Tuesday 17 March 2020

উসমানী আজানকে বিদ‘আত আখ্যানে ‘উলামায়ে সুন্নাহর অবস্থান


·
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর প্রতি।
পর সমাচার এই যে, অধুনা বঙ্গদেশের প্রখ্যাত দা‘ঈ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবের একটি বক্তব্য অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। যে বক্তব্যে তিনি তৃতীয় সুপথপ্রাপ্ত খলিফা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) প্রবর্তিত জুমু‘আহর প্রথম আজানকে বিদ‘আত আখ্যা দিয়েছেন। এরপর এ নিয়ে তালিবুল ‘ইলম দা‘ঈ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। ফলে বিন ইউসুফ সাহেব তাঁর বক্তব্যের ক্ল্যারিফিকেশন দিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে নতুন বক্তব্য দেন। যেখানে তিনি ‘উসমানী আজানকে বিদ‘আত বলার ব্যাপারটি অস্বীকার করে বলেন, তিনি বর্তমানে প্রচলিত হিশামী ও হাজ্জাজী আজানকে বিদ‘আত বলেছেন, ‘উসমানী আজানকে নয়।
এদিকে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়া বিভিন্ন জায়গায় কমেন্ট করে স্বীয় পিতার কর্মকে ডিফেন্ড করেন এবং বলেন, তাঁর পিতা আসলে উসমানী আজানকে বিদ‘আত বলেননি। কিন্তু বিন ইউসুফ সাহেব সম্প্রতি সুরিটোলা মসজিদে জুমু‘আহর খুতবায় আবার বলেন, ‘উসমানী আজান বিদ‘আত। এটাই তিনি গত ত্রিশ বছর থেকে বলে আসছেন বলে দাবি করেন। কারণ তিনি এবার সাহাবী ইবনু ‘উমার থেকে একটি দুর্বল হাদীস পেয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে, জুমু‘আহর প্রথম আজান বিদ‘আত। যদিও প্রথমবার এ আজানকে বিদ‘আত বলার সময় তিনি তা জানতেন বলে মনে হয় না।
মজার ব্যাপার হলো, তাঁর পুত্র শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ ভাইয়া আবার পরবর্তী যুগের কিছু ‘উলামার ভুল মত প্রচার করে বলেছেন, ‘উসমানী আজান বিদ‘আত। তিনি যাদের নাম নিয়েছেন, তাদের একজন আবার হাজুরী নামক হাদ্দাদী বিদ‘আতী। মানে নিজের মতের পক্ষে কাউকে পাওয়া গেলেই তার ব্যাপারে আর খোঁজখবর না নিয়ে তাকে দিয়ে নিজেকে ডিফেন্ড করার মতো মানসিকতা তাঁর মধ্যে আছে। ভোজবাজির মতো তাঁদের এমন দ্বিমুখী মত ব্যক্ত করার ঘটনাটি থেকে আরেকটি বিষয়ও স্পষ্ট হওয়া যায় যে, তাঁদের মধ্যে সততার অভাব আছে, বিশেষ করে দা‘ওয়াতী কথাবার্তার ক্ষেত্রে।

এরপর আসি, জনগণের কিছু কথায়। আম জনসাধারণের কেউ কেউ মনে করছে, এগুলো ছোটোখাটো বিষয়। অথচ সুপথপ্রাপ্ত খলিফার কর্মকে ভ্রষ্ট আখ্যা দেওয়া মোটেই ছোটোখাটো বিষয় নয়। যাঁদেরকে সুপথপ্রাপ্ত ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহর রাসূল এবং তাঁদের সুন্নাত আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যারা সুপথপ্রাপ্ত খলিফার কর্মকে বিদ‘আত বলছে, তাদের কোনো অগ্রবর্তী সালাফ ও ইমাম নেই, বিগত দুএক শতাব্দীর কিছু ‘উলামায়ে সুন্নাহ ব্যতীত, যাঁরা কিনা এ ব্যাপারে ভুলে পতিত হয়েছেন।
