Sunday 12 October 2014

আমরা কি উদযাপন করব?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

নিশ্চয় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তার প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি আর আমাদের অন্তরের যাবতীয় কদর্যতা ও মন্দ কাজ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন তাকে পথভ্রষ্ট করবে এমন কেউ নেই আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোনো পথপ্রদর্শনকারী নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল; আল্লাহ তার উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথী সকলের উপর সালাত ও অগণিত সালাম পেশ করুন।
অতঃপর...
একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে জরুরি যে বিশ্বাস রয়েছে তন্মধ্যে হলো, আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন, তাকে পাঠানোর মাধ্যমেই তার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন আর মুস্তাফা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর কোনো ব্যক্তিকে তাঁর দ্বীনে বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ দেন নি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ﴾ [المائ‍دة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [মায়েদা: ৩]
রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেন,
«قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لَا يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلَّا هَالِكٌ»
“আমি তোমাদেরকে এমন একটি সুস্পষ্ট পথের উপর রেখে গেলাম যার রাত্রি দিনের মত; এর থেকে ধ্বংসে পতিত ব্যক্তি বাদে কেউ বিচ্যুত হবে না।” [ইবনে মাজাহ] (হাদীসটি সহীহ)

সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বচনে যা প্রবর্তন করেছেন তার মাঝে নিজেকে এবং নিজের ইবাদতকে সীমাবদ্ধ করা প্রত্যেক নাজাতপ্রার্থী ও তা অন্বেষণকারী মুমিনের জন্য অপরিহার্য ও প্রয়োজনীয়; আর নিজের এবং অন্য কোনো মানুষের জন্য আল্লাহ যার অনুমতি দেন নি তা যেন সে আল্লাহর দ্বীনে প্রবর্তন না করে এবং নিজের বিবেক ও প্রবৃত্তি দ্বারা কিছু অনুমোদন না করে।
কেননা, সত্য অন্বেষণকারী এবং রাসূলের সুন্নতপ্রেমিক ব্যক্তি আল্লাহ যে পদ্ধতিতে অনুমতি দিয়েছেন তা ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতির কোনো অনুষ্ঠান উদযাপন কিংবা ইবাদত করবে না করতে পারে না; বিশেষত সেটা যদি ইবাদত ও সওয়াব লাভের আশায় হয়।
আর এর থেকেই আমরা আলেমদের বাণী “ইবাদতের মূল হচ্ছে সঠিকভাবে আল্লাহ ও তার রাসূল থেকে আগত বর্ণনার অনুসরণ” এই কথাটি বুঝতে পারি। কারণ এতে বিবেকের দ্বারা প্রণয়ন, অনুমোদন কিংবা খারাপ মনের করার কোনো সুযোগ নেই; আপনি যদি এর সপক্ষে প্রমাণের খোঁজ করেন তাহলে তা এতই বেশি ব্যাপক পাবেন যে তা কোনো সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿ وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ﴾ [الشورا: ١٠] 
“আর তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন— তার ফয়সালা তো আল্লাহরই কাছে।” [শূরা: ১০]
অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ ﴾ [ال عمران: ٣١] 
“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন।” [আলে ইমরান: ৩১]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,
«مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ»
“যে আমাদের এই দ্বীনে এমন কিছু তৈরি করল যা এতে (কুরআনে ও হাদীসে এবং এতদুভয় থেকে নির্গত হুকুমে) নেই তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]
তাছাড়া মুহাম্মাদ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের বাণী,
«وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»
“আর তোমরা দ্বীনে নতুন সৃষ্ট কিছু হতে বেঁচে থাকো; কেননা প্রতিটি নবসৃষ্ট বিষয়ই বিদ‘আত আর প্রতিটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।”[আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ] (সহীহ)
আপনি শরীয়তের এই বক্তব্যে একটু থেমে লক্ষ্য করলে বুঝবেন যে এটি প্রবৃত্তির কথা নয়, এটা অবতীর্ণ অহী। «كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ» আপনার জানা যে, كُلّ এই শব্দটি দ্বারা ব্যাপকতা বুঝায়, যা সকল প্রকার বিদ‘আতকে কোনো রকম বাদ দেওয়া ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করে।
ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “তোমরা অনুসরণ কর, কিন্তু নতুন কিছু সৃষ্টি করো না; কেননা তোমরা যথেষ্ট পেয়েছ।”

আমার মুমিন ভাই...
