
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকী মাদানী
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
আল্ হামদুলিল্লাহ ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।
ইতিপূর্বে ইমাম ও ইমামতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মাসআলা মাসাইল নয়টি কিস্তিতে –আল্ হামদু লিল্লাহ- লিখতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু ইমামতির বিধি-বিধানের সাথে আযানের বিধি-বিধানেরও খুব কাছের সম্পর্ক রয়েছে তাই সেই ধারাবাহিকতায় এই লেখার অবতারণা। (ওয়ামা তাওফীক্বী ইল্লাহ বিল্লাহ)
আযানের অর্থঃ
আযানের আভিধানিক অর্থ হল, অবহিত করা, সংবাদ দেওয়া, ঘোষণা করা, জ্ঞাত করা।
শরিয়ার পরিভাষায় আযান হল, নামাযের সময় হলে ইবাদত স্বরূপ বিশেষ কিছু যিকরের মাধ্যমে স্বলাতের সংবাদ দেওয়া। [শারহুল মুমতি,২/৪০]
ইবনে হাজার (রাহেঃ) বলেন, বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে নামাযের সময়ের সংবাদ দেওয়া। [ফাতহুল বারী ২/১০২]
আযানের মর্মঃ
আযান ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি ইসলামের বাহ্যিক নিদর্শন বা প্রতীক। এর মাধ্যমে একটি মুসলিম ও অমুসলিম সমাজের বাহ্যিক পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। আনাস বিন মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,
ইতিপূর্বে ইমাম ও ইমামতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মাসআলা মাসাইল নয়টি কিস্তিতে –আল্ হামদু লিল্লাহ- লিখতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু ইমামতির বিধি-বিধানের সাথে আযানের বিধি-বিধানেরও খুব কাছের সম্পর্ক রয়েছে তাই সেই ধারাবাহিকতায় এই লেখার অবতারণা। (ওয়ামা তাওফীক্বী ইল্লাহ বিল্লাহ)
আযানের অর্থঃ
আযানের আভিধানিক অর্থ হল, অবহিত করা, সংবাদ দেওয়া, ঘোষণা করা, জ্ঞাত করা।
শরিয়ার পরিভাষায় আযান হল, নামাযের সময় হলে ইবাদত স্বরূপ বিশেষ কিছু যিকরের মাধ্যমে স্বলাতের সংবাদ দেওয়া। [শারহুল মুমতি,২/৪০]
ইবনে হাজার (রাহেঃ) বলেন, বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে নামাযের সময়ের সংবাদ দেওয়া। [ফাতহুল বারী ২/১০২]
আযানের মর্মঃ
আযান ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি ইসলামের বাহ্যিক নিদর্শন বা প্রতীক। এর মাধ্যমে একটি মুসলিম ও অমুসলিম সমাজের বাহ্যিক পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। আনাস বিন মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,
“নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাদের নিয়ে কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন, তখন তাদের উপর আক্রমণ করতেন না যতক্ষণ সকাল না হত এবং দেখে না নেওয়া হত। যদি তিনি আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের উপর আক্রমণ করতেন না। আর যদি আযান না শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের উপর আক্রমণ করতেন।” [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬১০]
‘আযানের শব্দ সমূহ অল্প হলেও তাতে রয়েছে আক্বীদার বিধান। কারণ তা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা দ্বারা শুরু হয়েছে, যাতে রয়েছে আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর পূর্ণতার বর্ণনা। অতঃপর দ্বিতীয়বার পুণরায় তাওহীদের বর্ণনা ও শির্কের অস্বীকৃতি। অতঃপর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রেসালতের প্রমাণ। রেসালতের সাক্ষীর পর বিশেষ ইবাদতের আহব্বান। কারণ সে ইবাদত রাসূলের মাধ্যমেই জানা যায়। অতঃপর সর্বাঙ্গীন সফলতার দিকে আহব্বান করা হয়েছে, তাতে ইঙ্গিত রয়েছে শেষ দিবসের প্রতি। অতঃপর তাগিদ স্বরূপ পুণরায় তা আবার বর্ণনা করা হয়েছে’। [ফাতহুল বারী,২/১০২]
আযানের সূচনাঃ
