Sunday 20 December 2020

যারা বিবাহ বন্ধনে উদ্যোগ নিচ্ছেন-

 যারা বিবাহ বন্ধনে উদ্যোগ নিচ্ছেন, তাঁদের এক আরব বেদুঈনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ মনে রাখা প্রয়োজন। তিনি তাঁর বিবাহযোগ্য পুত্রকে সম্বোধন ক’রে বলেছিলেন,

يا بني لا تنكح المنانه ولا الأنانه ولا الحنانه ولا الحداقه ولا البراقه ولا الشداقه ولا عشبه الدار ولا كية القفا
অর্থাৎ, বেটা! তুমি এই (৮ প্রকার) মেয়েকে তোমার স্ত্রীরূপে নির্বাচন করো না।
১। মান্নানাহ (উপকার বা অনুগ্রহ প্রচারকারিণী)
এমন মেয়ে, স্বামীর প্রতি সে বা তার বাপের বাড়ির লোক কোন উপকার বা অনুগ্রহ করলে কথায় কথায় খোঁটা মারে। স্বামীর পরিবারের বা বাইরের লোকের কাছে বলে বা গেয়ে বেড়ায়। 'এটা আমার বাপের ঘরের। এটা আমার ভাই দিয়েছিল বলেই তো? মা দিয়েছিল বলে ঠান্ডা পানি খেতে পাচ্ছ।’ ইত্যাদি
২। আন্নানাহ (কাতর)
এমন মেয়েকে আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় 'আবছুদে’ বলে। মানে যে মেয়ে অল্প কিছুতে 'আঃ-উঃ, বাবারে-মারে’ করতে থাকে। সামান্য আঘাতে কাতর হয়ে যায়। সামান্য কষ্টে কাঁদতে লাগে (ছিঁছ-কাঁদুনে)। অধিকাংশ সময়ে অসুস্থ না থাকলেও অসুস্থতার ভান করে। কোনও কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাথা-ব্যথা বা অন্য কোন অসুখের ওজর পেশ করে। আজ মাথা ধরেছে, কাল পেটে বাজছে পরশু আরো কিছু বলে অজুহাত তৈরি করে।
বাংলা প্রবাদে বলা হয়,
'জারে বউ জার-কাতুরে বর্ষায় বউয়ের হাজা,
কখনো দেখলাম না আমি বউ রইল তাজা।’
৩। হান্নানাহ (অন্যাসক্তা)
যে মেয়ের আসক্তি নিজের স্বামীর সাথে সীমাবদ্ধ থাকে না। তবে সে পরকীয়া করে না। আসলে সে বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা হওয়ার পর বিবাহিতা হয়। অতঃপর কথায় কথায় সে পূর্ব স্বামীর প্রতি আসক্তি প্রকাশ করে। যেন বর্তমান স্বামীর তুলনায় সেই ভালো ছিল, সে কথা বুঝাতে চায়। নগণ্য বঞ্চনায় অথবা সামান্য ত্রুটির ক্ষেত্রে সে তাকে স্মরণ করে। পূর্বের ভালোবাসা সে ভুলতে পারে না। যার ফলে তুলনা করতে গিয়ে সে বর্তমান স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিতা হয়।
অথবা তার গর্ভজাত পূর্ব স্বামীর সন্তান থাকে এবং সে তাদের প্রতি সর্বদা নিজ মনকে ফেলে রাখে। এমনকি সুখের সময়েও সে তাদের দুঃখের কথা তুলে বর্তমান সুখের সময়কে নষ্ট ক’রে ফেলে।
অথবা সর্বদা নিজ পরিবারের প্রতি আসক্তি প্রকাশ ক’রে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে বা ঘন ঘন মায়ের বাড়ি যেতে চায়। আর তার ফলে স্বামীর প্রতি কর্তব্যে অবহেলা ক’রে বসে।
৪। হাদ্দাক্বাহ (পরদর্শিনী)
এমন মেয়ে সর্বদা পরের দিকে তাকায়। পরের সুখ দেখে নিজের সুখটাকে তুচ্ছজ্ঞান করে। আর তার ফলে নিজেকে ও নিজ স্বামীকে কষ্টে ফেলে। সে কী পেয়েছে, তা দেখে না, কী পায়নি, তাই দেখে থাকে।
এ নারী কখনও অল্পে তুষ্ট হয় না। যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত থাকে না। স্বামীর কৃতজ্ঞ হয় না। বরং অন্যের দেহে (বর্তমানে নেটে) যে অলংকার বা পোশাক দেখে, পছন্দ হলেই তা পাওয়ার জন্য স্বামীর কাছে বায়না ধরে। অন্যের বাড়িতে ভালো কোন সাজ-সরঞ্জাম (পালঙ্ক, সোফা, গালিচা, আলমারি প্রভৃতি) দেখে এলে নিজের বাড়িতে পেতে জেদ ধরে। পরের দেখাদেখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে অলংকারের উপর অলংকার, পোশাকের উপর পোশাক কিনতে চায়। অন্যের ডিজাইন পছন্দ হলে নিজের অলংকার ভেঙ্গে গড়াতে চায় এবং অর্থের অপচয় ঘটায়।
৫। শাদ্দাক্বাহ (বাচাল বা বখাটে)
এমন মেয়ের মুখে সর্বদা খই ফোটে, সে সর্বদা বেশি কথা বলে, উচ্চ স্বরে বলে, কাটিং ক’রে আজব ভঙ্গিতে বলে, মিথ্যা বলে, ফালতু বলে, বিরক্তিকর কথা বলে এবং সকলকে বিরক্ত ক’রে ছাড়ে। যে মজলিসে থাকে, সে মজলিসে সে একাই কথা বলে, অন্যকে কথা বলার সুযোগই দেয় না। অন্যের কথা লুফে নিয়ে বলে, খুব বেশি বকবক করে।
