Wednesday 23 December 2015

ঈদে মীলাদুন্নবী (শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু শুদ্ধ?)


কয়েক বছর পূর্বে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এক মসজিদে উপস্থিত হলাম প্রতিদিনের মত এশার নামাজ আদায় করতে। দেখলাম আজ মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ। অন্য দিনের চেয়ে কম হলেও মুসল্লীদের সংখ্যা দশগুণ বেশী। সাধারণত এ দৃশ্য চোখে পড়ে রমজান ও শবেকদরে। মনে করলাম হয়তো আজ কারো বিবাহ অনুষ্ঠান কিংবা জানাযা। এত লোক সমাগমের কারণ জিজ্ঞেস করলাম ইমাম সাহেবকে। তিনি বললেন আজ ১২ই রবিউল আউয়ালের রাত। মীলাদুন্নবীর উৎসবের রাত।
সম্মানিত পাঠক!
এ রাত ও পরবর্তী দিন ১২ ই রবিউল আউয়াল অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে এক সময় পালিত হত বৃহত্তর চট্রগ্রাম, নোয়াখালী,ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও পালিত হত তবে তুলনামুলক কম গুরুত্বে । এ রাতে খাওয়া-দাওয়া,আনন্দ উৎসবে মুখর হয়ে উঠে অনেক পাড়া-মহল্লা। যারা এটা পালন করে তাদের উৎসব মুখরতা দেখলে মনে হবে নিশ্চয়ই এটা হবে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। আর এটা তাদের অনেকে বিশ্বাসও করে। তাইতো শ্লোগান দেয়, দেয়ালে লিখে “সকল ঈদের সেরা ঈদ, ঈদে মীলাদ।”
কিন্তু বাস্তবে কি তাই? ইসলাম ধর্মে ঈদে মীলাদ বলতে কি কিছু আছে? ইসলামে ঈদ কয়টি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল? নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত বা মৃত্যু দিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল নয়? যে দিনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করলেন সে দিনে আনন্দ উৎসব করা কি নবী প্রেমিক কোন মুসলমানের কাজ হতে পারে? শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদ পালন করা কি জায়েয? এটা কি বিধর্মীদের অনুকরণ নয়?
এ সকল প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে এ সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস কবে?
কোন তারিখে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকের মতে তার জন্ম দিন হল ১২ই রবিউল আউয়াল। আবার অনেকের মতে ৯ ই রবিউল আউয়াল। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে গবেষণা করে প্রমান করা সম্ভব হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন আসলে ছিল ৯ই রবিউল আউয়াল সোমবার। বর্তমান বিশ্বে সকলের নিকট সমাদৃত, সহীহ হাদীস নির্ভর বিশুদ্ধতম সীরাতগ্রন্থ হল ‘আর-রাহীক আল-মাখতূম’। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস সম্পর্কে এ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫৭১ খৃস্টাব্দে ৯ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ২০ এপ্রিল সোমবার প্রত্যুষে জন্ম গ্রহণ করেন। এটা গবেষণার মাধ্যমে প্রমান করেছেন যুগের প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মাদ সুলাইমান আল-মানসূর ও মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা।

আল্লামা শিবলী নোমানী ও সাইয়েদ সুলাইমান নদভী রহঃ প্রণীত সাড়া-জাগানো সীরাত-গ্রন্থ হল ‘সীরাতুন্নবী’। এ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস সম্পর্কে মিশরের প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী মাহমূদ পাশা এক পুস্তিকা রচনা করেছেন। এতে তিনি প্রমাণ করেছেন যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বেলাদত (জন্ম) ৯ই রবিউল আউয়াল রোজ সোমবার, মোতাবেক ২০ এপ্রিল ৫৭১ খৃস্টাব্দ। মাহমূদ পাশা যে প্রমাণ-পত্র দিয়েছেন তা কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী বিস্তৃত।”
তাদের গবেষণা বিষয়ের একটি দিক হল যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীসে নিজেই বলেছেন তার জন্ম সোমবার দিন হয়েছে। মাহমূদ পাশা গবেষণা ও হিসাব করে দেখিয়েছেন যে,সে বছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখের দিনটা সোমবার ছিল না ছিল বৃহস্পতিবার। আর সোমবার ছিল ৯ই রবিউল আউয়াল।
