Saturday 24 August 2019

জবরদখলকারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার বিধান


·
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মাসজিদে নাবাউয়ী’র সম্মানিত মুদার্রিস, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ড. সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি শাসনক্ষমতায় পৌঁছেছে, ক্ষমতাসীন হয়েছে, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব তার অধীন হয়েছে এবং তাকে আহলুল হাল্লি ওয়াল ‘আক্বদ (বিজ্ঞ ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ) শাসক হিসেবে মেনে নিয়েছে, সে যদি না-জায়েজ পদ্ধতিতেও ক্ষমতায় পৌঁছে থাকে, তবুও শার‘ঈভাবে তার বেলায়েত (আনুগত্য পাওয়ার মতো কর্তৃত্ব) সাব্যস্ত হবে। সুতরাং যে ব্যক্তি ক্ষমতাসীন হয়েছে, সে যদি না-জায়েজ পদ্ধতিতেও ক্ষমতায় পৌঁছে থাকে, তবুও শার‘ঈভাবে তার বেলায়েত (আনুগত্য পাওয়ার মতো কর্তৃত্ব) সাব্যস্ত হবে। যেমন কেউ ভোটাভুটির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে। আর ভোটাভুটির মাধ্যমে শাসক নির্বাচন করা হলো না-জায়েজ পদ্ধতি। কেননা এতে বিশৃঙ্খল জনগণ এবং ভালো-খারাপ সবাই অংশগ্রহণ করে। কখনো দেশের অধিকাংশ জনগণ খারাপ হলে, তারা এভাবে নিজেদের শাসক অনুসন্ধান করে।

