Thursday 11 June 2015

চাঁদ দেখে রোযা রাখা ও ঈদ করা নিয়ে শ্রেষ্ট দুইজন আলেমের ফাতওয়াঃ



আল্লামাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহর ফাতওয়া...

নিজ দেশের লোকদের সাথে রোযা রাখবেনা চাঁদ দেখা যে কোনো দেশের সাথে?
প্রশ্নঃ যদি কোনো ইসলামি রাষ্ট্রে চাঁদ দেখা যায়,আর  আমি যে দেশে বসবাস করিসেখানে শাবান ও রমজান মাস ত্রিশ দিনে পুরো করা হয়তাহলে আমি কী করবরমজান প্রসঙ্গে মানুষের মতপার্থক্যের কারণ কী?

উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহআপনার জন্য রোযা আপনার দেশের লোকদের সাথে থাকাই আবশ্যক। তারা যদি রোযা রাখে তাদের সাথে রোযা রাখবেনআর তারা যদি রোযা না রাখে তবে আপনিও তাদের সাথে রোযা রাখবেন না। কারণ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ، وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ، وَالأَضْحَىيَوْمَ تُضَحُّونَ»

‘‘তোমরা যেদিন রোযা রাখবে সেদিনই রোযা,যেদিন ইফতার করবে সেদিনই ইফতারআর তোমরা যেদিন কোরবানি করবে সেদিনই কোরবানি।’’ [তিরমিযী : ৬৯৭]

দ্বিতীয়তঃ ইখতিলাফ ভাল জিনিস নয়তাই আপনার দেশের সাথে থাকাই আপনার জন্য জরুরি ও সঙ্গত। আপনার দেশের মুসলিমগণ যখন রোযা করবেন নাআপনি তাদের সাথে রোযা না করবেন। আর যখন তারা রোযা রাখবে আপনি তাদের সাথে রোযা রাখবেন।
আর মত পার্থক্যের কারণ হচ্ছেকেউ চাঁদ দেখে,কেউ চাঁদ দেখে না। অতপর যারা চাঁদ দেখে,অন্যরা তাদের উপর ভরসা করেতাদেরকে বিশ্বাস এবং তাদের দেখা অনুযায়ী আমল করে। আবার কখনো তাদের বিশ্বাস কিংবা তাদের দেখা অনুযায়ী আমল করা হয় নাফলে ইখতিলাফ সংঘটিত হয়। কোনো দেশ চাঁদ দেখে এবং চাঁদ দেখার ফয়সালা দেয়ফলে দেশবাসী রোযা রাখে অথবা ইফতার করে। আর অন্য দেশ এ দেখার উপর ভরসা কিংবা বিশ্বাস করে না- ভৌগলিক কিংবা রাজনৈতিক ইত্যাদি কারণে।
সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যিক হল চাঁদ দেখেই রোযা রাখবে আবার চাঁদ দেখে রোযা ভাঙ্গবে করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস ব্যাপকঃ

«إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا، فَإِنْغُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلَاثِينَ يَوْمًا»

‘‘যখন তোমরা চাঁদ দেখবে রোযা রাখবেআবার যখন চাঁদ দেখবে ইফতার করবে। আর আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন হয়তবে সংখ্যা ত্রিশ দিন পূরণ করবে।’’ [মুসলিম : ১০৮১]

যদি সকলে চাঁদ দেখা বিশ্বাস করে এবং মনে করে যেবাস্তবিকই তা দেখা গেছেতবে সে হিসেবে রোযা রাখা ও ইফতার করা ওয়াজিব। হ্যাঁযদি বাস্তবতার ব্যাপারে মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়আর কেউ কাউকে বিশ্বাস না করেতখন আপনার জন্য সঙ্গত হবে আপনার দেশের মুসলমানদের সাথে রোযা রাখা এবং তাদের সাথে ইফতার করা। কারণরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ، وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ، وَالأَضْحَىيَوْمَ تُضَحُّونَ»

‘‘তোমরা যেদিন রোযা রাখবে সেদিনই রোযা,যেদিন ইফতার করবে সেদিনই ইফতারআর তোমরা যেদিন কোরবানি করবে সেদিনই কোরবানি।’’ [তিরমিযী : ৬৯৭]

ইবনে আব্বাস -রাদিয়াল্লাহু আনহু- থেকে প্রমাণিত,কুরাইব তাকে সংবাদ দিয়েছেন যেশাম দেশের লোকেরা জুমুআর দিন রোযা রেখেছে। ইবনে আব্বাস বললেন : আমরা চাঁদ দেখেছি শনিবার,আমরা যতক্ষণ না চাঁদ দেখব রোযা রাখব না,অন্যথায় ত্রিশ দিন পূর্ণ করব। তিনি শামবাসীদের চাঁদ দেখার উপর আমল করেন নিযেহেতু উভয় দেশের মাঝে দূরত্ব অনেক বেশী এবং উভয়ের উদয়স্থলও ভিন্ন। তাঁর দৃষ্টিতে এটা ইজতেহাদের বিষয়। ইবনে আব্বাস এবং তার অনুসরণ করে যারা বলেছেননিজ দেশের সাথে রোযা এবং নিজ দেশের সাথে ইফতার করার জন্যতাদের মতই আমাদের জন্য অনুসরণীয়।


[শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ,মজমু ফাতওয়া ওয়ামাকালাত মুতানাওয়েয়াহ]
_______________________________

শায়খ উসাইমিন রাহিমাহুল্লার ফাতওয়া...