তাই বলা যায় জন্ম তারিখ নিয়ে অতীতে যে অস্পষ্টতা ছিল বর্তমানে তা নেই। মাহমূদ পাশার গবেষণার এ ফল প্রকাশিত হওয়ার পর সকল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই তা গ্রহণ করেছেন এবং কেউ তার প্রমাণ খণ্ডন করতে পারেননি। অতএব নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস হল ৯ই রবিউল আউয়াল। ১২ই রবিউল আউয়াল নয়। আর সর্বসম্মতভাবে তার ইন্তেকাল দিবস হল ১২ই রবিউল আউয়াল। যে দিনটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মোৎসব পালন করা হয় সে দিনটি মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইটি ওয়াসাল্লামের মিলাদ (জন্ম) দিবস বরং তা ছিল তাঁর ওয়াত (মৃত্যু) দিবস। তাই দিনটি ঈদ হিসেবে পালন করার আদৌ কোন যৌক্তিকতা নেই।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি:
কোন ব্যক্তির জন্মদিবস পালন করা ইসলাম সম্মত নয়। এটা হল খৃষ্টান,হিন্দু,বৌদ্ধসহ বিভিন্ন অমুসলিমদের রীতি। ইসলাম কারো জন্মদিবস পালন অনুমোদন করে না।
এর প্রমাণ সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল:
  • এক. দ্বীনে ইসলাম আজ পর্যন্ত অবিকৃত আছে এবং ইনশাআল্লাহ থাকবে। ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান সুনির্ধারিত ও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম দিবস বা মীলাদ পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবী প্রেমের নজীরবিহীর দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের কেহ এ ধরনের কাজ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। তাই ঈদে-মীলাদ পালন করা নিশ্চয়ই একটি বেদআতকর্ম। আর বেদআত জঘন্য গুনাহের কাজ।
  • দুই. ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবী, তারপরে খুলাফায়ে রাশেদীন ও অসংখ্য সাহাবা, মনীষি আওলিয়ায়ে কেরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম-সমর্থিত হত বা সওয়াবের কাজ হত তাহলে বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনে ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে হত আমাদের সকল মুলমানদের। অন্যান্য কাজসর্ম করার ফুরসত মিলত থোরই।
  • তিন. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন হিজরী ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হওয়া সময় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন। কোন এক স্মরনীয় ঘটনার দিন থেকে একটি নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করা যেতে পারে। উমর (রা:) এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে বললেন যে এ পদ্ধতি খৃষ্টানদের। উমার রাঃ এর এ সিদ্ধান্তের সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষণ করলেন। এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরত থেকে ইসলামী সন গণনা আরম্ভ করলেন।
  • চার. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবীপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী। নবী প্রেমের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। তারা কখনো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিনে ঈদ বা অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা করা ভাল হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন। আর জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না তা বলা যায় না। কেননা তাদের সামনেই তো খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্মদিন (বড়দিন) উদযাপন করত।
  • পাচ. জন্ম দিবস কেন্দ্রিক উৎসব-অনুষ্ঠান খৃষ্টান, হিন্দু,বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয় রীতি। যেমন বড় দিন,জন্মাষ্ঠমী,বৌদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি। তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই ভাল দেখা যাক না কখনো তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। এ কথার সমর্থনে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হল:
(ক) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ »
“যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।”
