Thursday 25 May 2017

ইমাম তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ



তিনি হলেন আবু জা’ফর আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সালামা আল আজদী আত্ তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ। তিনি ছিলেন হাদীছের হাফেয, ইমাম, ফকীহ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং মিশরের হানাফী ফকীহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম। ঐতিহাসিকদের বিশুদ্ধ মতে ২৩৯ হিজরী সালে তিনি মিশরের তাহা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ যেহেতু ইয়ামানের প্রখ্যাত আজদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তাই তাকে আজদী বলা হয়। আর তিনি যেহেতু মিশরের তাহা নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন, তাই তাঁর জন্মস্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তাঁকে তাহাবী বলা হয়।
জন্ম ও শৈশব:
তিনি যেহেতু দ্বীনদার ও আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, সে হিসেবে শিশুকাল থেকে তিনি ধর্মীয় পরিবেশে প্রতিপালিত হন। শৈশবকাল থেকেই তার মধ্যে ইলম অর্জনের প্রতি অসাধারণ অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত তিনি তার পিতা মুহাম্মাদ বিন সালামার নিকট থেকে শাফেঈ ফিক্হ এর মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। সে সময় তাঁর মামা আবু ইবরাহীম আল-মুযানী ইমাম শাফেঈর সবচেয়ে বড় শিষ্য এবং শাফেঈ মাযহাবের সবচেয়ে বিচক্ষণ ফকীহ ছিলেন। তাঁর পরিবারের অন্যরাও শাফেঈ ফিক্হ এর অনুসারী ছিলেন। তাই তিনিও প্রথম জীবনে শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি শাফেঈ মাযহাব পরিত্যাগ করে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে যান।
শিক্ষালাভ:
লেখা-পড়ার বয়সে উপনীত হওয়ার সাথে সাথে তিনি জ্ঞান অর্জন শুরু করেন। তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় তাঁর মামা আবু ইবরাহীম ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল-মুযানী রাহিমাহুল্লাহ এর নিকট। তাঁর মামা আবু ইবরাহীম ছিলেন ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ এর ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকীহ এবং ইমাম শাফেঈর ইলমের ভান্ডার। তাঁর মামার নিকট থেকে সর্বপ্রথম জ্ঞান চর্চা শুরু করলেও জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করার মানসে স্বীয় আবাসস্থল থেকে মিশরে আসেন। এ ছাড়াও তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য অনেক জায়গা সফর করেন। যেখানেই কোনো জ্ঞান তাপসের সন্ধান পেতেন, তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হতেন এবং জ্ঞান পিপাসা নিবৃত করতেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ২৬৮ হিজরীতে সিরিয়া গমণ করেন। তা ছাড়া বাইতুল মুকাদ্দাস, আসকালান ইত্যাদি স্থানে সফর করে বিভিন্ন মনীষী থেকে হাদীছ ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন।
ফিকহ শাস্ত্রে তাঁর জ্ঞান সীমা প্রশস্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি অনেক ফিকহী মাসআলার ক্ষেত্রে দিশেহারা হতে লাগলেন। তাঁর মামার নিকট এসব মাসআলার কোনো সমাধান খুঁজে পেতেন না। এসব মাসআলার সমাধানের ক্ষেত্রে তিনি তার মামার আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তিনি দেখলেন, তার মামা শাফেঈ মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এসবের কোনো সমাধান না পেয়ে ইমাম আবু হানীফার ছাত্রদের কিতাবসমূহের প্রতি প্রায়ই ইঙ্গিত করছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহর মতকে প্রাধান্য দিতে লাগলেন। তার মামা ইসমাঈল আল-মুযানী হানাফী মাযহাবের যেসব মাসআলা গ্রহণ করেছেন, তা তিনি مختصر المزني নামক কিতাবে সংকলন করে করেছেন।
