করতে হবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা চলবে না।

তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ ও তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ ওতপ্রোতভাবে জড়িত, একটি ছাড়া অপরটিকে গ্রহণযোগ্য নয়।
(১) তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ-কে আবশ্যক করে অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাকে রব বলে মেনে নিলে ইলাহ (উপাস্য) বলেও মানতে হবে। সুতরাং যিনি একথা স্বীকার করবেন যে আল্লাহ তা'আলাই একমাত্র প্রতিপালক, সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও রিযিক দাতা। তাকে অবশ্যই এ কথাও মানতে হবে যে তাহলে আল্লাহ তা'আলাই এককভাবে ইবাদতের উপযুক্ত। অতএব, বিপদাপদে একমাত্র তাঁকেই ডাকতে হবে। তাঁর নিকটই প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর কাছেই ফরিয়াদ করতে হবে। তাঁর উপরই ভরসা করতে হবে। কোন একটি ইবাদতও তাঁকে ভিন্ন অন্য কারো দিকে ফিরানো যাবে না, অন্য কারো নিমিত্তে সম্পাদন করা যাবে না। অনুরূপভাবে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ, তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহকে আবশ্যক করে সুতরাং যিনি একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত উপসনা করেন তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেন না তাঁর ব্যাপারে অবশ্যই বলা যায় যে তিনি আল্লাহ তা'আলাকে প্রতিপালক, স্রষ্টা ও মালিক বলেও বিশ্বাস করেন।
(২) রুবুবিয়্যাহ ও উলূহিয়্যাহ যখন একত্রে উল্লেখিত হবে তখন উভয়ের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন হবে। রবের (الرب) অর্থ হবে মালিক, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী আর ইলাহ্‌ এর অর্থ হবে সত্যিকারের উপাস্য যিনি এককভাবে সকল ইবাদতের উপযুক্ত।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন-
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ ﴿১﴾ مَلِكِ النَّاسِ ﴿২﴾ إِلَهِ النَّاسِ ﴿৩﴾
'বলুন আমি আশ্রয় চাই মানুষের প্রতিপালকের নিকট, মানুষের মালিকের নিকট, মানুষের ইলাহ ও উপাস্যের নিকট।'[৫]
আবার কখনো কখনো শুধুমাত্র একটিকে উল্লেখ করে উভয় অর্থ বুঝানো হয়। অর্থাৎ রব বলে ইলাহ ও রব, আবার ইলাহ বলে রব ও ইলাহ। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী-
قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ (الأنعام:১৬৪)
'আপনি বলুন, আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য ইলাহ খোঁজব, অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক।'[৬]

 তাওহীদের ফযীলত

(১) আল্লাহ তা'আলা বলেন:
الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ ﴿৮২﴾
'যারা ঈমান এনেছে এবং স্বীয় ঈমান ও বিশ্বাসকে যুলুমের (শিরক) সাথে মিশ্রিত করেনি তাদের জন্যেই রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা এবং তাঁরই হিদায়াত প্রাপ্ত।'[৭]
(২)
وعن عبادة بن الصامت رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : من شهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له, و أن محمدا عبده و رسوله, و أن عيسى عبد الله ورسوله وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه والجنة حق والنار حق, أدخله الله الجنة على ما كان من العمل. (متفق عليه)
'সাহাবী উবাদা বিন সামেত রাদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসূল। ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, তাঁর কালেমা যা তিনি মারইয়াম কে প্রদান করেছেন এবং প্রদান করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। এবং আরো সাক্ষ্য দেবে জান্নাত সত্য এবং জাহান্নাম সত্য, আল্লাহ তা'আলা তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাঁর আমল যা-ই থাকুক।'[৮]

তাওহীদ পন্থীদের পুরস্কার

(১) আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন:
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِزْقًا قَالُوا هَذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
'হে নবী! যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, আপনি তাদের এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসাবে কোন ফলপ্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুত: তাদেরকে একই সাদৃশ্যপূর্ণ ফল প্রদান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্যে শুদ্ধচারিনী (পূতপবিত্র) রমণীকূল থাকবে। তারা সেখানে অনন্তকাল অবস্থান করবে।'[৯]
(২)
وعن جابر رضي الله عنه قال: أتى النبي صلى الله عليه وسلم رجل فقال : يا رسول الله ما الموجبتان ؟ فقال : من مات لا يشرك بالله شيئا دخل الجنة, ومن مات يشرك بالله شيئا دخل النار . متفق عليه
'সাহাবী জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে জানতে চাইলো ইয়া রাসূলাল্লাহ! অবধারিতকারী বিষয় দুটো কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন: যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যাবে যে, আল্লাহর সাথে কোন (কিছুকে) শরীক করেনি, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।'[১০]

 কালেমায়ে তাওহীদের মহত্ব ও মর্যাদা

عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إن نبي الله نوحا عليه السلام لما حضرته الوفاة قال لابنه : إني قاصّ عليك الوصية : آمرك باثنتين و أنهاك عن اثنتين, آمرك بـ( لا إله إلا الله ) فإن السماوات السبع و الأرضين السبع لو وضعت في كفة ووضعت لا إله إلا الله في كفة, رجحت بهن لا إله إلا الله, ولو أن السماوات السبع, والأرضين السبع, كن حلقة مبهمة قصمتهن لا إله إلا الله, وسبحان الله وبحمده, فإنها صلاة كل شيء, وبها يرزق الخلق, وأنهاك عن الشرك والكبر... أخرجه أحمد والبخاري في الأدب المفرد.
'সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: আল্লাহর নবী নূহ আলাইহিস সালাম মৃত্যুমুখে পতিত হলে স্বীয় ছেলেকে অসিয়ত করে বললেন: আমি তোমাকে দু'টো বিষয়ে আদেশ করছি এবং অন্য দু''টো সম্পর্কে নিষেধ করছি। আদেশ করছি- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ((لا إله إلا الله সম্পর্কে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাকে একমাত্র ইলাহ বলে মেনে নেবে। কারণ সাতটি আকাশ এবং সাতটি যমীনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অন্য পাল্লায়, তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ঐ সকল আকাশ যমীনকে নিয়ে ঝুলে পড়বে। আর সাত আকাশ ও সাত যমীন যদি পরস্পর শৃংখলাবদ্ধ থাকত। তাহলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাদের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিত।
আর সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুল্লিাহ বেশী বেশী করে বলবে। কারণ এটি সকল বস্তুর সালাত ও তাসবীহ, এর মাধ্যমেই সৃষ্টিজীবকে রিযিক দেয়া হয়। আর নিষেধ করছি শিরক ও অহংকার থেকে...।'[১১]

তাওহীদের পূর্ণতা

বান্দার তাওহীদ ও একত্ববাদ তখনই পূর্ণতা লাভ করবে যখন সে কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং সকল প্রকার তাগুতকে এড়িয়ে চলবে।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
'আমি সকল উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক, তাদের এড়িয়ে চল।'[১২]

 তাগুতের পরিচয়
তাগুত বলা হয় ঐ ব্যক্তি বা বস্তুকে যার ব্যাপারে বান্দা সীমা লঙ্ঘন করে। সেটি বাতিল মা'বূদও হতে পারে যেমন মূর্তি-প্রতিমা আবার অনুসৃত নেতাও হতে পারে যেমন গণক-পুরোহিত, পাদ্রী, ধর্ম যাজক, উলামায়ে সূ কিংবা মান্যতা ও আনুগত্য গ্রহণকারীও হতে পারে যেমন, আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগকারী আমীর উমারা ও কর্তৃত্বশীল নেতা-কর্তাবৃন্দ ইত্যাদি।

 প্রধান প্রধান তাগুত।
তাগুতের সংখ্যা অনেক, এদের মাঝে প্রধান হচ্ছে পাঁচটি।
(ক) ইবলিস। আল্লাহ তার অনিষ্ট থেকে আমাদের পানাহ দান করুন।
(খ) যার ইবাদত করা হয় এবং সে এতে সন্তুষ্ট।
(গ) যে ব্যক্তি লোকদের নিজের ইবাদতের প্রতি আহ্বান করে।
(ঘ) যে ব্যক্তি ইলমে গায়েব জানে বলে দাবী করে।
(ঙ) যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা নাযিলকৃত বিধান বাদ দিয়ে ভিন্ন আইনে বিচার-শাসন পরিচালনা করে।

মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন :
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آَمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿২৫৭﴾
'যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী। চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।'[১৩]

৩। ইবাদত

 ইবাদতের অর্থ ও তাৎপর্য:
ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত ও যোগ্য দাবিদার হচ্ছেন মহান আল্লাহ তা'আলা। ইবাদতের ভেতর দু'টি দিক আছে, সেই বিষয়দ্বয়ের উপর ইবাদত প্রয়োগ হয়।
(এক) দাসত্ব : অর্থাৎ পূর্ণ ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশাবলী পালন ও নিষেধাবলী বর্জন করার মাধ্যমে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করা ও তাঁর অনুগত হয়ে থাকা।
(দুই) যার মাধ্যমে ইবাদত করা হয় : আর এটি অনেক ব্যাপক, সংক্ষেপে বলা যায়, প্রত্যেক কথা ও কাজ যা আল্লাহ তা'আলা পছন্দ ও অনুমোদন করেন। সেটি যাহেরী (দৃশ্যমান) হতে পারে কিংবা বাতেনী (অদৃশ্যমান)। যেমন দু'আ, যিকির, সালাত, মুহাব্বত ইত্যাদি।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- সালাত একটি ইবাদত, এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দাসত্বের বহিঃপ্রকাশ। অতএব আমরা সালাতের মাধ্যমে পূর্ণ ভক্তি-শ্রদ্ধা, মুহাব্বত-ভালবাসার সাথে হীন ও নত হয়ে এক আল্লাহর ইবাদত করি। আর শুধুমাত্র অনুমোদিত ইবাদতই সম্পাদন করি।

 মানব ও জিন সৃষ্টির তাৎপর্য :
মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা'আলা জিন ও মানুষ অহেতুক সৃষ্টি করেননি। এজন্যে সৃষ্টি করেননি যে, তারা শুধুমাত্র খাবে, পান করবে, ক্রীড়া-কৌতুক ও খেলাধুলায় মত্ত থাকবে। বরং এক মহৎ ও মহান উদ্দেশ্যে সৃজন করেছেন। আর তা হচ্ছে তারা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁকে এক বলে জানবে, তাঁর সম্মান প্রদর্শন করবে, তাঁর বড়ত্ব প্রকাশ করবে, এক কথায় তাঁর আনুগত্য করবে। আর এসব উদ্দেশ্য সমুন্নত রাখতে গিয়ে তারা তাঁর সকল নির্দেশাবলী বাস্তবায়ন করবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায়। সকল নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকবে সর্বোচ্চ সতর্কতায়। তাঁর নির্ধারিত সীমাতে অবস্থান করবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় এবং তিনি ভিন্ন সকল কিছুর ইবাদত পরিহার করবে সর্বোচ্চ ঘৃণায়। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
'আমি মানব ও জিন সৃজন করেছি শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করার জন্যে।'[১৪]

ইবাদত ও দাসত্ব প্রকাশের পদ্ধতি:
মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও দাসত্ব ভিত্তিশীল হচ্ছে দুটি মূলনীতির উপর।
 আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও পরিপূর্ণ ভক্তি-শ্রদ্ধা।
 নিজেকে একেবারে তুচ্ছ ও হীন জ্ঞান করে তাঁর পূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করা।
আর এ মূলনীতিদুটো নির্ভর করে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির উপর।
 আল্লাহ তা'আলার অপরিসীম ইহসান-অনুগ্রহ, দয়া ও রহমত, ফযল ও করম -যেগুলো সে প্রতিনিয়ত গ্রহণ করে চলেছে- সবসময় হৃদয়পটে উপস্থিত রাখা এবং চিন্তার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করা। যা আল্লাহকে ভালবাসতে বাধ্য করবে, হৃদয়ে-মনে তাঁর মুহব্বত ও আজমত সৃষ্টি করবে।
 নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতি, অযোগ্যতা, অপূর্ণতা এবং কর্ম ও আমলের প্রতি দৃষ্টি দেয়া, নিজের অক্ষমতা, অসহায়ত্ব ও দীনতা সম্পর্কে চিন্তা করা। এগুলো আল্লাহর বশ্যতা স্বীকারের মানসিকতা সৃষ্টি করবে এবং তাঁকে মান্য করার প্রেরণা যোগাবে।
বান্দা তার রব পর্যন্ত পৌঁছার সবচে নিকটতম ও সহজ রাস্তা হচ্ছে তাঁর প্রতি সব সময় মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা, পাশাপাশি নিজেকে অসহায় ও দীন-হীন জ্ঞান করা। নিজের অবস্থা-অবস্থান, যোগ্যতা ও ক্ষমতা ইত্যাদির প্রতি দৃষ্টি না দেয়া, এসব গুণাবলী তার মধ্যে আছে বলেও চিন্তা না করা বরং নিজের সকল জরুরত-হাজত সবকিছুই আল্লাহর নিকট উপস্থাপন করা। সাথে সাথে এ বিশ্বাস অটুট রাখা যে আল্লাহ যদি তাকে ত্যাগ করেন তাহলে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বরং একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ ﴿৫৩﴾ ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنْكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْكُمْ بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ ﴿৫৪﴾ لِيَكْفُرُوا بِمَا آَتَيْنَاهُمْ فَتَمَتَّعُوا فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ ﴿৫৫﴾ (النحل/৫৩-৫৫)
'তোমাদের কাছে যে সমস্ত নিয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখ-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর-ব্যাকুল ভাবে, তাকেই আহ্বান কর। এরপর যখন আল্লাহ তোমাদের বিপদ-কষ্ট দূরীভূত করে দেন, তখনই তোমাদের একদল স্বীয় পালনকর্তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করতে থাকে। যাতে অস্বীকার করে ঐ নিয়ামত, যা আমি তাদের দিয়েছি। অতএব মজা ভোগ করে নাও-সত্বরই তোমরা জানতে পারবে।'[১৫]
 ইবাদত করার দিক থেকে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মানুষ।
ইবাদত ও দাসত্বের দিক থেকে মানুষদের মধ্যে সবচে পরিপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতম হচ্ছেন নবী ও রাসূলগণ। কারণ, মানুষদের মধ্যে তাঁরাই আল্লাহকে পরিপূর্ণ রূপে চিনেছেন ও তাঁর সম্পর্কে সবচে বেশী জেনেছেন। অন্যদের তুলনায় তাঁদের হৃদয়েই আল্লাহর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা বেশী।
তাছাড়া আল্লাহ তাঁদেরকে মানুষদের নিকট রাসূল বানিয়ে প্রেরণ করার মাধ্যমে তাঁদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সুতরাং তাঁরা দু'দিক থেকে মর্যাদাবান। রিসালাতের মর্যাদা এবং নির্ভেজাল দাসত্বের মর্যাদা।
শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে নবীদের পরবর্তী স্থনেই আছেন সিদ্দীকবৃন্দ। আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি যাদের বিশ্বাস ও স্বীকৃতি পূর্ণতা পেয়েছে এবং যারা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সদা অবিচল থেকেছেন। অতঃপর শহীদগণ এরপর সৎকর্মশীল সাধারণ মুসলমানবৃন্দ।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا {النساء/৬৯}
'আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাঁদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।'[১৬]

 বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার :
আকাশ ও যমীনে বসবাসকারী সকলের উপর আল্লাহর হক ও অধিকার হচ্ছে, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং (কোন কিছুকে) তাঁর সাথে শরীক করবে না। তাঁর আনুগত্য করবে নাফরমানী করবে না। তাঁকে স্মরণ করবে-ডাকবে, ভুলে থাকবে না। তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে, কুফরী করবে না। এবং যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যের বিপরীত তার থেকে কোন কিছু প্রকাশ পাবে না। অজ্ঞতার কারণেই হোক বা অপারগতার কারণে, বাড়াবাড়ির আঙ্গিকেই হোক বা অলসতার আঙ্গিকে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা যদি আকাশ ও পৃথিবীবাসীকে শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে সে অধিকার তাঁর রয়েছে, শাস্তি দিলে সেটিও অন্যায্য হবে না। আর যদি দয়া করেন তাহলে সেটি হবে তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশী।
عن معاذ بن جبل رضي الله عنه قال : كنت ردف النبي صلى الله عليه وسلم على حمار يقال له نفير قال: فقال : (( يا معاذ تدري ما حق الله على العباد, وما حق العباد على الله؟ قال: قلت:الله و رسوله أعلم . قال: فإن حق الله على العباد أن يعبدوا الله و لا يشركوا به شيئا و حق العباد على الله عز و جل أن لا يعذب من لا يشرك به شيئا )) قال: قلت يا رسول الله, أفلا أبشر الناس ؟ قال:(( لا تبشرهم فيتكلوا . متفق عليه.
সাহাবী মু'আয বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, আমি 'নুফাইর' নামক গাধার উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর পিছনে বসা ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন: মু'আয তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে? এবং বান্দারই বা আল্লাহর কাছে কি অধিকার (পাওনা) রয়েছে? আমি বললাম: এ বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বান্দার উপর আল্লাহর হক (অধিকার) হচ্ছে। তারা তাঁর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর নিকট বান্দার অধিকার হচ্ছে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শরীক করবে না তিনি তাকে শাস্তি দেবেন না। শুনে আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি কি এ সুসংবাদ লোকদের শোনাব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, শোনাবে না। তাহলে তারা এর উপর ভরসা করে আমল ছেড়ে দেবে।[১৭]

 ইবাদত ও দাসত্বের উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণতা
১- মানুষ বলতেই তিন অবস্থার যে কোন একটিতে অবস্থান করে।
*আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত নেয়ামতসমূহ যেমন সচ্ছলতা, সুস্থতা, নিরাপত্তার মধ্যে। তখন তার দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
*পাপ অন্যায় ও অপরাধ মূলক কাজে লিপ্ত অবস্থায় থাকা। তখন তার কর্তব্য হচ্ছে উক্ত পাপ পরিহার করে কৃত অপরাধের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
* বিপদ ও মুসীবতের মধ্যে থাকা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করতে চান। এ অবস্থায় তার করণীয় হচ্ছে সবর ও ধৈর্য ধারণ করা। যে ব্যক্তি উক্ত তিন অবস্থায় বর্ণিত তিন করণীয় সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবে সে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতেই সুখী হবে।
২- মহান আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদের উবূদিয়্যত তথা দাসত্ব ও ধৈর্য্য পরায়ণতা যাচাই করার উদ্দেশ্যে মাঝে মধ্যে বিপদ-মুসীবতে নিপতিত করেন। এর মাধ্যমে তাঁর উদ্দেশ্য মূলত তাদের ধৈর্য ও দাসত্বের অবস্থা পরীক্ষা করা। তাদের শাস্তি দেয়া কিংবা ধ্বংস করা তাঁর লক্ষ্য নয়।
সুতরাং প্রতিটি বান্দার উপর আল্লাহ তা'আলার অধিকার রয়েছে যে, তারা তাঁর দাসত্ব বরণ করে তাঁর আনুগত্য করবে দুঃসময়ে, যেমনি দাসত্ব করে থাকে সুসময়ে। আনুগত্য করবে নিজেদের অপছন্দনীয় ক্ষেত্রে, যেভাবে করে থাকে পছন্দনীয় বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে। অধিকাংশ মানুষ সহজ ও নিজ পছন্দনীয় বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে উবূদিয়্যতের হক আদায় করে থাকে ঠিকই। তবে অধিক কৃতিত্বপূর্ণ ও মর্যাদাকর হচ্ছে কষ্টকর ও অপছন্দনীয় ক্ষেত্রে উবূদিয়্যতের হক আদায় করা। বান্দাদের অবস্থান এক্ষেত্রে বিভিন্ন ও তারতম্যপূর্ণ।
সুতরাং প্রচণ্ড উষ্ণতার সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করা উবূদিয়্যত। সুন্দরী নারী বিবাহ করা উবূদিয়্যত। অনুরূপভাবে প্রচন্ড শীতে ঠান্ডা পানি দিয়ে অযু করাও উবূদিয়্যত। তীব্র মানসিক চাহিদা সত্ত্বেও মানুষের ভয়ে নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পাপের কাজ বর্জন করা উবূদিয়্যত। ক্ষুধার কষ্ট স্বীকার করে ধৈর্য ধারণ করাও উবূদিয়্যত। তবে এ দু'ধরনের উবূদিয়্যতের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
যে ব্যক্তি সুসময় ও দুঃসময়, পছন্দনীয় ও কষ্টকর উভয় ক্ষেত্রে উবূদিয়্যতের হক আদায় করবে সে আল্লাহ তা'আলার সেসকল পূণ্যবান বান্দার অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে
لا خوف عليهم ولا هم يحزنون
অর্থাৎ যাদের কোন ভয় নেই এবং যারা বিচলিত হবে না। তার শত্রু কখনই তার উপর বিজয়ী হতে পারবে না,আল্লাহ তাকে হিফাজত করবেন। তবে হ্যাঁ, শয়তান কালে-ভদ্রে তার উপর অতর্কিত হামলা চালাতে পারে। কারণ বান্দা মাঝে মধ্যে গাফলত ও অসর্তকতা, প্রবৃত্তির তাড়না ও ক্রোধের পরীক্ষায় পতিত হয় আর শয়তান মূলতঃ এ তিন দরজা দিয়েই মানুষের ভিতর প্রবেশ করে। আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক বান্দার উপর তার নফস, প্রবৃত্তি ও শয়তানকে ক্ষমতা দিয়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করেন যে তারা কি এদের আনুগত্য করে? না স্বীয় পালন কর্তার?
মানুষের উপর আল্লাহ তা'আলার অনেক নির্দেশ রয়েছে, পাশাপাশি নিজ নফসেরও কিছু চাহিদা রয়েছে। আল্লাহ মানুষদের থেকে ঈমান ও নেক আমল চান, আর কুপ্রবৃত্তি তাদের নিকট সম্পদ ও খাহেশাতের সম্পাদন চায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের নিকট পরকালের সুখ-সমৃদ্ধির জন্যে আমল কামনা করেন, আর নফস কামনা করে দুনিয়ার প্রাচুর্য ও ধন-সম্পদ। আল্লাহ চান বান্দা পরকালীন জীবনে সুখ-শান্তি লাভের জন্য বেশী বেশী আমল করুক, আর নফসের চাহিদা হচ্ছে দুনিয়ার সমৃদ্ধি ও সুখের জন্যে পরিশ্রম করুক। আর ঈমান হচ্ছে মুক্তির পথ ও আলোকবর্তিকা, যার মাধ্যমে সত্য-কে মিথ্যা থেকে পৃথক করা যায়। আর এটিই হচ্ছে পরীক্ষার স্থান।
১। আল্লাহ তা'আলা বলেন :
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آَمَنَّا وَهُمْ لا يُفْتَنُونَ ﴿২﴾ وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ ﴿৩﴾
'মানুষ কি মনে করে যে, তারা এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদের পরীক্ষা করা হবে না ? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্য বলেছে এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।'[১৮]
২। আল্লাহ আরোও বলেন-
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَحِيمٌ
'আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন মন্দকর্ম প্রবন, কিন্তু সে নয়, আমার পালন কর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু।'[১৯]
৩। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলছেন:
فَإِنْ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَكَ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَاءَهُمْ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنَ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
'অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়াতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায় কে (সঠিক) পথ দেখান না।'[২০]

৪-শিরক

শিরক বলা হয়: আল্লাহ তা'আলার প্রভুত্ব বা তাঁর উপাসনা-বন্দনা অথবা তাঁর নাম ও গুণাবলির এর ক্ষেত্রে শরীক (সমকক্ষ-অংশীদার) নির্ধারণ করা।
সুতরাং কোন মানুষ যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তা'আলার সাথে আরো সৃষ্টিকর্তা আছে অথবা তাঁর কোন সাহায্যকারী আছে তাহলে সে মুশরিক বলে বিবেচিত হবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কাউকে ইবাদতের উপযুক্ত বলে বিশ্বাস করবে সেও মুশরিক বলে গণ্য হবে। আবার কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর নির্ধারিত নাম ও গুণাবলির কোন সমকক্ষ আছে। তাহলে শরীয়ত তাকেও মুশরিক বলে ধরা হবে।

শিরকের ভয়াবহতা :
১। আল্লাহর সাথে শিরক করা বড় ধরনের অন্যায়। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ হক্ব-তাওহীদের উপর আঘাত হানা হয়। তাওহীদ হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইনসাফ আর শিরক সর্বোচ্চ পর্যায়ের অন্যায়, সবচে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট বস্তু। কারণ: এর মাধ্যমে বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহ তা'আলাকে খাটো করা হয়, তাঁর আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার থেকে অহংকার বশত বিরত থাকা হয়, একমাত্র তাঁর অধিকারকে অন্যের দিকে ফিরানো হয় এবং অন্যকে তাঁর সমপর্যায়ের জ্ঞান করা হয়।
শিরকের ভয়াবহতা কত মারাত্মক ? আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরাআনে মুশরিকদের ক্ষমা করবেন না মর্মে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ বলেন-
إن الله لا يغفر أن يشرك به و يغفر ما دون ذلك لمن يشاء
'নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না, এর চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।'[২১]
২। শিরক তথা আল্লাহ তা'আলার অংশীদার স্থির করা সবচে বড় গুনাহ। যে ব্যক্তি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কিছুর ইবাদত করল সে ইবাদতকে নিজস্ব স্থান থেকে সরিয়ে অনুপোযুক্তস্থানে নিবেদন করল এবং অযোগ্য সত্তার নিমিত্তে সম্পাদন করল। এটি বড় জুলুম এবং মারাত্মক অন্যায়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন :
إن الشرك لظلم عظيم
'নিশ্চয় শিরক মহা অন্যায়।'[২২]
৩। শিরকে আকবর সকল নেক আমলকে বরবাদ ও নিষ্ফল করে দেয়। ধ্বংস ও ক্ষতিকে অনিবার্য করে তুলে। এবং শিরক হল সবচে বড় মারাত্নক পাপগুলোর প্রধান।
আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন:
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
'আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার আমল নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবেন।'[২৩]
হাদীসে এসেছে -
وعن أبي بكرة رضي الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم :(( ألا أنبئكم بأكبرالكبائر؟ ))ثلاثا, قالوا : بلى يا رسول الله, قال: (( الإشراك بالله, وعقوق الوالدين )), و جلس و كان متكئا ((ألا و قول الزور)) قال: فما زال يكررها حتى قلنا: ليته سكت. (متفق عليه)
সাহাবী আবু বাকরাহ রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন- নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন : আমি কি তোমাদের আকবারুল কাবায়ের (সবচে বড় গুনাহ) সম্পর্কে বলব না? এ কথাটি তিনি পর পর তিনবার বললেন, সাহাবারা আরয করলেন, হ্যাঁ- ইয়া রাসূলাল্লাহ। তখন নবীজী বললেন: আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দেয়া ছিলেন এরপর সোজা হয়ে বসে বললেন: ভাল করে শোন! এবং মিথ্যা বলা, বর্ণনাকারী বলছেন: এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার বলে যাচ্ছিলেন একপর্যায়ে আমরা (মনে মনে ) বললাম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি নীরব হয়ে যেতেন।[২৪]

 শিরকের নিকৃষ্ট পরিণাম
মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনের চার আয়াতে শিরকের চারটি নিকৃষ্ট পরিণাম ও জঘন্য দিক বর্ণনা করেছেন। সেগুলো নিম্নরূপ :
(১)আল্লাহ তাআলা বলেন :
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
'নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ যার জন্যে তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করল, সে যেন বড় অপবাদ আরোপ করল।'[২৫]
(২) আল্লাহ আরো বলেন :-
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
'যে লোক আল্লাহর সাথে শরীক করল সে সুদূর গোমরাহী ও বিভ্রান্তিতে পতিত হল।'[২৬]
(৩) আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলছেন :
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
'নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারী-জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।'[২৭]
(৪) অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে :
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
'এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।'[২৮]

 শিরককারীদের শাস্তি :
(১) আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন :
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ
'আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।'[২৯]
(২) আল্লাহ আরো বলেন -
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا ﴿১৫০﴾ أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا ﴿১৫১﴾
'যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী, তদুপরী আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি এবং কতককে প্রত্যাখ্যান করি এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্যে তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।'[৩০]
(৩) হাদীসে এসেছে
وعن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم: من مات وهو يدعو من دون الله ندا دخل النار (متفق عليه)
বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যাবে যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন সমকক্ষকে ডাকছে (অর্থাৎ শিরক করা অবস্থায় মারা যাবে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।[৩১]

শিরকের ভিত্তিমূল:
যে মূলভিত্তির উপর ভিত্তি করে শিরকের উৎপত্তি সেটি হচ্ছে, "গাইরুল্লাহর সাথে সম্পর্ক "। যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর সাথে সম্পর্ক করবে আল্লাহ তাকে তার দিকে ছুড়ে দেবেন। তাকে একারণে আযাব দেবেন, অপদস্ত করবেন। সে নিন্দিত হবে। তার কোন প্রশংসাকারী থাকবে না। অসহায় ও পরিত্যক্ত হবে। কোন সাহায্যকারী পাবে না। যেমন আল্লাহ বলেন -
لَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا مَخْذُولًا ﴿২২﴾
আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করোনা। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে।[৩২]

৫- শিরকের প্রকার

 শিরক দুই প্রকার :
শিরকে আকবর (বড় শিরক) এবং শিরকে আসগর (ছোট শিরক)।

(১) শিরকে আকবর বা বড় শিরক:

শিরকে আকবর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্বীন থেকে বহিস্কার করে দেয়। পূর্বেকৃত সকল নেক আমল নিষ্ফল ও ব্যর্থ করে দেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবন ও সম্পদ অনিরাপদ ও হালাল হয়ে যায়। শিরক অবস্থায়- তাওবা না করে- মারা গেলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকতে হবে।
শিরকে আকবর হচ্ছে সম্পূর্ণ বা আংশিক ইবাদত গাইরুল্লাহর জন্য নিবেদন, অর্থাৎ যে কোন একটি ইবাদত আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নিমিত্তে সম্পাদন করা। যেমন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে দোয়া-প্রার্থনা করা, জ্বিন-শয়তান, ক্ববরবাসী ও এ জাতীয় কারো উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা, নজর-মান্নত করা। অনুরূপভাবে গাইরুল্লাহর নিকট এমন জিনিস প্রার্থনা করা যার উপর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ক্ষমতা নেই। যথা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট ধন-সম্পদ ও আরোগ্য প্রার্থনা করা। গাইরুল্লাহর নিকট বৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় জিনিস তলব করা। এবং এ জাতীয় সকল কাজ : যা জাহেল-মুর্খ লোকেরা ওলি-আউলিয়াদের কবরে অথবা পাথর, গাছ ও এ জাতীয় প্রতিমার নিকট গিয়ে করে থাকে।

শিরকে আকবরের কিছু নমুনা :

(১) ভয় এর ক্ষেত্রে শিরক :
আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কিছু যেমন মুর্তি, প্রতিমা, তাগুত, মৃত বা অদৃশ্য জ্বিন ও মানুষ ইত্যাদিকে ক্ষতি করবে অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুতে আপতিত করবে মর্মে ভয় করা। এরূপ ভয় ও ভীতি দ্বীনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা শুধু মাত্র আল্লাহ তা'আলার সাথে নির্দিষ্ট। এখন যদি কেউ এটিকে আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো দিকে সম্পর্কিত করে তাহলে সে আল্লাহর সাথে বড় শিরক করল বলে বিবেচিত হবে।
আল্লাহ বলেন-
فلا تخافوهم و خافون إن كنتم مؤمنين . آل عمران / ১৭৫
'সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আমাকে ভয় কর যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।'[৩৩]