(খ) আজানের প্রচলনের সময় কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রস্তাব করলেন যে সালাতের সময় হলে আগুন জ্বালানো যেতে পারে। কেউ প্রস্তাব করলেন ঘণ্টা ধ্বনী করা যেতে পারে। কেউ বললেন বাঁশী বাজানো যেতে পারে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। বললেন, আগুন জ্বালানো হল অগ্নিপুজারী পারসিকদের রীতি। ঘণ্টা বাজানো খৃষ্টানদের ও বাঁশী বাজানো ইহুদীদের রীতি।
(গ) মদীনার ইহুদীরা আশুরার দিনে একটি রোযা পালন করত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন,যাতে তাদের সাথে সাদৃশ্যতা না হয়।
(ঘ) হিজরী সনের প্রবর্তনের সময় অনেকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন থেকে সন গণনার প্রস্তাব করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়,খৃষ্টানদের অনুকরণ হওয়ার কারণে।
ইসলামে ঈদ কয়টি? ইসলামে ঈদ হল দুটি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ « مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ ». قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِى الْجَاهِلِيَّةِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ » رواه أبو داود
সাহাবী আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আসলেন তখন দেখলেন বছরের দুটি দিনে মদীনাবাসীরা আনন্দ-ফুর্তি করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ দিন দুটো কি? তারা বলল যে আমরা ইসলামপূর্ব মুর্খতার যুগে এ দু দিন আনন্দ-ফুর্তি করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটো দিন তোমাদের দিয়েছেন। তা হল ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। ( আবু দাউদ)
ইসলামে ঈদ শুধু দু’ টি এ বিষয়টি শুধু সহীহ হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয়,তা রবং ইজমায়ে উম্মত দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত। যদি কেউ ইসলামে তৃতীয় আরেকটি ঈদের প্রচলন করে তবে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তা দ্বীনের মধ্যে একটা বেদআত ও বিকৃতি বলেই গণ্য হবে। যখন কেউ বলে ‘সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মীলাদ’ তখন স্বাভাবিক ভাবেই এর অর্থ হয় ইসলামে যতগুলো ঈদ আছে তার মধ্যে ঈদে মীলাদ হল শ্রেষ্ঠ ঈদ। কিভাবে এটা সম্ভব? যে ঈদকে আল্লাহ ও তার রাসূল স্বীকৃতি দেননি। সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীন ও ইমামগন যে ঈদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তা ইসলামে শ্রেষ্ঠ ঈদ বলে বিবেচিত হতে পারে কি ভাবে? কোন ভাবেই নয়। আর যে ঈদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচলন করে গেলেন তা শ্রেষ্ঠ হবে না। এটা কিভাবে মেনে নেয়া যায়? কোন ভাবেই নয়। তবে শুধু একদিক থেকে মেনে নেয়া যায়,আর তা হল যত ভূয়া ও ভেজাল ঈদ আছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল এই ঈদ!
তা সত্ত্বেও যদি ঈদ পালন করতেই হয় তবে তা ১২ ই রবিউল আউয়াল তারিখে না করে ৯ ই রবিউল আউয়ালে করা যেতে পারে। তাহলে অন্তত সাইয়েদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকাল দিবসে ঈদ পালন করার মত ধৃষ্ঠতা ও বেয়াদবির পরিচয় দেয়া হবে না। অবশ্য এটাও কিন্তু বেদআত বলে গণ্য হবে।
সার কথা ১২ই রবিউল আউয়ালে ঈদে-মীলাদ উদযাপন করা শরীয়ত বিরোধী কাজ। এ ধরণের কাজ হতে যেমন নিজেদের বাঁচাতে হবে তেমনি অন্যকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
যে সকল কারণে ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা যাবে না:
  • প্রথমতঃ ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম। কুরআন ও হাদীসের কোথাও ঈদে-মীলাদ পালন করতে বলা হয় নি। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেয়ীনগন কখনো এটা পালন করেননি। তাই এটা বেদআত ও গোমরাহী।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
عَنْ عَائِشَةَ – رضى الله عنها – قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ » – أخرجه البخاري ومسلم
“আমাদের এ দীনে যে নতুন কোন বিষয় প্রচলন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম।)
তিনি আরো ইরশাদ করেন:
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ » رواه أبو داود و الترمذي وابن ماجه عن عرباض بن سارية.
