Monday 23 February 2015

জান্নাতে কি হবে?



শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু



 আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য জান্নাতের মধ্যে যা প্রস্তুত রেখেছেন

আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ٤٥ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٍ ءَامِنِينَ ٤٦ وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٧ لَا يَمَسُّهُمۡ فِيهَا نَصَبٞ وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨ ﴾ [الحجر: ٤٥،  ٤٨] 
অর্থাৎ নিশ্চয় পরহেযগাররা বাস করবে উদ্যান ও প্রস্রবণসমূহে। [তাদেরকে বলা হবে,] তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে তাতে প্রবেশ কর। আমি তাদের অন্তরে যে ঈর্ষা থাকবে তা দূর করে দেবতারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে। সেথায় তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেথা হতে বহিষ্কৃতও হবে না। (সূরা হিজর ৪৫-৪৮ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
﴿ يَٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٦٨ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا وَكَانُواْ مُسۡلِمِينَ ٦٩ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ ٧٠ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢ لَكُمۡ فِيهَا فَٰكِهَةٞ كَثِيرَةٞ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٧٣ ﴾ [الزخرف: ٦٨،  ٧٣] 
অর্থাৎ হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলে। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। সবর্ণের থালা ও পান পাত্র নিয়ে ওদের মাঝে ফিরানো হবেসেখানে রয়েছে এমন সমস্ত কিছুযা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। এটিই জান্নাততোমরা তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ যার অধিকারী হয়েছ। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ফলমূলতা থেকে তোমরা আহার করবে। (সূরা যুখরুফ ৬৮-৭৩ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٥٣ كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٥٤ يَدۡعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ ٥٥ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكَۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٥٧ ﴾ [الدخان: ٥١،  ٥٧] 
অর্থাৎ নিশ্চয় সাবধানীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে- বাগানসমূহে ও ঝরনারাজিতেওরা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে ওদেরআর আয়তলোচনা হুরদের সাথে তাদের বিবাহ দেব। সেখানে তারা নিশ্চিন্তে বিবিধ ফলমূল আনতে বলবে। [ইহকালে] প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন। [এ প্রতিদান] তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহসবরূপ। এটিই তো মহা সাফল্য। (সূরা দুখান ৫১-৫৭ আয়াত)
আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٍ ٢٢ عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ ٢٣ تَعۡرِفُ فِي وُجُوهِهِمۡ نَضۡرَةَ ٱلنَّعِيمِ ٢٤ يُسۡقَوۡنَ مِن رَّحِيقٖ مَّخۡتُومٍ ٢٥ خِتَٰمُهُۥ مِسۡكٞۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ ٢٦ وَمِزَاجُهُۥ مِن تَسۡنِيمٍ ٢٧ عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا ٱلۡمُقَرَّبُونَ ٢٨ ﴾ [المطففين: ٢٢،  ٢٨] 
অর্থাৎ পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখতে থাকবে। তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবে। তাদেরকে মোহর আঁটা বিশুদ্ধ মদিরা হতে পান করানো হবে। এর মোহর হচ্ছে কস্তুরীর। আর তা লাভের জন্যই প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। এর মিশ্রণ হবে তাসনীমের [পানির]। এটা একটি প্রস্রবণযা হতে নৈকট্য-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা পান করবে। (সূরা মুত্বাফিফীন ২২-২৮]
এ মর্মে আরও বহু আয়াত বিদ্যমান।

1/1889. وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَأْكُلُ أَهْلُ الجَنَّةِ فِيهَا، وَيَشْرَبُونَ، وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ، وَلاَ يَمْتَخِطُونَ، وَلاَ يَبُولُونَ، وَلكِنْ طَعَامُهُمْ ذَلِكَ جُشَاءٌ كَرَشْحِ المِسْكِ، يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّكْبِيرَ، كَمَا يُلْهَمُونَ النَّفَسَ» . رواه مسلم
১/১৮৮৯। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতের মধ্যে পানাহার করবেকিন্তু পেশাব-পায়খানা করবে নাতারা নাক ঝাড়বে নাপেশাবও করবে না। বরং তাদের ঐ খাবার ঢেকুর ও কস্তুরীবৎ সুগন্ধময় ঘাম [হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাবে]। তাদের মধ্যে তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার স্বয়ংক্রিয় শক্তি প্রক্ষিপ্ত হবেযেমন শ্বাসক্রিয়ার শক্তি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে।’’ (মুসলিম)[1]
2/1890 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «قَالَ اللهُ تَعَالَى : أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، وَاقْرَؤُوا إِنْ شِئْتُمْ : ﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة: ١٧]   . متفق عَلَيْهِ