এতক্ষণ যে আলোচনা হলো সেটা যদি আপনার কাছে স্থির হয় এবং আপনি এই বিশ্বাসে সত্যিকারের বিশ্বাসী হন তাহলে আপনি আপনার প্রতিটি কথা ও কাজের ইবাদতকে এই মাপকাঠিতে ফেলে দেখেন তো, এটা কী শরীয়ত মোতাবেক নাকি নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে? এটা কী সুন্নত নাকি বিদ‘আত? আর এর একটা উদাহরণ পরীক্ষা করি সেটা হলো, মুস্তাফা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন উদযাপন করা; যিনি আমাদের প্রিয়, আমাদের আদর্শ, আর আমাদেরকে যিনি আল্লাহর সহজ-সরল পথে চলায় নেতৃত্ব দেন, যিনি শেষ নবী এবং রাসূলদের নেতা, যিনি সম্মানিতদের নেতা, যিনি বিশ্ববাসীর জন্য ইমাম এবং রহমতস্বরূপ প্রেরিত।
আর এই ব্যাপারটা আমরা ন্যায়নিষ্ঠভাবে এবং যাবতীয় প্রবৃত্তি ও পূর্বনির্ধারিত ব্যক্তিগত মতামত থেকে মুক্ত থেকে আলোচনা করব, পাশাপাশি এটিকে আমরা শরয়ী দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখব আর আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের সামনে উপস্থাপন করব যিনি বলেছেন:
«إِنَّ أَحْسَنَ الحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»
“নিশ্চয় সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব; সর্বোত্তম পন্থা হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পন্থা। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো দ্বীনে নতুন সৃষ্ট বিষয়; আর প্রতিটি নবসৃষ্ট বিষয়ই বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আতই পথভ্রষ্টতা।” 
আর যিনি স্বীয় বাণী দ্বারা সর্বোত্তম ও সবচেয়ে পরিশুদ্ধ মানুষদের পন্থা অবলম্বন করতে বলেন,
«خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ»
“সর্বোত্তম মানুষ হলো আমার যুগের মানুষেরা, এরপর (ভালো হলো) এদের অনুগামী, এরপর (ভালো হলো) এদের অনুগামী” [বুখারী ও মুসলিম]
আর আল্লাহর কাছেই আমাদের প্রত্যাশা, তিনি যেন আমাদেরকে সঠিক পথকে সঠিক পথ হিসেবে প্রদর্শন করে তা অনুসরণ করার সুযোগ দেন এবং ভুল পথকে ভুল হিসেবে প্রদর্শন করে তা থেকে বিরত থাকার সুযোগ প্রদান করেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালনের সূচনা

হাফেয ইবন কাসীর আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া গ্রন্থে (১১/১৭২) উল্লেখ করেন,
৩৫৭ হিজরী সন থেকে ৫৬৭ হিজরী সন পর্যন্ত মিসর শাসনকারী ফাতেমী রাষ্ট্র- ইহুদী উবাইদুল্লাহ ইবন মাইমুন আল ক্বাদ্দাহ এর দিকে যার সম্বন্ধ করা হয় - সে উবাইদী শাসকরা অনেক নতুন নতুন উৎসব আবিষ্কার করেতন্মধ্যে একটা হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন উদযাপন।
কিতাবুল মাওয়ায়েয ওয়াল ই‘তিবার গ্রন্থে (১/৪৯০) মাক্বরীযী এবং আদ-দিয়ারুল মিসরিয়্যার মুফতী মুহাম্মাদ বাখীত আল-মুত্বী‘ঈ তার বই আহসানুল কালাম ফী মা ইয়াতা‘আল্লাক্বু বিস্‌সুন্নাতি ওয়াল বিদ‘আতি মিনাল আহকাম-এ (পৃ: ৪৪-৪৫) এটি উল্লেখ করেছেন। শাইখ আলী মাহফুয তার একটি চমৎকার বই আল-ইবদা‘ ফী মাদ্বারিল ইবতিদা‘-এ (পৃ: ২৫১) এ বিষয়টিতে একমত হয়েছেন।
সুতরাং সর্বপ্রথম এই উৎসবের প্রচলন ঘটিয়েছে ইহুদী আব্দুল্লাহ ইবন সাবার বংশধর দুরাচার রাফেযী সম্প্রদায়; আর তাদের দ্বারা কখনোই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতে কোনো কাজ হতে পারে না বরং কোনো গোপনীয় উদ্দেশ্যেই তারা এটি করেছে।


জন্মদিন পালনে ইসলামের বিধান

এতক্ষণ যে আলোচনা হলো তার মাধ্যমে এটাই জোর পেল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উত্তম যুগের মানুষদের আদর্শ অনুসরণ করার মধ্যেই যাবতীয় কল্যাণ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এমন ইবাদত করে যার প্রচলন ঐ বরকতময় যুগে ছিল না তার ইবাদত প্রত্যাখ্যাত হয়ে তার দিকেই ফিরে আসবে এবং ঐ কাজের গুনাহ-পাপ সব তাকেই বহন করতে হবে যদিও সে এটি নিষ্ঠার সাথে করে এবং এতে সবচেয়ে বেশি শ্রম ও শক্তি ব্যয় করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন উদযাপনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কি লক্ষ্য করেছেন:-