সুপ্রিয় পাঠক, যারা এই ব্যাপারটিকে ছোটোখাটো মনে করছেন, তাদের জন্য অত্র নিবন্ধে সত্যের দিশা রয়েছে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়। আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, কিছু ভাই নাকি এরকমও বলেছেন যে, বিন ইউসুফ সাহেব হলেন মুজতাহিদ, বিধায় তিনিও ইজতিহাদ করে ‘উসমানী আজানকে বিদ‘আত বলেছেন। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ। ভাই, কয়েকটি সত্য কথা বলি। হজম করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন। যারা উসূলে ফিক্বহ তথা ফিক্বহের মূলনীতি জানে না, তাদেরকে ‘উলামারা ‘আম্মী (সাধারণ আম পাবলিক) মনে করেন। আর আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় বিন ইউসুফ সাহেব উসূলে ফিক্বহ জানেন না, যা তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি একটি কবিরা গুনাহের দোহাই দিয়ে তিনি জনৈক দেওবন্দী মাওলানাকে মুশরিক পর্যন্ত বলেছেন। এ ধরনের লোক মুজতাহিদ হওয়া তো দূরের কথা মুজতাহিদের ছাত্রও নন, বরং তিনি একজন ‘আম্মী। দ্বীনের ব্যাপারে আলগা জিভে কথা বলা তার মতো লোকের জন্য চরমতম অপরাধ। আল্লাহ তাঁকে মাফ করুন, সেই সাথে সত্যপথের দিশাও দান করুন।
মুজতাহিদ হওয়ার জন্য কী কী শর্ত পূরণ করা জরুরি, সেগুলো আমরা ইতঃপূর্বে “আলিম কে?” শীর্ষক নিবন্ধে আলোচনা করেছি। [দ্র.: https://tinyurl.com/y44h3bge] এখন অনেকেই আমার কাছে বিন ইউসুফ সাহেবের এসব কথার দলিল চেয়ে বসবেন। আমি তাঁদেরকে বলছি, দয়া করে সবুর করেন। ‘উসমানী আজানের ব্যাপারে শাইখ রাবী‘র আর্টিকেলটির অনুবাদ শেষ হলেই আমরা বিন ইউসুফের ‘আক্বীদাহগত বিভ্রান্তির ওপর সবিস্তারে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় পাঠক, তাহলে ব্যাপারটা খোলাসা করি। কিছু ‘উলামার ভুল মত পরিবেশন করে একথা বলার আর কোনো সুযোগ নেই যে, বিন ইউসুফ সাহেবও মুজতাহিদ, সুতরাং তিনিও ওইসব ‘উলামাদের মতো ছাড় পাওয়ার যোগ্য। ওইসব ‘উলামা আল্লাহর ইচ্ছায় সালাফিয়্যাহর প্রভূত কল্যাণ সাধন করেছেন এবং অসাধারণ ‘ইলমী খেদমত করেছেন। তাঁরা দ্বীনী ‘ইলমে মুজতাহিদ ছিলেন। বিধায় তাঁদের ইজতিহাদগত ভুল মার্জনীয়। আমরা তাঁদের জন্য এক নেকির আশা করি। পক্ষান্তরে বিন ইউসুফ সাহেব মুজতাহিদ নন, বিধায় আমরা তাঁকে ছাড় দিই না, যেমনভাবে হকপন্থি ‘উলামায়ে সুন্নাহ তাঁর মতো লোকদেরকে ছাড় দেননি।
তাই আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতের মর্যাদা, ‘উসমানী আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘র বর্ণনা, ‘উলামাদের ভুল মতকে আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে আইম্মায়ে সুন্নাহর কঠোরতা এবং যারা ‘উসমানী আজানকে বিদ‘আত বলে, তাদের বিরুদ্ধে ‘উলামায়ে সুন্নাহর বজ্রকঠিন বক্তব্য পেশ করছি। ওয়াল্লাহু ওয়ালিয়্যুত তাওফীক্ব।
·
❏ খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতের মর্যাদা
শরিয়তপ্রণেতা খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতের অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]
একারণে ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৫ হিসেবে.] বলেছেন, “আমি ইমাম আহমাদকে একাধিকবার জিজ্ঞাসিত হতে দেখেছি। তাঁকে বলা হয়েছে, আবূ বাকার, ‘উমার, ‘উসমান ও ‘আলীর কর্মে কী সুন্নাত রয়েছে? তিনি বলেছেন, হ্যাঁ, রয়েছে। একবার তিনি বলেন, যেহেতু রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাগণের আদর্শ অনুসরণ করবে। (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭)” [মাসায়েলে আবূ দাঊদ, ২৭৭ নং মাসআলাহ]
ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯০ হি.] বলেছেন, “খোলাফায়ে রাশেদিনের প্রবর্তিত বিধান সুন্নাত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এ হাদীস দলিল। যেহেতু স্বয়ং শরিয়তপ্রণেতা ﷺ এটাকে এভাবেই সাব্যস্ত করেছেন। শরিয়ত থেকে এর দলিল সুসাব্যস্ত, এটা বিদ‘আত নয়। একারণে তিনি নিঃশর্তভাবে তাঁদের অনুসরণের কথা বলে পরক্ষণেই বিদ‘আত থেকে নিষেধ করেছেন। সুতরাং তাঁদের এই কাজ যদি বিদ‘আত হতো, তাহলে হাদীসের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতো।” [আল-ই‘তিসাম, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৯৮]
সাহাবীগণও সুপথপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নাত অনুসরণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যেমন ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, “নাবী ﷺ (মদ্যপায়ীকে) চল্লিশটি বেত্ৰাঘাত করেছেন এবং আবূ বাকরও তার খিলাফতকালে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেছেন। আর ‘উমার (তাঁর খেলাফাতকালে) আশিটি বেত্রাঘাত করেছেন। উক্ত দুই সংখ্যার প্রতিটিই সুন্নাত। তবে এটি (শেষোক্তটি) আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।” [সাহীহ মুসলিম, হা/১৭০৭; ‘দণ্ডবিধি’ অধ্যায় (৩০); পরিচ্ছেদ- ৮]
ইমাম নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, “এতে এই বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে যে, সাহাবীদের কর্মও আমলযোগ্য সুন্নাত। এটা নাবী ﷺ এর এই বাণীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি ﷺ বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাগণের আদর্শ অনুসরণ করবে এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭)” [শারহে মুসলিম, ১২/২১৭]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, “খোলাফায়ে রাশেদিন অথবা তাঁদের কোনো একজন উম্মাতের জন্য যে সুন্নাত চালু করেছেন, তা হুজ্জাহ (দলিল)। এ থেকে সরে যাওয়া জায়েজ নয়।” [ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন, ২/২৪৫]
·
❏ ‘উসমানী আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘র বর্ণনা:
ইমাম ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৩১৭ হি.] বলেছেন, “লোকসংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন ‘উসমান বিন ‘আফফান (সে সময়ের) সকল মুহাজির ও আনসার সাহাবীর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় আজান (ইকামতকে একটি আজান ধরে), যা মূলত প্রথম আজান, তা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন সূর্য ঢলে পড়ার পর। আমাদের জানামতে তাঁদের কেউই তাঁর বিরোধিতা করেননি। তারপর আমাদের এই যুগ অবধি উম্মত এর ওপরই চলেছে।” [আল-আওসাত্ব, ৪/৬৩]
অনুরূপভাবে এ ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু কুদামাহ (মৃত: ৬২০ হি.), শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (মৃত: ৭২৮ হি.), বুখারীর ভাষ্যকার কিরমানী (মৃত: ৭৮৬ হি.), হাফিয ইবনু রজব (মৃত: ৭৯৫ হি.), হাফিয ইবনু হাজার আল-‘আসক্বালানী (মৃত: ৭৫২ হি.), ইমাম বাদরুদ্দীন ‘আইনী (মৃত: ৮৫৫ হি.), মোল্লা ‘আলী ক্বারী (মৃত: ১০৪০ হি.), ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম সিদ্দীন হাসান খান ভূপালী (মৃত: ১৩০৭ হি.), ইমাম ইবনু বায (মৃত: ১৪২০ হি.), ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (মৃত: ১৪২১ হি.) এবং লাজনাহ দা’ইমাহ (সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি)। [বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: আল-কাফী, ১/৪৯৪; ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৪/১৯৩-১৯৪; শারহু সাহীহিল বুখারী লিল কিরমানী, ৬/২৬; জামি‘উল ‘উলূমি ওয়াল হিকাম, ২/১২৯; ফাতহুল বারী লি ইবনি হাজার, ২/৩৯৪; ‘উমদাতুল ক্বারী, ৬/২১১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ৩/৪৪৮-৪৪৯; ‘আওনুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী, ৩/১৬৮; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া লি ইবনি বায, ১২/৩৪৭; শারহুল ‘আক্বীদাতিস সাফফারীনিয়্যাহ, পৃ. ৬০]
·
❏ ‘উসমানী আজানকে যারা বিদ‘আত বলে, তাদের বিরুদ্ধে ‘উলামায়ে সুন্নাহর বজ্রকঠিন বক্তব্য:
১. শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “তোমরা এটা কোথায় পেলে যে, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এটি (প্রথম আজান) কোনো শার‘ঈ দলিল ছাড়াই বাস্তবায়ন করেছেন?” [মিনহাজুস সুন্নাতিন নাবাউয়িয়্যাহ, ৬/২৯১]
২. ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] ‘উসমানী আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে প্রামাণ্য আলোচনা করার পর বলেছেন, “এর মাধ্যমেই কিছু অনভিজ্ঞ ছোটো তালিবুল ইলমদের দাম্ভিকতা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। যারা কিনা নিজেদেরকে ইলমে হাদীসের দিকে সম্পৃক্ত করে (হাদীসের ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচয় দেয়)। অথচ তারা আমীরুল মু’মিনীন ‘উসমান বিন ‘আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে পথভ্রষ্ট আখ্যা দেয়। বলে, তিনি একজন বিদ‘আতী। আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি। তারা যখন বলে, ‘উসমান বিন ‘আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বিদ‘আতী, তখন এ থেকে ‘উসমানের যুগের সমস্ত সাহাবী বিদ‘আতী সাব্যস্ত হন। কেননা তাঁরা বিদ‘আতকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটা খুবই বিপজ্জনক নীতি, যা দাম্ভিকতা ও আত্মগর্ব থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ। এবং তা উদ্‌গত হয়েছে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের আদর্শকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে। আল্লাহর কসম, নিশ্চয় পরবর্তীদের সমঝের চেয়ে সালাফদের সমঝই সঠিকতার অধিক নিকটবর্তী এবং (তাঁদের পথই) পথের দিক থেকে সবচেয়ে হেদায়াতপ্রাপ্ত। এটি একটি সুবিদিত বিষয়। এমনকি ইবনু মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) সাহাবীদের আদর্শ অনুসরণের আদেশ দিয়ে বলতেন, ‘তাঁরা হলেন সর্বাধিক গভীর জ্ঞানসম্পন্ন এবং সবচেয়ে সৎ অন্তরওয়ালা মানুষ।’ যখন অন্তরের সততা আর জ্ঞানের গভীরতা মিলিত হয়েছে, তখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তাঁদের পরে যারা এসেছে, তারা হলো পশ্চাদ্‌বর্তী, তারা অগ্রবর্তী নয়। আমি আমার তালিবুল ‘ইলম ভাইদেরকে এমন দুর্গম যাত্রা (ভ্রষ্টতা) থেকে সতর্ক করছি। আমি বলছি, তোমরা জটিল জায়গায় আরোহন কোরো না। তোমরা অবশ্যই খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত অনুসরণ করবে, যেমনটি তোমাদের নাবী তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এরকম বোকার মতো কথা বলে তাঁদের ওপর রসনা প্রয়োগ করা থেকে দূরে থাক। খোলাফায়ে রাশেদিনের তৃতীয় খলিফা আমীরুল মু’মিনীন ‘উসমান বিন ‘আফফানকে কি বিদ‘আতী বলা যেতে পারে? এমনটা কি বলা সম্ভব যে, তাঁর যুগের সমস্ত সাহাবী বিদ‘আতকে সমর্থন করেছেন?! এই শিশু, তুমি কে? এই অনভিজ্ঞ-অ্যামেচার, তুমি কে? আগে তুমি তোমার নিজের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হও, যাতে তুমি মানুষের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পার। আল্লাহ আমাদের নিরাপত্তা দান করুন।” [আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮/১৮৮-১৮৯]
