Saturday 18 July 2020

স্বামীর আনুগত্যের আবশ্যকতা


·
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নাবাউয়ীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—
❝মহিলার জন্য স্বামীর আনুগত্য করার ব্যাপারটি বাড়িতে সুন্দর সহাবস্থানে থাকার আওতাভুক্ত। আল্লাহর নাফরমানি হয় না, এমন প্রতিটি কাজে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। এমনকি ‘উলামাগণ বলেছেন, স্বামীর আনুগত্য করা পিতামাতার আনুগত্যের চেয়েও অগ্রাধিকারযোগ্য। অর্থাৎ আনুগত্যের ক্ষেত্রে পিতামাতার অধিকারের চেয়ে স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকারই প্রাধান্য পাবে।
তাঁরা বলেছেন, স্বামী যদি স্ত্রীকে এমন কাজের আদেশ দেয়, যা কোনো পাপের কাজ নয়, আবার তার (স্ত্রীর) পিতা যদি তাকে এমন কাজের আদেশ দেয়, যা কোনো পাপের কাজ নয়, তাহলে তার জন্য স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করাই আবশ্যক হবে। এমনকি স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবারের কাছে যেতে বাধা দেয়, যদিও কাজটি স্বামীর জন্য বৈধ নয়, তথাপি এক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করাই হবে তার জন্য ওয়াজিব।
কোনো ক্ষতি না থাকা সত্ত্বেও এমনিতেই স্ত্রীকে (পরিবারের কাছে যেতে) বাধা দেওয়া স্বামীর জন্য জায়েজ নয়। কিন্তু যখন স্বামী তদীয় স্ত্রীকে এ কাজের নির্দেশ দিবে, তখন তা পালন করা আবশ্যক বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “নেককার স্ত্রীগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার করো। তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত, সুমহান।” [১]
স্বামীর আনুগত্য যে স্ত্রীর ওপর ওয়াজিব, তার দলিল এ আয়াতে রয়েছে। তিনটি দিক থেকে এ দলিল গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম দিক: আয়াতে উদ্ধৃত ‘ক্বানিতাহ’ তথা ‘অনুগতা’ বিশেষণটি সে মহিলার জন্যই প্রযোজ্য হয়, যে তদীয় স্বামীর আনুগত্য করে। এ ব্যাখ্যা করেছেন ইবনু ‘আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ও একাধিক সালাফ। সুতরাং ‘অনুগতা’ মহিলা তিনিই, যিনি নিজের স্বামীর আনুগত্য করেন। সালাফদের থেকে এমন তাফসীরই বর্ণিত হয়েছে। [২]