অথবা কেউ তরবারি দিয়ে অভ্যুত্থান করার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে। এটি না-জায়েজ পদ্ধতি। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো দেশে এসে বলে,
‘আমার ক্ষমতা আছে, তাই আমি এই শাসককে তরবারি দিয়ে হটিয়ে দিব’, তাহলে আমরা বলব, ‘এই কাজ হারাম, এভাবে ক্ষমতায় যাওয়া না-জায়েজ।’ কিন্তু যদি সে ক্ষমতায় এসে যায়, তাহলে? যেমন কোনো দেশে ভোটাভুটি হলো, অমুক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলো, আর আহলুল হাল্লি ওয়াল ‘আক্বদ তার কাছে বাই‘আত গ্রহণ করল। আহলুল হাল্লি ওয়াল ‘আক্বদ হলো আহলুর রায় এবং আহলুল কুওয়্যাহ। আহলুর রায় তথা বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিবর্গ হলেন গ্রহণযোগ্য ‘উলামা, আর আহলুল কুওয়্যাহ তথা ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ হলো সেনাবাহিনী। তো এমন হলে ওই নির্বাচিত ব্যক্তির বেলায়েত সাব্যস্ত হয়ে যাবে। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব তার অধীন হলে, তার বেলায়েত সাব্যস্ত হবে।
কেননা শাসক নির্ধারণের মধ্যে যে কল্যাণ রয়েছে, তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা জায়েজ নয়। একারণে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তরবারির মাধ্যমে কোনো জনপদের অধিবাসীর ওপর বিজয়ী হয়, এমনকি সে খলিফা (শাসক) হয়ে যায় এবং তাকে “আমীরুল মু’মিনীন” তথা “মু’মিনদের শাসক” বলে আখ্যায়িত করা হয়।” [উদ্ধৃতি অসমাপ্ত, এবার ‘আল্লামাহ সুলাইমান (হাফিযাহুল্লাহ) উদ্ধৃতির ব্যাখ্যা করে কথা বলবেন]
স্বাভাবিকভাবে “আমীরুল মু’মিনীন” বলার কথা উল্লিখিত হয়েছে। কেননা তাঁর (ইমাম আহমাদের) যুগে শাসককে “আমীরুল মু’মিনীন” বলা হতো। অর্থাৎ, এটা শর্ত নয়। তাই এরকম ধারণা করা যাবে না যে, এখন তো শাসককে “আমীরুল মু’মিনীন” বলা হচ্ছে না, অতএব সবাইকে খালাস করে দিতে হবে! আসলে তাঁর যুগে শাসকদের “আমীরুল মু’মিনীন” বলা হতো।
তো ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন,
وَمَنْ غَلَبَ عَلَيْهِمْ بِالسَّيْفِ حَتَّى صَارَ خَلِيْفَةً وَسُمِّيَ أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ، فَلَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَّبِيْتَ وَلَا يَرَاهُ إِمَاماً، بَرًّّاً كَانَ أَوْ فَاجِراً.
“যে ব্যক্তি তরবারির মাধ্যমে কোনো জনপদের অধিবাসীর ওপর বিজয়ী হয়, এমনকি সে খলিফা (শাসক) হয়ে যায় এবং তাকে “আমীরুল মু’মিনীন” তথা “মু’মিনদের শাসক” বলে আখ্যায়িত করা হয়; তাহলে সে শাসক ভালো হোক, কিংবা পাপাচারী হোক, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মু’মিনের জন্য এমতাবস্থায় রাত্রিযাপন করা বৈধ নয় যে, সে তাঁকে (তার) নেতা বা শাসক মনে করে না।” [১]
কিছু লোক বলে, “এই শাসক হলো জবরদখলকারী, সে বেআইনি পন্থায় শাসনক্ষমতায় এসেছে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বা সাঁজোয়াযানের মাধ্যমে বা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে শাসনক্ষতায় এসেছে। সুতরাং সে একজন কর্মকর্তা মাত্র, সে ওয়ালিয়্যুল আমর তথা আনুগত্য পাওয়ার মতো কর্তৃত্বের অধিকারী নয়, তার কোনো বাই‘আত নেই, এবং তার কোনো আনুগত্যও নেই।” (আমি বলছি,) তুমি দেখো, ইমাম আহমাদ কী বলছেন। তিনি বলছেন, “সে শাসক ভালো হোক, কিংবা পাপাচারী হোক, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মু’মিনের জন্য এমতাবস্থায় রাত্রিযাপন করা বৈধ নয় যে, সে তাঁকে (তার) নেতা বা শাসক মনে করে না।” [২]
ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) সাহাবী ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র কথা থেকে দলিল গ্রহণ করেছেন। তিনি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, وَأُصَلِّى خَلْفَ مَنْ غَلَبَ “আমি জবরদখলকারী শাসকের পেছনে সালাত আদায় করি।” [৩] অর্থাৎ, আমি এমন শাসকের পেছনে সালাত আদায় করি, যে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে।
হাফিয ইবনু হাজার আল-‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৫২ হি.] বলেছেন,
أَجْمَعَ الْفُقَهَاءُ عَلَى وُجُوبِ طَاعَةِ السُّلْطَانِ الْمُتَغَلِّبِ وَالْجِهَادِ مَعَهُ وَأَنَّ طَاعَتَهُ خَيْرٌ مِنَ الْخُرُوجِ عَلَيْهِ لِمَا فِي ذَلِكَ مِنْ حَقْنِ الدِّمَاءِ وَتَسْكِينِ الدَّهْمَاءِ وَحُجَّتُهُمْ هَذَا الْخَبَرُ وَغَيْرُهُ مِمَّا يُسَاعِدُهُ وَلَمْ يَسْتَثْنُوا مِنْ ذَلِكَ إِلَّا إِذَا وَقَعَ مِنَ السُّلْطَانِ الْكُفْرُ الصَّرِيحُ فَلَا تَجُوزُ طَاعَتُهُ فِي ذَلِكَ بَلْ تَجِبُ مُجَاهَدَتُهُ لِمَنْ قَدَرَ عَلَيْهَا.
“ফাক্বীহগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, জবরদখলকারী শাসকের আনুগত্য করা ও তাঁর সাথে জিহাদ করা ওয়াজিব, আর তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার চেয়ে তাঁর আনুগত্য করাই উত্তম। কেননা এর মাধ্যমে রক্তপাতের পথ বন্ধ হয় এবং জনসাধারণ শান্তিতে থাকতে পারে। ফাক্বীহগণের দলিল হলো এই হাদীস এবং এর সমর্থনে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসসমূহ। তাঁরা এ থেকে কাউকেই পৃথক করেননি। কেবল সেই শাসক ব্যতীত, যে সুস্পষ্ট কুফরিতে পতিত হয়েছে। এক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা জায়েজ নয়। বরং তার সাথে জিহাদ করা সামর্থবান ব্যক্তিবর্গের ওপর ওয়াজিব।” [৪]
অনুরূপভাবে সংস্কারক ইমাম, আল-মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১২০৬ হি.] বলেছেন,
اَلْأَئٍمَّةُ مُجْمِعُوْنَ مِنْ كُلِّ مَذْهَبٍ عَلٰى أَنَّ مَنْ تَغَلَّبَ عَلٰى بَلَدٍ أَوْ بُلْدًانٍ لَهُ حُكٍمُ الْإِمَامِ فِيْ جَمِيْعِ الأَشْيَاءِ.
“সকল মাযহাবের ইমামগণ এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন—যে ব্যক্তি কোনো একটি দেশে অথবা একাধিক দেশে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে, তার জন্য সকল ক্ষেত্রে শাসকের হুকুম সাব্যস্ত হবে।” [৫]
‘আল্লামাহ সুলাইমান আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)’র বক্তব্য এখানে সমাপ্ত হয়েছে।
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১]. ক্বাদ্বী আবূ ইয়া‘লা আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ), আল-আহকামুস সুলত্বানিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ২০; দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, বৈরুত কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২১ হি./২০০০ খ্রি.।
[২]. প্রাগুক্ত।
[৩]. তাবাক্বাতে ইবনে সা‘দ, আসার নং: ৫০৮৮; গৃহীত: হাদিথপোর্টাল ডট কম; ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), ইরওয়াউল গালীল; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৩০৪; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী); গৃহীত: দুরার ডট নেট।
[৪]. হাফিয ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ), ফাতহুল বারী শারহু সাহীহিল বুখারী; হা/৭০৫৪ – এর ভাষ্য; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৫; গৃহীত: হাদিথপোর্টাল ডট কম।
[৫]. ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রহমান বিন ক্বাসিম আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ), আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ ফিল আজউয়িবাতিন নাজদিয়্যাহ; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৫; প্রকাশনার নামবিহীন; প্রকাশকাল: ১৪১৬ হি./১৯৯৫ খ্রি. (৫ম প্রকাশ)।
·
উৎস: বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপটি শাইখের ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া হয়েছে।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...