হিজরতের প্রথম বছরে আযানের সূচনা হয়। মুসলিমগণ যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন তারা নামাযের জন্য অনুমানের ভিত্তিতে একত্রিত হতেন, নামাযের জন্য ডাকের কোনো নিয়ম ছিল না। তাই তারা পরষ্পরে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন। কেউ কেউ খৃষ্টানদের নাকূস বা ঘণ্টা বাজানোর নিয়মের কথা বলেন। অনেকে ইহুদীদের শিংগা ফুৎকারের কথা বলেন। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬০৪] অতঃপর একটি সুন্দর ঘটনা ঘটে, যার পর আযান শরীয়তভুক্ত হয় এবং এর মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনা থেকে মুসলিমদের ইবাদতের আহ্বানের নিয়মে পার্থক্য নির্ণিত হয়।
আযানের সূচনাঃ
হিজরতের প্রথম বছরে আযানের সূচনা হয়। মুসলিমগণ যখন মদীনায় হিজরত করেন, তখন তারা নামাযের জন্য অনুমানের ভিত্তিতে একত্রিত হতেন, নামাযের জন্য ডাকের কোনো নিয়ম ছিল না। তাই তারা পরষ্পরে এ বিষয়ে পরামর্শ করেন। কেউ কেউ খৃষ্টানদের নাকূস বা ঘণ্টা বাজানোর নিয়মের কথা বলেন। অনেকে ইহুদীদের শিংগা ফুৎকারের কথা বলেন। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬০৪] অতঃপর একটি সুন্দর ঘটনা ঘটে, যার পর আযান শরীয়তভুক্ত হয় এবং এর মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনা থেকে মুসলিমদের ইবাদতের আহ্বানের নিয়মে পার্থক্য নির্ণিত হয়।
আব্দুল্লাহ বিন যাইদ ইবনু আবদে রাব্বিহি হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে লোকদের একত্রিত করার উদ্দেশ্যে নাকূস বা ঘণ্টা বাজানোর আদেশ দিলেন, তখন এক রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, এক ব্যক্তি তার হাতে একটি ঘণ্টা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বললামঃ হে আল্লাহর বান্দা! তোমার ঘণ্টাটি কি বিক্রয় করবে? লোকটি বলল, এ দ্বারা তুমি কী করবে? আমি বললামঃ এর দ্বারা আমি মানুষকে নামাযের আহ্বান করব। সে বললঃ আমি কি তোমাকে এর চাইতে উত্তম পন্থা শিখিয়ে দিব? আমি বললামঃ হ্যাঁ, শিখিয়ে দাও। লোকটি তখন বললঃ তুমি এরূপ বলঃ

উচ্চারণঃ
আল্লাহু আক্ বার, আল্লাহু আক্ বার, আল্লাহু আক্ বার, আল্লাহু আক্ বার,
আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্,
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রাসূলুল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার্ রাসূলুল্লাহ্,
হাইয়্যা আলাস্ স্বালাহ্, হাইয়্যা আলাস্ স্বালাহ্,
হাইয়্যা আলাল্ ফালাহ্, হাইয়্যা আলাল্ ফালাহ্,
আল্লাহু আক্ বার, আল্লাহু আক্ বার,
লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হ
অতঃপর লোকটি কিছুটা পিছনে সরে গেল। তারপর বলল, যখন নামাযের ইকামত দিবে তখন বলবেঃ
الله أكبر، الله أكبر
أشهد أن لا إله إلا الله
أشهد أن محمداً رسولُ الله
حيَّ علىَ الصلاة
حيَّ عَلىَ الفلاح
قد قامت الصلاة ، قد قامت الصلاة،
الله أكبر الله أكبر
لا إله إلا الله
সকালে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে তাঁকে এ স্বপ্নের সংবাদ দিলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ চাহে তো এটা সত্য স্বপ্ন। উঠ, বেলাল (রাযিঃ) কে এই কথাগুলি শিখিয়ে দাও। সে যেন আযান দেয়। কেননা, বেলালের কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে বেশী উঁচু।” [আবু দাউদ, তিরমিযী এবং ইবনু মাজাহ]
আযানের বিধানঃ
আযান দ্বীনের একটি জরুরি ইবাদত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরেও আবাসে আযান দিতে আদেশ করেছেন এছাড়াও এটি দ্বীনের একটি বাহ্যিক নিদর্শন।স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনেও এর ইঙ্গিত করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ “জুমুআর দিনে যখন আযান দেওয়া হবে তখন অতি শিগ্গির আল্লাহর যিকরের দিকে ছুটে আস।” [জুমুআহ/৯]
আর আযান বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে এর বিধান হল, তা ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি তা দিলে বাকি লোক দায়মুক্ত থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাহাবী মালিক বিন হুয়াইরিছ (রাযিঃ) কে বলেনঃ “যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমোদের মধ্যে কোনো একজন যেন আযান দেয়”। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬৩১] যা দ্বারা বুঝা যায় যে তা ফরযে কিফায়া।
আযানের ফযীলতঃ
আযানের বিধানঃ