(২) তাওয়াক্কুল এর ক্ষেত্রে শিরক :
সকল কাজে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'আলার উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করা একটি শীর্ষ পর্যায়ের ইবাদত যা কেবলমাত্র আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্যেই সম্পাদিত হওয়ার দাবী রাখে। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করল যে বিষয়ের উপর আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত অন্য কেউ ক্ষমতা রাখে না। তাহলে সে আল্লাহর সাথে শিরক করল। যেমন কেউ অনিষ্ট প্রতিরোধ, উপকার ও রিযিক অর্জন ইত্যাদি বিষয়ে মৃত ও অদৃশ্য ব্যক্তিবর্গের উপর তাওয়াক্কুল করল (যে অমুক সহায় থাকলে কোন চিন্তা নাই ইত্যাদি)। আর এরূপ শিরক;শিরকে আকবরের অন্তর্ভূক্ত।
আল্লাহ তা'আলা বলেন :
وعلى الله فتوكلوا إن كنتم مؤمنين . المائدة/ ২৩
'এবং একমাত্র আল্লাহ তা'আলার উপরই তাওয়াক্কুল কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।'[৩৪]

(৩) মুহাব্বতের ক্ষেত্রে শিরক :
আল্লাহ তা'আলার মুহাব্বত, এমনই এক মুহাব্বত যার আবেদন অনেক ব্যাপক, যা পরিপূর্ণ বিনয় এবং সর্বাত্মক আনুগত্যকে অনিবার্য করে। 'এ মুহাব্বত একেবারেই স্বতন্ত্র' এ পর্যায়ের মুহাব্বতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্য কেউ শরীক হতে পারে না। আল্লাহকে যেমন মুহাব্বত করা হয় যদি কোন ব্যক্তি অন্য কাউকে এ পর্যায়ের মুহাব্বত করে, তার অর্থ হচ্ছে ঐ ব্যক্তি মুহাব্বত ও তা'যীমের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার শরীক ও সমকক্ষ স্থির করছে। আর এটিই শিরক।
আল্লাহ তা'আলা বলেন :
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
'আর কিছু লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।'[৩৫]

(৪) আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক :
গাইরুল্লাহকে মান্য করা ও তাদের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা থেকেই মূলতঃ শিরক ফিত তাআত তথা আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরকের উৎপত্তি। যেমন আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক হারামকৃত বিষয়কে হালাল বা হালালকৃত বস্তুকে হারাম করার ক্ষেত্রে উলামা, শাসনকর্তা, উমারাদের আনুগত্য করা। সুতরাং যেসব লোক এসব ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করবে, (এর মাধ্যমে মূলত) তারা শরয়ী বিধান অনুমোদন, প্রয়োগ এবং হালাল বা হারাম করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার সমকক্ষ-শরীক সাব্যস্ত করেছে বলে বিবেচিত হবে। আর এসব কাজ শিরকে আকবরের অন্তর্ভূক্ত।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
'তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের ধর্মজাযক ও সংসার-বিরাগী তাদের প্রভূ রূপে গ্রহণ করেছে। এবং মারিয়াম তনয়কেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মা'বুদের ইবাদতের জন্যে। তিনি ভিন্ন কোন মাবুদ নেই। তারা যে তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তিনি তা থেকে পবিত্র।'[৩৬]

 নিফাকের প্রকার :
নিফাক দুই প্রকার যথা:
১-নিফাকে আকবর আর এটি হচ্ছে নিফাকে ই'তেকাদী (বিশ্বাসগত নিফাক)। 
যেমন বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করা আর ভিতরে ভিতরে কুফর পোষণ করা। নিফাকে আকবরের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের। জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে হবে পরকালে তাদের ঠিকানা।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
إن المنافقين في الدرك الأسفل من النار و لن تجد لهم نصيرا.
'নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে থাকবে। আর আপনি কখনো তাদের কোন সাহায্যকারী পাবেন না।'[৩৭]
২-নিফাকে আমলী বা কর্মে নিফাক। 
এ ধরনের নিফাকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দ্বীন থেকে বহিস্কৃত হয় না, তবে সে আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য ও নাফরমান বলে গণ্য হয়।
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أربع من كن فيه كان منافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها : إذا ائتمن خان، و إذا حدث كذب، وإذا عاهد غدر، و إذا خاصم فجر. (متفق عليه)
'আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়ালাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন: চারটি দোষ- যে ব্যক্তির মধ্যে একসাথে সবগুলো পাওয়া যাবে সে পরিপূর্ণ মুনাফেক বলে বিবেচিত হবে। আর যার মধ্যে ঐ দোষচতুষ্টয়ের একটি পাওয়া যাবে, সে সেটি পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে নিফাকের একটি নিদর্শন বিদ্যমান বলে ধরা হবে। (দোষ চারটি হচ্ছে) আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। কথা বললে মিথ্যা বলে। প্রতিশ্রুতি দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং ঝগড়া -বিবাদ করলে অশ্লীল কথা বলে।'[৩৮]

(২) শিরকে আসগর বা ছোট শিরক:

ছোট শিরক বলতে সে সকল কাজকে বুঝানো হয় যাকে হাদীসে শিরক বলে নাম দেয়া হয়েছে কিন্তু সেগুলো শিরকে আকবেরর পর্যায়ে পড়ে না।
শিরকে আসগর তাওহীদকে ত্রুটিযুক্ত করে ঠিক, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্বীন হতে বহিষ্কার করে না। তবে এটি শিরকে আকবর পর্যন্ত পৌঁছবার রাস্তা-সন্দেহ নেই।
শিরকে আসগর সম্পাদনকারীর হুকুম-তাওহীদপন্থী অপরাধীদের হুকুমের অনুরূপ। তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে তবে কাফেরদের মত চির জীবনের জন্য জাহান্নামে যাবে না। তার জীবন, সম্পদ হালাল ও অনিরাপদ নয়। শিরকে আকবর, সম্পাদনকারীর জীবনের সকল নেক আমল বিনষ্ট করে দেয়, আর শিরকে আসগর শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট আমলকে নষ্ট করে, সকল আমল নয়।
যেমন কোন ব্যক্তি মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে একটি নেক আমল সম্পাদন করল। -সুন্দর করে সালাত আদায় করল বা সদকা-খয়রাত করল, রোযা রাখল এমনিভাবে আল্লাহর যিকির করল এসব আমল দ্বারা তার উদ্দেশ্য কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন নয় বরং মানুষদের দেখানো ও প্রশংসা কুড়ানো। এরূপ রিয়া-লৌকিকতা কোন আমলের সাথে মিশ্রিত হলে, সেটি সে আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। তবে শুধুমাত্র সেই আমলকেই বিনষ্ট করে, তার (রিয়ামুক্ত) অন্যসব আমল অক্ষত থাকে।
পবিত্র কোরআনে শিরক শব্দটি বহু বার উল্লেখ হয়েছে, সকলস্থানেই এর দ্বারা শিরকে আকবরকে বুঝানো হয়েছে। শিরকে আসগরের আলোচনা হাদীসে মুতাওয়াতিরে বিভিন্নভাবে এসেছে।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন :
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
'বলুন! আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং স্বীয় পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।'[৩৯]

(২) হাদীসে এসেছে
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( قال الله تبارك وتعالى: أنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا أشرك فيه معي غيري تركته و شركه)) . أخرجه مسلم
'আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতাআলা বলছেন : আমি সকল শরীক-সমকক্ষ থেকে সম্পূর্ন মুক্ত ও বে-নিয়ায। যে ব্যক্তি কোন নেক আমল সম্পাদন করল এবং তাতে আমার সাথে অন্যকেও শরীক করল তাহলে আমি তাকেও পরিত্যাগ করি এবং তার শিরককেও।'[৪০]

শিরকে আসগরের কিছু নমুনা :

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা, এভাবে বলা : যা আল্লাহ ও অমুক ইচ্ছা করেছেন, যদি আল্লাহ ও অমুক না থাকত . ., এটি আল্লাহ ও অমুকের কৃপায় পাওয়া, আল্লাহ ও অমুক ব্যতীত আমার আর কেউ নেই এ জাতীয় কথা বলা।
এ ধরণের কথা বলার প্রয়োজন হলে এ ভাবে বলা যায়, যা আল্লাহ চেয়েছেন অতঃপর অমুক চেয়েছে।
(১) হাদীসে এসেছে
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول:(( من حلف بغير الله فقد كفر أو أشرك)). أخرجه ابوداود والترمذي.
'সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর নামে শপথ করল, সে কুফরী করল বা শিরক করল।[৪১]
(২) হাদীসে এসেছে
و عن حذيفة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: لا تقولوا ما شاء الله وشاء فلان ولكن قولوا ما شاء الله ثم ما شاء فلان)). (أخرجه أحمد وابوداود)
'হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন : তোমরা এরূপ বলোনা : আল্লাহ ও অমুক যা চেয়েছেন। বরং এরূপ বল : আল্লাহ তা'আলা যা চেয়েছেন অতঃপর অমুক যা চেয়েছে।[৪২]
 শিরকে আসগর, সম্পাদনকারীর নিয়ত ও মন-মানসিকতার কারণে কখনো কখনো শিরকে আকবরে পরিণত হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের ছোট বড় সর্ব প্রকার শিরক থেকেই বেঁচে থাকা একান্ত জরুরী। কারণ শিরক বড় ধরণের অন্যায়, মারাত্মক গুনাহ যা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না মর্মে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
إن الله لا يغفر أن يشرك به و يغفر ما دون ذلك لمن يشاء.
'নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শিরকের গুনাহ ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এরচে নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ, যাকে ইচ্ছা করেন।'[৪৩]

 কতিপয় কর্ম ও কথা যা শিরকের অন্তর্ভূক্ত বা তার মাধ্যম :-

এমন অনেক কথা ও কর্ম আছে যা সম্পাদনকারীর অবস্থা ভেদে শিরকে আকবর বা শিরকে আসগরের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। মনের অবস্থার কারণে কারো কারো ক্ষেত্রে ছোট শিরক হিসেবে বিবেচিত হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বড় শিরক। সেগুলো হয়ত একেবারেই তাওহীদ পরিপন্থী যা তাওহীদের মূল আবেদনকেই নিঃশেষ করে দেয় অথবা তার স্বচ্ছতাকে কলুষিত করে দেয়। শরীয়ত এসব বিষয় সম্পর্কে কঠিনভাবে সতর্ক করেছে। নিম্নে তার কিছু নমুনা প্রদান করা হল:
(১) বিপদ-মুসীবত দূর কিংবা প্রতিরোধ কল্পে আংটি, রিং, সূতা, তাগা, ও কাইতন জাতীয় কিছু পরিধান করা, এসব-ই শিরক।
(২) কু-দৃষ্টির অনিষ্ট থেকে রক্ষা কল্পে বাচ্চাদের শরীরে মাদুলী, পুঁতি, হাড্ডি ও কাগজে লেখা প্রভৃতি জাতীয় তাবীজ লটকানো। এটিও শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
(৩) পাখি, মানুষ, যমীন বা এ জাতীয় জিনিষ দ্বারা শুভ-অশুভ নির্ণয় করা ও অশুভ বিতাড়ন করা। এসব কর্ম হচ্ছে শিরক। কারণ এর মাধ্যমে যে মাখলূক নিজ উপকার-ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না সে মাখলূক দ্বারা ক্ষতি হতে পারে বিশ্বাসে গাইরুল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারটি মূলত শয়তানের প্রবঞ্চনা। এটি তাওাক্কুল পরিপন্থী।
(৪) গাছপালা, পাথর, বিভিন্ন নিদর্শনাবলি, মাযার-কবর ও এ জাতীয় বস্তু দ্বারা বরকত লাভ করা ও শুভ কামনা করা। এসব বস্তুতে বরকত আছে মর্মে বিশ্বাস করা। এগুলো শিরক। কেননা এর মাধ্যমে বরকত লাভ করার জন্যে গাইরুল্লাহর পিছনে ছুটাছুটি করা হয় এবং তাদের সংশ্রবে আসা হয়।

(৫) যাদু :
যাদু বলা হয়: যা অস্পষ্ট এবং যার কার্যকারণ ও সূত্র অতি সুক্ষ্ণ। অর্থাৎ এমন তন্ত্র-মন্ত্র, ঝাঁড়-ফুক ও চিকিৎসার নাম যা অন্তর ও শরীরে আছর করে। আছরকৃত মানুষকে অসুস্থ করে দেয় বা নিহত করে কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ-বিরোধ সৃষ্টি করে। এটি একটি শয়তানী কর্ম। এর মাঝে অনেকগুলো এমনও আছে যা শিরক ব্যতীত সম্পন্ন হয় না।
যাদু শিরক, কারণ যাদুর মাধ্যমে গাইরুল্লাহ তথা শয়তানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হয় তাদের সংশ্রবে যাওয়া হয় এবং যাদু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকারান্তরে ইলমে গায়েবের দাবী করা হয়।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْر
'সুলাইমান কুফর করেনি, শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষদের যাদু বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিল।'[৪৪]
তবে কিছু কিছু যাদু আছে যা শিরক নয়, কবীরা গুনাহ। যেমন চিকিৎসার জন্য যাদু করা।

(৪)ভবিষ্যদ্বানী ও পৌরহিত্য:
কাহানা (পৌরহিত্য) হচ্ছে, ইলমে গায়েবের দাবী করা। যেমন জ্বিন-শয়তানদের সূত্রে প্রাপ্ত খবরের উপর ভিত্তি করে সত্বর পৃথিবীতে কি কি সংঘটিত হবে- মর্মে খবর পরিবেশন করা। এটি শিরক। কারণ এর মধ্যে গাইরুল্লাহর তাক্বাররুব বা নৈকট্য কামনা করা হয় এবং অদৃশ্যের জ্ঞান সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার অংশীদারিত্বের দাবি করা হয়।
عن أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (( من أتى كاهنا أو عرّافا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد)) أخرجه أحمد والحاكم
'প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ভবিষ্যৎবক্তা অথবা গণকের নিকট আসল এবং তার বর্ণনাকৃত বক্তব্যকে সত্য বলে স্বীকার করল সে মুহাম্মদের উপর নাযিলকৃত দ্বীন ও শরীয়ত কে অবিশ্বাস-অস্বীকার করল।'[৪৫]

(৫)জ্যোতিষি ও নক্ষত্ররাজীর মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বানী করা:
নক্ষত্ররাজীর অবস্থা ও অবস্থানের মাধ্যমে পৃথিবীতে সংঘটিতব্য বিষয়াবলী সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা ও নির্দেশনা দেয়া। যেমন: ঝড়-তুফান, বৃষ্টি-বাদল, রোগ-বালাই, শীত-গ্রীষ্ম ইত্যাদির আগমন, জলবায়ূর পরিবর্তন সর্ম্পর্কে আগাম খবর দেয়া। এসব শিরক, কেননা এতে অদৃশ্যের জ্ঞান ও বিশ্ব পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শরীকের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

(৬)নক্ষত্ররাজী দ্বারা বৃষ্টি প্রার্থনা:
অর্থাৎ বৃষ্টিপাত কে নির্দিষ্ট নক্ষত্র উদয় বা অস্তের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করা। যেমন এরূপ বলা 'অমুক নক্ষত্রের কারণে আমরা বৃষ্টি পেয়েছি,। বৃষ্টি বর্ষণকে আল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত না করে তারকার দিকে করা হল। আর এটিই শিরক, কারণ বৃষ্টি হওয়া-না হওয়া সব আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে কোন গ্রহ-নক্ষত্র বা এরূপ অন্য কিছুর নিয়ন্ত্রণে নয়।

(৯) নিয়ামতরাজীকে গাইরুল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা:
ইহকাল ও পরকালে মানুষ যত নিয়ামত ভোগ করছে বা করবে, সর্বপ্রকার নিয়ামত একমাত্র আল্লাহ তা'আলার দান। তিনিই অনুগ্রহ করে মানুষদের এগুলো দিয়েছেন। এখন যদি কেউ কোন একটি নেয়ামতকেও আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো দান বলে দাবি করে, তাহলে এটি হবে শিরক ও কুফর। যেমন কেউ আরোগ্য ও পানি প্রাপ্তিকে গাইরুল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলল, আমি অমুকের কৃপায় আরোগ্য লাভ করেছি। অমুকের অনুগ্রহে পানি পেয়েছি। অথবা স্থল, জল বা আকাশ পথে নিরাপদে ভ্রমনের নিয়ামতকে যথাক্রমে ড্রাইভার, মাঝি বা বৈমানিকের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলল, ড্রাইভার, মাঝি ও বৈমানিকের কল্যানে এ যাত্রায় নিরাপদে সফর শেষ করতে পেরেছি। অনুরূপভাবে দেশের শান্তি, শৃংখলা, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদিকে সরকার বা জনগনের চেষ্টা-পরিশ্রমের ফসল বলে বিশ্বাস করা এবং তাদের কৃতিত্ব বলে দাবি করা।
একজন মুসলমানের ঈমানের দাবি হচ্ছে দুনিয়ার যাবতীয় নিয়ামতরাজী একমাত্র আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহের ফসল। সবকিছু একমাত্র তাঁরই দান বলে স্বীকার করা এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও শুকরিয়া আদায় করা।
আর মানুষসহ সৃষ্টির কাছে যা আছে তা হচ্ছে সামান্য উপকরণ মাত্র, এগুলো কখনো কখনো ফল দেয় আবার কখনো দেয়না, কখনো উপকারে আসে আবার কখনো আসে না।
আল্লাহ তা'আলা বলেন :
وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ ﴿৫৩﴾
'তোমাদের কাছে যে সমস্ত নিয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখে কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর তাকেই ব্যাকুল ভাবে ডাকা-ডাকি কর।'[৪৬]

৬- ইসলাম

 মানবজাতির জন্য ইসলামের প্রয়োজনীয়তা :
ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে মানবজাতির যাবতীয় কল্যাণ, উন্নতি ও অগ্রগতি একমাত্র ইসলামের মধ্যেই নিহিত। তাদের কল্যাণ ও উন্নতির জন্যে ইসলামের প্রয়োজন খাবার-পানীয়'র প্রয়োজনের চেয়ে কোন অংশে কম নয় বরং বেশী। প্রত্যেক মানুষ শরীয়ত মানতে বাধ্য। সে সব সময় দুটি তৎপরতার মধ্যে অবস্থান করে।
একটি তৎপরতা দ্বারা উপকারী জিনিষ অর্জন করে। অপরটি দ্বারা ক্ষতিকর বস্তুকে প্রতিহত করে। আর ইসলাম হচ্ছে এমন একটি জ্যোতি যার মাধ্যমে উপকারী ও ক্ষতিকর সকল বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
 ইসলাম ধর্মের তিনটি স্তর রয়েছে। ইসলাম, ঈমান ও ইহসান। প্রতিটি স্তরের স্বতন্ত্র কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে।
 ইসলাম, ঈমান ও ইহসানের মধ্যে পার্থক্য :-
(১) ইসলাম ও ঈমানকে যদি একইস্থানে-একত্রে উল্লেখ করা হয়। তাহলে ইসলাম দ্বারা উদ্দেশ্য হবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা সম্পাদনযোগ্য বাহ্যিক আমল। যেমন ইসলামের পাঁচ রুকন: কালেমার স্বাক্ষ্য, সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্ব। আর ঈমান এর অর্থ হবে, অন্তর দ্বারা সম্পাদনযোগ্য বিশ্বাসগত আমল যেমন ঈমানের ছয়টি মৌলিক বিষয় হল; আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস, কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতকুলের প্রতি বিশ্বাস...
আর যদি ইসলাম ও ঈমানকে আলাদা আলাদা উল্লেখ করা হয় তাহলে একটি দ্বারা উভয়টি বুঝানো হবে। তখন প্রত্যেকটি অপরটির অর্থ ও হুকুম শামিল করবে।
(২) ইহসানের পরিধি ঈমানের পরিধি অপেক্ষা ব্যাপক আর ঈমানের পরিধি ইসলামের পরিধির চেয়ে বিস্তৃত।
ইহসান নিজের দিক থেকে ব্যাপক। কেননা সে ঈমানকে শামিল করে। তাই একজন বান্দা ঈমানকে পূর্ণাঙ্গ রূপে বাস্তবায়ন করা ব্যতীত ইহসানের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। আর ইহসান- বাস্তবায়নকারী মুহসিনদের দিক থেকে খাস। কারণ আহলে ইহসান (মুহসিন), আহলে ঈমানেরই (মুমিন) অন্তর্ভূক্ত একটি দল।
অতএব প্রত্যেক মুহসিন মুমিন, কিন্তু প্রত্যেক মুমিন মুহসিন নয়।
(৩) ঈমান নিজের দিক থেকে ইসলাম অপেক্ষা ব্যাপক। কারণ ঈমান, ইসলামকে শামিল করে। তাই বান্দা ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন না করে ঈমানের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। আর ঈমান আহলে ঈমান-মুমিনদের দিক থেকে খাস। কেননা আহলে ঈমান, আহলে ইসলামেরই একটি দল-। সকলেই নয়। অতএব প্রত্যেক মুমিন মুসলিম, কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম মুমিন নয়।
 ইসলামের অর্থ :
মনে-প্রাণে আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়া। ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা এবং শিরক ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করা। অতএব যে ব্যক্তি এক আল্লাহকে মেনে নেবে- তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করবে, সে মুসলিম বলে বিবেচিত হবে। আর যে আল্লাহকে মানবে সাথে সাথে অন্যের বশ্যতাও স্বীকার করবে সে মুশরিক বলে বিবেচিত হবে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহকে মানবে না, তাঁর নিকট আত্মসমর্পন করে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করবে না সে কাফের ও অহংকারী বলে গণ্য হবে।

৭ - ইসলামের রুকনসমূহ

 ইসলামের রুকন পাঁচটি:
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( إن الإســلام بني على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله و أن محمدا رسول الله, وإقام الصلاة, وإيتاء الزكاة, وصيام رمضان, وحج البيت)). متفق عليه.
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে পাঁচটি বিষয়ের উপর। এ সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন মা'বূদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সিয়াম পালন করা এবং বাইতুল্লাহর হজ্ব করা।[৪৭]
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"র সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ:
আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন মাবূদ-উপাস্য নেই মর্মে মৌখিক ও আন্তরিক স্বীকৃতি প্রদান করা। তিনি ব্যতীত যত মা'বূদ আছে তাদের উপাস্যত্ব বাতিল এবং তাদের ইবাদতও বাতিল।
"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" প্রত্যাখ্যান ও স্বীকৃতি সম্বলিত বাক্য। (لا إله/ লা ইলাহা) বলে আল্লাহ ব্যতীত সকল উপাস্যকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। إلا الله)/ ইল্লাল্লাহ) বলে শুধুমাত্র আল্লাহ তা'আলার ইবাদতকে প্রতিষ্ঠিত ও গ্রহণ করা হয়েছে। স্বীকার করা হয়েছে যে, তাঁর ইবাদতে কোন শরীক নেই, যেমনি করে তাঁর রাজত্বে কোন শরীক-সমকক্ষ নেই।
"মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ"র সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ :
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের আনুগত্য করা, তিনি যে খবর দিয়েছেন সেগুলোর স্বীকৃতি দেয়া, যা নিষেধ করেছেন, তা পরিহার করা এবং একমাত্র তাঁর অনুমোদিত পন্থায়ই আল্লাহর ইবাদত করা।

৮ - ঈমান :

ঈমান হচ্ছে:
আল্লাহ তা'আলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি। ঈমান কথা ও কর্মের সমষ্টির নাম। জিহবা ও অন্তরের কথা এবং জিহবা, অন্তর ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের কর্ম। নেককাজের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়-সুদৃঢ় হয় এমনিভাবে পাপ কাজের মাধ্যমে হ্রাস পায়।

ঈমানের শাখা-প্রশাখা :
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( الإيمان بضع وسبعون أو بضع و ستون شعبة, فأفضلها قول لا إله إلا الله, و أدناها إماطة الأذى عن الطريق, والحياء شعبة من الإيمان )) أخرجه مسلم
প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। সর্বোত্তম হচ্ছে, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলা (অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাকে একমাত্র উপাস্য বলে স্বীকার করা ও ঘোষণা দেয়া)। আর সর্বনিম্ন হচ্ছে, কষ্টদায়ক বস্তু চলাচলের রাস্তা থেকে অপসারণ করা এবং লজ্জা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা।[৪৮]

ঈমানের স্তর বিন্যাস:
ঈমানের নিজস্ব একটি স্বাদ আছে, মজা ও মাধুর্য আছে এবং তার নিজস্ব একটি প্রকৃতি ও হাকীকত আছে।
(১) ঈমানের স্বাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
))ذاق طعم الإيمان من رضي بالله ربا و بالإسلام دينا وبمحمد رسولا)). أخرجه مسلم
অর্থাৎ যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা'আলাকে প্রতিপালক, ইসলামকে ধর্ম এবং মুহ্‌াম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাসূল বলে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করতে পারবে সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন ও অনূভব করতে পারবে।[৪৯]
(২) ঈমানের মজা ও মাধুর্য সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করছেন :
((ثلاث من كن فيه وجد حلاوة الإيمان:أن يكون الله ورسوله أحب إليه مما سواهما, وأن يحب المرء لايحبه إلا لله, وأن يكره أن يعود في الكفر كما يكره أن يقذف في النار)) متفق عليه
তিনটি বিশেষ গুণ, যার মধ্যে এগুলো বিদ্যমান থাকবে সে ঈমানের মজা অনুভব করতে পারবে। যার নিকট আল্লাহ ও রাসূল, পৃথিবীর অন্য সকল ব্যক্তি ও বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয় হবে। যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই ভালবাসবে এবং যে ব্যক্তি আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে যেমন অপছন্দ করে, কুফরে ফিরে যাওয়াকে ঠিক অনুরূপ অপছন্দ করবে।[৫০]
(৩) আর ঈমানের হাকীকত, যে ব্যক্তির মাঝে দ্বীনের মৌলিকত্ব ও সঠিক বুঝ (হাকীকত) বিরজমান থাকবে, দ্বীনের জন্যে চেষ্টা করবে শ্রম দেবে; ইবাদত করবে, দাওয়াত দেবে, হিজরত করবে, নুসরত করবে, জিহাদ করবে, অর্থ ব্যয় করবে বরং দ্বীনের জন্যে চেষ্টা-মেহনত করতে গিয়ে সম্ভাব্য সকল কাজে অংশ গ্রহণ করে সামর্থের শতভাগ নিংড়ে দেবে সে-ই প্রকৃত অর্থে ঈমানের হাকীকত ও প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবে এবং তা নিজের মাঝে ধারণ করতে সক্ষম হবে।
(১) আল্লাহ তা'আলা বলেন :
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آَيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ ﴿২﴾ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ﴿৩﴾ أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ﴿৪﴾) الأنفال/২-৪(
'প্রকৃত ঈমানদার তারাই, যখন আল্লাহ তাআলার নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াত (নিদর্শন) ও কালাম পাঠ করা হয়, তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পালনকর্তার প্রতি ভরসা পোষণ করে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারাই সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্যে রয়েছে স্বীয় পালনকর্তার নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রুযী।'[৫১]
(২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ﴿৭৪﴾ )الأنفال:৭৪
'আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে। তাঁরাই হল সত্যিকার মুমিন। তাঁদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।'[৫২]

(৩) মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন :
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ﴿১৫﴾ ( الحجرات:১৫)
'তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জীবন-প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জিহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।'[৫৩]

 কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ঈমানের হাকীকত তথা প্রকৃত অবস্থায় পৌঁছেছে বলে বিবেচনা করা হবে না যতক্ষণ না সে এ বিশ্বাস করবে যে, যে বিপদ তার উপর আপতিত হয়েছে তা রদ হওয়ার ছিল না, আর যা তার পর্যন্ত পৌঁছেনি সেটি পৌঁছার ছিল না, অর্থাৎ যা হওয়ার তা হবেই সেটি কেউ রদ করতে পরবে না, আর যা হয়নি তা কেউ জোর করে বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

ঈমানের পূর্ণতা :
পূর্নাঙ্গ ঈমানের প্রকৃত মানদণ্ড হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পরিপূর্ণ রূপে মুহাব্বত করা-ভালবাসা। যে মুহাব্বত ও ভালবাসা তাঁদের পছন্দনীয় বিষয়াবলীকে পছন্দ ও বাস্তবায়ন করাকে অনিবার্য করে। সুতরাং যখন বান্দার ভালবাসা হবে আল্লাহর জন্যে, ঘৃণা করাও হবে আল্লাহর জন্যে। (এ দু'টি বান্দার অন্তরের আমল) এবং তার দান করা এবং বিরত থাকাও হবে আল্লাহর জন্যে (এ দু'টি তার শারীরিক আমল)। তখন তার ঈমানের পূর্ণতা ও আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভালবেসেছে বলে প্রমাণিত হবে।
عن أبي أمامة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال:(( من أحب لله، وأبغض لله، وأعطى لله، ومنع لله ، فقد استكمل الإيمان )) أخرجه أبوداود
'সাহাবাী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে আল্লাহর জন্য ভালবাসল। আল্লাহর জন্য ঘৃণা করল। আল্লাহর জন্য দান করল। আল্লাহর জন্য নিষেধ করল। সে-ই মূলত: ঈমানকে পরিপূর্ণ করল।'[৫৪]

৯- ঈমানের কিছু বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শন

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসা:
عن أنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين)) متفق عليه
'বিশিষ্ট সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মুমিন বলে স্বীকৃত হবে না, যতক্ষন না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান ও অপরাপর সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হব।'[৫৫]

 আনসারদের ভালবাসা:
عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أية الإيمان حب الأنصار وآية النفاق بغض الأنصار. متفق عليه
'সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের নিদর্শন হচ্ছে, আনসারদেরকে ভালবাসা আর নিফাকের (কপটতা) আলামত হচ্ছে তাদেরকে ঘৃণা করা।'[৫৬]

 সকল মুমিন বান্দাদেরকে ভালবাসা :
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا, ولا تؤمنوا حتى تحابوا, أولا أدلّكم على شيئ إذا فعلتموه تحاببتم أفشوا السّلام بينكم)) أخرجه مسلم
'প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা মুমিন না হলে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর পারস্পরিক ভালবাসা ও মুহাব্বতে আবদ্ধ না হলে মুমিন বলে বিবেচিত হবে না। আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলবনা? যা বাস্তবায়ন করলে তোমরা পারস্পরিক ভালবাসায় আবদ্ধ হতে পারবে? নিজেদের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।'[৫৭]

 স্বীয় মুসলিম ভাইকে ভালবাসা :
عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه، أو قال لجاره، ما يحب لنفسه. متفق عليه
'সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ মুমিন বলে বিবেচিত হবে না যতক্ষন না অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যে অথবা বলেছেন প্রতিবেশীর জন্যে- সে বস্তু পছন্দ করবে যা নিজের জন্যে (পছন্দ) করে।'[৫৮]

 মেহমান, প্রতিবেশীর সম্মান করা ও কল্যাণমূলক কথা ব্যতীত নীরব থাকা :
عن أبى هريرة رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال :(( من كان يؤمن بالله واليوم الأخر فليقل خيرا أو ليصمت, ومن كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليكرم جاره, ومن كان يؤمن بالله و اليوم الآخر فليكرم ضيفه)) متفق عليه
'প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কল্যাণমূলক কথা বলে অথবা নীরব থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ আ'আলা ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন স্বীয় মেহমানকে সম্মান করে।'[৫৯]

 সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা :
عن أبى سعيد الخدري رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول :(( من رأي منكم منكرا فليغيره بيده, فإن لم يستطع فبلسانه, فإن لم يستطع فبقلبه وذلك أضعف الإيمان )) أخرجه مسلم
'সাহাবী আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, তোমাদের কেউ অন্যায়-অসৎকাজ সংঘটিত হতে দেখলে শক্তি দ্বারা প্রতিহত করবে। না পারলে মুখ দ্বারা প্রতিবাদ করবে এরও সামর্থ না থাকলে মনে-প্রাণে ঘৃণা করবে। আর এটিই হচ্ছে সবচে দুর্বল ঈমান।'[৬০]

