Friday, 21 July 2023

মুহররম মাসের ১০ তারিখ বা আশুরা সম্পর্কে ভুল ধারনা দূর করন-



#আশূরার সাথে হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের কোন সম্পর্ক নেই। হুসাইন (রাঃ) মৃত্যু ৬১ হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর মৃত্যুর ৫০ বছর পরে।

৬১ হিজরির ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হুসাইন রা. কে শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন। এই শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা অনেক উন্নীত করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. এর ব্যাপারে এ শুভ সংবাদ প্রদান করে গেছেন যে, তারা হবেন জান্নাতের যুবকদের নেতা। আর এ কথা চির সত্য, যে যত বড় মর্যাদা লাভ করে তাকে তত বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:

হুসাইন রা. এর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে শয়তান মানুষের মধ্যে দুটি বিদআত আবিষ্কার করল। একটি হল, আশুরার দিন শোক ও কান্নাকাটি করার বিদআত। যে দিন শরীরে আঘাত করা, চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, পিপাষার্ত থাকা, মর্সিয়া পালন ইত্যাদি কার্যক্রম করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় বরং এ দিন পূর্বপুরুষদেরকে গালাগালি করা হয়, তাদের উপর অভিশাপ দেয়া হয় এবং এমন সব লোকদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয় যারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী নয় এবং হুসাইন রা. এর মৃত্যু সংক্রান্ত এমন সব কাহিনী বয়ান করা হয় যেগুলো অধিকাংশই মিথ্যা এবং বানোয়াট।

#তাহলে আশুরায় আমরা কি করবো?

সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন—

❝কেউ চাইলে পুরো মহরম মাস, অথবা মহরম মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রাখতে পারে। [১] তবে এই মাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো দশ তারিখের রোজা। আশুরার (মহরম মাসের দশ তারিখের) রোজা রাখলে বিগত এক বছরের (ছোটো) গুনাহ মোচন করা হয়। [২] তবে ইহুদিদের বিরোধিতা করার জন্য দশ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন রোজা রাখা সুন্নাত। কেননা ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে।

নাবী ﷺ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তোমরা এই দিনে রোজা রাখ কেন?” তারা বলেছিল,

#কারণ এই দিন মহান আল্লাহ মূসা ﷺ ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছিলেন, আর ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। তাই মূসা (‘আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) আল্লাহ’র জন্য শুকরিয়াস্বরূপ ওই দিন রোজা রেখেছিলেন। সেজন্য আমরাও এই দিনে রোজা রাখি।” এ কথা শুনে নাবী ﷺ বললেন, “মূসার (আদর্শের) ব্যাপারে আমরাই তোমাদের চেয়ে বড়ো হকদার।” এই বলে তিনি ﷺ সেদিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে এই রোজা করার নির্দেশ দিলেন। [৩]

কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّه ُفَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ “এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন। অতএব তুমি তাদের হেদায়েত (আদর্শ) অনুসরণ করো।” [৪] আয়াতে যাদেরকে হেদায়েত দেওয়ার কথা বিবৃত হয়েছে, তাঁরা হলেন (পূর্ববর্তী) রাসূলগণ।

তাই রাসূল ﷺ এই দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবীদেরকে এই রোজা করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু এই রোজা ওয়াজিব নয়, বরং তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এরপর নাবী ﷺ বলেছেন, لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لأَصُومَنَّ التَّاسِعَ “আমি যদি আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে অবশ্যই (দশ তারিখের সাথে) নয় তারিখেও রোজা রাখব।” [৫]

ইহুদিদের বিসদৃশ করার জন্য তিনি এই কথা বলেছেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তোমরা দশ তারিখের একদিন আগে অথবা একদিন পরে একটি রোজা রাখ।” [৬] কিন্তু একদিন আগে রোজা রাখার বর্ণনাটি একদিন পরে রোজা রাখার বর্ণনার চেয়ে অধিক বিশুদ্ধ। না‘আম।❞

উপস্থাপক: “তাহলে আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে?”

শাইখ: ❝হ্যাঁ। আশুরার রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে। অর্থাৎ বিগত বছরে যেসব সগিরা (ছোটো) গুনাহ করেছে, তা মোচন করে। পক্ষান্তরে কবিরা (বড়ো) গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করা হয় না। কিন্তু বিভিন্ন সৎকর্মের মাধ্যমে সগিরা গুনাহ বিমোচিত হয়। সেসবের মধ্যে আশুরার রোজা অন্যতম। না‘আম।❞

#মুহররমের বিদআত ও অন্যায় কার্যক্রম যা নিষিদ্ধ-

গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।


মুহাররম মাস-বিশেষ করে এ মাসের ১০ তারিখে (আশুরার দিন) শিআ-রাফেযী সম্প্রদায় কর্তৃক অনেক বাড়াবাড়ি, হিংসাত্মক এবং নান ধরণের শরীয়ত বহির্ভূত/বিদআতী কার্যক্রম পালিত হয়ে থাকে। নিম্নে এ ধরণের কতিপয় কার্যক্রম তুলে ধরা হল:

১) হুসাইন রা. এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রতি মিথ্যা সমবেদনার প্রকাশ হিসেবে গালে চপেটাঘাত করা, বুক থাপড়ানো, শরীর রক্তাক্ত করা, তলোয়ার বা ছুরির আঘাতে মাথা থেকে রক্ত প্রবাহিত করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, কান্নাকাটি করা, শরীরের পোশাক ছেঁড়া, নিজেকে নানাভাবে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।

২) কারবালা যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে আশুরায় ‘লাঠি খেলা’র আয়োজন করা।

৩) মুহররমের ১০ তারিখে শোক দিবস পালন করা।

৪) হুসাইন রা. এর প্রতীকী কবর তৈরি করে তা সুসজ্জিত করা বা তাতে সম্মান করা।

৫) কালো পতাকা নিয়ে তাজিয়া মিছিল করা এবং তাতে পানি বিতরণ করা।

৬) মুহররমের দশ তারিখে কালো জামা-কাপড় পরিধান করা।

৭) মুহররম উপলক্ষে গান-বাদ্য, কাওয়ালী, জারি, সারি, মুর্সিয়া বা পালা গানের আসর বসানো।

৮) হুসাইন রা. এর মৃত্যুতে শোক পালনার্থে মুহররমের প্রথম দশ দিন গোস্ত, মাছ, ডিম ইত্যাদি

খাওয়া, বিয়েশাদী করা বা দেয়া থেকে বিরত থাকা।

৯) এ উপলক্ষে মুহররমের প্রথম দশ দিন মাটিতে ঘুমানো।

১০) কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করে ফেতনার আগুন উসকিয়ে দেয়া এবং পূর্ব যুগের বিভিন্ন নিরপরাধ মানুষের প্রতি অভিশাপ দেয়া।

এ কাজগুলো মূলত: পথভ্রষ্ট শিয়া সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে আর অনেক অজ্ঞ মুসলিম নাজানার কারণে তাদের সাথে এ সব কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করে!

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...