২/১৮৯০। আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছিযা কোন চক্ষু দর্শন করেনিকোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারযার অর্থ, ‘‘কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কি পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’ (সূরা সাজদাহ ১৭ আয়াতবুখারী-মুসলিম][2]
3/1891 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَوَّلُ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ عَلَى أَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ إِضَاءَةً، لاَ يَبُولُونَ، وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ، وَلاَ يَتْفُلُونَ، وَلاَ يَمْتَخِطُونَ . أَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ، وَرَشْحُهُمُ المِسْكُ، وَمَجَامِرُهُمُ الأُلُوَّةُ - عُودُ الطِّيبِ - أَزْوَاجُهُمُ الحُورُ العِيْنُ، عَلَى خَلْقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ، عَلَى صُورَةِ أَبِيهِمْ آدَمَ سِتُّونَ ذِرَاعاً فِي السَّمَاءِ». متفق عَلَيْهِ .
وَفِي رِوَايَةِ البُخَارِي وَمُسلِمٍ : «آنِيَتُهُمْ فِيهَا الذَّهَبُ، وَرَشْحُهُمُ المِسْكُ . وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ يُرَى مُخُّ سَاقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ مِنَ الحُسْنِ، لاَ اخْتِلاَفَ بَيْنَهُمْ، وَلاَ تَبَاغُضَ، قُلُوبُهُمْ قَلْبُ وَاحِدٍ، يُسَبِّحُونَ اللهَ بُكْرَةً وَعَشِياً» .
৩/১৮৯১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে। অতঃপর তাদের পরবর্তী দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা [জান্নাতে] পেশাব করবে নাপায়খানা করবে নাথুথু ফেলবে নানাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই একটি মানব কাঠামোআদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে [যাদের উচ্চতা হবে] ষাট হাত পর্যন্ত।’’ (বুখারী-মুসলিম)[3]
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘[জান্নাতে] তাদের পাত্র হবে সবর্ণেরতাদের গায়ের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবেযাদের সৌন্দর্যের দরুন মাংস ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতভেদ থাকবে না। পারস্পরিক বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সকলের অন্তর একটি অন্তরের মত হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠে রত থাকবে।’’
4/1892 وَعَنِ المُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ رضي الله عنه عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «سَأَلَ مُوسَى عليه السلام رَبَّهُ : مَا أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً ؟ قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ، فَيُقَالُ لَهُ : اُدْخُلِ الجَنَّةَ . فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ، وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ ؟ فَيُقَالُ لَهُ : أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا ؟ فَيقُولُ : رَضِيْتُ رَبِّ، فَيقُولُ : لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ، فَيقُولُ فِي الخَامِسَةِ . رَضِيْتُ رَبِّ، فَيقُولُ : هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ، وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ، وَلَذَّتْ عَيْنُكَ . فَيقُولُ : رَضِيتُ رَبِّ . قَالَ: رَبِّ فَأَعْلاَهُمْ مَنْزِلَةً ؟ قالَ : أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ ؛ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِي، وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا، فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ، وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ، وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ» . رواه مسلم
৪/১৮৯২। মুগীরা ইবনে শুবা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসা স্বীয় প্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জান্নাতিদের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতি কে হবে?’ আল্লাহ তাআলা উত্তর দিলেনসে হবে এমন একটি লোকযে সমস্ত জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর [সর্বশেষে] আসবে। তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! আমি কিভাবে [কোথায়] প্রবেশ করবঅথচ সমস্ত লোক নিজ নিজ জায়গা দখল করেছে এবং নিজ নিজ অংশ নিয়ে ফেলেছে।’ তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট যেপৃথিবীর রাজাদের মধ্যে কোন রাজার মত তোমার রাজত্ব হবে?’ সে বলবে, ‘প্রভু! আমি এতেই সন্তুষ্ট।’ তারপর আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার জন্য তাই দেওয়া হল। আর ওর সমতুল্যওর সমতুল্যওর সমতুল্যওর সমতুল্য [অর্থাৎ ওর চার গুণ রাজত্ব দেওয়া হল]’ সে পঞ্চমবারে বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আমি [ওতেই] সন্তুষ্ট।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার জন্য এটা এবং এর দশগুণ [রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হল]। এ ছাড়াও তোমার জন্য রইল সে সব বস্তুযা তোমার অন্তর কামনা করবে এবং তোমার চক্ষু তৃপ্তি উপভোগ করবে।’ তখন সে বলবে, ‘আমি ওতেই সন্তুষ্টহে প্রভু!