আযান দ্বীনের একটি জরুরি ইবাদত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরেও আবাসে আযান দিতে আদেশ করেছেন এছাড়াও এটি দ্বীনের একটি বাহ্যিক নিদর্শন।স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনেও এর ইঙ্গিত করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ “জুমুআর দিনে যখন আযান দেওয়া হবে তখন অতি শিগ্গির আল্লাহর যিকরের দিকে ছুটে আস।” [জুমুআহ/৯]
আর আযান বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে এর বিধান হল, তা ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ জনগণের মধ্যে কোনো এক ব্যক্তি তা দিলে বাকি লোক দায়মুক্ত থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসাহাবী মালিক বিন হুয়াইরিছ (রাযিঃ) কে বলেনঃ “যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমোদের মধ্যে কোনো একজন যেন আযান দেয়”। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬৩১] যা দ্বারা বুঝা যায় যে তা ফরযে কিফায়া।
আযানের ফযীলতঃ
- ক-আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে যেন আযান শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে ফিরে আসে। অতঃপর যখন নামাযের ইক্বামত দেওয়া হয় আবার পলায়ন করে। তারপর যখন ইক্বামত শেষ হয় ফিরে আসে এবং মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলেঃ অমুক অমুক স্মরণ কর-ইতিপূর্বে যা তার স্মরণে ছিল না-অতঃপর মানুষের অবস্থা এমন হয়ে যায় যে, সে জানতে পারে না সে কত রাকাআত নামায পড়েছে। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬০৮]
- খ-আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাহমানকে বলেনঃ আমি দেখছি তুমি ছাগল ও মরুভূমি পছন্দ কর, যখন তুমি তোমার ছাগলের পালের সাথে থাকবে কিংবা নির্জন স্থানে থাকবে, তখন নামাযের আযান দিবে এবং উঁচু আওয়াজে দিবে। কারণ জিন কিংবা ইনসান কিংবা অন্য কিছু আযানের শব্দ যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত যারা শুনে, তারা তার জন্য কিয়ামত দিবসে সাক্ষী দিবে”। সাহাবী আবু সাঈদ বলেনঃ আমি এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। [বুখারী, আযান অধ্যায় নং ৬০৯]
- গ-আবু হুরাইরা (রাযিঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেনঃ মানুষ যদি আযান ও প্রথম লাইনের (ফযীলত) সম্পর্কে জানতে পারত, তাহলে সেই ফযীলত পাওয়ার লক্ষ্যে লটারি করতে হলেও করত”। [বুখারী, আযান, নং ৬১৫]
- ঘ-মুআবিয়া (রাযিঃ) বলেনঃ “আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, “কিয়ামত দিবসে মুআয্যিনগণের গ্রীবা সবচেয়ে বেশী লম্বা হবে”। [মুসলিম, স্বালাত অধ্যায়, নং ৩৮৭]
- ঙ-নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইমাম হচ্ছে দায়ী আর মুআয্যিন হচ্ছে আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও এবং মুআয্যিনদের ক্ষমা কর। [সুনান আবু দাঊদ, স্বালাত অধ্যায়, নং ৫১৭, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন]
- চ-আবু হুরাইরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “মুআয্যিনকে তার শব্দের শেষ সীমা পর্যন্ত ক্ষমা করা হবে এবং তার জন্য প্রত্যেক সিক্ত ও শুষ্ক বস্তু ক্ষমা প্রার্থনা করে”। [সুনান ইবনু মাজাহ, নং ৭২৪, শাইখ আলবানী রহ. সহীহ বলেছেন।]
- ছ-নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার প্রতিপালক সেই ছাগলের রাখালকে পছন্দ করেন যে কোনো পাহাড়ের দূর চূড়ায় অবস্থান করে। নামাযের জন্য আযান দেয় ও নামায আদায় করে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার এই বান্দার দিকে তাকাও, সে নামাযের জন্য আযান দিল, ইক্বামত দিল এবং আমাকে ভয় করল। আমি তাকে ক্ষমা করলাম এবং তাকে জান্নাত দিলাম”। [আবু দাঊদ, নং ১২০৩]
আযানের শর্তসমূহঃ