“সাবধান! দীনের মধ্যে প্রবর্তিত নতুন বিষয় থেকে সর্বদা দূরে থাকবে। কেননা নব-প্রবর্তিত প্রতিটি বিষয় হল বেদআত ও প্রতিটি বেদআত হল পথভ্রষ্ঠতা।” (আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ)
  • দ্বিতীয়তঃ ঈদে মীলাদুন্নবী হল খৃষ্টানদের বড় দিন,হিন্দুদের জন্মাষ্ঠমী ও বৌদ্ধদের বৌদ্ধ-পূর্ণিমার অনুকরণ। ধর্মীয় বিষয়ে তাদের আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করা ঈমানের দাবী। অথচ ঈদে-মীলাদ পালনের মাধ্যমে তাদের বিরোধিতা না করে অনুসরণ করা হয়।
  • তৃতীয়তঃ সর্বসম্মতভাবে ১২ ই রবিউল আউয়াল নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকাল দিবস। এতে কারো দ্বিমত নেই ও কোন সন্দেহ নেই। এ দিনে মুসলিম উম্মাহ ও সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের শোকে পাথর হয়ে হয়ে গিয়েছিলেন। এসব জেনে-শুনে ঠিক এ দিনটিতে ঈদ তথা আনন্দ-উৎসব পালন করা চরম বেঈমানী ও নবীর শানে বেয়াদবী ভিন্ন অন্য কিছু হতে পারে না।
  • চতুর্থতঃ মীলাদুন্নবী পালন করে অনেকে মনে করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তাদের দায়ীত্ব-কর্তব্য আদায় হয়ে গেছে। তাই তারা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাত ও আদর্শের প্রতি কোন খেয়াল রাখেন না। বরং তারা সীরাতুন্নবী নামের শব্দটাও বরদাশ্ত করতে রাজী নয়।
  • পঞ্চমতঃ আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত ইসলামের দু’ঈদের সাথে তৃতীয় আরেকটি ঈদ সংযোজন করা ইসলাম-ধর্ম বিকৃত করার একটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যথার্থ অনুসরণ করা হল ভালবাসার দাবি:
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেন রাসূল হিসাবে প্রেরণ করলেন? তার প্রতি আমাদের করণীয় কি? আল্লাহ তাআলা রাসূলকে এ জন্য পাঠিয়েছেন আমরা যেন তার অনুসরণ করি। তার নির্দেশনা মত আল্লাহর হুকুম মান্য করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ
“আমি রাসূলকে এ জন্যই পাঠিয়েছি যে,আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে।” (সূরা আন-নিসা: ৬৪)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা ও তাকে মুহাব্বত করা হবে ঈমানের দাবী। যার মধ্যে রাসূলের ভালবাসা নেই সে ঈমানদার নয়। রাসূলের ভালবাসার পরিচয় দেবেন কিভাবে? এর দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এক. আল্লাহর নির্দেশ মত জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার অনুসরণ করে ও এর জন্য যে কোন ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকারে প্রস্তুত থেকে। দুই. তাঁকে অনুসরণ না করে তার গুণগান ও প্রশংসাকীর্তনে ব্যস্ত থেকে,মীলাদ পড়ে,মীলাদুন্নবী উদযাপন করে।
আসলে ভালবাসা প্রমাণ করার কোন পদ্ধতিটি সঠিক? আমার মনে হয় মতলববাজ ব্যতিত সকল মানুষ উত্তর দেবে সঠিক হল প্রথমটিই।
আবু তালেবের কথা কারো অজানা নয়। আল্লাহর রাসূলের একেবারে শৈশব থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে নিজ সন্তানের মত ভালবেসেছেন। লালন-পালন করেছেন আদর,স্নেহ,মমতা,ভালবাসা দিয়ে। আর এ ভালবাসতে গিয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ তিন বছর খেয়ে না খেয়ে উপোষ থেকে শোআবে আবু তালেব উপত্যকায় নির্বাসিত জীবন-যাপন করেছেন তাঁরই জন্য। ছায়ার মত সাথে থেকেছেন বিপদ-আপদে। রাসূল মুহাম্মাদের অনুসরণ করা দরকার এটা মুখে স্বীকারও করেছেন। কবিতাও রচনা করেছেন তাঁর উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনুসরণ করলেন না তাঁর আনীত দাওয়াত ও পয়গামের। ফলে সব কিছুই বৃথা গেল। তার জন্য দুআ-প্রার্থনা করতেও নিষেধ করা হল।
পশ্চিমা বহু লেখক ও চিন্তাবিদরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বলে স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি যে সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয় নির্ভুল আদর্শ,তাঁর নির্দেশিত পথই একমাত্র মুক্তির পথ,এ বিষয়টি তাদের কাছে বোধগম্য হয়ে উঠে না।
গ্যেটে কারলাইল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অতি সাম্প্রতিক মাইকেল হার্ট (দি-হান্ড্রেড লেখক) পর্যন্ত বহু লেখক,গবেষক,চিন্তাবিদ ও রাজতৈনিক নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অনেক সপ্রশংস- উক্তি,সীমাহীন ভক্তির নৈবদ্য পেশ করেছেন,অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেছন,আবহমান পৃথিবীর সর্বকালীন প্রেক্ষাপটে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বোত্তম ব্যক্তি।
কিন্তু প্রশ্ন হল তাদের এ প্রশংসাও ভালবাসার দাবি কি কোন কল্যাণে আসবে?