[মুসা] বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আর সর্বোচ্চ স্তরের জান্নাতি কারা হবে?’ আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘তারা হবে সেই সব বান্দাযাদেরকে আমি চাই। আমি স্বহস্তে যাদের জন্য সম্মান-বৃক্ষ রোপণ করেছি এবং তার উপর সীল-মোহর অংকিত করে দিয়েছি [যাতে তারা ব্যতিরেকে অন্য কেউ তা দেখতে না পায়]। সুতরাং কোন চক্ষু তা দর্শন করেনিকোন কর্ণ তা শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের মনে তা কল্পিতও হয়নি।’’ (মুসলিম) [4]
5/1893 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنِّي لأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجاً مِنْهَا، وَآخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولاً الجَنَّةَ . رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ حَبْواً، فَيقُولُ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - لَهُ : اذْهَبْ فادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلأَى، فَيَرْجِعُ، فَيقُولُ : يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلأَى ‍! فَيَقُولُ اللهُ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأتِيهَا، فَيُخيَّلُ إِلَيهِ أنَّها مَلأَى، فيَرْجِعُ . فَيَقُوْلُ : يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلأَى، فَيَقُولُ اللهُ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ لَهُ : اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ . فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشرَةَ أَمْثَالِهَا ؛ أَوْ إِنَّ لَكَ مِثْلَ عَشرَةِ أَمْثَالِ الدُّنْيَا، فَيقُولُ : أَتَسْخَرُ بِي، أَوْ تَضْحَكُ بِي وَأنْتَ المَلِكُ ؟» قَالَ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ فَكَانَ يَقُوْلُ : «ذَلِكَ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً». متفق عليه
৫/১৮৯৩। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনএকদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সর্বশেষে যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেতার সম্পর্কে অবশ্যই আমার জানা আছে। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে [বা বুকে ভর দিয়ে] চলে জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সুতরাং সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে,জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সে ফিরে এসে বলবে, ‘হে প্রভু! জান্নাত তো পরিপূর্ণ দেখলাম।’ আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলবেন, ‘যাওজান্নাতে প্রবেশ কর।’ তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যেজান্নাত তো ভরে গেছে। তাই সে আবার ফিরে এসে বলবে, ‘হে প্রভু! জান্নাত তো ভরতি দেখলাম।’ তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য থাকল পৃথিবীর সমতুল্য এবং তার দশগুণ [পরিমাণ বিশাল জান্নাত]! অথবা তোমার জন্য পৃথিবীর দশগুণ [পরিমাণ বিশাল জান্নাত রইল]!’ তখন সে বলবে, ‘হে প্রভু! তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছঅথবা আমার সাথে হাসি-মজাক করছ অথচ তুমি বাদশাহ [হাসি-ঠাট্টা তোমাকে শোভা দেয় না]’’ বর্ণনাকারী বলেনতখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমনভাবে হাসতে দেখলাম যেতাঁর চোয়ালের দাঁতগুলি প্রকাশিত হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘‘এ হল সর্বনিম্ন মানের জান্নাতি’’ (বুখারী-মুসলিম) [5] 
6/1894 وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ لِلمُؤْمِنِ فِي الجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ طُولُهَا فِي السَّمَاءِ سِتُّونَ مِيلاً . لِلمُؤْمِنِ فِيهَا أَهْلُونَ يَطُوفُ عَلَيْهِمُ المُؤْمِنُ فَلاَ يَرَى بَعْضُهُمْ بَعْضاً». متفق عليه
৬/১৮৯৪। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় জান্নাতে মুমীনদের জন্য একটি শূন্যগর্ভ মোতির তাঁবু থাকবেযার দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। এর মধ্যে মুমীনদের জন্য একাধিক স্ত্রী থাকবে। যাদের সকলের সাথে মুমিন সহবাস করবে। কিন্তু তাদের কেউ কাউকে দেখতে পাবে না।’’ (বুখারী-মুসলিম) [6]   
এক মাইলঃ ছয় হাজার হাত সমান দীর্ঘ।
7/1895 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ شَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ الجَوَادَ المُضَمَّرَ السَّريعَ مِئَةَ سَنَةٍ مَا يَقْطَعُها». متفق عليه
وَرَوَيَاهُ فِي الصَّحِيحَينِ أَيضاً مِن رِوَايَةِ أَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: «يَسيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّها مِئَةَ سَنَةٍ مَا يَقْطَعُها» .