ইমাম তাহাবীর মাযহাব পরিবর্তন: প্রথম জীবনে তিনি শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তাঁর বোধশক্তি বৃদ্ধি যতোই বাড়তে থাকে তাঁর সামনে জ্ঞান অর্জন ও গবেষনার দ্বার ততোই উন্মুক্ত হতে থাকে। এ সময় হানাফী মাযহাবের প্রতি তাঁর মামার আগ্রহ দেখে ইমাম তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিতে লাগলেন এবং দ্বীনের মূলনীতি ও শাখা মাসআলাস মূহের ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতিগুলো অধ্যায়ন করতে লাগলেন।
বলা হয়ে থাকে যে, তাঁকে যখন মাযহাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো, জবাবে তিনি বলেছেন, আমার মামা মুযানী হানাফী মাযহাবের গ্রন্থসমূহ অধিক অধ্যায়ন করতেন। তাই আমিও মামার অনুসরণ করে হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলো অধ্যায়ন শুরু করে দেই। আমার কাছে শাফেঈ মাযহাবের তুলনায় হানাফীদের দলীল-প্রমাণগুলো অধিক মজবুত ও অকাট্য মনে হলো। তাই আমি শাফেঈ মাযহাব ছেড়ে হানাফী মাযহাব গ্রহণ করেছি।
অতএব ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর মাযহাব সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার পর তিনি তার মাযহাব পরিবর্তন করলেন এবং শাফেঈ মাযহাব ছেড়ে দিয়ে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে গেলেন। তবে হানাফী মাযহাব গ্রহণ তাকে কতিপয় মাসআলায় ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর মতের বিরোধিতা করতে এবং অন্যান্য ইমামের মতকে প্রাধান্য দিতে মোটেই বাধা দিতে পারেনি। মূলত তিনি ইমাম আবু হানীফার অন্ধ অনুসরণকারী ছিলেন না। অন্যান্য গবেষক আলেমের মতোই তিনি সুস্পষ্ট দলীলের অনুসরণ এবং ইমামের কথার বিপরীত হলেও তিনি দলীলকেই প্রাধান্য দিতেন। তিনি শুধু মনে করতেন যে, ফিকহ এর ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর পদ্ধতিই সর্বোত্তম। তাই তিনি এ ধারাতেই চলতেন এবং তাঁকে অনুসরণ করতেন। এ জন্যই আপনি দেখবেন যে, তাঁর কিতাব: شرح معاني الأثر এর অনেক স্থানেই ইমাম আবু হানীফার মতের বিপরীত মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইবনে যাওলাক রাহিমাহুল্লা এর উক্তিতে আমাদের কথার সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, আমি শাইখের পুত্র আবুল হাসান আলী বিন আবু জা’ফর তাহাবী রাহিমাহুল্লাহকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কাযী আবু উবাইদ হারবুওয়াই এর ফযীলত ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, কাযী আবু উবাইদ আমাকে বিভিন্ন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। একদা তিনি আমাকে একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তার জবাব দিলাম। আবু উবাইদ হারবুওয়াই বললেন, এটি ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ এর মত নয়। আমি তাকে বললাম, হে কাযী আবু উবাইদ! আবু হানীফা যা বলেছেন, আমিও কি তা বলতে বাধ্য? তিনি বললেন, আমি তো তোমাকে ইমামের মুকাল্লিদ মনে করতাম। আমি বললাম, গোঁড়া ও পক্ষপাতী লোক ব্যতীত অন্য কেউ তাকলীদ করতে পারে না। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, নির্বোধ লোকেরাও তাকলীদ করে। অতঃপর কাযী আবু উবাইদ ও ইমাম তাহাবীর মধ্যকার এ বিতর্কটি মিশরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো এবং একটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ হয়ে গেলো। পরবর্তীতে লোকেরা এটি মুখস্ত করে রেখেছে। এ বিতর্কটি ইমাম তাহাবীর সত্যান্বেষী হওয়ার প্রমাণ করে।
ইমাম আবু হানীফার মাযহাব গ্রহণ এবং তাঁর মাযহাব বর্জন সম্পর্কে ইবনে খাল্লিকান বলেন, একদা তার মামা মুযানী সম্ভবত রাগান্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, আল্লাহর কসম! তোমার মধ্যে আমি ভালো কিছু দেখছি না। এতে ইমাম তাহাবী রাগান্বিত হয়ে মামার মজলিস ত্যাগ করে আবু জা’ফর বিন আবু ইমরান হানাফীর দারসে যোগদান করে হানাফী ফিকহে পান্ডিত্য অর্জন করলেন এবং সমসাময়িক আলেমদের চেয়েও উচ্চ আসনে উন্নীত হলেন।