৩. ইমাম ‘উসাইমীন আরও বলেছেন, “খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত হলো অনুসৃত বিধান। এর মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, জুমু‘আহর দিন প্রথম আজান দেওয়া নাবী ﷺ এর সাব্যস্তকরণের ভিত্তিতে সুন্নাত। আর তা তাঁর এই বাণীর মাধ্যমে যে, “তোমরা অবশ্যই আমার আদর্শ এবং আমার সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাগণের আদর্শ অনুসরণ করবে।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭) পক্ষান্তরে স্বল্পবয়সীদের মধ্যে যে এটার বিরোধিতা করে, আর বলে, এটা বিদ‘আত। এবং একথা বলার মাধ্যমে ‘উসমানকে ভ্রষ্ট আখ্যা দেয়, সে হলো পথভ্রষ্ট বিদ‘আতী।” [প্রাগুক্ত, ৬/১৬২]
৪. ইমাম ‘উসাইমীন আরও বলেছেন, “এর মাধ্যমেই আমরা ওইসব লোকের নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে অবগত হতে পারি, যারা নিজেদেরকে সুন্নাহর অনুসারী বলে দাবি করে। অথচ তারা নিজেরাই সুন্নাহ-বিরোধী। এর অন্যতম একটি উদাহরণ হলো, তারা বলে, জুমু‘আহর দিন প্রথম আজান দেওয়া বিদ‘আত।” [শারহুল আরবা‘ঈন আন-নাওয়াউয়িয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ৩০৭]
·
৫. ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “এই কথার সঠিকতা কতটুক যে, ‘উসমানের আজান হলো বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতা?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) উত্তরে বলেছেন, “এই কথাটাই বিদ‘আত। যে এমনটা বলেছে, সে বিদ‘আতী (কথা বলেছে)। রাসূল ﷺ বলেছেন, “তোমাদের ওপর অনুসরণীয় হলো আমার সুন্নাহ এবং আমার পরে ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ।” উসমান কি ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের অন্তর্ভুক্ত নয়? হ্যাঁ? উসমান কি ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের অন্তর্ভুক্ত না? তিনি কি তৃতীয় খলিফা না? বেশ, তাহলে তিনি যেটার নির্দেশ দিয়েছেন, তা সুন্নাহ। ফজরের পূর্বের প্রথম আজানের মতোই (জুমু‘আহর) প্রথম আজান সুন্নাহ। এটা লোকদের জাগ্রত করার সুন্নাহ। উসমান এই আযানের নির্দেশ দিয়েছেন। যখন তিনি দেখলেন লোকেরা তাদের খামার ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, তারা যাতে সচেতন হয় এবং এর জন্য (জুমু‘আহর সালাতের জন্য) প্রস্তুতি নিতে পারে। সুতরাং এটা সুন্নাহ হয়ে গিয়েছে। আর এই লোক সুন্নাহ ও বিদ‘আতের মধ্যে পার্থক্য জানে না। যে কোনো কিছু সে জানে না, সে সেটাকে বিদ‘আত মনে করে।” [দ্র.: www.youtube.com/watch?v=ag51LaIC8Ks (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট থেকে গৃহীত)]
৬. ইমাম সালিহ আল-ফাওযানকে অন্যত্র জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “দা‘ঈদের একজন বলে, “আমরা উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে বিদ‘আতী বলি না, তবে আমরা বলি, জুমু‘আহর প্রথম আযান বিদ‘আত।” তিনি (প্রশ্নকারী) বলছেন, এই কথার ব্যাপারে হুকুম কী?”
তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন, “এটা (এই কথা) নিজেই বিদ‘আত, এটা নিজেই বিদ‘আত। এই লোক, সে হলো একজন বিদ‘আতী। এ ধরনের কথা থেকে তার জিহ্বাকে হেফাজত করা তার জন্য ওয়াজিব। উসমান একজন ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা। রাসূল ﷺ বলেন, “তোমাদের ওপর অনুসরণীয় হলো আমার সুন্নাহ এবং আমার পরে ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ) এটাই কি সুন্নাহর জন্য তার আগ্রহ? যে সাহাবাদের বিদ‘আতী বলে, খলিফাদের বিদ‘আতী বলে! সুন্নাহ কি এরকম? আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই! এটা হলো অজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত এবং সুন্নাহ থেকে বিদ‘আতের পার্থক্য না জানার অন্তর্ভুক্ত।” [দ্র.: www.youtube.com/watch?v=hrO4ZLBBwwQ (“সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” পেজের পোস্ট থেকে গৃহীত)]
৭. মদিনার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আল-হাফিযুল মুতক্বিন, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইনি বলছেন, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) যে নতুন আজান প্রবর্তন করেছেন, সেটাকে বিদ‘আত বলা কি ঠিক? মা‘আযাল্লাহ (আল্লাহর কাছে এথেকে পানাহ চাই)। তোমরা তোমাদের আহারের পূর্বে শুনেছ, নাবী ﷺ বলেন, “তোমাদের ওপর অনুসরণীয় হলো আমার সুন্নাহ এবং আমার পরে ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ। তোমরা তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাক।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ) ‘উসমান বিন ‘আফফান হলেন সুপথপ্রাপ্ত খলিফা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। তিনি এই আজানের সুন্নাত প্রবর্তন করেছেন। আমরা একথা বলি না যে, তিনি এই আজানের বিদ‘আত প্রবর্তন করেছেন, বরং বলি, তিনি আজানের সুন্নাত প্রবর্তন করেছেন। কেননা তিনি হলেন সুন্নাহর ধারক ও বাহক। আমরা তাঁর সুন্নাত অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি। যখন তিনি এর প্রয়োজন দেখেছেন, তখন তিনি তা প্রবর্তন করেছেন। যখন তিনি দেখেছেন, লোকেরা জুমু‘আহর নামাজে আসতে দেরি করছে, তখন তিনি তা প্রবর্তন করেছেন।” [দ্র.: https://youtu.be/cV0gk1SdvZM.]
৮. সৌদি আরবের প্রখ্যাত দা‘ঈ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ‘আব্দুল ক্বাদির বিন মুহাম্মাদ আল-জুনাইদ (হাফিযাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, “সম্মানিত শাইখ, আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ করুন। আমাদের এখানে জনৈক দা‘ঈ লোকদের মাঝে বলেছে, ‘উসমানের আজান বিদ‘আত। এই দা‘ঈর ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? আমরা শাইখ রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র একটি প্রবন্ধে পড়েছি, সান‘আনী, তুহফাতুল আহওয়াযী প্রণেতা মুবারকপুরী ও শাইখ মুক্ববিল ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র আজানের ব্যাপারে বিদ‘আত শব্দ প্রয়োগ করেছেন। এটা আমাদের কাছে জ্ঞাত বিষয় যে, তাঁরা পরবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত। পূর্ববর্তীদের কেউ কি তাঁদের মতো কথা বলেছেন?”
শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) জবাবে বলেছেন, “উসমান হলেন সুপথপ্রাপ্ত খলিফা। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তোমাদের ওপর অনুসরণীয় হলো আমার সুন্নাহ এবং আমার পরে ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ। তোমরা তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাক।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ) রাসূলুল্লাহ ﷺ ‘উসমানের কর্মকে সুন্নাত আখ্যা দিয়েছেন। আর অনেকেই এই আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন। পক্ষান্তরে আমাদের শাইখ রাবী‘র ব্যাপারটি হলো, আমি তাঁর ব্যাপারে এটাই জানি যে, তিনি এই আজানকে বিধিসম্মত মনে করেন, এটাকে বিদ‘আত আখ্যা দেন না। আর অন্যদের কথা আমি জানি না।” [হোয়াটসঅ্যাপে কৃত প্রশ্নোত্তরের স্ক্রিনশট কমেন্টে দেওয়া হলো]
·
❏ ‘আলিমদের ভুল বা বিরল মতের ব্যাপারে সালাফীদের অবস্থান:
প্রাচীনযুগ থেকেই বিদ‘আতীরা সালাফীদের বিরুদ্ধে ‘আলিমদের বিরল বা ভুল মত উপস্থাপন করে আসছে। যেমনভাবে বর্তমানে কতিপয় সালাফী দাবিদার ভাই ‘আলিমদের ভুল মত উপস্থাপন করছে। যদিও একজন সত্যান্বেষী সালাফী সে মতের অনুসরণ না করে অধিকাংশ ‘উলামার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
সালাফীদের এ অবস্থানের ব্যাপারে ইমাম আবূ সা‘ঈদ আদ-দারিমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৫৫ হি.] বলেছেন, “এক ব্যক্তি হক ব্যতিরেকে বিরল মত খোঁজার ইচ্ছা করে, ‘আলিমদের বিরল মতের অনুসরণ করে এবং ‘আলিমদের ভুল বা পদস্খলনকে আঁকড়ে ধরে। অপরদিকে এক ব্যক্তি স্বীয় অন্তরে হকের অনুসরণ করার ইচ্ছা করে, ‘আলিমদের প্রসিদ্ধ মতের অনুসরণ করে এবং অধিকাংশ ‘আলিমের দিকে ফিরে যায়। নিশ্চয়ই তারা দুজন—দুটো স্পষ্ট দলিল, যাদের দ্বারা ব্যক্তির মুত্তাবি‘ (সঠিক পথের অনুসারী) ও মুবতাদি‘ (বিদ‘আতী) হওয়ার দলিল গ্রহণ করা হয়।” [আর-রাদ্দু ‘আলাল জাহমিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ১২৯; গৃহীত: সাহাব (sahab) ডট নেট]
ইমাম আশ-শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২৫০ হি.] বলেছেন, “আর অতীত ও বর্তমানকালের বিদ‘আতীদের চলমান মূলনীতি হলো, যখনই একজন ‘আলিম এমন একটি কথা বলেন যা তাদের বিদ‘আতের পক্ষে যায়, তখন তারা উল্লাসিত হয়। এবং তারা তাদের প্রচেষ্টা বাড়িয়ে দেয়, তাদের নিজেদের মধ্যে এটি জানিয়ে দেওয়া ও প্রচার করার ক্ষেত্রে। অধিকন্তু তারা এটাকে তাদের বিদ‘আতের পক্ষে একটি দলিল হিসেবে ব্যবহার করে এবং তাদের মুখে একটি চপেটাঘাত হিসেবে ব্যবহার করে, যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে।” [আদাবুত্ব ত্বালাব, পৃষ্ঠা: ১১৬; সোর্স: সালাফিটক (salafitalk) ডট নেট; গৃহীত: “সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে” ফেসবুক পেজ]
·
পরিশেষে, সালাফী ভাইদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান, আপনারা সুপথপ্রাপ্ত খলিফার কর্মকে বিদ‘আত বলার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে দূরে থাকুন এবং উক্ত কাজের কাজিকে ডিফেন্ড করা থেকেও বিরত থাকুন। বিদ‘আতীদের মতো ‘উলামাদের ভুল ও বিরল মতকে আঁকড়ে ধরা আপনার জন্য শোভা পায় না। এমন কর্মকে ছুঁড়ে ফেলে পরিপূর্ণভাবে সালাফিয়্যাহয় দাখিল হোন। আর সর্বোপরি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল ও শাইখের প্রতি অন্ধভক্তি থেকে অন্তরকে নির্মল ও পরিষ্কার রাখুন। ইয়া আল্লাহ, আমাদেরকে স্রেফ সালাফিয়্যাহর ওপরই ঐক্যবদ্ধ থাকার তৌফিক দান করুন এবং আমাদের দা‘ওয়াতকে সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে ভরপুর করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
Md Abdullah Mridha.

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...