১-নামাযের সময় হওয়াঃ ইসলামে প্রত্যেক নামাযের সময় নির্ধারিত এবং তার শুরু ও শেষও চিহ্ণিত। তাই নামাযের সময় হওয়া আযানের একটি শর্ত। তবে ফজরের সময় ব্যতিক্রম। এই ওয়াক্তে সময় হওয়ার পূর্বে আযান দেওয়া বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “বেলাল রাতে আযান দেয়, তাই এই সময় তোমরা খাও ও পান কর; যতক্ষণ ইবনু উম্মে মাকতূম আযান না দেয়”। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬২৩] সেই আযানের উদ্দেশ্য ছিল, যেন তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তি বিরাম নেয় এবং ফজরের নামাযের জন্য প্রস্তুত হয়।অনুরূপ ঘুমন্ত ব্যক্তি যেন ঘুম ছেড়ে গোসল (যদি রাতে তার প্রতি গোসল ফরয হয়ে থাকে) ইত্যাদি সেরে নেয়। [ফাতহুল বারী,২/১৩৮]
২-আযানের নিয়ত করাঃ কারণ ইবাদতের জন্য নিয়ত জরূরী। নবী (সাঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক সৎ আমল নির্ভর করে নিয়তের উপর”। [বুখারী, ১ম হাদীস] কতিপয় উলামা আযানে নিয়তকে শর্ত বলেন নি আর অনেকে তা মুস্তাহাব বলেছেন।
৩-আরবী ভাষায় হওয়াঃ অধিকাংশ উলামা মনে করেন, আযান এবং ইকামত আরবী ভাষায় হওয়া শর্ত। আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় আযান দেওয়া বৈধ নয়। এর কারণ স্বরূপ উল্লেখ হয়েছেঃ
ক-আযান ও ইকামতের সূচনা হয়েছে আরবী ভাষায়; অন্য ভাষায় হয়নি আর না অন্য ভাষায় হওয়ার বৈধতার প্রমাণ এসেছে।
খ-যেমন নামাযের যিকরসমূহ আরবী ভাষায় বর্ণিত হয়েছে এবং তা অন্য ভাষায় করা অবৈধ। তেমন আযান ও ইকামতও আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় অবৈধ; কারণ উভয়ের উদ্দেশ্য তাআব্বুদ। [আহকামুল আযান ওয়াল ইকামাহ/১৬৩]
৪–আযানের শব্দগুলির মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাঃ ধারাবাহিকতার অর্থ হচ্ছে, সুন্নাতে যে ভাবে আযানের শব্দগুলি পরষ্পর এসেছে সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আযানের কোনো বাক্যকে আগে পরে না করা। এটা সিংহভাগ উলামার মত তবে হানাফী মাযহাবে আযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সুন্নাহ, শর্ত নয়।
৫-আযানের শব্দগুলি পরষ্পর বিরতি ছাড়াই হওয়াঃ অর্থাৎ একটি বাক্য বলার পর দ্বিতীয় বাক্য শুরু করার পূর্বে কথা বা কাজের মাধ্যমে বড় ব্যবধান না নেওয়া। অল্প বিরতিতে অসুবিধা নেই।
৬-উঁচু স্বরে হওয়াঃ কারণ আযানের উদ্দেশ্যই হল, লোকদের নামাযের সংবাদ দেওয়া, যা ধীর কন্ঠে পূরণ হয় না। সুস্পষ্ট স্বরের অধিকারী মুআযযিন তার স্বাভাবিক উঁচু কণ্ঠে আযান দিবে। সাধ্যের বেশী কণ্ঠ উঁচু করবে না আর না অবহেলা করতঃ কণ্ঠ নিচু করবে।
৭-শুদ্ধ উচ্চারণঃ ইসলামী পণ্ডিত মনে করেন, আযানের ভুল উচ্চারণে যদি শব্দের অর্থ বিগড়ে যায়, তাহলে তার আযান বাতিল হয়ে যাবে। আর অর্থের পরির্তন না হলে মাকরূহ হবে।
ভুল উচ্চারণে শব্দার্থ পরিবর্তনের উদাহারণঃ
• (الله) আল্লাহ শব্দের হামযাকে অর্থাৎ ‘আ’কে টেনে আ—ল্লাহ বলা। এই রকম টান দিলে সেটি আরবী ব্যাকরণে হামযাই ইস্তিফহাম বা (প্রশ্নবোধক হামযা) হয়ে যায়, আল্লাহ শব্দের হামযা থাকে না।
• (أكبر) আকবার শব্দের হামযাকে অর্থাৎ ‘আ’কে টেনে আ—কবার বলা। এটিও পূর্বের মতই প্রশ্নবোধক হামযা হয়ে যায়।
• (أكبر) আকবার শব্দের ‘বা’কে টেনে বা—র পড়া। অর্থাৎ বা এর উপর যাবার রয়েছে তাতে মাদ্দ/টান নেই টান দিলে আলিফ হয়ে যায়। আর আলিফ হয়ে গেলে তা (كَبَر) (কাবার) শব্দের বহু বচনে রুপান্তরিত হয়, যার অর্থ ঢোল সমূহ। ইত্যাদি ভুল উচ্চারণ।
আর এমন ভুল উচ্চারণ যাতে অর্থের পরিবর্তন হয় না যেমন, (মুহাম্মাদ) শব্দের তানউইনকে ‘রা’র মধ্যে ইদগাম না করা অর্থাৎ মিলিয়ে না দেওয়া কিংবা (মুহাম্মদ) শব্দের ‘দাল’কে যাবার দেওয়ার পরিবর্তে পেশ দেওয়া অর্থাৎ এমন বলা যে, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। ইত্যদি। [উপরোক্ত শর্তসমূহ দেখুন, ফেকাহ বিশ্বকোষ, খণ্ড/২, শব্দ: আযান]
১-নামাযের সময় হওয়াঃ ইসলামে প্রত্যেক নামাযের সময় নির্ধারিত এবং তার শুরু ও শেষও চিহ্ণিত। তাই নামাযের সময় হওয়া আযানের একটি শর্ত। তবে ফজরের সময় ব্যতিক্রম। এই ওয়াক্তে সময় হওয়ার পূর্বে আযান দেওয়া বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “বেলাল রাতে আযান দেয়, তাই এই সময় তোমরা খাও ও পান কর; যতক্ষণ ইবনু উম্মে মাকতূম আযান না দেয়”। [বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬২৩] সেই আযানের উদ্দেশ্য ছিল, যেন তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তি বিরাম নেয় এবং ফজরের নামাযের জন্য প্রস্তুত হয়।অনুরূপ ঘুমন্ত ব্যক্তি যেন ঘুম ছেড়ে গোসল (যদি রাতে তার প্রতি গোসল ফরয হয়ে থাকে) ইত্যাদি সেরে নেয়। [ফাতহুল বারী,২/১৩৮]
