Friday 2 January 2015

মীলাদুন্নবী নামে মসজিদে সমবেত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা



প্রশ্ন: আমাদের সবার নিকট পরিচিত মীলাদুন্নবী বিদআত, কিন্তু অনেকেই মীলাদুন্নবী নামে অনুষ্ঠান করে নবীর জন্মানুষ্ঠান পালন করার জন্য নয়, বরং নবীর জীবন চরিত ও আনুষঙ্গিক বিষয় আলোচনার জন্য, নবীর জন্ম দিন ও তারিখ মোতাবেক না হলে এ অনুষ্ঠান কি হারাম ? মীলাদ নামকরণই কি এ অনুষ্ঠান হারাম হওয়ার কারণ ? অথবা মীলাদ শব্দ বা পরিভাষা পরিহার করে নবীর জীবন চরিত আলোচনার অনুষ্ঠান কি হারাম ? উল্লেখ্য এ অনুষ্ঠানে লোকদের খানা পরিবেশন করা হবে। আমার জিজ্ঞাসার কারণ আগামী সপ্তাহের শেষে রবিবার ছুটির দিনে নতুন দুলহানদের উপলক্ষে নৈশ ভোজের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে যেহেতু লোকের সমাগম হবে, তাই এর আয়োজকরা নৈশ ভোজের পর মসজিদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত আলোচনার ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু তার নামকরণ করেছে মীলাদ, তবে এ দিন নবীর জন্ম দিনের মোতাবেক নয়, নবীর জন্মদিন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না, তবে নবীর জীবন চরিত আলোচনা করা হবে, এ আলোচনা মূলত নাচ-গানের পরিবর্তে, যেন লোকেরা নবীর জীবন চরিত শোনে অধিকতর উপকৃত হয়, আমি আপনাদের সৎ উপদেশ কামনা করছি। দ্বিতীয়ত : নবীর জীবন চরিত ও খাদ্য পরিবেশন করার জন্য মসজিদে অনুষ্ঠান আয়োজন করা কি হারাম ?

উত্তর :

আল-হামদুলিল্লাহ

কোন মানুষের জন্মানুষ্ঠান পালন করা বা মীলাদ অনুষ্ঠান বৈধ নয়, না কোন নবীর না কোন মনীষীর ? কারণ শরীআতে এর কোন ভিত্তি নেই, বরং এসব অনুষ্ঠান অমুসলিম তথা ইহুদী, নাসারা ও অন্যান্য জাতি-ধর্মের লোকদের থেকে আমদানি করা।


ঈদে মীলাদ অর্থ : কোন ব্যক্তির জন্মদিন উদযাপন করা, যেমন কতক লোকের ধারণানুযায়ী ১২ রবিউল আউয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মানুষ্ঠান উদযাপন করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত, চারিত্রিক গুণাবলি ও সুন্নতের আলোচনা সব সময়ই মুস্তাহাব। এ অনুষ্ঠানকে মীলাদ বলা হয় না, যেমন বিয়ের অনুষ্ঠানকে বলা হয় না মীলাদ, কিন্তু কতক মুসলিম দেশে সকল বৈধ অনুষ্ঠানকেই মীলাদ বলে, যেখানে নাচ-গান ও নারী-পুরুষের মেলামেশা নেই। তারা বলে : আমরা বিয়ের দিন মীলাদের আয়োজন করব অথবা খৎনার দিন মীলাদের আয়োজন করব, সেখানে কাউকে বয়ানের জন্য, কাউকে কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদির জন্য আহ্বান করা হয়, এ নামকরণের কোন ভিত্তি নেই, এ কারণে অনুষ্ঠান প্রশ্ন বিদ্ধ বা অবৈধ হবে না। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপদেশ-নসিহতের আয়োজন করা, অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিত, তার সিরাত ও চারিত্রিক গুণাবলি আলোচনা করা বৈধ, এসব অনুষ্ঠান অবৈধ ও বিদ‘আতী মীলাদ মাহফিলের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
মসজিদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন চরিতের সভা বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা বৈধ, তবে ফজিলত মনে করে এ জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়, যেমন মীলাদুন্নবীর দিন অথবা শাবানের পনের তারিখের দিন অথবা ইসরা ও মেরাজের দিন, বরং বছরের যে কোন সময় এসব অনুষ্ঠানউদযাপন করা, এসব অনুষ্ঠানে খানা পরিবেশন করা বৈধ, তবে এ কথা প্রচার করা শ্রেয় যে, এ অনুষ্ঠানের নাম মীলাদ মাহফিল নয়, যেন কারো অন্তরে মীলাদ মাহফিল বৈধ এ ধারণা না জন্মায়। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি আপনাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের উপর আমল ও তা প্রচার করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ ভাল জানেন।


সমাপ্ত

মুফতী : শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ 
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...