 কল্যাণ কামনা ও সদুপদেশ প্রদান:
عن تميم الداري رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:(( الدين النصيحة)) قلنا لمن؟ قال(( لله ولكتابه ولرسوله ولأئمة المسلمين و عامتهم)) (أخرجه مسلم)
'সাহাবী তামীম আদ-দারী রা. বর্ণনা করছেন, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কল্যাণকামনাই হল দ্বীন, আমরা বললাম, কার জন্যে? নবীজী বললেন, আল্লাহর জন্যে, তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের জন্যে এবং সাধারণ মুসলমান ও তাদের নেতৃবর্গের জন্যে।'[৬১]

 ঈমান সর্বোত্তম আমল :
عن أبى هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل: أي العمل أفضل؟ قال:(( إيمان بالله ورسوله )) قيل ثم ماذا؟ قال: (( الجهاد في سبيل الله )) قيل: ثم ماذا؟ قال: ((حج مبرور)) متفق عليه
'বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জানতে চাওয়া হল, সর্বাধিক উত্তম আমল কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল তারপর কী? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ, বলা হল এর পর কোনটি? তিনি বললেন-মাবরুর হজ।'[৬২]

 ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়-দৃঢ় হয়, পাপ ও অবাধ্যতার কারনে হ্রাস পায়- দুর্বল হয়।
(১) আল্লাহ তা'আলা বলেন :
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ وَلِلَّهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿৪﴾الفتح/৪
'তিনি মুমিনদের অন্তরে সাকীনা-প্রশান্তি নাযিল করেন। যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়। নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।'[৬৩]
(২) আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন :
وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيمَانًا فَأَمَّا الَّذِينَ آَمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ ﴿১২৪﴾التوبة/ ১২৪
'আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সূরা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান (কতটা) বৃদ্ধি করল? অতএব যারা ঈমানদার, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে।'[৬৪]
(৩)
وعن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال :(( لا يزني الزاني حين يزني وهو مؤمن، و لا يسرق السارق حين يسرق و هو مؤمن، ولا يشرب الخمر حين يشربها و هو مؤمن )) متفق عليه
'আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করতে পারে না, চোর চুরি করার সময় মুমিন থাকে না। অনুরূপভাবে মদ্যপানকারী মুমিন অবস্থায় মদ্যপান করতে পারে না।'[৬৫]
(৪)
وعن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال:(( يخرج من النار من قال: لا إله إلا الله وفي قلبه وزن شعيرة من خير، ويخرج من النار من قال : لا إله إلا الله وفي قلبه وزن برة من خير، و يخرج من النار من قال: لا إله إلا الله و في قلبه وزن ذرة من خير)) و في رواية: ((من إيمان )) مكان ((من خير)) متفق عليه
'আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই মর্মে স্বীকৃতি দেবে এবং তার অন্তরে একটি যবের দানার ওজন পরিমান কল্যাণও (তথা ঈমান) বিদ্যমান থাকবে সে কোন না কোন পর্যায়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কোন সত্যিকার উপাস্য নেই মর্মে সাক্ষ্য দেবে এবং তার অন্তরে একটি গমের দানার ওজন পরিমান কল্যাণ (ঈমান)-ও বিদ্যমান থাকবে সে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন হক উপাস্য নেই মর্মে সাক্ষ্য দেবে এবং তার অন্তরে অনু পরিমান কল্যাণ (তথা ঈমান) বিদ্যমান থাকবে সে-ও জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে।
অন্য রেওয়ায়েত (خير)-এর স্থলে (إيمان) বর্ণিত হয়েছে। (অর্থাৎ তার অন্তরে এক যব/ গম / অনু পরিমান ঈমান অবশিষ্ট আছে)।[৬৬]

 কাফেরদের ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে সম্পাদিত নেক আমলের বিধান:
(১) অমুসলিম ব্যক্তিবর্গ ইসলাম গ্রহণ করার পর যদি নিয়মিত নেক আমল সম্পাদন করে যায়, তাহলে পূর্বেকৃত অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেন :
قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ وَإِنْ يَعُودُوا فَقَدْ مَضَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ ﴿৩৮﴾الأنفال/৩৮
'হে নবী আপনি অমুসলিমদের বলে দিন যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তাহলে পূর্বে সংঘটিত সব ক্ষমা করে দেয়া হবে। পক্ষান্তরে আবারও যদি তাই করে তাহলে পূর্ববর্তীদের পথ নির্ধারিত হয়ে গেছে।'[৬৭]
(২) পূর্বেকৃত নেক আমলের জন্যে ছাওয়াব প্রাপ্ত হবে। কেননা হাকিম বিন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন :
أرأيت أمورا كنت أتحنث بها فى الجاهلية هل لى فيها من شيئ؟ فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم : ((أسلمت على ما أسلفت من خير)). متفق عليه
'আমি জাহেলীযুগে যে সকল পূণ্যকর্ম সম্পাদন করেছিলাম সেগুলো সম্পর্কে আপনার অভিমত কী ? সেগুলোর বিনিময়ে আমি কি কিছু পাব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি পূর্বে সম্পাদিত সকল নেক আমল নিয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছ।'[৬৮]
(৩) আর যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মন্দকাজ করবে সে পূর্বাপর উভয় সময়ের মন্দ কাজের জন্যে শাস্তির সম্মুখীন হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
((من أحسن فى الإسلام لم يؤاخذ بما عمل فى الجاهلية ومن أساء في الإسلام أخذ بالأول والآخر))متفق عليه
'যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর নেক আমল সম্পাদন করবে, সে জাহেলীযুগে সঙ্ঘটিত বদআমলের জন্যে শাস্তির সম্মুখীন হবে না। আর যে লোক (ইসলাম গ্রহণ করার পর) মন্দকাজ করবে তাকে পূর্বাপর-উভয় সময়ের পাপের শাস্তি দেয়া হবে।[৬৯]

১০- ঈমানের রুকনসমূহ

ঈমানের রুকন ছয়টি, যেগুলো হাদীসে জিবরাঈলে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিবরাঈল আলাইহিসসালাম ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ উত্তরে বলেন:
أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر خيره وشره. متفق عليه.
'আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, রাসূলবৃন্দ এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আরও বিশ্বাস স্থাপন করা তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি।[৭০]

১-আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন

 আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।

(এক) আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

 মহান আল্লাহ প্রত্যেক মাখলূককে নিজ সৃষ্টিকর্তার প্রতি ঈমানের প্রকৃতি ও মানসিকতা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নিজেই বলছেন :-
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ (سورة الروم : ৩০)
'তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহ তাআলার প্রকৃতি। যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।'[৭১]
 প্রত্যেক সুস্থ বিবেক এ বিশ্বাসের প্রতি সমর্থন ও পথনির্দেশ করে যে, এ নিখিল বিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। কারণ এ পৃথিবীর পূর্বাপর সকল সৃষ্টির ক্ষেত্রে আবশ্যিক যে তাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি তাদেরকে অস্তিত্বে এনেছেন। এগুলোর পক্ষে নিজে নিজেই অস্তিত্ব লাভকরা সম্ভব নয় এবং আকস্মিকভাবে অস্তিত্বে চলে আসাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। সুতরাং এদের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে, এদের একজন অস্তিত্ব দানকারী আছেন। আর তিনি হচ্ছেন এ বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহামহীম আল্লাহ।
ইরশাদ হচ্ছে,
أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ ﴿৩৫﴾ أَمْ خَلَقُوا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بَل لَا يُوقِنُونَ ﴿৩৬﴾ سورة الطور : ৩৫-৩৬)
'তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা। না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না।'[৭২]
 সুস্থ অনুভূতিও আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্বের প্রতি সমর্থন করে। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত দিবা-রাত্রির পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। মানুষ ও অন্যান্য জীব-জন্তুর রিযিকের বিষয়টিও আমাদের সম্মুখে। দেখছি পুরো বিশ্ব জগতের সকল বিষয়কে; কত সুশৃংখল ভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। এ সকল বিষয় সন্দেহাতীতভাবে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বকে প্রমাণ করে।
يُقَلِّبُ اللَّهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِأُولِي الْأَبْصَارِ. (سورة النور: ৪৪)
'আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিগণের জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।'[৭৩]
 আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী-রাসূলদের বিভিন্ন মু'জেযা ও নিদর্শনাবলীর মাধ্যমে সাহায্য করেছেন-সমর্থন যুগিয়েছেন। সেগুলো যুগে যুগে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে শুনেছে, বিষয়গুলো ছিল সম্পূর্ণরূপে মানবীয় ক্ষমতার উর্ধ্বে। এর মাধ্যমে আল্লাহ নবী-রাসূলদের সাহায্য করেছেন। তাঁদের অবস্থান মজবুত করেছেন। মনুষ্য ক্ষমতার উর্ধ্বের বিষয়, সেই মানুষ দ্বারা সঙ্ঘটিত হওয়াই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে তাঁদের একজন প্রেরণকারী আছেন। আর সে প্রেরণকারীই হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। যেমন আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে জলন্ত অগ্নিকে শান্তিদায়ক শীতল করে দিয়েছেন। মূসা আলাইহিস সালাম-এর জন্যে সমুদ্র চিড়ে রাস্তা বের করেছিলেন। ঈসা আলাইহিস সালামের জন্যে মৃত-কে জীবিত করেছিলেন এবং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহর জন্যে চন্দ্র দ্বি-খন্ডিত করেছেন।
 আল্লাহ তাআলা কত দোয়াকারীর দোয়া কবুল করছেন, কত প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা মঞ্জুর করছেন, বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি সাহায্য চেয়ে অব্যর্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কৃপায়। আল্লাহর অস্তিত্ব, ক্ষমতা ও ইলম যদি না-ই থাকবে তাহালে এসব সংঘটিত করল কে? জবাব দিল কে? সুতরাং নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হল, আল্লাহ আছেন তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা অসীম।
(১) আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ ﴿৮৩﴾ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَآَتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِينَ ﴿৮৪﴾ (سورة الأنبياء: ৮৩-৮৪)
'এবং স্মরণ করুন আইয়ূবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহ্বান করেছিলেন, আমি দু:খে কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি সকল দয়াবান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়াবান। অত:পর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ কষ্ট দূর করে দিলাম এবং তার পরিবারবর্গ ফিরেয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশত: আর এটি ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ।'[৭৪]
 ইসলামী শরীয়ত ও এর সুন্দর সুন্দর-সামঞ্জস্যশীল বিধি-বিধান। আল্লাহ তা'আলার অস্তিত্বকে প্রমাণ করে। কিসে মানুষের কল্যাণ এবং কিসে অকল্যাণ। কী করলে তার উন্নতি হবে এবং কী কারণে অবণতি। ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করলে উপরোক্ত বিষয়গুলো সুন্দরভাবে অনুধাবন করা যায়। মানব জীবনে শৃংখলা, অগ্রগতি, উন্নতি সব কিছুই নিহিত আছে ইসলামী বিধি-বিধানের অনুশীলনের ভিতর, যা আল্লাহ তাআলা নিজ গ্রন্থাদিতে নবী-রাসূলগণের উপর নাযিল করেছেন। এত সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ, মানুষের সমস্যা সমাধানে পারঙ্গম নীতিই প্রমাণ করে যে এটি প্রজ্ঞবান-বিচক্ষণ, ক্ষমতাবান প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যিনি বান্দাদের কল্যাণ ও উন্নতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

(দুই) এ বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন রব-প্রতিপালক, এতে তাঁর কোন শরীক নেই।

রব তিনিই- সৃষ্টি, রাজত্ব এবং হুকুম করার ক্ষমতা যার জন্য সংরক্ষিত। অতএব আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মালিক কিংবা রাজত্বের অধিকারী নেই, সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁর।
তাঁর সৃষ্টিই সৃষ্টি, রাজত্ব-আধিপত্য বলতে একমাত্র তাঁর রাজত্ব-আধিপত্য, কর্তৃত্ব বলতেও তাঁর কর্তৃত্ব-ক্ষমতা। পরাক্রমশালী-দয়াময়, অমুখাপেক্ষী প্রশংসিত। অনুগ্রহ প্রার্থনা করা হলে অনুগ্রহ করেন। ক্ষমা চাওয়া হলে ক্ষমা করেন। প্রার্থনা করা হলে দান করেন, ডাকা হলে সাড়া দেন। চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর, যাকে নিদ্রা-তন্দ্রা স্পর্শ করে না।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন-
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿৫৪﴾ (سورة الأعراف: ৫৪)
'শুনে রাখ! সৃষ্টি এবং আদেশ তারই, আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।'[৭৫]
(২) আরোও ইরশাদ হচ্ছে,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا فِيهِنَّ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿১২০﴾ (سورة المائدة : ১২০)
'নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।[৭৬]
 আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি আল্লাহ তা'আলা সমগ্র সৃষ্টিকুল সৃজন করেছেন। নিখিল বিশ্বের দৃশ্যমান সবকিছু অস্তিত্বে এনেছেন। এ বিশ্ব-ভূমন্ডল তৈরী করেছেন, সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল-ভূ-মন্ডল, চন্দ্র-সূর্য, দিন-রাত্রি, পানি, তৃণ, মানব, দানব, জন্তু জানোয়ার পাহাড় সমুদ্র।
وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا ﴿الفرقان:২﴾
'তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তা নিরূপণ করেছেন নিপুণভাবে।'[৭৭]
 আল্লাহ তা'আলা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন নিজ ক্ষমতায়, তাঁর কোন মন্ত্রী-উজির, পরামর্শক কিংবা সাহায্যকারী নেই, এসবের প্রয়োজনও নেই। তিনি এসব থেকে পূত-পবিত্র, তিনি একক মহা পরাক্রমশালী, আরশে সমাসীন হয়েছেন নিজ ক্ষমতায়, ভূমি বিছিয়েছেন নিজ ইচ্ছায়, সৃষ্টিকুল সৃজন করেছেন নিজ ইরাদায়, বান্দাদের বশীভূত করেছেন নিজ শক্তিবলে। উদয়স্থল ও অস্তস্থলের মালিক। তিনি ভিন্ন কোন মা'বূদ নেই। চিরঞ্জীব অবিনশ্বর।
 আমরা জানি ও বিশ্বাস করি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। প্রত্যেক বস্তুর নিয়ন্ত্রণকারী। প্রত্যেক বস্তুর মালিক-কর্তৃত্বকারী। সব বিষয়ে তিনি সম্যক জ্ঞাত। সকল কিছুর উপর প্রবল-পরাক্রমশালী, সকল প্রভাবশালী তাঁর বড়ত্বের কাছে অবনত। সকল আওয়াজ তাঁর প্রভাবের কাছে বিনম্র, সকল শক্তিশালী তাঁর শক্তির নিকট হীন-অপদস্ত। কোন দৃষ্টি-চক্ষু তাঁকে পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারে না। তিনি সকল দৃষ্টি-চক্ষুকে পরিপূর্ণ রূপে বুঝেন-উপলব্ধি করেন। তিনি সুক্ষ্ণদর্শী পরিজ্ঞাত। যা ইচ্ছা করেন। ইচ্ছেমত হুকুম করেন।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ ﴿৮২﴾ (سورة يـس : ৮২)
'তিনি যখন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন কেবল বলে দেন 'হও' তখনই সে হয়ে যায়।'[৭৮]
 নভোমন্ডল ও ভূ-মণ্ডলে অবস্থিত সকল কিছু সম্পর্কে জানেন। দৃশ্য-অদৃশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। সুমহান, সুউচ্চ মর্যাদাবান। পর্বত-গিরির ওজন-পরিমাপ, সাগর-সমুদ্রের পরিধি-পরিমাপ সবই তাঁর অসীম জ্ঞানের আওতাধীন। পৃথিবীর সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নেই। এমনকি কত ফোটা বৃষ্টি ঝরল, বৃক্ষ রাজীর পাতা-পল্লবের পরিমাণ কি, ধুলিকনার সংখ্যা কত, যেসব বস্তুকে রাতের আাঁধার অন্ধকারচ্ছন্ন এবং দিনের রোশনী আলোকোদ্ভাসিত করে সবই তাঁর জ্ঞানের আওতার মধ্যে।
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ﴿৫৯﴾ (سورة الأنعام : ৫৯)
' আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং যমীনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।'[৭৯]
 এবং আমরা জানি ও বিশ্বাস করি। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রতিনিয়ত কোন না কোন কাজে রত আছেন। পৃথিবী ও আকাশের কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নেই। সকল কাজ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করেন। বাতাস প্রবাহিত করেন। বৃষ্টি বর্ষণ করেন। মৃত যমীন আবার জীবিত করেন। যাকে ইচ্ছা মর্যাদাবান করেন আবার যাকে ইচ্ছা বেইজ্জত করেন। জীবন-মৃত্য তাঁরই দান। তিনিই দয়া করে দান করেন আবার নিষেধ তিনিই করেন। তিনিই মর্যাদার আসন থেকে নামিয়ে আনেন।
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآَخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿৩﴾ (سورة الحديد: ৩)
'তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।'[৮০]
 আমরা জানি ও বিশ্বাস করি, আকাশ-যমীন বরং নিখিল বিশ্বের সকল বস্তুর ভাণ্ডার আল্লাহর নিকট। পানির ভাণ্ডার, তৃণ শস্যের ভাণ্ডার, হাওয়া-বাতাসের ভাণ্ডার, ধন-ভাণ্ডার, সুস্থতার ভাণ্ডার, নিরাপত্তার ভাণ্ডার, নিয়ামতের ভাণ্ডার, আযাবের ভাণ্ডার, রহমতের ভাণ্ডার, হিদায়াতের ভাণ্ডার, শক্তি-সামর্থের ভাণ্ডার, ইজ্জত-সম্মানের ভাণ্ডার বরং জল-স্থলের সকল ভাণ্ডার আল্লাহর কাছে-তাঁরই হাতে।
وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ ﴿২১﴾ (سورة الحجر : ২১)
'আর প্রতিটি বস্তুরই ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।'[৮১]
 আমরা যখন এগুলো জানলাম এবং মহান আল্লাহ তা'আলার কুদরত, তাঁর মহত্ব, তাঁর শক্তি-সামর্থ, তাঁর বড়ত্ব, তাঁর জ্ঞান, তাঁর ভাণ্ডারসমূহ, তাঁর রহমত ও তাঁর একত্ববাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম। তাহলে অন্তরাত্মা তাঁর দিকে অগ্রসর হবে। মন-মানসিকতা তাঁর ইবাদতের জন্যে প্রস্তুত থাকবে। অঙ্গ-প্রতঙ্গ তাঁর আনুগত্যের জন্যে আত্মসমর্পন করবে। তাঁর বড়ত্ব, মহত্ব, পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনায় জিহবাসমূহ নিবেদিত থাকবে। সুতরাং একমাত্র তাঁর কাছেই প্রার্থনা করবে। তাঁর নিকটই সাহায্য চাইবে। তাঁর উপরই ভরসা করবে। তাঁকেই ভয় করবে এবং কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে।
ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ ﴿১০২﴾ (سورة الأنعام : ১০২)
'তিনিই আল্লাহ তোমাদের রব। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তারই ইবাদত কর। আর তিনি প্রতিটি বস্তুর উরপ তত্ত্বাবধায়ক।'[৮২]

(তিন) আল্লাহ তাআলার উলূহিয়্যাতের (উপাস্যত্ব) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন :

 আমরা জানি ও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাআলাই এককভাবে সত্যিকার ইলাহ, এতে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনিই এককভাবে ইবাদতের উপযুক্ত-হকদার। তিনি নিখিল বিশ্বের পালনকর্তা, নিখিল বিশ্বের ইলাহ। আমরা তাঁর অনুমোদনকৃত ইবাদত পূর্ণ আনুগত্য-হীনতা, পরিপূর্ণ মুহব্বত-ভালবাসা এবং পূর্ণ ভক্তি শ্রদ্ধা সহকারে সম্পাদন করি।
 আমরা আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে জানি ও বিশ্বাস করি, যেমনি করে তিনি তাঁর রুববিয়্যাত (প্রভূত্ব)-এর ক্ষেত্রে এক-অদ্বিতীয়, এতে তাঁর কোন শরীক নেই। অনুরূপভাবে উলুহিয়্যাত (উপাস্যত্ব)-এর ক্ষেত্রেও তিনি এক-অদ্বিতীয়, এতেও তাঁর কোন শরীক নেই। সুতরাং আমরা একমাত্র তাঁর ইবাদত করি এবং তিনি ভিন্ন সকল মা'বুদের ইবাদত পরিহার করি।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ ﴿১৬৩﴾ (سورة البقرة: ১৬৩)
'আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।'[৮৩]
 আল্লাহ তাআলা ব্যতীত সকল মা'বুদের উলুহিয়্যাত (উপাসনা) বাতিল, তাই তাদের ইবাদতও বাতিল।
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ ﴿৬২﴾ (سورة الحج: ৬২)
'আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে আহবান করে অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান।'[৮৪]

(চার) আল্লাহ তাআলার নাম ও সিফাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন :

আসমা ও সিফাতের প্রতি ঈমানের অর্থ হচ্ছে,
আল্লাহর তাআলার নির্ধারিত নাম ও সিফাতগুলোকে বুঝা-অনুধাবন করা, হিফজ করা, সাথে সাথে এগুলো একমাত্র আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য মর্মে স্বীকৃতি প্রদান করা। এসবের মাধ্যমে তাঁর দাসত্ব প্রকাশ করা এবং তাদের চাহিদা মুতাবেক আমল করা। এতে করে আল্লাহ তাআলাকে বুঝা সম্ভব হবে। তাঁর প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হবে, এবং তাঁর ইবাদতের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে....
যেমন, তাঁর মহত্ব, বড়ত্ব, মহিমা, মর্যাদার গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর সম্মান ও তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধায় মন ভরে যাবে।
তাঁর শক্তিমত্তা, ক্ষমতা ও প্রতাপের গুণাবলী সম্পর্কে জানা থাকলে অন্তরাত্মা বিনয়, নম্রতা ও স্বীয় পালনকর্তার সামনে হীনতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
দয়া, বদান্যতা, উদারতা এবং দানশীলতার গুনাবলি সম্পর্কে জানা থাকলে আল্লাহর অনুগ্রহ-ইহসান, দান-দক্ষিনার প্রতি হৃদয়-মন আগ্রহান্বিত হবে।
জ্ঞান ও পরিবেষ্টন সম্পর্কীয় গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা বান্দাকে তার নড়া-চড়া, চলা ফেরা বরং সকল কাজে স্বীয় রবের নজরদারি (মুরাকাবা)-কে আবশ্যিক করে। অর্থাৎ বান্দা যখন সকল কিছুকে পরিবেষ্টনকারী আল্লাহ তাআলার জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে তখন যে কোন কাজ করার পূর্বে তার মনে জেগে উঠবে যে আল্লাহ তাআলা দেখছেন, ফলে মন্দকাজ হলে বিরত থাকবে। আর ভাল কাজ হলে পূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করবে।
এ সকল গুণাবলি (সম্পর্কীয় জ্ঞান) বান্দাকে নিজ পালনকর্তাকে ভালবাসা, তাঁর প্রতি উৎসাহ, তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপন, তার উপর তাওয়াক্কুল, এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে বাধ্য করে।
 যে সকল নাম ও গুণাবলি আল্লাহ তাআলা নিজের জন্যে অথবা তাঁর রাসূল তাঁর জন্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আমরাও সেগুলো প্রতিষ্ঠিত করি। সেসবের উপর ঈমান রাখি, সেগুলো যে অর্থ ও নিদর্শনকে প্রমাণ করে সবগুলোর উপরও ঈমান রাখি-হৃদয় মন থেকে বিশ্বাস করি। যেমন আমরা বিশ্বাস করি যে আল্লাহ "রাহীম"। এর অর্থ হচ্ছে তিনি দয়াশীল। আর এর প্রতিক্রিয়া হচ্ছে 'তিনি যাকে ইচ্ছা, দয়া করেন'। অবশিষ্ট সকল নামের ক্ষেত্রেও একই বক্তব্য প্রযোজ্য। আমরা এগুলো বিকৃত, ক্রিয়াশূণ্য, (রূপক অর্থে গ্রহণ, এবং উপমা স্থির করি না। বরং তাঁর বক্তব্য-
ليسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿১১﴾
"কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়, তিনি দেখেন ও শুনেন।" (সূরা : শুরা- ১১) এর আলোকে তাঁর শানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে প্রমাণ করি।

 আমরা জানি ও বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলার অনেক সুন্দর সুন্দর নাম ও অনেক সুমহান সিফাত আছে। এ গুলোর সাহায্যে আমরা তাঁকে ডেকে থাকি।
১। আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿১৮০﴾ (سورة الأعراف : ১৮০)
'আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যার তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।'[৮৫]
২।
وعن أبى هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : إن لله تسعة وتسعين اسما مائة إلا واحدا من أحصاها دخل الجنة. متفق عليه
'আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন,। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিরানব্বই -এক কম একশত- নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলো সংরক্ষন করবে (অর্থাৎ এগুলো সম্পর্কে জানবে, বুঝবে, বিশ্বাস করবে এবং এর চাহিদানুযায়ী আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[৮৬]