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার সত্যপথগামী খলীফাগণ এবং অন্যান্য কোনো সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, উত্তম যুগে ইহসানের সাথে তাদেরকে অনুসরণকারী (তাবে‘ঈ)দের কেউ এটি পালন করতেন না। অথচ পরবর্তীদের থেকে তারা সুন্নত সম্পর্কে বেশি জানেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তাদের ভালোবাসা পরিপূর্ণ এবং তাঁর শরীয়ত অনুসরণ সম্পূর্ণরূপে তারাই করেন। যদি এটি ভালোই হত তাহলে তারাই তো আমাদের আগে করতেন।
২. আপনি নিশ্চয় জেনেছেন যে, হিজরীর চতুর্থ শতকে সর্বপ্রথম এর উপর আমল করেছে দুরাচার ফাতেমী সম্প্রদায়।
৩. এটির মাধ্যমে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায় কেননা তারা মসীহ ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন উদযাপন করে। অথচ তাদের সদৃশ হতে এবং বিভিন্ন উৎসবে তাদের অনুসরণ করতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
৪. মিলাদুন্নবীর মত এ রকম অন্যান্য জন্মদিন পালন করার অর্থ হচ্ছে, এটা মনে করা যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই উম্মতের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেন নি, রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম উম্মতের যা করা উচিত তা সম্পূর্ণ পৌঁছিয়ে দেন নি আর উত্তম যুগের মানুষেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যথাযথ সম্মান, মহব্বত ও মর্যাদা দেন নি যেরূপ দিয়েছে পরবর্তী যুগের মানুষেরা। আর এই ধরণের কথা দুরাচার দ্বীনভ্রষ্ট ছাড়া কেউ বলতে পারে না। অথচ রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেন,
«مَا بَعَثَ اللَّهُ مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ»
“আল্লাহ যে নবীকেই প্রেরণ করেছেন তার উপরই আবশ্যক হয়ে গেছে যে, সে তার উম্মতের ভালোর জন্য যা জানে তা সে তাদেরকে জানিয়ে দিবে।” [সহীহ মুসলিম]
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন নবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বশেষ ও সবচেয়ে উত্তম অবহিতকারী ও কল্যাণকামী। যদি মিলাদুন্নবী পালন করা দ্বীনের অংশই হত তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বর্ণনা করতেন অথবা নিজের জীবনে করতেন অথবা তার সাহাবীরা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) অন্তত তা করত।
কোনো ব্যক্তি এটা বলতে পারবে না যে, রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম সেটা বিনয়ের কারণে করেন নি কেননা তা (বলা) রাসূল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের অবমাননার শামিল।
কেননা এর দ্বারা প্রতীয়মান হয়, উম্মতের কল্যাণ রয়েছে এমন বিষয় তিনি গোপন রেখেছেন অথবা খাটো করে দেখেছেন; বস্তুত তিনি এর থেকে মুক্ত, তার জন্য আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোন। আর এর দ্বারা সাহাবীগণ- যাদেরকে তাদের রব আল্লাহ নিজেই পরিশুদ্ধ করেছেন- তাদেরকেও অবমাননা করা হয়, যে তারা এই উৎসব উদযাপন করতে কার্পণ্য করেছেন এবং তারা এটি উপলব্ধি করতে পারেন নি; (এ জাতীয় কথা কখনো বলা যাবে না, কারণ) তারা কতই না উত্তম ব্যক্তি এবং সম্মানিত অনুসারী। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান —রাদিয়াল্লাহু আনহু— “যে সব ইবাদত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীরা করেন নি সেগুলো তোমরা করো না; কেননা পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদের জন্য বলার কোনো কিছু বাদ দেন নি। আর আল্লাহকে ভয় কর হে পড়ুয়ারা! তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের পথই অনুসরণ কর।”