৭/১৮৯৫। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে,যার ছায়ায় কোন আরওহী উৎকৃষ্টবিশেষভাবে প্রতিপালিত হালকা দেহের দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশো বছর চললেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না।’’ (বুখারী-মুসলিম) [7]
এটিকেই আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বুখারী-মুসলিম সহীহায়নে বর্ণনা করেছেন যে, ‘‘একটি সওয়ার [অশ্বারোহী] তার ছায়ায় একশো বছর ব্যাপী চললেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।’’
8/1896 وَعَنْه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ لَيَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الغُرَفِ مِن فَوْقِهِمْ كَمَا تَرَاءَوْنَ الكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الغَابِرَ فِي الأُفُق مِنَ المَشْرِقِ أَوِ المَغْرِبِ لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ؛ تِلْكَ مَنَازِلُ الأَنبِيَاءِ لاَ يَبْلُغُها غَيْرُهُمْ قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللهِ وَصَدَّقُوا المُرْسَلِينَ» . متفق عليه
৮/১৮৯৬। উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু] হতে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অবশ্যই জান্নাতিগণ তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবেযেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল অস্তগামী তারকা গভীর দৃষ্টিতে দেখতে পাও। এটি হবে তাদের মর্যাদার ব্যবধানের জন্য।’’ [সাহাবীগণ] বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ তো নবীগণের স্থানতাঁরা ছাড়া অন্যরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না।’ তিনি বললেন, ‘‘অবশ্যইসেই সত্তার শপথযাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! সেই লোকরাও [পৌঁছতে পারবে] যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে রসূলগণকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [8]
9/1897 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَقَابُ قَوْسٍ فِي الجَنَّةِ خَيْرٌ مِمَّا تَطْلُعُ عَلَيْهِ الشَّمْسُ أَو تَغْرُبُ». متفق عليه
৯/১৮৯৭। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান [দুনিয়ার] যেসব বস্তুর উপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে সেসব বস্তু চেয়েও উত্তম।’’ (বুখারী-মুসলিম) [9]
10/1898 وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ سُوْقاً يَأتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ . فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ، فَتَحْثُو في وُجُوهِهِم وَثِيَابِهِمْ، فَيَزدَادُونَ حُسناً وَجَمَالاً فَيَرْجِعُونَ إلَى أَهْلِيهِمْ، وَقَد ازْدَادُوا حُسْناً وَجَمَالاً، فَيقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ : وَاللهِ لقدِ ازْدَدْتُمْ حُسْناً وَجَمَالاً ! فَيقُولُونَ : وَأنْتُمْ وَاللهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْناً وَجَمالاً !» . رواه مسلم
১০/১৮৯৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতে একটি বাজার হবেযেখানে জান্নাতিগণ প্রত্যেক শুক্রবার আসবে। তখন উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবেযা তাদের চেহারায় ও কাপড়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেবে। ফলে তাদের শোভা-সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। অতঃপর তারা রূপ-সৌন্দর্যের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের স্ত্রীগণের কাছে ফিরবে। তখন তারা তাদেরকে দেখে বলবে, ‘আল্লাহর কসম! আপনাদের রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!’ তারাও বলে উঠবে, ‘আল্লাহর শপথ! আমাদের যাবার পর তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!’’ (মুসলিম)[10]