২১ আসমাউল হুসনার বিবরণ
আল্লাহ তাআলার নামসমূহ তাঁর গুণাবলির উৎকর্ষতার প্রমাণ বহন করে। এগুলো সিফাত থেকে উৎকলিত। সুতরাং এগুলো একদিকে নাম আবার সিফাতও। আর এভাবেই হয়েছে সুন্দরতম। আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলি বিষয়ক জ্ঞানই সর্বাপেক্ষা মর্যাদাসম্পন্ন ও জরুরী জ্ঞান।
আল্লাহ তাআলার অনেক নাম, যার সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। তার মধ্য হতে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কিছু নাম আমরা এখানে উল্লেখ করার প্রয়াস পাব-
الله (আল্লাহ): আর তিনি হচ্ছেন মাবূদ-উপাস্য, সমস্ত মাখলুকাত যাকে মা'বূদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সকলেই যাকে মহব্বত করে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে, অনুগত হয়, নিজেদের নানা প্রয়োজনে তাঁর শরণাপন্ন হয়।
الرحمن الرحيم (রহমান, রাহীম): যার রহমত ও অনুগ্রহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। 
الملك (মালিক): যিনি কুলমাখলূকাতের মালিক- বাদশাহ। 
المالك (মালেক) যিনি রাজা-প্রজাসহ পূর্ণ রাজত্বের মালিক। 
المليك (মালীক) স্বীয় রাজত্বে নিজ নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। তাঁর হাতেই রাজত্ব। যাকে ইচ্ছ্বা দান করেন। আবার যার থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নেন।
القدوس (কুদ্দুস): দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। পূর্ণতার গুণে গুণান্বিত।
الســلام (সালাম): যিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও বিপদাপদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও মুক্ত।
المؤمن (মু'মিন): যিনি সৃষ্টিকুলের উপর অন্যায়-অবিচার করবেন না মর্মে সৃষ্টিকুল নিরাপত্তা বোধ করে। শান্তি ও নিরাপত্তা সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর মাধ্যমে অনুগ্রহ করেন।
المهيمن (মুহাইমিন/ তত্ত্বাবধায়ক): স্বীয় সৃষ্টিকুল কর্তৃক সংঘটিত সকল বিষয় প্রত্যক্ষকারী। কোন কিছুই তাঁর কাছে লুকায়িত থাকে না।
العزيز (আযীয/ প্রবল পরাক্রান্ত) এমন সত্ত্বা যে, সকল প্রভাব, শক্তি ও মর্যাদা তাঁরই। এমন পরাক্রমশালী যিনি কখনো পরাভূত হন না, এমন শক্তিশালী যে, সকল সৃষ্টি তাঁর অনুগত্য মেনে নিয়েছে।
الجبار (জাব্বার/ প্রতাপশালী): স্বীয় সৃষ্টির উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী। নিজ ইচ্ছা বাস্তবায়নে তাদের পরাস্ত-পরাভূতকারী। মহা প্রতাপশালী, মর্যাদা ও বড়ত্বের অধিকারী, যিনি সর্বাবস্থায় নিজ বান্দাদের পর্যবেক্ষন করেন এবং তাদের অবস্থা ও অবস্থানকে সংশোধন ও উন্নত করেন।
المتكبر (মুতাকাব্বির/ পরম মহিমান্বিত): যিনি সৃষ্টির গুণাবলির উর্দ্ধে। মহান-কোন কিছুই তাঁর মত নয়। যিনি সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার মুক্ত।
الكبير (কাবীর/ বড়ত্বের অধিকারী-মহান): যিনি ব্যতীত সকল কিছু ছোট। নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে বড়ত্ব ও মহিমা একমাত্র তারই। গর্ব-অহঙ্কার করা একমাত্র তাঁকেই মানায়।
الخالق (খালেক/ সৃষ্টিকর্তা): পূর্ব দৃষ্টান্ত ব্যতীত যিনি সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা।
الخلاق (খাল্লাক) যিনি সৃষ্টি করেছেন, এবং আপন ক্ষমতায় সবকিছু সৃষ্টি করেন।
البارئ (বারী/ উদ্ভাবক): যিনি সৃষ্টিকুল- সৃষ্টি করেছেন। নিজ ক্ষমতায় তাদের অস্তিত্বে এনেছেন। এক সৃষ্টি থেকে অপর সৃষ্টিকে স্বাতন্ত্র দিয়েছেন। এবং প্রত্যেককে অপর থেকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন।
المصور (মুসাওবির/ রূপদাতা): যিনি নিজ সৃষ্টিকে ছোট-বড়, দীর্ঘ-খর্বসহ বিভিন্ন আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
الوهاب (ওয়াহ্‌হাব/ মহানদাতা): যিনি সার্বক্ষনিকভাবে বিভিন্ন নিয়ামত ও দান-দক্ষিনা চালিয়ে যান।
الرزاق (রায্‌যাক/ রিযিকদাতা): যার প্রদত্ত রিযিক কুল মাখলুকাতকে পরিবেষ্টন করে আছে।
الرازق (রাযিক/ জীবনোপকরণ ব্যবস্থাকারী): যিনি জীবনোপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং নিজ সৃষ্টি পর্যন্ত তা পৌঁছিয়ে থাকেন।
الغفور الغفار (গাফুর গাফ্‌ফার/ মহা ক্ষমাশীল): যিনি ক্ষমা, মার্জনা ও মাফ করায় প্রসিদ্ধ।
الغافر (গাফের/ পাপ গোপনকারী): নিজ বান্দার পাপারাজী গোপনকারী।
القاهر (কাহের/ পরাক্রমশালী): মহান, স্বীয় বান্দাদের উপর প্রবল-পরাক্রান্ত। সকল মাথা যার সামনে অবনত, সকল প্রভাবশালী যেখানে হীন-অপদস্থ।
القهار (কাহহার/ প্রবল পরাক্রান্ত): নিজ ইচ্ছার কাছে যিনি সকল মাখলূককে বশীভূত করে আছেন। তিনি পরাক্রান্ত আর তিনি ব্যতীত সবকিছু পরাভূত।
الفتاح (ফাত্তাহ/ কল্যাণের দ্বার উন্মুক্তকারী): যিনি স্বীয় বান্দাদের মাঝে হক ও ইনসাফপূর্ণ বিচার করেন। তাদের নিমিত্তে রহমত ও জীবনোপকরণের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করেন। মুমিন বান্দাদের সাহায্যকারী। গায়েব ও অদৃশ্যের (চাবি কাঠির) জ্ঞানের ক্ষেত্রে যিনি এক ও অদ্বিতীয়।
العليم (আলীম/ মহাজ্ঞানী-সর্বজ্ঞাত): যার নিকট কোন কিছুই অস্পষ্ট বা লুকায়িত নয়। যিনি গোপন, অস্পষ্ট, বাহির, ভিতর, কথা, কাজ, দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। গায়েব সম্পর্কে একমাত্র ও সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।
المجيد (মাজিদ/ মহামহিম): স্বীয় কর্মে যিনি মহিমান্বিত হয়েছেন। তাঁর সৃষ্টিকুল তাঁকে তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার কারণে মহিমান্বিত করেছে। সুতরাং তিনি আপন মর্যাদা, বড়ত্ব ও অনুগ্রহের কারণে প্রশংসিত।
الرب (রব/প্রতিপালক): একচ্ছত্র অধিপতি, কর্তৃত্বকারী, অভিভাবকদের প্রতিপালক, সৃষ্টিকুলের অধিপতি, যিনি নিজ সৃষ্টিকে প্রতিপালন করেন। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করেন, তিনি ভিন্ন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং তিনি ব্যতীত প্রকৃত অর্থে কোন প্রতিপালক নেই।
العظيم (আজীম/ মহামহিম-মর্যাদাশীল): স্বীয় রাজত্ব ও ক্ষমতায় বড়ত্ব ও মর্যাদার অধিকারী।
الواسع (ওয়াসে' / সর্বব্যাপী): যার রহমত- অনুগ্রহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে, এবং তাঁর রিযিক সকল সৃষ্টিকুল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। সীমাহীন দীর্ঘপরিধি বিশিষ্ট, বিস্তৃত রাজত্ব- কর্তৃত্ব ও মর্যাদার অধিকারী। ব্যাপক অনুগ্রহ-ইহসানের মালিক।
الكريم (কারীম/ দয়াময়- পরমদাতা): মহা মর্যাদার অধিকারী, অবিরাম- নিরবচ্ছিন্ন অধিক কল্যাণময়। যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত।
الأكرم (আল-আকরাম): যার দান ও অনুগ্রহ সকলকে শামিল করে আছে।
الودود (আল ওয়াদুদু/পরম স্নেহ পরায়ণ): যিনি ভালবাসেন যারা তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তাদের প্রশংসা করেন। তাদের ও অন্যদের প্রতি অনুগ্রহ করেন।
المقيت (আল্‌ মুক্বীত/ মহান খাদ্যদাতা): সকল বস্তু সংরক্ষণকারী, সকল বস্তু পর্যবেক্ষনকারী, সৃষ্টি কুলের খাদ্য-খোরাক দানকারী।
الشكور (শাকূর) যিনি নেক কাজ বহু গুনে বৃদ্ধি করে দেন, আর বদ কাজ মিটিয়ে দেন।
الشاكر (শাকের): যিনি সামান্য ইবাদতেই সন্তুষ্ট হয়ে যান। নেক কাজের পুরস্কার অনেক বড় করে দান করেন। বেশি বেশি নেয়ামত দান করেন এবং সামান্য শুকরগোযারিতেই খুশী হয়ে যান।
اللطيف (লতীফ/ সুক্ষ্ণ দর্শী-দয়ালু): যার নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। নিজ বান্দাদের প্রতি অধিক দানশীল-দয়ালু। এমনভাবে অনুগ্রহ করেন যে, তারা নিজেরাও জানে না। এমন সুক্ষ্ণ, যাকে কোন চক্ষু নাগাল পায় না।
الحليم (হালীম/ মহা ধৈর্যশীল-অতি সহিষ্ণু): যিনি স্বীয় বান্দাদের গুনাহর কারণে খুব তাড়াহুড়া করে শাস্তি প্রয়োগ করেন না। বরং সুযোগ দান করেন যাতে তারা তাওবা করে সংশোধন হয়ে যেতে পারে।
الخبير (খাবীর/ মহাবিজ্ঞ, সর্বজ্ঞ): যার নিকট স্বীয় সৃষ্টিকুলের ছোট-বড়, দৃশ্য-অদৃশ্য, স্থীর-চলমান, সবাক-নির্বাক সবকিছুই পরিস্কার কোন কিছুই গোপন ও অস্পষ্ট নয়।
الحفيظ (হাফীয/ মহা সংরক্ষণকারী): যিনি আপন সৃষ্টিকৃত সবকিছুকে সংরক্ষণ করেন। যার জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে।
الحافظ (হাফিয/ হিফাযত কারী) যিনি বান্দাদের আমল সংরক্ষণ করেন এবং নিজ ওলীদের পাপ-পঙ্কিলতায় পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেন।
الرقيب (রাক্বীব): মহা পর্যবেক্ষনকারী যিনি নিজ বান্দাদের সর্বাবস্থা পর্যবেক্ষন করেন। এবং সংরক্ষণকারী, যা সংরক্ষণ করেন তা থেকে অদৃশ্য হন না।
السميع (সামী'/ সর্বশ্রোতা): যিনি সব আওয়াজ শুনেন। যার শ্রবন সকল আওয়াজকে পরিবেষ্টন করে আছে। ভাষা, স্বর, আঙ্গিক, ধরণ ইত্যাদির বিভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁর শ্রবনে হেরফের হয় না এবং বিরতও করা যায় না। তাঁর নিকট গোপন- প্রকাশ্য, দূর-নিকটবর্তী সবই বরাবর। নিকট থেকে যে রূপ শুনেন দূর থেকেও সেরূপই শুনে।
البصير (বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা): যিনি সব কিছু দেখেন। বান্দার প্রয়োজন ও কর্ম, কে হেদায়াত পাওয়ার উপযুক্ত আর কে গোমরাহীর উপযুক্ত সব কিছু সম্পর্কে সম্যকজ্ঞাত। কোন কিছুই তার অগোচরে নয়। কোন কিছুই তাঁর দৃষ্টি ও ধারণার বাইরে যেতে পারে না।
العلي الأعلى المتعال (আল আলিয়ুল আ'লা আল মুতাআল/ সর্বোচ্চ, মহত্তম, মহিয়ান): উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, মহত্তের অধিকারী। জল, স্থল, আকাশ-যমীন বরং সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু তাঁর কর্তৃত্ব ও রাজত্বের অধীন। তিনি মহান, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই। উচ্চতর, তাঁর উপরে কেউ নেই। অতিমর্যাদা সম্পন্ন, তাঁর চেয়ে মর্যাদাবান আর কেউ নেই।
الحكيم (হাকীম/ প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী): যিনি প্রতিটি জিনিস প্রজ্ঞা ও ইনসাফের সাথে যথাস্থানে প্রয়োগ করেন। নিজ কর্ম-কথায় প্রজ্ঞাবান-বিচক্ষণ।
الحكم الحاكم (আল-হাকাম আল হাকিম/ শাসন কর্তা): ন্যায় ভিত্তিক শাসন কর্তা- যার নিকট ন্যায় পরায়ণতা নিরাপদ। সুতরাং তিনি অন্যায়- অবিচার করেন না। কারো প্রতি যুলুম করেন না।
القيــوم (আল কায়ূম/ অবিনশ্বর সত্তা): স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারো মুখাপেক্ষী নন। অপরকে প্রতিষ্ঠা ও অস্তিত্বে আনয়নকারী, সকল সৃষ্টিকুলের পরিচালনা, পর্যবেক্ষন ও ব্যবস্থাপনায় অবিরত। তাঁকে নিদ্রা ও তন্দ্রা আচ্ছন্ন স্পর্শ করতে পারে না।
الواحد الأحد (আল ওয়াহেদ আল আহাদ/ একক সত্ত্বা): যিনি সার্বিক উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণতায় এক ও অদ্বিতীয়, এতে তাঁর কোন শরীক নেই।
الحي (আল হাই/ চিরঞ্জীব): অবিনশ্বর-চিরঞ্জীব, ক্ষয়-বিনাশ-মৃত্যু যাকে স্পর্শ ও অতিক্রম করতে পারে না।
الحاسب الحسيب (হাসেব, হাসীব/ পরম পর্যাপ্ত): নিজ বান্দাদের জন্যে যথেষ্ট, উপযুক্ত। তিনি ব্যতীত তাদের উপায়-অবলম্বন নেই। বান্দাদের তত্ত্বাবধায়ক।
الشهيد (শাহীদ/ সর্বত্র উপস্থিত, মহাসাক্ষী): যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত। যাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। যিনি বান্দাদের কর্মানুযায়ী পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবেন।
القوي المتين (আল কাভিয়্যূ আল মাতীন/ সর্বশক্তিমান): পরিপূর্ণ শক্তিধর, যাকে অনেক শক্তিশালী বিজয়ীও পরাজিত করতে পারে না। পলায়নকারী তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারে না। মহা শক্তিমান, যার শক্তি বিচ্ছিন্ন ও নিঃশেষ হয় না।
الولي (আল-ওয়ালী/ সর্বময় কর্তা): পরিচালনাকারী।
المولى (আল-মাওলা/ মহা প্রভু): মুমিন বান্দাদের মুহাব্বতকারী, সাহায্য-সহায়তা দানকারী।
الحميد (আল-হামীদ/ প্রশংসিত): যিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন, এবং যিনি নিজ নাম, সিফাত, কর্ম, কথা, অনুগ্রহ, সিদ্ধান্ত, শরীয়ত প্রবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশংসিত।
الصمد (সামাদ/ অমুখাপেক্ষী) যিনি বড়ত্ব, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ও বদান্যতায় উৎকর্ষে পৌঁছে আছেন এবং যাবতীয় প্রয়োজনে যার আশ্রয় নেয়া হয়।
القدير القادر المقتدر (আল ক্বাদীর, কাদের, মুক্বতাদির/ মহাশক্তিধর ও সর্বশক্তিমান): পরিপূর্ণ শক্তির অধিকারী, যাকে কেউ পরাভূত করতে পারে না, এবং যাকে কোন কিছু এড়িয়ে যেতে পারে না এবং যার শক্তি ও ক্ষমতা পরিপূর্ণ চিরন্তন ও সর্বব্যাপী।
الوكيل (ওয়াকীল/ দায়িত্বশীল): সমগ্র সৃষ্টিকুলের সার্বিক বিষয়াবলীর পরিচালনা ও পর্যবেক্ষনকারী-কার্য নির্বাহী।
الكفيل (আল কাফীল/ জিম্মাদার- অভিভাবক): সকল বস্তুর সংরক্ষণকারী, প্রত্যেক ব্যক্তির রক্ষনাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণকারী, সমস্ত সৃষ্টি কুলের রিযিক ও তাদের সার্থ রক্ষার জিম্মাদার।
الغني (আল গনী/ বেনিয়ায, অমুখাপেক্ষী): যিনি সৃষ্টিকুল থেকে সম্পূর্ণরূপে অমুখাপেক্ষী, কারো নিকট কোনভাবেই তার কোন প্রয়োজন হয় না।
الحق المبين (আল হক্ব আল মুবীন/ সত্য-সুস্পষ্টকারী): যার অস্তিত্ব ও বিদ্যমানতায় বিন্দু পরিমান সন্দেহ-সংশয় নেই। যিনি সৃষ্টিকুলের নিকট অস্পষ্ট নন।
المبين যিনি সৃষ্টিকুলের নিকট দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে মুক্তি ও পরিত্রাণের পথ পরিস্কার করে দিয়েছেন।
النور (আল-নূর/ আলো): যিনি আকাশ-যমীন আলোকিত করেছেন এবং মুমিনদের অন্তরাত্মা স্বীয় মারেফাত ও ঈমান দ্বারা আলোকোজ্জল করেছেন।
ذوالجلال والإكرام (যুল জালালি ওয়াল ইকরাম/ সম্মান ও মহত্বের অধিকারী): যিনি এ অধিকার রাখেন যে, তাঁকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভয় করা হবে এবং এককভাবে তাঁরই প্রশংসা করা হবে। বড়ত্ব ও সম্মানের অধিকারী, দয়া ও অনুগ্রহশীল।
البر (আল-বারর/ ন্যায়পরায়ণ- দানশীল): নিজ বান্দাদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিশীল। তাদের অকাতরে দয়া-দক্ষিণা করেন।
التواب (আততাওয়াবু/ তওবা কবুলকারী-ক্ষমাশীল): যিনি তওবাকারীদের তওবা কবুল করেন। পাপীদের গুনাহ মার্জনা করেন, যিনি তাওবা সৃষ্টি করেছেন এবং নিজ বান্দাদের থেকে তা কবুলও করেছেন।
العفو (আল-আফুভু/ মার্জনাকারী): যার ক্ষমা ও মার্জনা বান্দা কর্তৃক সংঘটিত যাবতীয় গুনাহকে পরিবেষ্টন করে। বিশেষ করে বান্দা যদি তওবা ও ইস্তিগফার করে।
الرؤوف (আল-রউফ/ অতীব দয়ালু- অনুগ্রহশীল): অনুগ্রহ ও করুনাশীল, সর্বোচ্চ পর্যায়ের রহমত ও দয়াশীলকে রউফ বলা হয়।
الأول (আল-আউয়ালু/ আদি): অনাদি যার পূর্বে কিছু নেই। 
الآخر (আল-আখের) অনন্ত যার পরে কিছু নেই। 
الظاهر (আল-যাহের) যার উপর কিছু নেই। 
الباطن (আল-বাতেন) যাকে বাদ দিয়ে কিছু নেই।
الوارث (আল-ওয়ারেছ) : সৃষ্টিকুল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার পরও যিনি অবশিষ্ট থাকবেন। প্রত্যেক বস্তুর গন্তব্য ও প্রত্যাবর্তনস্থল তিনিই। চিরঞ্জীব যার মৃত্যু নেই।
المحيط (আল-মুহীতু/ পূর্নাঙ্গরূপে অবহিত-নিয়ন্ত্রণকারী) যার শক্তি-সামর্থ সমগ্র সৃষ্টিকুলকে পরিবেষ্টন করে আছে। তাঁকে এড়িয়ে চলা বা তাঁর থেকে ভেগে যাওয়ার শক্তি বা সুযোগ কারো নেই। তিনি জ্ঞানের দিক থেকে সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন। এবং গুনে গুনে সবকিছু সংরক্ষণ করেছেন।
القريب (আল কারীব/ অতি নিকটবর্তী): যিনি সকলের নিকটবর্তী। নিকটবর্তী তাঁকে আহবান কারীর এবং সকল প্রকার ইবাদত-আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য প্রত্যাশীর।
الهادي (আল-হাদী/ পথ প্রদর্শক): যিনি সৃষ্টিকুলকে তাদের কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শন করেন। স্বীয় বান্দাদের হেদায়াত (সঠিক পথ প্রদর্শন): কারী। তাদের জন্যে বাতিল- অসত্য থেকে হক্ব ও সত্যের পথ সুস্পষ্টকারী।
البديع (আল-বাদী/ নব আবিস্কর্তা- প্রবর্তক): যার কোন সদৃশ ও সমকক্ষ নেই, যিনি সকল সৃষ্টি পূর্ব দৃষ্টান্ত ব্যতীতই সৃজন করেছেন।
الفاطر (আল-ফাতির/ মহান সৃষ্টিকর্তা): যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুল সৃজন করেছেন। নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলকে অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। এদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
الكافي (আল-কাফী/ যথেষ্ট ও প্রয়োজনমুক্ত): যিনি বান্দাদের সকল প্রয়োজন যথেষ্ট করে দিয়েছেন। সকল প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে মিটিয়ে দিয়েছেন।
الغالب (আল-গালিব/ মহা প্রভাবশালী-বিজয়ী): চিরন্তন অপ্রতিরোধ্য-পরাক্রমশালী। প্রত্যেক তালিবের ক্ষেত্রে বিজয়ী- প্রাধান্য বিস্তারকারী। তাঁর সিদ্ধান্ত রদ করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি যা কার্যকর করেছেন তা বাধা দেয়ার কেউ নেই। তাঁর ফয়সালা ও সিদ্ধান্ত খণ্ডনকারী কেউ নেই। এবং তাঁর বিচার অগ্রাহ্যকারী কেউ নেই।
الناصر النصير (আল-নাসের আল নাসীর/ সাহয্য কারী, মহারক্ষক): যিনি নিজ রাসূলবৃন্দ ও তাদের অনুসারীদেরকে শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করেন। সাহায্য-সহায়তা একমাত্র তাঁর হাতেই। এতে তাঁর কোন শরীক নেই।
المستعان (আল-মুসতা'আন/ সাহায্য প্রার্থনাস্থল): যিনি কখনো কারো নিকট সাহায্য-সহযোগিতা চান না। বরং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। তাঁর নিকট শত্রু-মিত্র উভয়ই প্রার্থনা করে-সাহায্য চায়। এরা-ওরা সকলেই হাত বাড়ায়।
ذوالمعارج (যুলমাআরিজ/ সমুন্নত মর্তবার অধিকারী): যার দিকে রূহুল আমীন- জিবরাঈলসহ সকল ফেরেশতা উর্ধ্বগামী হয়। এবং যার দিকে উৎকৃষ্ট কথা ও নেক কর্মসমূহ উঠে।
ذوالطول (যুত তাওল/ মহা অনুগ্রহশীল, অতীব দানবীর): যিনি অনুগ্রহ, নিয়ামত, দান- দক্ষিণা স্বীয় সৃষ্টিকুলের নিমিত্তে ছড়িয়ে দেন। এগুলোর দার উন্মুক্ত কর দেন।
ذوالفضل (যুল ফাদলি/ সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী): যিনি সকল কিছুর মালিক ও কর্তৃত্বশীল, নানাবিধ নিয়ামাতরাজী দ্বারা বান্দাদের অনুগ্রহ করেন।
الرفيق (রাফীক/ সহানুভূতিশীল বন্ধু): যিনি দয়া, সহানুভূতি এবং সহানুভূতিশীলদের পছন্দ করেন, ভালবাসেন। বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু, অতিশয় মেহেরবান।
الجميل (আল-জামীল/ খুব সুন্দর): তিনি স্বীয় সত্তা, নাম, গুণাবলি ও কর্ম- সর্বক্ষেত্রে খুব সুন্দর এবং চমৎকার।
الطيب (আত্‌-তাইয়্যিবু/ ভাল-উৎকৃষ্ট): যাবতীয় দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত পবিত্র।
الشافي (আশ-শাফী/ আরোগ্য ও পরিত্রাণ দানকারী): সকল বিপদ-মুসীবত, রোগ-ব্যাধি হতে তিনিই আরোগ্য দান কারী, এতে তাঁর কোন শরীক নেই।
السبوح (আস-সুব্বুহ/ মহিমাময়): যিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি মুক্ত। সাত আকাশ, সাত যমীন ও এতদ্ভোয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সকলেই তাঁর গুণ-কীর্তন এবং মহিমা বর্ণনা করে। প্রত্যেক বস্তু তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে তাঁর প্রশংসা করে।
الوتر (আল-ভিতরু/ বেজোড়-একক): যার কোন শরীক, সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ নেই। তিনি বেজোড়। বেজোড় সংখ্যক আমল ও ইবাদত পছন্দ করেন।
الديان (আদ্‌-দাইয়ান/ মহা বিচারক): যিনি বান্দাদের হিসাব নিয়ে প্রতিদান প্রদান করেন। কিয়ামতের দিন যিনি বান্দাদের মাঝে বিচার-পরিচালনা করবেন।
المقدم والمؤخر (আল-মুকাদ্দিম-আল-মুআখখির/ অগ্রসর ও পিছনে আনয়নকারী) : যাকে ইচ্ছা অগ্রসর করেন আবার যাকে ইচ্ছা পিছিয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা উঠিয়ে দেন (সম্মানিত করেন) আবার যাকে ইচ্ছা নিচে নামিয়ে দেন। (অপমানিত করেন)
الحنان (আল-হান্নান/ অধিক দয়ালু): বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু, মহাঅনুগ্রহশীল। সৎকর্মশীলদের সম্মানিত করেন। পাপীদের ক্ষমা করেন।
المنان (আল-মান্নান/ অধিক উপকারী, পরম করুনাময়) : প্রার্থনা করার পূর্বেই যিনি অনুগ্রহ শুরু করে দেন। অধিক দাতা- যার দানের সীমা-পরিসীমা নেই। নিজ বান্দাদের সকল প্রকার দান ও অনুগ্রহ করেন। নানাবিধ নিয়ামত ও রিযিক প্রদান করার মাধ্যমে করুনা করেন।
القابض (আল-ক্বাবেয/ কবজাকারী): যিনি স্বীয় ইহসান-অনুগ্রহ, দান-দয়া কারো কারো কাছ থেকে ইচ্ছানুযায়ী গুটিয়ে নেন।
الباسط (আল-বাসেত/ বিস্তৃতকারী): যিনি স্বীয় অনুগ্রহ ছড়িয়ে দেন। নিজ বান্দাদের মাঝে যাকে ইচ্ছা প্রদত্ব রিযিক আরোও বিস্তৃত করে দেন। অর্থাৎ বাড়িয়ে দেন।
الحيي الستير (আল হায়িয়্যূ-আল সিত্তীরু/ পরম লজ্জাশীল-বান্দার দোষ গোপনকারী):
যিনি বান্দাদের মধ্যে লজ্জাবান ও পরদোষ গোপনকারীদের পছন্দ করেন-ভালবাসেন। তাদের দোষ-ত্রুটি ও অন্যায়-অপরাধ গোপন করে রাখেন।
الســيد (আস-সাইয়্যিদ/ মহান নেতা): যিনি নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, মর্যাদা, শক্তি-সামর্থ, বরং সকল গুণাবলিতে উৎকর্ষ সাধন করেছেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ে আরোহন করেছেন।
المحــسن (আল-মুহসিন/ মহান দাতা): যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে দয়া-অনুগ্রহ ও দানের মাঝে ডুবিয়ে রেখেছেন।

ঈমান বৃদ্ধি
মহান আল্লাহর উপর ঈমান, দ্বীনের মূলভিত্তি। তাঁর উপর, তাঁর নাম ও গুণাবলি, কর্মাবলি, ভাণ্ডারাদি, প্রতিশ্রুতি এবং তাঁর হুমকি ও ভীতিপ্রদর্শনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। যাবতীয় নেকআমল ও সর্ব প্রকার ইবাদত ভিত্তিশীল ও কবুল হওয়া নির্ভর করে উক্ত মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার উপর। আর যদি উক্ত ঈমান ও বিশ্বাস দুর্বল ও ত্রুটিযুক্ত হয়, তাহলে আমল ও ইবাদতও দুর্বল-নড়বড়ে হবে। ফলশ্রুতিতে পরিস্থিতি মারাত্মক খারাপ হয়ে যাবে।
আমাদের জীবনে উক্ত ঈমান প্রতিষ্ঠিত ও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে হলে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখতে হবে।
(এক) আমাদের জানা ও বিশ্বাস রাখা যে, পৃথিবীর দৃশ্যমান বা লুকায়িত, ছোট কিংবা বড় সকলকিছুর স্রষ্টা হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। আকাশসমূহের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। যমীন সমূহের সৃষ্টিকর্তা সে আল্লাহ তাআলাই। আরশে আজীমের সৃষ্টিকর্তাও আল্লাহ গ্রহ-নক্ষত্রের সৃষ্টিকর্তাও তিনিই। পাহাড়, সমুদ্রের স্রষ্টাও তিনিই। মানুষ, জীব-জন্তু, উদ্ভিত-তরুলতার স্রষ্টাও মহান আল্লাহ। জান্নাতের সৃষ্টিকর্তাও সে আল্লাহ তাআলাই। জাহান্নামের সৃষ্টিকর্তাও তিনিই।
اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ ﴿৬২﴾ (الزمر: ৬২)
আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।[৮৭]
আমরা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বলব-আলোচনা করব, শুনব, এগুলো নিয়ে গবেষণা করব এবং জাগতিক ও কুরআনী নিদর্শনাবলির দিকে চিন্তা ও শিক্ষাগ্রহণের দৃষ্টিতে লক্ষ্য করব। এতে আমাদের হৃদয়ে ঈমান প্রগাঢ় হয়ে বসবে, মজবুত হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন।
(১) আল্লাহ বলেন:
قُلِ انْظُرُوا مَاذَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا تُغْنِي الْآَيَاتُ وَالنُّذُرُ عَنْ قَوْمٍ لَا يُؤْمِنُونَ . سورة يونــس : ১০১)
বল, 'আসমানসমূহ ও যমীনে কী আছে তা তাকিয়ে দেখ। আর নির্দশনসমূহ ও সতর্ককারীগণ এমন কওমের কাজে আসে না, যারা ঈমান আনে না'।[৮৮]
(২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآَنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا . سورة محمد: ২৪)
তবে কি তারা কোরআন সম্বন্ধে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?[৮৯]
(৩) অন্যত্র ইরশাদ করেন:
وَإِذَا مَا أُنْزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيمَانًا فَأَمَّا الَّذِينَ آَمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ ﴿১২৪﴾ (سورة التوبة: ১২৪)
আর যখনই কোন সূরা নাযিল করা হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, 'এটি তোমাদের কার ঈমান বৃদ্ধি করল'? অতএব যারা মুমিন নিশ্চয় তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়।[৯০]
(দুই) আমাদের জানা ও বিশ্বাস করা প্রয়োজন যে, মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা এ বিশ্বজগত ও সৃষ্টিকুল সৃজন করেছেন এবং তাতে নিদর্শন ও প্রভাব রেখে দিয়েছেন। তিনি চক্ষু সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখে দিয়েছেন নিদর্শন, আর তা হচ্ছে দৃষ্টি শক্তি। কান সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে সৃজন করেছেন নিদর্শন, আর তা হচ্ছে শ্রুতি বা শ্রবন শক্তি। জিহবা সৃষ্টি করেছেন আর তাতে সৃষ্টি করেছেন নিদর্শন, আর সেটি হচ্ছে, কথা। সূর্য সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে সৃষ্টি করেছেন নিদর্শন, আর সেটি হচ্ছে আলো। অগ্নি সৃষ্টি করেছেন আর তাতে সৃজন করেছেন নিদর্শন, আর তা হচ্ছে দাহন। বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন, সাথে সৃষ্টি করেছেন নিদর্শন। সেটি হচ্ছে ফল। এরূপ সকল সৃষ্টিতেই কোন না কোন নিদর্শন রেখেছেন।
(তিন) আমাদের জানা ও বিশ্বাস করা যে, যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপর কর্তৃত্ব করেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন, তিনি হচ্ছেন একক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ। যার কোন সমকক্ষ ও অংশীদার নেই। আকাশসমূহ ও যমীনে যত সৃষ্টি আছে। ছোট কিংবা বড় প্রত্যেকেই আল্লাহর গোলাম ও তাঁর মুখাপেক্ষী। তারা নিজেরা নিজেদের উপকার, ক্ষতি কিংবা সাহায্যের ক্ষমতা রাখে না। নিজেদের জীবন, মরণ ও পুনরুত্থানের ক্ষমতাও রাখে না। আল্লাহ তাআলাই তাদের মালিক ও তাদের উপর কর্তৃত্বশীল। তারা সকলেই তাঁর মুখোপেক্ষী, তিনি তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রয়োজন মুক্ত। আল্লাহ তাআলা সমগ্র বিশ্বজগত পরিচালনা করেন এবং সৃষ্টিকুলের যাবতীয় বিষয়াদি পর্যবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রণ করেন। সুতরাং যিনি আকাশ ও যমীনে কর্তৃত্ব করেন। কর্তৃত্ব করেন পানি ও সমুদ্রে, অগ্নি ও বাতাসে, জীব ও উদ্ভিদে, গ্রহ-নক্ষত্র ও জড় পদার্থে, শাসক ও শাসিতের মাঝে, নেতা ও মন্ত্রীবর্গের মাঝে, ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে, দুর্বল ও শক্তিশালীদের মাঝে, তিনি হচ্ছেন এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ তাআলা।
আল্লাহ তাআলা স্বীয় শক্তি, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দ্বারা স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব ও পরিচালনা করেন।
কখনো কখনো এমনও হয় যে, কিছু সৃষ্টি করেন আর নিজ ক্ষমতায় তার নিদর্শন উঠিয়ে নেন। যেমন বহু চক্ষু পাওয়া যায় যা দেখে না, অনেক কান দেখা যায় যা শুনেনা, অনেক জিহবা আছে যা কথা বলতে পারে না, অনেক সমুদ্র আছে যা ডুবায় না, অনেক আগুন আছে যা দগ্ধ করে না। এসব (ব্যতিক্রম) আল্লাহ তাআলাই করেছেন। কারণ তিনিই সে সত্তা যিনি স্বীয় সৃষ্টিকুলে নিজ ইচ্ছানুযায়ী কর্তৃত্ব ও পরিচালনা করেন। তিনি ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই, তিনি অদ্বিতীয় মহা পরাক্রমশালী। সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
এমন অনেক হৃদয় আছে যেগুলো বস্তু বিশেষ দ্বারা ঐ বস্তুর স্রষ্টা থেকেও অধিক পরিমাণে প্রভাবিত হয়। তাই বস্তুর স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে বস্তুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। অথচ দায়িত্বশীলতার পরিচয় হচ্ছে, এ জ্ঞান ও অন্তরদৃষ্টির মাধ্যমে মাখলুক ছেড়ে খালেক কে মূল্যায়ন করা, তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দান করেছেন। অতএব আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করব না।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ ﴿৩১﴾ فَذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ فَأَنَّى تُصْرَفُونَ ﴿৩২﴾ (سورة يونس: ৩১-৩২)
বল, আসমান ও যমীন হতে কে তোমাদের রিযক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, 'আল্লাহ'। সুতরাং তুমি বল, 'তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?' অতএব তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব। অত:পর সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া কী থাকে? অতএব কোথায় তোমাদেরকে ফেরানো হচ্ছে?[৯১]
(চার) আমাদেরকে জানা ও বিশ্বাস করা যে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সকল বস্তুর ভাণ্ডার একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো নিকট নয়। খাবার, পানীয়, শষ্য-দানা, ফল-ফলাদি, পানি, বাতাস, পণ্য সামগ্রী, সমুদ্র, পাহাড়সহ যাবতীয় বস্তুর ভাণ্ডার আল্লাহর নিকট। সুতরাং আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিষপত্র আল্লাহর নিকটই তালাশ করব। তাঁর নিকটই প্রার্থনা করব। এবং অধিক পরিমাণে তাঁর ইবাদত-আনুগত্য করব। তিনিই সকল প্রয়োজন সম্পন্নকারী, প্রার্থনা মঞ্জুরকারী। তিনিই শ্রেষ্ঠ প্রার্থনার স্থল- সর্বোত্তম দাতা, তিনি যা দান করেন তা প্রতিরোধকারী কেউ নেই, যা নিষেধ করেন তা প্রদানকারী কেউ নেই।
(১) আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন :
وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ . (سورة الحجر: ২১)
আর প্রতিটি বস্তুরই ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।[৯২]
(২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ . (سورة المنافقون : ৭)
আর আসমানসমূহ ও যমীনের ধন-ভাণ্ডার তো আল্লাহরই, কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।[৯৩]

 আল্লাহ তাআলার কুদরত ও ক্ষমতা :
১. আল্লাহ তাআলা নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী। কখনো কখনো রিযিক প্রদান করেন আসবাব-উপকরনের মাধ্যমে, যেমন পানিকে ফসল-উদ্ভিদ উৎপন্নের কার্যকারণ বানিয়েছেন। স্ত্রী সঙ্গমকে বানিয়েছেন সন্তান জন্মদানের উপকরণ। আমরা বসবাস করছি দারুল আসবাবে তাই অনুমোদিত আসবাব গ্রহণ করব এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো উপর ভরসা করব না।
২. আবার কখনো কখনো উপকরণ ছাড়াই রিযিক পৌঁছিয়ে থাকেন। কোন বস্তুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হয়ে যাও, সে হয়ে যায়। যেমন মারইয়াম-কে বৃক্ষ বিহীন খাবার এবং পুরুষ (এর মিলন) বিহীন সন্তান দান করেছেন।
৩. আবার অনেক সময় স্বীয় ক্ষমতাকে আসবাব-উপকরণের বিপরীতে ব্যবহার করেন। যেমন নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালামের জন্যে আগুনকে শান্তি প্রদায়ক শীতল করে দিয়েছিলেন এবং নবী মূসা আলাইহিস সালামকে সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে ফেরআউন ও তার সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন এবং নবী ইউনুস আলাইহিস সালামকে মহা সমুদ্রের অভ্যন্তরে মাছের পেটের ভিতর বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে:
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ . (سورة يــس: ৮২)
তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, কোন কিছুকে তিনি যদি 'হও' বলতে চান, তখনই তা হয়ে যায়।[৯৪]