৫. এই রাতকে সঞ্জীবিত রাখলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বত প্রমাণিত হয় না। আপনি তো কত মানুষকেই দেখবেন আর শুনবেন যারা এই উৎসবগুলো সঞ্জীবিত করে অথচ নিজেরা মুস্তাফা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের আদর্শ থেকে বহু দূরে; আর এদের অধিকাংশই হলো ঐ সব পাপী ব্যক্তি যারা সুদ খায়, নামাযের ব্যাপারে অবহেলা করে, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য উভয় প্রকার সুন্নত ছেড়ে দেয় এবং পাপ ও গুনাহের কাজ, অশ্লীল ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়।
বরঞ্চ আমাদের নেতা প্রিয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রকৃত মহব্বতের প্রমাণ হলো যে রকম আমাদের প্রভু তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেছেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ ... ﴾ [ال عمران: ٣١]
“বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন...” [আলে ইমরান: ৩১]
রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম বলেছেন,
«كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى»
“আমার উম্মতের অমান্যকারী বাদে সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সাহাবীরা বলল, কে অমান্য করে? তিনি বললেন, “যে আমার (সুন্নতের) আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার অবাধ্যতা করবে সেই তো অমান্য করল।” [সহীহ বুখারী]
সুতরাং, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ, তার গোপন-প্রকাশ্য আদর্শকে নিজের মধ্যে ধারণ, তার পথনির্দেশ অনুকরণ, কথা-কাজে ও স্বভাব-চরিত্রে তাকে দৃষ্টান্তরূপে গ্রহণ করার মাধ্যমেই প্রকৃত মহব্বত করা সম্ভব। আর বলা হয়ে থাকে:
তার প্রতি যদি হত তোমার ভালোবাসা সত্যি তবে আনুগত্যই করতে
কেননা প্রেমিক যা ভালবাসে তার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে
৬. এগুলোর পাশাপাশি পরবর্তী যুগের অনেক আলেমই এই ধরণের মিলাদ অনুষ্ঠানে সংঘটিত হয় এমন বহু অনিষ্ট ও ভয়ানক ইসলামবিরোধী কাজ হয়ে থাকে বলেছেন। আর স্বীকারও করেছে আধুনিক যুগের কোনো কোনো ব্যক্তি যারা এগুলোতে অংশগ্রহণ করেছিল এবং উপস্থিত হয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তীতে তাদেরকে এ থেকে বিরত থাকার তৌফিক দিয়েছেন। (বেশ কিছু অডিও এর সাক্ষী) এ সব ইসলাম বিরোধী কাজের মধ্যে অন্যতম হলো, রাসূলুল্লাহর ব্যাপারে কিছু শির্কী কথাবার্তা বলা, বাড়াবাড়ি করা, এমন কিছু হারাম কবিতা বানানো যার মাধ্যমে তার কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া হয় আর এটা ভাবা যে তিনি গায়েব জানেন যেমনটি বুসীরির কবিতায় নিম্নোক্ত পরিদৃষ্ট হয়,
হে সেরা সৃষ্টি! সর্বব্যাপী দুর্ঘটনা যখন ছড়িয়ে পড়বে তখন আপনার কাছে ছাড়া আর কার কাছে সাহায্য চাইব,
কারণ, আপনার কাছেই দুনিয়ার মহত্ত্ব ও লোকসান আর আপনারই রয়েছে লাওহে মাহফুয ও কলমের জ্ঞান।
তাছাড়া এসব অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের মিশ্রণ ঘটে, গান ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয়, মদ খাওয়া হয়, যুবকদের দিকে তাকানো হয়, ওলীদের নিয়ে বাড়াবাড়ি হয় এবং আরও অনেক খারাপ কাজ করা হয় যা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে সীমাবদ্ধ করা কঠিন; এমনকি অনেকে এই রাত্রিকে কদরের রাত্রির চেয়ে বেশি মর্যাদা দেয় এবং এ রাতে কদরের রাতের থেকেও বেশি শ্রম ব্যয় করে। অবস্থা এমনও পৌঁছায় যে, তাদের কেউ মীলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান ত্যাগকারীকে কাফের বলে আখ্যায়িত করে। (নাউযুবিল্লাহ)