11/1899 وَعَنْ سَهْلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ لَيَتَرَاءَوْنَ الغُرَفَ فِي الجَنَّةِ كَمَا تَتَرَاءَوْنَ الكَوكَبَ فِي السَّمَاءِ». متفق عليه
১১/১৮৯৯। সাহ্ল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতিগণ জান্নাতের বালাখানাগুলিকে এমন গভীরভাবে দেখবেযেভাবে তোমরা আকাশের তারকা দেখে থাক।’’ (বুখারী-মুসলিম)[11]
12/1900 وَعَنْه رضي الله عنه قَالَ: شَهِدْتُ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَجْلِساً وَصَفَ فِيهِ الجَنَّةَ حَتَّى انْتَهَى، ثُمَّ قَالَ فِي آخِرِ حَدِيثِهِ : «فيهَا مَا لاَ عَينٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلى قَلْبِ بَشَرٍ» ثُمَّ قَرَأَ : ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧ ﴾ [السجدة: ١٦،  ١٧]  . رواه البخاري
১২/১৯০০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনআমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন এক মজলিসে উপস্থিত ছিলামযেখানে তিনি জান্নাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তা সমাপ্ত করলেন এবং আলোচনার শেষে বললেন, ‘‘জান্নাতে এমন নিয়ামত [সুখ-সামগ্রী] বিদ্যমান আছে যা কোন চক্ষু দর্শন করেনিকোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের মনে তার ধারণার উদ্রেকও হয়নি. তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেনযার অর্থ হল, ‘তারা শয্যা-ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি তা হতে তারা দান করে। কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কি পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’ (সূরা সাজদাহ ১৬-১৭ আয়াতবুখারী][12]
13/1901 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ يُنَادِي مُنَادٍ : إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا، فَلاَ تَمُوتُوا أَبَداً، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا، فَلاَ تَسْقَمُوا أَبَداً، وَإِنَّ لَكمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلاَ تَهْرَمُوا أَبَداً، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا، فَلاَ تَبْأسُوا أَبَداً» . رواه مسلم
১৩/১৯০১। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, ‘‘জান্নাতিরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবেতখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যেতোমাদের জন্য এখন অনন্ত জীবনতোমরা আর কখনো মরবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুস্বাস্থ্যতোমরা আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির যৌবনতোমরা আর কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুখ ও পরমানন্দতোমরা আর কখনো দুঃখ-কষ্ট পাবে না।’’ (মুসলিম)[13]
14/1902 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ أَدْنَى مَقْعَدِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ أَنْ يَقُولَ لَهُ : تَمَنَّ، فَيَتَمَنَّى وَيَتَمَنَّى فَيقُولُ لَهُ : هَلْ تَمَنَّيتَ ؟ فَيَقُولُ : نَعَمْ، فَيَقُولُ لَهُ : فَإِنَّ لَكَ مَا تَمَنَّيتَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ» . رواه مسلم