২-আযানের নিয়ত করাঃ কারণ ইবাদতের জন্য নিয়ত জরূরী। নবী (সাঃ) বলেনঃ “প্রত্যেক সৎ আমল নির্ভর করে নিয়তের উপর”। [বুখারী, ১ম হাদীস] কতিপয় উলামা আযানে নিয়তকে শর্ত বলেন নি আর অনেকে তা মুস্তাহাব বলেছেন।
৩-আরবী ভাষায় হওয়াঃ অধিকাংশ উলামা মনে করেন, আযান এবং ইকামত আরবী ভাষায় হওয়া শর্ত। আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় আযান দেওয়া বৈধ নয়। এর কারণ স্বরূপ উল্লেখ হয়েছেঃ
ক-আযান ও ইকামতের সূচনা হয়েছে আরবী ভাষায়; অন্য ভাষায় হয়নি আর না অন্য ভাষায় হওয়ার বৈধতার প্রমাণ এসেছে।
খ-যেমন নামাযের যিকরসমূহ আরবী ভাষায় বর্ণিত হয়েছে এবং তা অন্য ভাষায় করা অবৈধ। তেমন আযান ও ইকামতও আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় অবৈধ; কারণ উভয়ের উদ্দেশ্য তাআব্বুদ। [আহকামুল আযান ওয়াল ইকামাহ/১৬৩]
৪–আযানের শব্দগুলির মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাঃ ধারাবাহিকতার অর্থ হচ্ছে, সুন্নাতে যে ভাবে আযানের শব্দগুলি পরষ্পর এসেছে সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আযানের কোনো বাক্যকে আগে পরে না করা। এটা সিংহভাগ উলামার মত তবে হানাফী মাযহাবে আযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সুন্নাহ, শর্ত নয়।
৫-আযানের শব্দগুলি পরষ্পর বিরতি ছাড়াই হওয়াঃ অর্থাৎ একটি বাক্য বলার পর দ্বিতীয় বাক্য শুরু করার পূর্বে কথা বা কাজের মাধ্যমে বড় ব্যবধান না নেওয়া। অল্প বিরতিতে অসুবিধা নেই।
৬-উঁচু স্বরে হওয়াঃ কারণ আযানের উদ্দেশ্যই হল, লোকদের নামাযের সংবাদ দেওয়া, যা ধীর কন্ঠে পূরণ হয় না। সুস্পষ্ট স্বরের অধিকারী মুআযযিন তার স্বাভাবিক উঁচু কণ্ঠে আযান দিবে। সাধ্যের বেশী কণ্ঠ উঁচু করবে না আর না অবহেলা করতঃ কণ্ঠ নিচু করবে।
৭-শুদ্ধ উচ্চারণঃ ইসলামী পণ্ডিত মনে করেন, আযানের ভুল উচ্চারণে যদি শব্দের অর্থ বিগড়ে যায়, তাহলে তার আযান বাতিল হয়ে যাবে। আর অর্থের পরির্তন না হলে মাকরূহ হবে।
ভুল উচ্চারণে শব্দার্থ পরিবর্তনের উদাহারণঃ
• (الله) আল্লাহ শব্দের হামযাকে অর্থাৎ ‘আ’কে টেনে আ—ল্লাহ বলা। এই রকম টান দিলে সেটি আরবী ব্যাকরণে হামযাই ইস্তিফহাম বা (প্রশ্নবোধক হামযা) হয়ে যায়, আল্লাহ শব্দের হামযা থাকে না।
• (أكبر) আকবার শব্দের হামযাকে অর্থাৎ ‘আ’কে টেনে আ—কবার বলা। এটিও পূর্বের মতই প্রশ্নবোধক হামযা হয়ে যায়।
• (أكبر) আকবার শব্দের ‘বা’কে টেনে বা—র পড়া। অর্থাৎ বা এর উপর যাবার রয়েছে তাতে মাদ্দ/টান নেই টান দিলে আলিফ হয়ে যায়। আর আলিফ হয়ে গেলে তা (كَبَر) (কাবার) শব্দের বহু বচনে রুপান্তরিত হয়, যার অর্থ ঢোল সমূহ। ইত্যাদি ভুল উচ্চারণ।
আর এমন ভুল উচ্চারণ যাতে অর্থের পরিবর্তন হয় না যেমন, (মুহাম্মাদ) শব্দের তানউইনকে ‘রা’র মধ্যে ইদগাম না করা অর্থাৎ মিলিয়ে না দেওয়া কিংবা (মুহাম্মদ) শব্দের ‘দাল’কে যাবার দেওয়ার পরিবর্তে পেশ দেওয়া অর্থাৎ এমন বলা যে, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। ইত্যদি। [উপরোক্ত শর্তসমূহ দেখুন, ফেকাহ বিশ্বকোষ, খণ্ড/২, শব্দ: আযান]
মুআযযিনের শর্তাবলীঃ
আযান সহীহ হওয়ার জন্য যেমন আযানের শর্ত সমূহ থাকা জরুরি তেমন আযানদাতার মধ্যেও কিছু শর্ত থাকা জরুরি, যা না থাকলে আযান শুদ্ধ হবে না। সেগুলি নিম্নরূপঃ
ক-মুআযযিনের মুসলিম হওয়া শর্ত; অমুসলিমের আযান শুদ্ধ নয়। কারণ ঈমান ছাড়া ইবাদত অগ্রহণীয়, তাই তার আযান অগ্রহণীয় এবং আযান হচ্ছে স্বালাতের জন্য আহব্বান আর সে স্বালাত অস্বীকারকারী। তাই তার মাধ্যমে এমন আহব্বান প্রকৃতপক্ষে দ্বীনের সাথে বিদ্রুপ করা।
খ-আযান দাতার পুরুষ হওয়া শর্তঃ জমহূর উলামার মতানুযায়ী পুরুষ জামাআতের উদ্দেশ্যে মহিলার আযান বৈধ নয়। কিন্তু যদি মহিলা মহিলাদের জামাআতের উদ্দেশ্যে আযান দেয় এবং তার আওয়াজ পুরুষেরা শুনতে না পায়, তাহলে বৈধ কি বৈধ নয়। উলামাদের মধ্যে মতভেদ পাওয়া যায় কিন্তু যেহেতু মহিলার আযান অপ্রমাণিত, তাই জামাআত পুরুষদের হোক কিংবা মহিলাদের উভয় ক্ষেত্রে তাদের আযান অশুদ্ধ বিবেচিত হবে।