৭. যে দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন ঐদিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন আর তা হলো ১২ই রবিউল আউয়াল যেরূপ রাসূলের জীবনীগ্রন্থে প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং, এ দিনে আনন্দিত হওয়া দুঃখ পাওয়ার চেয়ে উত্তম নয়। যদি দ্বীন ‘রায়’ তথা মতের উপর প্রতিষ্ঠিত হত তাহলে এই দিনকে ঈদ ও অনুষ্ঠানের দিন হিসেবে নেওয়ার চেয়ে শোক ও মাতম দিবস হিসেবে নেওয়াই উত্তম হত।

কিছু সংশয় এবং এর জবাব

মীলাদুন্নবী উদযাপনকারীগণ কিছু সংশয় আঁকড়ে ধরেছেন এবং কিছু দলীল দিয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:
১. আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿ قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ ٥٨ ﴾ [يونس: ٥٨] 
“বলুন, ‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চেয়ে এটা উত্তম।” [ইউনুস: ৫৮]
তারা বলে: আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তার রহমতের কারণে আনন্দিত হতে বলেছেন আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বোৎকৃষ্ট রহমত কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧ ﴾ [الانبياء: ١٠٧] 
“আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি।” [আম্বিয়া: ১০৭]
জবাব:
তাদের এ আয়াতের দ্বারা দলীল দেওয়াটা অনুপযুক্ত স্থানে দলীল প্রদান হয়েছে, আয়াতকে তার মূল অর্থ ছাড়া অন্য অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, আর এমন এক দিক বুঝানো হয়েছে যে দিক আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি, সর্বোত্তম আল্লাহর কথা অনুধাবনকারী এবং সর্বোত্তম কুরআনের নস বা ভাষ্য উপলব্ধি করতে পারেন এমন ব্যক্তির দ্বারাও এ দিক প্রমাণিত হয় নি। আর এর মাধ্যমে উত্তম যুগের মানুষ ও সলফে সালেহীনের বুঝ থেকে কুরআনের অর্থ গ্রহণ করা ও উদ্ভাবন করায় শরীয়তের যে পদ্ধতি রয়েছে তার বিরোধিতা করা হয়। ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, এই আয়াতের মর্মার্থে সালাফে সালেহীনের মত হলো, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া হলো তার কুরআন ও সুন্নাহ।
২. বুখারী ও মুসলিমে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি মদিনায় আসলেন এবং দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার (মহররমের দশ তারিখ) দিন সাওম পালন করে; তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তর দিলো, এ দিনে আল্লাহ ফিরআউনকে ডুবিয়ে দিয়েছেন এবং মুসা আলাইহিস সালামকে উদ্ধার করেছেন তাই আমরা এ দিন আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করার জন্য সাওম পালন করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ»
“মুসার (বেঁচে যাওয়াতে আনন্দিত হওয়ার) ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমি বেশি হকদার।” 
অতঃপর তিনি এ দিন সাওম পালন করতেন এবং সাওম পালন করতে আদেশ দিতেন।
তারা বলে, এ দিন রহমতের নবীর প্রকাশ ঘটার চেয়ে আর কোন নেয়ামত বড় হতে পারে? তাই আমাদের উচিত এ দিন উদযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর নেআমতের জন্য তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।
জবাব:
