উত্তর : না, এসব অনুমোদিত নয়। এগুলো জায়েযও নেই।
দেখুন: الإجابات المهمة فى المشاكل الملحة আল ইজাবাতুল মুহিম্মাহ ফিল মাশাকিলিল মুলিম্মাহ। পৃ: ২২৯
এ বিষয়ে গভীর ভাবে চিন্তাশীল ব্যক্তি “অভিনন্দন নিষিদ্ধ” মর্মে বক্তব্যকে সমর্থন যোগ্য বলে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। এর কারণ অনেক। কিছু নিম্নে প্রদত্ব হল।
(১) এ অভিনন্দন কর্মটি বৎসরের এমন একটি দিনে সম্পাদিত হবে যা প্রতি বৎসর বার বার ফিরে আসবে। ফলে একে অন্যান্য উদযাপন যোগ্য দিনের সাথে গণ্য করা হবে অথচ আমাদেরকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ দিকটির বিবেচনায় নববর্ষে অভিনন্দন মুবারকবাদ বিনিময়কে নিষেধ করা হবে।
(২) এটি ইয়াহুদী-নাসারাদের স্বাদৃশ্যাবলম্বন | অথচ আমাদেরকে তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইয়াহুদীরা হিব্রু (Hebrwe) বর্ষের শুরুতে যা (تسري) তাশরী নামক মাসে শুরু হয়, একে অপরকে অভিনন্দন জানায়। শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তাশরী (تسري) হচ্ছে ইয়াহুদীদের প্রথম মাস। শনিবারের ন্যায় এদিনও যাবতীয় কাজ-কর্ম হারাম আর নাসারা (খৃষ্টান) রা ঈসায়ী বর্ষের শুরুতে পরস্পর অভিনন্দন আদান প্রদান ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে।
(৩) এর মাধ্যমে অগ্নিপূজক এবং আরব্য মুশরিকদের স্বাদৃশ্যাবলম্বন এবং তাদের অনুকরণ করা হয়। অগ্নিপূজকরা নওরোজ তথা তাদের শুরু বর্ষে অভিনন্দন বিনিময় করত। নওরোজ অর্থ হচ্ছে-নতুন দিন। আর জাহেলী যুগের আরবরা মুহররম মাসের প্রথমদিনে নিজ রাজাদেরকে মুবারকবাদ জানাত। আল্লামা কাযভীনী র. স্বীয় কিতাবু আজায়েবুল মাখলুকাত
এমনিটিই বর্ণনা করেছেন। দেখুন : الأعياد وأثرها على المسلمين আল আ’ইয়াদ ওয়া আছরুহা আলাল মুসলিমীন। ড. সুলাইমান আল সুহাইমী
(৪) নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দনকে বৈধতা প্রদান করা প্রকারান্তরে এ জাতীয় অনেক দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের রাস্তা সম্পূর্ণরূপে খুলে দেয়া। যেমন শিক্ষা বর্ষের সূচনা উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদান, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস অনুরূপ অনেক দিবস যা নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন জায়েয মর্মে মত প্রদান কারীরাও বলেনি। বরং এসকল দিবসে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার দাবি নববর্ষে অভিনন্দন বৈধ হওয়ার চেয়েও জোরালো কেননা নবী কারীম ও সাহাবাদের যুগে এসব দিবসে অভিনন্দন প্রচলনের কার্যকারণ অনুপস্থিত ছিল আর নববর্ষ উপলক্ষে ছিল বিদ্যমান।
(৫) অভিনন্দনকে বৈধ বলে রায় দেয়ার অর্থই হচ্ছে তাতে অনেক ব্যাপকতা ও সুযোগ প্রদান করা। যার কারণে মোবাইল ফোনে চিঠির আদান প্রদান, ভিউ কার্ডের আদান-প্রদান যদিও তারা একে অভিনন্দন বার্তা বলে থাকে। বেড়ে যাবে এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে, মিডিয়া তথা স্যাটেলাইট চ্যানেল, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও বিশেষ আয়োজন করা হবে। বরং এক পর্যায়ে এসে অভিনন্দন জানানোর জন্যে ভ্রমণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হবে এটি কোন অলীক কাহিনি নয় বরং বিশ্বের কোন কোন রাষ্ট্রে ইতোমধ্যে এসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মানুষ যদি এসব করে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং এগুলো তাদের স্বভাবে পরিণত হয় তাহলে যারা এসকল (বাড়াবাড়ী পূর্ণ) কাজ করে আর নিষেধ করতে পারবে না। সুতরাং অভিনন্দনের রাস্তা বন্ধ করাই সংগত।
(৬) নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন আদান-প্রদানের মূলত কোন অর্থ নেই। কারণ অভিনন্দনের মূল অর্থতো হচ্ছে নতুন কোন নিয়ামত অর্জিত হওয়া বা কোন ক্ষতিকর জিনিসকে প্রতিহত করতে পারা এবং আনন্দ প্রকাশ স্বরূপ অভিনন্দন বিনিময় করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটি হিজরি বর্ষ শেষ হওয়ার মাধ্যমে কী নিয়ামত অর্জিত হল? বরং অধিক যুক্তিযুক্ত ও সংগত হচ্ছে, একটি বৎসর জীবন থেকে চলে গেল। বয়স কমে গেল মৃত্যু ঘনিয়ে আসল এসব নিয়ে চিন্তা করা এবং শিক্ষা গ্রহণ করা।
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে বিদায়ি বর্ষের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরকে অভিনন্দন জানায় অথচ তাদের শত্রু তাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তখন তারা নিজেদের কি দিয়ে অভিনন্দিত করবে?
এসব দিক বিবেচনা করা আমরা বলব, অভিনন্দন- মুবারকবাদ নববর্ষ উপলক্ষে নিষিদ্ধ হওয়ারই দাবি রাখে এবং এটিই সঠিক যুক্তি সংগত। যদি কেউ আপনাকে এ উপলক্ষে অভিনন্দন জানায় আপনার উচিত হবে তাকে বুঝানো ও নসিহত করা। কারণ পাল্টা অভিনন্দন জানানো এবং প্রকার এর বৈধতাকে স্বীকার করে না।
সালামের আদান-প্রদানের উপর একে তুলনা করা যায় না। তুলনা করা হলে, এটি হবে একটি অসংলগ্ন কাজ।
তবে বিষয়টি যেহেতু ইজতেহাদী তাই খুব কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা করা ঠিক হবে না। ইজতেহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন ইনকার নেই।
والله أعلم وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم.
সূত্র-নববর্ষ উপলক্ষে অভিনন্দন বিনিময়ের বিধান
লেখক : শায়খ আলাভী বিন আব্দুল কাদির সাক্কাফ
অনুবাদ : ইকবাল হোসাইন মাসুম
সম্পাদনা : নুমান আবুল বাশার
ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
No comments:
Post a Comment