গ-সজ্ঞানী হওয়াঃ আযান দাতার জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া শর্ত, তাই পাগল কিংবা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির আযান স্বহীহ নয়। কারণ এই অবস্থায় তারা ইবাদতের আওতাভুক্ত থাকে না এবং তাদের উপর শরীয়ার বিধান প্রযোজ্য হয় না।
ঘ-ভাল মন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপণিত হওয়া: শরীয়তের দৃষ্টিতে আযান দেয়ার জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া জরুরি নয়। তবে এমন বয়সে উপণিত হওয়া জরুরি যে ভাল মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে। কেননা, যে ভাল মন্দের পার্থক্য করতে জানে না, তার কাজ-কর্ম শরিয়ার দৃষ্টিতে ধতর্ব্য নয়। [এসব শর্ত দেখুন, ফিকাহ বিশ্বকোষ, ২য় খণ্ড, শব্দ আযান, পৃঃ ৩৬৭-৩৬৮/রাওযাতু ত্বালেবীন, নভবী,১/৩১২-৩১৩]
আযান সহীহ হওয়ার জন্য যেমন আযানের শর্ত সমূহ থাকা জরুরি তেমন আযানদাতার মধ্যেও কিছু শর্ত থাকা জরুরি, যা না থাকলে আযান শুদ্ধ হবে না। সেগুলি নিম্নরূপঃ
ক-মুআযযিনের মুসলিম হওয়া শর্ত; অমুসলিমের আযান শুদ্ধ নয়। কারণ ঈমান ছাড়া ইবাদত অগ্রহণীয়, তাই তার আযান অগ্রহণীয় এবং আযান হচ্ছে স্বালাতের জন্য আহব্বান আর সে স্বালাত অস্বীকারকারী। তাই তার মাধ্যমে এমন আহব্বান প্রকৃতপক্ষে দ্বীনের সাথে বিদ্রুপ করা।
খ-আযান দাতার পুরুষ হওয়া শর্তঃ জমহূর উলামার মতানুযায়ী পুরুষ জামাআতের উদ্দেশ্যে মহিলার আযান বৈধ নয়। কিন্তু যদি মহিলা মহিলাদের জামাআতের উদ্দেশ্যে আযান দেয় এবং তার আওয়াজ পুরুষেরা শুনতে না পায়, তাহলে বৈধ কি বৈধ নয়। উলামাদের মধ্যে মতভেদ পাওয়া যায় কিন্তু যেহেতু মহিলার আযান অপ্রমাণিত, তাই জামাআত পুরুষদের হোক কিংবা মহিলাদের উভয় ক্ষেত্রে তাদের আযান অশুদ্ধ বিবেচিত হবে।
গ-সজ্ঞানী হওয়াঃ আযান দাতার জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া শর্ত, তাই পাগল কিংবা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির আযান স্বহীহ নয়। কারণ এই অবস্থায় তারা ইবাদতের আওতাভুক্ত থাকে না এবং তাদের উপর শরীয়ার বিধান প্রযোজ্য হয় না।
ঘ-ভাল মন্দ পার্থক্য করার বয়সে উপণিত হওয়া: শরীয়তের দৃষ্টিতে আযান দেয়ার জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া জরুরি নয়। তবে এমন বয়সে উপণিত হওয়া জরুরি যে ভাল মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে জানে। কেননা, যে ভাল মন্দের পার্থক্য করতে জানে না, তার কাজ-কর্ম শরিয়ার দৃষ্টিতে ধতর্ব্য নয়। [এসব শর্ত দেখুন, ফিকাহ বিশ্বকোষ, ২য় খণ্ড, শব্দ আযান, পৃঃ ৩৬৭-৩৬৮/রাওযাতু ত্বালেবীন, নভবী,১/৩১২-৩১৩]
মুআযযিনের মধ্যে যে সকল গুণাবলী থাকা মুস্তাহাব:
১-পবিত্র অবস্থায় আযান দেওয়াঃ পবিত্রাবস্থা বলতে ছোট ও বড় নাপাকি থেকে পাক হওয়া বুঝায়। যেহেতু আযান একটি মহৎ যিকর তাই তা করার সময় পবিত্র থাকা কাম্য। বড় নাপাক অবস্থায় আযান দেওয়া অধিকাংশ উলামার নিকট মাকরূহ।
২-কিবলামুখী হয়ে আযান দেওয়াঃ কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুআয্যিনগণ কিবলামুখী হয়ে আযান দিতেন।
৩-সৎ হওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআযযিনকে আমানতদার বলেছেন। আর অসৎ ব্যক্তি আমানত রক্ষাকারী নয়। আর যে আমানত রক্ষাকারী নয় তার থেকে ধোঁকা হওয়া সম্ভব।
৪-সুন্দর ও উচ্চ কণ্ঠ বিশিষ্ট হওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ বিন যাইদ (রাযিঃ) কে বলেনঃ “উঠ এবং স্বপ্নে যা দেখেছ তা বেলালকে জানিয়ে দাও সে যেন আযান দেয়। কারণ সে তোমার চেয়ে বেশী উচ্চ ও সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী”। [আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ, সূত্র হাসান]
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদীসের শব্দে (আন্দা মিনকা সাউতান) এসেছে। আর ‘আন্দা’ শব্দের অর্থ উলামাগণ উচ্চ কণ্ঠ ও মধুর কণ্ঠ উভয়রূপে করেছেন।