আশুরার দিন সাওম পালনের এই হাদীস দ্বারা দলীল দেওয়াটা অকার্যকর দলীল এবং ভ্রান্ত অনুমান। কেননা আমরাও এই নবীকে প্রেরণের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করি, তবে তার জন্মে নয়; একই সাথে এটাও উল্লেখযোগ্য, আশুরার দিনের সাওম মুস্তাফা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের সুন্নত হিসেবে চালু ও পছন্দনীয় করা হয়েছে। আর তিনি আমাদেরকে তার সুন্নতে তার জন্মদিনে উৎসব পালন করার প্রথা চালু করেন নি।
৩. ইমাম বায়হাকী সাহাবী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়ত লাভের পর আকীকা করেছেন। অথচ তাঁর দাদা তাঁর জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আকীকার এই পুনরাবৃত্তি করাই প্রমাণ করে যে তিনি এটা করেছেন আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য যে তিনি তাঁকে সষ্টিকূলের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছেন। আর এ শোকরিয়া জ্ঞাপন তার উম্মতের জন্য প্রচলন করা হয়েছে যেন পরবর্তীরা এটাকে সুন্নতরূপে গ্রহণ করে।
জবাব:
এই হাদীসটিকে ইমাম মালেক বাতিল হাদীসসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন যেমনটি ইবন রুশদ তার থেকে বর্ণনা করেছেন ‘আল-মুকাদ্দামাতুল মুমাহ্‌হাদাত’ গ্রন্থের ‘কিতাবুল আকীকা’ অধ্যায়ে। তাছাড়া এর বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনুল মুহাওয়ির-এর দুর্বলতার বিষয়টি ইমাম আব্দুর রাযযাক ও ইমাম আবু দাউদ ইমাম আহমদ থেকে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া একই মত পোষণ করেছেন ইমাম ইবন হিব্বান, বায্‌যার প্রমুখ। তাছাড়া যদি ধরেও নেওয়া হয় যে বর্ণনাটি বিশুদ্ধ তারপরও তাতে মিলাদুন্নবী উদযাপনের কোনো দলীল নেই।
৪. আবু লাহাবের দাসী সুয়াইবিয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সুসংবাদ দেওয়ায় আবু লাহাব মুক্ত তাকে করে দিয়েছিল, পরবতীতে সে সুয়াইবিয়া নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামকে দুধপান করিয়েছিলেন। উরওয়া থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আবু লাহাবকে কেউ স্বপ্নে দেখে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, সে তো জাহান্নামে গেছে, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের সুসংবাদ দেওয়ায় সুয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দেবার কারণে প্রতি সোমবার রাতে তার শাস্তি কমানো হয়।
তারা বলে, এটি যদি আবু লাহাবের ক্ষেত্রে হয় অথচ সে জাহান্নামবাসী কাফের; তাহলে ঐ তৌহিদবাদী মুসলিমের কী অবস্থা হবে যে নবীর জন্মে খুশি হয় এবং তার সাধ্যানুযায়ী শ্রম ব্যয় করে।
জবাব:
·      এই হাদীসটি মুরসাল হাদীস যেরূপ ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন এবং হাফেয ইবন হাজার তার ফাত্‌হুল বারী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
·      এছাড়াও এটি একটি স্বপ্ন যা কোনো প্রমাণ নয়।
·      আর এটি কুরআনের সরাসরি বিপরীত কথা, কারণ কুরআনের এসেছে, আখেরাতে কাফেরের কোনো ভালো কাজই উপকারে আসবে না, আয়াতে এসেছে,
﴿ وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣ ﴾ [الفرقان: ٢٢] 
“আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” [ফুরক্বান: ২২] 
বরং সে তো তার সওয়াব দুনিয়ায় পেয়ে যাবে।
৫. তারা বলে, অনুষ্ঠান যদি রবিউল আউয়ালের বারো তারিখ, রবিউল আউয়াল মাস ও কোনো নিদিষ্ট সময়ে না থাকে এবং অন্য কোনো সময় সংঘটিত হয় তবেও এতে উদযাপনকারীর কোনো সমস্যা নেই।
জবাব:
এই ব্যাপারটি বাতিল এবং কথাটি প্রত্যাখ্যাত। কেননা ইবাদত ও শরীয়ত মূলত নিধারিত; এতে আল্লাহর জন্য নিদিষ্ট কোনো ইবাদত ও কর্মপ্রণালী করা যাবে না যা শরীয়তে বর্ণিত নেই, যদিও তা হয় আল্লাহর যিকর অথবা রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের জীবনী পড়া ইত্যাদি। বাস্তবতায় দেখা যায়, এই ধরণের মিলাদ এবং জলসা সাধারণত রবিউল আউয়াল মাসেই হয়ে থাকে এবং এগুলোকে এদিকেই ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।