আজকে যারা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুহাব্বত ও ভালবাসার দাবি নিয়ে তাঁরই নির্দেশ লংঘন করে বিভিন্ন বেদআতি কাজ-কর্মের প্রসারে লিপ্ত। তার ধর্মে যা তিনি অনুমোদন করে যাননি তা যারা অনুমোদন করতে ব্যস্ত তাদের পরণিতি কি হবে? এর আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করার দাবি অসংগত হবে না।
এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি বাণী পেশ করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« َإِنِّى فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ وَأُكَاثِرُ بِكُمُ الأُمَمَ فَلاَ تُسَوِّدُوا وَجْهِى أَلاَ وَإِنِّى مُسْتَنْقِذٌ أُنَاسًا وَمُسْتَنْقَذٌ مِنِّى أُنَاسٌ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُصَيْحَابِى. فَيَقُولُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِى مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ ». (رواه ابن ماجه، وصححه الألباني في صحيح سنن ابن ماجه
“শুনে রাখো! হাউজে কাউছারের কাছে তোমাদের সাথে আমার দেখা হবে। তোমাদের সংখ্যার আধিক্য নিয়ে আমি গর্ব করব। সেই দিন তোমরা আমার চেহারা মলিন করে দিওনা। জেনে রাখো! আমি সেদিন অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালাব। কিন্তু তাদের অনেককে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব: হে আমার প্রতিপালক! তারা তো আমার প্রিয় সাথী-সংগী, আমার অনুসারী। কেন তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে? তিনি উত্তর দেবেন: আপনি জানেন না,আপনার চলে আসার পর তারা ধর্মের মধ্যে কি কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছে। (ইবনে মাজাহ)
অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসতে হবে। তার জন্য বেশী বেশী করে দরূদ ও সালাম পেশ করতে হবে। তার প্রশংসা করতে হবে। সর্বোপরি তাঁর সকল আদর্শ ও সুন্নাতের অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। কিন্তু এগুলো করতে যেয়ে তিনি যা নিষেধ করেছেন আমরা যেন তার মধ্যে পতিত না হই। যদি হই তাহলে বুঝে নিতে হবে ভাল কাজ করতে গিয়ে শয়তানের ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি।
একটি সংশয় নিরসন:
যারা বেদআতে লিপ্ত তারা অনেক সময় তাদের বেদআতি কাজকে সঠিক বলে প্রমাণ করার জন্য কুরআন বা হাদীস থেকেও উদ্ধৃতি দেন, যদিও তার পন্থা-পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদে মীলাদের ব্যাপারে তাদের অনেকে বলেন ঈদে মীলাদ বা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিন পালন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীসটি হল:
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ ، { أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ ، فَقَالَ : يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَالْبَاقِيَةَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ ، فَقَالَ : يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ وَسُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ، فَقَالَ : ذَلِكَ يَوْمٌ وُلِدْت فِيهِ ، وَبُعِثْت فِيهِ وَأُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ } رَوَاهُ مُسْلِمٌ
সাহাবী আবু কাতাদাহ রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, “এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।” (বর্ণনায় : মুসলিম)
তারা এ হাদীস পেশ করে বলতে চান যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসোমবার দিনে জন্ম গ্রহণ করেছেন বলে ঐ দিনে রোযা পালন করে তা উদযাপন করাকে সুন্নাত করেছেন। তাই জন্মদিন পালন এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