তার কথায় অহংকার প্রকাশ পায়। বিশেষ ক’রে স্বামী তার থেকে বয়সে অনেক বড় হলে অথবা আর্থিকভাবে স্বামীর পরিবার তার পরিবার থেকে দুর্বল হলে অথবা রূপে স্বামীর থেকে বেশি সুন্দর থাকলে অথবা শিক্ষায় স্বামীর তুলনায় বড় হলে অথবা সামাজিক মর্যাদা বা বংশে স্বামীর তুলনায় উচ্চ হলে তার অহংকার নিত্য কাঁটা হয়ে স্বামী ও তার আত্মীয়ের দেহ-মনে বিদ্ধ হতে থাকে।
৬। বার্রাক্বাহ (ঠসকী)
এমন মেয়ে সব সময় নিজ দেহের চমক নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সব সময় সাজুগুজুতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করে। নিজ ঠাট-ঠসকে স্বামীর মন যোগানো তার উদ্দেশ্য থাকে না, বরং এটা তার আচরিত অভ্যাস থাকে। নিজের রূপ না থাকলেও বানানো নকল রূপ নিয়ে গর্বিত হয়।
এর অন্য একটি অর্থ হল তীক্ষ্ম-দর্শিনী। এমন মেয়ে সর্বদা সূক্ষ্ম জিনিসকে তীক্ষ্মভাবে দর্শন ক’রে থাকে। খাবার সময় কে কীভাবে খাচ্ছে, কে কয়টা রুটি খাচ্ছে, কে বেশি খাচ্ছে, কে কম খাচ্ছে, কে পেটুকের মতো খাচ্ছে, কে বড় বড় গ্রাস তুলে গিলছে ইত্যাদি অনর্থক পরিদর্শন করে। যেন তার চক্ষু আধুনিক যুগের রাডার-যন্ত্র। অবশ্য খুঁত ও ভুল ধরার জন্য।
৭। উশবাতুদ দার (ঘরের ঘাস)
অপদার্থ মেয়ে। যে না নিজের যত্ন নেয়, আর না স্বামী-সন্তান বা বাড়ির যত্ন গ্রহণ করে। পরিচ্ছন্নতার খেয়াল রাখে না, পারিপাট্যের খবর জানে না। আগোছালো তার শরীরের পোশাক, আগোছালো তার সংসারের আসবাব-পত্র।
এর অন্য অর্থে নোংরা পরিবার ও পরিবেশের সুন্দরী নারীকে বুঝানো হয়েছে। যার আচরণ ও চরিত্রে সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক।
৮। কাইয়্যাতুল ক্বাফা
এমন মেয়েকে বলা হয়, যার অভ্যাস হল পিছনে কথা বলা, গীবত করা। মায়ের বাড়ির লোকের কাছে শ্বশুরবাড়ির গীবত করা ইত্যাদি।
অথবা এমন দাগী মেয়েকে বলা হয়, যার স্বামী মজলিস থেকে বিদায় নিলে লোকেরা তার সম্পর্কে সমালোচনা ক’রে বলে, 'এর বউটা এমন। এর বউটা এই কাজ করেছিল।’
#কমেন্টে---------------------------------------------------
পুংবাদীদের বক্তব্যঃ
*দারুন বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মেয়েরাই এই রকম।
*স্যার! এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে আজীবন অবিবাহিতই থেকে যাওয়া লাগবে।
*শায়খ! আমরা বিয়ের আগে মেয়ের এই সকল বদগুণ জানব কীভাবে?
*কোন বন্ধু বা আত্মীয়ের মাধ্যমে জানা যেতে পারে।
*দূর! তাই কি সম্ভব নাকি? এ সব ভাগ্যের ব্যাপার। ভাগ্যে যেমন আছে, তেমন মেয়েকেই বউ রূপে নিয়ে মেনে ও মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।
*তা বলে খোঁজ-খবর না নিয়েই বিয়ে ক’রে বসবেন, তা ঠিক নয়।
*আরে মশাই! মেয়ে দ্বীনদার হলেই সব গুণই পাওয়া যাবে।
*না, না। এটা জরুরী নয়। সর্বগুণে গুণবতী মেয়ে পাওয়া কঠিন। খুঁজতে খুঁজতে বুড়া হওয়া লাগবে।
*হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, যত বড়ই দ্বীনদার হোক, 'কন্টক বিনা কমল নাই, কলঙ্ক বিনা চন্দ্র নাই।’
*যত দোষ মেয়েদের! আর ছেলেদের বুঝি কোন দোষ নেই?
*আছে। মেয়েদেরও উচিত তেমন ছেলে দেখে বিয়ে করা।
*মেয়েদেরকে অভিভাবকের পছন্দ মতে বিয়ে করতে হয়। তারা কীভাবে খুঁজবে?
*যেভাবে ছেলেরা খুঁজবে। মেয়ের অভিভাবক তো একটা ছেলে বা পুরুষ।
#মোটকথা--------------------------
শিক্ষণীয় হল যে, এই সকল গুণের মেয়ে বা ছেলে হওয়া উচিত নয়। পাওয়াটা সত্যই সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবে চেষ্টা অবশ্যই চালাতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ নেট থেকে
সংগ্রহ ও ভাবানুবাদেঃ আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...