৬. মিলাদ অনুষ্ঠানে নবীর শানে যিকর, সদকা, তার প্রশংসা ও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়; এগুলো তো শরীয়তে কাম্য ও প্রশংসিত আর এ ব্যাপারে তো সহীহ হাদীস এসেছে ও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
জবাব:
হ্যাঁ, আল্লাহর যিকর-সদকাসহ আরও অন্যান্য বিষয়ে হাদীস এসেছে কিন্তু এই ধরণের নির্দিষ্ট আকারে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সমাবেশ করার পছন্দনীয়তা বর্ণিত হয় নি। আর এই রাতে এমন কোনো দোআ-যিকর পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয় নি যেগুলো শরীয়তের মূলে নেই এবং যার সপক্ষে ওহীর কোনো দলীলে নেই অথবা (উৎসাহিত করা হয় নি) ঐসব কবিতা পাঠ করতে যেগুলো বাড়াবাড়ি ও ভূয়ামিতে পরিপূর্ণ।
৭. এক ব্যক্তি সোমবার রোযা রাখা সম্পকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,
«فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ»
এ দিন আমার জন্ম হয়েছে এবং এতেই আমার উপর নাযিল করা হয়েছে।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম সোমবার হওয়ায় তিনি এই দিনকে সম্মানিত করেছেন। তাই তারা তাঁর জন্মদিন রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখকে অনুষ্ঠান উদযাপন ও সম্মান করার মাধ্যমে নির্ধারিত করে নিল।
জবাব:
কাম্য হলো প্রতি সপ্তাহের সোমবার সাওম পালন করা —এর থেকে বেশি কিছু নয়—  আর এটিকে কোনো মাস অথবা সপ্তাহের জন্য নির্দিষ্ট না করা। কারণ সোমবারকে কোনো তারিখে নির্দিষ্ট না করে শর্তহীনভাবে সাওম পালন করার দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কাজের মিল ঘটে। অথচ তারা এ দিনকে বছরের রবিউল আউয়াল মাসের এক দিন নির্দিষ্ট করে রেখেছে।
এর সাথে আরও বলা যায়, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসীয়তকে সম্মান করে না, এর ফযীলত থাকা সত্ত্বেও; যেহেতু এ দিনেই বান্দার আমল আল্লাহর নিকট পেশ করা হয় এবং এ অবস্থায় বান্দার সাওম পালনরত থাকা উত্তম। কিন্তু তারা এ দিনকে নিকৃষ্টভাবে পানাহার ও আনন্দের সাথে পালন করে থাকে।
তাছাড়া আপনি তো আরও জানেন যে, ইবাদতসমূহ (কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্য দ্বারা) নির্ধারিত; তাই কোনো দিনকে নির্দিষ্ট ইবাদত ও ভালকাজের জন্য নির্দিষ্ট করার জন্য শর‘য়ী দলীলের প্রয়োজন কিন্তু পূর্বেই গত হয়েছে যে, এই বিদ‘আতের উপর কোনো দলীল নেই।
আর ভুলে যাবেন না যে আমরা পূর্বেই বলেছি, রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুদিবস এবং সলফ তথা সত্যান্বেষী আলেমদের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ওহী নাযিল বন্ধ হওয়ার দিন। সুতরাং, আপনার রবের কসম খেয়ে বলুন তো, আমরা কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত্যু উপলক্ষে অনুষ্ঠান করি নাকি জন্ম উপলক্ষে?! আর এ দুটির মধ্যে সমন্বয় সাধন কি সম্ভব?!
উপসংহার:
আমি মনে করি না আপনার ঈমান, আপনার তাকওয়া, নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আপনার যথাযথ অনুসরণ, রাসূলের শরীয়তকে আপনার প্রবত্তি, নিজস্ব মতামত ও মানুষের কথা ও তাদের মতের উপরে সবাগ্রে স্থান দেওয়া এসব আপনাকে এটা উদযাপন করতে বলবে, বরং এসব কেবল আপনাকে এটাই বলবে যে:  
আপনি তা উদযাপন করবেন না
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه أجمعين

মদীনাস্থ সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধকারী সরকারী সংস্থার অফিস থেকে প্রকাশিত
অনুবাদক: আবদুল্লাহ ইবন আবি বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...