১৪/১৯০২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে নিম্নতম জান্নাতির মর্যাদা এই হবে যেতাকে আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তুমি কামনা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর [আমি অমুক জিনিস চাইঅমুক বস্তু চাই ইত্যাদি]’ সুতরাং সে কামনা করবে আর কামনা করতেই থাকবে। তিনি বলবেন, ‘তুমি কামনা করলে কি?’ সে উত্তর দেবে, ‘হ্যাঁ।’ তিনি তাকে বলবেন, ‘তোমার জন্য সেই পরিমাণ রইলযে পরিমাণ তুমি কামনা করেছ এবং তার সাথে সাথে তার সমতুল্য আরও কিছু রইল।’’ (মুসলিম)[14]
15/1903 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ اللهَ ـ عَزَّ وَجَلَّ ـ يَقُولُ لأَهْلِ الجَنَّةِ : يَا أَهْلَ الجَنَّةِ، فَيَقُولُونَ : لَبَّيكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ، وَالخَيْرُ فِي يَديْكَ، فَيقُولُ : هَلْ رَضِيتُم ؟ فَيقُولُونَ : وَمَا لَنَا لاَ نَرْضَى يَا رَبَّنَا وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحداً مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ : أَلاَ أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ ؟ فَيقُولُونَ : وَأَيُّ شَيءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ ؟ فَيقُولُ : أُحِلُّ عَلَيكُمْ رِضْوَانِي فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَداً» . متفق عليه
১৫/১৯০৩। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান প্রভু জান্নাতিদেরকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘হে জান্নাতের অধিবাসীগণ!’ তারা উত্তরে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাযির আছিযাবতীয় সুখ ও কল্যাণ তোমার হাতে আছে।’ তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, ‘তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ?’ তারা বলবে, ‘আমাদের কি হয়েছে যেসন্তুষ্ট হব নাহে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো আমাদেরকে সেই জিনিস দান করেছযা তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করনি।’ তখন তিনি বলবেন, ‘এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি?’ তারা বলবে, ‘এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’ মহান প্রভু জবাবে বলবেন, ‘তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য করব। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।’’ (বুখারী-মুসলিম) [15]
16/1904 وَعَنْ جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه قَالَ: كُنَّا عِندَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم  فَنَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَقَالَ: «إنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عَيَاناً كَمَا تَرَوْنَ هَذَا القَمَرَ، لاَ تُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ». متفق عليه
১৬/১৯০৪। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনএক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে,যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।’’ (বুখারী-মুসলিম)[16]
17/1905 وَعَنْ صُهَيبٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّةَ يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: تُريدُونَ شَيئاً أَزِيدُكُمْ ؟ فَيَقُولُونَ : أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا ؟ أَلَمْ تُدْخِلْنَا الجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ ؟ فَيَكْشِفُ الحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئاً أَحَبَّ إلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إلَى رَبِّهِمْ».رواه مسلم .