 বর্ণিত অবস্থা সৃষ্টিকুলের দিক বিবেচনা করে আর অবস্থা ও পরিস্থিতির বিবেচনায় :

১। আমরা জানি ও বিশ্বাস করি যে, মানব জীবনের সকল অবস্থা যেমন ধনাঢ্যতা ও দারিদ্র, সুস্থতা ও রোগ, প্রফুল্লতা ও বিষাদ, হাসি ও কান্না, সম্মান ও অবমাননা, জীবন ও মৃত্যু, নিরাপত্তা ও ভয়, শীত ও গরম, হিদায়াত ও গোমরাহী, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য বরং যাবতীয় অবস্থার স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তাআলা তিনিই এসব সৃষ্টি করেছেন।
২। আমরা জানি ও বিশ্বাস করি যে, এ সকল অবস্থা ও যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা যিনি করেন তিনি হচ্ছেন মহা ক্ষমতাধর আল্লাহ তাআলা। তিনি এসব অবস্থা ও পরিস্থিতি পরিবর্তন-পর্যবেক্ষন করেন। সুতরাং দারিদ্র, প্রাচুর্যে রূপান্তরিত হয় কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার নির্দেশেই। তাঁর নির্দেশেই কেবল রোগ-ব্যাধি, সুস্থতায় পরিবর্তিত হয়। তাঁর হুকুমেই কেবল অসম্মান সম্মানে, অবমাননা ইজ্জতে পরিবর্তিত হয়। তাঁর নির্দেশ ছাড়া হাসি, কান্নায় রূপান্তরিত হয় না। কোন জীবিত মৃত্যু বরণ করে না তাঁর অনুমোদন ব্যতীত। তাঁর নির্দেশ ব্যতীত শীত, গরমে রূপান্তরিত হয় না। গোমরাহী হিদায়াতে রূপান্তরিত হয় কেবলমাত্র তাঁর নির্দেশই। এবং এভাবেই... সুতরাং বিভিন্ন অবস্থার আগমন ঘটে তাঁর নির্দেশে, হ্রাস-বৃদ্ধি পায় তাঁরই নির্দেশে। স্থায়ী হয় তাঁর নির্দেশে এবং নিঃশেষও হয় তাঁরই নির্দেশে। সুতরাং আমাদের উচিত অবস্থার পরিবর্তন ও রূপান্তর তাঁর নিকট প্রার্থনা করা যিনি এর ক্ষমতা রাখেন। তবে অবশ্যই অনুমোদিত পন্থায় তাঁর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে।
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . (سورة آل عمران: ২৬)
বল, হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।[৯৫]
৩। আমরা জানি ও বিশ্বাস করি, ইত:পূর্বে আলোচিত সকল অবস্থা এবং এগুলো ছাড়াও যা আছে সব কিছুর ভাণ্ডার একমাত্র অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে, আল্লাহ তাআলা যদি সুস্থতা, প্রচুর্যসহ যাবতীয় নিয়ামত সকল মানুষকে তাদের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করেন তাহলে আল্লাহর ভাণ্ডার থেকে বিন্দু পরিমাণও কমবে না। মহাসমুদ্রে একটি সুঁই প্রবেশ করালে সুঁই যতটুকু পানি হ্রাস করে (আল্লাহর ভাণ্ডার থেকে সকল মানুষের চাহিদা পুরণ করলে) ঐ পরিমাণ কমতে পারে। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি অমুখাপেক্ষী, সর্বাধিক প্রশংসিত।
عن أبي ذر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم فيما روى عن الله تبارك وتعالى أنه قال:
সাহাবী আবু যর রা. নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ আল্লাহ তাআলা থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ বলেন :
يا عبادي! إني حرمت الظلم على نفسي وجعلته بينكم محرما فلا تظالموا.
يا عبادي! كلكم ضال إلا من هديته فاستهدوني أهدكم.
يا عبادي! كلكم جائع إلا من أطعمته. فاستطعموني أطعمكم.
يا عبادي! كلكم عار إلا من كسوته فاستكسوني أكسكم.
يا عبادي! إنكم تخطئون بالليـل والنهار وأنا أغفر الذنوب جميعا، فاستغفروني أغفرلكم.
يا عبادي! إنكم لن تبلغوا ضري فتضروني، ولن تبلغوا نفعي فتنفعوني.
يا عبادي! لو ان أولكم وآخركم وإنسكم وجنكم كانوأ على أتقى قلب رجل واحد منكم. مازاد ذلك فى ملكي شيئا.
يا عبادي! لو أن أولكم وآخركم وإنسكم وجنكم كانوأ على أفجر قلب رجل واحد. ما نقص ذلك من ملكي شيئا.
يا عبادي! لو أن أولكم وآخركم وإنسكم وجنكم قاموا في صعيد واحد فسألوني، فأعطيت كل إنســان مسألته ما نقص ذالك مما عندي إلا كما ينقص المخيط إذا أدخل البحر.
يا عبادي! إنما هي أعمالكم أحصيها لكم ثم أوفيكم إياها. فمن وجد خيرا فليحمد الله ومن وجد غير ذلك فلا يلومن إلا نفسه. أخرجه مسلم.
হে আমার বান্দাগণ, আমি আমার নিজের উপর অন্যায় ও যুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তাকে হারাম বলে সাব্যস্ত করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করোনা।
হে আমার বান্দা সকল, আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ব্যতীত তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। তাই আমার নিকট হেদায়াত প্রার্থনা করো আমি হেদায়াত দান করব।
হে বান্দা সকল, আমি যাকে খাবার দিয়েছি সে ব্যতীত তোমরা সকলেই অভুক্ত-ক্ষুধার্ত। সুতরাং আমার নিকট খাবার চাও আমি খাবার (খাওয়াবো) দান করব।
হে বান্দা সকল, আমি যাকে বস্ত্র দান করেছি (পরিধান করিয়েছি) সে ব্যতীত তোমরা সকলেই বিবস্ত্র-উলঙ্গ। আমার নিকট পরিধেয় প্রার্থনা কর আমি বস্ত্র প্রদান করব।
হে আমার বান্দা সকল, তোমরা দিবা-রাত্রি অপরাধ কর আর আমি সকল পাপ মার্জনা করি। আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি ক্ষমা করে দেব।
হে আমার বান্দা সকল, তোমরা কস্মিন কালেও আমার ক্ষতি পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না যে আমার ক্ষতি করবে, অনুরূপভাবে কস্মিন কালেও আমার উপকার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না যে আমার উপকার করবে।
হে আমার বান্দা সকল, যদি তোমাদের বিগত ও অনাগত, তোমাদের মানব ও জিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাও, (এটি) আমার রাজত্বে বিন্দু পরিমাণও বৃদ্ধি করবে না।
হে আমার বান্দা সকল, যদি তোমাদের বিগত ও অনাগত, তোমাদের মানব ও জিন সকলেই তোমাদের সর্বাধিক পাপী ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাও। এটি আমার রাজত্ব থেকে বিন্দু পরিমাণও কমাতে পারবে না।
হে আমার বান্দা সকল, যদি তোমাদের (পৃথিবীর শুরু থেকে অদ্যাবধি) আগত এবং (কিয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে) অনাগত, তোমাদের মানব ও জিন সকলে এক ময়দানে মিলিত হয়ে প্রত্যেকেই (নিজ নিজ চাহিদা মত) আমার নিকট প্রার্থনা করে, আর আমি প্রত্যেকেরই প্রার্থিত বস্তু প্রদান করি। তাহলে এটি আমার ভাণ্ডারে যা আছে তার থেকে একটুও কমাবে না। হ্যাঁ (যদি কমায় তাহলে) মহা সমুদ্রে সুঁই প্রবেশ করালে ঐ সুঁই যতটুকু পানি হ্রাস করে এতটুকু কমাতে পারে।
হে আমার বান্দা সকল, নিশ্চয়ই এটি তোমাদের আমল বৈ নয়, যা আমি তোমাদের উপকারার্থে সংরক্ষণ করে রেখেছি। অতঃপর এর বিনিময় আমি তোমাদের পরিপূর্ণরূপে প্রদান করব। সুতরাং যে কল্যাণ পেল সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে আর যে এর বিপরীত পেল সে যেন শুধুমাত্র নিজেকেই ধিককার দেয়- তিরস্কার করে।[৯৬]
 যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী আল্লাহ তাআলার নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন করবে। সে ব্যক্তি ধনী হোক বা দরিদ্র আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং নিজ ভাণ্ডার হতে দান করবেন। তার পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য করবেন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হিফাযত করবেন এবং ঈমানের বদৌলতে তাকে সম্মানিত করবেন। চাই তার নিকট সম্মানের আসবাব-উপকরণ থাকুক যেমন আবু বকর, ওমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম বা না থাকুক যেমন বেলাল, আম্মার ও সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ।
আর যারা ঈমান আনবে না আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ইজ্জত-সম্মানের উপকরণ
-রাজত্ব, ক্ষমতা, প্রাচুর্য ইত্যাদি- থাকা সত্ত্বেও অপমান-অপদস্ত করবেন।
যেমন অপমানিত করেছেন, ফিরআউন, কারূন, হামান প্রমুখকে।
আর যদি তাদের নিকট অপমান-অপদস্থের উপকরণ থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তাদের অপমানিত করবেন। যেমন দরিদ্র মুশরিকগণ-কে করে থাকেন।
 আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে ঈমান, নেক আমাল এবং একমাত্র পালনকর্তা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন। অধিক সম্পদ উপার্জন, সমৃদ্ধি অর্জন এবং প্রবৃত্তির চাহিদা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি। মানুষ যদি নিজেকে রবের ইবাদত বাদ দিয়ে এসব কাজে ব্যস্ত রাখে তাহলে আল্লাহ তাআলা এসব তাদের উপর চাপিয়ে দেবেন (অর্থাৎ এসকল কাজ তার উপর এমনভাবে চেপে বসবে যে, অন্য কাজ করার আর ফুরসত পাবে না আর নানা পেরেশানীরও অন্ত থাকবে না। এক পর্যায়ে এগুলোকে আযাব মনে হবে) এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তার দুঃখ-কষ্ট, ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ বানিয়ে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ بِهَا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ ﴿৫৫﴾ (سورة التوبة : ৫৫)
সুতরাং তোমাকে যেন তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি বিস্মিত না করে, আল্লাহ এর দ্বারা কেবল তাদের আযাব দিতে চান দুনিয়ার জীবনে এবং তাদের জান বের হবে কাফের অবস্থায়।[৯৭]

 সফলতা, কল্যাণ ও উন্নতির উপকরণ ও মাধ্যম :
মহান আল্লাহ কল্যাণ ও উন্নতির চাবি-কাঠি ও উপায়-উপকরণ ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল মানুষকেই দান করেছেন। আর যাতে কল্যাণ ও সফলতা নেই যেমন ধন-সম্পদ, ক্ষমতা- প্রভাব-খ্যাতি ইত্যাদি (এসব বস্তু) কাউকে দিয়েছেন, কাউকে দেননি। ঈমান ও নেকআমলই হচ্ছে দুনিয়া-আখিরাতে সফল ও কামিয়াব হওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এ অধিকার ও সুযোগ সকলকেই দান করা হয়েছে। অনুরূপভাবে ঈমানের স্থান অন্তর সকলের ভেতরই বিদ্যমান। তদ্রুপ নেকআমলের জায়গা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সকলের অধীন। সুতরাং যে ব্যক্তির অন্তরে ঈমান আছে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে নেক আমল প্রকাশ পেয়েছে সে ইহকাল-পরকাল উভয় জগতে সফল ও কামিয়াব হয়ে গিয়েছে। এছাড়া সকলেই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত।
১. ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে কল্যাণ ও সফলতা একমাত্র ঈমান ও নেকআমলের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলার নিকট মানুষের মূল্য ও মর্যাদা তার ঈমান ও নেকআমলের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে নিরুপিত হয়। (যার ঈমান মজবুত নেকআমল বেশি তার মূল্য-মর্যাদা বেশি। যার ঈমান দুর্বল নেকআমলের সংখ্যাও কম তার মূল্যও তুলনা মূলক কম) এ মূল্য ও মর্যাদার ভিত্তি হচ্ছে ঈমান ও নেক আমল। ধন-সম্পদ, ক্ষমতা-প্রভাব, ও পদমর্যাদা নয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতি অতিবাহিত হয়েছে যারা মান-মর্যাদা ও মূল্যায়নের সঠিক মাধ্যম ঈমান ও নেকআমলকে গ্রহণ না করে অন্যান্য বস্তুকে মূল্যায়ন ও মর্যাদার মাধ্যম বলে বিশ্বাস করেছে। তাদের কেউ কেউ কল্যাণ ও কামিয়াবী কর্তৃত্ব ও রাজত্বের মধ্যে নিহিত বলে বিশ্বাস করেছে। যেমন নমরূদ ও ফিরআউন।
আবার কেউ বিশ্বাস করেছে এগুলো শক্তির মধ্যে নিহিত, যেমন আদ জাতি।
আবার কেউ মনে করেছে ব্যবসার মধ্যে, যেমন শুআইব আলাইহিস সালামের জাতি।
কেউ ধারণা করেছে কৃষি কাজের মধ্যে, যেমন কওমে সাবা আবার কেউ বিশ্বাস করেছে শিল্প ও কারিগরির মধ্যে, যেমন সামূদ জাতি আর কেউ কেউ ধারণা করেছে ধন-সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মধ্যে যেমন কারূন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেসব জাতির নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করার জন্য। এবং এ বিষয়ে বুঝানোর জন্য যে, কল্যাণ ও সফলতা এসব কিছুতে নেই। কল্যাণ আছে একমাত্র ঈমান ও নেক আমলের মধ্যে।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন :-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ ﴿৫২﴾ (سورة النور: ৫২)
আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফলকাম।[৯৮]
(২) আরো এরশাদ হচ্ছে :
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ﴿৩﴾ وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآَخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ ﴿৪﴾ أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿৫﴾ (سورة البقرة: ৩-৫)
যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হযেছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে। আর আখেরাতের প্রতি তারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ হতে হিদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।[৯৯]
২. তারা (সেসব জাতি) যখন রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করল ও স্বীয় কুফরীর উপর অটল রইল আর নিজেদের কাছে থাকা জিনিস দ্বারা প্রতারিত হল। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিলেন। আর নবী রাসূল ও তাঁদের অনুসারীদের রক্ষা করলেন। শত্রুর বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য করলেন।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ﴿৪০﴾ (سورة العنكبوت: ৪০)
অত:পর এদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে আমি পাকড়াও করেছিলাম; তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে তাদের উপর যুলুম করবেন বরং তারা নিজেরা নিজেদের উপর যুলুম করত।[১০০]
(২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :-
فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ ﴿৬৬﴾ وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ ﴿৬৭﴾ (سورة هود : ৬৬-৬৭)
অতঃপর যখন আমার আদেশ এল, তখন সালেহ ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা নাজাত দিলাম এবং (নাজাত দিলাম) সেই দিনের লাঞ্ছনা থেকে। নিশ্চয় তোমার রবই শক্তিশালী, পরাক্রমশালী। আর যারা যুলুম করেছিল, বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজেদের গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল।[১০১]

 ঈমানদারদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় শ্রেণী ভিন্নতা:

(১) সৃষ্টিকুলের ঈমান বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট।
১- ফেরেশতাকুলের ঈমান স্থির-অবিচল। বৃদ্ধিও পায় না আবার হ্রাসও পায় না। তারা মহান আল্লাহ তাআলার কোন নির্দেশই অমান্য করে না। তাদের যা বলা হয় তাই তারা বাস্তবায়ন করে। তারা সকলে একই শ্রেণীভুক্ত নয় বরং তাঁদের মধ্যে স্তর ও মর্যাদায় বিভিন্নতা রয়েছে।
২-নবী ও রাসূলগণের (আলাইহিস সালাম) ঈমান শুধু বৃদ্ধিই পায়- হ্রাস পায় না। কারণ আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে তাঁদের ধারণা ও জ্ঞান পরিপূর্ণ ও পরিস্কার। তারাও পরস্পর বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট, সকলে একই স্তরের নন।
৩-সাধারণ মুসলমানদের ঈমান, ইবাদত-আনুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় আর পাপ ও অবাধ্যতার কারণে হ্রাস পায়। ঈমানের ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন স্তর ও শ্রেণীভুক্ত। আর ঈমানও বিভিন্ন স্তর বিশিষ্ট।
প্রথম শ্রেণীর ঈমান একজন মুসলমানকে এমনভাবে তৈরী করে এবং এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে দেয় যে, সে সদা-সর্বদা আল্লাহ তাআলার ইবাদত আদায়ে সচেষ্ট থাকে। আন্তরিকতাপূর্ণ তৎপরতার সাথে সব সময় আনুগত্য প্রকাশ করে। ইবাদতের মাধ্যমে মজা পায় এবং সর্ব প্রকার ইবাদত সর্বাত্মক সংরক্ষণ করে। তার সমপর্যায় বা উপরস্থ লোকদের সাথে উন্নত আচরণ অব্যহত রাখার জন্যে আরো মজবুত ঈমানের প্রয়োজন যা তাকে নিজ ও অন্যের উপর অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত রাখবে। আর নিজ থেকে নিম্ন পর্যায়ের লোকদের সাথে যেমন রাজা- প্রজাদের সাথে, পরিবারের প্রধান- তার অধীনস্থদের সাথে, স্বামী- স্ত্রীর সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যেও আরো মজবুত ঈমানের প্রয়োজন যা তাকে নিম্নশ্রেণীর লোকদের উপর যুলুম থেকে বাধা প্রদান করবে। যখনই ঈমান বৃদ্ধি পাবে ইয়াক্বীন ও নেকআমলও বৃদ্ধি পাবে। আর বান্দা আল্লাহর হক ও অপরাপর বান্দাদের হক আদায়ে যারপরনাই যত্নবান থাকবে। সে হবে সৃষ্টি ও স্রষ্টার সাথে সদাচরণ ও উত্তম আখলাক প্রদর্শনে অনুকরণীয় নমুনা। এ পর্যায়ের ঈমানবিশিষ্ট ব্যক্তিরা হচ্ছেন দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। এটিই হচ্ছে ইহকাল ও পরকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মর্যাদা।

(২) প্রতিটি মানুষই চলমান, কেউই থেমে নেই। হয়ত উর্ধ্বপানে অথবা নীচের দিকে, হয়ত সম্মুখপানে কিংবা পেছনের দিকে। মানব প্রকৃতি ও শরীয়ত; কোনটিতেই থেমে থাকার কোন বিধান নেই। অতএব মানুষ বলতেই, সে সার্বক্ষনিক কোন না কোন পর্যায় দ্রুততার সাথে অতিক্রম করছে। অগ্রসর হচ্ছে হয়ত জান্নাত পানে অথবা জাহান্নামের দিকে। কেউ দ্রুতগামী, কেউ ধীর গতিতে। কেউ অগ্রসরমান কেউ পিছনে পড়েছে। চলার রাস্তায় কেউ দাঁড়িয়ে নেই; সবাই চলমান। বিভিন্নতা ও ব্যতিক্রম শুধুমাত্র চলার দিক এবং গতির দ্রুততা ও মন্থরতার ক্ষেত্রে।
সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে জান্নাত পানে অগ্রসর হচ্ছে না, অবশ্যই সে কুফর ও বদআমলের কারণে জাহান্নামের দিকে পশ্চাদ্বর্তী হচ্ছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :-
نَذِيرًا لِلْبَشَرِ ﴿৩৬﴾ لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ ﴿৩৭﴾ (سورة المدثر: ৩৬-৩৭)
মানুষের জন্য সতর্ককারীস্বরূপ। তোমাদের মধ্যে যে চায় অগ্রসর হতে অথবা পিছিয়ে থাকতে, তার জন্য।[১০২]

(৩) ঈমানের অবস্থার ভিত্তিতে ঈমানদারদের মাঝে বড় ধরনের তারতম্য আছে। সুতরাং নবী ও রাসূলগণের ঈমান অন্যদের ঈমানের মত নয়। সাহাবাদের ঈমান অন্যদের ঈমানের মত নয়। নেককার মুমিনদের ঈমান, ফাসেক-পাপিষ্ঠদের ঈমানের মত নয়। এ তারতম্য ও ব্যবধান নির্ণিত হয় অন্তরে আল্লাহ তাআলা, তাঁর নাম ও গুণাবলি, তাঁর কর্ম, এবং বান্দাদের জন্যে তাঁর বিধিত বিষয়াদি সম্পর্কে ধারনা এবং তাঁর ভয় ও তাকওয়ার পরিমাণ অনুপাতে।
(যার অন্তরে এসব বিষয়ে ধারণা ও আল্লাহর তাকওয়া বেশি তার ঈমানের মানও সে অনুপাতে বেশি আর যার ধারণা কম তার ঈমানের মানও সে অনুপাতে কম এবং এভাবে...)
لا إله إلا الله ধারনকারীদের অন্তরে لا إله إلا الله - এর নূরের ব্যবধান একমাত্র আল্লাহ তাআলাই পরিমাপ করতে পারেন। তিনি ব্যতীত এ হিসাব আর কেউ জানে না, জানতে পারে না।

(৪) সৃষ্টিকুলের মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে যাদের ধারনা সবচে বেশি তারাই তাঁকে সর্বাধিক মুহাব্বত করেন। এ কারণেই নবী- রাসূলগণ মানুষের মধ্যে আল্লাহ তাআলাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন এবং সম্মান করতেন। (সম্মান প্রদর্শন ও ভালবাসার ক্ষেত্রে তাঁরাই ছিলেন মানবশ্রেষ্ঠ। কারণ আল্লাহ সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান ছিল সবদিক থেকে পরিপূর্ণ)
আল্লাহ তাআলাকে তাঁর সত্ত্বা, অনুগ্রহ, সৌন্দর্য ও মহত্বের কারণে ভালবাসা হচ্ছে ইবাদতের মূল উৎস। যখনই ভালবাসা প্রগাঢ় ও শক্তিশালী হবে ইবাদত-আনুগত্যও পরিপূর্ণ হবে। সম্মান প্রদর্শন হবে পূর্ণতাসম্পন্ন আর আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব হবে পূর্ণাঙ্গতর।

ঈমানের উপর আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুতি

 আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে ইহকাল ও পরকালে বিভিন্ন পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

(ক) ইহকালীন জীবনের কতিপয় প্রতিশ্রুতি:
(১) সফলতা।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
قَدْ أَفلَحَ الْمؤْمِنُوْنْ. (سورة المؤمنون : ১)
মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে।[১০৩]
(২) হেদায়াত বা সৎপথ প্রাপ্তি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِنَّ اللَّهَ لَهَادِ الَّذِينَ آَمَنُوا إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ﴿৫৪﴾. (سورة الحج: ৫৪)
আর যারা ঈমান এনেছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে সরল পথ প্রদর্শনকারী।[১০৪]
(৩) সাহায্য।
ইরশাদ হচ্ছে,
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ ﴿৪৭﴾ (سورة الروم : ৪৭)
আর মুমিনদেরকে সাহায্য করাতো আমার কর্তব্য।[১০৫]
(৪) ইজ্জত ও মর্যাদা।
আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ (سورة المنافقون: ৮)
ইজ্জত তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদেরই।[১০৬]
(৫)পৃথিবীতে খেলাফত দান তথা শাসন কর্তৃত্ব প্রদান ও প্রতিষ্ঠিত করণ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا (سورة النور : ৫৫)
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনে শাসন কর্তৃত্ব (খেলাফত) প্রদান করবেন। যেমন তিনি শাসন কর্তৃত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।[১০৭]
(৬) তাদের পক্ষ থেকে (শত্রুদেরকে) প্রতিরোধ করে তাদের রক্ষা করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন।
إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آَمَنُوا (سورة الحج: ৩৮)
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের পক্ষে প্রতিরোধ করেন।[১০৮]
(৭) শান্তি ও নিরাপত্তা।
আল্লাহ বলেন :
الَّذِينَ آَمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ ﴿৮২﴾ (سورة الأنعام : ৮২)
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনিম তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।[১০৯]
(৮) মুক্তি।
আল্লাহ বলেন :
ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آَمَنُوا كَذَلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنْجِ الْمُؤْمِنِينَ ﴿১০৩﴾ (سورة يونس: ১০৩)
তারপর আমি নাজাত (মুক্তি) দেই আমার রাসূলদেরকে এবং তাদেরকেও যারা ঈমান এনেছে। এটা আমার দায়িত্ব যে, মুমিনদের নাজাত দেই।[১১০]
(৯) উত্তম জীবন।
আল্লাহ বলেন :
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿৯৭﴾ (سورة النحل: ৯৭)
যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।[১১১]
(১০) তাদের উপর কাফেরদের চাপিয়ে না দেয়া কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কাফেরদের কর্তৃত্ব প্রদান না করার অঙ্গীকার।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا ﴿১৪১﴾ (سورة النساء: ১৪১)
আর আল্লাহ কখনো মুমিনদের বিপক্ষে কাফিরদের জন্য পথ (কর্তৃত্ব) রাখবেন না।[১১২]
(১১) অনেক কল্যাণ ও বরকত অর্জন হওয়া।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿৯৬﴾ (سورة الأعراف : ৯৬)
আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অত:পর তারা যা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।[১১৩]
(১২) আল্লাহ তাআলার বিশেষ সাহচর্য লাভ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ ﴿১৯﴾ (سورة ألأنفال : ১৯)
আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের সাথে আছেন।[১১৪]

(খ) পরকালীন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু প্রতিশ্রুতি।
(১) মুমিনদের জান্নাতে প্রবেশ, সেখানে অনন্তকাল থাকা এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿৭২﴾ (سورة التوبة : ৭২)
আল্লাহ মু'মিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিয়েছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই মহাসফলতা।[১১৫]
(২) আল্লাহ তাআলাকে দর্শনের প্রতিশ্রুতি।
আল্লাহ বলেন :
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ ﴿২২﴾ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ﴿২৩﴾ (سورة القيامة : ২২-২৩)
সেদিন কতক মুখমন্ডল হবে হাস্যোজ্জ্বল। তাদের রবের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপকারী।[১১৬]

 মুমিনদের জন্য ইহকালীন জীবনে আল্লাহর দেয়া প্রতিশ্রুতিসমূহের অধিকাংশই বর্তমানে বেশিরভাগ মুসলমানদের জীবনে অনুপস্থিত। এটি তাদের ঈমানের দুর্বলতার কথাই প্রমাণ করছে। সুতরাং প্রতিশ্রুত নিয়ামতের উপস্থিতি কাম্য হলে বর্তমান ঈমানকে আরো মজবুত করে কাংক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প রাস্তা নেই। তাতেই আমরা ঈমানের উপর দেয়া অঙ্গীকারাবলি আমাদের পার্থিক জীবনে দেখতে পাব। আর তার সহজ উপায় হচ্ছে আমাদের ঈমান ও আমলসমূহকে নবী ও সাহাবাদের ঈমান ও আমলসমূহের সদৃশ করে তোলা।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَإِنْ آَمَنُوا بِمِثْلِ مَا آَمَنْتُمْ بِهِ فَقَدِ اهْتَدَوْا وَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿১৩৭﴾ (سورة البقرة : ১৩৭)
অতএব যদি তারা ঈমান আনে, তোমরা যেরূপে তার প্রতি ঈমান এনেছ, তবে অবশ্যই তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা বিমুখ হয় তাহলে তারা রয়েছে কেবল বিরোধিতায়, তাই তাদের বিপক্ষে তোমার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।[১১৭]
(২) আল্লাহ আরও বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا آَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿১৩৬﴾ (سورة النساء : ১৩৬)
হে মুমনিগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তার রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে।[১১৮]
(৩) আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ ﴿২০৮﴾ (سورة البقرة : ২০৮)
হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।[১১৯]

 ইবাদত বিধিত করণের তৎপর্য
মহান আল্লাহর নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন এবং নিষেধাবলি বর্জন দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তিশীল।
(এক) আল্লাহ তাআলার উপর পরিপূর্ণ ঈমান।
(দুই) অন্তরে সার্বক্ষনিক রাজাধিরাজ মহান স্রষ্টার মর্যাদা ও বড়ত্বের চিন্তা ক্রিয়াশীল রাখা। আর এ ভাবনা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমেই মনে উদয় হয়।
মহান আল্লাহ মানবান্তরে এ চিন্তা-ভাবনাকে অব্যাহত রাখা এবং এ বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যেই নিজ বান্দাদের জন্য পূন:পুনিকভাবে উপদেশ দানকারী একটি স্মারকের প্রবর্তন করেছেন আর সে স্মারকটিই হচ্ছে "ইবাদত"। যা বার বার সংঘটিত হবে এবং প্রতিবারই মহান স্রষ্টার বড়ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
যখন ঈমান বৃদ্ধি পাবে ও শক্তিশালী হবে তখন আমলও বাড়বে এবং শক্তিশালী হবে।
অতঃপর ইহকাল-পরকাল-উভয় জগত-এর কল্যাণ লাভের মাধ্যমে সফল হওয়ার সাথে সাথে যাবতীয় পরিস্থিতি কল্যাণময় হবে। আর এর অন্যথা হলে ফলাফল ও বিপরীত হবে।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا ﴿৪১﴾ وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا ﴿৪২﴾ (سورة الأحزاب : ৪১-৪২)
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণ স্মরণ কর। আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।[১২০]
(২) আল্লাহ আরও বলেন :
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آَمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿৯৬﴾ (سورة الأعراف : ৯৬)
আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অত:পর তারা যা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।[১২১]

২- ফেরেশতাকুলের প্রতি ঈমান

 ঈমান বিল মালাইকার অর্থ হচ্ছে,
অন্তরে এমন দৃঢ়বিশ্বাস রাখা যে, মহান আল্লাহর অনেক ফেরেশতা রয়েছেন। তাঁদের সবার প্রতি আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি, যাদের নাম আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন, যেমন জিবরীল প্রমুখ তাদের প্রতি নির্দিষ্টভাবে। আর যাদের নাম উল্লেখ করেননি তাদের প্রতি সামগ্রিকভাবে। এবং এ সকল ফেরেশতাদের কর্ম ও গুণাবলি সম্বন্ধে আমরা যতটুকু জেনেছি সবই বিশ্বাস করি।
 পদ মর্যাদর দিক থেকে তাঁদের অবস্থান :
তাঁরা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বান্দা, সর্বোতভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-আনুগত্য সম্পাদনকারী, অবাধ্যতার চি‎হ্নমাত্র নেই তাদের মাঝে। তাদের ভেতর রুবুবিয়্যাত (প্রভুত্ব) বা উলুহিয়্যাত (উপাস্যত্ব) এর কোন বিশেষত্ব নেই। তাঁদের জগত সম্পূর্ণ ভিন্ন ও অদৃশ্য। আল্লাহ তাআলা তাঁদের নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।
 কর্ম ও দায়িত্ব সম্পাদনের দিক থেকে তাঁদের অবস্থা হচ্ছে,
তারা সার্বক্ষনিক আল্লাহ তাআলার ইবাদত করেন। দিবা-রাত্রি তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনায় ব্যস্ত থাকেন।
وَلَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ عِنْدَهُ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ ﴿১৯﴾ يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ ﴿২০﴾ (سورة الأنبياء : ১৯-২০)
আর আসমান-যমীনে যারা আছে তারা সবাই তাঁর; আর তাঁর কাছে যারা আছে তারা অহঙ্কার বশত: তাঁর ইবাদত হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিন-রাত তাঁর তাসবীহ (পবিত্রতা ও মহিমা) পাঠ করে, তারা শিথিলতা দেখায় না।[১২২]
 আনুগত্য ও মান্য করার দিক থেকে তাঁদের অবস্থা :
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাঁর নির্দেশ পালন করার জন্য পরিপূর্ণ আনুগত্য, এবং তা বাস্তবায়ন করার শক্তি দান করেছেন। তারা সৃষ্টিগতভাবে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য, কারণ বশ্যতা স্বীকারের প্রকৃতি দিয়ে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।
لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ﴿৬﴾
তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তা-ই করে।[১২৩]

