Friday 17 October 2014

সূফি তরিকা এবং তাদের সাথে অংশগ্রহণ - শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ




সূফি তরিকা এবং তাদের সাথে অংশগ্রহণ - শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ

সূফি তরিকাসমূহ যেমনঃ সায়ারি’য়া, তারিকা, হাকিকা এবং মা’রিফা; এই তরিকাগুলো কি সত্যিই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবাগণ(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) দের শিক্ষা দিয়েছেন?

প্রশংসা আল্লাহর জন্যে,

আমরা অবশ্যই জেনে নিব যে, আল-সুফিয়াহ (সূফিবাদ) শব্দটি দ্বারা ওলের তৈরি পোশাক পরিধান করাকে (আরবি শব্দ ‘সুফ’ মানে ‘উল’) বুঝায় এবং এছাড়া কিছু নয়।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল-সুফিয়াহ’ (সুফিবাদ) শব্দটি দ্বারা ওলের তৈরি পোশাক পরিধান করাকে নির্দেশ করে, এটাই সঠিক অর্থ। বলা হয়ে থাকে, এটি এসেছে ‘সাফওয়াত আল-ফুকাহা’ (ফুকাহাদের মধ্যে বিশিষ্ট) শব্দটি থেকে অথবা ‘সূফা ইবন আদ ইবন তানিযা’ নামক আরব গোত্র থেকে, যারা তাদের আত্মবিস্মৃতি’র (asceticism) জন্য বিখ্যাত ছিল। আরও বলা হয়ে থাকে এটি এসেছে ‘আহল আল-সুফফা’ (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়কার মদীনার দরিদ্র মুসলিমগণ, যারা মসজিদে থাকতেন) থেকে, অথবা ‘আল-সাফা’ (মক্কার সাফা পর্বত ), অথবা ‘আল-সাফওয়া’ (মানে বিশিষ্ট) অথবা ‘আল-সাফ আল-মুক্বাদ্দাম বায়না ইদায় আল্লাহ’ (আল্লাহর কাছে সম্মানিত দল) নামক শব্দ থেকে। এই সমস্ত মতগুলো হল দইফ বা দূর্বল; যদি এর একটিও সঠিক হতো তাহলে শব্দটি হতো ‘সাফফি’ অথবা ‘সাফা’য়ি’, সুফি নয়। মাজমু আল ফাতাওয়া ১১/১৯৫

সুফিবাদ তথা তাসাওউফ এই উম্মতের প্রথম তিন প্রজন্মের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি, যেই তিন প্রজন্মের প্রশংসা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মানব জাতির শেষ্ঠতম প্রজন্ম হল আমার প্রজন্ম, এরপরে আছে যারা তাদের পরে আসবে, এরপর তাদের পরবর্তী যারা আসবে...”(বুখারী,২৬৫২,২৫৩৩ )

· শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সুফিয়াহ (সুফিবাদ) শব্দটি প্রথম তিন প্রজন্মের নিকট পরিচিত ছিল না, বরং এটি এর পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয়েছে। মাজমু আল ফাতাওয়া, ১১/৫

এই তরিকাগুলো সেই নব আবিষ্কৃত পথ(বিদ’আত) যা কুর’আন-সুন্নাহ এবং শেষ্ঠ প্রজন্মের সালফে সালেহীনদের পথের বিপরীতে যায়। এই তরিকাগুলোর সকল শায়খগণ তাদের নিজস্ব জিকির-আযকার, হিজব (দুয়া’র বই, যা তাদের অনুসারীরা দৈনিক পড়ে) এবং ইবাদতের বিশিষ্ট ধরণ তৈরি করেছে যা দেখে তাদের তরিকাগুলো শনাক্ত করা যায়, এটি শরীয়াতের বিরুদ্ধে যায় এবং উম্মাহকে বিভক্ত করেছে।