জওয়াব:
  • এক. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু জন্ম দিনের কারণে সোমবার রোযা রাখতে বলেননি। বরং বৃহস্পতিবারও রোযা রাখাকে সুন্নাত করেছেন। সেটা তাঁর জন্মদিন নয়। হাদীসে এসেছে:
« تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِى وَأَنَا صَائِمٌ » رواه الترمذي رواه مسلم بغير ذكر الصوم
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই আমি পছন্দ করি যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি রোযাদার থাকব।” (বর্ণনায়: মুসলিম ও তিরমীজি)
উল্লেখিত হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝে আসে। তা হল:
  • দুই. যদি জন্মদিবসের কারণে রোযা রাখার বিধান হত তাহলে শুধু সোমবারে রোজা রাখা সুন্নাত হত। কিন্তু তা হয়নি, বরং বৃহস্পতিবার ও সোমবার সপ্তাহে দুদিন রোযা রাখাকে সুন্নাত করা হয়েছে। তাই এ রোযার কারণ শুধু জন্ম দিবস নয়।
  • তিন. এ দু দিনে রোযা সুন্নাত হওয়ার কারণ হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমল পেশ হওয়া।
  • চার. সোমবারের ফজীলত দু কারণে। জন্মদিন ও নবুওয়াত প্রাপ্তি বা কুরআন নাযিল। শুধু জন্ম দিন হিসেবে নয়।
  • পাঁচ. রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্মদিন সোমবারে ঈদ পালন করতে বলেননি বরং ঈদের বিরোধীতা করে রোযা রাখতে বলেছেন।
  • ছয়. রোযা হল ঈদের বিপরীত। রোযা রাখলে সে দিন ঈদ করা যায় না, ঈদ ও রোযা কোন দিন এক তারিখে হয় না। হাদীসের দাবি হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিনে রোযা রাখা। কিন্তুরোযা না রেখে তার বিপরীতে পালন করার পেছনে কি যুক্তি থাকতে পারে?
  • সাত. তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া যায় যে এ হাদীসটিতে রাসূলের জন্মদিন পালনের ইঙ্গিত রয়েছে। তাহলে হাদীস অনুযায়ী প্রতি সোমবার কেন ঈদ পালন করা হচ্ছে না? সোমবারেও নয় বরং ঈদ পালন করা হচ্ছে বছরে একবার রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে। সে দিন সোমবার না হলেও পালিত হয়। এ হাদীসে কি ১২ই রবিউল আউয়ালে জন্মদিন পালন করতে বলা হয়েছে?
  • আট. যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় উল্লেখিত হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মদিন পালন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে তা হলে আমি বলব হ্যাঁ, হাদীসটিতে জন্মদিবস কিভাবে পালন করতে হবে তাও বলে দেয়া হয়েছে। তা হল ঐ দিনে রোযা রাখা। কিন্তু ঐ দিনে রোযা না রেখে বেশী খাওয়া দাওয়া করা হয়। ঈদ নাম দিয়ে রোযা রাখার বিরোধিতা করা হয়। তা হলে তাদের কাছে রোযা রাখার সুন্নাতের চেয়ে খাওয়া-দাওয়া বেশী প্রিয়? মনে রাখা উচিত প্রেম মুহাব্বাতের সত্যিকার প্রমাণ হল ত্যাগ ও কুরবানী করা, উপোস থাকা, কষ্ট স্বীকার করা। খাওয়া-দাওয়া ও আমোদ-ফুর্তি নয়। মুখে নবী প্রেমের দাবি ও কাজ-কর্মে তার আদর্শের বিরোধিতা করার নাম কখনো মুহাব্বাত হতে পারে না। বরং বলা চলে ধোকাবাজি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন!
সমাপ্ত
লেখক : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
تأليف : عبد الله شهيد عبد الرحمن
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
ওয়েব সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী (সামান্য পরিবর্তন সহ)

No comments:

Post a Comment

Download AsPDF

Print Friendly and PDFPrint Friendly and PDFPrint Friendly and PDF
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...