 ফেরেশতাদের সংখ্যা :
ফেরেশতাদের সংখ্যা অনেক; তার সঠিক সংখ্যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। তাদের মধ্যে আছে আল্লাহর আরশ বহনকারী। জান্নাতের প্রহরী, জাহান্নামের প্রহরী, হেফাজত ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী। নেক ও পাপ লেখার কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইত্যাদি। তাদের মধ্যে প্রতিদিন সত্তর হাজার করে বাইতুল মা'মুরে সালাত আদায় করার সুযোগ পায়। যারা একবার সালাত আদায় করে তারা দ্বিতীয়বার আর এ সুযোগ পায় না।
মিরাজের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সপ্তম আকাশে আগমন করলেন : তিনি বলেন-
فرفع لي البيت المعمور فسألت جبريل فقال : هذا البيت المعمور يصلي فيه كل يوم سبعون ألف ملك، إذا خرجوا لم يعودوا إليه آخر ما عليهم. متفق عليه.
আমার সামনে বাইতুল মা'মুর কে তুলে ধরা হল আমি জিবরাঈলকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন। "এটি বাইতুল মা'মুর"। এতে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা সালাত আদায় করে। সালাত আদায়ান্তে যখন বের হয় এ উদ্দেশ্যে আর ফিরে আসার সুযোগ হয়না।[১২৪]

 ফেরেশতাদের নাম ও কর্ম :
ফেরেশতা আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ সম্মানিত বান্দা, তিনি তাদের স্বীয় আনুগত্য ও ইবাদত সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তাদের সংখ্যা তিনি ব্যতীত আর কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাদের কারো কারো নাম ও কর্ম সম্পর্কে জানিয়েছেন আর অবশিষ্টদের সম্পর্কে কেবল তিনিই জানেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের দায়িত্বে বিভিন্ন কর্ম অর্পণ করেছেন। একেক দলকে একেক কাজে নিয়োজিত করেছেন। যেমন :
(১) জিবরীল আলাইহিস সালাম: তিনি নবী-রাসূল গণের নিকট ওহী (প্রত্যাদেশ) নিয়ে আসার ব্যাপারে দায়িত্বশীল।
(২) মীকাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বৃষ্টি ও উদ্ভিত সংক্রান্ত বিষয়াদির দায়িত্বে নিয়োজিত।
(৩) ইসরাফীল আলাইহিস সালাম তিনি শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত।
এরা ফেরেশতাদের মাঝে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা জীবন সংক্রান্ত উপায়-উপকরণ বিষয়ক দায়িত্বে নিয়োজিত। যেমন জিবরীল ওহী বিষয়ক দায়িত্বে নিয়োজিত যে ওহীর মাধ্যমে অন্তর জীবন্ত হয়। মীকাঈল বৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত যার মাধ্যমে ভূমি নির্জীব হয়ে যাওয়ার পর নতুন জীবন লাভ করে সজীব হয়। ইসরাফীল শিঙ্গায় ফুৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত। যার মাধ্যমে শরীর প্রাণহীন হওয়ার পর পুনরায় জীবন লাভ করবে।
(৪) মালেক, জাহান্নাম প্রহরী : তিনি জাহান্নামের দায়িত্বে নিয়োজিত।
(৫) রিদওয়ান, জান্নাত রক্ষী : তিনি জান্নাতের দায়িত্বে নিয়োজিত।
• মালাকুল মওত : মৃত্যুর সময় রূহ কবজ করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
• তাঁদের মধ্যে কিছু আছেন যাদের হামালাতুল আরশ বলা হয়। তাঁরা আরশ বহন করে আছেন।
• কিছু আছে যাদের খাযানাতুল জান্নাত বলা হয়। যারা জান্নাতের প্রহরায় নিয়োজিত। একদলকে বলা হয় খাযানাতুন্নার। তাঁরা জাহান্নাম প্রহরা দানে নিয়োজিত। 
• কিছু আছে যাদের দায়িত্ব হচ্ছে বনী আদম ও তাদের আমল সংরক্ষণ করা এবং প্রত্যেক ব্যক্তির আমলসমূহ লিপিবদ্ধ করা।
• তাঁদের মধ্যে কিছু আছেন যারা সার্বক্ষনিক বান্দার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। 
• কিছু আছেন যারা পারস্পরিক দিবা-রাত্রি যাওয়া আসা করেন।
• কিছু আছেন, যারা ওয়াজ-নসীহত, আলোচনা ও যিকিরের মজলিস খুঁজে ফেরেন।
• কিছু আছেন, যারা জড়ায়ূতে ভ্রূনের দায়িত্বে নিয়োজিত। তাঁরা আল্লাহর নির্দেশে তাদের রিযিক, আমল নির্ধারিত হায়াত এবং নেককার হবে না বদকার, ভাগ্যবান হবে না দুর্ভাগা ইত্যাদি লিখার দায়িত্ব সম্পাদন করেন।
• কিছু আছেন, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে, কবরে, রব, দ্বীন ও নবী সম্বন্ধে প্রশ্ন করা।
এরা ছাড়াও অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছেন, যাদের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। তিনি প্রত্যেক বস্তুর হিসাব ও গণনা সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে অবহিত।

 লেখার কাজে নিয়োজিত সম্মানিত ফেরেশতাবৃন্দ (কিরামুন কাতিবীন)-এর দায়িত্ব :
আল্লাহ তাআলা লিখার দায়িত্ব পালনকারী কিছু সম্মানিত ফেরেশতা সৃষ্টিা করেছেন। এবং তাঁদেরকে আমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক স্থির করেছেন। তাঁরা কথা, আমল ও নিয়তসমূহ লিখে সংরক্ষণ করেন। প্রতিটি মানুষের সাথে দুজন করে ফেরেশতা থাকেন। ডানপার্শ্বস্থজন তার নেককাজসমূহ লিপিবদ্ধ করেন আর বামপার্শ্বস্থজন লিখেন বদকাজসমূহ।
আরো দুজন আছেন যারা তাকে হিফাজত ও রক্ষাণাবেক্ষণ করেন। এদের একজন থাকেন তার সামনে অন্যজন পেছনে।
১। মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ﴿১০﴾ كِرَامًا كَاتِبِينَ ﴿১১﴾ يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ ﴿১২﴾ (سورة الإنفطار : ১০-১২)
আর অবশ্যই তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ রয়েছে। সম্মানিত লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।[১২৫]
২। আল্লাহ আরও বলেন:-
إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ ﴿১৭﴾ مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ ﴿১৮﴾ (سورة ق : ১৭-১৮)
যখন ডানে ও বামে বসা দু'জন লিপিবদ্ধকারী পরস্পর গ্রহণ করবে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী আছে।[১২৬]
৩। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَالٍ ﴿১১﴾ (سورة الرعد : ১১)
মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হিফাযত করে। নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোন জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না এবং তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোন অভিভাবক নেই।[১২৭]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَقُولُ اللَّهُ إِذَا أَرَادَ عَبْدِي أَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَلَا تَكْتُبُوهَا عَلَيْهِ حَتَّى يَعْمَلَهَا فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا بِمِثْلِهَا وَإِنْ تَرَكَهَا مِنْ أَجْلِي فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَلَمْ يَعْمَلْهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ. متفق عليه.
বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার বান্দা যদি পাপকর্ম করার সংকল্প করে তাহলে তোমরা ঐ কর্ম সম্পাদন করার পূর্ব পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সেটি লিখবে না। যদি সংকল্পকৃত কাজটি সম্পাদন করে ফেলে তাহলে কাজের অনুরূপ একটি পাপ তার আমল নামায় লিখবে। আর যদি আমার সম্মানে উক্ত পাপ কাজ পরিহার করে সংকল্প পরিবর্তন করে তাহলে সেটিকে একটি পরিপূর্ণ হাসানাহ তথা নেককাজ হিসাবে তার আমল নামায় লিখে নাও। আর যদি সে কোন নেককাজ করার সংকল্প করে কাজে রূপান্তরিত করল না তাহলে এর বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি পরিপূর্ণ হাসানাহ লেখ। আর যদি উক্ত কাজ সম্পাদন করে তাহলে ঐ এক কাজের বিনিময়ে অনুরূপ দশ থেকে সাতশতগুণ আমলের ছাওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ কর।[১২৮]

 ফেরেশতাদের আকৃতির বিশালতা :-
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم. قال : أذن لي أن أحدث عن ملك من ملائكة الله من حملة العرش. أن ما بين شحمة أذنه إلى عاتقه مسيرة سبعمائة عام. أخرجه ابوداود.
জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে আরশ বহনকারী একজন ফেরেশতা সম্পর্কে বর্ণনা করতে বলা হল যে, তার কানের লতি থেকে কাঁদের দূরত্ব হচ্ছে সাতশত বছরের ভ্রমণ পথ।[১২৯]
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه أن محمدا صلى الله عليه وسلم رأى جبريل له ستمائة جناح. متفق عليه.
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেরেশতা জিবরীল আলাইহিস সালাম কে দেখেছেন যে, তাঁর ছয়শত পাখা আছে।[১৩০]

 ঈমান বিল মালাইকার উপকারিতা :
১। ফেরেশতাকুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব, মহত্ব, ক্ষমতা, শক্তি, সামর্থ ও প্রজ্ঞা-কৌশল সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। তিনি ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন যাদের সংখ্যা তিনি ব্যতীত আর কেউ জানে না। তাদের মধ্যে হতে আরশ বহনকারী নিযুক্ত করেছেন যাদের একজনের আকৃতি হচ্ছে "তার কানের লতি হতে কাঁধের দূরত্ব সাতশত বৎসরের ভ্রমণ পথ" তাহলে আরশের বিশালতা কিরূপ? আর আরশের উপর যিনি আছেন তাঁর অবস্থা কি? তাঁর বড়ত্ব ও বিশালতা কেমন? সে আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল রাজত্ব ও কর্তৃত্ব যার।
وَلَهُ الْكِبْرِيَاءُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿৩৭﴾ (سورة الجاثية : ৩৭)
আর আসমানসমূহ ও যমীনের সকল অহঙ্কার তাঁর; তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।[১৩১]
২। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে মানবজাতির রক্ষণাবেক্ষণ, সাহায্য ও আমল লেখার কাজে নিয়োজিত করার মাধ্যমে তাদের উপর যে অনুগ্রহ করেছেন তার উপর আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যায় এবং এর জন্য মনে তাগিদ অনুভূত হয়।
৩। ফেরেশতাকুলের প্রতি মুহাব্বত সৃষ্টি হয় কারণ তাঁরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত সম্পাদন করে, আল্লাহর নিকট দুআ করে এবং মুমিনদের জন্য গুনাহ মার্জনার প্রার্থনা করে। যেমন আল্লাহ তাআলা আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের সম্বন্ধে বলেছেন।
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ ﴿৭﴾ رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدْتَهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آَبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿৮﴾ وَقِهِمُ السَّيِّئَاتِ وَمَنْ تَقِ السَّيِّئَاتِ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهُ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿৯﴾ (سورة غافر : ৭-৯)
যারা আরশকে ধারণ করে এবং যারা এর চার পাশে রয়েছে, তারা তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁর প্রতি ঈমান রাখে। আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলে, 'হে আমাদের রব, আপনি রহমত ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করে রয়েছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আপনি তাদেরকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব, আর আপনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করান, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন। আর তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নি ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে তাদেরকেও। নিশ্চয় আপনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর আপনি তাদের অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করুন এবং সেদিন আপনি যাকে অপরাধের আযাব হতে রক্ষা করবেন, অবশ্যই তাকে অনুগ্রহ করবেন। আর এটিই মহাসাফল্য।[১৩২]

৩। কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান।

 'ঈমান বিল কুতুব'-এর অর্থ হচ্ছে, এমন দৃঢ় ও অটল বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী-রাসূলগণের উপর নিজ বান্দাদের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে অসংখ্য কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। এ সকল কিতাব তাঁর কালাম বিশেষ। এসব কিতাব যেসকল বিষয়বস্তু ধারণ করেছে, সবই হক ও সত্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর কিছু কিছু আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে নামসহ উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও আরো অনেক আছে যার সংখ্যা ও নাম আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না।
 কুরআনে উল্লেখকৃত ঐশী গ্রন্থসমূহের সংখ্যা :
আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নিম্নোক্ত গ্রন্থাদি অবতীর্ণ করেছেন।
১। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সহীফা সমগ্র।
২। তাওরাত, এটি আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ করেছেন।
৩। যাবুর, এটি আল্লাহ তাআলা দাউদ আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ করেছেন।
৪। ইঞ্জীল এটি আল্লাহ তাআলা ঈসা আলাইহিস সালামের উপর অবতীর্ণ করেছেন।
৫। আল কুরআন এ মহগ্রন্থ আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানুষের কল্যাণের জন্য নবীশ্রেষ্ঠ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন।

পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থাদির উপর ঈমান ও তদানুযায়ী আমল করার বিধান :
আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাআলা এসব গ্রন্থাদি অবতীর্ণ করেছেন। এসব গ্রন্থে বর্ণিত সকল সংবাদ ও তথ্যাবলিকে আমরা স্বীকৃতি প্রদান করি। যেমন কুরআনের তথ্যাবলি এবং পূর্ববর্তী গ্রন্থাবলিতে বর্ণিত অবিকৃত তথ্যাবলি। সেসব গ্রন্থে বর্ণিত বিধানাবলির যেগুলো রহিত হয়নি সেগুলোর উপর পূর্ণ সম্মতি ও সন্তুষ্টির সাথে আমরা আমল করি। আর যেসব গ্রন্থের নাম আমরা জানতে পারিনি সেসবের উপর সামগ্রিকভাবে ঈমান রাখি।

 পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থ যেমন তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জীল ইত্যাদি কুরআনুল কারীমের কারণে রহিত হয়ে গিয়েছে।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آَتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ﴿৪৮﴾ (سورة المائدة : ৪৮)
আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরিয়ত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অত:পর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।[১৩৩]

 আহলে কিতাবদের নিকট বিদ্যমান গ্রন্থাদির হুকুম :
বর্তমান সময়ে আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের নিকট তাওরাত ও ইঞ্জীল নামে যে কিতাব রয়েছে, এর ভেতর বর্ণিত সকল বিষয়কে নবী ও রাসূলগণের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা ঠিক নয়। কারণ এগুলোতে অনেক বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ তাআলার দিকে সন্তানাদিকে সম্বন্ধযুক্ত করে তারা বলে যে, ঈসা ও ওযায়ের আল্লাহর পুত্র (নাউযুবিল্লাহ) এবং এ ধরণের অসার ও বাতিল কথাবার্তা। খৃষ্টানরা নবী ঈসা বিন মারইয়ামকে উপাস্য স্থির করেছে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলাকে এমনগুণে গুণান্বিত করেছে যা কোনভাবেই তাঁর শান ও বড়ত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি এবং নবীদের বিরুদ্ধে অপবাদ-দুর্নাম রটনা করেছে ইত্যাদি এগুলো সবই তাদের বানানো, নবীগণ এসন কিছুই বলেননি। সুতরাং এসকল বাতুলতাকে খণ্ডন ও প্রত্যাখ্যান করা এবং কুরআন-সুন্নাহ যেসব বিষয় সমর্থন করেছে সেগুলো ব্যতীত অন্য সবকিছুকে অবিশ্বাস করা অপরিহার্যভাবে জরুরি।
 আহলে কিতাব আমাদেরকে কোন কিছু বর্ণনা করলে আমরা সেগুলোর সত্যায়নও করবনা এবং মিথ্যাও প্রতিপন্ন করব না। আমরা বলব : أمنا بالله وكتبه ورسله (আমরা আল্লাহ, তাঁর নাযিলকৃত গ্রন্থাদি ও প্রেরিত রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছি।)
তাদের বর্ণনাকৃত বিষয় যদি সত্য হয় আমরা তা মিথ্যা বলব না আর তারা যা বলে সেগুলো যদি অসত্য হয় আমরা তা সত্য বলব না।

 কুরআনুল কারীমের উপর ঈমান আনা এবং তদানুযায়ী আমল করার বিধান,
'আল-কুরআনুল কারীম' আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত সর্বশেষ কিতাব। মহান আল্লাহ এটি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ-নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর নাযিল করেছেন।
এটি নাযিলকৃত আসমানি গ্রন্থাবলির মধ্যে সর্বশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বের দিক থেকে সবচেয়ে বড়, তথ্যাবলির বিচারে সর্বাধিক পরিপূর্ণ এবং দলীল প্রমাণের দিক থেকে সর্বাপেক্ষা মজবুত গ্রন্থ।
মহান আল্লাহ একে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী, বিশ্ব জগতের জন্য রহমত ও হেদায়াত (সৎপথ প্রদর্শক) করে নাযিল করেছেন।
এটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ কিতাব। একে নিয়ে অবতরণ করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরীল আলাইহিস সালাম সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। এবং তার মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত মুসলমানদের উপর, যাদের বের করা হয়েছে মানবতার কল্যাণের জন্য। যা হল সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
তাই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একে বিশ্বাস করা, এর উপর ঈমান আনা, এর বিধি-বিধান অনুযায়ী আমল করা এবং এর শিক্ষা ও সভ্যতায় শিক্ষিত ও সভ্য হওয়া একান্ত জরুরী। এ গ্রন্থ অবতীর্ণ হওয়ার পর একে বাদ দিয়ে অন্য গ্রন্থানুযায়ী আমল করলে আল্লাহ গ্রহণ করবেন না। মহান আল্লাহ তাআলা এর সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং পরিবর্তন-বিকৃতি ও হ্রাস-বৃদ্ধি সাধন থেকে রক্ষা করেছেন ও নিরাপদ রেখেছেন।
১। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ ﴿৯﴾ (سورة الحجر : ৯)
নিশ্চয় আমিই এ উপদেশ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষণকারী।[১৩৪]
২। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে :
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿১৯২﴾ نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الْأَمِينُ ﴿১৯৩﴾ عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ ﴿১৯৪﴾ بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ ﴿১৯৫﴾ (سورة الشعراء : ১৯২-১৯৫)
আর নিশ্চয় এ কুরআন সৃষ্টিকুলের রবেরই নাযিলকৃত। বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরীল) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে। তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।[১৩৫]

 কুরআনের আয়াতসমূহের নির্দেশনা :
কুরআনের আয়াত যাতে রয়েছে সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট বিবরণ। এগুলো হয়ত খবর অর্থাৎ তথ্য প্রদান বিষয়ক অথবা তলব তথা দাবি ও আবেদন বিষয়ক।
-খবর দুই প্রকার :
১। হয়ত সৃষ্টিকর্তা, তাঁর নাম, গুণাবলি, কর্ম ও বাণী বিষয়ক তথ্য প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাআলা সম্পর্কীত তথ্য।
২। অথবা সৃষ্টিকুল যেমন আকাশ, পৃথিবী, আরশ, কুরসী মানুষ, জীবজন্তু, উদ্ভিদ-তৃণ, জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ক তথ্য। অনুরূপভাবে নবী-রাসূল, তাঁদের অনুসারী ও বিরুদ্ধবাদী এবং উভয় দলের প্রতিদান-প্রতিফল এবং এজাতীয় তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

 তলব (আহ্বান-দাবী) দুই প্রকার :
(১) হয়ত এককভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত, তিনিও তাঁর রাসূলের আনুগত্য বিষয়ক নির্দেশ ও আহ্বান, অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ যথা সালাত, সিয়াম, ইত্যাদির বাস্তবায়নের নির্দেশ।
(২) অথবা আল্লাহর সাথে শিরক করা থেকে নিষেধ এবং আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বিষয় যথা সুদ, অশ্লীল কার্যাবলি ইত্যাদি নিষিদ্ধকাজ থেকে সতর্ক করণ।
 আল্লাহ তাআলার শত কোটি প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা, আর শত সহস্র দয়া ও অনুগ্রহ তাঁরই, কারণ তিনি আমাদের নিকট সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল প্রেরণ করেছেন। সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সম্মানিত কিতাব নাযিল করেছেন এবং আমাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম উম্মত বানিয়েছেন, যাদেরকে মানবতার কল্যাণ ও উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে বের করা হয়েছে।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ ﴿২৩﴾ (سورة الزمر : ২৩)
আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আর-কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হেদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হেদায়াতকারী নেই।[১৩৬]
(২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿১৬৪﴾ (سورة آل عمران : ১৬৪)
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইত:পূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।[১৩৭]

৪- রাসূলগণের প্রতি ঈমান

 ঈমান বিররুসুলের অর্থ হচ্ছে, এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির নিকট -তাদের এক আল্লাহর ইবাদত এবং তিনি ছাড়া সকল উপাস্যদের অস্বীকার করার প্রতি আহ্বান করার জন্য- রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। এবং এ বিশ্বাসপোষণ করা যে, তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং সকলেই সত্যবাদী। আল্লাহ যে দায়িত্ব ও প্রত্যাদেশ দিয়ে তাদের প্রেরণ করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই তা মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন অত্যন্ত নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পূর্ন আমানতদারিতার সাথে। তাদের মধ্যে কিছু আছেন, যাদের নাম আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন। আবার অনেক আছেন যাদের নাম শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।

 আম্বিয়া ও তাঁদের অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দান :
আল্লাহ তাআলা আম্বিয়া ও তাঁদের অনুসারীদের নিজ তত্ত্বাবধানে রেখে এভাবে গড়ে তুলেছেন যে, তারা প্রথমে নিজ নিজ নফসের উপর মুজাহাদা ও পরিশ্রম করবে। যাতে করে ইবাদত, তাযকিয়া (আত্মশুদ্ধি), চিন্তা-গবেষণা, দ্বীনের খাতিরে ত্যাগ ও ধৈর্য্যশীলতা এবং আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে ব্যয় ও বর্জন- বিষয়ে ঈমান অর্জিত হয়। এতে প্রথমে তাদের জীবনে ঈমান পূর্ণতা পাবে এবং অন্তরে এ বিশ্বাস সুদৃঢ় হবে যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিকর্তা, সবকিছুর কর্তৃত্ব তাঁরই হাতে এবং তিনিই এককভাবে সকল ইবাদতের উপযুক্ত। অতঃপর উপযুক্ত পরিবেশের মাধ্যমে ঈমান সংরক্ষণের ব্যাপারে পরিশ্রম করবে যেমন ঈমান ও নেক আমল দ্বারা আবাদকৃত মসজিদসমূহ।
এরপর দ্বীন ও নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর নিমিত্তে ঈমান থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করবে এবং এ বিশ্বাস মনে বদ্ধমূল করবে যে, তারা যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তাদের সাথেই আছেন। তাদের সাহায্য করেন। রিযিক দান করেন এবং শক্তি যোগান, সমর্থন করেন যেমন বদর, মক্কা বিজয়, হুনায়ন ইত্যাদি যুদ্ধে মুসলমানদের সাহায্য করেছিলেন। এবং আল্লাহর উপরই ভরসা করবে। তিনি ব্যতীত আর কারো উপর ভরসা করবে না। অতঃপর স্বীয় জাতি ও যাদের নিকট তাঁরা প্রেরিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ঈমান প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করবে যাতে তারা একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে। তাদেরকে দ্বীনের আহকাম ও বিধি-বিধান শিক্ষা দিবে এবং স্বীয় প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি তেলাওয়াত করে শুনাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿২﴾ وَآَخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿৩﴾ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ﴿৪﴾ (سورة الجمعة : ২-৪)
তিনিই (নিরক্ষর অর্থাৎ আরব জাতি) উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তেলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত। যদিও ইত:পূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল। এবং তাদের মধ্য হতে অন্যান্যদের জন্যও, (এ রাসূলকেই পাঠানো হয়েছে) যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আর তিনিই মহা প্ররাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহের অধিকারী।[১৩৮]

 الرسول : রাসূল হচ্ছেন, যাকে আল্লাহ তাআলা নতুন শরিয়ত দিয়ে প্রেরণ করেছেন এবং এ শরিয়ত সম্পর্কে যারা জানে না কিংবা জেনেও বিরোধিতা করে তাদের নিকট প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
 النبي: নবী বলা হয়, যাকে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী শরিয়ত দিয়েই প্রেরণ করেছেন। তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে তিনি তাঁর চার পাশে অবস্থানরত উক্ত শরিয়তাবলম্বীদেরকে সে শরিয়ত শিক্ষা দেবেন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করবেন। উল্লেখিত সংজ্ঞা থেকে পরিস্কার হল যে, প্রত্যেক রাসূল নবী তবে প্রত্যেক নবী রাসূল নন।

 নবী-রাসূল প্রেরণ :
পৃথিবীতে যত জাতির আবির্ভাবই ঘটেছে কোন জাতিই কখনো নবী-রাসূল শূন্য ছিল না, সকল জাতির নিকটই আল্লাহ তাআলা হয়ত স্বতন্ত্র শরিয়ত দিয়ে স্বতন্ত্র একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন অথবা পূর্ববর্তী শরিয়ত প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের ক্ষমতাদিয়ে (পুনরাম্ভের জন্য) একজন নবী পাঠিয়েছেন।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ﴿৩৬﴾ (سورة النحل : ৩৬)
আমি প্রত্যেক জাতির নিকটই রাসূল প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত বর্জন কর।[১৩৯]
(২) আল্লাহ আরো বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ ﴿৪৪﴾ (سورة المائدة : ৪৪)
নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নবীগণ এবং রব্বানী ও ধর্মবিদগণ।[১৪০]

 নবী ও রাসূলগণের সংখ্যা :
নবী ও রাসূলদের (আলাইহিমুস সালাতু ওয়াসসালাম) সংখ্যা অনেক।
১। তাঁদের মধ্যে কিছু আছেন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাদের নাম ও ঘটনাবলি সম্পর্কে বলেছেন। তাঁদের সংখ্যা মোট পঁচিশ।
(১) আদম আলাইহিস সালাম।
وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى آَدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَهُ عَزْمًا ﴿১১৫﴾ (سورة طه : ১১৫)
আর আমি ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলাম; কিন্তু সে তা ভুলে গিয়েছিল এবং আমি তার মধ্যে সংকল্পে দৃঢ়তা পাইনি।[১৪১]
(২) নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা কয়েকজন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে :
وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آَتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَى قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَنْ نَشَاءُ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ ﴿৮৩﴾ وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ ﴿৮৪﴾ وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِنَ الصَّالِحِينَ ﴿৮৫﴾ وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطًا وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ ﴿৮৬﴾ وَمِنْ آَبَائِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَإِخْوَانِهِمْ وَاجْتَبَيْنَاهُمْ وَهَدَيْنَاهُمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ ﴿৮৭﴾ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿৮৮﴾ أُولَئِكَ الَّذِينَ آَتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ فَإِنْ يَكْفُرْ بِهَا هَؤُلَاءِ فَقَدْ وَكَّلْنَا بِهَا قَوْمًا لَيْسُوا بِهَا بِكَافِرِينَ ﴿৮৯﴾ (سورة الأنعام : ৮৩-৮৯)
আর এ হচ্ছে আমার দলীল, আমি তা ইবরাহীমকে তার কওমের উপর দান করেছি। আমি যাকে চাই, তাকে মর্যাদায় উঁচু করি। নিশ্চয় তোমার রব প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। আর আমি তাকে দান করেছি ইসহাক ও ইয়াকূবকে। প্রত্যেককে আমি হিদায়াত দিয়েছি এবং নূহকে পূর্বে হিদায়াত দিয়েছি। আর তার সন্তানদের মধ্য থেকে দাঊদ, সুলাইমান, আইয়ূব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকে। আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দেই। আর যাকারিয়্যা, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলয়াসকে। প্রত্যেকেই নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। আর ইসমাঈল, আল ইয়াসা', ইউনুস ও লূতকে। প্রত্যেককে আমি সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। আর (আমি হিদায়াত দান করেছি) তাদের পিতৃপুরুষ, বংশধর ও ভাইদের মধ্য থেকে, আর তাদেরকে আমি বাছাই করেছি এবং তাদেরকে সরল পথের দিকে পরিচালিত করেছি। এ হচ্ছে আল্লাহর হিদায়াত, এ দ্বারা তিনি নিজ বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা হিদায়াত করেন। আর যদি তারা শিরক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত। এরাই তারা, যাদেরকে আমি দান করেছি কিতাব, হুকুম ও নবুওয়ত। অতএব যদি তারা এর সাথে কুফরী করে, তবে আমি এগুলোর তত্ত্বাবধায়ক এমন কওমকে করেছি, যারা এর ব্যাপারে কাফির নয়।[১৪২]
(৩) ইদরীস আলাইহিস সালাম।
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَبِيًّا ﴿৫৬﴾ (سورة مريم : ৫৬)
আর স্মরণ কর এই কিতাবে ইদরীসকে। সে ছিল পরম সত্যনিষ্ঠ নবী।[১৪৩]
৪। হুদ আলাইহিস সালাম।
كَذَّبَتْ عَادٌ الْمُرْسَلِينَ ﴿১২৩﴾ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ هُودٌ أَلَا تَتَّقُونَ ﴿১২৪﴾ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ﴿১২৫﴾
আ'দ জাতি রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল, যখন তাদের ভাই হূদ তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রাসূল।[১৪৪]
৫। সালেহ আলাইহিস সালাম।
كَذَّبَتْ ثَمُودُ الْمُرْسَلِينَ ﴿১৪১﴾ إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ صَالِحٌ أَلَا تَتَّقُونَ ﴿১৪২﴾ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ﴿১৪৩﴾ (سورة الشعراء : ১৪১-১৪৩)
সামূদ জাতি রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল, যখন তাদের ভাই সালেহ তাদেরকে বলেছিল, তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল।[১৪৫]
৬। শুআইব আলাইহিস সালাম।
كَذَّبَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ الْمُرْسَلِينَ ﴿১৭৬﴾ إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ ﴿১৭৭﴾ إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ ﴿১৭৮﴾ (سورة الشعراء : ১৭৬-১৭৮)
আইকার অধিবাসীরা রাসূলদেরকে অস্বীকার করেছিল। যখন শুআইব তাদেরকে বলল, তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল।[১৪৬]
৭। যুলকিফল আলাইহিস সালাম।
وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِنَ الْأَخْيَارِ ﴿৪৮﴾ (سورة ص : ৪৮)
আরো স্মরণ কর, ইসমাইল, ইয়াসা'আ ও যুল-কিফলের কথা। এরা প্রত্যেকেই ছিল সর্বোত্তমদের অন্তর্ভুক্ত।[১৪৭]
৮। নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ বলেন,
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ﴿৪০﴾ (سورة الأحزاب : ৪০)
মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।[১৪৮]
(২) নবী ও রাসূলগণের মধ্যে অনেক আছেন যাদের নাম-পরিচয় আমরা জানি না। এঁদের ঘটনাবলি সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের কিছুই জানাননি। আমরা তাঁদের প্রতি সাধারণভাবে ঈমান আনি।
১। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآَيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ فَإِذَا جَاءَ أَمْرُ اللَّهِ قُضِيَ بِالْحَقِّ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْمُبْطِلُونَ﴿৭৮﴾ (سورة غافر : ৭৮)
আর অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে অনেক রাসূল পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে কারো কারো কাহিনী আমি তোমার কাছে বর্ণনা করেছি আর কারো কারো কাহিনী আমি তোমার কাছে বর্ণন করিনি। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন নিয়ে আসা কোন রাসূলের উচিৎ নয়। তারপর যখন আল্লাহর নির্দেশ আসবে, তখন ন্যায়সঙ্গতভাবে ফয়সালা করা হবে। আর তখনই বাতিলপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।[১৪৯]
عن أبي أمامة رضي الله عنه قال : قال أبوذر رضي الله عنه قلت : يا رسول الله كم وفى عدة الأنبياء ؟ قال: مائة ألف وأربعة وعشرون ألفا، الرسل من ذلك ثلاث مائة وخمسة عشر جما غفيرا. اخرجه أحمد والطبرانى.
আবু উমামাহ রা. বর্ণনা করেছেন, আবু যর রা. বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম! ইয়া রাসূলাল্লাহ, নবীগণের সংখ্যা কততে এসে পূর্ণতা পেয়েছে ? অর্থাৎ নবীদের মোট সংখ্যা কত? নবীজী বললেন! একলক্ষ চব্বিশ হাজার। এদের মধ্যে একটি বিশাল দল হচ্ছেন রাসূল যাঁদের সংখ্যা তিনশত পনের।[১৫০]