১৭/১৯০৫। সুহাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাতিরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবেতখন মহান বরকতময় আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা কি চাও যেআমি তোমাদের জন্য আরও কিছু বেশি দিই?’ তারা বলবে, ‘তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দাওনিআমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ অতঃপর আল্লাহ [হঠাৎ] পর্দা সরিয়ে দেবেন [এবং তারা তাঁর চেহারা দর্শন লাভ করবে]। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতিদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন [দীদার]ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।’’ (মুসলিম)[17]
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ يَهۡدِيهِمۡ رَبُّهُم بِإِيمَٰنِهِمۡۖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهِمُ ٱلۡأَنۡهَٰرُ فِي جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ٩ دَعۡوَىٰهُمۡ فِيهَا سُبۡحَٰنَكَ ٱللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمۡ فِيهَا سَلَٰمٞۚ وَءَاخِرُ دَعۡوَىٰهُمۡ أَنِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٠ ﴾ [يونس : ٩،  ١٠] 
অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেনশান্তির উদ্যানসমূহে তাদের [বাসস্থানের] তলদেশ দিয়ে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তাদের বাক্য হবে, ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ [হে আল্লাহ! তুমি মহান পবিত্র]! এবং পরস্পরের অভিবাদন হবে সালাম। আর তাদের শেষ বাক্য হবে, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাবিবল আলামীন’ [সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য]। (সূরা ইউনুস ৯-১০]



[1] মুসলিম ২৮৩৫আবূ দাউদ ৪৭৪১আহমাদ ১৩৯৯২১৪৩৫৫১৪৪০১১৪৫০৫১৪৬৯৭দারেমী ২৮২৮৭
[2] সহীহুল বুখারী ৩২৪৪৪৭৭৯৪৭৮০৪৭৯৮মুসলিম ২৮২৮৪তিরমিযী ৩১৯৭ইবনু মাজাহ ৪৩২৮আহমাদ ২৭৩৬০৮৬০৯৯০২৬৯১২৫৯৩৬৫৯৬৪১,৯৬৮৮১০০৫১১০১৯৯দারেমী ২৮২৮
[3] সহীহুল বুখারী ৩২৪৫৩২৪৬৩২৫৪৩৩২৭মুসলিম ১৬২৫২৮৩৪তিরমিযী ২৪৩৭ইবনু মাজাহ ৪৩৩৩আহমাদ ৭১১২৭১২৫৭৩২৮৭৩৮৭৭৪৩৭৮৩৩৭,৮৯৪৯৫১৬৬৯৭৭২১০১০৪৬১০১৭০১০২১৫২৭৪১৫দারেমী ২৮২৩
[4] মুসলিম ১৮৯তিরমিযী ৩১৯৮
[5] সহীহুল বুখারী ৬৫৭১৭৫১১মুসলিম ১৮৬তিরমিযী ২৫৯৫ইবনু মাজাহ ৪৩৩৯আহমাদ ৩৫৮৪৩৭০৬৩৮৮৯৪৩৭৭
[6] সহীহুল বুখারী ৩২৪৩৪৮৭৮৪৮৮০৭৪৪৪মুসলিম ১৮০২৮৩৮আহমাদ ১৯০৭৯১৯১৮২১৯২৩২১৯২৬২দারেমী ২৮২২২৮৩৩
[7] সহীহুল বুখারী ৬৫৫৩মুসলিম ২৮২৮
[8] সহীহুল বুখারী ৩২৫৬৬৫৫৬মুসলিম ২৮৩০২৮৩১আহমাদ ১২৩৬৯দারেমী ২৮৩০
[9] সহীহুল বুখারী ২৭৯৩৩২৫৩৪৮৮১মুসলিম ১৮৮২২৮২৬তিরমিযী ১৬৪৯২৫২৩৩২৯২ইবনু মাজাহ ৪৩৩৫আহমাদ ৯৩৬৫৯৫২২৯৫৬০৯৯০০২৭৩৮৪,২৭৬১৬২৭২৭৮৮দারেমী ২৮৩৮২৮৩৯
[10] মুসলিম ২৮৩৩আহমাদ ১৩৬২১দারেমী ২৮৪১
[11] সহীহুল বুখারী ৩২৫৬৬৫৫৬মুসলিম ২৮৩০২৮৩১আহমাদ ১২৩৬৯দারেমী ২৮৩০
[12] মুসলিম ২৮২৫আহমাদ ২১৯
[13] মুসলিম ২৮৩৬২৮৩৭তিরমিযী ২৫২৫২৫২৬৩২৪৬আহমাদ ৮৬০৯৯০২৬৯১২৫৯৬৪১১০৯৩৯১১৪৯৫দারেমী ২৮২১২৮২৪
[14] সহীহুল বুখারী ৮০৬৪৫৮১৬৫৭৪৭৪৩৮মুসলিম ১৮২২৯৬৮তিরমিযী ২৫৪৯২৫৫৪২৫৫৫২৫৫৭নাসায়ী ১১৪০আবূ দাউদ ৪৭৩০ইবনু মাজাহ ১৭৮,৭৬৬০৭৮৬৮৮৮১৫১০৫২৩১০৬৯৩১০৭৬৭১০৮১৬১১৩৩৭দারেমী ২৮০১২৮০৩২৮২৯
[15] সহীহুল বুখারী ৬৫৪৯৭৫১৮মুসলিম ১৮৩২৮২৯তিরমিযী ২৫৫৪আহমাদ ১১৪২৫
[16] সহীহুল বুখারী ৫৫৪৫৭৩৪৮৫১৭৪৩৪৭৪৩৫৭৪৩৬মুসলিম ৬৩৩তিরমিযী ২৫৫১আবূ দাউদ ৪৭২৯ইবনু মাজাহ ১৭৭আহমাদ ১৮৭০৮১৮৭২৩১৮৭৬৬
[17] মুসলিম ১৮১তিরমিযী ২৫৫২১৮৭আহমাদ ১৮৫৫৬১৮৪৬২২৩৪০৭
__________________________________________________


সংকলন : ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. 
অনুবাদক : বিশিষ্ট আলেমবর্গ 
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
সূত্র : ইসলামহাউজ

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...