আল্লাহ এই উম্মাহর দীনকে পূর্ণতা দান করে দয়া করেছেন এবং আমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেছেন। কাজেই, নতুন করে যদি কেউ কোন ইবাদতের পদ্ধতি নিয়ে আসে যা শরীয়াতে নেই তার মানে হল সে আল্লাহ তায়ালা যা বলেছেন তাকে প্রত্যাখান করল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আমানতের খিয়ানতের অভিযোগ করল।

উপরন্তু, তাদের এই বিদ’আতের সাথে তারা মিথ্যাবাদীতার দোষেও দুষ্ট, কারণ তারা দাবী করছে তারা এই তরিকাগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হতে গ্রহণ করেছে এবং বলছে যে তারা নাকি খুলাফায়ে রাশেদীনের পথ অনুসরণ করছে।

স্ট্যান্ডিং কমিটির সম্মানিত আলেমগণের নিকট এই প্রশ্নটি জানতে চাওয়া হয়েছিল;

ইসলামে শাধিলইয়াহ,খালওয়াতিয়াহ ইত্যাদি অসংখ্য তরিকাসমূহের ন্যায় কিছু কি রয়েছে? যদি থেকে থাকে, তাহলে তার দলীল-প্রমাণাদি কোথায়? এই আয়াতগুলোর অর্থ কি যেখানে আল্লাহ বলছেন, “তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও”। [সূরা আনআম ৬-১৫৩]

“সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন”। [সূরা নাহল ১৬-৯]

সেই পথগুলো কোনটি যা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, এবং আল্লাহর পথ কোনটি? আর ইবন মাসউদ বর্ণিত এই হাদীসটির অর্থ কি, যেখানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দাগ টেনে বলছেন, “এটিই হেদায়াতের পথ” এরপর এর ডানে বামে অনেকগুলো দাগ টেনে বলেন, “এগুলো অন্যান্য পথ এবং প্রত্যেক পথে একটি করে শয়তান উপস্থিত যে মানুষকে সেই পথের দিকে ডাকছে?”

উত্তরঃ আপনি যে সকল তরিকাসমূহ উল্লেখ করেছেন এ ধরণের কিছু ইসলামে নেই, অথবা এর কাছাকাছিও কিছু নেই। ইসলামে যা আছে তা হচ্ছে আপনি যে দুটি আয়াত এবং হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং অন্য আরেকটি হাদীস যেখানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “ইহুদীরা একাত্তর ফিরকাহ’য় বিভক্ত হয়েছে এবং খৃষ্টানেরা হয়েছে বাহাত্তর ফিরকাহ’য়। আমার উম্মাহ বিভক্ত হবে তিহাত্তর ফিরকাহ’য়; আর এদের প্রত্যেকটি হবে জাহান্নামী একটি ব্যতীত”। জানতে চাওয়া হল, “তারা কারা, হে আল্লাহর রাসূল?” এবং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মাহর একটি দল সত্যের অনুসরণ করতে থাকবে এবং বিজয়ী হবে, এবং তাদের যারা অভিশাপ দেয় কিংবা বিরোধিতা করে তারা সেই দলটির কোন ক্ষতি করতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর ফরমান নাযিল হয়...’ সত্য আছে কুর’আন এবং সহীহ হাদীস অনুসরণের মধ্যে। এটাই আল্লাহর পথ, এবং সরল পথ। এটিই ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে বর্ণিত সরল পথ, আর এই পথ অনুসরণ করেছেন সাহাবাগণ(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং তাদের পরবর্তী সালফে সালেহীনগণ, এবং তাদের যারা অনুসরণ করেছেন তাঁরা। অন্য সকল তরিকা বা দল হল আয়াতে উল্লেখিত সেই দল যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,

“...এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে...” [আল-আন’আম ৬-১৫৩] -ফাতাওয়া আল-লাযনাহ আল-দা’ইয়িমাহ ২/২৮৩,২৮৪

আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...