 দৃঢ় প্রতিজ্ঞ-সাহসী রাসূলবৃন্দ : أولو العزم من الرسل
উলূল আযম তথা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ-সাহসী রাসূল হচ্ছে পাঁচজন। তাঁরা হলেন নবী নূহ, ইবরাহীম, মূসা এবং মুহাম্মদ আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম। নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁদের আলোচনা করেছেন।
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ ﴿১৩﴾ (سورة الشورى : ১৩)
তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দ্বীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যে দিকে আহ্বান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি হেদায়াত দান করেন।[১৫১]

 সর্ব প্রথম রাসূল :
পৃথিবীতে আগমনকারী সকল নবী-রাসূলের দ্বীন ছিল এক ও অভিন্ন, তবে (তাঁদের) শরিয়ত ছিল বিভিন্ন। পূর্বে আগমনকারী নবী ; পরে আগমনকারী সম্পর্কে সুসংবাদ দিতেন ও তাঁর প্রতি ঈমান আনতেন। আর পরে আগমনকারী; পূর্বে আগমনকারীকে স্বীকৃতি দিতেন এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতেন। এদের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূল হচ্ছেন নূহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম।
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آَتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ ﴿৮১﴾ (سورة آل عمران : ৮১)
আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছেন- আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত দিয়েছি, অত:পর তোমার সাথে যা আছে তা সত্যায়নকারীরূপে একজন রাসূল তোমাদের কাছে আসবে- তখন অবশ্যই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার করেছ এবং এর উপর আমার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছ? তার বলল, আমরা স্বীকার করলাম। আল্লাহ বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।[১৫২]
(২) আল্লাহ আরও বলেন :
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَوْحَيْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيسَى وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَارُونَ وَسُلَيْمَانَ وَآَتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا ﴿১৬৩﴾ (سورة النساء : ১৬৩)
নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যেমনি ওহী প্রেরণ করেছি নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীগণের নিকট এবং আমি ওহী পাঠিয়েছি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক,ইয়াকুব, তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকট এবং দাঊদকে প্রদান করেছি যাবুর।[১৫৩]
(৩) হাদীসে এসেছে
وعن أبى هريرة رضي الله عنه فى حديث الشفاعة وفيه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لا اذهبوا إلى نوح فيأتون نوحا فيقولون: يا نوح أنت أول الرسول إلى أهل الأرض. (متفق عليه)
আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে শাফা'আতে আছে যে, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগত লোকদের বলবেন, তোমরা নূহ' এর নিকট যাও। তাঁরা নবী নূহ' এর নিকট এসে বলবে! হে নূহ, আপনি পৃথিবীবাসীর নিকট প্রেরিত সর্ব প্রথম রাসূল।[১৫৪]

 সর্বশেষ রাসূল :
সর্বশেষ রাসূল হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আল্লাহ তাআলা বলেন:
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ﴿৪০﴾ (سورة الأحزاب : ৪০)
মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।[১৫৫]

 আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদের কাদের নিকট প্রেরণ করেছেন :
(১) আল্লাহ তাআলা সকল নবী-রাসূলদের বিশেষকরে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছেন :
মহান আল্লাহ বলেন:
وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ ﴿৭﴾ (سورة الرعد : ৭)
আর প্রত্যেক কওমের জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী।[১৫৬]
(২) আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন সমগ্র মানুষের নিকট। তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। আদম সন্তানের নেতা। কিয়ামত দিবসে প্রশংসার নিশান বরদার। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উভয় জগতের রহমত করে প্রেরণ করেছেন।
(১) আল্লাহ বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿২৮﴾ (سورة سبأ : ২৮)
আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।[১৫৭]
(২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ ﴿১০৭﴾ (سورة الأنبياء : ১০৭)
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবেই প্রেরণ করেছি।[১৫৮]

 নবী-রাসূল প্রেরণের তাৎপর্য :
নবী-রাসূল প্রেরণের অনেক হিকমত ও তাৎপর্য রয়েছে, এখানে আমরা প্রধান প্রধান কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করব।
১। বিশ্বমানবতাকে এক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা থেকে নিষেধ করা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ﴿৩৬﴾ (سورة النحل : ৩৬)
আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে।[১৫৯]
২। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার সংযোগ স্থাপন এবং যে রাস্তা তিনি পর্যন্তপৌঁছাতে সাহায্য করে সে রাস্তা বর্ণনা করা।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ ﴿২﴾ (سورة الجمعة : ২)
তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যে তাদের কাছে তিলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত। যদিও ইত:পূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।[১৬০]
৩। কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট পৌঁছার পর মানুষের অবস্থা কেমন হবে সে সম্পর্কে বর্ণনা করা।
আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ نَذِيرٌ مُبِينٌ ﴿৪৯﴾ فَالَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ﴿৫০﴾ وَالَّذِينَ سَعَوْا فِي آَيَاتِنَا مُعَاجِزِينَ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ ﴿৫১﴾ (سورة الحج : ৪৯-৫১)
বল, হে মানুষ, আমি তো কেবল তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা করে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।[১৬১]
৪। মানুষের বিপক্ষে হুজ্জত (প্রমাণ) প্রতিষ্ঠিত করা।
যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا ﴿১৬৫﴾ (سورة النساء : ১৬৫)
আর (পাঠিয়েছি) রাসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহর বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোন অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।[১৬২]
৫। রহমত ও অনুগ্রহ স্বরূপ।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ ﴿১০৭﴾ (سورة الأنبياء : ১০৭)
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসাবেই প্রেরণ করেছি।[১৬৩]

 নবী-রাসূলগণের গুণাগুণ:
(১) প্রজ্ঞাময় মহাপ্রভু মানুষদের মধ্য হতে নির্বাচন করে তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নবী-রাসূল হিসাবে মনোনীত করেছেন। নবুওয়ত ও রিসালাতের গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে তাদের মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন মু'জেযার মাধ্যমে তাদের সাহায্য করেছেন, শক্তি যুগিয়েছেন এবং তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। উক্ত রিাসালাত মানুষের নিকট প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে মানুষ কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তিনি ভিন্ন সকল উপাস্যের ইবাদত পরিহার করে। এর উপর তিনি তাদের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহ প্রদত্ত এ দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে পালন করেছেন এবং মানুষের নিকট পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে তা প্রচার করেছেন। তাঁদের উপর শত- কোটি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
১। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿৪৩﴾ (سورة النحل : ৪৩)
আর আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠিয়েছি। সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।[১৬৪]
২। আল্লাহ আরও বলেন,
إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آَدَمَ وَنُوحًا وَآَلَ إِبْرَاهِيمَ وَآَلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ ﴿৩৩﴾ (سورة آل عمران : ৩৩)
নিশ্চয় আল্লাহ আদম, নূহ ও ইবরাহীমের পরিবারকে এবং ইমরানের পরিবারকে সৃষ্টিজগতের উপর মনোনীত করেছেন।[১৬৫]
৩। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে :
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ﴿৩৬﴾ (سورة النحل : ৩৬)
আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে।[১৬৬]
(২) আল্লাহ তাআলা সকল নবী-রাসূলকে তাঁর বান্দাদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত এবং কেবলমাত্র তাঁর ইবাদতের প্রতি আহ্বান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর প্রত্যেক জাতির জন্য তাদের অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে শরিয়ত ও আইন প্রবর্তন করেছেন।
যেমন আল্লাহ বলেন,
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا ﴿৪৮﴾ (سورة المائدة : ৪৮)
তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরিয়ত ও স্পষ্ট পন্থা।[১৬৭]
(৩) মহান আল্লাহ নবী-রাসূলদেরকে নির্বাচিত করার পর, যখনই তাদের কোন উচ্চ মাকাম বর্ণনা করেছেন তখন তাঁর তরে তাদের উবুদিয়্যতের গুণটি উল্লেখ করে বর্ণনা করেছেন। যেমন তানযীল তথা কুরআন অবতারণের মাকাম বর্ণনা করার ক্ষেত্রে মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেছেন।
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا ﴿১﴾ (سورة الفرقان : ১)
পরম বরকতময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে।[১৬৮]
এখানে রাসূলের ক্ষেত্রে عبد শব্দটি ব্যবহার করার মাধ্যমে তার উবুদিয়্যতের গুণটি উল্লেখ করেছেন।
ঈসা বিন মারইয়াম আ. সম্পর্কে বলেছেন।
إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِبَنِي إِسْرَائِيلَ ﴿৫৯﴾ (سورة الزخرف : ৫৯)
সে কেবল আমার এক বান্দা। আমি তার উপর অনুগ্রহ করেছিলাম এবং বনী ইসরাঈলের জন্য তাকে দৃষ্টান্ত বানিয়েছিলাম।[১৬৯]
(৪) সকল নবী-রাসূলই সৃষ্ট-মানুষ। অন্যান্য সকল মানব প্রকৃতির ন্যায় তাঁরা পানাহার করেন। বি:স্মৃত হয়, ঘুমান-অচেতন হন, অসুস্থ হন, মৃত্যু বরণ করেন। আকৃতি-প্রকৃতি সকল দিক থেকে অন্যান্য মানুষের মত। প্রভুত্ব-উপাস্যত্ব ইত্যাদি যা একমাত্র আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট এসব ক্ষেত্রে তাঁদের কোন দখল নেই। সুতরাং তাঁরা আল্লাহ তাআলার অনুমোদন ব্যতীত কারো উপকার-ক্ষতির ক্ষমতা রাখেন না। অনুরূপভাবে তাঁরা আল্লাহর কোন ভাণ্ডারেরও মালিক নন এবং আল্লাহ যা জানিয়েছেন তা ব্যতীত অদৃশ্যের কোন বিষয় সম্পর্কেও তাঁদের কোন ধারণা নেই। অর্থাৎ তাঁরা ইলমে গায়েব জানেন না।
আল্লাহ স্বীয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলছেন,
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ﴿১৮৮﴾ (سورة الأعراف : ১৮৮)
বল, আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষাতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমি তো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে।[১৭০]

 নবী-রাসূলদের বৈশিষ্ট্যাবলি :
মানবকুলের মধ্যে মন-মানসিকতার দিক থেকে নবী ও রাসূলগণ হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা পবিত্র, বুদ্ধি-বিবেচনার ক্ষেত্রে সবচে মেধাবী, ঈমানের দিক থেকে সর্বাপেক্ষা সত্যবাদি, চরিত্র ও ব্যবহারের দিক থেকে সর্বোত্তম, দ্বীন-ধর্মের ক্ষেত্রে সর্বাধিক পরিপূর্ণ। উবুদিয়্যত-দাসত্বের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী, শারীরিকভাবে পূর্ণাঙ্গতর। আকৃতিগতভাবে সুন্দরতম। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অনেক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি দ্বারা গুণান্বিত করেছেন। প্রধান প্রধান কিছু নিম্নে প্রদত্ত্ব হল।
(১) আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে ওহী ও রিসালাতের জন্য মনোনীত করেছেন।
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ ﴿৭৫﴾ (سورة الحج : ৭৫)
আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য হতে রাসূল মনোনীত করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।[১৭১]
(২) অন্যত্র বলেন :
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ ﴿১১০﴾ (سورة الكهف : ১১০)
বল, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ।[১৭২]
(২) তাঁরা সকলে আল্লাহ প্রদত্ত্ব দায়িত্ব ; আকীদা ও আহকাম মানুষের নিকট প্রচার ও পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিষ্পাপ। যদি কোন ভুল করেও থাকেন আল্লাহ তাআলা সাথে সাথে সঠিক ও সত্যের দিকে ফিরিয়ে দিতেন।
আল্লাহ বলেন,
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى ﴿১﴾ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى ﴿২﴾ وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى ﴿৩﴾ إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى ﴿৪﴾ عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى ﴿৫﴾ (سورة النجم : ১-৫)
কসম নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি। আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়। তাকে শিক্ষা দিয়েছে প্রবল শক্তিধর।[১৭৩]
(৩) তাঁদের মৃত্যুর পর কাউকে (সম্পদের) উত্তরাধিকারী করেন না এবং কোন উত্তরাধিকার রেখেও যান না।
عن عائشة رضي الله عنها قالت : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا نورث، ما تركنا صدقة. (متفق عليه)
উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাদের (সম্পদের) উত্তরাধিকার হয় না। আমরা কাউকে (সম্পদের) উত্তরাধিকারী করি না। আমরা যা কিছু (সম্পদ) রেখে যাই তা সবই সদকা।[১৭৪]
(৪) তাঁরা নিদ্রা যান তবে তাঁদের চক্ষ ুঘুমায়, অন্তর থাকে জাগ্রত-ঘুমায় না।
عن أنــس رضي الله عنه فى قصة الإســراء. وفيه والنبي صلى الله عليه وسلم نائمة عيناه ولا ينام قلبه وكذالك الأنبياء تنام أعينهم ولا تنام قلوبهم. أخرجه البخاري.
আনাস রা. কর্তৃক বর্ণিত ইসরার ঘটনা সম্বলিত হাদীসে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চক্ষুদ্বয় ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপভাবে আম্বিয়া আ. (তাঁরা নিদ্রায় যান তবে) তাঁদের চক্ষু ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।[১৭৫]
(৫) মৃত্যুর সময় তাঁদেরকে দুনিয়া কিংবা আখিরাতের যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়।
عن عائــشة رضي الله عنها قالت : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ما من نبي يمرض إلا خير بين الدنيا والآخرة . (متفق عليه)
উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা রা. বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখনই কোন নবী অসুস্থ হয়েছেন তখনই তাঁকে দুনিয়া কিংবা আখেরাত- এর যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।[১৭৬]
(৬) তাঁদের মৃত্যু বরণের স্থানেই তাঁদের সমাহিত করা হয়।
عن أبي بكر رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: لن يقبر نبي إلا حيث يموت . أخرجه أحمد
আবু বকর রা. বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। প্রত্যেক নবীকে তাঁর মৃত্যু বরণ করার স্থানেই সমাহিত করা হয়েছে।[১৭৭]
(৭) মাটি তাদের শরীর খায় না।
عن أوس بن أوس رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة.. وفيه قالوا : يا رسول الله وكيف تعرض صلاتنا عليك وقد أرمت؟ يقولون بليت، فقال : إن الله عز وجل حرم على الأرض أجساد الأنباء. أخرجه أبوداود.
বিশিষ্ট সাহাবী আওস বিন আওস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে জুমুআর দিন... এবং তাতে আছে, লোকেরা বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাদের দরূদ ও সালাত আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে? অথচ আপনিতো ফুলে যাবেন। অর্থাৎ (তারা বলতে চাচ্ছেন,) ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যাবেন। রাসূলুল্লাহ বললেন : আল্লাহ তাআলা নবীদের শরীরকে মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন।[১৭৮]
(৮) তাঁরা নিজ নিজ কবরে জীবিত থেকে সালাত আদায় করেন।
عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: الأنبياء أحياء فى قبورهم يصلون. أخرجه أبو يعلى
সাহাবী আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : নবীগণ নিজ নিজ কবরে জীবিত থেকে সালাত আদায় করে যাচ্ছেন।[১৭৯]
عن أنس رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: مررت على موسى ليلة أسري بي عند الكثيب الأحمر وهو قائم يصلى في قبره. أخرجه مسلم
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে রাতে আমার ইসরা হয়েছিল, আমি লাল বালির টিলার নিকটে নবী মূসা আলাইসি সালামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি স্বীয় কবরে নামায রত ছিলেন।[১৮০]
(৯) তাঁদের ওফাতের পর তাঁদের সহধর্মিনীদের বিবাহ করা অবৈধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَنْ تَنْكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمًا ﴿৫৩﴾ (سورة الأحزاب : ৫৩)
আর আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর (ওফাতের) পর তাঁর পত্নীগণকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য কখনও সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।[১৮১]

 নবী-রাসূলগণের প্রতি ঈমানের বিধান:
সকল নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব। তাঁদের যে কোন একজনকে অস্বীকার করা, সকলকে অস্বীকার করার নামান্তর। যে একজনকে অস্বীকার করল প্রকারান্তরে সে সকলকেই অস্বীকার করল। তাঁদের সম্পর্কিত সকল বিশুদ্ধ সংবাদাদি বিশ্বাস ও সত্যায়ন করা ফরজ। উত্তম আখলাক, তাওহীদের উৎকর্ষ ও ঈমানের সত্যতার ক্ষেত্রে তাঁদের অনুসরণ করাও ফরজ। অনুরূপভাবে নবী-রাসূলের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ, রিসালাতের পরম্পরা সমাপ্তকারী, সকল মানুষ এবং সমগ্র পৃথিবীর নিকট প্রেরিত আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরিয়তানুযায়ী আমল করাও কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের উপর ফরজ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا آَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿১৩৬﴾ (سورة النساء : ১৩৬)
হে মুমিনগণ, তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর নাযিল করেছেন এবং সে কিতাবের প্রতি যা তিনি পূর্বে নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং শেষ দিনকে অস্বীকার করবে, সে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হবে।[১৮২]

 নবী-রাসূলগণের প্রতি ঈমানের উপকারিতা ও ফলাফল :
-নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ফলে স্বীয় বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহ তাআলার অপরিসীম রহমত, অপার দয়া ও মহিমা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় যে, তিনি তাঁদের নিকট অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা এসে তাদেরকে স্বীয় রব ও মালিকের ইবাদতের প্রতি পথ প্রদর্শন করেছেন এবং ইবাদত পালনের নিয়ম-পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন।
-এ নেয়ামত প্রাপ্তির ফলস্বরূপ আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করার অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
-নবী-রাসূলদের ভালবাসা ও কোনরূপ অতিরঞ্জন-বাড়াবাড়ি ব্যতীত তাঁদের প্রশংসা করা। কেননা তাঁরা হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল। তাঁর ইবাদত-আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর বান্দাদের নিকট তাঁর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং তাদের কল্যাণ কামনা করেছেন।

• মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
 বংশ পরিচয় ও বেড়ে উঠা:
নাম : মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম।
মাতাঃ আমিনা বিনতে ওহাব।
৫৭০ ঈসাই সনে -হাতির ঘটনা সঙ্ঘটিত হওয়ার বছর- পবিত্র মক্কায় জন্মগ্রহন করেন। মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায়ই পিতা আব্দুল্লাহ ইহলোক ত্যাগ করেন। পিতার ইন্তেকালের পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে মাতা আমিনাও পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন। আর দাদার ইন্তেকালের পর দায়িত্ব নেন চাচা আবু তালিব।
জীবনভর সদাচরণ ও উত্তম আখলাক নিয়ে মানুষের মাঝে বসবাস করেছেন। তাঁর মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার ও অনুপম চারিত্রিক গুণাবলির ছোঁয়ায় মুগ্ধ হয়ে লোকেরা তাঁকে আল আমীন ( বিশ্বস্ত ) উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
চল্লিশ বছর বয়সের মাথায় নবুওয়ত প্রাপ্ত হন। ওহী নিয়ে ফেরেশ্‌তা জিবরীল যখন উপস্থিত হন, তখন তিনি হেরা গুহায় গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন।
অত:পর লোকদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এবং এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান করতে লাগলেন। ফলে বিভিন্ন কষ্ট ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হলেন। কিন্তু ধৈর্য্য ও সবরের সাথে নিজ দায়িত্ব পালনে অবিচল থেকেছেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে জয়ী করেন। এরপর মদিনায় হিজরত করে চলে আসেন আর আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধি-বিধান আসতে শুরু করে। ইসলাম মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং দ্বীন পূর্ণতা পায়।
অত:পর একাদশ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন পৃথিবী ত্যাগ করে পরম বন্ধুর সান্নিধ্যে প্রস্থান করেন। তখন বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। সুস্পষ্টভাবে দ্বীন প্রচার, উম্মতকে কল্যাণের সব রাস্তা প্রদর্শন এবং সর্ব প্রকার মন্দ ও অকল্যাণ থেকে সর্তক করার পর উচ্চতর বন্ধুর সাথে মিলিত হয়েছেন। তাঁর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও রহমত নাযিল হোক।

• বৈশিষ্ট্যাবলি .
তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলির অন্যতম হচেছ, তিনি সর্বশেষ নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল, মুত্তাকীদের ইমাম। তাঁর রিসালাত আম (ব্যাপক), জিন-ইনসান উভয়কে শামিল করেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতে ভ্রমন করিয়েছেন অত:পর আকাশ পানে উঠিয়ে উর্ধ্ব জগত ভ্রমণ করিয়েছেন অর্থাৎ ইসরা ও মিরাজ করিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুওয়ত ও রিসালাতের সম্মানসূচক বিশেষণ যুক্ত করে; ইয়া আইয়্যুহান্নাবিয়্যু - ইয়া আইয়্যুহাররাসূলু বলে সম্বোধন করেছেন।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه و سلم قال: (( أعطيت خمسا لم يعطهن أحد قبلي : نصرت بالرعب مسيرة شهر, وجعلت لي الأرض مسجدا وطهورا, فأيما رجل من أمتي أدركته الصلاة فليصلّ, و أحلت لي المغانم و لم تحل لأحد قبلي, وأعطيت الشفاعة, وكان النبي يبعث إلى قومه خاصة وبعثت إلى الناس عامة )) متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি, আমাকে রু'ব (বিশেষ প্রভাব) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে; এক মাস ভ্রমণপথের দূরত্ব থেকেও লোকেরা প্রভাবিত হয়ে যায়, সমগ্র ভূমিকে আমার জন্য পবিত্র ও মসজিদ করা হয়েছে, সুতরাং আমার উম্মতের যে কারো যেখানেই সালাতের ওয়াক্ত হবে সে সেখানেই তা তা আদায় করবে। গনিমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্য হালাল করা হয়েছে, আমার পূর্বে তা কারো জন্যই হালাল ছিল না, আমাকে শাফাআতের অধিকার দেয়া হয়েছে, পূর্ববর্তী নবীগণ নির্দিষ্ট করে নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরিত হতেন আর আমাকে ব্যাপকভাবে সমগ্র মানুষের জন্য নবী করে প্রেরণ করা হয়েছে।[১৮৩]
কতিপয় বৈশিষ্ট্য যা কেবলমাত্র তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল, যেমন সওমে বেসাল তথা ইফতার ও সাহ্‌রি বিহীন লাগাতার রোযা রাখা, মোহর বিহীন বিবাহ, চারজনের অধিক নারী বিবাহ করা ও একই সাথে সংসার করা, (এগুলো শুধুমাত্র তাঁর জন্য বৈধ ছিল অন্য কারো জন্য নয়) যাকাত-সদকা আহার না করা, লোকেরা যা শুনতে পেত না তিনি তা শুনতেন। লোকেরা যা দেখতে পেত না তিনি তা দেখতে পেতেন। যেমন তিনি ফেরেশতা জিবরাীলকে আল্লাহর সৃষ্টিকৃত তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দেখতে পেয়েছিলেন। নবীজীর আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল, তিনি কাউকে উত্তরাধিকারী করে যাননি এটি তাঁর জন্য জরুরিও ছিল না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ওহীর সূচনা:
عن عائشة أم المؤمنين رضي الله عنها أنها قالت : أول ما بدئ به رسول الله صلى الله عليه و سلم من الوحي الرؤيا الصالحة في النوم فكان لا يرى رؤيا إلا جاءت مثل فلق الصبح ثم حبب إليه الخلاء وكان يخلو بغار حراء فيتحنث فيه - وهو التعبد- الليالي ذوات العدد قبل أن ينزع إلى أهله ويتزود لذلك ثم يرجع إلى خديجة فيتزود لمثلها حتى جاءه الحق وهو في غار حراء فجاءه الملك فقال : اقرأ قال: ما أنا بقارئ
قال : فأخذني فغطني حتى بلغ مني الجهد ثم أرسلني فقال: اقرأ قلت : ما أنا بقارئ . فأخذني فغطني الثانية حتى بلغ مني الجهد, ثم أرسلني فقال : اقرأ فقلت : ما أنا بقارئ فأخذني فغطني الثالثة ثم أرسلني فقال : اقرأ باسم ربك الذي خلق, خلق الإنسان من علق, اقرأ و ربك الأكرم
فرجع بها رسول الله صلى الله عليه وسلم يرجف فؤاده, فدخل على خديجة بنت خويلد رضي الله عنها فقال: زملوني زملوني, فزملوه حتى ذهب عنه الروع, فقال لخديجة و أخبرها الخبر : لقد خشيت على نفسي, فقالت خديجة : كلا والله ما يخزيك الله أبدا . إنك لتصل الرحم و تحمل الكل و تكسب المعدوم و تقري الضيف و تعين على نوائب الحق .
فانطلقت به خديجة حتى أتت به ورقة بن نوفل بن أسد ابن عبد العزى ابن عم خديجة . و كان امرءا تنصر في الجاهلية و كان يكتب الكتاب العبراني فيكتب من الإنجيل بالعبرانية ما شاء الله أن يكتب, وكان شيخ كبيرا قد عمي, فقالت له خديجة : يا ابن عم, اسمع من ابن أخيك . فقال له ورقة : يا ابن أخي ماذا ترى ؟ فأخبره رسول الله صلى الله عليه وسلم خبر ما رأى . فقال له ورقة : هذا الناموس الذي نزل على موسى, يا ليتني فيها جذعا, ليتني أكون حيا إذ يخرجك قومك, فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أو مخرجي هم . قال : نعم, لم يأت رجل قط بمثل ما جئت به إلا عودي, وإن يدركني يومك أنصرك نصرا مؤزرا . ثم لم ينشب ورقة أن توفي و فتر الوحي . متفق عليه
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ওহীর সূচনা হয়েছিল ঘুমন্ত অবস্থায় ভাল ভাল স্বপ্নের মাধ্যমে, তখন তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন প্রত্যূষের আলোর ন্যায় বাস্তব হয়ে যেত। অত:পর তাঁর নিকট নির্জনতাকে প্রিয় করে দেয়া হল; নির্জনতা তাঁর নিকট ভাল লাগতো, তিনি হেরা গুহায় গিয়ে একাকী সময় কাটাতেন। সেখানে তিনি নিজ পরিবারের নিকট ফিরে আসা পর্যন্ত কয়েক রাত ইবাদাত-বন্দেগি করে কাটাতেন। যাওয়ার পূর্বেই সেদিনগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় খবার ও সামান-পত্র নিয়ে যেতেন। অত:পর খাদিজার নিকট ফিরে আসতেন এবং সে পরিমাণ আসবাব-পত্র নিয়ে আবারো চলে যেতেন। এক সময় হেরা গুহায় থাকা অবস্থায়ই তাঁর নিকট সত্য (ওহী) এসে পৌঁছল। ফেরেশতা এসে বললেন, পড়ুন; তিনি বললেন: আমি পড়তে জানি না।
তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে ধরলেন এবং বুকের সাথে লাগিয়ে প্রচণ্ড জোরে চাপ দিলেন যে, আমার যার পর নাই কষ্ট অনুভব হল। অত:পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন, আমি বললাম: আমি পড়তে জানি না।
তিনি আমাকে আবারো ধরলেন এবং বুকের সাথে লাগিয়ে প্রচণ্ড জোরে চাপ দিলেন যে, আমার যার পর নাই কষ্ট হল। এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন, আমি বললাম: আমি পড়তে জানি না।
তিনি আমাকে তৃতীয় বারের মত (বুকের সাথে লাগিয়ে প্রচণ্ড জোরে) চাপ লাগিয়ে ছেড়ে দিয়ে বললেন:
اقرأ باسم ربك الذي خلق, خلق الإنسان من علق, اقرأ و ربك الأكرم
পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক (রক্তপিণ্ড) থেকে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম।
এসব নিয়ে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে আসলেন তখন তাঁর হৃদযন্ত্র খুব করে কাঁপছিল। তিনি খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহার গৃহে প্রবেশ করে বললেন, আমাকে কম্বলাবৃত কর ; আমাকে কম্বলাবৃত কর। তারা তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলে এক সময় ভীতি চলে গেল। তখন তিনি পত্নি খাদিজার কাছে পূর্ণ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বললেন: আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি। খাদিজা সব শুনে বললেন, অসম্ভব ; আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত-লজ্জিত করবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন-তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন, মানুষের বোঝা বহন করেন, নিঃস্ব-অসহায়কে অধিক দান করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং বিপদাপদে মানুষের সাহায্য করেন।
অত:পর খাদিজা রা. তাঁকে চাচাত ভাই ওরাকাহ বিন নওফেল বিন আসাদ বিন আব্দুল উয্‌যার নিকট নিয়ে গেলেন। ওরাকাহ জাহেলি যুগে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তিনি ইবরানী (হিব্রু) ভাষায় লিখিত কিতাব লিখতেন এবং ইঞ্জীল থেকে হিব্রু ভাষায় লিখতেন। অতি বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদিজা রা. বললেন : হে ভাই! আপনার ভ্রাতুষ্পূত্র থেকে একটু শুনুন। ওরাকাহ তাঁকে বললেন: ভাতিজা কী খবর! আপনি কি কি দেখতে পান? রাসূলুল্লাহ সা. যা যা দেখেছেন সবই তাকে স্ববিস্তারে বলেছেন। তখন ওরাকাহ বললেন: ইনিতো সে ফেরেশতাই যাকে আল্লাহ নবী মূসা আ. এর নিকট নাযিল করতেন। আহ! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনাকে বের করে দেবে তখন যদি আমার যৌবন ফিরিয়ে দেয়া হত, আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম। রাসূলুল্লাহ বললেন : তারা কি আমাকে বের করে দেবে? তিনি বললেন : হ্যাঁ, আপনি যা নিয়ে এসেছেন আপনার পূর্বে এরকম যারাই নিয়ে এসেছিলেন সকলেই শত্রুতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। সে দিন পর্যন্ত যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আপনাকে মজবুত ও কার্যকরী সহযোগিতা করব। এর কিছুদিন পরই ওরাকাহ মৃত্যুবরণ করেন আর ওহীর অবতারণ কিছু দিন বন্ধ থাকে।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণীবৃন্দ:
'উম্মাহাতুল মুমিনীন' তাঁরাই হচ্ছেন দুনিয়া-আখিরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণীবৃন্দ। তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমান, পূত-পবিত্র, সতি-সাধ্বী, নির্মল চরিত্রের অধিকারী এবং মান-সম্মানে আঘাত আসতে পারে এমন সব রকমের খারাবি ও দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাঁরা হচ্ছেন,

• খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ, 
• আয়েশা বিনতে আবু বকর, 
• সাওদা বিনতে যুম'আহ, 
• হাফসা বিনতে ওমর, 
• যয়নাব বিনতে খুযাইমা, 
• উম্মে সালামা, 
• যয়নাব বিনতে জাহাশ, 
• জুয়াইরিয়া বিনতে হারেছ, 
• উম্মে হাবিবা বিনতে আবু সুফয়ান, 
• সাফিয়্যা বিনতে হুয়াইয় এবং 
• মায়মূনা বিনতে হারেছ রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না আজমাঈন।

এদের মধ্যে খাদিজা ও যয়নাব বিনতে খুযাইমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসূলুল্লাহর পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন অবশিষ্ট সকলেই তাঁর পরে।
তাদের মধ্যে মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন: খাদিজা ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তান-সন্ততি:
(১) রাসূলুল্লাহর মোট তিনজন ছেলে সন্তান জন্মগ্রহন করেন। কাসেম ও আব্দুল্লাহ এরা দুইজন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আর তৃতীয় ছেলে ইবরাহীম তাঁর উপপত্নী মারিয়া ক্বিবতিয়া থেকে। এরা সকলেই শিশু অবস্থায় মারা যান।
(২) মেয়ে সন্তান ছিলেন মোট চারজন। যয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলছূম ও ফাতেমা। তাঁরা সকলেই খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রত্যেকেরই বিয়ে হয় এবং ফাতেমা ব্যতীত সকলেই রাসূলুল্লাহর পূর্বে ইন্তেকাল করেন। একমাত্র ফাতেমা তাঁর পর ইন্তেকাল করেন। তাঁরা সকলেই ছিলেন মুসলমান, সচ্চরিত্র ও পূণ্যবান রাদিয়াল্লাহু আনহুন্না আজমাঈন।

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীবৃন্দ:
রাসূলুল্লাহর সহচরবৃন্দ, সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসন্তান। সকল উম্মতের ভেতর তাঁদের মর্যাদা সবার উপরে। মহান আল্লাহ স্বীয় নবীর সাহচর্যের জন্য তাদের মনোনীত করেছেন। তাঁরা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান এনেছেন। আল্লাহ ও রাসূলের সাহায্য করেছেন। দ্বীনের খাতিরে বাড়ী-ঘর ছেড়ে হিজরত করেছেন। দ্বীনের জন্য (মুমিনদেরকে) আশ্রয় দিয়েছেন; সাহয্য-সহযোগিতা করেছেন। নিজ জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট বলে প্রমাণ করেছেন। তাঁদের নিজেদের মাঝে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন মুহাজিরগণ অত:পর আনসারগণ।
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : خير الناس قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم يجيء أقوام تسبق شهادة أحدهم يمينه و يمينه شهادته . متفق عليه
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার যুগের মানুষ, অত:পর এর পরবর্তী যুগের মানুষ তারপর এর পরবর্তী যুগের মানুষ। এরপর এমন লোকদের আর্বিভাব ঘটবে যাদের সাক্ষ্য প্রদান শপথকে এবং শপথ সাক্ষ্য প্রদানকে অতিক্রম করবে।[১৮৪]

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের ভালবাসা:
উন্নত গুণাবলি, শ্রেষ্ঠতর মর্যাদা, অসংখ্য নেককাজ, উম্মতের প্রতি ইহসান-অনুগ্রহ, ইবাদত-আনুগত্য, জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের সহযোগিতা, আল্লাহর দিকে আহবান, হিজরত ও নুসরত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর রাস্তায় জীবন-মাল উৎসর্গ করা ইত্যাদি কারণে সাহাবায়ে কেরাম (রিদ্‌ওয়ানুল্লাহি তাআলা আলাইহিম আজমাঈন)-কে মহব্বত করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব। তাদেরকে অন্তর দিয়ে ভালবাসা, কথা ও ভাষার মাধ্যমে তাদের প্রশংসা করা, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, তাদের গুনাহ মাফের দোয়া করা, তাদের নিজেদের মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে কোনরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা, তাদের গালমন্দ না করা এক কথায় বোধ-বিশ্বাস, কথা-আচরণ ইত্যাদি মাধ্যমে তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
(১) মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿১০০﴾ ( التوبة: ১০০)
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহা সাফল্য।[১৮৫]
(২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَالَّذِينَ آَمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ﴿৭৪﴾ ( الأنفال: ৭৪)
আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আর যারা আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, তারাই প্রকৃত মুমিন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযিক।[১৮৬]
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تسبوا أصحابي ، لا تسبوا أصحابي، فوالذي نفسي بيده ، لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما أدرك مد أحدهم و لا نصيفه . متفق عليه
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আল্লাহইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমার সাহাবীদের গালমন্দ করো না, তোমরা আমার সহাবীদের গালমন্দ করো না, শপথ সে সত্তার যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ খরচ করে তাদের এক মুদ্দ ( দুই অঞ্জলী ) পরিমাণ বা এর অর্ধেকের সমানও হবে না।[১৮৭]

৫-কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান

 আল ইয়াওমুল আখের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে:
কিয়ামত দিবস, যে দিন মহান আল্লাহ সকল সৃষ্টজীবকে হিসাব ও প্রতিদান দেয়ার উদ্দেশ্যে পুনরুত্থিত করবেন। একে ইয়াওমুল আখের বলার কারণ হল এর পর আর কোন দিন নেই। সেখান থেকেই জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জহান্নামীরা জাহান্নামে অবস্থান নেবে।
 আল ইয়াওমুল আখেরের অনেকগুলো নাম আছে, প্রসিদ্ধ কয়েকটি যেমন,
ইয়াওমুল ক্বিয়ামাহ- কিয়ামত দিবস, ইয়াওমুল বা'ছ-পুনরুত্থান দিবস, ইয়াওমুল ফাস্‌ল-চুড়ান্ত ফায়সালা বা বিচার দিবস, ইয়াওমুল খুরূজ- (কবর থেকে মৃতদের) বের হবার দিবস, ইয়াওমুদ্দীন-প্রতিদান দিবস, ইয়াওমুল খুলূদ- অনন্ত জীবনের দিন, ইয়াওমুল হিসাব-হিসাব দিবস, ইয়াওমুল ওয়ীদ-ভীতি প্রদর্শন দিবস, ইয়াওমুল জাম'- সমাবেশ দিবস, ইয়াওমুত তাগাবুন বা হার-জিত দিবস, ইয়াওমুত তালাক-সাক্ষাত দিবস, ইয়াওমুত তানাদ-প্রচন্ড হাঁক-ডাক ও ফরিয়াদ দিবস, ইয়ামুল হাসরাতি-পরিতাপ দিবস, আসসাখ্‌খাহ-কর্ণবিদারক ধ্বনি, আতত্বাম্মাতুল কুবরা-মহাসংকট, আল গাশিয়াহ-আচ্ছন্নকারী, আল ওয়াকিআহ-মহা ঘটনা, আল হাক্কাহ-অবশ্যম্ভাবী ঘটনা, আল কারি'আহ-প্রচন্ড আঘাতকারী।
একটি বস্তুর একাধিক নাম হলে তা সে বস্তুর গুরত্ব ও বড়ত্ব প্রমাণ করে।
 ঈমান বিল ইয়াওমিল আখের-এর অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ কর্তৃক
বর্ণনাকৃত পুনরুত্থান, সমবেত করণ, হিসাব, সিরাত, মীযান, জান্নাত এবং জাহান্নামসহ সে মহা দিবসে যাবতীয় সঙ্ঘটিতব্য বিষয়াবলির উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। এবং তার সাথে সাথে মৃত্যু পূর্বাপর সঙ্ঘটিতব্য বিষয়াবলি যেমন কিয়ামতের আলামত, কবরের সাওয়াল-জাওয়াব ও আযাব ইত্যাদিকেও বিশ্বাস করা।
 আল ইয়াওমুল আখেরের গুরত্ব ও মর্যাদা
আল্লাহ তাআলা ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, ঈমানের রুকনসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রুকন। দুনিয়া ও আখেরাতে মানুষের শান্তি, সফলতা ও কল্যাণ এ রুকনদ্বয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনসহ ঈমানের অপরাপর রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের উপর ভিত্তিশীল। এ রুকনদ্বয়ের গুরুত্বের কারণেই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে এ দু'টোক একত্রে বর্ণনা করেছেন।
১। আল্লাহ তাআলা বলেন :
ذَلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ( الطلاق-২ )
তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে।[১৮৮]
২। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ﴿৮৭﴾ ু( النساء ু ৮৭)
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদের একত্রিত করবেন কিয়ামতের দিনে। এতে কোন সন্দেহ নেই।[১৮৯]
৩। আল্লাহ অন্যত্র বলছেন:
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ ﴿৫৯﴾ ( النساء- ৫৯)
অত:পর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখ।[১৯০]

 কবরের পরীক্ষা
১. হাদীসে এসেছে,
عن البراء بن عازب رضي الله عنه قال: خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في جنازة .. ـ وفيه ـ قال النبي صلى الله عليه وسلم (( ويأتيه ملكان فيجلسانه فيقولان له : من ربك ؟ فيقول: ربي الله ، فيقولان له : ما دينك؟ فيقول: ديني الإسلام ، فيقولان له : ما هذا الرجل الذي بعث فيكم؟ قال : فيقول هو رسول الله صلى الله عليه وسلم )) أخرجه أحمد و أبو داود
বারা বিন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছি ... -এতে আছে- নবী আকরাম সা. বলেন: এবং তার নিকট দু'জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসিয়ে বলবে: তোমার রব কে? সে বলবে আমার রব, 'আল্লাহ'। তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: আমার দ্বীন হচ্ছে 'ইসলাম'। তারা বলবে: এযে ইনি! তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল, তাঁর পরিচয় কি? সে বলবে: ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।[১৯১]
২. হাদীসে এসেছে,
وعن أنس بن مالك رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: (( العبد إذا وضع في قبره و تولي وذهب أصحابه حتى إنه ليسمع قرع نعالهم ، أتاه ملكان فأقعداه فيقولان له: ما كنت تقول في هذا الرجل محمد صلى الله عليه وسلم ؟ فيقول : أشهد أنه عبد الله ورسوله . فيقال : انظر إلى مقعدك من النار أبدلك الله به مقعدا من الجنة )) قال النبي صلى الله عليه وسلم : فيراهما جميعا .
و أما الكافر أو المنافق فيقول : لا أدري كنت أقول ما يقول الناس . فيقال : لا دريت و لا تليت، ثم يضرب بمطرقة من حديد ضربة بين أذنيه فيصيح صيحة يسمعها من يليه إلا الثقلين )) متفق عليه
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: মুমিন বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং লোকেরা তাকে রেখে চলে আসে এক পর্যায়ে সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়, তখন তার নিকট দু'জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম সম্পর্কে কি বলতে তুমি? তখন সে বলে: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হয় : তাকিয়ে দেখ জাহান্নামে তোমার অবস্থানের দিকে, আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমাকে জান্নাতের ঐ স্থানটি দান করেছেন। নবীজী বলেন : তখন সে উভয় স্থানের দিকে তাকিয়ে দেখে।
আর সে যদি কাফের বা মুনাফিক হয়, তাহলে বলে : আমি কিছু জানি না, লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন বলা হয়, তুমি জানতে চেষ্টা করনি এবং পাঠ করনি, অত:পর লোহার প্রকাণ্ড এক হাতুড়ী দিয়ে তার দুই কানের মাঝে সজোরে আঘাত করা হয়, যার কারণে বিকট এক চিৎকার দেয় সে, মানুষ ও জিন ব্যতীত তার কাছে থাকা সকলেই সে চিৎকার শুনতে পায়।[১৯২]

 কবরের আযাব দু ধরনের:

১-স্থায়ী আযাব যা কিয়ামত পর্যন্ত অবিরাম চলতে থাকবে, কখনো বন্ধ হবে না, আর সেটি প্রয়োগ হবে কাফের ও মুনাফিকদের উপর। যেমন আল্লাহ তাআলা ফিরআউন সম্প্রদায় সম্পর্কে বলছেন:
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آَلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ ﴿৪৬﴾ ( غافر: ৪৬)
আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয়, আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে (সেদিন ঘোষণা করা হবে), 'ফিরআউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতর আযাবে প্রবেশ করাও।[১৯৩]
২- বিভিন্ন মেয়াদী আযাব যা মেয়াদান্তে বন্ধ হয়ে যায়, আর এ ধরনের আযাব প্রয়োগ করা হয় একত্ববাদে বিশ্বাসী গুনাহগার মুসলমানদের উপর। অপরাধ অনুপাতে নির্ধারিত শাস্তি ভোগ করতে থাকে, অত:পর আল্লাহর রহমত-অনুগ্রহ বা রেখে যাওয়া সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম বা নেক সন্তান যে তার জন্য দোআ করে ইত্যাদি, গুনাহ মোচনকারী আমলের কারণে শাস্তি হালকা বা একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়।
عن ابن عمر رضي الله عنهما أن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال: إن أحدكم إذا مات عرض عليه مقعده بالغداة و العشي ، إن كان من أهل الجنة فمن أهل الجنة و إن كان من أهل النار فمن أهل النار يقال هذا مقعدك حتى يبعثك الله إليه يوم القيامة . متفق عليه
বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে তার অবস্থান উপস্থাপন করা হয়। যদি জান্নাতের অধিবাসী হয় তাহলে জান্নাত থেকে আর জাহান্নামী হলে জহান্নাম থেকে, এবং বলা হয় মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাকে তাঁর নিকট পুনরুত্থিত করা পর্যন্ত, এটি তোমার ঠিকানা।[১৯৪]

 কবরের নেয়ামতরাজি :
কবরের সর্বপ্রকার নেয়ামত ও সুখ-সমৃদ্ধি নেককার মুমিনদের জন্য সংরক্ষিত।
১- আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ ﴿৩০﴾ {فصلت: ৩০}
নিশ্চয় যারা বলে, আল্লাহই আমাদের রব, অত:পর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে) তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল।[১৯৫]
২-হাদীসে এসেছে
وعن البراء بن عازب رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال في المؤمن إذا أجاب الملكين في قبره : ((... فينادي مناد من السماء ، أن صدق عبدي ، فافرشوه من الجنة و ألبسوه من الجنة وافتحوا له بابا إلى الجنة ، قال فيأتيه من روحها و طيبها و يفسح له في قبره مد بصره )) أخرجه أحمد و أبو داود
সাহাবী বারা বিন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্পন্নকারী মুমিন সম্পর্কে বলছেন : (... তখন আকাশে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দেয়, আমার বান্দা সত্য বলেছে সুতরাং জান্নাত থেকে তার বিছানা বিছিয়ে দাও, জান্নাতী পোশাক তাকে পরিয়ে দাও এবং জান্নাতের দিকে তার জন্য একটি দরজা খুলে দাও। বর্ণনাকারী বলেন : তখন তার নিকট জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ আসতে থাকে। এবং তার কবরকে দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত করে দেয়া হয়।[১৯৬]
 মুমিনদেরকে কবরের ভয়, পরীক্ষা ও আযাব থেকে কতিপয় আমলের কারণে মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়। সে আমলগুলো যেমন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া, আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়া, অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায় ইত্যাদি।

 মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত রূহ (আত্মা)-এর অবস্থানস্থল:
বরযখের মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে রূহদের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান রয়েছে:
-কিছু রূহ আছে যাদের অবস্থান; মালায়ে আ'লা তথা সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সমাবেশ- ইল্লিয়্যীনের সর্বোচ্চ শিখরে। সেখানে অবস্থান করছে আম্বিয়া আলাইহিমুস্‌সালামের রূহসমূহ। অবস্থানগত দিয়ে তাদের নিজেদের মাঝে আবার পার্থক্য রয়েছে।
-কিছু রূহ পাখির আকৃতিতে জান্নাতের বৃক্ষরাজিতে ঝুলে আছে, সেগুলো সাধারণ মুমিনদের রূহ।
-কিছু আছে যারা সবুজ রংয়ের বিশেষ পাখির পেটে করে জান্নাতে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, সেগুলো আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গকারী মহৎপ্রাণ শহীদবৃন্দের রূহ।
-কিছু আছে যারা নিজ কবরে বন্দী, যেমন যুদ্ধলব্ধ মাল আত্মসাৎকারী।
-কিছু আছে ঋনের কারণে জান্নাতের প্রবেশদারে আটককৃত।
-কিছু রূহ নিজ নিকৃষ্টতার কারণে পৃথিবীতেই বন্দী থাকে।
-কিছু রূহ ব্যভিচারী নারী-পুরুষদের জন্য নির্মিত অগ্নিচুল্লিতে (শাস্তিরত) আছে।
-কিছু আছে যারা রক্তনদীতে সাতরাচ্ছে আর তাদের পাথর গিলানো হচ্ছে। তারা হচ্ছে সুদখোর...।

_________________________________________________________________________________

[১] সূরা আশ-শুরা-১১
[২] সূরা আল-মুমিনুন : ১১৭।
[৩] সূরা আম্বিয়া: ২৫।
[৪] সূরা নাহল : ৩৬
[৫] সূরা নাস : ১-৩
[৬] সূরা আন'আম: ১৬৪
[৭] সূরা আন'আম:৮২
[৮] হাদীসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম বুখারী রহ. ৩৪৩৫ ক্রমিক নম্বারে বর্ণনা করেছেন এখানে বর্ণিত হাদীসের ভাষা বুখারীর। আর ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন ২৮ ক্রমিক নম্বরে।
[৯] সূরা বাক্বারা: ২৫।
[১০] মুসলিম হাদীস নং: ৯৩
[১১] হাদীসটি সহীহ, বর্ণনায় আহমদ হাদীস নং (৬৫৮৬) এবং বুখারী আল আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে হাদীস নং (৫৫৮)। দেখুন শায়খ আলবানীর আসসিলসিলা তুস সহীহাহ। হাদীস নং (১৩৪)।
[১২] সূরা নাহল : ৩৬।
[১৩] সূরা বাকারা: ২৫৭।
[১৪] সূরা যারিয়াত: ৫৬।
[১৫] সূরা নাহল : ৫৩-৫৫।
[১৬] সূরা নিসা: ৬৯।
[১৭] বুখারী হাদীস নং ২৮৫৬ এবং মুসলিম হাদীস নং ৩০। হাদীসের ভাষ্য মুসলিম থেকে নেয়া।
[১৮] সূরা আনকাবূত : ২-৩।
[১৯] সূরা ইউসুফ: ৫৩।
[২০] সূরা আল-কাসাস: ৫০।
[২১] সূরা নিসা:৪৮।
[২২] সূরা লোকমান : ১৩।
[২৩] সূরা যুমার: ৬৫।
[২৪] বর্ণনায় বুখারী হাদীস নং ২৬৫৪ এবং মুসলিম হাদীস নং ৮৭। হাদীসের ভাষ্য বুখারীর।
[২৫] সূরা নিসা : ৪৮।
[২৬] সূরা নিসা : ১১৬।
[২৭] সূরা মায়েদা : ৭২।
[২৮] সূরা আল-হজ্ব: ৩১।
[২৯] সূরা আল বাইয়্যিনাহ : ৬।
[৩০] সূরা নিসা: ১৫০-১৫১।
[৩১] হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।হাদীস নং যথাক্রমে ( ৪৪৯৭) এবং (৯২)।
[৩২] সূরা ইসরা: ২২।
[৩৩] সূরা আল ইমরান: ১৭৫
[৩৪] সূরা মায়েদা : ২৩
[৩৫] সূরা বাকারা: ১৬৫
[৩৬] সূরা তাওবা: ৩১
[৩৭] সূরা নিসা : ১৪৫
[৩৮] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং বুখারী: ৩৪ এবং মুসলিম: ৫৮।
[৩৯] সূরা কাহফ: ১১০
[৪০] বর্ণনায় মুসলিম হাদীস নং: ২৯৮৫
[৪১] বর্ণিত হাদীসটি সহীহ, বর্ণনায় আবুদাউদ হাদীস নং ৩২৫২ এবং তিরমিযী হাদীস নং ১৫৩৫ হাদীসের ভাষ্য তিরমিযীর।
[৪২] হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে, বর্ণনায় আহমদ হাদীস নং ২৩৫৪, দেখুন আসসিলসিলাতুস সহীহাহ নং ১৩৭ এবং আবু দাউদ হাদীস নং ৪৯৮০। ভাষ্য আবু দাউদের।
[৪৩] সূরা নিসা: ৪৮
[৪৪] সূরা বাকারা: ১০২
[৪৫] হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনায় আহমদ (হাদীস নং ৯৫৩৬) এ হাদীসের ভাষ্য তাঁরই। হাকেম হাদীস নং ১৫ দেখুন ইরওয়াউল গালীল-(২০০৬)
[৪৬] সূরা নাহল: ৫৩
[৪৭] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম, বুখারী হাদীস নং ৮ মুসলিম হাদীস নং ১৬, হাদীসের ভাষ্য মুসলিমের।
[৪৮] বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং- ৩৫
[৪৯] মুসলিম হাদীস নং- ৩৪
[৫০] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং বুখারী- ১৬, মুসলিম ৪৩ হাদীসের ভাষ্য বুখারীর।
[৫১] সূরা আনফাল : ২-৪
[৫২] সূরা আনফাল : ৭৪
[৫৩] সূরা হুজুরাত: ১৫ূ
[৫৪] হাদীসটি হাসান সনদে বণিৃত হয়েছে, বর্ণনায় আবু দাউদ হাদীস নং ৪৬৮১। দেখুন আস সিলসিলাতুস সহীহাহ ক্রমিক-৩৮০।
[৫৫] বুখারী-মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ১৫, এবং মুসলিম হাদীস নং ১৪
[৫৬] বুখারী-মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ১৭, এবং মুসলিম হাদীস নং ৭৪
[৫৭] মুসলিম। হাদীস নং ৫৪
[৫৮] বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ১৩, মুসলিম হাদীস নং ৪৫
[৫৯] বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ৬০১৮ এবং মুসলিম ৪৭
[৬০] বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং ৪৯।
[৬১] বর্ণনায় মুসলিম, হাদীস নং ৫৫।
[৬২] বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ২৬ এবং মুসলিম ৮৩।
[৬৩] সূরা আল-ফাতহ:৪
[৬৪] সূরা তাওবাহ: ১২৪
[৬৫] বুখারী মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ২৪৭৫ এবং মুসলিম ৫৭।
[৬৬] বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ৪৪, এবং মুসলিম ১৯৩।
[৬৭] সূরা আনফাল : ৩৮
[৬৮] বুখারী মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ১৪৩৬ এবং মুসলিম হাদীস নং ১২৩
[৬৯] বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ৬৯২১ এবং মুসলিম হাদীস নং ১২০।
[৭০]বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং বুখারী (৫০) এবং মুসলিম (৮)। হাদীসের ভাষ্য ইমাম মুসলিমের।
[৭১] সূরা রূম : ৩০
[৭২] সূরা তুর : ৩৫-৩৬।
[৭৩] সূরা নূর : ৪৪।
[৭৪] সূরা আম্বিয়া : ৮৪-৮৪
[৭৫] সূরা আরাফ : ৫৪
[৭৬] সূরা মায়েদা : ১২০
[৭৭] সূরা আল-ফুরকান : ২
[৭৮] সূরা ইয়াসীন : ৮২
[৭৯] সূরা আনআম : ৫৯
[৮০] সূরা হাদীদ:৩।
[৮১] সূরা হিজর : ২১
[৮২] সূরা আনআম : ১০২
[৮৩] সূরা বাকারা : ১৬৩
[৮৪] সূরা হাজ্জ: ৬২।
[৮৫] সূরা-আরাফ : ১৮০
[৮৬] (১) হাদীস বুখারী এবং মুসলিম উভয়ে বর্ণনা করেছেন। বুখারী হাদীস নং ৭৩৯২, মুসলিম হাদীস নং ২৬৭৭।
[৮৭] সূরা যুমার : ৬২।
[৮৮] সূরা ইউনুস : ১০১।
[৮৯] সূরা মুহাম্মদ: ২৪।
[৯০] সূরা তাওবা:১২৪।
[৯১] সূরা ইউনুস : ৩১-৩২।
[৯১] সূরা আল-হিজর: ২১
[৯৩] সূরা মুনাফিকূন : ৭।
[৯৪] সূরা ইয়াসীন: ৮২।
[৯৫] সূরা আলে ইমরান: ২৬।
[৯৬] বর্ণনায় : সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৭৭
[৯৭] সূরা আত্‌-তাওবা: ৫৫।
[৯৮] সূরা নূর : ৫২।
[৯৯] সূরা বাকারা : ৩-৫।
[১০০] সূরা আনকাবুত : ৪০।
[১০১] সূরা হুদ : ৬৬-৬৭।
[১০২] সূরা আল-মুদ্দাসসির : ৩৬-৩৭।
[১০৩] সূরা মুমিনুন : ১।
[১০৪] সূরা : আল-হজ: ৫৪।
[১০৫] সূরা আর-রূম : ৪৭।
[১০৬] সূরা মুনাফিকুন : ৮।
[১০৭] সূরা আন নূর : ৫৫।
[১০৮] সূরা আল হজ্ব: ৩৮।
[১০৯] সূরা আনআম : ৮২।
[১১০] সূরা ইউনুস : ১০৩।
[১১১] সূরা নাহল : ৯৭।
[১১২] সূরা নিসা : ১৪১।
[১১৩] সূরা আ'রাফ : ৯৬।
[১১৪] সূরা আনফাল: ১৯।
[১১৫] সূরা তাওবা : ৭২।
[১১৬] সূরা কিয়ামাহ : ২২-২৩।
[১১৭] সূরা- আল-বাকারা : ১৩৭।
[১১৮] সূরা নিসা : ১৩৬।
[১১৯] সূরা আল-বাকারা : ২০৮।
[১২০] সূরা আহযাব : ৪১-৪২।
[১২১] সূরা আরাফ: ৯৬।
[১২২] সূরা আম্বিয়া-১৯-২০।
[১২৩] সূরা আত্‌-তাহরীম : ৬।
[১২৪] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম, বুখারী হাদীস নং ৩২০৭, মুসলিম-১৬২।
[১২৫] সূরা ইনফিতার: ১০-১২।
[১২৬] সূরা ক্বাফ : ১৭-১৮।
[১২৭] সূরা রা'দ : ১১
[১২৮] বুখারী ও মুসলিম, বুখারী হাদীস নং ৭৫০১ এবং মুসলিম হাদীস নং ১২৮।
[১২৯] ইমাম আবু দাউদ তাঁর কিতাবে হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন। হাদীস নং ৪৭২৭, দেখুন, আস সিলসিলাতুস সহীহা- ক্রমিক নং ১৫১।
[১৩০] বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ৪৮৫৭, মুসলিম হাদীস নং ১৭৪।
[১৩১] সূরা জাছিয়া-৩৭।
[১৩২] সূরা গাফের : ৭-৯।
[১৩৩] সূরা মায়েদা: ৪৮।
[১৩৪] সূরা হিজর-৯।
[১৩৫] সূরা আশ-শোআরা : ১৯২-১৯৫।
[১৩৬] সূরা আল যুমার : ২৩।
[১৩৬] সূরা আলে ইমরান : ১৬৪।
[১৩৮] সূরা জুমুআহ : ২-৪।
[১৩৯] সূরা আন-নাহল:৩৬।
[১৪০] সূরা আল- মায়েদা : ৪৪।
[১৪১] সূরা ত্বা-হা: ১১৫।
[১৪২] সূরা আনআম : ৮৩-৮৯।
[১৪৩] সূরা মারয়াম : ৫৬।
[১৪৪] সূরা শুআরা : ১২৩-১২৫।
[১৪৫] সূরা শু'আরা : ১৪১-১৪৩।
[১৪৬] সূরা শু'আরা : ১৭৬-১৭৮।
[১৪৭] সূরা সোয়াদ : ৪৮।
[১৪৮] সূরা আহযাব : ৪০।
[১৪৯] সূরা গাফের : ৭৮।
[১৫০] হাদীসের সনদ সহীহ লিগাইরিহী। বর্ণনায় আহমদ হাদীস নং ২২৬৪৪ এবং ত্ববরানী হাদীস নং ৮ / ২১৭। দেখুন সিলসিলাতুস সহীহাহ : ২৬৬৮
[১৫১] সূরা শুরা : ১৩।
[১৫২] সূরা আলে ইমরান : ৮১।
[১৫৩] সূরা নিসা : ১৬৩।
[১৫৪] বুখারী মুসলিম বুখারী হাদীস নং ৩৩৪০ মুসলিম নং ১৯৪
[১৫৫] সূরা আহযাব : ৪০।
[১৫৬] সূরা রা'দ : ৭।
[১৫৭] সূরা সাবা: ২৮।
[১৫৮] সূরা আম্বিয়া : ১০৭।
[১৫৯] সূরা নাহল : ৩৬।
[১৬০] সূরা জুমুআ-২।
[১৬১] সূরা : আল হজ্ব : ৪৯-৫১।
[১৬২] সূরা আন নিসা : ১৬৫।
[১৬৩] সূরা আম্বিয়া : ১০৭।
[১৬৪] সূরা নাহল : ৪৩।
[১৬৫] সূরা আলে ইমরান : ৩৩।
[১৬৬] সূরা নাহল : ৩৬।
[১৬৭] সূরা মায়েদা : ৪৮।
[১৬৮] সূরা আল-ফোরকান : ১।
[১৬৯] সূরা যুখরুফ : ৫৯।
[১৭০] সূরা আরাফ : ১৮৮
[১৭১] সূরা হজ্ব : ৭৫।
[১৭২] সূরা কাহফ : ১১০।
[১৭৩] সূরা নাজম : ১-৫।
[১৭৪] বুখারী-মুসলিম। বুখারী হাদীস নং ৬৭৩০ আর মুসলিম - ১৭৫৭
[১৭৫] বর্ণনায় বুখারী : হাদীস নং ৩৫৭০
[১৭৬] বর্ণনায় বুখারী- মুসলিম : বুখারী হাদীস নং ৪৫৮৬ আর মুসলিম হাদীস নং ২৪৪৪
[১৭৭] হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে ইমাম আহমদ রহ. তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। হাদীস নম্বর : ২৭)
[১৭৮] আবু দাউদ বিশুদ্ধ সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন : হাদীস নং ১০৪৭
[১৭৯] বর্ণনায় আবু ইয়ালা, হাদীস নং (৩৪২৫)। হাদীসের সনদ, জাইয়িদ। সিলসিলাতুস সহীহা। ক্রমিক (৬২১)।
[১৮০] মুসলিম : ২৩৭৫
[১৮১] সূরা আহযাব : ৫৩।
[১৮২] সূরা নিসা : ১৩৬।
[১৮৩] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। বুখারী হাদীস নং (৩৩৫) আর মুসলিম (৫২১)।
[১৮৪] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং বুখারী (২৬৫২) ও মুসলিম (২৫৩৩)।
[১৮৫] সূরা তাওবা: ১০০।
[১৮৬] সুরা আনফাল: ৭৪।
[১৮৭] বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং যথাক্রমে (৩৬৭৩) ও (২৫৪০)।
[১৮৮] সূরা তালাক : ২।
[১৮৯] সূরা নিসা: ৮৭।
[১৯০] সূরা নিসা; ৫৯।
[১৯১] বর্ণনায় আহমদ ও আবু দাউদ। হাদীস নং আহমদ (১৮৭৩৩) ও আবু দাঊদ (৪৭৫৩)।
[১৯২] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম, বুখারী হাদীস নং (১৩৩৮) এবং মুসলিম (২৮৭০)।
[১৯৩] সূরা গাফির : ৪৬।
[১৯৪] বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম। হাদীস নং বুখারী (১৩৭৯) ও মুসলিম (২৮৬৬)।
[১৯৫] সূরা ফুসসিলাত: ৩০।
[১৯৬] হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদে ইমাম আহমাদ ও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। আহমাদ হাদীস নম্বর : (১৮৭৩৩) আর আবু দাউদ : (৪৭৫৩)। 
_________________________________________________________________________________

সংকলন: মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম বিন আব্দুল্লাহ আত্‌ তুয়াইজিরী
অনুবাদক: ইকবাল হোসাইন মাসূম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...