৫-উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে আযান দেওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেলাল (রাযিঃ) কে বলেনঃ “হে! বেলাল উঠ এবং নামাযের জন্য আযান দাও।” [মুত্তাফাকুন আলাইহ] আর উঁচু স্থানে এই কারণে যেন বহুদূর পর্যন্ত আযানের শব্দ পৌঁছে। তাই মুসলিম সমাজে ধারাবাহিকভাবে মিনারার প্রচলন মতভেদ ছাড়াই চলে আসছে। অবশ্য মাইক তথা যান্ত্রিকযোগে আযান দিলে আর উঁচু স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৬-আযান দেওয়ার সময় দুই কানের ভিতর আঙ্গুল রাখাঃ নির্দিষ্ট ভাবে কোন্ আঙ্গুল রাখতে হবে এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয় নি। অনেকের মতে তর্জনী আঙ্গুল কানের ভিতরে রাখতে হবে আর অনেকের মতে বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া বাকি আঙ্গুলগুলি সম্মিলিত করে কানের উপর রাখতে হবে। আবু জুহাইফা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি বেলালকে আযান দিতে দেখেছি, তাঁর দু আঙ্গুল তার দু কানে ছিল…[তিরিমিযী, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন]
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই নিয়মের প্রতি জ্ঞানীদের আমল রয়েছে। তারা মুআযযিনের জন্য মুস্তাহাব মনে করেন যেন সে আযানের সময় দুই আঙ্গুল কানে প্রবেশ করায়। কানে আঙ্গুল রাখার কারণ স্বরূপ বলা হয়েছে, এমন রাখলে আওয়াজ উঁচু করতে সাহায্য করে এবং মুআযযিনের অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় যে, সে এখন আযান দিচ্ছে।
৭-হাইয়্যালাস স্বলাহ ও হাইয়্যালাল্ ফালাহ বলার সময় ডানে বামে মুখ ফিরানোঃ কারণ আবু জুহাইফা (রাযিঃ) বিলাল (রাযিঃ) এর আযান সম্পর্কে বলেনঃ “আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম যে, তিনি এদিক ওদিক মুখ ফিরাচ্ছিল (ডানে ও বামে)” [আহমদ, তিনিমিযী, বুখারী আযান অধ্যায় নং ৬৩৪]
হাইয়্যা আলা বলার সময় ডানে-বামে মুখ ফিরানোর পদ্ধতি সম্পর্কে উলামাগণ মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, প্রথমে দু বার হাইয়্যালাস্ স্বলাহ বলার সময় দু বার ডান দিকে মুখ ফিরাতে হবে অতঃপর দু বার হাইয়্যালাল্ ফালাহ বলার সময় দু বার বাম দি। আর অনেকে মনে করেন, প্রথম বার হাইয়্যালাস্ স্বলাহ বলার সময় ডান দিকে মুখ ফিরাতে হবে এবং দ্বিতীয়বার বলার সময় বাম দিকে। এভাবে প্রথম বার হাইয়্যালাল্ ফালাহ বলার সময় ডান দিকে অতঃপর দ্বিতীয় বারে বাম দিকে। তবে হাদীসের শব্দ প্রথম নিয়মকে সমর্থন করে। [ফাতহুল বারী,২/১৫১-১৫২]
৮-দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়াঃ কারণ অন্ধ ব্যক্তি স্বয়ং নামাযের সময় হওয়া না হওয়া বুঝতে অক্ষম। এই কারণে মুআয্যিনের দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া বেশী উত্তম। কিন্তু অন্ধ মুআয্যিনকে যদি কেউ সময় সম্বন্ধে অবগতকারী থাকে তাহলে সমস্যা নেই। নবী (সাঃ) এর মসজিদে ফজরের সময় অন্ধ সাহাবী ইবনু উম্মে মাকতূম (রাযিঃ) আযান দিতেন। [বুখারী, নং ৬১৭]
৯-আযানের বিনিময় না নেওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “এমন মুআিয্যন নিয়োগ করবে যে, তার আযানের বিনিময় নেয় না”। [আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী] (বিস্তারিত বিবরণ সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ)
১০-নামাযের প্রথম সময়ে (আউয়াল ওয়াক্তে) আযান দেওয়াঃ যেন নামাযীরা নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
১-পবিত্র অবস্থায় আযান দেওয়াঃ পবিত্রাবস্থা বলতে ছোট ও বড় নাপাকি থেকে পাক হওয়া বুঝায়। যেহেতু আযান একটি মহৎ যিকর তাই তা করার সময় পবিত্র থাকা কাম্য। বড় নাপাক অবস্থায় আযান দেওয়া অধিকাংশ উলামার নিকট মাকরূহ।
২-কিবলামুখী হয়ে আযান দেওয়াঃ কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুআয্যিনগণ কিবলামুখী হয়ে আযান দিতেন।
৩-সৎ হওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআযযিনকে আমানতদার বলেছেন। আর অসৎ ব্যক্তি আমানত রক্ষাকারী নয়। আর যে আমানত রক্ষাকারী নয় তার থেকে ধোঁকা হওয়া সম্ভব।
