Saturday 10 July 2021

যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলতঃ


কুরআন ও হাদীসে এ মাসের প্রথম দশ দিনের ব্যাপারে অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নিচে সংক্ষেপে কিছু উপস্থাপন করলামঃ
১. আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
( وَالْفَجْرِ * وَلَيَالٍ عَشْرٍ *)
অর্থাৎঃ . ফজরের শপথ। দশ রাতের শপথ। (সূরা ফজরঃ ১-২)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় জগদ্বিখ্যাত মুফাসসির ইবনু কাছীর রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এর দ্বারা যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন উদ্দেশ্য, যেমনটি আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস ও আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহুম এবং মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ প্রমুখগণ বলেছেন। (বুখারী)
২. আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ জিল হজ্জ্বের এই প্রথম দশকের চাইতে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহ্‌র নিকট অধিক পছন্দনীয়। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন: হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! আল্লাহর পথে জিহাদও কি নয় ? তিনি বললেন: আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ সেই মুজাহিদ ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে স্বীয় জান-মাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে আর উহার কিছুই নিয়ে প্রত্যাবর্তন করে না। (বুখারী, অনুচ্ছেদ: আইয়ামে তাশরীকের দিন গুলোতে আমল করার ফযীলত)
৩. আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
(وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ)
অর্থাৎঃ আর যাতে তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। (সূরা হাজ্জঃ ২৮)
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ “নির্দিষ্ট দিনগুলো” দ্বারা উদ্দেশ্য হলঃ জিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)
৪. আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন ব্যতীত এম কোন সুমহান দিন নেই যাতে নেক আমল করা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। সুতরাং তোমরা এই দিন গুলোতে বেশী বেশী তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ (অর্থাৎঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পাঠ কর। (আহমাদ)
৫. জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনু হাজার রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ঐতিহাসিক বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বলেনঃ যিল হজ্জ মাসের এই দশ দিনের স্বাতন্ত্র্যের কারণ হয়তো এটাই যে, সকল মৌলিক ইবাদতগুলো এই দিনগুলিতে একত্রিত হয়েছে। যেমন; সলাত, সিয়াম, সাদাকাহ, হজ্জ। এ রকম আর অন্য কোন সময় হয় না।
৬. আল্লামা ইবনু রজব রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মুমিন বান্দাদের অন্তরে বায়তুল্লাহ তথা কাবা ঘর দর্শণের আকাঙ্খা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সবাই প্রত্যেক বৎসর কাবা ঘর দর্শণের ক্ষমতা রাখে না। যার কারণে ক্ষমতাবানদের উপরে সারা জীবনে মাত্র একবারই হজ্জ ফরজ করেছেন। আর হজ্জে গমনকারী ও বাড়ীতে অবস্থানকারী সকলের মাঝে জিল হজ্জের প্রথম দশকের মৌসুমকে শরীক করেছেন।
৭. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহকে “ যিল হজ্জের প্রথম দশ দিন আর রমজানের শেষ দশ দিনের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম? এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি তার উত্তরে বলেনঃ যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনসমূহ রমজানের শেষ দশকের দিনগুলি থেকে উত্তম। আর রমজান মাসের শেষ দশকের রাত সমূহ যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের রাত সমূহ থেকে উত্তম।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলামে যিল হজ্জ মাসের প্রথম দশকের গুরুত্ব অনেক। ফলে এই কল্যাণময় মৌসূমকে আমাদের কাজে লাগানো দরকার এবং এর হেফাজত করা দরকার। একজন প্রকৃত মুসলিমের এই সুযোগকে হাত ছাড়া করা মোটেই ঠিক হবে না। কারণ আপনার জীবনের যে সময়টি অবশিষ্ট আছে তার কোনই মূল্য নেই। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত তাওবা করুন এবং সৎ আমলের প্রতি উৎসাহী হোন। জেনে রাখবেন! এই বরকতময় দিনগুলিতে সৎ আমলের কামনা করা কল্যানের দিকে ধাবিত হওয়ারই নামান্তর এবং তাক্বওয়ার প্রতীক। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
ذَٰلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
এটাই আল্লাহর বিধান, আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করলে, এটাতো তার হৃদয়ের তাক্বওয়ারই (আল্লাহ-ভীতিরই) বহিঃপ্রকাশ।(সূরা হাজ্জঃ৩২)

-শায়খ মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম মাদানী হাফিযাহুল্লাহ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...