প্রশ্নঃ মুসলিম জাতির একতার লক্ষ্যে কেউ কেউ চাঁদ দেখার বিষয়টিকে মক্কার সাথে সংশ্লিষ্ট করতে চায়। তারা বলে মক্কায় যখন রামাযান মাস শুরু হবে তখন বিশ্বের সবাই রোযা রাখবে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

উত্তরঃ বিষয়টি মহাকাশ গবেষণার দিক থেকে অসম্ভব। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, চন্দ্র উদয়ের স্থান বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বিদ্বানগণ ঐকমত্য। আর এই বিভিন্নতার দাবী হচ্ছে প্রত্যেক এলাকায় ভিন্ন রকম বিধান হবে। একথার স্বপক্ষে দলীল কুরআন হাদীছ ও সাধারণ যুক্তি।

আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ“অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালন করে।” (সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫) যদি পৃথিবীর শেষ সীমান্তে লোকেরা এ মাসে উপস্থিত না হয় অর্থা চাঁদ না দেখে আর মক্কার লোকেরা চাঁদ দেখে, তবে কিভাবে এই আয়াত তাদের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে যারা কিনা চাঁদই দেখেনি। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ  “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ, চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ কর।” মক্কার অধিবাসীগণ যদি চাঁদ দেখে তবে পাকিস্তান এবং তার পূর্ববর্তী এলাকার অধিবাসীদের কিভাবে আমরা বাধ্য করতে পারি যে তারাও ছিয়াম পালন করবে? অথচ আমরা জানি যে, তাদের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি। আর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিয়ামের বিষয়টি চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছেন।

যুক্তিগত দলীল হচ্ছে, বিশুদ্ধ ক্বিয়াস যার বিরোধীতা করার অবকাশ নেই। আমরা ভাল ভাবে অবগত যে, পশ্চিম এলাকার অধিবাসীদের আগেই পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের নিকট ফজর উদিত হয়। এখন পূর্ব এলাকায় ফজর উদিত হলে কি আমরা পশ্চিম এলাকার লোকদের বাধ্য করব একই সাথে খানা-পিনা থেকে বিরত হতে? অথচ তাদের ওখানে এখনও রাতের অনেক অংশ বাকী আছে? উত্তরঃ কখনই না। সূর্য যখন পূর্ব এলাকার অধিবাসীদের আকাশে অস্তমিত হয়, তখন পশ্চিম এলাকার দিগনে- তো সূর্য দেখাই যাচ্ছে তাদেরকে কি আমরা ইফতার করতে বাধ্য করব? উত্তরঃ অবশ্যই না। অতএব চন্দ্রও সম্পূর্ণরূপে সূর্যের মতই। চন্দ্রের হিসাব মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর সূর্যের হিসাব দিনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ্‌ বলেছেন,

“ছিয়ামের রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে; তারা তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ। তোমরা যে নিজেদের খিয়ানত করছিলে, আল্লাহ্‌ তা পরিজ্ঞাত আছেন। এ জন্যে তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের (ভার) লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (রোযার রাত্রেও) তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হতে পার এবং আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর। এবং প্রত্যুষে (রাতের) কালো রেখা হতে (ফজরের) সাদা রেখা প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর; অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ই‘তেকাফ করার সময় (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করবে না; এটাই আল্লাহর সীমা, অতএব তোমরা তার নিকটেও যাবে না। এভাবে আল্লাহ্‌ মানব মন্ডলীর জন্যে তাঁর নিদর্শন সমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযত হয়।” (সূরা বাক্বারা- ১৮৭)

সেই আল্লাহ্‌ই বলেন, فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ“অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন ছিয়াম পালন করে।” অতএব যুক্তি ও দলীলের নিরীখে ছিয়াম ও ইফতারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্থানের জন্য আলাদা বিধান হবে। যার সম্পর্ক হবে বাহ্যিক আলামত বা চিহ্ন দ্বারা যা আল্লাহ্‌ তা’আলা কুরআনে এবং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সুন্নাতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে চাঁদ প্রত্যক্ষ করা এবং সূর্য বা ফজর প্রত্যক্ষ করা।

গ্রন্থঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম
বিভাগঃ সিয়াম (রোযা), প্রশ্নঃ (৩৯৩) 

ফাতওয়া দিয়েছেন, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)  
    

আনসারুস সুন্নাহ

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...