৪-সুন্দর ও উচ্চ কণ্ঠ বিশিষ্ট হওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ বিন যাইদ (রাযিঃ) কে বলেনঃ “উঠ এবং স্বপ্নে যা দেখেছ তা বেলালকে জানিয়ে দাও সে যেন আযান দেয়। কারণ সে তোমার চেয়ে বেশী উচ্চ ও সুন্দর কণ্ঠের অধিকারী”। [আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ, সূত্র হাসান]
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হাদীসের শব্দে (আন্দা মিনকা সাউতান) এসেছে। আর ‘আন্দা’ শব্দের অর্থ উলামাগণ উচ্চ কণ্ঠ ও মধুর কণ্ঠ উভয়রূপে করেছেন।
৫-উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে আযান দেওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেলাল (রাযিঃ) কে বলেনঃ “হে! বেলাল উঠ এবং নামাযের জন্য আযান দাও।” [মুত্তাফাকুন আলাইহ] আর উঁচু স্থানে এই কারণে যেন বহুদূর পর্যন্ত আযানের শব্দ পৌঁছে। তাই মুসলিম সমাজে ধারাবাহিকভাবে মিনারার প্রচলন মতভেদ ছাড়াই চলে আসছে। অবশ্য মাইক তথা যান্ত্রিকযোগে আযান দিলে আর উঁচু স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৬-আযান দেওয়ার সময় দুই কানের ভিতর আঙ্গুল রাখাঃ নির্দিষ্ট ভাবে কোন্ আঙ্গুল রাখতে হবে এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত হয় নি। অনেকের মতে তর্জনী আঙ্গুল কানের ভিতরে রাখতে হবে আর অনেকের মতে বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া বাকি আঙ্গুলগুলি সম্মিলিত করে কানের উপর রাখতে হবে। আবু জুহাইফা (রাযিঃ) বলেনঃ আমি বেলালকে আযান দিতে দেখেছি, তাঁর দু আঙ্গুল তার দু কানে ছিল…[তিরিমিযী, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন]
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই নিয়মের প্রতি জ্ঞানীদের আমল রয়েছে। তারা মুআযযিনের জন্য মুস্তাহাব মনে করেন যেন সে আযানের সময় দুই আঙ্গুল কানে প্রবেশ করায়। কানে আঙ্গুল রাখার কারণ স্বরূপ বলা হয়েছে, এমন রাখলে আওয়াজ উঁচু করতে সাহায্য করে এবং মুআযযিনের অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় যে, সে এখন আযান দিচ্ছে।
৭-হাইয়্যালাস স্বলাহ ও হাইয়্যালাল্ ফালাহ বলার সময় ডানে বামে মুখ ফিরানোঃ কারণ আবু জুহাইফা (রাযিঃ) বিলাল (রাযিঃ) এর আযান সম্পর্কে বলেনঃ “আমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম যে, তিনি এদিক ওদিক মুখ ফিরাচ্ছিল (ডানে ও বামে)” [আহমদ, তিনিমিযী, বুখারী আযান অধ্যায় নং ৬৩৪]
হাইয়্যা আলা বলার সময় ডানে-বামে মুখ ফিরানোর পদ্ধতি সম্পর্কে উলামাগণ মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, প্রথমে দু বার হাইয়্যালাস্ স্বলাহ বলার সময় দু বার ডান দিকে মুখ ফিরাতে হবে অতঃপর দু বার হাইয়্যালাল্ ফালাহ বলার সময় দু বার বাম দি। আর অনেকে মনে করেন, প্রথম বার হাইয়্যালাস্ স্বলাহ বলার সময় ডান দিকে মুখ ফিরাতে হবে এবং দ্বিতীয়বার বলার সময় বাম দিকে। এভাবে প্রথম বার হাইয়্যালাল্ ফালাহ বলার সময় ডান দিকে অতঃপর দ্বিতীয় বারে বাম দিকে। তবে হাদীসের শব্দ প্রথম নিয়মকে সমর্থন করে। [ফাতহুল বারী,২/১৫১-১৫২]
৮-দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়াঃ কারণ অন্ধ ব্যক্তি স্বয়ং নামাযের সময় হওয়া না হওয়া বুঝতে অক্ষম। এই কারণে মুআয্যিনের দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া বেশী উত্তম। কিন্তু অন্ধ মুআয্যিনকে যদি কেউ সময় সম্বন্ধে অবগতকারী থাকে তাহলে সমস্যা নেই। নবী (সাঃ) এর মসজিদে ফজরের সময় অন্ধ সাহাবী ইবনু উম্মে মাকতূম (রাযিঃ) আযান দিতেন। [বুখারী, নং ৬১৭]
৯-আযানের বিনিময় না নেওয়াঃ কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “এমন মুআিয্যন নিয়োগ করবে যে, তার আযানের বিনিময় নেয় না”। [আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী] (বিস্তারিত বিবরণ সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ)
১০-নামাযের প্রথম সময়ে (আউয়াল ওয়াক্তে) আযান দেওয়াঃ যেন নামাযীরা নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।
[চলবে ইনশাআল্লাহ]
No comments:
Post a Comment