দ্বিতীয় দিক: স্বামী যখন স্ত্রীর থেকে অবাধ্যতার আশঙ্কা করবে, অথবা স্ত্রী অবাধ্যতা করবে, তখন সেক্ষেত্রে স্বামীর জন্য আল্লাহ বৈধতা দিয়েছেন, সে তার স্ত্রীকে সদুপদেশ দিবে। যদি স্ত্রী সদুপদেশ না শোনে, তাহলে আল্লাহ বৈধতা দিয়েছেন, এক্ষেত্রে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে শয্যায় যাওয়া বর্জন করতে পারবে। এরপরও যদি স্ত্রী না শোনে, তাহলে আল্লাহ বৈধতা দিয়েছেন, এক্ষেত্রে স্বামী তদীয় স্ত্রীকে প্রহার করতে পারবে। সেটা হবে এমন প্রহার, যা তার রাগের প্রকাশ ঘটায় মাত্র, উগ্রতার দরুন জখম করে দেয় না।
বরং প্রহার হবে অতি সামান্য, যা কেবল রাগের প্রকাশ ঘটায়। স্বামীর আনুগত্য করা যদি ওয়াজিব না হতো, তাহলে আনুগত্য পরিত্যাগের দরুন স্ত্রীকে শাস্তি দেওয়া সিদ্ধ হতো না।
তৃতীয় দিক: এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কোরো না।” এ কথা প্রমাণ করছে, স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। আর স্ত্রী তদীয় স্বামীর আনুগত্য না করলে, স্বামীর জন্য সুযোগ তৈরি হয় যে, সে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অন্য পথ অনুসন্ধান করবে (অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে সদুপদেশ, শয্যা বর্জন, প্রহার)। সুতরাং এ আয়াতাংশটি আনুগত্যের আবশ্যকতা প্রমাণ করে।
আবু হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমাজানের রোজা রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে।” ইবনু হিব্বান তাঁর ‘সহিহ’ গ্রন্থে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আল-আলবানি বলেছেন, এ হাদিসের সনদ: হাসান লি গাইরিহি। [৩]
আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমাজানের রোজা রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, আর স্বামীর অনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।” [৪]
এখানে দলিল হচ্ছে: হাদিসে উল্লিখিত বিধানগুলোর সংযোগ। বলা হয়েছে, ‘কোনো মহিলা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে’, আর এ কাজ ফরজ। এরপর বলা হয়েছে, ‘রমাজানের রোজা রাখে’, এটাও ফরজ বিধান। তারপর বলা হয়েছে, ‘যৌনাঙ্গের হেফাজত করে’, এটাও ফরজ। সবশেষে বলা হয়েছে, ‘আর স্বামীর অনুগত্য করে’, এটাও ফরজ বিধান। এ বিধানগুলো পালন করলে তাকে বলা হবে, তুমি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।
উপরন্তু যে রমনী স্বামীর আনুগত্য করে না, তার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “দু ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথা অতিক্রম করে না।” অর্থাৎ, মাথার ওপরে ওঠানো হয় না, নামাজের সওয়াব দেওয়া হয় না। হ্যাঁ, নামাজ পড়ার মাধ্যমে নামাজের দায়িত্ব পালন হয় বটে। কিন্তু তাদের দুজনকে নামাজের সওয়াব দেওয়া হয় না।
তারা কারা? নবিজি ﷺ বলেছেন, “একজন সেই গোলাম, যে তার মনিবের নিকট থেকে পলায়ন করেছে; যতক্ষণ না সে মনিবের কাছে ফিরে আসছে। অপরজন সেই মহিলা, যে তার স্বামীর অবাধ্য হয়েছে; যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” ত্বাবারানী ও হাকিম এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আলবানী এ হাদিসকে সহিহ ও হাসান বলেছেন। [৫]
সুতরাং মহিলা যখন তদীয় স্বামীর অবাধ্য হবে, তখন তার নামাজের সওয়াব তাকে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার অবাধ্যতায় অটল থাকে। হ্যাঁ, কিছু ‘উলামা হাদিসটিকে শয্যায় অবাধ্যতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু সঠিক কথা হচ্ছে, হাদিসটি ব্যাপক, মহিলার সকল অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে।❞
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. সুরা নিসা: ৩৪।
[২]. তাফসীরে তাবারী, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ২৯৪-২৯৫; গৃহীত: ইসলামওয়েব ডট কম।
[৩]. ইবনু হিব্বান, হা/৪১৬৩; তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৪৫৯৮; সহিহ তারগীব, হা/২৪১১; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)।
[৪]. আহমাদ, হা/১৬৬১; সহিহ তারগীব, হা/১৯৩২; সনদ: হাসান লি গাইরিহি (তাহকিক: আলবানি)।
[৫]. তাবারানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/৩৬২৮; হাকিম, হা/৭৩৩০; সহিহুল জামি‘, হা/১৩৬; সিলসিলাহ সহিহাহ, হা/২৮৮; সহিহ তারগীব, হা/১৮৮৮ ও ১৯৪৮; সনদ: সহিহ, হাসান (তাহকিক: আলবানি); গৃহীত: দুরার ডট নেট।
·
উৎস:
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...