শাইখের আকীদাহ-বিশ্বাস:
যদিও তিনি ফিকহী মাসআলায় হানাফী ছিলেন, কিন্তু আকীদার মাসআলায় তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, আহলে হাদীছ ও আছারের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু আকীদার কতিপয় মাসআলা মুরজিআ ফকীহদের মত পোষণ করেছেন। তাঁর রচিত আল আকীদাতুত তাহাবীয়ার মধ্যে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। সকল মাযহাবের মুসলিমদের নিকট আকীদাহ সংক্রান্ত এটি একটি প্রামাণ্য পুস্তিকা। এর রয়েছে ছোট-বড় অনেক ব্যাখ্যা। আমরা সেগুলো থেকে আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক সংকলিত شرح العقيدة الطحاوية নামক ব্যাখ্যা গ্রন্থটি অনুবাদ করতে যাচ্ছি।
শাইখের উস্তাদগণ:
তার মামা মুযানী এবং আবু জা’ফর আল-হানাফী ছাড়াও আরো অনেক উস্তাদের নিকট থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। ২৬৮ হিজরীতে সিরিয়ায় গিয়ে তিনি কাযী আবু হাযেমের সাথে সাক্ষাৎ করেন তাঁর ও সেখানকার অন্যান্য আলেমের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বলা হয়েছে যে, তার তিন শতাধিক উস্তাদ ছিল। ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই ইলম অর্জনের প্রতি তাঁর অত্যাধিক আগ্রহ ছিল। মিশরের উস্তাদদের নিকট থেকে ইলম অর্জনের পাশাপাশি সে সময় বিভিন্ন ইসলামী অঞ্চল থেকে মিশরে কোনো আলেমের আগমণের সংবাদ শুনলেই তিনি তাঁর সার্বক্ষণিক শিষ্যত্ব গ্রহণ করতেন এবং তার ইলমী ভাণ্ডারের সাথে অন্যান্য আলেমদের ইলম একত্রিত করতেন। তাঁর উস্তাদদের মধ্যে রয়েছেন,
(১) হাদীছের ইমাম আহমাদ বিন শুআইব বিন আলী আন্ নাসাঈ (মৃত: ৩০৩ হি:)
(২) বিশিষ্ট নির্ভরযোগ্য আলেম আহমাদ বিন আবু ইমরান আল-কাযী (মৃত: ২৮০ হি:)
(৩) ইসহাক বিন ইবরাহীম বিন ইউনুস আল-বাগদাদী (মৃত: ৩০৪ হি:)
(৪) তাঁর মামা প্রখ্যাত ফকীহ ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল-মুযানী (মৃত: ২৬০ হি:)
(৫) ইমাম শাফেঈর প্রসিদ্ধ ছাত্র বাহার বিন নসর আল-খাওলানী (মৃত: ২৬৭ হি:)
ইমাম তাহাবীর ছাত্রগণ:
ইমাম তাহাবী তাঁর যুগে ইলমের বিভিন্ন শাখায় পান্ডিত্য অর্জনে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেন। বিভিন্ন মাসআলার তাহকীক ও দলীলের সুক্ষ্ম মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁর সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাই তাঁর ইলমের ভাণ্ডার থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য বিভিন্ন ইসলামী অঞ্চল থেকে ছাত্রগণ দলে দলে এসে তাঁর মজলিসে ভিড় জমাতে থাকে। ছাত্রগণ তাঁকে অত্যন্ত সম্মান দিতেন। তার সুযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন,
(১) মিশরের কাযী আহমাদ বিন ইবরাহীম বিন হাম্মাদ (মৃত: ৩২৯ হি:)
(২) ঐতিহাসিক আব্দুর রাহমান বিন আহমাদ (মৃত: ৩৪৭ হি:)
(৩) সুলায়মান বিন আহমাদ বিন আইয়্যুব আত্-তাবারী (মৃত: ৩৬০ হি:)
(৪) الكامل في الجرح والتعديل গ্রন্থকার আব্দুল্লাহ বিন আদী আল-জুরজানী (মৃত: ৩৬৫ হি:)
আলেমদের দৃষ্টিতে ইমাম তাহাবী:
অনেক আলেম ইমাম তাহাবীর প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি ছিলেনثقة ثبت فيقه عاقل حافظ دين له اليد الطولى في الفقه والحديثঅর্থাৎ নির্ভরযোগ্য, সুদৃঢ়, ফকীহ, বিচক্ষণ, হাদীছের হাফেয এবং ধর্মভীরু আলেম। ফিকহ এবং হাদীছ শাস্ত্রে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল।
ইবনে ইউনূস বলেন, ইমাম তাহাবী ছিলেন নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত, সুদৃঢ়, ফকীহ এবং বিচক্ষণ আলেম। তাঁর যামানায় তার সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।
ইমাম ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে বলেন, তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং হাদীছের সুদক্ষ হাফেযদের অন্যতম। ইমাম ইবনে কাছীর রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, তিনি ছিলেন হানাফী ফকীহ, প্রচুর কল্যাণকর ও মূল্যবান গ্রন্থের লেখক।
জামাল উদ্দীন আবুল মাহাসিন ইউসুফ ইবনুল আমীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, তিনি ছিলেন ফিকহ, হাদীছ, আলেমদের মতভেদ, আরবী ভাষা, নাহু-সরফ, ব্যাকরণ ইত্যাদি শাস্ত্রের ইমাম।
তাঁর ইলমী খেদমত:
সঠিক তথ্য উদঘাটন, সংকলন, সংগ্রহ, সুন্দর ও সাবলীল উপস্থাপনার দিক থেকে তার লেখনীগুলো অনন্য। তিনি যেসব মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন, তার মধ্য রয়েছে,
(১) আহকামুল কুরআনিল কারীম
(২) ইখতেলাফুল উলামা
(৩) শারহু মাআনিল আছার। এতে তিনি দলীলসহ ফিক্হ এর মাসআলাসমূহ আলোচনা করেছেন। এতে তিনি মতভেদপূর্ণ ফিকহী মাসআলাগুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে দলীলগুলোও উল্লেখ করেছেন। মাসআলা ও দলীলগুলো উল্লেখ করার পর সেগুলো পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করে তার কাছে যেটি সুস্পষ্ট হয়েছে, সেটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কিতাবটি ছাত্রদেরকে গভীর জ্ঞান অর্জনের প্রশিক্ষণ দেয়, ফিকহী মাসআলাগুলোতে আলেমদের মতভেদের কারণ সম্পর্কেও অবগত করে এবং দলীল থেকে হুকুম-আহকাম নির্গত করার যোগ্যতা বৃদ্ধি করে। এর মাধ্যমে ছাত্রদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়।
(৪) সহীহুল আছার
(৫) আস্ সুনানুল মাছুরাহ
(৬) মুশকিলুল আছার। যেসব হাদীছ বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরস্পর সাংঘর্ষিক মনে হয়, মুশকিলুল আছার গ্রন্থে তিনি সেসব হাদীছ উল্লেখ করে বৈপরীত্ব ও অসংগতি দূর করেছেন এবং তা থেকে বিভিন্ন হুকুম-আহকাম নির্গত করেছেন।
(৭) আল-আকীদাতুত তাহাবীয়াহ। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহগুলো এতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এটি আলেমদের নিকট আকীদার একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। এর বহু ব্যাখ্যা রয়েছে। মূল পুস্তিকাটি যেভাবে সকল মাযহাবের অনুসারীগণ কবুল করে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি এর ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোও সেভাবে গৃহীত হয়েছে। আমরা যে ব্যাখ্যাটির অনুবাদ করতে যাচ্ছি, তা আলেমদের নিকট অত্যন্ত মূল্যবান একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এটি বিশেষভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে।
(৮) শারহুল জামে আলকাবীর
(৯) শারহুল জামে আস্ সাগীর
(১০) কিতাবুশ শুরুত
(১১) আন্ নাওয়াদের আল ফিকহীয়াহ
(১২) الرد على أبي عبيد (মুতাযেলী ইমাম আবু উবাইদের প্রতিবাদ)
(১৩) الرد على عيسى بن أبان (ঈসা বিন আবানের প্রতিবাদ)।
(১৪) المختصر في الفقه । এ ছাড়া রয়েছে তাঁর আরো অনেক মূল্যবান গ্রন্থ, যা দ্বারা মুসলিম জাতি কিয়ামত পর্যন্ত উপকৃত হতে থাকবে।
ইমামের মৃত্যু:
ইবনে খাল্লিকান وفيات الاعيان গ্রন্থে ইমাম তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ এর ওফাত প্রসঙ্গে বলেন যে, যুগ শ্রেষ্ঠ ফকীহ, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী জ্ঞান তাপস আল্লামা আবু জাফর তাহাবী ৩২১ হিজরি সন মোতাবেক ৯৪৩ খিস্টাবেদ ৯২ বছর বয়সে যিলকদ মাসের বৃহ¯পতিবার রাতে মিসরে ইন্তিকাল করেন। সেখানকার গোরস্থানেই তাঁকে দাফন করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎ কর্মশীলদের সাথে জান্নাতুল ফেরদাউছে স্থান দাও। আমাদের সকলকে তাদের অন্তর্ভূক্ত করো। আমীন

সংগ্রহঃ শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী হাফেযাহুল্লাহ।

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...